অচিন যাত্রা
সময়ের যাত্রা চলছে নিরন্তর,
মানুষও ছুটে চলছে নিয়তির ডাকে।
ফুরিয়ে যায় দিন, মাস, বছর-
স্মৃতির খাতায় জমে থাকে অসংখ্য প্রহর।
কখনো গ্রীষ্মের তাপে,
কখনো বর্ষার অবিরাম ঝরে;
শরতের নীল হাসিতে,
হেমন্তের মৃদু ছোঁয়ায়,
শীতের কনকনে হিমবাহে;
জীবনের বসন্তরা হারিয়ে যায় কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির মতো,
তবুও জীবন থামে না;
শত আঘাতেও তার গতি যেন অনমনীয়।
তবে একদিন থেমে যেতেই হয়;
অপরিচিত সেই শেষপ্রহর এসে দাঁড়ায় একদম সামনে।
সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত মানুষটি
হাজার স্মৃতির ভার নিয়ে
মিশে যায় জীবনের অগাধ রহস্যে।
মৃত ভাবনা
ভাবনাগুলো হঠাৎই যেন মৃত্যুর মিছিলে শামিল,
ফেরার পথ নেই, নেই কোনো গড়মিল।
ইচ্ছেগুলো গোপনে ঠাঁই নিয়েছে বুকের গভীরে,
এমন গভীরে যে আর জাগে না কোনো স্মৃতি।
স্বপ্নগুলো উড়ে গেছে অজানা সুদূরে,
সেই দূর থেকে আর ফিরে আসে না নীড়ে।
চাওয়ারা গেছে দীর্ঘ ছুটিতে,
ডাকলেও সাড়া দেয় না কোনো মতে।
প্রাপ্তিগুলোও থমকে আছে অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাসে,
আয়নার পাশে ভেসে ওঠে অদৃশ্য মুখোশেরা।
কর্মগুলোও হারিয়েছে মায়াবী আলতো ছোঁয়া,
হৃদপিণ্ড পুড়ে ওঠে...
নাক-মুখ দিয়ে বের হয় দহন-ধোঁয়া।
প্রেমের উপাখ্যান
প্রেমের উপাখ্যান কভু রচিত হয় কি প্রেমিকের হাতে?
প্রশ্ন রেখে "ভালোবাসি" বললে-
ফেরাবে কি তুমি রিক্ত হাতে?
উপন্যাসের খলনায়ক কি কখনো কাঁদিয়েছে তোমায়?
প্রশ্ন রেখে যদি সে চরিত্রে ভাবতে বলে প্রেমিক;
ফেলে দেবে কি পুরোনো পোশাকের মতো?
প্রেম - সত্যিকারের, নিখাদ ও অসীম প্রেম!
সেটি কোথায় পাবে, কখনো জানতে ইচ্ছে হয়েছিল কি তোমার?
প্রতিদান
ফুরসত পেলেই হিসেবের খাতা খুলে দেখো,
খুঁজে পাবে বেলাশেষের প্রতিদান।
হিসেবের অন্তমিল
অসময়ের ঘোরে সময়ের হিসেব কষতে গিয়ে
ফলাফলে খুলেছে বড় গড়মিল;
সময়ের ফেরে আর মেলাতে পারি না
জীবনপাতার হিসেবের অন্তমিল।
জীবনের সংজ্ঞা
জীবন মানে সকালের ঘুম ভাঙা, সূর্যের আলোয় চোখের শীতলতা।
জীবন মানে সেই ছোটবেলার স্মৃতিতে হাতড়ে বেড়ানো তুমি-আমি।
জীবন মানে অ-আ-ক-খ; মক্তবে পাটি পেতে আলিফ-বা-তা-ছা।
জীবন মানে নিউটনের তৃতীয় সূত্র, বার্নোলির প্রিন্সিপাল;
জীবন মানে প্রেমের হাহাকার - প্রেমিকার শরীর কিংবা আত্মা।
জীবন মানে শূন্য পকেট, অভুক্ত উদরে হাঁটা - ক্লান্তির ঘাম।
জীবন মানে সেরা ছাত্রের পাশে বসা ফ্রাস্ট্রেটেড ক্লাসমেট।
জীবন মানে চায়ের কাপের ধোঁয়া, সিগারেটের কুণ্ডলী পাক।
জীবন মানে গাত্র কালো বলেই যন্ত্রণায় বড় হওয়া সেই মায়াবতী;
আর বাপের টাকায় বখে যাওয়া ছেলেটি।
জীবন মানে প্রেমিকের চোখের জল লুকিয়ে - প্রেমিকাকে করা আশীর্বাদ।
জীবন মানে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব, যা হয় না কখনো শেষ।
শূন্যতায় সূদুর
কোলাহলে কলরবে হারাচ্ছি যাত্রাপথ,
কে দেবে দেখায়ে,
কোনটা আমার রথ ?
সওদা শেষে ফেরবো ঘরে,
কোন সে ঘর,
সেথায় কে আমার আপন পর !
হারায়ে দিশা, হারায়ে মম,
দুনিয়ায় সব চিত্তই লাগে স্বার্থপর;
একলা পথিক পথের ধুলোয়,
শূন্যতায় চোখের সূদুর..
কোন সে অচিন রথে যাচ্ছি পথিক,
কোন সে বহুদূর ?
ছন্দের মামলা
কবিতার সুমিষ্ট ভাষা আমি নাহি পাই খুঁজে,
খাওয়া নাওয়া ছেড়ে ভাবছি চক্ষু দুটি বুজে।
কতোইনা ছত্রছাড়া ছন্দ দেয় যে মনে উকি,
পায়না প্রকাশ যাতনারা, তাই কবিতা লেখাই বাকি।
মনের গহীনে জমা যতো দুঃখ কিংবা আহ্লাদ,
শব্দের মালায় বাঁধাইতে মোর বেজায় স্বাদ।
কবিতো আমি নই, মোর মাঝে নেই ছন্দের তাল,
তবুও লিখি জোড়াতালি দিয়ে কিছু অক্ষরের ঢাল।
প্রেম বলো বা দুঃখ বলো, বলোই বা তাকে অপচয়,
সময়টাকে বাঁধতে স্মৃতির পাতায়, নেই যে কোন সংশয়।
হারিয়ে ফেলা শৈশবের মতোই হারায়েছি কত্ত কবিতাদের,
ছোট্ট গল্পের ঝুড়িটা আবার দিয়ে এসেছি নিরুপমাদের।
হেলায় হারিয়ে উপন্যাসের চিত্ররূপ স্তম্ভিত যখন মন,
কে যায় নিয়ে কোথায় আমায়, কোন সে আপনজন।
বারেক ফিরে কবিতায় আমি খুঁজে খুঁজে সব ছন্দ,
মনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, মনের সাথেই মোর দন্ধ।
মেঘরঙা সন্ধ্যা
নিরুপমা তুমি কি আজো মেঘরঙা সন্ধ্যায় ভাবো আমায়,
সেই জলপাইগাছটা আজো কি নাড়া দেয় তোমার স্মৃতিতে!
