27 June, 2020
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে লিখেছেন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, ক্ষুদ্র জিনিসকে বড় করে দেখায় অনুবীক্ষণ যন্ত্র; আর বড় জিনিস কে ছোটো করে দেখায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবন। আমি আমার নিজের জীবনে দেখলাম, এই অধ্যাপক দীপঙ্কর রায় মহাশয় কে।
আজ থেকে নয় বছর আগে ওনাকে প্রথম দেখার দিনের অভিজ্ঞতা লিখেছি, আমার বইতে, তিন বছর আগে।
১৬ ই জুন ২০২০ , চলে গেলেন এই মহা পন্ডিত মানুষটি।
ওনাকে নিয়ে , আমার লেখা দিলীপ সোমবাবু , যে ওয়েব সাইটটি করেছেন , এখানে Dr Dipankar Roy Sir - এর প্রকাশিত গবেষনাপত্রগুলি ( Publications) দেখতে পাবেনঃ https://sites.google.com/view/drdipankarray
Click the arrow near the top right corner below to read the whole story...
Arunabha Misra: বিজ্ঞান সংগঠক দীপঙ্কর রায়
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=3175297965867830&set=a.971304382933877
১৬ই জুন, ২০২০ চলে গেলেন আজীবন বিজ্ঞানের বার্তাবাহক দীপঙ্কর রায়৷ আজকের জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান আন্দোলনের নবীন নেতৃত্বের অনেকেই তাকে ভালো করে চেনেন না৷ কিন্তু অমন মানুষরতন চিনবেন না তা কী হয়! মানুষটা তো চলেই গেলেন! জানলে নীরবে একটু ভাবতে পারবেন তাঁর কথা৷
মৃদুভাষী, অকৃতদার ছিলেন তো বটেই, দীপঙ্কর রায় ছিলেন অজাতশত্রুও৷ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সায়েন্স ক্লাব এসোসিয়েশান (EISCA) এর ভিত্তিস্তম্ভ ছিলেন দীপঙ্কর রায়৷ কখনো এই সংগঠনের সম্পাদক বা সভাপতি তিনি হন নি৷ কিন্তু সাংগঠনিক ভাবে ব্যবহৃত হোত তাঁরই বাড়ির ঠিকানা৷ সংগঠন তৈরীর রূপরেখা গড়ার সাতজনের যে স্টিয়ারিং কমিটি হয় দ্বিতীয় অল ইন্ডিয়া সায়েন্স ক্লাব কনফারেন্সে কোন্নগরে ১৯৮০ সালে,তার প্রথম নামটিই ছিল দীপঙ্কর রায়৷ ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞানের মডেল তৈরীর মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানের নীতি নিয়ম শিখে অসংখ্য বিজ্ঞান ক্লাবের মাধ্যমে গ্রাম শহরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দেবে বিজ্ঞানের বার্তা, এমনটা আশা ছিল তাঁর৷ ক্লাব সংগঠনগুলোর সমন্বয়ের এমন ধারনা অভিনবও৷ আমরা যে সর্বভারতীয় স্তরে AIPSN তৈরী করে কাজ করছি তাও এক সংগঠন সমন্বয়!
থাকতেন সাধারন সূতির পাজামা পাঞ্জাবীতে৷ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ তৈরী হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে EISCA র কাজকর্ম ছোট হয়ে যায়৷ 'বিজ্ঞান যখন আন্দোলন' বইতে সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন 'আশির দশকের পর'৷ সেজন্য তাদের কোন কোন কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কেউ বা মনে মনে মঞ্চের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন৷ কিন্তু সামান্যতম সেরকম ইঙ্গিত কেউ কখনো দীপঙ্কর রায়ের কাছ থেকে পায় নি৷ আমাদের দেখলে বরং উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলতে এগিয়ে আসতেন৷ আমার সঙ্গে তাঁর সুমধুর সম্পর্ক ছিল৷ কলেজে চলে আসতেন উত্তর কলকাতায় কোন কাজে এলে৷ অতবড় বিদ্বান মানুষ অথচ কি সাধারণ! হাঁটতে হাঁটতে আমরা কতদিন কলেজস্টিট অব্দি এসেছি৷ কলেজে আমাদের সহকর্মী জয়ন্ত সেনের সঙ্গেও ওর আলাপ ছিল৷ বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে খবর পেলে দীপঙ্কর রায় সেখানে গিয়ে হাজির হবেনই!
