তখন চলছিল ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিমের সময়কাল। সুদূর আলেপ্পো থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য তার। আয়তনের হিসেবে যেটা প্রায় ৪১ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এই বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্যের খুব ছোট্ট একটি কক্ষে গৃহবন্দী অবস্থায় সময় পার করছিলেন ষাটোর্ব্ধ বয়স্ক এক ব্যক্তি। একসময় গণিতবিদ, পদার্থবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে ভারী সুনাম ছিল তার। কিন্তু ভাগ্যের অনিবার্য পরিণাম আজ সবই অতীত। সময়টা খুবই খারাপ কাটছিল তার। কিন্তু কথায় আছে না, যা হয় আসলে ভালোর জন্যই হয়। কেইবা জানতো এই বন্দীদশায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা একদিন পাল্টে দেবে তার জীবন। পাল্টে দেবে ইতিহাসের গতিপথ। শুধু ইতিহাস বললে ভুল হবে, যদি বলি আজকের অনেক কিছুর ভিত্তিই গড়ে উঠেছিল ছিল ওই একটিমাত্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যা নিমিষেই চুরমার করে দিয়েছিল হাজার বছর ধরে চলে আসা ধারণাগুলোর। তাহলে হয়তো একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। ওই ব্যক্তিটি আর কেউই নয়। Ibn Al-Haytham. The Father of Modern Optics. আর সেই ঘটনা থেকে আমরা পাই আলো নিয়ে তার বিখ্যাত তত্ত্ব।


Eye does not send out rays of light.



------------------------



আচ্ছা চোখ বন্ধ করে একবার কল্পনা করুন তো, পুরো কায়েনাতের একদিন সব আলো উদাও। সূর্যসহ সব নক্ষত্রের, এমনকি আপনার হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনেরও। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আশেপাশের কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। ব্যাপারটা অনেকটা Plagues of Egypt এর হোশেখ [ Hebrew: חֹשֶׁךְ (Choshech)] এর মতো। হোশেখ বলতে আক্ষরিকভাবে অন্ধকারকে বোঝায়। কিন্তু প্লেগস অব ইজিপ্টে এমন এক অন্ধকারের কথা বলা হয় যেখানে বনী ইসরাঈল বাদে বাকি মিশরীয়রা টানা তিন দিন ও তিন রাত আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি রাতের অন্ধকারে চাঁদ, তারার অনুপস্থিতিতেও যে আবছা আলো দেখা যায় সেটাও না। একেবারে Absolute Darkness. ধরুন, আপনি আপনার আশেপাশের সবাই ঠিক এমনই এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কেমন লাগছে? খুবই বিদ্ঘুটে। তাই না? এমনকি কল্পনা করতেও কষ্ট হচ্ছে। একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন আলো’র মূল্য কতটুকু। কত বড় নিয়ামত এ আলো। আর এ আলো নিয়ে সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিস্তর চিন্তাভাবনা করে আসছে। বুঝতে চেয়েছে, What is Light? And What is the nature of light? অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এর পরিপূর্ণ সমাধানে মানুষ আজও পৌঁছায়নি। মহাবিশ্বের মৌলিক একটি বিষয় এত সহস্রাব্ধ পেরোলেও রহস্য হিসেবেই থেকে গিয়েছে। এ আলো’কে উৎসর্গ করেই আমাদের আজকের এ আয়োজন। আমরা জানবো আলো নিয়ে সেই প্রাচীনকালে মানুষের মাঝে থাকা জল্পনা-কল্পনার কথা এবং আজকের যুগে আমাদের মাঝে থাকা তত্ত্বগুলোর কথা। তো চলুন শুরু করা যাক।