যখন তুমি আমার ছিলে, আর আমি তোমার আহ্লাদে;
জলপাইগাছটার নিচে মেঘরঙা সন্ধ্যায় তোমার আমার খুনসুটি!
তোমার চোখের কোনো কি বৃষ্টির ফোটা হয়ে ঝরে সেসব স্মৃতি?
মোড়ের দোকানদারটা আমাদের খুনসুটিতে মুচকি হাসতো,
বেলপুড়ি মামাটা আমাদের দূর থেকে দেখেই মুছতো দুটি আসন!
পাড়ার আলিমুদ্দির রিকসায় কতো যে ঘুরেছি মায়ার এ শহরে,
বিকাল প্রহরে তোমার আঙ্গুলে আঙ্গুল রেখে পাশাপাশি হেটে চলা!
তোমার কি সেসবের স্মৃতির খাতাটা খোলার সময়টুকো হয় নিরুপমা?
আকাশের তারা গুনতে গুনতে কখনযে ঘুমিয়ে যেতাম তোমার কোলে,
সময়ের হিসেব যেন ভুলে যেতে তুমি, জেগে দেখতাম রাত গভীর,
কানমলা দিয়ে বলতে খুবতো ঘুমালেন, আমি আলিঙ্গনে হারাতাম।
রাত পোহালেই ভোরের স্নিগ্ধতা পেতাম তোমার ভেজা চুলের মাঝে,
আর আমি তৃষ্ণার্ত হতাম হাজার হাজার বছর বাঁচার তৃষ্ণায়!!!
অথচো একজীবনের অল্প কয়েকটি দিনও একসাথে থাকা হলো না,
সন্দেহের বিষবাষ্প এলোমেলো করে দিলো আমাদের সব স্বপ্ন,
আকাশের তারা আর দেখা হয় না আমার, হয়না বেলপুড়ি খাওয়া,
মোড়ের দোকানদারটা আমায় দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখ লুকোয়,
ভোর গুলোও তার স্নিগ্ধতা হারিয়েছে বিষাক্ত এ শহরের মতোই ।
অভিনয়ের অস্কার
কোন একদিন,
ধরো পাশাপাশি হাটবার কালে বড্ড অচেনা লাগলো আমায়;
জীবনের আয়োজন বিমোহ যেনো অপরিচিত ঠেকলো তোমার!
একবুক কষ্ট নিয়ে তুমি কি খুনি হয়ে ওঠবে?
যে খুন করে ফেলবে অন্তরাত্মার বাঁধ,
যেখানে জমেছিলো প্রেমের ঋণ..
অথচ,
আমার হৃদয়টা ছিলো তোমর খেলাঘর;
অভিনয়ের খেলায় তুমি ছিলে নির্দয়,
রূদ্ধ আচরনে ভেঙে গেলে সেই খেলাঘর,
একবুক শূন্যতায়,
সেদিন,
অভিনয়ের অস্কারে জয়ী করবে তোমাকে?
প্রেমের কেন্দ্রবিন্দু
চাইলে তোমায় দিতে পারি হাজারটা দিন প্রণোদনা,
দিতে পারি এনে কমলা-হলুদ গেন্দা ফুলের উন্মাদনা ।
চাইলে তুমি হতে পারি আমি তোমার প্রেমের সুখেন্দু,
হতে পারি তোমার বৃত্তের ভেতরেই মায়ার কেন্দ্রবিন্দু।
চাইলে তুমি হতে পারি আমি তোমার ভোরের পাখি,
হতে পারি কাজল কোন যে রাঙাবে তোমার আঁখি।
চাইলে তোমার মনের গহীনে হতে পারি রোদেলা দুপুর,
এনে দিতে পারি তোমার জন্যে বিশাল একটা পদ্মপুকুর।
চাইলে তুমি হয়ে যাবো আমি বিকেলের নরম রোদ,
তোমার উঠানে করবো খেলা হয়ে তোমাতেই উৎসুক।
চাইলে তোমার সন্ধ্যা হবো পাখিদের ফেরার কালে,
হারাবো তোমায় প্রেমের দানে জীবন দাবার চালে।
চাইলে তুমি হতে পারি তোমার রাত্রির গভীরতা,
হতে পারি তোমার বুক-গভীরে হৃদস্পন্দনের মাত্রা।
চাইলে তুমি রাখবো তোমার গোপন তিলের খবর,
হয়ে যাবো ঘরকুনো এক না হয়ে অথৈই যাযাবর ।
অর্থহীন চিঠি
পত্রের প্রথমেই তোমায় জানাই শিয়াল ডাকা চাঁদনী রাতের হিমেল হাওয়ার আলিঙ্গন। আজ তোমায় প্রেম নিবেদন করতে লিখছি না। হটাৎ করেই মনে হলো তোমাকে লিখি একটা উদ্দেশ্যহীন চিঠি যেন তুমি আমার মতো করেই ভাবতে শেখো।
তপ্ত দুপুরের তৃষ্ণার্ত প্রথিকের কাছে বটবৃক্ষের ছায়ার যেমন কদর ঠিক তেমনই মানব জীবনের চলার পথের মানুষগুলোরও একই কদর। তুমি দেখবে মানবে মানবে কতো বৈচিত্র্য, একজনের সাথে আরেকজনের কথায়, কাজে, আচরনে, চিন্তায় কিংবা চাওয়া পাওয়ায়। এতো বৈচিত্র্য আছে বলেই মানব জীবন সুন্দর লাগে আমার কাছে, লাগে ছন্দময়। আমাদের মনটা কখনও অল্প প্রাপ্তির সুখেই উল্লাসিত আবার কখনো অল্প উষ্টাতেই বেদনায় বিভোর হয়ে উঠে। ক্ষনে ক্ষনে মানবের মনে বিচিত্র সব ভাবনার উদয় হয়, এই যেমন ধরো তোমাকে এ চিঠি লিখতে বসেছি এটা নিছক পাগলামো বৈকি।
জনে জনে মানুষের চেহারায় যেমন মিল নেই, তেমনি মিল নেই মনের দিক থেকেও এর অন্যতম কারন হলো মানুষের ভাবতে পারার ক্ষমতা। এই যেমন ঠিক যেই সময়টাতে আমি ভাবছি তোমাকে, হয়তবা সেই সময়টাতেই আমি তোমার ভাবনাতেই নেই; যার ফলে মনের দিক থেকেই আমাদের মিল হচ্ছে না, হচ্ছে না প্রেমের উপাক্ষান। বিন্দু বিন্দু জল নিয়েই যেমন সৃষ্টি হয় বিশাল সাগরের তেমনি ছোট্ট ছোট্ট আশা নিয়েই গড়ে উঠা একজন পরিনত প্রেমিকের। পৃথিবীর সকল নিরুপমারাই বিশেষ বিশেষ মানুষ গুলোর কাছে ছোট্ট একটা আশার তুল্য, যার মিলনেই তাদের অনাবিল আনন্দ।
মানব জীবনটাই বা কয় দিনের, যার ইচ্ছায় তুমি আমি স্বাদের দুনিয়ায় তার ইচ্ছেতেই নিতে হবে বিদায়। মাঝখানে কেন তবে এতো বৈচিত্র্য সুখ দুঃখের, পাপপুণ্যের, আশা-নিরাশার
বলতে পারো নিরু? প্রশ্নের উত্তর দিয়ো।
আর একটি কথা বলে শেষ করছি,
"জীবনটাকে একটা উপন্যাস না ভেবে, হাজারটা ছোট গল্প ভেবো;
গল্প বদলের সাথে সাথেই বদলাবে তোমার সুখ কিংবা দুঃখ"
ইতি, তোমারই..
নিরুপমা (প্রস্থান)
যেতে বলে তোমায়, চিন চিন ব্যাথায় কাতরাচ্ছি সারাবেলা।
তবে কি তোমার চোখের কোণে এসেছিলে শ্রাবণ,
মনের গহীনে জমেছিলো মেঘকালো অভিমান???
হাজারটা কবিতায় লক্ষবার তোমায় 'নিরু' বলে ডেকেছি।
অথচো তোমার সামনে কখনোই বলা হয়নি সে কথা,
পাছে ভয়ে তুমি বুঝে যাও বড্ড ভালোবাসি তোমায়।
পাখিদের ঘরে ফেরা সন্ধ্যায় পেয়ারা গাছটার নিচে সেদিনের সেই আধো আলিঙ্গনে,
খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল নিরু "ভালোবাসি"।
জানি তুমি আমায় মুখ ভেংচিয়ে বলতে খুব হয়েছে ন্যাকামো,
ঘরে যে ডাল, আলু, পেয়াজের হদিস নেই তার খবর কি আছে???
এতোটা কর্কশ নির্দয় কেন তুমি !
নাকি অপ্রকাশিত ভালোবাসায় ডুবিয়ে রাখতে চাও আমায়??
মরন অসুখে সেদিন যখন প্রায়শই ডাকছিলাম তোমায় বারংবার,
তোমার চোখের প্রতিটি ফোটায় চিনেছি এক নতুন নিরুপমাকে।
সেখানে শুধুই প্রেম আমার জন্যে, আকুতি বাঁচিয়ে রাখবার;
সেই নিরুকে আমি কিভাবে যেতে দেই, তুমিই বলো???
অনুঘটক
ভাবছি একটা উপমা দেবো তোমায়, যেনে তুমি মিশে যাও তার ভাবার্থে।
রসায়নের অনুঘটকের মতোই যেনো তা দ্রবীভূত হয় তোমার আচরনে,
ক্যালকুলাসের মতোই যেন হয় উপমাটা যাতে রয়েছে জটিলতার সমাধান,
কিংবা পদার্থের আচরনের মতোই যেন হয় তার অবস্থান ত্রৈধবিন্দুতে ।
নচেত নিতান্তই উপামাটা হবে বায়োলজির সেই চাপ্টারটার মতো,
যা পড়তে গিয়ে উঠতি বয়সে কতবার মুখচেপে হেসেছি ক্লাসের সবাই।
উপমাটা আমি দেবো তোমায় জীবন স্রোতের শেষ সায়াহ্নে,
তার জন্যে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আমাদের আরো কয়েকটা যুগ ।
বৃদ্ধ বয়সে যখন আমাদের কাজই হবে নিবিড়ে গৃহবন্দী থাকা,
তখনই তোমার কানেকানে বলবো...
তুমি কিভাবে মানিয়ে নিলে আমার এই অগোছালো জীবনে?
:তবে কি তুমিও অনুঘটক ।
কিভাবে হাজারো সমস্যা সামাল দিয়ে তুমি টিকে ছিলে সংসারের মায়ায়?
:তবে কি তুমিই ক্যালকুলাসের জটিল জটিল সব সমাধান।
কিভাবেই পেরেছো সকলের মন রক্ষা করে চলতে জগত সংসারের?
:তবে কি তোমারও রয়েছে কোন ত্রৈধবিন্দু।
আমাদের বেসামাল রাত্রিযাপন গুলো মন করিয়ে দিয়ে জানতে চাইবো,
:তুমি কি ছিলে তবে বায়োলজির সেই চাপ্টার।
নিরুপমা অপেক্ষায় থেকো সে উপমার,
যার মায়ায় তুমি বেঁধেছিলে আমায় জীবনের শুরুতেই ।
ডায়রির বাজে চাপা গোলাপ
সেই কবে দেখেছিলাম তোমায় নীল রঙা শাড়িতে বলতে পারো নিরু?
অপলক নয়নে তোমাতে সেদিন হারিয়েছিলাম সময়ের সকল হিসেব,
হারিয়েছিলাম আমার সকল অস্তিত্ব তোমার চোখের বাঁকা চাহনিতে।
চরপাশের মানুষের হাজারো স্মৃতির মধ্যে কি খুঁজে পাও আমায়?
নাকি সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছো আমার সকল স্মৃতির দাগ?
হয়তোবা পেরেছো তুমি মুছে ফেলতে সব,
পারেনি কেবল আমার সত্তা,
এই যেমন ধরো...
প্রথম গোলাপটি আজ কংকাল হয়ে চাপা পড়ে আছে ডায়রির বাজে,
চিঠিগুলো পরে আছে তালাবদ্ধ ড্রয়ারের এককোণে অভিমানী হয়ে,
খাবারের কৌটাগুলোতে ধরেছে মরিচা, তাই ফেলে রেখেছি অলক্ষ্যে,
তোমার স্পর্শ লাগা প্রতিটি কাপড়ই আজ ঠাঁই পেয়েছে ওয়ারড্রবে,
আর কথা বলা ফোনটা ঠাঁই নিয়েছে টেবিলের নিচে রাখা পুরোনো ঝুড়িটায়।
কি নিরুপমা,
পৈশাচিক হাসিতে মাতোয়ারা হচ্ছো সুলেখিত স্মৃতির বর্ণনায়??
তবে শুনো বলি, চরম মিথ্যেগুলোই সুন্দর করে লিখি আমি কবিতায় !!!
বেহিসাবি
তোমায় নিয়ে না লেখা সময়টা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতোটাই দীর্ঘ হচ্ছে যে এরই মধ্যে কাঁচা সবুজ ধানগাছে ধান ধরেইনি শুধু, তা পেকে আজ মাড়াইও করছে পাশের বাড়ির কৃষক কৃষাণী। থরে থরে কাঁঠালেরা বড় হয়ে বড়তর হচ্ছে পাকবে বলে, গাছের আমগুলোও এখন সবুজ থেকে হলুদ হই হই করছে। লিচু গাছের নিচে আজ শীতল ছায়ায় রসদ ভর্তি লিচুগুলোকেও পরে থাকতে দেখি বাদুড়ের আঘাতে।
তোমায় নিয়ে শেষ লেখিছিলাম যখন, তখনও কাঁঠাল, আম কিংবা লিচুদের সবাই ছিলো শৈশবে; আজকের গ্রীষ্মের দুপুর গুলোও তখন ছিলো বসন্তের মায়ায় জড়িয়ে।
সময়ের এক স্রোতে ভেসে যাচ্ছো তুমি, যেখানে আমি হয়েছি বৈঠাহীন এক মাঝি। প্রকৃতির নিয়মেই বর্তমান হারাচ্ছে অতীতের কোলে আর ভবিষ্যৎ হচ্ছে বর্তমান, তবে তার কোথাও তুমি নেই। তুমি আছো কেবলই আমার অক্ষরে কিংবা চিন্তার রেখাপাতে। পৃথিবীর অনু পরমাণু থেকে বিস্তর পাহাড় কিংবা সমুদ্রের কোথাও তুমি নেই, তুমি আছো কেবলই আমার ভাবনাতে কিংবা কল্পনাতে। বিস্তর আলাপনে তোমায় নিয়ে হয়না বেলপুড়ি খাওয়া, বিকেলের আকাশের নিচে একসাথে পথচলা কিংবা রাতের তারাদের নিয়ে খুনসুটি।
হিসেবের দুনিয়ায় বেহিসাবি হয়ে ভালো থাকা যায়না নিরু। এতোটাই বেহিসাবি হয়েছিলো আমার কল্পনার পাখা যে তোমায় নিয়ে এসেছিলাম খোলা চুলে, নীল শাড়ীতে ব্যস্ত এ নগরীতে কিংবা গ্রামের সেই কণ্টকময় শিমুলের তলায়। বড্ড ভুল ছিলো আমার লিখায় তোমাকে প্রকাশের ব্যপ্তিতে তাই কিনা তুমি অনেকের কাছেই আজ অনেকরকম।
কিছু অনুভূতি অপ্রকাশিত রয়ে গেলেই হয়তো তুমি থাকতে একান্তই আমার নিজস্ব সত্তায়। তাইতো আমি আজ সব কিছুই ভুলে নতুন করে হাঁটতে চাই কল্পনার বাইরে আমার প্রতিদিনের নিগুঢ় ব্যস্ততায়।
ভালো থেকো প্রিয়তি
ভেবেছিলাম হবে তুমি সকালের স্নিগ্ধতা,
হবে ভোরের রোদের আভা আমার ললাটে।
ভেবেছিলাম তুমি হবে বিকেলের শান্ত মায়া,
হবে সন্ধ্যার চায়ের কাপের পরিমেয় মিষ্টি।
ভেবেছিলাম তুমি রাত্রির গভীরতা হবে,
হবে প্রহরী যার বিশালতায় দেবো আমি হানা।
ভেবেছিলাম আমার কবিতার স্রোতা হবে তুমি,
হবে প্রচ্ছদের কারুকার্য কবিতাদের মলাটে।
ভেবেছিলাম দূরের যাত্রায় তুমি সঙ্গী হবে,
হবে গল্প আড্ডায় মাতিয়ে রাখা মায়া;
ভেবেছিলাম আমার গল্পে তুমি রানী হবে,
হবে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার জায়া।
ভাবতে ভাবতেই কখন যে সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলে তুমি,
পৃথিবীর কোন কবিতাও তা টের পায়নি একরত্তি।
নির্বাক আমি হাজারো উপন্যাসে আজ শুধু তোমাকেই খুঁজি,
সেখানে শুধুই দৃশ্যমান "ভালো থেকো প্রিয়তি" ।
মরুভূমির প্রতিধ্বনি
বড্ড অবেলায় যেদিন রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে তোমায় চেয়েছিলাম,
সেদিনের সেই তাচ্ছিল্যের হাসি আর বিষবাক্যগুলো হৃদয়ের ক্ষরণকে হয়তো কিছুটা তরান্বিত করেছিলো কিন্তু বুঝতে দেইনি তোমায়,
মুচকি হেসে বিদায় বেলায় তোমায় আশীর্বাদ করে এসেছিলাম।
বহু বহু বছর পরে আমার হৃদয়ের সবটুকুই যখন এক লালচে মরুভূমি, তোমার নাকি হটাৎ হটাৎই যেখানে ঘুরতে আসতে ইচ্ছে হয়।
মরুভূমিই নাকি আজকাল তোমায় অনেক টানে, আমার বড্ড হাসি পায়।
সেই হাসি ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে যখনই আপনা কর্ণে আঘাত করে তখনই আমি পাথর হয়ে যাই.....