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ প্রকাশিত আমার 'বিজ্ঞান আন্দোলনের প্রাণপুরুষ শঙ্কর চক্রবর্তী' বইতে দীপঙ্করদা সম্পর্কে শঙ্করদার একটা মূল্যায়ন ছিল৷ সেটা হল " দীপঙ্কর ভিজে কাঠে আগুন ধরাতে পারে"৷ অর্থাৎ প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেও অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে৷ সেই গুণ আমরা যেন প্রত্যেকে রপ্ত করতে পারি৷
ঐ বইতে লিখেছিলাম ' কোন জায়গায় দু চারটি ছেলে একসাথে পেলে তাদের দিয়ে বিজ্ঞানের কোন কার্যক্রম দীপঙ্করদা করিয়ে নিতে পারতো৷ বিজ্ঞান ক্লাবগুলোর সঙ্গে ছিল তার প্রাণের সম্পর্ক৷ কত ক্লাবকে যে অর্থ, বই, যন্ত্রপাতি কিনে দিয়েছে মানুষটি তার ইয়ত্তা নেই৷ নিউইয়র্কে পদার্থবিদ্যায় পিএইচ ডি আর কলকাতার অঙ্কে ডি এসসি মানুষটির অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে উপার্জিত অর্থের অনেকটাই খরচ হয়ে যেত বিজ্ঞান ক্লাবগুলোকে সাহায্য করতে গিয়ে৷..তাইতো বিজ্ঞান ক্লাবের ছেলেমেয়েরা দীপঙ্করদাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে৷
আহা! অন্যে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসবে এমন মানুষই বা ক'জন হতে পারেন!
· Sukanya Dasgupta Uni regular IACS e asten amader department e ba library te...khub pranobonto manush chhilen
· Sukanya Dasgupta Onŕ proti amar soshroddho pronam janai
· Prasanta Das বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই ।
· Silpi Sen এইরকম মানুষের কথা জানতে পারাটাও একটা বিরাট পাওয়া । মানুষ হিসেবে যখন হতাশা জাগে, তখন এই মানুষগুলির কথা জানলে হতাশার আঁধার কেটে আবার মানুষ হবার জন্য গর্বিত হই । শ্রদ্ধা ও প্রণাম ।
· Bir Babrubahan Dhal বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই
· Prasun Bera Ananya Sadharan Manush.
অসীম বসাক আমি ওনাকে চিনি,কোনও দিন কথা হয়নি।একজন সৎ বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। আপনাকে নমস্কার।আপনি অনেকের জীবনে দিশারী হয়ে থাকবেন।
· Sushil Biswas লেখার মধ্যে ওনার পরিচয় পেলাম।
বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
· Aloke Misra বিজ্ঞান আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ড.রায়কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
· Manas Maity Swagato Banerjee
· Puspak Pal ড. দীপঙ্কর রায়ের স্মৃতিতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল ।
· Nikhil Ranjan Banerjea Shraddha nibedan korlam.
· Debasis Mandal অনেক শ্রদ্ধা জানাই
· Parimal Chattopadhyay শ্রদ্ধা!
· Sujit Ghosh স্যার কে দেখছিলাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এ । এম এস সি তে ভর্তির জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন।খুব আপন ভোলা মানুষ ।তাঁর সহকর্মী স্যার বলেছিলেন উনি ডি এস সি।
· Panchanan Ghosal অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
· Manas Bandyopadhyay সালটাও মনে পড়ছে না,আমাদের খড়দহ উৎসব চলছে রহড়ার মিশনের দিঘির পাড়ে অনেক কিছুর সাথে মৃতদেহ (ডঃ গৌতম মুখার্জির তত্ত্বাবধানে )ও ঢাকুরিয়া স্কাই ওয়াচ এসোসিয়েশন আকাশ দেখাচ্ছিলেন---হঠাৎ দেখি একজন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,চাঁদের ভিতর কেমন দেখাচ্ছে দেখি,আমি ত…See more
· Khagendranath Maity Srodha janai
· Md Atabuddin শ্রদ্ধা জানাই
· Sulaiman Murshidabad 1989এ ইসকার সম্মেলনে ওনাকে দেখেছিলাম । বিজ্ঞান ক্লাব এর প্রতিনিধি হিসাবে ছিলাম । খুব ভালো মানুষ । সমবেদনা জানাই ।
· Prodip Sarkar বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই 🙏🙏
· Ratna Roy আমাদের এখানে বিজ্ঞান মেলা যে সব বিশিষ্টজনেরা সমৃদ্ধ করতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্যার। অনেকবার ছাত্রদের নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনী তে। কথাও হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই! গতকাল বুঝতে পারিনি উনি আমাদের সেই স্যার যিনি অসাধারণ হয়েও আমাদের কাছে…See more
· Soumen Mondal গভীর শ্রদ্ধা জানাই
· Ranjit Sit RIP
· Rabindranath Banerjee সশ্রদ্ধ প্রণাম।
· Snehasish Chattoraj বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই
· Goutam Mukherjee My salute to this departed great personality.
· Nikhil Ranjan Banerjea Ami bhalo achhi.Dhanyabad.
· Jayanta Kumar Panja কোন্ন গর যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্রে র তরফে ওনাকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।
সত্যিই একজন বিজ্ঞান চিন্তক ও অভিবাবক কে হারালাম।।
· Anil Jana গভীর শ্রদ্ধা জানাই আজীবন বিজ্ঞান চর্যায় নিয়োজিত এই ব্যক্তিত্ব কে। উনার লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে সম্ভবত 'উৎস মানুষ' পত্রিকায়।
· Bhabani Sankar Joardar শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম
· Amit Mukherjee শ্রদ্ধা জানাই বিজ্ঞান আন্দোলনের এই অগ্রনী সেনানী কে।
· Prabal Dasgupta Amar shishak tulya manush chhilen. RIP
· Shibnath Banerjee বহু বিজ্ঞান সংগঠনের সভায় (আমাদের প: ব: বিজ্ঞান মঞ্চ সহ) ও বিজ্ঞান মেলায় দীপঙ্কর - দার নীরব উপস্থিতি দেখেছি এবং সাধারণ পোশাকের লোকটিকে কেন জানিনা অন্যরকম মনে হত। পরে যখন দীপঙ্কর - দার সম্পর্কে জানলাম তখন প্রচন্ড অপরাধবোধে ভুগেছি অনেকদিন। পরে আমাদের বিজ্ঞান মেলায় কথা বলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। ওঁর গুণাবলী ও কর্মকাণ্ড আজকের দিনে বিরল। ওঁর প্রয়াণে বিজ্ঞান আন্দোলন একজন অভিভাবক হারাল। আমার শেষ প্রণাম।
· Basudev Bhattacharya খুব খারাপ লাগছে। অনেকবার দেখা হয়েছে ওনার সাথে। মুখটা স্পষ্ট মনে আছে এখনো।
· Mausmi Mitra স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। অপূরনীয় ক্ষতি।
· Amitava Mukherjee একটা সময় খুব কাছের মানুষ ছিলেন দীপঙ্করদা। আজ অনেকেই তাঁকে চেনেন না।
· Swagato Banerjee RIP
· Rafikul Islam আমি দেখেছি অধ্যাপক দীপঙ্কর রায়কে। কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এত বড় মনের মানুষকে হারিয়ে আমরা অভিভাবক হারালাম। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
· Parthasarathi Ghosh শ্রদ্ধা জানাই।আত্মার শান্তি কামনা করি।
· Tapas Saha RIP
· Keka Ghosh শ্রদ্ধা রইলো
· Satyajit Bandyopadhyay শ্রদ্ধা জানাই
· Khagaraj Bhaumik অধ্যাপক দীপঙ্কর রায়ের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বিজ্ঞান সংগঠক হিসাবে তার ভুমিকা অনন্য অসাধারণ ছিল।
July 19, 2020
https://www.facebook.com/549522618/posts/10159712361492619/?app=fbl
ইউ জি সায়েন্স বিল্ডিংয়ের সামনে ঝিলের ধারে গুলতানি দিচ্ছি। শরীর থেকে তখনো স্কুলের গন্ধ যায়নি। বিজ্ঞানী হবো, স্বপ্ন নিয়ে যাদবপুর ফিজিক্স। গূঢ় কৌশল কিছু আছে কিনা, নিতান্তই অজানা। ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানু্ষটি। ঢোলা পায়জামা, ততোধিক বেঢপ হাতকাটা ফতুয়া, ইয়া লম্বা ছাতা, কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলা, ঋষিতুল্য উন্মনা ভাব। মানু্ষটিকে দেখি প্রায়ই। একই পোশাকে। কেমন যেন চারপাশের এই কোলাহল জলতরঙ্গ সামান্যতম ছাপ ফেলে না তাঁর অতল গভীর মনে। আজ যেন একটু বিভ্রান্ত।
এগিয়ে গেলাম কয়েকজন, স্যার, কিছু বলবেন?
মুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখমুখ। এয়ারপোর্ট কোন বাস যায়, বলতে পারো? কিছুতেই মনে পড়ছে না!
স্বাভাবিক। যা ভোলাভোলা লোক! আমাদেরই একজন বলল, স্যার চলুন, আপনাকে বাসে তুলে দিচ্ছি।
শিশুর মত খুশী ঝরে পড়ল। চলো, একটু তাড়াতাড়ি যাই, ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে।
কৌতুহলী প্রশ্ন, স্যার কোথায় যাবেন?
ওই আর কী, আমেরিকা। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা লেকচার আছে!
আমেরিকা! ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি! এই পোশাকে? আমাদের সদ্য কলেজ জীবনের সৌখীন চোখে চরম বিষ্ময়।
মৃদু উত্তর, কেন? বেশ তো!
বিজ্ঞানসাধক হওয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ এক শর্ত অনুধাবন করলাম সেদিন। নিরহংকার। সারল্য।
অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা, বিদেশে ফিজিক্সে পি এইচ ডি, দেশে ডি এস সি, যাদবপুরের অঙ্কের অধ্যাপক। কাজ করেন সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে। ওই বয়সে যা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। এহ বাহ্য। কোলকাতা ছেড়ে গ্রামগঞ্জে চলে যান আম আদমীর মাঝে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সহজ করে, সবার গ্রহণযোগ্য করে।
শিখলাম বিজ্ঞানী হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। দায়বদ্ধতা। সমাজের প্রতি, পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি, বিজ্ঞানের প্রতি।
কাট টু। প্রায় কুড়ি বছর কেটে গেছে। এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ। সুবিখ্যাত বক্তা অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত ব্যক্তিত্ব - যাঁর মহাকাশ সংক্রান্ত ভাষণ শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম স্কুলজীবনে, তাঁর পাশে নগণ্য আমি অতি কুণ্ঠায় বসে আছি। দর্শকআসনে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী সহবিজ্ঞানীরা। হঠাৎ তাঁদের মাঝে দেখি সেই ভোলাভালা মানুষটি। এঁর সামনে আমায় বলতে হবে?
দুরু দুরু বুকে ভাষণ শেষ করলাম। দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্নোত্তরপর্বও। দূরে ঠায় দাঁড়িয়ে শুনছেন মানুষটি। ভীড় ঠেলে যে কাছে যাব, উপায় নেই। একটু হালকা হতেই দেখি, ওমা! তিনি নিজেই এগিয়ে আসছেন। চোখে খুশীর বন্যা। ভাবলাম, হয়তো যা কিছু তুচ্ছ বলেছি, তাতেই মহেশ্বরতুল্য এই মানুষটিকে সামান্য খুশী করতে পেরেছি, এ আমার পরম সৌভাগ্য।
কাছে এসে ছোট্ট প্রশ্ন করলেন। সামান্য উত্তর দিলাম। তারপরই, তুমি যাদবপুরে পড়তে না? ফিজিক্স?
বলেন কী! আপাদমস্তক শিউরে উঠলাম! কুড়ি বছর! অঙ্ক পাস পেপার! হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী! নেহাৎই অযোগ্য এক ছাত্র আমি! স্মৃতিধর কি এঁরই নাম?
সেইদিন - সেইদিন পরম সৌভাগ্য হয়েছিল এই মানুষটির চরণস্পর্শ করার। হলভর্তি শ্রোতার সামনে মাথায় তাঁর আশীর্বাদের পরশটুকু জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে একটা। বলেছিলেন, সবার জন্য বিজ্ঞানকে সহজ করে তুলে ধরার কাজ ছেড়ো না।
বিজ্ঞানসাধক হয়ে উঠতে পারি নি। এই মানুষটিকে দেখে বিজ্ঞানের অতি নগণ্য ছাত্র হওয়ার চেষ্টাটুকু যেন চালিয়ে যেতে পারি।
প্রফেসর ডক্টর দীপঙ্কর রায়। বিজ্ঞানসাধক দীপঙ্কর রায়। চলে গেলেন এই ঘোর বরিষণে। সার্থক জনম, গৌরবের তিরোধান।
___________________________________________
Devranjan Samanta Amader mechanical engg dept e porate asten engg math, oi dhile dhala poshak khyapate achoron, takhan sunechilam onar katha, majhei majhei bolten amake dept ekta office room o daini bosar jonno, tomar sundor smriticharonay abar sab mone porlo
Sujan Sengupta খুব সুন্দর লিখেছ। এই নিয়ে আরেকটি শোনা কাহিনী মনে পড়ে গেল। অমল কুমার রায়চৌধুরী যিনি রায়চৌধুরী সমীকরনের জন্য জগত বিখ্যাত। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াতেন। সাদা খদ্দরের পাঞ্জাবী আর ধুতি ছাড়া তাঁকে কোনদিন আর কিছু পরতে দেখিনি। ওই পোশাকেই 30B বাসের দরজার কাছে তাঁকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে রাস্তা থেকে এক ছাত্র জিজ্ঞাসা করে "স্যার কোনদিকে?" সারা বাসের সবাইকে ভ্যাবাচেকা খাইয়ে উত্তর এল "এই একটু মস্কোর দিকে।"
Suvankar Ray খুব খারাপ লাগলো জেনে ...এই মানুষটার সাথে যাদেরই পরিচয় হয়েছে তারা নিশ্চয়ই বুঝবেন অহংকার শূণ্যতা টা কি ...নিপাট সাদাসিধা সব সময়ই ভালো কিছু একটা করতে হবে একেবারে এই মানসিকতার ছিলেন ...কতবার উনি সরাসরি বাড়িতে চলে আসতেন , 'চলো আগামী শনিবার একটা দারুন আলোচনাসভা আছে মনে করে যাবে কিন্তু '... এতো অমায়িক সুন্দর মানুষ খুব কম ই দেখেছি
Satadal Ghosh Asadharon! Jatodur Mone porchhe, amader-o Engg maths niyechhilen akta semester. Tomar barnona puro chokher samne bhese uthlo. Onake akbaar sealdah line er train e erakom-i anmona-bhabe jete dekhechhilam amra class sheshe bari ferar samay. Uni r nei bhabtei abaak lagchhe! Simple living and high thoughts - er protibhu!
Rina Mete Hajra অসাধারন লেখা।আর তুমি সৌভাগ্যবানও বটে এত বড়ো বড়ো মানুষের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছ।তুমিও অনেক আগাবে ।শুভেচ্ছা রইল।
Rkm Dipanjan MJ Supratik Pal দা খুব ভালো লাগল লেখাটা। শেষে ওনার চলে যাওয়ার কথাও আছে ... খানিকক্ষণ ভাবলাম একজন মানুষের চলে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো লেখায় love react দেওয়াটা অসৌজন্যমূলক কিন্তু পরক্ষণে ভাবলাম এত উচ্চাঙ্গের জীবনবোধ যাঁদের থাকে সেই সব ব্যক্তিদের তো মৃত্যু হয় ন…See more
Sital Chandra Kundu যথার্থ পন্ডিত জন এমন নিরহঙ্কার ও আত্মভোলা হন। শতশত প্রণাম ওনার চরণে।
Hillol Mukherjee প্রণাম। সত্যিই গুণী ব্যক্তি এমনই হন। লেখাটি খুব ভালো লাগলো।
Badal Bhattacharjee আপনাদের পরম সৌভাগ্য যে এই ধরণের জ্ঞান তপস্বীদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। ক'জনের এমন সৌভাগ্য হয়!
Sumit Som সশ্রদ্ধ প্রণাম। JU তে Ph.D করাকালীন কিছু সেমিনারে ওনার সঙ্গে আলোচনার সৌভাগ্য হয়েছিল। খুব সুন্দর লিখেছ সুপ্রতিক দা।
Devi Prasad Guin মহাপ্রাণ। তুমিও সাধারণ নও। লেখাটিও অনন্য। ভালবাসা।
Susanta De কি বলবো?আমি বাক রুদ্ধ।তবে আমি গর্বিত তোদের মত ছাত্রকে কাছে পেয়েছি বলে।বড় হ'।আরও বড় হ।ওনার মত।
Goutam Paul সুপ্রতিকদা, পড়ে মনটা কেমন করে উঠলো। হৃদয়-দোলানো লেখা, প্রাণ-জুড়ানো লেখা, চোখের কোণে জল চিকচিক করানো লেখা। ধন্যবাদ। তোমার স্মৃতি, তোমার অনুভূতি এইভাবে পরিবেশনের জন্য৷
________________________________________________________________________
https://www.mysepik.com/archives/31404
মন্টু দাস
আজ প্রয়াত হলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞান আন্দোলনের ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ড. দীপঙ্কর রায়। পেশায় তিনি ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক আর নেশায় বিজ্ঞান প্রচারক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি জীবতকালে পৌঁছে যেতেন বিজ্ঞানকে হাতে কলমে পৌঁছে দেবার লক্ষ্য নিয়েই। বিজ্ঞানে ডিএসসি ডিগ্রি পাওয়া এই মানুষটির অতি সাধারণ পোশাক ও জীবনদর্শন আমাদের বিস্মিত করে।
তাঁর সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছিল বিজ্ঞান আন্দোলনের সূত্রেই। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ক্লাব শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব। এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রে তাঁর এটি সাদামাটা জীবনকে পরখ করার সুযোগ হয়েছিল আমার মত অনেকেরই। শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের সঙ্গে ড. দীপঙ্কর রায়ের সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকেই৷ ১৯৮২ সালে যে বছর শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়, সেবছর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর পরই পূর্ব ভারত বিজ্ঞান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের (Eastern India Science Club Association) একটি সম্মেলন কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিপ্রদাস পালচৌধুরী পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ সেখানেই শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের বিজ্ঞানকর্মী ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞানী ড. দীপঙ্কর রায়ের আলাপ হয় এবং শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব প্রাথমিক বিকাশে এই আলাপের গুরুত্বও আছে৷ তারপর থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভালোই ছিল৷
১৯৯১ সালে সায়েন্স ক্লাবে একঝাঁক নতুন ছাত্রছাত্রী যোগ দিলে বিজ্ঞান আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়৷ ১৯৯৩ সালে যে বছর সবুজকলম (শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের মুখপত্র) প্রথম প্রকাশিত হয়, সেবছরই ক্লাবের তরুণ সদস্য সুব্রত বিশ্বাস একটা পোস্টকার্ডে ড. দীপঙ্কর রায়কে শান্তিপুরে আসার আমন্ত্রণ জানায়৷ সুব্রত তখন সদ্য গ্রাজুয়েট, ১৯৯১-তে শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের সবে ঢুকেছেন এবং ঢুকেই নেতৃত্বভার সামলানোর দায়িত্ব পান৷ সুব্রত তো ভাবতেও পারেনি যে, উনি হঠাৎ করে চলে আসবেন আমাদের এখানে দেখা করতে৷ এখানেই সেই সাদামাটা, একটা সাধারণ পোশাক পরা ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে চেনার শুরু আমাদের। কোনও একদিন রবিবারে আমাদের উৎসাহদাতা গুরুদার বাড়িতে এসে হাজির হলেন ড. দীপঙ্কর রায় এবং সুব্রতকে ডেকে পাঠালেন৷ গুরুদা, আমি, সুব্রত আর ড. দীপঙ্কর রায় মিলে আলোচনা হল৷ দেখলাম একদম সাদামাটা একজন মানুষ৷ পোশাক বলতে পাতলুন৷ বলা ভালো পরে ও তাকে পাতলুন পরতেই দেখেছি। পাতলুনটা অনেক সময় কাচাও থাকত না, ছেঁড়াও পরতেন অবলীলায়৷ এর ওপরে পরতেন ঝুল পাঞ্জাবি৷ মাথায় অবিন্যস্ত চুল আর চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে তিনি অন্যদের স্বপ্ন দেখাতেন। গণিতের এই বিজ্ঞানী আমাদেরকে খুব স্নেহ করে বললেন, যে তোমরা কী কর্মসূচি সামনে নিতে চাও? আমাদের তখন সামনে ছিল বিজ্ঞান মেলা৷ বললাম এই বিজ্ঞান মেলা করার ব্যাপারে আপনার সঙ্গে যুক্ত হতে চাই৷
পূর্ব ভারত বিজ্ঞান ক্লাব সম্মেলন এর আগেও অনেকবার উনি করেছেন৷ কর্মকতা হিসেবে একবার সম্মেলন শান্তিপুরে করার প্রস্তাব দিলেন৷ এতে আমরা সানন্দে রাজি হয়েছিলাম৷ আমাদের আগ্রহে আর এই বিজ্ঞানপ্রেমীর উৎসাহে ১৯৯৩ সালে পূর্ব ভারত বিজ্ঞান সম্মেলন শান্তিপুর অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে প্রচুর বিজ্ঞান সংগঠন শান্তিপুরে এসেছিলেন৷ সুন্দর সুন্দর বিজ্ঞানের মডেল তারা নিয়ে এসেছিলেন এবং তাতে গোবরডাঙা বিজ্ঞান পরিষদ থেকে শুরু করে কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবার সহ সমস্ত এ রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনই অংশগ্রহণ করেছিল৷ অনুষ্ঠানের শেষে দেখা গেল যে প্রচুর অর্থের ঘাটতি হয়েছে, অত চাঁদা আমরা তুলতে পারিনি৷ ড. দীপঙ্কর রায় তখন উদারভাবে তার নিজের বেতন থেকে সমস্ত অর্থ পরিশোধ করেন৷ বুঝলাম মানুষটা সত্যিই বেহিসেবি।
আমরা তাঁর সান্নিধ্য তারপরেও অনেকবার পেয়েছি৷ পরবর্তীতে শান্তিপুর কলেজে অনুষ্ঠিত শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের বিজ্ঞান মেলাতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং বিজ্ঞানের সেমিনার যেগুলি বাংলার অন্যান্য জায়গায় হত, সেখানে তাঁর সঙ্গে বারবার আমাদের দেখা হয়েছে এবং অভিভাবকত্বসুলভ স্নেহ আমরা পেয়েছি৷ অঙ্কের গবেষণা সূত্রে তিনি গিয়েছিলেন বিদেশে, করেছেন পিএইচডি, পেয়েছেন বিজ্ঞান-এডিএসসিএর সম্মানও। এতেই তিনি থামেননি। তাঁর কর্মময় জীবনে তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন ইতিহাস পাঠের ব্যাপারেও। প্রাচীন মিশর নিয়ে ও ভারতের ইতিহাস নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল।
পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের বিভিন্ন বিশেষ বক্তৃতায় তাঁকে শ্রোতার আসনে দেখা যেত। তিনি বিশেষ প্রকাশ করতেন না তাঁর শিক্ষা গত ডিগ্রি, পেশাগত পরিচিতি, মনে করতেন এসব তাঁকে প্রতিষ্ঠানিকতার বেড়ার বেঁধে ফেলবে এবং সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে দেব।
কোর্ট-টাই পরা ইংরেজি বুলি আওড়ানো বিজ্ঞানীদের ভিড়ে তিনি একেবারেই ছিলেন আলাদা, বেমানানও বটে। তবে আমাদের মতো যাঁরা এই সব বেমানানদের পরামর্শে চলতে চায়, তাদের জন্য ওনার প্রস্থান এক শূন্যতার সূচনা করল। পরবর্তী বিজ্ঞান আন্দোলন কোন পথে যাওয়া উচিত সে বিষয়ে সর্বদাই পরামর্শ দিতেন তিনি৷ তাঁর পরামর্শ বর্তমানে আর পাওয়া যাবে না ভেবে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত৷ আশা করি তিনি আমাদের মনের মধ্যে বেঁচে থাকবেন৷ তাঁর প্রদর্শিত পথে সাধারণ মানুষের কল্যাণেই বিজ্ঞান আন্দোলনের ভবিষ্যতের পথ নির্মিত হবে৷