প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো আলো মূলত দেবতা রা’(Ra) এর দৃষ্টি। সূর্য হচ্ছে দেবতা রা’ এর চোখ। যখন দেবতা রা’ চোখ খুলতো, তখন পুরো পৃথিবী আলোকিত (দিন হওয়া) হয়ে যেত। আর যখন তিনি চোখ বন্ধ করতেন, তখন পুরো পৃথিবীতে অন্ধকার (রাত) বিরাজ করতো। তারপর আসে গ্রিক সভ্যতার কথা। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস মনে করতেন আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি তা সরাসরি আমাদের চোখে তৈরী হয় না। বরং মাঝখানে বায়ু মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সহজ করে বললে, আমরা যখন কোনো বস্তুকে দেখি তখন বস্তুর চিত্র অর্থাৎ ইনফরমেশন বায়ু’র মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর সে ইনফরমেশন আমাদের চোখে ট্রান্সফার হয়। এরপর গিয়ে আমরা বস্তুটাকে দেখি। ডেমোক্রিটাসের পর এপিকিউরাস নামে আরেকজন দার্শনিক অনেকটা একইরকম প্রস্তাব দেন। তার মতে, বস্তু থেকে ক্রমাগত কণাসমূহের (এটম) নিঃসরণের ফলে আমরা বস্তুকে দেখি। এটম নিয়ে এপিকিউরাস ও ডেমোক্রিটাস দুজনেরই আগ্রহ ছিলো। যেহেতু প্রতিটা বস্তু এটম দিয়ে গঠিত, সেহেতু কোনো বস্তুকে তখনই আমরা দেখতে পাবো, যখনই বস্তু থেকে ক্রমাগত এটম বের হয়ে আমাদের চোখে এসে পৌঁছাবে। কিন্তু তখন একটা প্রশ্ন জাগে। যেহেতু বস্তু এটম দিয়ে গঠিত এবং বস্তু থেকে ক্রমাগত এটম নিঃসৃত হচ্ছে, সেহেতু এটমের ঘাটতি হয়ে বস্তু সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ এটম বের হয়ে গেলে তো বস্তুতে ফাঁকা স্থান তৈরি হবে। এপিকিউরাস এর সুন্দর একটি জবাব দেন। তিনি বলেন, বস্তুতে এটমের ঘাটতি হয় না, কারণ যখনই এটম নিঃসৃত হয়, পরক্ষণে সাথে সাথে পরিবেশ থেকে এটম এসে সে ঘাটতি পূরণ করে। অর্থাৎ বস্তু ঠিকই তার আকার বজার রাখে। এরপর তাদেরই সমসাময়িক দার্শনিক প্লেটো ও তার শীর্ষরা ভিন্ন একটি প্রস্তাব দেন। তারা দাবি করেন, আলোক রশ্মি মূলত আমাদের চোখ থেকে নিঃসৃত হয়। বস্তুর আকার-আকৃতি, রঙ তখনই আমরা বুঝতে পারি, যখন চোখ থেকে আলোক রশ্মি গিয়ে বস্তুর উপর পড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ ধারণাটি বিজ্ঞান মহলে প্রায় ১০০০ বছর ধরে ঠিকেছিল। 


এরপর আসে হেলেনিস্টিক যুগের কথা। এ যুগে তিনজনের নাম খুবই প্রসিদ্ধ। ইউক্লিড, হিরো অব আলেকজান্দ্রিয়া এবং টলেমি। ইউক্লিড আলো নিয়ে প্লেটোর মত একই মত দেন। কিন্তু ইউক্লিড তার থিওরির সাথে কিছুটা জ্যামিতি যোগ করেন। যেমনঃ আলো চোখ থেকে নিঃসৃত হয়ে সরলরেখায় গমন করে, চোখ এবং বস্তু কোন (Cone) আকৃতির গঠন তৈরি করে, বড় এঙ্গেলে দেখলে বস্তুকে বড় দেখায় আর ছোট এঙ্গেলে দেখলে বস্তুকে ছোট দেখায় ইত্যাদি। এই যুগে সর্বশেষ যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন তার নাম হচ্ছে ক্লডিয়াস টলেমি। ভূ-কেন্দ্রিক তত্ত্বের প্রবক্তা যিনি। টলেমির অপটিক্সেও অবদান ছিলো। যদিও তার থিওরি, ইউক্লিডের থিওরির একটি পরিমার্জিত রুপ ছিলো। তার মতে, আলো মূলত বিচ্ছিন্ন সরলরেখায় নয়, বরং এটি ক্রমাগত কোন আকৃতির গঠন তৈরি করে চোখে বস্তুর একটি দৃশ্যমান অবয়ব তৈরি করে। এ ছিল গ্রিক ও হেলেনিস্টিক যুগে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধারণার কথা।


এবার ফিরে আসা যাক শুরুর গল্পে। ইবনে আল হায়সাম অনেকের কাছে আল-হাজেন নামে পরিচিত। মূলত ফাতেমী খলিফা আল-হাকিম তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। কারণ তিনি নীল নদের উপর বাঁধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, কক্ষটির একটি দেয়ালে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। মূলত কক্ষে সমান্তরালে থাকা দুটি দেয়ালের একটিতে সরু একটি ছিদ্র ছিল। এবং বাইরে থাকা বস্তুর উপর যখন সূর্যের আলো পড়ে, অন্য দেয়ালে সে বস্তুটির ঠিক একই একটি উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। আবার তিনি যখন সরু ছিদ্রটি হাত দিয়ে বন্ধ করে রাখেন, সাথে সাথে প্রতিবিম্বটা গায়েব হয়ে যায়। যেহেতু আল হায়সাম বাইরের বস্তুটিকে দেখতে পারছিলেন না, সেহেতু চোখ থেকে আলো গিয়ে বস্তুর উপর পড়া অসম্ভব। অর্থাৎ চোখ থেকে আলোকরশ্মি বের হয় বলে আমরা বস্তুকে দেখি না, বরং বস্তুর উপর আলো রশ্মি পড়ে বিদায় আমরা বস্তুকে দেখতে পারি। এরই সাথে সাথে সমাপ্তি ঘটে এতদিন ধরে চলে আসা প্লেটো, ইউক্লিড ও টলেমির ধারণার। বিজ্ঞানে এ ধরনের ঘটনাকে বলা হয় প্যারাডাইম শীফট। 


আল হায়সামের পরীক্ষার ফলশ্রুতিতে একটা সময় পর, সম্ভবত ১৬০০ সালের মাঝের দিকে তৈরি হয় camera obscura. যা দেখতে অনেকটা পিনহোল ক্যামেরার মতো। এ ক্যামেরায় একটা বাক্সের মাঝে একটি সরু ছিদ্র এবং একটি আলোক সংবেদী তল থাকে। যখন এই ছিদ্রপথে আলো প্রবেশ করে, তখন সংবেদী তলটির উপর বস্তুর একটি উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। এবং প্রতিবিম্বটি সংরক্ষণ করা যায়। আল-হায়সাম বারবার পরীক্ষাটি করেছিলেন এবং বারবার একই ফলাফল পেয়েছিলেন। এবং এটাকেই বলা হয় ইতিহাসের প্রথম পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কারণ তিনি শুধু থিওরিই দেননি, বরং বারবার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে তার থিওরির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, বস্তুর অবয়ব মূলত আমাদের চোখে তৈরি হয় না, বরং আমাদের মস্তিষ্কেই তৈরি হয়। এছাড়াও মধ্যযুগে অপটিক্সে অনেক মুসলিম বিজ্ঞানীর অবদান ছিলো। যা মধ্যে আল-কিন্দি, ইবনে সাহল ও ইবনে সিনা অন্যতম। সে গল্প অন্য আরেকদিন হবে। এবার রেনেসাঁয় প্রবেশ করা যাক।


শুরুটা করা যাক জোহানস কেপলারকে দিয়ে। কেপলার সূর্যগ্রহণ নিয়ে খুবই আগ্রহী ছিলেন। যদিও ইতিমধ্যে টাইকো ব্রাহে সে নিয়ে বিস্তর আলাপ করেছেন। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য কেপলার camera obscura ব্যবহার করেছিলেন। কারণ খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেপলার বলেন, আমাদের চোখ camera obscura এর মতো কাজ করে। তিনি আমাদের চোখ এবং চোখে তৈরি হওয়া বিম্বের একটা এনাটমিকাল ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন। এরপর কেপলারের সমসাময়িক একজন ব্যক্তি খুবই সরলভাষায় আলোর ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তার নাম রেনে দেকার্তে। বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক। তিনি বলেন, আলো হচ্ছে একটা লাঠির মত। লাঠি যেভাবে অন্ধ মানুষকে পথ দেখায়, ঠিক তেমনি আলোও আমাদেরকে পথ দেখায়। আলোর প্রতিফলন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আলোর প্রতিফলন টেনিস বলের মতো। অর্থাৎ টেনিস বল যেভাবে এক পাশ থেকে ধাক্কা খেয়ে অপর পাশে যায়, আলোর প্রতিফলনও ঠিক তেমনি। দেকার্তে আলোর প্রতিসরণকেও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। ১৬৪২ সালে তিনি আলোর প্রতিসরণ নিয়ে বিজ্ঞানী Willebrord Snellius এর দেওয়া বিখ্যাত সূত্রটি প্রকাশ করেন। যা আমাদের কাছে স্নেলের সূত্র নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ফার্মাট এটি তার Least Principle (ফার্মাটের নীতি) এর সাহায্যে প্রতিপাদন করেন। 


এতক্ষণ আমরা জেনেছি আলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। যেমন: চোখ থেকে আলো বের হয় নাকি আলোর কারণে বস্তুকে দেখি, আলোর প্রতিফলন-প্রতিসরণ ইত্যাদি। কিন্তু আলো আসলে কী? এ নিয়ে যার নাম সবার আগেই আসে, তিনি আর কেউ নন। স্যার আইজ্যাক নিউটন। তার মতে, রঙ (Color) হচ্ছে আলোর একটি বৈশিষ্ট্য। আলোর যে মাধ্যমে প্রবাহিত হয় তার বৈশিষ্ট্য নয়। এবং আলো মূলত বিচ্ছিন্ন কণিকার (corpuscle) সমষ্টি। এবং এ কণিকাগুলো সরলরেখায় গমন করে। কিন্তু সমস্যা বাধে অন্য জায়গায়। যখন ইতালিয়ান পদার্থবিদ ফ্রান্সিসকো গ্রিমাল্ডি লক্ষ্য করেন, আলো যখন সরু ছিদ্রপথে গমন করে, তখন আলোর গতিপথ বেঁকে যায়। আলোর যদি কণা দিয়ে গঠিত হতো, তাহলে এমন বেঁকে যাওয়ার কথা না। সরলরেখায় যাওয়ার কথা। তাহলে আলো কেন বেঁকে যায়? নিউটন এর জবাবে বলেন, আলোর প্রতিসরণে যেভাবে আলোর পথ বেঁকে যায় (আলো যখন বায়ু থেকে তরলে গমন করে, আলোর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন হয়), ঠিক তেমনি ঐ সরু ছিদ্রের আশেপাশে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয় যার কারণে আলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়।