তোমার নাকি সেই পাথরেই প্রেম নিবেদন করতে ইচ্ছে করে আজকাল, আমার বড্ড মেজাজ হারায়;
সেই রাগ যখন মরুভূমির ঘুর্ণিঝড় হয়ে তোমায় ছুড়ে ফেলতে চায় আস্তাকুঁড়ে, তোমার নাকি তখন আজন্ম স্বাদ জাগ্রত হয় ছুড়ে পড়বার।
তখনই আমি বোবা হয়ে যাই, হয়ে যাই বধির কোন এক।
বেলাশেষে তখনই চোখের দ্যুতি পড়ে ঐ সূদুরে, আবার আমি অগোছালো জীবনের সূদুর পথেই চলতে থাকি অবিচল...
কোন ক্লান্তি নেই সেই পথচলায়,
নেই কোন পিছুটান,
নেই কিছুই হারাবার,
নেই কিছু চাইবার....
অস্তিত্বের শূন্যতা
থেমে গেলে সব কোলাহল, ভাবছো তুমি কাহার কথা;
ভাবনাগুলোর বিস্তরতায় হবে কি কোনই ইতিকথা!
চলে গেলে সবাই ছেড়ে, চাইছো তুমি কাকেই পাশে;
চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষে হারাও কেন সর্বনাশে!
ক্ষয়ে গেলে জীবন প্রদীপ, কষ্টে কেনই বাঁধো পাহাড়;
কেইবা করবে পাহাড় খনন, লিখবে তব পরসমাচার!
জীবন যেমন যাচ্ছে তবে, যাওনা দিতে তাকে তেমন;
হারানোরই বা আছে কি?, পাবারই কি আকুতি অমন!
বড় হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই বাড়তে থাকার চাহিদায়,
ভুলেছো তবে জীবনের মানে চাকচিক্যেরই মহিমায়!
এটাতো নয় জীবনের মানে, জীবন তবে বলছে কি?
সুখদুঃখে হাসিমুখে বাঁচতে পারাই এ জীবনের শ্রী!
ধর্মকর্মে বেঁচে থাকা, বাঁচিয়ে রাখা আত্নাটাকেই,
জীবন নামের ভাবনাগুলো সহজ করে আঁখিপাতেই!
পাপী পাপের বোঝা নিয়ে তুমি আমি অস্তিরতায়,
পাপমোচনের চিন্তা করেও বাড়াচ্ছি পাপের বিস্তার!
এভাবেই একদিন ছেড়ে যাবো, থেমে যাবে সব কোলাহল;
থেমে গেলে সব কোলাহল, ভাবছো তুমি কাহার কথা;
ভাবনাগুলোর বিস্তরতায় হবে কি কোনই ইতিকথা?
মৃন্ময়ীন্দ্রিকা
লালের বুদবুদ উঠা ঐ শিমুলতলায় দেখেছিলাম তোমায় খোলা চুলে,
পাশে ছিলো হলুদ পাঞ্জাবি পড়া গয়েশ্বর-তাঁর গল্পই কি তুমি বলেছিলে?
নীলরঙা চামড়ার হাতঘরিটার উপরে ভাজ করে রাখা পাঞ্জাবির রেশ,
ঝাকড়া চুলের ছেলেটার পাশে লাল শাড়ীতে তোমায় মানিয়েছে বেশ।
তাঁহার চশমায় চোখের কোণে একফালি প্রেম দেখেছি তোমায় জন্য,
যে প্রেমটা তুমি খুঁজেছিলে আমার মাঝে, হয়েছিলে বেশামাল এক বন্য।
অগোছালো আমার জন্যে তুমি প্রেম লুকোতে প্রতিটা বইয়ের পাতায়,
বছরেও বই না খোলা আমি শেষ যেদিন খুঁজে পেলাম সেসবের হদিস,
সময়ের স্রোতে ততদিনে হয়ে গেছে পুরো অর্ধেকটা যুগের অবসান।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পকেটে রাখা নিকোটিনে ভাসিয়েছি ফুসফুসের পেশী,
হাহাকারে বিভীষিকাময় হয়েছিল যেন তাবদ এ শহর তোমাকে ভেবে।
তারপর তারপর অনেক খুঁজেছি তোমায়, কোথাও ছিলেনা তুমি,
যাযাবর হয়েছি, হয়েছি নিশ্চুপ এক; ভাসিয়েছি বুকের বা পাশ,
তবুও পাইনি তোমায়, ছুঁয়ে দিতে কোন এক দুঃখ মুছবার রাতে।
হটাৎ করেই সেদিন দেখেছিলাম শতবর্ষী রক্তাক্ত লাল শিমুলতলায়,
কঠিন পাষাণ এক মৃন্ময়ীন্দ্রিকাকে,
বারবার চোখাচোখিতেও যে চিনলোনা আমায়।
সেইতো সেদিন রেখেছিলে যে গয়েশ্বরকে প্রতিটা বইয়ের ভাঁজে,
সময়ের স্রোতে সে তোমার কাছেই বড্ড অচেনা মানুষ,
তাই তোমার পৃথিবীতে আজ অন্য গয়েশ্বর।
সূতো
কখনো চলে গেলে জোর, সম্পর্কের সুতোর;
পাবেনা প্রথমের টান, যতই কর তোরজোর!
কাশফুলের মায়া
একটি কাশফুলের মায়ায় আমি কাটিয়েছি সূর্যোদয়ের পর সূর্যোদয়,
মৃদু বহতা কাশফুলের দর্শন পেতে ছুটেই চলেছি এবেলা থেকে ওবেলা।
ক্লান্তপ্রায় আমি কাঠফাটা দুপুরে ফেলে এসেছি আমার সমস্ত আবেগ,
শেষ প্রহরে মৃদু বাতাসে দুল্যমান সেই কাশফুল আমায় ঠেলে দিতে চায় অনেক দূর,
যেখানে আমি হই একফালি ঝড়।
অচেনা বিষণ্ণতা
বৃষ্টির জলের মতো গায়ে মেখেছিলাম তোমায়,
শুকিয়ে গেছো যেনো ঘরে ফেরবার আগেই ;
নদীর স্রোতের মতো সুদূরে ভেসে চললে যেন,
নৌকায় তরীতে আমি পাল উড়াবার আগেই ।
তুমি কি তবে কখনো ছিলে আমার প্রিয়তি,
হয়েছিলে কখনোকি রাতের গভীরতার উপমা !
