Search this site
Embedded Files
INB NEWS. COM
  • প্রচ্ছদ/ Home
  • সর্বশেষ সংবাদ/ Latest News
    • গাড়ি চালক আবদুল আমিন খুনের আসামিরা বেপরোয়া, ধরা পড়েনি একজনও
    • ই–কমার্স অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করবে ডিবিআইডি ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা
    • বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সু চির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে: জান্তাপ্রধান
    • দুর্নীতির মামলায় সু চির আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড
  • বিশেষ সংবাদ/ Special News
    • তালেবানের এক বছর
  • বাংলাদেশ/ Bangladesh
  • রাজনীতি/ Politics
    • মোমেন ‘ঠিকই’ বলেছেন
    • বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: ওবায়দুল কাদের
    • সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন
  • বিশ্ব/ International
    • থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
    • রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর মিয়ানমারের টালবাহানায় অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন
  • মতামত/ Opinion
  • বিনোদন/ Entertainment
  • প্রযুক্তি/ Science & Technology
  • শিক্ষা/ Education
  • ছবি/ Photo
  • চাকুরি/ Jobs
  • বানিজ্য/ Corporate
    • যে গতিতে উঠেছিল, সেই গতিতেই নেমেছে ডিমের দাম
  • খেলা/ Sports
  • পরিবেশ/ Environment
  • জীবনযাপন/ Lifestyle
  • সুস্থতা/ Wellness
  • ধর্ম/ Religion
  • ভিডিও/ Video
INB NEWS. COM
  • প্রচ্ছদ/ Home
  • সর্বশেষ সংবাদ/ Latest News
    • গাড়ি চালক আবদুল আমিন খুনের আসামিরা বেপরোয়া, ধরা পড়েনি একজনও
    • ই–কমার্স অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করবে ডিবিআইডি ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা
    • বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সু চির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে: জান্তাপ্রধান
    • দুর্নীতির মামলায় সু চির আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড
  • বিশেষ সংবাদ/ Special News
    • তালেবানের এক বছর
  • বাংলাদেশ/ Bangladesh
  • রাজনীতি/ Politics
    • মোমেন ‘ঠিকই’ বলেছেন
    • বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: ওবায়দুল কাদের
    • সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন
  • বিশ্ব/ International
    • থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
    • রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর মিয়ানমারের টালবাহানায় অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন
  • মতামত/ Opinion
  • বিনোদন/ Entertainment
  • প্রযুক্তি/ Science & Technology
  • শিক্ষা/ Education
  • ছবি/ Photo
  • চাকুরি/ Jobs
  • বানিজ্য/ Corporate
    • যে গতিতে উঠেছিল, সেই গতিতেই নেমেছে ডিমের দাম
  • খেলা/ Sports
  • পরিবেশ/ Environment
  • জীবনযাপন/ Lifestyle
  • সুস্থতা/ Wellness
  • ধর্ম/ Religion
  • ভিডিও/ Video
  • More
    • প্রচ্ছদ/ Home
    • সর্বশেষ সংবাদ/ Latest News
      • গাড়ি চালক আবদুল আমিন খুনের আসামিরা বেপরোয়া, ধরা পড়েনি একজনও
      • ই–কমার্স অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করবে ডিবিআইডি ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা
      • বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সু চির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে: জান্তাপ্রধান
      • দুর্নীতির মামলায় সু চির আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড
    • বিশেষ সংবাদ/ Special News
      • তালেবানের এক বছর
    • বাংলাদেশ/ Bangladesh
    • রাজনীতি/ Politics
      • মোমেন ‘ঠিকই’ বলেছেন
      • বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: ওবায়দুল কাদের
      • সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন
    • বিশ্ব/ International
      • থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
      • রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর মিয়ানমারের টালবাহানায় অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন
    • মতামত/ Opinion
    • বিনোদন/ Entertainment
    • প্রযুক্তি/ Science & Technology
    • শিক্ষা/ Education
    • ছবি/ Photo
    • চাকুরি/ Jobs
    • বানিজ্য/ Corporate
      • যে গতিতে উঠেছিল, সেই গতিতেই নেমেছে ডিমের দাম
    • খেলা/ Sports
    • পরিবেশ/ Environment
    • জীবনযাপন/ Lifestyle
    • সুস্থতা/ Wellness
    • ধর্ম/ Religion
    • ভিডিও/ Video

সর্বশেষ সংবাদ/ Latest News

বিশেষ সংবাদ/ Special News

বাংলাদেশ/ Bangladesh

রাজনীতি/ Politics

বিশ্ব/ International

মতামত/ Opinion

বিনোদন/ Entertainment

বিনোদন/ Entertainment

প্রযুক্তি/ Science & Technology

শিক্ষা/ Education

ছবি/ Photo

চাকুরি/ Jobs

বানিজ্য/ Corporate

খেলা/ Sports

পরিবেশ/ Environment

জীবনযাপন/ Lifestyle

সুস্থতা/ Wellness

ধর্ম/ Religion

ভিডিও/ Video





নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দলে দলে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে কক্সবাজারে

মিয়ানমারে ১৯৭৮ সালে অপারেশন নাগা মিন বা ‘ড্রাগন কিং সেনসাস’ নামে পরিচিত সেনা অভিযান শুরু হলে মোহাম্মদ হোসেন প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তথাকথিত ‘বিদেশি বিতাড়নে’র নামে তৎকালীন সামরিক জান্তা ওই সময় জনশুমারি শুরু করেছিল। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হলে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ভয়ে তিন মাসের মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তখন রোহিঙ্গারা নিজভূমে ফিরে গিয়েছিল। কথা ছিল, রাখাইনে ফিরলে সব অধিকারই ফিরে পাবে তারা। বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। চার বছর পর ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনা হয়। এতে রোহিঙ্গারা আর মিয়ানমারের নাগরিক থাকল না। সবশেষ ২০১৫ সালের আইনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়।

প্রায় তিন দশক মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ হোসেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শেষবারের মতো তিনি বাংলাদেশে এলেন। তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের সংকটের শুরু ১৯৭৮ সালে। সেবার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তাঁরা স্বদেশে ফিরেছিলেন। জমি ফিরে পেলেও বাকি অধিকার তাঁদের দেওয়া হয়নি। বরং বঞ্চনা, নিষ্পেষণ থেকে একপর্যায়ে চরম নির্যাতন হয়ে ওঠে তাঁদের অনিবার্য নিয়তি।

সত্তরের কাছাকাছি বয়সী মোহাম্মদ হোসেন বলছিলেন, ‘বুড়ো হয়ে গেছি। জানি না, মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো জন্মভূমিকে দেখার সুযোগ হবে কি না! মিয়ানমারে আমার মৃত্যু হোক, এটাই চাই।’

মোহাম্মদ হোসেনের মতো কক্সবাজারের শিবিরের অধিকাংশ রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে চান তাঁদের আদি নিবাস মিয়ানমারের রাখাইনে। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের তাতমাদো বা সেনাবাহিনীর মনোভাব কী, সেটি রোহিঙ্গা কিংবা বিশ্ববাসীর অজানা নয়। তা ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর

মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন মিয়ানমার তো বটেই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকারের তালিকায়ও নেই। রাখাইনে এমন কোনো পরিবেশ ফেরেনি, যা মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের রাখাইনে ফিরতে উৎসাহ জোগায়। সবশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত মিশেল ব্যাশেলেতও প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। ফলে স্বদেশে ফেরাটা রোহিঙ্গাদের কাছে এখন এক অনিশ্চিত প্রত্যাশার প্রতিশব্দ।

এমন এক প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২৫ আগস্ট। রাখাইনের মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গাদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পাঁচ বছর আগে ঠিক এই দিনে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেনা অভিযানের পরের পাঁচ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই আছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। এখন পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশ কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হতাশ হলে তো চলবে না। কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছরের মধ্যে ছোট পরিসরে হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।’


রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর

মিয়ানমারের টালবাহানায় অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন

  • জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত মিশেল ব্যাশেলেতও প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন।

  • ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা বিফলে যায়।

  • রাখাইনে ফিরতে পাঁচ দফা শর্ত মানার দাবি রোহিঙ্গাদের।


রোহিঙ্গাদের ভরসা জাতিসংঘ

রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মাত্র তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি সই করেছিল। এর নেপথ্যে ছিল চীন। আন্তর্জাতিক পরিসরে মিয়ানমার এত বেশি নিন্দিত হচ্ছিল যে চীন কোনোভাবেই চায়নি এতে বাইরের কোনো পক্ষ যুক্ত হোক। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেঁধে দেওয়া সময়ে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা বিফলে যায়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হলেও একই ফল হয়েছিল।

চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত মিশেল ব্যাশেলেত কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। ওই সভায় উপস্থিত নারী, পুরুষ ও তরুণ মিলিয়ে অন্তত আটজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কাছে প্রশ্ন ছিল: সরকার চীনকে নিয়ে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছে। চীনের রাষ্ট্রদূত শিবির ঘুরে গেছেন। আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাহলে জাতিসংঘকে অনুরোধ করছেন কেন?

সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরও অনিশ্চিত। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ফিরতে চায় তারা।

উত্তরে ওই আটজন বলেন, ‘প্রত্যাবাসন তো শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাই (ইউএনএইচসিআর) করবে। তা ছাড়া চীন বরাবরই মিয়ানমার ও সে দেশের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে আসছে। তাই জাতিসংঘই আমাদের ভরসা।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেজার মিয়ানমার সফর শেষে এখন বাংলাদেশ সফর করছেন। গত মঙ্গলবার কক্সবাজার শিবির পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গারা তাঁর কাছেও প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।

দাবি পূরণ না হলে যাবে না রোহিঙ্গারা

২০১৯ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসনের চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরতে পাঁচ দফা শর্ত দেয়। এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া, রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং হত্যা ও নির্যাতনকারীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার। এসব প্রতিশ্রুতির বিষয়ে এখনো মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রত্যাবাসনের চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা। বাংলাদেশ ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে। মিয়ানমার যাচাই-বাছাই শেষে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশকে দিয়ে বলেছে, তারা রাখাইনের অধিবাসী ছিল। তবে তালিকাটি অসম্পূর্ণ। আবার তালিকার সবাইকে ফেরত নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে

মিয়ানমার। কারণ, ওই তালিকায় কিছু সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। পাশাপাশি অনেকের নামের বানানসহ নানা তথ্য অসম্পূর্ণ। ফলে এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ তালিকা ধরে কত রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যাবে, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।



যে গতিতে উঠেছিল, সেই গতিতেই নেমেছে ডিমের দাম

বাণিজ্য

যে গতিতে উঠেছিল, সেই গতিতেই নেমেছে ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২,

ডিমের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে

ডিমের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে গেছেফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘রকেটগতিতে’ বেড়ে যায় ডিমের দাম। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে তখন প্রতি হালি ডিমের দাম ৫৫ টাকার বেশি বিক্রি হয়। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম আবার কমতে শুরু করেছে। এখন ঢাকার খুচরা বাজারে হালিপ্রতি ডিম মিলছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা বা তার একটু ওপরে। অর্থাৎ, দাম বাড়ার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে ডিমের বাজার।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা এখন বাদামি রঙের এক ডজন ডিমের দাম রাখছেন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ফার্মের মুরগির সাদা রঙের ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম। আর দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ডজনে। বাজারে ডিমের সরবরাহেও সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা লিটন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় মাঝে হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়ে যায়। তিন-চার দিন হলো দাম কমে আগের অবস্থায় চলে এসেছে। একলাফে হালিতে ডিমের দাম কমেছে ১৫ টাকার মতো। দাম কমায় বেচাকেনাও ভালো।’

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন চার কোটির বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত এসব ডিমের বড় অংশ আসে গ্রামের খামার থেকে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় এসব ডিম দ্রুত পরিবহন করে দেশের বড় বাজারগুলোতে নিয়ে আসা হয়। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। কিন্তু তার প্রভাব ডিমের ওপর খুব বেশি পড়ার কথা না থাকলেও ডিমের দাম হালিতে ১৫ টাকার বেশি বেড়ে যায়।

বিপিআইসিসি বলছে, চলতি আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত খামার পর্যায়ে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হয়েছে ৯ টাকা ৭৩ পয়সা। আর খামারিরা সাদা রঙের ডিম পাইকারিতে বিক্রি করেছে ৯ টাকা ৪০ পয়সায়। সেই হিসাবে হঠাৎ করে বাজারে ডিমের দাম যখন বাড়ল, তখন খামারিরা বাড়তি মূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে। এতে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

এদিকে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আবার ডিমের দাম না কমলে সরকার বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিতে পারে—এমন ঘোষণার পর বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিম আমদানি করলেও খরচ বেশি পড়বে; কারণ, পরিবহন ব্যয় বেশি এবং ডিমের সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যয়বহুল। এতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এর চেয়ে বরং খামারিদের সুরক্ষা দিয়ে বাজার তদারকির মাধ্যমে সংকটের সমাধান চান তাঁরা।

খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়তি। লোকসানে পড়ে অনেক খামারি মুরগির সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর খামারিদের সুরক্ষা দেওয়া না গেলে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এখন প্রশাসনের চাপাচাপি ও চাহিদা পড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম স্বাভাবিকভাবে কমে এলেও উৎপাদন খরচের বাড়তি চাপ সামাল দিতে খামারিরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমের দাম এখন কমে এসেছে। আগের দামে ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম। বাজার এখন স্থিতিশীল, হঠাৎ করে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ডিমের উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। উৎপাদন ব্যাহত হলে দ্রুত বাজারে প্রভাব পড়বে। তাই খামারিদের সুরক্ষা দেওয়ার বিকল্প নেই।’ তবে ডিমের বাজার অস্থিতিশীলতার জন্য বড় খামারি ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করেন তিনি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটা বড় অংশ দিয়ে আবার মুরগির বাচ্চাও ফোটানো হয়। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুসারে, চলতি আগস্ট মাসে দেশে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা ছিল সপ্তাহে গড়ে ১ কোটি ৩২ লাখ।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২,

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওচার আট বছরের মেয়াদ শেষ হওয়া না হওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনার (রিভিউ) জন্য বিরোধীদের করা পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

২০১৪ সালে থাইল্যান্ডে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রায়ুথ। ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী খসড়াকৃত নতুন সংবিধানের আওতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি দেশটির বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী হন। সেনা প্রবর্তিত নতুন সংবিধান অনুযায়ী, প্রায়ুথ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে সর্বোচ্চ আট বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। বিরোধীরা বলছেন, চলতি মাসেই সে মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

আদালতে রিভিউয়ের আবেদন জানিয়ে প্রধান বিরোধী দল বলেছে, চলতি মাসেই প্রায়ুথের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। কারণ, জান্তাপ্রধান হিসেবে তিনি যত দিন নিয়োজিত ছিলেন, সে সময়টুকুকেও তাঁর মেয়াদের মধ্যে হিসাব করা উচিত। তবে সমর্থকদের কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, ২০১৭ সালে নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর কিংবা ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর থেকেই প্রায়ুথের মেয়াদ হিসাব করতে হবে। সে অনুযায়ী, প্রায়ুথ ২০২৫ সাল পর্যন্ত কিংবা ২০২৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাবেন।

বুধবার সাংবিধানিক আদালতের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন প্রায়ুথ ওচা। আদালতের পাঁচ বিচারপতির প্যানেলের চার বিচারপতিই বরখাস্তের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আজ থেকেই এ রায় কার্যকর হবে।

তবে এ পিটিশনের ব্যাপারে আদালত চূড়ান্ত রায় কবে দেবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। থাইল্যান্ডের সাবেক সেনাপ্রধান এবং বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী প্রাউয়িত ওংসুয়ান অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিকও চায় প্রায়ুথ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক,

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২,

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মাহবুব তালুকদারের মেয়ে আইরিন মাহবুব প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আইরিন মাহবুব বলেন, ‘আজ বুধবার সকালে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় বাবার। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, মাহবুব তালুকদার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। বেলা দেড়টার দিকে তিনি মারা যান।’

মাহবুব তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মাহবুব তালুকদার ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায়। তিনি ঢাকা নবাবপুর হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাঁকে উপসচিবের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার নিযুক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ উল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার তাঁর সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাঁকে তদানীন্তন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরে বিসিএস প্রশাসন হিসেবে রূপান্তরিত হয়। একসময়ে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয়।