একদিকে নিউটন যখন আলোকে কণা হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন, অন্যদিকে ঠিক তখনই নতুন এক তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন স্যার ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স। আলো নিয়ে পুরো ধারণাই পাল্টে যায়। তিনি বলেন, শব্দ যেভাবে বায়ুর মধ্য দিয়ে গমন করে, আলো তেমনি ইথার নামক একটা মাধ্যমের মধ্য দিয়ে তরঙ্গ হিসেবে গমন করে। তার এ মতকে আরো শক্ত পাকাপোক্ত করেন আমার সবার পরিচিত স্যার টমাস ইয়ং। তার বিখ্যাত Double-Slit Experiment বা দ্বি চির পরীক্ষার মাধ্যমে। তিনি দেখান, যখন কাছাকাছি অবস্থিত দুটি সরু ছিদ্রপথে (চির) আলো গমন করে, তখন বিপরীত পাশে অবস্থিত পর্দায় এর কিছু বিম্ব তৈরি হয়। বিম্বগুলো দেখতে একই প্রস্থের হয় এবং পরস্পর সমান্তরালে অবস্থান করে। যেখানে কিছু বিম্ব (ব্যতিচার) থাকে উজ্জ্বল আর কিছু অন্ধকার। এবং এই ঘটনাকে বলা হয় আলোর ব্যতিচার। তাহলে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, এই পরীক্ষা কীভাবে প্রমাণ করে আলো একটি তরঙ্গ? আমরা জানি, তরঙ্গের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপরিপাতন। যখন দুটি তরঙ্গ একই দশায় মিলিত হয়, তখন তারা আরো বড় আকারের তরঙ্গ তৈরি করে। আর যখন বিপরীত দশায় মিলিত হয়, তখন একে অপরের দ্বারা প্রশমিত হয়ে যায়৷ ঠিক একই ঘটনা আমরা দেখতে পাই আলোর ব্যতিচারের ক্ষেত্রে। যখন দুটি আলো একই দশায় মিলিত হয় তখন উজ্জ্বল ব্যতিচার তৈরি করে। আর যখন বিপরীত দশায় মিলিত হয়, তখন অন্ধকার ব্যতিচার তৈরি হয়। এ ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়, আলো একটি তরঙ্গ। এবং ইয়ং এর এই থিউরিটি ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর দশটি তত্ত্বের তালিকায় জায়গা করে নেয়।



আচ্ছা এবার আমরা নিজ থেকে একটু চিন্তা-ভাবনা করি। ইয়ং তার পরীক্ষায় দুইটি চির বা ছিদ্র ব্যবহার করেছেন। যদি আমরা একটি ছিদ্র ব্যবহার করি কিংবা একটা ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিই, তাহলে কী ঘটবে? মজার ব্যাপার হচ্ছে ঠিক একই কাজটি করেছিলেন স্যার অগাস্টিন জিন ফ্রেনেল। তিনি দেখতে পান, যখন একটি চির বন্ধ করা হয়, তখন বিম্বগুলো আর আগের মতো উজ্জ্বল হয় না। কিন্তু তবুও অন্য চিরটি বিম্ব তৈরি করে। অর্থাৎ আলো তবুও বেঁকে যায়। আলোর এই ঘটনাকে বলা হয় অপবর্তন। তিনি একে একটি গাণিতিক সূত্রেও প্রকাশ করেন, যা বলে দিতে পারতো উজ্জ্বল ও অনুজ্জ্বল বিম্বগুলো পর্দার কোন জায়গায় তৈরি হবে। 


এতটুকু পড়ে মনে হবে, আলো বুঝি তরঙ্গই। কিন্তু সামনে যা অপেক্ষা করছে, তা আপনার মাথাই ঘুরিয়ে দেবে। যেখানে এমন কিছু তত্ত্ব আছে, যা আপনাকে মানতে বাধ্য করাবে আলো মূলত কণা। আবার আপনি যখন জানতে পারবেন আলোর শুধু তরঙ্গই নয়, বরং এক ধরনের তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। তখন আপনি দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যাবেন, আলো কী? কণা নাকি তরঙ্গ? সে পর্যন্ত একটু সবুর করতে হবে। দেখা হচ্ছে পরবর্তী পর্বে।



রেফারেন্সঃ 

[1] Who Was Ibn al-Haytham - 1001 Inventions

[2] M. Suhail Zubairy; A very brief history of light

[3] Ibn Al-Haytham on optics and the human eye

[4]https://ethos.lps.library.cmu.edu/article/id/629/