তুমি কি তবে হেটেছিলে কভু আমার পথে,
এসেছিলে কখনোকি আমার আঙিনায় !!!
নিশিথের প্রশ্ন
কবে হবো আমি তোমার ফেসবুক প্রোপিকের বর্ণনা,
হবো কবে কভারে ঝুলানো মায়াবী হাস্যমুখ আল্পনা ।
কবে হবো অভিমান ভাঙানো এক সুলেখ্য স্ট্যাটাস,
হবো কবে মেসেঞ্জারে ঐ ছোট্ট ছোট্ট প্রেমের আভাস ।
কবেই বা হবো তোমার আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখা বিকাল,
হবো কবিতা এক, যা লিখবে তুমি রাত্রি থেকে সকাল ।
কবে হবে দুজনের একসাথে দেখা স্বপ্ন সুদূরে হারাবার,
হবে কবে তুমি মায়াবতী এক, আমাকে ঘরে ফেরাবার।
কবে পাবো বলো তোমার দেখা, হাসিতো ভুবন ভুলবার,
পাবো কবে ভুল করিবার জগত এক, চাহনিতে তোমার।
কবে মায়াবী আলিঙ্গনে আবদ্ধ হবো দুস্তর পারাপারে,
হবো আবদ্ধ এক প্রিয়তম কয়েদী, সদিচ্ছায় মনেপ্রাণে ।
কবে হবো আমরা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত দুজন দুই মেরু,
হবো আবার বিবাদ ভুলে রাত্রির বৃষ্টিতে ভেজা সুমেরু ।
কবে শুনাবে আমায় কানে কানে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর,
সেই সুরের ভেলায় পারি দেবো জীবনের সাত সমুদ্রূর।
বলতে কি পারো নিরুপমা ???
নিঃশব্দ অনন্ত
আমারে দিওনা প্রিয় বিষাদের ভার,
বিষাদে যে প্রেম তা বহিবার শক্তি নাইযে মোর অপার।
আমারে দিওনা প্রিয় বিষাক্ততার অভিশাপ,
বিষাক্ততার মাঝে যে কান্না তা প্রকাশের মতো নেই মোর সংলাপ।
আমারে দিওনা প্রিয় একটি রাত্রীর হাহাকার,
সেই হাহাকারে যে আর্তনাত তা জানাবার পৌরুষ্য নেই আমার।
আমারে দিওনা প্রিয় নষ্ট হবার অধিকার,
নষ্টদের দখলে প্রেমের যে উপাখ্যান তা পাইবে না তুমি সহিবার।
আমারে দিওনা প্রিয় একবুক নিকোটিনের জ্বালা,
কষ্টের ভ্রষ্ট হয়ে তোমারই বুকটা পুড়িয়ে যাবো জীবনের শেষবেলা।
আমারে দিওনা প্রিয় একটিও কবিতার আঘাত,
হয়তো জীবনের উপন্যাসটা পাল্টে দিবো ঘটিয়ে দৃশ্যপটে ব্যাঘাত।
আমারে দিওনা প্রিয় হতে নির্বাক যাযাবর,
কাশফুল হয়ে ছড়িয়ে যাবো তোমাতে, যেখানেই পাবো পদচিহ্ন অতঃপর।
প্রেমের উপসংহার
অনুভূতির বিপক্ষের লোক আমি,
হটাৎ করেই অনুভূতির পক্ষের মানুষ হতে গিয়ে রক্তাক্ত করেছি হৃদয়।
তোমাদের শহরে ভালোবাসার হিসেব করো পাল্লায় পাল্লায়,
অথচো অপেক্ষায় অপেক্ষায় আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সে কথা।
বনরাজীর এপাশ থেকে ওপাশ পাড়ির চেষ্টায় এতটা লোকালয় এড়িয়ে,
শুন্য শিক্ত রিক্তবক্ষ পুরুষ হয়ে ফিরতে হবে লোকালয়ময় বিপক্ষের দলে।
ভালোবাসার তরী-ভরা সমুদ্রে জাহাজ হাঁকিয়ে টাইটানিকের ভাগ্য,
নিতান্তই কেবল অনুভূতির বিপক্ষের আমার পক্ষে আসতে চাওয়ার তিরস্কার।
কবিতার খাতা
আমার একটা কবিতা লিখা বাকি,
যেই কবিতায় তোমাকেই পাওয়া হবে নিরুপমা!
প্রতিটা শব্দে আদরমাখা ভালোবাসার বর্ণনায় রঙিন হবে মেঘেরা;
পাখিদের কলরবে ছেয়ে যাবে চারপাশ,
আর গাঢ় সবুজের সমারোহে খেলা করবে রোদের ঝিলিক।
আমার একটা কবিতা লিখা অসমাপ্ত,
সেই কবিতায় তুমি হবে প্রেমোদকের ঝংকার, বর্ণনাতীত!
খেয়া পারাপারে জয়েন মাঝির মুচকি হাসির কারণ,
কিংবা বিকালের আড্ডায় চায়ের কাপের চোখাচোখি,
আর একসাথে বুড়ো হবার অপেক্ষায় বাড়ন্ত বয়স, ফুরন্ত যৌবন।
আমার একটা কবিতার খাতা খুলাই হয়নি কভু,
তুমি আসবে বলে,
তুমি ভালোবাসবে বলে,
তোমার গহীনের ভালোবাসার মলাটে রঙিন হবে সেই কবিতার খাতা।
বারাবাড়ি
চেনা রাস্তায়, অচেনা নানান মুখ;
ক্লান্তিকর পথের চলায়, চোখেরা উৎসুক!
তুমি কোথায়,
কোন আয়োজনে কিংবা কোন বারান্দায়,
শহরের অলিগলি ছেয়ে কোন অট্টালিকার ছোট্টকোঠায়;
একাকি গায়ছো গুনগুনানি গান,
করছো বসে আমাদের দেখাদেখির অভিমান!
ফেলে সব চলে এসো, হও চলি চেনা রাস্তায় হয়ে চেনামুখ,
ভালোবাসাবাসির বারাবাড়িতে পথিকেরাও হওক উৎসুক।
বিষন্নতার সংবাদ
হারিয়ে গেলে কভু খুঁজো না আমায়,
খুঁজতে গেলেই এই শহরটা ছেয়ে যাবে তোমার বিষন্নতার সংবাদে!
নাটাই
শূন্যে ভাসা ঘুড়ির নাটাই চেয়েছে কি কভু জানতে,
তাহার চেয়েও শক্তিধর বাতাসেরই বিচরণ ঘুড়িটির ঐ প্রান্তে!
মেঘ
ঘনকালো ঐ মেঘলা বিকেলটা দিয়েছিলাম তোমায়, রাখতে ধরে মেঘ;
আমার পৃথিবীটাই বৃষ্টিস্নাত হলো, রাখলেনা খবর জানলেও না উদ্বেগ।
চলন্ত সময়ের রোদ্দুর
হাজার বছর বাঁচার আকুতি নেই আমার,
বড্ড আকুল আমি তোমায় নিয়ে একমুহূর্ত বাঁচার।
একসাথে পাশাপাশি কিছুটা পথ হাটবার, কিছুটা সময় পাশাপাশি বসবার;
আকুলতায় অপেক্ষায় অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে পারি কয়েকটিযুগ,
তবুও বাঁচতে চাই কাটবো বলে তোমার সাথে পৃথিবীর কিছুটা ক্ষণ।
একাকি নির্জনতায় তোমার সাথে কথোপকথনে দুনিয়া থাকে নিঃশব্দ,
তবুও অনুভব করি তোমার উপস্থিতি আমার সত্তায়, আমার চাওয়ায়।
জীবনের অল্প মুহুর্তের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই তোমার হয়ে,
সেই নিরুপমা যার জন্যই এই পৃথিবীতে বাঁচার আকুতি আমার নিরন্তর।
জীবনের ক্লান্তিতে হঠাৎ করেই তোমাকে চাই,
পথচলায় হোটচ খেলেও তোমাকেই যেন চাই,
একটা কবিতায় কিংবা গল্পে তোমাকেই চাই,
বন্ধুদের আড্ডার ফাঁকাবুলিতেও তোমাকে চাই,
রুপকথার কোন কাহিনীতেও তোমাকে চাই,
কঠিন সহজ সকল পরিস্থিতিতেই তোমাকে চাই,
চাওয়ার উপাখ্যান হয়ে বেঁচে থাকতে চাই তোমার অপেক্ষায়;
অপেক্ষা শেষে বিস্তর ভালোবাসাময় হবে আমাদের পৃথিবী শুধু তুমি চাইলেই।
জনৈক
তুমি গাইলেই হয়ে যাই আমি,
তোমার কন্ঠে সুমধুর মায়া;
তুমি চাইলেই আমি হয়ে যাই,
শুধু তোমারই প্রদীপ ছায়া!
তুমি লিখলেই হয়ে যাই,
কবিতা কোন এক;
তুমি পড়লেই হয়ে যাই,
উপন্যাসের প্রচ্ছদের জনৈক!
তুমি রাখলে চোখে চোখ,
হয়ে যাই প্রেমের এক ছোট্টগল্প;
তুমি করলে শাসন,
হয়ে যাই সুবোধ, ভুলে সব অকল্প!
সময়ের সংলাপ
মায়াবী চোখের নিরুপমা, বললো মৃদু হেসে,
গড়তে হবে "নিরুমহল" আমায় ভালোবেসে!
কল্পনার দৃষ্টি
মেঘ ঝরা এই বর্ষার প্রিয়মুখটি হয়ে, ভিজেছি সবকটাই বৃষ্টিতে;
একই শ্রাবণে বৃষ্টিস্নাত তোমার দেখা, পেয়েছি কল্পনারই দৃষ্টিতে!
আড়ি
চন্দ্রকথা চাঁদের বুড়ি, তোমারই সাথে আড়ি,
আমি আমার মনের কথা না লিখে কি পারি!
যেমন তেমন
বিলিয়ে দিয়ে অন্তরাত্মা, রাখিতে ধরিয়া মন;
ইচ্ছে যেমন তেমন সাজে সাজাও প্রিয়জন!
নিরুপমা
নিরুপমা তুমি শেষরাত্রি হলে, আমি হই রাতজাগা ভোর,
তুমি হলে সন্ধ্যা বিকেল, হই আমি মধ্যদুপুরে ঘুমের ঘোর!
মায়াবতী
মেঘের ফাঁকে রোদের মতোই, ঝরতে থাকা বৃষ্টির মতোই;
উড়তে থাকা পাখির মতোই, সন্ধা নামা বিকেলের মতোই;
কিংবা আমার,
একলা থাকার অভ্যেসের মতোই তোমায় লাগে মায়াবতী!
মুখোশ মানব
আমি মিথ্যের বেসাতি, মরিচিকার জল,
আমি নষ্ট আত্মা, মুখোশ মানব অবিকল।
স্বদেশ
তোমার সবুজ শ্যামল রূপের ছবি আঁকতে গিয়ে আমি মুগ্ধ।
তোমার ঐ বিস্তর খোলা মাঠে, বিস্তীর্ণ ঘাটে, পথ-প্রান্তরে,
কিংবা ধানে ভরা ঐ শস্যখেতে, চিরচেনা সেই রূপের ঝিলিক ।
তোমার ঐ রূপ আমি দেখেছি অপলক নয়নে,
দেখেছি তার স্পর্শ বিলের জলে, নদীর কূলে, বাগানের ফুলে ফুলে;
তোমার স্নিগ্ধ সে সুশীতল বাতাসে আমি পেয়েছি প্রাণের স্পন্দন।
ভোরের পাখির কলতানে কিংবা ঢেউ খেলানো একরাশ কাশফুলে,
আমি অনুভব করেছি তোমার মায়ার টান, তোমাতে বাঁচার প্রেরণা ;
তোমায় রূপটি আমি হৃদয় দিয়ে দেখতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছি,
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত একটি ফোটা লাল গোলাপ,
যার সুভাসে মিশে আছে প্রতিটি বাঙালির স্বত্বা, স্বাধীনতার স্বাদ।
তোমায় নিয়ে লেখা কত কবির কত কবিতা, গায়কের কত গান,
সবই যেন তোমার অপরূপ রূপেরই জয়োগান, বন্দনা তোমায় মায়ার।
সুখ
আমায় একরত্তি সুখ দিও নিরুপমা;
বিনিময়ে_
হরেকরকমের কষ্টের ঝুলিটা পুড়িয়ে ফেলবো দু'জন মিলে।
নিত্যতার ব্যাস্ততা শেষের সময়টুকু দিও একান্তে,
বিনিময়ে_
বুকপকেট ভর্তি ভালোবাসার সবটাই উজাড় করে দেবো তোমায়।
জীবনের সিঁড়িতে ক্লান্তি এলে ক্লান্ত মাথাটা রেখো কাঁধে,
বিনিময়ে_
তুমি আমি দু'জন মিলে সফলতা কুড়োবো আমৃত্যু।
কারো কথায় কভু আঘাত পেলে লিখতে বলো আমায়,
বিনিময়ে_
আঘাতের ক্ষতটা সারিয়ে দেবো প্রিয় কোন কবিতায়।
কখনো কান্না পেলে জড়িয়ে নিও খুব কাছে,
বিনিময়ে_
চোখের জলের দামে বিক্রি হয়ে যাবো তোমার ঐ বাহুডোরে।
পরিশেষে স্নিগ্ধ বিকেলের বিশ্বাস দিও আমায়,
বিনিময়ে_
লক্ষীটি হয়ে তোমারই পাশে থেকে যাবো অনন্তকাল..
শৈশব
সবুজের মাঝে কৃষ্ণচূড়ার লাল কিংবা জারুলের বেগুনির মতোই,
অথবা বেতফলের মতো দুর্লভ সুমিষ্ট স্বাদে অন্তর হারাবার মতোই,
নচেত জাম্বুরা ফুলের সাদার আভায় হালকা হলুদ ছোঁয়ার মতোই,
নয়তো সাদা কাপড়ে পাকা জাম ফলের ছোঁয়ার প্রচ্ছদের মতোই,
কিংবা গাছটায় উঠে লবন মেখে কাঁচা আম সাবাড় করার মতোই,
পুকুরপাড়ে হাজারো গল্পের ভিড়ে গোসলের ঝাঁপাঝাপির মতোই,
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে গায়ে জ্বর উঠাবার ইচ্ছের মতোই,
নানান ছুঁচোতে স্কুল কামাই দিয়ে পিঠটাকে লাল বানানোর মতোই,
প্রতিবার নতুন কাপড় পেয়ে আনন্দচিত্তে বই পড়তে বসার মতোই,
খেলার মাঝে ব্যাথা পেয়ে এসে মা'র হাতে চটকানা গুলোর মতোই,
বাড়ির আঙ্গিনায় মাঝে মাঝে বড়দের ভিসিআর আনবার মতোই,
শুক্রবারে উচাটন মনে আলিফলায়লা'র অধির আগ্রহের মতোই,
পাটকাঠিতে বসা ফড়িং ধরে পিছনে সুতো বেঁধে উড়াবার মতোই,
কলাগাছের ভেলায় বর্ষার পানিতে নৌকোতে চড়া স্বাদের মতোই,
এ বাড়ি ও বাড়ি ঘটা করে পুতুলের সাথে পুতুলের বিয়ের মতোই,
সাইকেলের টায়ার পিটিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দল বেঁধে ঘুরবার মতোই,
টিনের পিস্তল পকেটে নিয়ে মাঝে মধ্যে ঠাস ঠুস ভিলেনের মতোই,
এই বাড়ির ছেলেদের সাথে ওই বাড়ির ছেলেদের দন্দ্বের মতোই,
জুম্মার দিনে মসজিদের পেছনের কাতারে হা হা হু হু ধ্বনির মতোই,
একটু বকাতেই ভ্যা ভ্যা করে কান্নার শব্দে দুনিয়া উজাড়ের মতোই,
ফাইনাল শেষে নানাবাড়ির বায়নার সাথে নানাবিধ বায়নার মতোই,
একটাকায় পাঁচটি সাগরিকা চকলেটের খুশিতে হারাবার মতোই,
"একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও" বিজ্ঞাপনের মতোই,
মক্তবের বারান্দায় উচ্চ স্বরে তালে তালে আরবি পড়বার মতোই,
স্কুল মাস্টারের বেতের আঘাতে পড়ালেখার গুষ্টি উদ্ধারের মতোই,
আইসক্রিমওয়ালার মাইকে নানাবিধ ওয়াজ বা গান বাদ্যের মতোই,
হাঁড়ি পাতিল নিয়ে হুদাই মুদাই রান্না করে টুনিমুসি খেলবার মতোই,
অংক করতে বসে চোখের জলে গাল বেয়ে বুক ভেজাবার মতোই,
মাঝে মধ্যে বাড়িতে মেহমান আসাতে অকৃত্রিম খুশি হবার মতোই,
মুরব্বিদের কাছে বসে নানান অলৌকিক গল্পে বিভোরতার মতোই;
সর্বোপরি,
এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে নিরন্তর ছুটে চলে স্মৃতির পাতায় ঠাই দেওয়া হাজারো দুরন্তপনায়ই ছিলো আমাদের শৈশব;
যা চাইলেও কোন দিন আর ফিরে পাবো না কেউ, পাবো না কোন কিচ্ছুর বিনিময়েও ।
উত্তরাধিকার
দেয়ালে ঝুলানো ছবির ফ্রেমে,
চুপচাপ স্থির প্রিয়মুখ,
হারিয়ে গেছে মহাশূন্যে...
হারাবার পূর্বে পৃথিবীর প্রেমে, কামে, ঘামে;
পরিচয়ে,
সাজিয়ে গেছে সংসার, প্রিয়জন;
উত্তরাধিকার!
অতঃপর,
ধুলো জমেছে ছবির ফ্রেমে,
ভাটা পরেছে স্মৃতির প্রেমে;
সময়ের স্রোতে সব ধূসর বিষন্ন,
আর,
প্রিয়জন সবাই নিজেতে নিমগ্ন!
তুমি নেই কোথাও,
যেন তুমি ছিলেই না;
ঐ দেয়ালে ঝুলানো ছবির ফ্রেম ছাড়া অন্য কোথাও।
© 2025 by Md. Didarul Islam