মাহবুব তালুকদার একজন সৃজনশীল লেখক। কবিতা, গল্প, উপন্যস, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৪০। তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তাঁর স্ত্রীর নাম নীলুফার বেগম। এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের এক বছর পূরণের দিন কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের সামনে তালেবান সদস্যরা উল্লাস করেন

আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করেন তালেবানের সদস্যরা। এ সময় তাঁরা তাঁদের মিত্র হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রয়াত প্রধান নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানির ছবি বহন করেন। ১৫ আগস্ট কাবুলের আহমাদ শাহ মাসুদ স্কয়ারে

তালেবানের এক বছর

কাবুল থেকে কান্দাহারের দিকে এগোচ্ছে আফগানিস্তান

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক,

আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোকে তাড়াতে পারার ঘটনা তালেবানের জন্য গৌরবের ছিল। নির্বিঘ্নে এক বছর দেশ পরিচালনাও কম গৌরবের মনে করছে না তারা। ক্ষমতা গ্রহণের বছরপূর্তি উদ্‌যাপন করতে ১৫ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করে তালেবান। তবে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসবের আমেজ ছিল, তা নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মোটাদাগে কোনো ফয়সালা করতে পারেনি তালেবান। সংকট আছে বৈদেশিক স্বীকৃতি নিয়েও। আত্মঘাতী হামলার শঙ্কায় থাকতে হয় খোদ কাবুলেও।

তারপরও রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণে তালেবান সফলতার দাবি করছে। সর্বশেষ ১২ মাসে শাসকদের কোনো উপদলীয় কোন্দলও সামনে আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো জনবিক্ষোভ হয়নি। আবার বিশ্বের কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতিও দেয়নি।

তালেবানের ক্ষমতার ভিত্তি বাড়তি শক্তি পেয়েছে

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই আফগানিস্তানে শাসক তালেবানের পুরো চিত্র আসে না। আবার দেশটির ভেতর থেকেও নির্ভরযোগ্য সংবাদের আকাল চলছে। সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করা দুরূহ সেখানে।

টুইটার ও ফেসবুকের ওপর ভরসা করে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর সামান্য যা খবর মেলে, তার বড় অংশ পানশির ও সারে পোলে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহসংক্রান্ত। নারীদের আন্দোলন-সংগ্রামের কিছু খবরও শেয়ার করেন কেউ কেউ। এর বাইরে সামাজিক জীবনধারায় আফগানরা কীভাবে আছে, তার নির্মোহ বিস্তারিত প্রতিবেদন গত এক বছরে সামান্যই পাওয়া গেছে। যুদ্ধোত্তর আফগানিস্তান দুঃখজনকভাবে বিশ্ব মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে। আবার একই সঙ্গে তালেবানের প্রতি বৈশ্বিক মনোভাবও অন্ধভাবে বৈরী।

কিন্তু তালেবানের ক্ষমতা যে শক্ত ভিত পেয়েছে, তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিপরীত দিকে, গত বছরের আগস্টে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জন্য দেশের ভেতরে কোনো সহানুভূতি দেখা যায়নি। দেশের বাইরেও পুরোনো সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি জনসমর্থন প্রকাশ পায়নি।

তালেবান প্রশাসন অনেক বেশি সক্রিয়

কাবুলে ন্যাটোর বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথম বার্ষিকীতে সামান্য যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, তাতে সবাই যুদ্ধ থামাতে পারাকে বড় এক প্রাপ্তি হিসেবে দেখেছে। তবে রাজধানীতে নারীদের বারবার মিছিল করার চেষ্টা জানিয়ে দিচ্ছিল অতীতে দেশ রক্ষার যুদ্ধে পুরুষেরা যেভাবে একচেটিয়া ছিল, এখনকার টিকে থাকার যুদ্ধে তেমনি নারী সমাজ এককভাবে বিশেষ সংকটে আছে।

দেশজুড়েই নারীপ্রধান পরিবারগুলো সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে। নারীদের কাজের স্বাভাবিক অনুমতি নেই। ফলে আয়রোজগারও নেই। দীর্ঘ যুদ্ধের ফল হিসেবে পুরুষ হারানো এ রকম পরিবারের সংখ্যা বিপুল। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির হিসাবে দেশটিতে ৬০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দরকার। সহায়তা পাওয়া গেছে এর অর্ধেকের মতো। বাদাখশান, ঘোর, জাইকুন্দি ও আরুজগানে খাদ্য পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। শেষের তিনটি প্রদেশই মধ্য আফগানিস্তানে। তুলনামূলকভাবে ভালো পরিস্থিতির কাবুলেও দারিদ্র্যের ব্যাপকতা জানিয়ে দেয় কর্মহীন মানুষ ও সাহায্যপ্রার্থীদের বিপুল উপস্থিতি। নিরাপত্তা পরিস্থিতিও গত বছরের চেয়ে ভালো। বহির্বিশ্বের যে কেউ চাইলে সেসব প্রান্তিক অঞ্চলেও যেতে পারে, যেখানে ২০২১ সালের আগে প্রাণভয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। হামিদ কারজাইয়ের মতো তালেবানবিরোধী নেতাও কাবুলেই থাকছেন। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আবার এত ভালো নয় যে পাকিস্তানে থাকা প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থী দেশে ফিরতে পারবে।

গত এক বছরে চোরাগোপ্তা আত্মঘাতী হামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। বিশ্বজুড়ে সামরিক সংঘাত নজরদারি করা সংস্থা একলেড বলছে, গত এক বছরে আফগানিস্তানে অন্তত ৪ হাজার ১০০ মানুষ মারা গেছে সামরিক সহিংসতায়। বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল ৩৯৩টি। মৃত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছিল গত সরকারের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এ ছাড়া আছে পানশির ও বাগলানের প্রতিরোধযুদ্ধের বিরুদ্ধে তালেবানের অভিযানে নিহত প্রায় ৪৮৫ জন।

তারপরও ২০২১ সালের আগের পরিবেশের তুলনায় এখনকার অবস্থা বেশ ‘শান্তিপূর্ণ’। এই সুযোগে দেশটিতে ব্যবসায়েও ভালো প্রসার ঘটছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না থাকার পরও তালেবান যে প্রশাসন চালিয়ে নিতে পারছে, তার বড় উৎস রাজস্বের ভালো জোগান। ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তে পণ্য লেনদেন ব্যাপক গতি পেয়েছে। স্থলবন্দরগুলো থেকে গত এক বছরে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের সমান কর জমা হয়েছে কোষাগারে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উপকৃত পাকিস্তানিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার মুখে ইসলামাবাদ তুলনামূলক সস্তা দামে আফগান কয়লা পেয়েছে বেশুমার। দেশের ভেতর সমালোচনা হওয়ায় পরে অবশ্য তালেবান কয়লার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। রাজস্ব বাড়তে থাকায় অবকাঠামোগত কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগের সরকারের পালিয়ে যাওয়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতিমধ্যে নতুন সরকারে যোগ দিয়েছেন।

ডিক্রি আসছে মূলত নারী সমাজ ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সূত্রে কাবুলের প্রতিবাদী নারীরা বিশ্ব মনোযোগ কেড়েছেন সম্প্রতি। বছরজুড়েই তাঁরা কাবুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়। ১৫ আগস্ট বিজয় উৎসবের দিনও সে রকম এক বিক্ষোভ হলো। তাঁদের হাতে লেখা কাগজে স্লোগান ছিল ‘রুটি, কাজ, স্বাধীনতা’। বন্দুকধারীরা এসে তাঁদের দ্রুতই তাড়িয়ে দেয়।

