There is nothing new to be discovered in Physics now. All that remains is more and more precise measurement.
-William Thomson (Lord kelvin)
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। লর্ড কেলভিনের মতো অনেকেই হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের দৌড় বুঝি এখানেই শেষ। তড়িৎ-চুম্বকত্ব থেকে শুরু করে তাপগতিবিদ্যা, বলবিদ্যা থেকে শুরু করে তড়িৎ-গতিবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞানীদের সব শাখাতেই এক ঝড় উঠেছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। কী আবিষ্কারই হয়নি-বা তখন? এজন্যই হয়তোবা কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে অ্যালবার্ট মাইকেলসন বলেছিলেন,
"All that remains to do in physics is to fill in the sixth decimal place"
কিন্তু কেই-বা জানতো বিংশ শতাব্দী আমূল বদলে দেবে পদার্থবিজ্ঞানের জগৎকে, মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করবে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কিংবা পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যতিরেকেই চিন্তা ও ও কল্পনার জগৎকে ঘিরে সূচনা হবে বিজ্ঞানচর্চার। এমনটা হয়তোবা কেউই আশা করেনি। কিন্তু এর সবই হয়েছে একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে। যা বিংশ শতাব্দীকে আমূলে বদলে তো দিয়েছেই বরং একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যার দৌড় থেমে নেই। কোয়ান্টাম ফিজিক্স। গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে যা পদার্থবিজ্ঞানে মূল আলোচ্য বিষয়। মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের আগে আমাদের আশেপাশে থাকা খালি চোখে দৃশ্যমান বস্তু আমাদের ভাবাতো, প্রশ্ন জাগাতো এবং উত্তর খোঁজার তাড়না তৈরি করতো। কিন্তু মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ বস্তুর আরো গভীরে গিয়েছে। দৃশ্যমান বস্তুর বাইরের জগতকে ঘিরে নতুন করে জ্ঞানচর্চাও শুরু করেছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স সে জগতেরই একটা অংশ। তবে হ্যাঁ! আজকে সে নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে না। বরং তারই এমন একটি শাখা নিয়ে আলোচনা হবে যা শুধুমাত্র আবিষ্কার, প্রযুক্তি কিংবা অবদানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আমি কে? এই প্রশ্নকে। WWW (World Wide Web) থেকে শুরু করে MRI (Magnetic Resonance Imaging), পদার্থবিজ্ঞান থেকে শুরু করে চিকিৎসাবিজ্ঞান, এমন কোন শাখা নেই যার মোড় পরিবর্তন করেনি। সেটি আর কিছুই নয়। পার্টিক্যাল ফিজিক্স! সোজা বাংলায় কণা পদার্থবিজ্ঞান। আমরা জানি, প্রতিটি বস্তু পদার্থ নিয়ে গঠিত। আর পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু নিয়ে। যাকে ভাঙলে আবার পাওয়া যায় পরমাণু। এখানেই শেষ নয়। অণু-পরমাণুর আরো গভীরে যাওয়ার জার্নিটা আজও চলমান। আজ তারই কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা হবে। তো, চলুন শুরু করা যাক।
শুরুটা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীসের পশ্চিম আনাতোলিয়ার মিলেটাস শহরে। Leucippus নামে একজন গ্রিক ফিলোসফার দাবি করেন, পদার্থ হলো অভিন্ন (একই জাতীয়) ছোট ছোট অসংখ্য অদৃশ্যমান কণা নিয়ে গঠিত। এই কণাগুলো ক্রমাগত গতিশীল, এবং তাদের সংঘর্ষ ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যৌগ তৈরি হয়। এজন্য তাকে Atomism তত্ত্বের জনক বলা হয়। এরপর তার এ তত্ত্বকে সুসংহত করেন তারই শিষ্য ডেমোক্রিটাস। ডেমোক্রিটাস Atom-কে পদার্থের গাঠনিক উপাদান হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে Atom বা পরমাণু হচ্ছে অবিভাজ্য, অভিন্ন, কঠিন, শক্ত ও অসংকোচনীয়। এই Atomism তত্ত্বে এ দুইজন ফিলোসফারসহ এপিকিউরাস নামক আরেকজন ফিলোসফারের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনিও পরমাণু সম্পর্কে একই মত দেন। এরপর অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও পরমাণু নিয়ে বিজ্ঞান মহলে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। নিউটন যদিও মনে করতেন পদার্থসমূহ কণা নিয়ে গঠিত কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এসে বিজ্ঞানী জন ডালটন’ই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন মহাবিশ্বের সবকিছুই ক্ষুদ্র পরমাণু নিয়ে গঠিত। এই তত্ত্বের ভীত আরো মজবুত হয় যখন ১৮৬৯ সালে মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম পর্যায় সারণী প্রকাশ করেন।
১৮৫৭ সালে বিজ্ঞানী গাইসলার (Geissler) তার বিখ্যাত গাইসলার টিউবের মাধ্যমে একটি পরীক্ষা করেন। গাইসলার টিউব হচ্ছে মূলত এক ধরনের গ্লাস টিউব যার সাথে একটি ভ্যাকুয়াম পাম্প এবং দুই প্রান্তে দুটি ধাতব পাতের সাথে একটি উচ্চ বিভবের পাওয়ার সাপ্লাই যুক্ত থাকে। কিন্তু এ পরীক্ষা থেকে গাইসলার এক আশ্চর্যজনক ফলাফলের সম্মুখীন হন। সাধারণত খোলা জায়গায় এ এক্সপেরিমেন্টটি করা হলে সর্বোচ্চ একটি বড় স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) পাওয়া যেত। কিন্তু গাইসলারের টিউবটি ছিল বায়ুশূন্য। যখনই তিনি টিউবের ধাতব পাতদ্বয়ে উচ্চ বিভব প্রয়োগ করেন, সাথে সাথেই টিউবে গোলাপি বর্ণের একটি রশ্মি লক্ষ্য করেন। যা দেখে গাইসলার অভিভূত হন এবং খেয়াল করেন, ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ক্যাথোড প্রান্ত থেকে রশ্মিটি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর, পরবর্তী ৪০ বছর বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরো গবেষণা করেন। এবং সর্বশেষ চমকটা দিয়েছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী যার আবিষ্কার পরবর্তীতে কেইবা জানতো পার্টিক্যাল ফিজিক্সের দুয়ার খুলে দেবে। এবং বলা যায় এখান থেকেই পার্টিকাল ফিজিক্সের আসল যাত্রা শুরু। তিনি আর কেউ নন, স্যার জে. জে. থমসন। ১৮৯৭ সালে করা তার বিখ্যাত ক্যাথোড রশ্মি পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, ক্যাথোড প্রান্ত থেকে উৎপন্ন রশ্মিটি মূলত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার প্রবাহ এবং যা ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। কিন্তু এর আকার হাইড্রোজেন পরমাণুর আকারের চেয়েও এক হাজার গুণ ছোট। আর এরই মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় সর্বপ্রথম মৌলিক কণিকা ইলেকট্রন। পরবর্তীতে রবার্ট মিলিকান ১৯০৯ সালে তার তৈল বিন্দু পরীক্ষার মাধ্যমে ইলেকট্রনের চার্জ পরিমাপ করেন। এরপর ১৯১১ সালে স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড তার আলফা কণা পরীক্ষার সাহায্যে পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন। এবং ১৯১৯ সালে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে প্রোটন হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে দেখা যায় নিউট্রন ও প্রোটন মূলত পরমাণুর মূল কণিকা নয়। বরং এরা কোয়ার্ক নামক ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। এরপর ১৯৬৪ সালে দুইজন পদার্থ বিজ্ঞানী কোয়ার্ক মডেলের প্রস্তাব দেন। সে গল্পে যাওয়ার আগে নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।