● লেখক বিজ্ঞানকর্মী ও শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের সদস্য।
________________________________________________________________________
https://www.facebook.com/100007260363645/posts/2553726801545974/?app=fbl
।। স্মৃতিচারণা:বিজ্ঞানী দীপঙ্কর রায়।।
বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ দীপঙ্কর রায় ছিলেন জনবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি কখনো প্রথাগত চেয়ার, পদ ও সম্মান পেতে আগ্রহী ছিলেননা। নীরবে, নিভৃতে জনবিজ্ঞান আন্দোলনকে সমৃদ্ধি করে গেছেন।
তিনি ছেলেবেলা থেকে অনন্য সাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। স্কটিশ চার্চ স্কুলে পড়াশোনা। সেখানকার শিক্ষকরা তাঁকে 'নিউটন 'বলে ডাকত। সহপাঠীরা এই নামে বেশি করে চিনতো। মৌলানা আবুল কালাম থেকে আইএসসি পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে বিএসসি (অনারস ডিগ্রি লাভ করেন। ফলিত গণিতে এমএসসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়-এ কিছুকাল ফলিত গণিতে অধ্যাপনা করেন। উচ্চতর গবেষণার জন্য নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে আমেরিকায় পাড়ি দেন। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি ও পরে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার দু-এক মাসের মধ্যে গণিতের ওপর একটি গবেষণাপত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। সেই গবেষণাপত্রের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করেন তাঁকে।
তিনি লন্ডনের কুইনমেরি কলেজে দু-বছরের জন্য পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। ইতালির ত্রিয়েস্ত-এ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স-এ নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আব্দুস সালামের সঙ্গে গবেষণার কাজ চালান। ১৯৮২খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের রয়াল কলেজে অধ্যাপনা করেন। দেশে ফিরে সিএসআই -এর সায়েন্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৫খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং এখান থেকে অবসর নেন।
নিউ ইয়র্ক বসবাসকালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামি সাধারণ মানুষের জন্য গঠিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। এই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধিবেশনে যোগদান করেন। এই ভাবে মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন। তিনিই লিখেছিলেন সম্পদের সমবন্টন হওয়া উচিত। তাঁর এই চিন্তার প্রতিফলন ঘটে সমতট পত্রিকার জন্য প্রেরিত লেখায়, শিরোনাম 'নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন:সম্পদের বন্টন '। অর্থনীতির ক্ষেত্রে 'ইনইকোয়ালিটি মেজারমেন্ট'শীর্ষক একটি অসাধারণ গবেষণা কাজ করেন, যা আজও স্মরণীয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জার্নাল গুলিতে তাঁর অর্ধশত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সমতট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর 'আমেরিকার চিঠি'বিষয়ক বিভাগীয় রচনা।
তবে তাঁর সারাজীবনের সবচেয়ে বড় কাজ জনবিজ্ঞান আন্দোলনকে সংগঠিত করা। দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা কেন প্রয়োজন সে সম্পর্কে বলেছেন। সাধারণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষা পৌঁছে দেবার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য করেন। তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সায়েন্স ক্লাব এসোসিয়েশন। বিজ্ঞান ক্লাব গুলির মধ্যে সমন্বয় করাই ছিল তাঁর এই উদ্যোগ। আজকের সময়ে এই উদ্যোগ বড় প্রয়োজন, কিন্ত তিনি আর নেই আমাদের মধ্যে। গত ১৬জুন ২০-র দুপুরে প্রয়াত হন। আমরা হারালাম জনবিজ্ঞান আন্দোলনের এক সাথি অভিভাবককে।
· Tushar Chakraborty এই অপার জ্ঞানী ও আত্মম্ভরিতা-শূন্য অনন্যসাধারণ শ্রদ্ধেয় গণিতজ্ঞ ও জনবিজ্ঞানীর প্র্য়ানের দুঃসংবাদ শুনে শোকাহত
· Satyajit Chakraborti বিজ্ঞান জগতের অপুরনিয় ক্ষতি, স্যার এর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও শান্তি কামনা করি।
________________________________________________________________________
ডক্টর শুভঙ্কর রায় এবং ডক্টর দীপঙ্কর রায় । দুই অনন্যসাধারণ বিজ্ঞানী । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে 1980র দশকে আমরা যখন ছাত্র, গবেষক হিসেবে শুভঙ্কর রায়ের পরিচয় পাই । উচ্চ মানের গবেষণা পত্র প্রকাশ করতেন ও অন্যান্য গবেষক দের সঠিক পরামর্শ দিতেন , গবেষণা পত্র লিখতে সাহায্য করতেন । পাজামা পাঞ্জাবী ছাড়া অন্য কোনো পোশাকে দেখিনি কখনো । প্রাণরসায়নবিদদের সর্বভারতীয় বিজ্ঞান সম্মিলনে একসঙ্গে গেছি । সেখানেও তিনি একই পোশাকে, অনন্য । আর , কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের দোতলায়, রাডিক্যাল হিউমানিস্ট হলে এঁকেই দেখতাম , পুরোগামী পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত , যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে । 1990 দশকের মাঝামাঝি বিদেশ থেকে ফিরে দেখলাম শুভঙ্কর রায় একই রকম আছেন । তবে , বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সেই সম্পর্কটা নেই ।
এবার , গনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবার সুবাদে পরিচয় হলো ডক্টর শুভঙ্কর রায়ের অগ্রজ অধ্যাপক দীপঙ্কর রায়ের সঙ্গে । আরো আলাভোলা , এক অসামান্য গণিতজ্ঞ! অসামান্য মানুষ । বিজ্ঞান আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ! কয়েক বছর আগে নীরবে প্রয়াত হয়েছেন ডক্টর শুভঙ্কর রায় । তার প্র্য়ানের পর অধ্যাপক দীপঙ্কর রায় যে খুবই অসুবিধের মধ্যে পড়েছেন , তা বেশ বুঝতে পারতাম । কিন্তু, এই প্রসঙ্গ তুললে তিনি নিজে তা অস্বীকার করতেন । জীবন যাপন বিষয়ে এতো নির্লিপ্ত, যে কিছুতেই তাঁর কিছু যায় আসেনি । মাঝে মাঝে সম্ভবত অনাহারেও থাকতেন! ভোজনং যত্রতত্র , শয়নং হট্টমন্দিরে ! অথচ , বিজ্ঞান ও সামাজিক আন্দোলনের যে কোনো কর্মসূচিতে হাজির থাকতেন , শ্রোতা ও সহযোগি হিসেবে ।
1970 এর দশক এই দুই ভাইয়ের জীবনকে স্পর্শ করে - প্রকৃত অর্থেই শ্রেনীচ্যুতি ঘটায় । সব সময়ের রাজনৈতিক কর্মীদের বাইরে , আর কারো জীবনে ঠিক এতটা ঘটতে আমি দেখিনি ।
গত 16 ই জুন অধ্যাপক দীপঙ্কর রায় প্রয়াত হলেন । কোন আলোকে প্রানের প্রদীপ জ্বালিয়ে এই দুই ভাই এসেছিলেন আমাদের কলুষিত জীবনে- জানি না ! এঁরা দুজনেই ছিলেন আশার এক একটা স্ফুলিঙ্গ!
________________________________________
Bijnan Darbar Kanchraapara দুজনেই খুব ভালো মানুষ ও বিজ্ঞান আন্দোলনের প্রথম সারির একনিষ্ঠ কর্মী ও গুণী মানুষ এদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা --বিজ্ঞান দরবার
Amitabha Chakrabarti এই অসাধারণ মানুষদের কথা কথা কত কম জানা হয়! তুই-ও একটা পাগল, তাই এঁদের কথা বলিস। ভাগ্যিস পৃথিবীতে পাগলদের আসা বন্ধ হয় না।
Tanya Das শুভঙ্করদাকে বহুকাল ধরে কাছ থেকে দেখেছি। অন্য জাতের মানুষ ছিলেন। দীপঙ্করদার কথা শুনতাম - দেখিনি তেমন কাছ থেকে। এসব মানুষ চলে যাওয়া মানে পৃথিবীর যা কিছু শুভ, যা কিছু ভালো -তার কিছুটা কমে যাওয়া। যা আর কখনো পূর্ণ হবে না। দুজনেই ভালো থাকুন - যেখানেই থাকুন না কেন। 🙏
Sanjeeb Mukherjee Both were outstanding persons and deeply political.