ইসলামে নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ না হলেও তালেবান সরকার এখনো মাধ্যমিক স্তরে বন্ধ রেখেছে সেটা। শিক্ষা ও কাজের নিষেধাজ্ঞা দেশটির নারীদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলেছে। ইউনিসেফের হিসাবে গত আগস্টের আগে প্রায় আট লাখ মেয়ে দেশটির বিভিন্ন স্কুলে পড়ত। তালেবানের ওপরমহলে নারীশিক্ষা নিয়ে অনিচ্ছা আছে। মার্চে শুরু হওয়া স্থানীয় সমাজের নতুন বছর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় একবার। পরে সেই অনুমোদন বাতিল হয়। জুলাইয়ে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত ধর্মীয় মুরব্বিদের এক সম্মেলনে দেখা গেছে, দু-তিন হাজার প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দু-তিনজন মেয়েদের স্কুলের যাওয়ার পক্ষে। নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও নিষেধের তালিকামুক্ত হয়নি এখনো। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের ব্যাপারেও তালেবান মুরব্বিদের অবস্থান নেতিবাচক। গত এক বছরে শতাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম অফিস বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ করতে হয়েছে বিবিধ কারণে। সংবাদকর্মীদের বড় অংশ এখন বেকার সেখানে। পত্রপত্রিকাগুলো দ্বিমুখী চাপে আছে। একদিকে অর্থনীতির বিপন্নতা, অন্যদিকে পছন্দমাফিক খবর পরিবেশনের জন্য ক্ষমতাসীনদের চাপ। গত এক বছরে তালেবান যত ডিক্রি জারি করেছে, তার বড় অংশই নারী সমাজ ও গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে। সব সংবাদমাধ্যমেই তালেবানের ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক এখন।

ভারতও যখন তালেবানের প্রতি আগ্রহী

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আফগানিস্তান নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ বেশ কমে যায়। পাকিস্তানে ক্ষমতার লড়াইয়ে ইমরান খান হেরে যাওয়ার পর সেই আগ্রহ আরও কমে।

ইমরান হামেশা তালেবানের প্রতি অন্যায় বৈরিতার জন্য বিশ্বনেতাদের দোষারোপ করে দেশটির দিকে সবার দৃষ্টি টেনে রাখতেন। ইমরানের উৎসাহের কারণ বোঝা কঠিন ছিল না। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এক অর্থে পাকিস্তানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল। তালেবানের মাধ্যমে দেশটিতে তারা প্রত্যাশিত প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়। বিশেষ করে ন্যাটোর অধীনে আফগান মাটিতে ভারত যে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ভোগ করত, গত এক বছর সেটা ছিল না। পাকিস্তানের জন্য যা বড় এক সন্তুষ্টির জায়গা। তবে তালেবান যতটা ইসলামাবাদের অনুগত হবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা ঘটেনি। পাকিস্তানের তালেবানপন্থী টিটিপিকে দমনে বাড়তি কোনো সহায়তা দেয়নি কাবুল। এটা রাওয়ালপিন্ডিতে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে আফগানিস্তানে অন্তত এক দফা বিমান হামলা চালিয়ে সেই ক্ষোভ মেটানো হয়। ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত ২ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখার প্রাচীর বানানো নিয়েও নিমরোজ ও নানগাহর প্রদেশে তালেবানের অসন্তোষ দেখা গেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

এই উভয় দেশের যেকোনো দূরত্ব থেকে সুযোগ নিতে নয়াদিল্লিও পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যে আগের আফগান নীতি পাল্টেছে তারা। জুনে ভারতের একটি প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করেছে। নয়াদিল্লি থেকে বার্তাটি ছিল স্পষ্ট। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারা খুবই আগ্রহী। ইরানেরও একই রকম আগ্রহ। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও তেহরানে আফগান কূটনীতিবিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম আছে। তবে পশতুদের শাসনে শিয়া হাজারাদের নিরাপত্তাহীনতায় ইরান উদ্বিগ্ন এবং ইরান-আফগান সীমান্তের নিমরোজ এলাকায় গত ১২ মাসে কয়েক দফা ছোট আকারের সংঘর্ষও হয়েছে।

আফগানিস্তানে হাজারাদের মৃত্যুর বড় কারণ আইএস নামে পরিচিত গোষ্ঠীর আত্মঘাতী হামলা। তালেবান আন্তজার্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিলেও ওদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলে মনে হয় না। আইএস হাজারাদের মসজিদ ও উৎসবে হামলা চালিয়ে প্রায়ই তালেবানকে জানিয়ে দিচ্ছে তাদের উপস্থিতির কথা।

বিজয়বার্ষিকী যাদের জন্য বিব্রতকর ছিল

আফগানিস্তানে তালেবানের ১৫ আগস্টের বিজয় উৎসব ন্যাটো ও ওয়াশিংটনের জন্য নিশ্চিতভাবে বিব্রতকর এক মুহূর্ত। তবে গত বছর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় পালিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে চাপে ছিল, সম্প্রতি আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুষিয়ে নিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। জাওয়াহিরিকে লুকিয়ে রাখা তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দর–কষাকষিতে ওয়াশিংটনকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। পাকিস্তানের জন্যও এটা বিব্রতকর হয়েছে। তালেবানের হয়ে ইসলামাবাদ এত দিন বিশ্বজুড়ে সুপারিশ করে বেড়ালেও কাবুলে আল-কায়েদার উপস্থিতি তাদের এখন থামতে বাধ্য করেছে।

তালেবানের দফায় দফায় অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের হাতে আটকে থাকা সাত বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আফগান তহবিল ছাড় করেনি। কয়েক হাজার তালেবান সামরিক কমান্ডারকে মোকাবিলায় তাদের যুদ্ধোত্তর এই কৌশল বাস্তবে প্রায় চার কোটি সাধারণ আফগানকেই শাস্তি দিচ্ছে কেবল। এতে তালেবান শাসকদের আরেক ধরনের সুবিধাও হয়েছে। দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও খাদ্যাভাবের জন্য তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী হিসেবে তুলে ধরতে পারছে।

তালেবানের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরী মনোভাবের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের গত এক বছরের আফগান নীতিতেও। তারা গত এক বছরে প্রয়োজন ও প্রতিশ্রুতির মাত্র অর্ধেক সহায়তা দিতে পারল দেশটিতে। আন্তর্জাতিক সহায়তার এ রকম ঘাটতি আফগানিস্তানে নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তার অনেকখানি দায় অবশ্যই জাতিসংঘ এবং বাইডেন প্রশাসনের। তবে এই দুই শক্তি সাহায্য, সহযোগিতা এবং স্বীকৃতির পথে তালেবানের যেসব সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে, সেসবও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু তালেবান তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারিক প্রশাসনে মানবাধিকারমুখী কোনো ধরনের সংস্কারসাধনে আপাতত অনিচ্ছুক। বিশেষ করে কান্দাহারের নেতৃত্ব খুব রক্ষণশীল অবস্থান নিয়ে আছে। যদিও গত এক বছরে শাসক পরিমণ্ডলে কোনো উপদলীয় সংঘাত ও মতদ্বৈধতা সামনে আসেনি। তবে এটা বোঝা গেছে, কাবুল ও কান্দাহারে দুটি ভরকেন্দ্র আছে তালেবানের।

কাবুলের শাসকেরা বৈশ্বিক চাওয়া-পাওয়া সমন্বয় করে এগোতে ইচ্ছুক। কিন্তু কান্দাহারে শেখ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নেতৃত্বে তালেবানের পুরোনো একাংশ দুই দশক আগের (১৯৯৬-২০০১) অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ। অনেক বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত যখন কান্দাহার থেকে আসছে, তখন কাবুলের অনেক নেতাই যে অস্বস্তি বোধ করবেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। একই কারণে, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাও কাবুলের নেতাদের সঙ্গে আলাপে কম আগ্রহী। সবাই জেনে গেছে, নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রয়োজনীয় সবুজসংকেত পেতে হবে কান্দাহার থেকে। কাতারের দোহাভিত্তিক তালেবান অফিসটিও ইতিমধ্যে গুরুত্ব হারিয়েছে।

সরকারের ভেতরে দুই ধারার এই ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণে অনেক প্রদেশে শাসনের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। কাবুলেও ২০২১ সালের ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ মন্ত্রিসভাকে স্থায়ী আকার দেওয়া যায়নি এখনো। পাওয়া যায়নি স্বাধীনতা–পরবর্তী নতুন কোনো সংবিধানও। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জন-অনুমোদিত কোনো সংবিধান না থাকায় তালেবান নেতাদের কথাই আপাতত ‘আইন’ হিসেবে চালু হচ্ছে। যেকোনো বিষয়ে বাদী ও বিচারক তারাই। এক বছর শেষেও ‘তালেবান আন্দোলন’ প্রচলিত সরকারে অনুবাদ হয়নি এখনো।


●আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক





আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক,

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁদের বিদেশে বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, ভারত সরকারের আনুকূল্যে এই সরকার টিকে আছে। যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে, তাদের এই দেশের সরকারে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই।

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চান। দরজা খুলে দিলে টের পাবেন লাইন কত বড়। তাই হিসাব করে কথা বলবেন, এত অহংকার ভালো নয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ‘তুঙ্গে’ রয়েছে বলে দাবি করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়া বলছে, শেখ হাসিনা জনপ্রিয় নেত্রী। আপনারা (বিএনপি) বারবার ডাক দিয়েও জনগণকে মাঠে নামাতে পারেননি। নির্বাচন এলে টের পাবেন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতটা তুঙ্গে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে এটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিশ্বে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, কিন্তু কখনোই নারী, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যা করা হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তারা প্রচলিত আদালত এড়িয়ে গেলেও ইতিহাসের আদালত তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের আড়ালে জিয়াউর রহমান না থাকলে খুনিরা সাহস পেত না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে এই সভা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

#INB-NEWS-COM

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর

কূটনৈতিক প্রতিবেদক,

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২

বিশ্লেষকদের মত

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুই দেশের কূটনীতি ও রাজনীতিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকদের অনেকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের

জন্য মর্যাদাহানিকর

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নানা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কেবল দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকরই নয়, এটা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে দল ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে সরকার কাউকে দায়িত্ব দেয়নি। আওয়ামী লীগ এ ধরনের অনুরোধ করেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত।

একই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। তিনি নিজের আগের দিনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’

কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য যে মন্তব্য করেন, সেটিকে ব্যক্তিগত মনে করার সুযোগ নেই। কোনো মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য বলেই বিবেচনায় নেবে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা কারও অজানা নয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পাশাপাশি ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি সরাসরি সমর্থন ছিল ভারতের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন ছিল, এটাও সবার জানা। কূটনীতিকেরা মনে করেন, ভারতের সমর্থন ও ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা যদি হয়েই থাকে, সেটা জনসমক্ষে আনাটা ঠিক হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অযাচিত মন্তব্য দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী বলা যায় এবং কী বলা যায় না, সেটি মনে হয় তিনি (আব্দুল মোমেন) মানেন না। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দচয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার চায় ভারত। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগ যে ভারতের কাছে নির্ভরযোগ্য, সেটি স্পষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের কাছে কেন এ ধরনের অনুরোধ জানানোর দরকার পড়ল, তা বোধগম্য নয়। ভারতকে যদি কোনো অনুরোধ করেও থাকেন, তাহলে তিনি অন্যায় করেছেন। আর যদি তিনি বলেও থাকেন, সেটি প্রকাশ্যে বলা ঠিক হয়নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অনুরোধে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকেও চেষ্টা রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিবেশী দেশের কাছে অনুরোধের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গত এপ্রিলে প্রকাশ করেছিলেন; যা ভারতের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত এপ্রিলে ঢাকা সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন। জয়শঙ্করের জবাব ছিল, ‘প্রশ্নটা বরং ড. মোমেনকেই করুন।’

তবে আব্দুল মোমেনের গত বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এমন এক সময়ে এই বক্তব্য দিলেন, যখন দুই দেশ আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

#INB-NEWS-COM

আসিফ নজরুল

বিশ্লেষণ

মোমেন ‘ঠিকই’ বলেছেন

আসিফ নজরুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৮: ২৫

‘বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য আমেরিকাকে অনুরোধ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেটি করতে যা যা করা দরকার, তা করতে মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি। তিনি নিজেই বলেছেন যে আমেরিকায় গিয়ে তিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে বলেছেন।’

ওপরে যা লিখলাম, তা কল্পিত। কিন্তু এটি যদি সত্যি হতো, কী প্রতিক্রিয়া হতো দেশে? কতগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতো মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে? আমরা সহজেই এসব অনুমান করতে পারি।

প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, এ ধরনের কথা আসলে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। এটি তিনি নিজেই গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শহরে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে সবাইকে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে তবু ধন্যবাদ। সরকার যে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তা তিনি অকপটে বলেছেন। এর নজির বা আলামতও পাওয়া গেছে অতীতে। ২০১৪ সালে অধিকাংশ দলের মতো এরশাদের জাতীয় পার্টিও যখন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল এবং একতরফা নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছিল, তখন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফর করছিলেন। এরশাদ সে সময় জানিয়েছিলেন যে ভারত তাঁকে জোর করে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করিয়েছে। সারা বিশ্বের পর্যবেক্ষকদের বর্জনের মধ্যে ভুটান ছাড়া একমাত্র ভারতই সেই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। ২০১৪ তো বটেই, আরও বিতর্কিত ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ভারত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হিসেবে সোৎসাহে সার্টিফাই করেছিল। এগুলো ভারত করেছে প্রকাশ্যে। এমন রাখঢাকহীন সমর্থন করলে আড়ালেও অনেক কিছু করার কথা। বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে সেটি করার সামর্থ্য ও সুযোগ ভারতের আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কি একটি স্বাধীন দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য? পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে সত্য উদোম করে দিয়েছেন, তা কি অসীম আত্মদানে দেশ স্বাধীন করা জাতির জন্য গৌরবজনক? ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রকৃতিই বা কি এই সরকারে আমলে?


২.

বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ভারতকে কিছু বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সীমান্তে এখন ভারতের অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। বছরে ২৮ লাখ মানুষ ভারতে বেড়াতে যায়। কয়েক লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা হলেও তিনি ও সরকার নীরব থাকেন।

কিন্তু এগুলো যদি ক্ষমতায় থাকার বিনিময়মূল্য হয়, তাহলে তা কি স্বস্তিকর বাংলাদেশের জন্য?

প্রশ্ন আরও আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যমতো বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা হলে সরকার নীরব থাকবে কেন? যে সীমান্তে গুলি করে মেরে ফেলা হয় বাংলাদেশের মানুষকে, দেওয়া হয় বিদ্যুতায়িত কাঁটাতারের বেড়া, সেখানে ভারতের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে না—বাংলাদেশের মন্ত্রীর এ কেমন আত্মতৃপ্তি? তিনি আমাদের কী বার্তা দিচ্ছেন আসলে? ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখবে, বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে? বিষয়টি কি এমনই?

৩.

ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থনদানকারী দেশ। কিন্তু এ জন্য ভারতকে কোনো প্রভুত্ব, খবরদারি বা একচেটিয়া সুবিধা দেওয়ার জন্য শর্ত ছিল না। ভারতের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করিয়ে, যৌথ নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবি করে, পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলনে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল। তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত সংবিধানে ক্ষমতায় আসা ও থাকার জন্য নিরঙ্কুশভাবে জনগণের ভোটাধিকারের ওপর নির্ভর করার কথা বলা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছেন মানুষের ভোটে, ভারতের সমর্থনে নয়। কোনো দিন এভাবে অন্য দেশের সমর্থন চাননি তিনি, গণপরিষদে আলোচনাকালে নির্বাচনে হারলে আনন্দের সঙ্গে বিরোধী দলকে স্বাগত জানাবেন বলেছিলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তাই সংবিধানবিরোধী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী। তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারতের কাছে কারিগরি বা প্রযুক্তি-সহায়তা চাইতে পারতেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের অবাধ হস্তক্ষেপ চাইতে পারেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বক্তব্য বাংলাদেশের মানুষের জন্য চরম অবমাননাকরও। এটি বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারের প্রতি চরম অস্বীকৃতিজ্ঞাপন, জনরায়ের প্রতি অবজ্ঞাসূচক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্বেগজনক। তবে আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে এই সন্দেহ যে এটি শুধু তাঁর বক্তব্য বা দৃষ্টিভঙ্গি কি না? অনলাইনে মন্তব্য দেখলে মনে হয় অনেক মানুষ বিশ্বাস করে ক্ষমতায় থাকার উপায় হিসেবে বর্তমান সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনই ঘটিয়েছেন তিনি তাঁর বক্তব্যে।


৪.

জনাব মোমেনের বক্তব্যের পর ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্য। সরকারের কোনো মন্ত্রী বেফাঁস কথা বললে এ রকম আত্মরক্ষামূলক বক্তব্য জনাব কাদের আগেও দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারি না যে রাষ্ট্রীয় সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ভারতে গিয়ে দেশটির সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ ব্যক্তিগত হয় কী করে? ব্যক্তি মোমেন সেখানে গিয়ে এসব বলেননি, বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন—এই নিরেট বাস্তবতা অনুধাবনের শক্তি জনাব কাদেরের নেই—এটা কি বিশ্বাস করার মতো কিছু?

তা ছাড়া এ ধরনের কথাবার্তা নতুন বা আকস্মিক নয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য। তিনি এর আগে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো বলে অচিন্তনীয় বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে এমন সম্পর্কের অনুমোদন নেই, সেখানে শুধু সমমর্যাদাভিত্তিক বন্ধুত্বের কথা আছে। তিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার ভারতীয় অভিবাসীদের র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে অন্য দেশের নাগরিকদের ভূমিকা রাখার কোনো অবকাশ নেই। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ভারতীয় অভিবাসীদের সমাবেশে এ কথা বলার আগে তাঁর স্মরণ রাখা উচিত ছিল, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এসব বক্তব্য ব্যক্তিগত মতামত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই; বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতামতের দায় শুধু তাঁর নয়, গোটা মন্ত্রিসভা তথা বর্তমান সরকারের। আমাদের সংবিধানে মন্ত্রীদের যৌথ জবাবদিহির বিধান রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই জবাবদিহি আদায় করার মতো সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ দেশে নেই আর।

কিন্তু তারপরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সরকারের সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই দেশের মালিকানা কোনো সরকার বা সংসদের নয়। এ দেশের মালিকানা জনগণের। এই জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকারকে সম্মান না করে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রকাশ্যে কোনো দেশের সাহায্য চাওয়া এবং এ জন্য ‘যা যা দরকার’ অবাধভাবে তা করার আহ্বান জানানো ধৃষ্টতার শামিল।

কোনো সরকারের মন্ত্রীকে এই ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষ দেশ স্বাধীন করেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত আমাদের আদি সংবিধানে এমন কোনো অনুমোদনও কাউকে দেওয়া হয়নি।

# আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। সাউথ এশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটসের সাবেক ব্যুরো সদস্য।


গাড়ি চালক আবদুল আমিন খুনের আসামিরা বেপরোয়া, ধরা পড়েনি একজনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার,

শুক্রবার আগস্ট ১৯, ২০২২

আপডেটঃ ২০২২-০৮-১৯

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধোয়া পালং রাবেতা এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গাড়ি চালক আব্দুল আমিনকে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুনের আসামিরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। গ্রেফতার হয়নি একজনও। হত্যা মামলার বাদী কামাল হোসেনকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। ঘটনার পর থেকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে।

গত ৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বসত বাড়ির সীমানা বিরোধের জের ধরে আবদুল আমিনকে ব্যাপক মারধর ও কুপাঘাত করে প্রতিপক্ষরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ঘটনার পরের দিন (১০ আগস্ট) সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই কামাল হোসেন। যার থানার মামলা নং-১৭/৪৩৮।

আসামিরা হলেন, খুনিয়া পালং ৬ নং ওয়ার্ডের ধোয়া পালং রাবেতা পাড়ার আব্দুল বারির ছেলে নুরুল হক (২৫), আব্দুছ সবুরের ছেলে শাহজাহান (৩৯), আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা ড্রাইভার (৩৮) ও সুলতান আহাম্মদের ছেলে আব্দুল বারী (৫৫)। অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে আরও তিনজন।

নিহত আবদুল আমিন একই এলাকার মৃত ইবনে আমিনের ছেলে। পেশাগত সে পিকআপ গাড়ী চালক এবং ৫ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক। একমাত্র উপার্জনকারী আবদুল আমিনকে হত্যার পর পরিবারে চরম অসহায়ত্ব দেখা দিয়েছে। অভাব-অনটনের দিন কাটছে বলে জানান স্ত্রী নুর ফাতেমা বেগম।

মামলার বাদী কামাল হোসেন জানান, এক সপ্তাহ পার হলেও হত্যা মামলার একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি। আমির হামজাসহ অন্যান্য আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আয়-রোজগার না থাকায় নিহতের স্ত্রী ও তার ছয় সন্তানের করুন দিন যাচ্ছে। দ্রুত সময়ে আসামিদের গ্রেফতারের দাবি কামাল হোসেনের।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এক আসামির লাস্ট লোকেশন কক্সবাজার, আরেকজন চট্টগ্রাম দেখা যায়। এরপর থেকে দুইজনই সিম ও ডিভাইস সম্পন্ন বন্ধ রাখে। অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন।

ই–কমার্সপ্রতীকী ছবি

ই–কমার্স

অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করবে ডিবিআইডি

ই-কমার্সে অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধে ডিবিআইডির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ভোক্তা–ব্যবসায়ী দুই পক্ষই লাভবান হবে।

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

দেশে ই-কমার্স করতে হলে উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ডিবিআইডি) নিতে হবে। যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করবেন, তাঁদেরও এই নিবন্ধন লাগবে। এতে একদিকে গ্রাহকেরা প্রতারিত হলে প্রতিকার পাবেন, অনলাইন ব্যবসায় স্বচ্ছতাও আসবে। নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করতে সরকার ১৩ আগস্ট ওয়েবসাইট চালু করেছে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রক্রিয়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কোনো ওয়েবসাইট না থাকায় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ছিল। গত ১৩ আগস্ট থেকে নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এখন যেকোনো ই-কমার্স ব্যবসায়ী www.dbid.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।

ডিবিআইডি সফটওয়্যারটির তদারকি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্প। এটুআইয়ের জাতীয় পরামর্শক আবদুল মুত্তালিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন ও অনুমোদন—দুটি প্রক্রিয়াই যতটা সম্ভব সহজ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যবসাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনা সহজ হবে।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি

বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সু চির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে: জান্তাপ্রধান

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার,

বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। দেশটির সামরিক সরকারের (জান্তা) প্রধান মিন অং হ্লাইং এ কথা জানিয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় সৃষ্ট সংকটের অবসানে এমনটা জানালেন তিনি। খবর এএফপির।

এক বিবৃতিতে জান্তাপ্রধান বলেন, ‘আইন মেনে তাঁর (সু চি) বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁর মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে আমরা আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করতে যাচ্ছি।

’গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ৭৭ বছর বয়সী সু চি। এর পর থেকে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির স্বল্প সময়ের গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে।

বেশ কয়েকটি অভিযোগে জান্তা পরিচালিত রুদ্ধদ্বার আদালতে সু চির বিচার চলছে। এখন পর্যন্ত একাধিক মামলায় তাঁর ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

বাকি মামলাগুলোয় দোষী সাব্যস্ত হলে কয়েক দশক সাজা হতে পারে গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রীর। সু চির বিরুদ্ধে চলমান এসব মামলার শুনানিতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। মামলার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর আইনজীবীর ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব মামলা কবে নাগাদ শেষ হবে, সে বিষয়েও কোনো ইঙ্গিত দেয়নি জান্তা।

গত জুলাই মাসে সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন এএফপিকে বলেন, এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসানে সু চির সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসার বিষয়টি ‘অসম্ভব নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘এটা অসম্ভব, আমরা বলতে পারি না।’


মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি

বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সু চির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে: জান্তাপ্রধান

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার,

বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। দেশটির সামরিক সরকারের (জান্তা) প্রধান মিন অং হ্লাইং এ কথা জানিয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় সৃষ্ট সংকটের অবসানে এমনটা জানালেন তিনি। খবর এএফপির।

এক বিবৃতিতে জান্তাপ্রধান বলেন, ‘আইন মেনে তাঁর (সু চি) বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁর মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে আমরা আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করতে যাচ্ছি।

’গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ৭৭ বছর বয়সী সু চি। এর পর থেকে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির স্বল্প সময়ের গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে।

বেশ কয়েকটি অভিযোগে জান্তা পরিচালিত রুদ্ধদ্বার আদালতে সু চির বিচার চলছে। এখন পর্যন্ত একাধিক মামলায় তাঁর ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

বাকি মামলাগুলোয় দোষী সাব্যস্ত হলে কয়েক দশক সাজা হতে পারে গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রীর। সু চির বিরুদ্ধে চলমান এসব মামলার শুনানিতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। মামলার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর আইনজীবীর ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব মামলা কবে নাগাদ শেষ হবে, সে বিষয়েও কোনো ইঙ্গিত দেয়নি জান্তা।

গত জুলাই মাসে সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন এএফপিকে বলেন, এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসানে সু চির সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসার বিষয়টি ‘অসম্ভব নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘এটা অসম্ভব, আমরা বলতে পারি না।’


তালেবানের এক বছর

কাবুল থেকে কান্দাহারের দিকে এগোচ্ছে আফগানিস্তান

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২,

গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের এক বছর পূরণের দিন কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের সামনে তালেবান সদস্যরা উল্লাস করেন

আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করেন তালেবানের সদস্যরা। এ সময় তাঁরা তাঁদের মিত্র হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রয়াত প্রধান নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানির ছবি বহন করেন। ১৫ আগস্ট কাবুলের আহমাদ শাহ মাসুদ স্কয়ারে

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক,

আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোকে তাড়াতে পারার ঘটনা তালেবানের জন্য গৌরবের ছিল। নির্বিঘ্নে এক বছর দেশ পরিচালনাও কম গৌরবের মনে করছে না তারা। ক্ষমতা গ্রহণের বছরপূর্তি উদ্‌যাপন করতে ১৫ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করে তালেবান। তবে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসবের আমেজ ছিল, তা নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মোটাদাগে কোনো ফয়সালা করতে পারেনি তালেবান। সংকট আছে বৈদেশিক স্বীকৃতি নিয়েও। আত্মঘাতী হামলার শঙ্কায় থাকতে হয় খোদ কাবুলেও।

তারপরও রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণে তালেবান সফলতার দাবি করছে। সর্বশেষ ১২ মাসে শাসকদের কোনো উপদলীয় কোন্দলও সামনে আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো জনবিক্ষোভ হয়নি। আবার বিশ্বের কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতিও দেয়নি।

তালেবানের ক্ষমতার ভিত্তি বাড়তি শক্তি পেয়েছে

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই আফগানিস্তানে শাসক তালেবানের পুরো চিত্র আসে না। আবার দেশটির ভেতর থেকেও নির্ভরযোগ্য সংবাদের আকাল চলছে। সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করা দুরূহ সেখানে।

টুইটার ও ফেসবুকের ওপর ভরসা করে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর সামান্য যা খবর মেলে, তার বড় অংশ পানশির ও সারে পোলে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহসংক্রান্ত। নারীদের আন্দোলন-সংগ্রামের কিছু খবরও শেয়ার করেন কেউ কেউ। এর বাইরে সামাজিক জীবনধারায় আফগানরা কীভাবে আছে, তার নির্মোহ বিস্তারিত প্রতিবেদন গত এক বছরে সামান্যই পাওয়া গেছে। যুদ্ধোত্তর আফগানিস্তান দুঃখজনকভাবে বিশ্ব মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে। আবার একই সঙ্গে তালেবানের প্রতি বৈশ্বিক মনোভাবও অন্ধভাবে বৈরী।

কিন্তু তালেবানের ক্ষমতা যে শক্ত ভিত পেয়েছে, তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিপরীত দিকে, গত বছরের আগস্টে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জন্য দেশের ভেতরে কোনো সহানুভূতি দেখা যায়নি। দেশের বাইরেও পুরোনো সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি জনসমর্থন প্রকাশ পায়নি।

তালেবান প্রশাসন অনেক বেশি সক্রিয়

কাবুলে ন্যাটোর বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথম বার্ষিকীতে সামান্য যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, তাতে সবাই যুদ্ধ থামাতে পারাকে বড় এক প্রাপ্তি হিসেবে দেখেছে। তবে রাজধানীতে নারীদের বারবার মিছিল করার চেষ্টা জানিয়ে দিচ্ছিল অতীতে দেশ রক্ষার যুদ্ধে পুরুষেরা যেভাবে একচেটিয়া ছিল, এখনকার টিকে থাকার যুদ্ধে তেমনি নারী সমাজ এককভাবে বিশেষ সংকটে আছে।

দেশজুড়েই নারীপ্রধান পরিবারগুলো সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে। নারীদের কাজের স্বাভাবিক অনুমতি নেই। ফলে আয়রোজগারও নেই। দীর্ঘ যুদ্ধের ফল হিসেবে পুরুষ হারানো এ রকম পরিবারের সংখ্যা বিপুল। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির হিসাবে দেশটিতে ৬০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দরকার। সহায়তা পাওয়া গেছে এর অর্ধেকের মতো। বাদাখশান, ঘোর, জাইকুন্দি ও আরুজগানে খাদ্য পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। শেষের তিনটি প্রদেশই মধ্য আফগানিস্তানে। তুলনামূলকভাবে ভালো পরিস্থিতির কাবুলেও দারিদ্র্যের ব্যাপকতা জানিয়ে দেয় কর্মহীন মানুষ ও সাহায্যপ্রার্থীদের বিপুল উপস্থিতি। নিরাপত্তা পরিস্থিতিও গত বছরের চেয়ে ভালো। বহির্বিশ্বের যে কেউ চাইলে সেসব প্রান্তিক অঞ্চলেও যেতে পারে, যেখানে ২০২১ সালের আগে প্রাণভয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। হামিদ কারজাইয়ের মতো তালেবানবিরোধী নেতাও কাবুলেই থাকছেন। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আবার এত ভালো নয় যে পাকিস্তানে থাকা প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থী দেশে ফিরতে পারবে।

গত এক বছরে চোরাগোপ্তা আত্মঘাতী হামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। বিশ্বজুড়ে সামরিক সংঘাত নজরদারি করা সংস্থা একলেড বলছে, গত এক বছরে আফগানিস্তানে অন্তত ৪ হাজার ১০০ মানুষ মারা গেছে সামরিক সহিংসতায়। বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল ৩৯৩টি। মৃত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছিল গত সরকারের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এ ছাড়া আছে পানশির ও বাগলানের প্রতিরোধযুদ্ধের বিরুদ্ধে তালেবানের অভিযানে নিহত প্রায় ৪৮৫ জন।

তারপরও ২০২১ সালের আগের পরিবেশের তুলনায় এখনকার অবস্থা বেশ ‘শান্তিপূর্ণ’। এই সুযোগে দেশটিতে ব্যবসায়েও ভালো প্রসার ঘটছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না থাকার পরও তালেবান যে প্রশাসন চালিয়ে নিতে পারছে, তার বড় উৎস রাজস্বের ভালো জোগান। ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তে পণ্য লেনদেন ব্যাপক গতি পেয়েছে। স্থলবন্দরগুলো থেকে গত এক বছরে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের সমান কর জমা হয়েছে কোষাগারে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উপকৃত পাকিস্তানিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার মুখে ইসলামাবাদ তুলনামূলক সস্তা দামে আফগান কয়লা পেয়েছে বেশুমার। দেশের ভেতর সমালোচনা হওয়ায় পরে অবশ্য তালেবান কয়লার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। রাজস্ব বাড়তে থাকায় অবকাঠামোগত কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগের সরকারের পালিয়ে যাওয়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতিমধ্যে নতুন সরকারে যোগ দিয়েছেন।

ডিক্রি আসছে মূলত নারী সমাজ ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সূত্রে কাবুলের প্রতিবাদী নারীরা বিশ্ব মনোযোগ কেড়েছেন সম্প্রতি। বছরজুড়েই তাঁরা কাবুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়। ১৫ আগস্ট বিজয় উৎসবের দিনও সে রকম এক বিক্ষোভ হলো। তাঁদের হাতে লেখা কাগজে স্লোগান ছিল ‘রুটি, কাজ, স্বাধীনতা’। বন্দুকধারীরা এসে তাঁদের দ্রুতই তাড়িয়ে দেয়।

ইসলামে নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ না হলেও তালেবান সরকার এখনো মাধ্যমিক স্তরে বন্ধ রেখেছে সেটা। শিক্ষা ও কাজের নিষেধাজ্ঞা দেশটির নারীদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলেছে। ইউনিসেফের হিসাবে গত আগস্টের আগে প্রায় আট লাখ মেয়ে দেশটির বিভিন্ন স্কুলে পড়ত। তালেবানের ওপরমহলে নারীশিক্ষা নিয়ে অনিচ্ছা আছে। মার্চে শুরু হওয়া স্থানীয় সমাজের নতুন বছর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় একবার। পরে সেই অনুমোদন বাতিল হয়। জুলাইয়ে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত ধর্মীয় মুরব্বিদের এক সম্মেলনে দেখা গেছে, দু-তিন হাজার প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দু-তিনজন মেয়েদের স্কুলের যাওয়ার পক্ষে। নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও নিষেধের তালিকামুক্ত হয়নি এখনো। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের ব্যাপারেও তালেবান মুরব্বিদের অবস্থান নেতিবাচক। গত এক বছরে শতাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম অফিস বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ করতে হয়েছে বিবিধ কারণে। সংবাদকর্মীদের বড় অংশ এখন বেকার সেখানে। পত্রপত্রিকাগুলো দ্বিমুখী চাপে আছে। একদিকে অর্থনীতির বিপন্নতা, অন্যদিকে পছন্দমাফিক খবর পরিবেশনের জন্য ক্ষমতাসীনদের চাপ। গত এক বছরে তালেবান যত ডিক্রি জারি করেছে, তার বড় অংশই নারী সমাজ ও গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে। সব সংবাদমাধ্যমেই তালেবানের ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক এখন।

ভারতও যখন তালেবানের প্রতি আগ্রহী

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আফগানিস্তান নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ বেশ কমে যায়। পাকিস্তানে ক্ষমতার লড়াইয়ে ইমরান খান হেরে যাওয়ার পর সেই আগ্রহ আরও কমে।

ইমরান হামেশা তালেবানের প্রতি অন্যায় বৈরিতার জন্য বিশ্বনেতাদের দোষারোপ করে দেশটির দিকে সবার দৃষ্টি টেনে রাখতেন। ইমরানের উৎসাহের কারণ বোঝা কঠিন ছিল না। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এক অর্থে পাকিস্তানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল। তালেবানের মাধ্যমে দেশটিতে তারা প্রত্যাশিত প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়। বিশেষ করে ন্যাটোর অধীনে আফগান মাটিতে ভারত যে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ভোগ করত, গত এক বছর সেটা ছিল না। পাকিস্তানের জন্য যা বড় এক সন্তুষ্টির জায়গা। তবে তালেবান যতটা ইসলামাবাদের অনুগত হবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা ঘটেনি। পাকিস্তানের তালেবানপন্থী টিটিপিকে দমনে বাড়তি কোনো সহায়তা দেয়নি কাবুল। এটা রাওয়ালপিন্ডিতে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে আফগানিস্তানে অন্তত এক দফা বিমান হামলা চালিয়ে সেই ক্ষোভ মেটানো হয়। ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত ২ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখার প্রাচীর বানানো নিয়েও নিমরোজ ও নানগাহর প্রদেশে তালেবানের অসন্তোষ দেখা গেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

এই উভয় দেশের যেকোনো দূরত্ব থেকে সুযোগ নিতে নয়াদিল্লিও পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যে আগের আফগান নীতি পাল্টেছে তারা। জুনে ভারতের একটি প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করেছে। নয়াদিল্লি থেকে বার্তাটি ছিল স্পষ্ট। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারা খুবই আগ্রহী। ইরানেরও একই রকম আগ্রহ। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও তেহরানে আফগান কূটনীতিবিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম আছে। তবে পশতুদের শাসনে শিয়া হাজারাদের নিরাপত্তাহীনতায় ইরান উদ্বিগ্ন এবং ইরান-আফগান সীমান্তের নিমরোজ এলাকায় গত ১২ মাসে কয়েক দফা ছোট আকারের সংঘর্ষও হয়েছে।

আফগানিস্তানে হাজারাদের মৃত্যুর বড় কারণ আইএস নামে পরিচিত গোষ্ঠীর আত্মঘাতী হামলা। তালেবান আন্তজার্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিলেও ওদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলে মনে হয় না। আইএস হাজারাদের মসজিদ ও উৎসবে হামলা চালিয়ে প্রায়ই তালেবানকে জানিয়ে দিচ্ছে তাদের উপস্থিতির কথা।

বিজয়বার্ষিকী যাদের জন্য বিব্রতকর ছিল

আফগানিস্তানে তালেবানের ১৫ আগস্টের বিজয় উৎসব ন্যাটো ও ওয়াশিংটনের জন্য নিশ্চিতভাবে বিব্রতকর এক মুহূর্ত। তবে গত বছর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় পালিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে চাপে ছিল, সম্প্রতি আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুষিয়ে নিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। জাওয়াহিরিকে লুকিয়ে রাখা তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দর–কষাকষিতে ওয়াশিংটনকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। পাকিস্তানের জন্যও এটা বিব্রতকর হয়েছে। তালেবানের হয়ে ইসলামাবাদ এত দিন বিশ্বজুড়ে সুপারিশ করে বেড়ালেও কাবুলে আল-কায়েদার উপস্থিতি তাদের এখন থামতে বাধ্য করেছে।

তালেবানের দফায় দফায় অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের হাতে আটকে থাকা সাত বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আফগান তহবিল ছাড় করেনি। কয়েক হাজার তালেবান সামরিক কমান্ডারকে মোকাবিলায় তাদের যুদ্ধোত্তর এই কৌশল বাস্তবে প্রায় চার কোটি সাধারণ আফগানকেই শাস্তি দিচ্ছে কেবল। এতে তালেবান শাসকদের আরেক ধরনের সুবিধাও হয়েছে। দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও খাদ্যাভাবের জন্য তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী হিসেবে তুলে ধরতে পারছে।

তালেবানের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরী মনোভাবের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের গত এক বছরের আফগান নীতিতেও। তারা গত এক বছরে প্রয়োজন ও প্রতিশ্রুতির মাত্র অর্ধেক সহায়তা দিতে পারল দেশটিতে। আন্তর্জাতিক সহায়তার এ রকম ঘাটতি আফগানিস্তানে নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তার অনেকখানি দায় অবশ্যই জাতিসংঘ এবং বাইডেন প্রশাসনের। তবে এই দুই শক্তি সাহায্য, সহযোগিতা এবং স্বীকৃতির পথে তালেবানের যেসব সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে, সেসবও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু তালেবান তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারিক প্রশাসনে মানবাধিকারমুখী কোনো ধরনের সংস্কারসাধনে আপাতত অনিচ্ছুক। বিশেষ করে কান্দাহারের নেতৃত্ব খুব রক্ষণশীল অবস্থান নিয়ে আছে। যদিও গত এক বছরে শাসক পরিমণ্ডলে কোনো উপদলীয় সংঘাত ও মতদ্বৈধতা সামনে আসেনি। তবে এটা বোঝা গেছে, কাবুল ও কান্দাহারে দুটি ভরকেন্দ্র আছে তালেবানের।

কাবুলের শাসকেরা বৈশ্বিক চাওয়া-পাওয়া সমন্বয় করে এগোতে ইচ্ছুক। কিন্তু কান্দাহারে শেখ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নেতৃত্বে তালেবানের পুরোনো একাংশ দুই দশক আগের (১৯৯৬-২০০১) অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ। অনেক বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত যখন কান্দাহার থেকে আসছে, তখন কাবুলের অনেক নেতাই যে অস্বস্তি বোধ করবেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। একই কারণে, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাও কাবুলের নেতাদের সঙ্গে আলাপে কম আগ্রহী। সবাই জেনে গেছে, নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রয়োজনীয় সবুজসংকেত পেতে হবে কান্দাহার থেকে। কাতারের দোহাভিত্তিক তালেবান অফিসটিও ইতিমধ্যে গুরুত্ব হারিয়েছে।

সরকারের ভেতরে দুই ধারার এই ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণে অনেক প্রদেশে শাসনের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। কাবুলেও ২০২১ সালের ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ মন্ত্রিসভাকে স্থায়ী আকার দেওয়া যায়নি এখনো। পাওয়া যায়নি স্বাধীনতা–পরবর্তী নতুন কোনো সংবিধানও। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জন-অনুমোদিত কোনো সংবিধান না থাকায় তালেবান নেতাদের কথাই আপাতত ‘আইন’ হিসেবে চালু হচ্ছে। যেকোনো বিষয়ে বাদী ও বিচারক তারাই। এক বছর শেষেও ‘তালেবান আন্দোলন’ প্রচলিত সরকারে অনুবাদ হয়নি এখনো।


●আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক





For Emergency:KM RIAZUL HASANCHARMANINB NEWS. COMCell: +880 1879-888 883Email: islam.net.bd1@gmail.comWebs: https://sites.google.com/view/inb-news-comPage: https://facebook.com/NEWS.INB


Google Sites
Report abuse
Page details
Page updated
Google Sites
Report abuse