“A Rare Bird in the lands and very much like a Black Swan.”

 

সময়টা তখন ৩ই মে,  ১৬৯৬ । উইল্যাম ডি ভ্লামিং নামে একজন ডাচ সি ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে যাত্রা শুরু করেছিলেন এক উদ্ধার অভিযানের জন্য ।  মূলত Ridderschap van Holland  নামে একটি জাহাজ দুই বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল । আর তাই ভ্লামিং সাহেব ও তার দল জাহাজটির খোঁজে টেক্সেল থেকে যাত্রা শুরু করেন । পথিমধ্যে অনেক জায়গায় খোঁজার পর অভিযানের ঠিক ২৫২ দিনের মাথায়  গিয়ে পৌছালেন সোয়ান নদীর তীরে । সোয়ান নদীতে পৌঁছে  ভ্লামিং সাহেব যা দেখলেন তা পুরো ইউরোপে মাথাচড়া দিয়ে উঠেছিল । একবিংশ শতাব্দীতে যেটা যোগ করল নতুন এক দর্শন । “The Black Swan Theory”

–-----------

বিজ্ঞান মহলে বিজ্ঞানের  আবিষ্কার ও উপকারিতা নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ততটা আলোচনা  হয়না । বিজ্ঞানকে ধ্রুব সত্য হিসেবে মেনে নেওয়া হয় । মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ বিজ্ঞান কী? সেটাই জানেনা । সে আলোচনা না হয় অন্যদিন হবে । আজকে না হয় বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা যাক । বিজ্ঞান কী ধ্রুব সত্য? বিজ্ঞানের কাছে কী সব প্রশ্নের উত্তর আছে ? বিজ্ঞান  কী সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারে? চলুন প্রশ্নগুলোর উত্তর একসাথে খোঁজা যাক । 

 

শুরুটা বিজ্ঞানের মৌলিক একটি শাখাকে দিয়ে শুরু করা যাক ।  বিজ্ঞানের রাণী বলা হয় গণিতকে । বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা এ গণিতের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। যেমনঃ পদার্থবিজ্ঞান গণিতের উপর, রসায়ন পদার্থবিজ্ঞানের উপর, জীববিজ্ঞান রসায়নের উপর নির্ভর করে । মোটকথা সবকিছুর মূলে রয়েছে গণিত। কিন্তু এখন প্রশ্ন জাগতে পারে গণিত তাহলে কীসের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত? গণিত মূলত Axiom এর উপর প্রতিষ্ঠিত । Axiom হচ্ছে কতগুলো বিবৃতি যা আপনি প্রমাণ ছাড়া সত্য হিসেবে মেনে নিবেন বা বলা যায় এমন  কতগুলো  বিবৃতি যা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না । এতটুকু পড়ে নিশ্চয়ই আপনি হোঁচট খেয়েছেন । যেখানে বিজ্ঞানের সবকিছুর পেছনে প্রমাণ আছে বা লাগে , সেখানে বিজ্ঞানের একটি শাখা এমন এক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যা প্রমাণ করা যায় না? নিচের উদাহরণ দুটো লক্ষ্য করুন । দুইটা বিন্দুকে যোগ করলে আপনি সহজে একটি লাইন আঁকতে পারবেন, দুইটা সেট তখনই সমান হবে যখন তাদের উপাদান সমান হবে । এ উদাহরণগুলো আপনার কাছে নিতান্তই সাধারণ মনে হতে পারে , কিন্তু সত্যটা হচ্ছে এদেরকে আপনি কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবেন না । কেন? তার আগে চলুন একজন বিশেষ মানুষের মাথা নষ্ট করে দেয়া বিশেষ এক থিওরির দিকে নজর দেয়া যাক । বলা হয় The man who destroyed mathematics । নাম কার্ট গোডেল ।  তার বিখ্যাত  Incompleteness Theorem । বিংশ শতাব্দীতে যেটা মাথা ঘুরিয়ে  দিয়েছিল বড় বড় গণিতবিদদের । এই তত্ত্ব অনুসারে-

