আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: ওবায়দুল কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক,
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁদের বিদেশে বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, ভারত সরকারের আনুকূল্যে এই সরকার টিকে আছে। যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে, তাদের এই দেশের সরকারে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চান। দরজা খুলে দিলে টের পাবেন লাইন কত বড়। তাই হিসাব করে কথা বলবেন, এত অহংকার ভালো নয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ‘তুঙ্গে’ রয়েছে বলে দাবি করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়া বলছে, শেখ হাসিনা জনপ্রিয় নেত্রী। আপনারা (বিএনপি) বারবার ডাক দিয়েও জনগণকে মাঠে নামাতে পারেননি। নির্বাচন এলে টের পাবেন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতটা তুঙ্গে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে এটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিশ্বে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, কিন্তু কখনোই নারী, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যা করা হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তারা প্রচলিত আদালত এড়িয়ে গেলেও ইতিহাসের আদালত তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের আড়ালে জিয়াউর রহমান না থাকলে খুনিরা সাহস পেত না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে এই সভা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
#INB-NEWS-COM
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর
কূটনৈতিক প্রতিবেদক,
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২
বিশ্লেষকদের মত
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুই দেশের কূটনীতি ও রাজনীতিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকদের অনেকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের
জন্য মর্যাদাহানিকর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নানা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কেবল দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকরই নয়, এটা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে দল ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে সরকার কাউকে দায়িত্ব দেয়নি। আওয়ামী লীগ এ ধরনের অনুরোধ করেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত।
একই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। তিনি নিজের আগের দিনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’
কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য যে মন্তব্য করেন, সেটিকে ব্যক্তিগত মনে করার সুযোগ নেই। কোনো মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য বলেই বিবেচনায় নেবে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা কারও অজানা নয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পাশাপাশি ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি সরাসরি সমর্থন ছিল ভারতের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন ছিল, এটাও সবার জানা। কূটনীতিকেরা মনে করেন, ভারতের সমর্থন ও ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা যদি হয়েই থাকে, সেটা জনসমক্ষে আনাটা ঠিক হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অযাচিত মন্তব্য দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী বলা যায় এবং কী বলা যায় না, সেটি মনে হয় তিনি (আব্দুল মোমেন) মানেন না। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দচয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার চায় ভারত। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগ যে ভারতের কাছে নির্ভরযোগ্য, সেটি স্পষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের কাছে কেন এ ধরনের অনুরোধ জানানোর দরকার পড়ল, তা বোধগম্য নয়। ভারতকে যদি কোনো অনুরোধ করেও থাকেন, তাহলে তিনি অন্যায় করেছেন। আর যদি তিনি বলেও থাকেন, সেটি প্রকাশ্যে বলা ঠিক হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অনুরোধে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকেও চেষ্টা রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিবেশী দেশের কাছে অনুরোধের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গত এপ্রিলে প্রকাশ করেছিলেন; যা ভারতের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত এপ্রিলে ঢাকা সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন। জয়শঙ্করের জবাব ছিল, ‘প্রশ্নটা বরং ড. মোমেনকেই করুন।’
তবে আব্দুল মোমেনের গত বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এমন এক সময়ে এই বক্তব্য দিলেন, যখন দুই দেশ আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
#INB-NEWS-COM