I. Axiom এর কোনো সিস্টেম স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় । অর্থাৎ একটি Formal সিস্টেমে এমন কিছু বিবৃতি থাকবে যা সিস্টেমের মধ্যে  প্রমাণ করা যাবে না, কিন্তু বিবৃতিগুলো সত্য ।

II. এমনকি একটি Formal সিস্টেম কখনোই প্রমাণ করতে পারবে না সে নিজেই সামঞ্জস্যপূর্ণ (consistent).

 

গোলমাল লাগছে, তাই না? চলুন  একটা সহজ উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা বুঝা যাক । 

‘এই বাক্যটি মিথ্যা ।’ যদি আমরা ধরে নিই বাক্যটি সত্য তার মানে বাক্যটি মিথ্যা । আবার যদি ধরে নিই বাক্যটি মিথ্যা তার মানে বাক্যটি সত্য ।  বাক্যটি যদি সত্যই হয় তার মানে বাক্যটি মিথ্যা । আবার যদি বাক্যটি মিথ্যাই হয় তার মানে বাক্যটি সত্য । এভাবে Infinite Loop তৈরি করবে বাক্যটি । এটা একটা Paradox.  অর্থাৎ বাক্যটি সত্য নাকি মিথ্যা তা আপনি প্রমান করতে পারবেন না । একইরকমভাবে প্রাকৃতিক সংখ্যা ও তাদের Arithmatic (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি) এগুলো আপনি কখনো Formal সিস্টেমে প্রমাণ করতে পারবেন না । এ থিওরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরো একটি থিওরি আছে কম্পিউওটার সাইন্সে । নাম ‘Halting Problem’। সে এক ভিন্ন আলোচনা । তাছাড়াও হিলবার্ট হোটেল প্যারাডক্সের মতো সমস্যা মাথা ঘুরিয়ে দেয় সবার । 

 

–-----------

 

শুরুর গল্পটাতে ফিরে যাই । যে প্রবাদটি দিয়ে শুরু করেছিলাম সেটি মূলত অসম্ভব কিছু বুঝাতে ১৭ শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা ব্যবহার করত । মূলত ১৬৯৭ সালের আগে মনে করা হত সকল রাজহাঁস সাদা রঙের হয় । তখন তারা এটিকেই সত্য হিসেবে মেনে নেয় । কিন্তু ১৬৯৭ সালে ভ্লামিংয়ের কালো রাজহাঁস আবিষ্কারের মাধ্যমে পূর্বের মেনে নেওয়া সত্যকে মূহূর্তেই বিদায় জানিয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে রাজহাঁস সাদা কালো দুটো রঙেরই হয় । এটাই হচ্ছে মূলত অবজারভেশনাল লিমিটেশন । অর্থাৎ একটা তত্ত্বকে এতদিন ধরে সত্য হিসেবে মেনে নেওয়া হলেও, নতুন পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা পুরোনো তত্ত্বকে নিমিষেই বিদায় জানিয়ে একটা নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় । এ বিষয়টা সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝা যায় পারমাণুর মূল কণিকা তত্ত্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে । একসময় মনে করা হত ইলেকট্রন, প্রোটন ও ইলেকট্রন হচ্ছে পমাণুর মূল কণিকা । কিন্তু বর্তমানে আমরা জানি, কোয়ার্ক ও নিউট্রন হচ্ছে পরমাণুর মূল কণিকা । বিজ্ঞানীরা এর আরো ছোট ভার্শন হিসেবে স্ট্রিং তত্ত্বের ধারণা প্রস্তাব করেছেন । এভাবে  নতুন পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা একটা সিদ্ধান্তকে আমূলে পালটে দেয় । তবে পর্যবেক্ষণই এখানে একমাত্র সীমাবদ্ধতা নয়, তার সাথে রয়েছে পর্যবেক্ষক কীভাবে সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন । গোলমাল লাগছে তাই না? তাহলে নিচের দুটো ছবি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন ।