আমার শহর শান্তিপুর

August 30, 2023

ইতিহাসের পাতায় প্রেমভূমি নদীয়া (Read the entire article in বার্তা 2022 )

নদীয়া শুধু একটি জেলা নয় বরং নদীয়া একটা আবেগের নাম। এই প্রাচীন জনপদ যেমন একাধিক দিগ্বিজয়ী ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি তেমনি বিভিন্ন স্থাপত্য কীর্তি এবং পুরা কীর্তির মেলবন্ধনে তা বহু প্রাচীন ইতিহাসের ধারক ও বাহকও বটে। শ্রী চৈতন্য করতে বৈষ্ণব ভক্তি রসের ধারায় ভেসে যাওয়া নদিয়া একইসাথে শাক্ত ও শৈব ধারারও মিলনস্থল, আবার এই ভূমি হিন্দু ধর্মের সাথে সাথে বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের মিলন ভূমি।যে মিলন ভূমিতে ভক্তি রসের ধারার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে শক্তি রসের ধারা। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরলাম প্রেমভূমি নদীয়ার অতীত থেকে বর্তমানের কাল বিজয়ী ইতিহাসের এক সংক্ষিপ্ত কাহিনী।নদিয়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল,১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে প্রথম জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নদিয়া। সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ই আগস্ট কিয়দংশ বাদে নদিয়া পুনরায় ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।নদিয়া নামের উৎস সম্বন্ধে নানা ধারণা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন নদীকে কেন্দ্র করে নদীর তীর সংলগ্ন এলাকাতে এই জনবসতি গড়ে ওঠার জন্য এই নামকরণ। তবে নদিয়ার নামকরণ প্রসঙ্গে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে, ভাগীরথী তীরস্থ নবসৃস্ট চরভূমিতে এক তান্ত্রিক প্রতিদিন সন্ধ্যায় ন' টি দিয়া (প্রদীপ) জ্বালিয়ে তন্ত্র- সাধানা করতেন। দূর থেকে দেখে লোকে এই দ্বীপটিকে না দিয়ার চর বলত। আর সেই থেকেই নাকি লোকমুখে 'নদিয়া' নামের প্রচলন করে।” রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন বাংলার হিন্দু রাজারা গৌড়ের পাশাপাশি নদিয়াতেও অবস্থান করতেন।১৯২২ ও ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি জরিপ ম্যাপে একই সময়ে খননকৃত একটি দীঘির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বিজিত হওয়ার আগে অবধি নদিয়া বাংলার রাজধানী ছিল।১৮৬৯ সালে নদিয়া পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইংরেজ আমলে অবিভক্তনদিয়াজেলা কৃষ্ণনগর, রাণাঘাট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এই পাঁচটি মহকুমায় বিভক্ত ছিল। দেশভাগের পরে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি মহকুমা তৎকালীন পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়। একাধিক সময় একাধিক শাসকের দ্বারা বিজিত নদীয়ার উল্লেখযোগ্য নদিয়া রাজপরিবারের সর্বাধিক নামকরা শাসক ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, নদীয়ার বুকে তার শাসনকাল আনুমানিক প্রায় ৫ বছর(১৭২৮ থেকে ১৭৮২সাল পর্যন্ত)। তার মৃত্যুর পর পরবর্তী রাজারা সিংহাসনে আরোহন করলেও সাম্রাজ্য পরিচালনার রাশ ক্রমশ্য আলগা হতে থাকে। এই সময়ে রাজত্বের একাধিক অঞ্চল বা জমিদারি বিক্রি হয়ে যায়। ক্রমস্য ছোট হতে থাকে নদীয়া, তবে পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসন পর্বেও প্রশাসনিক সুবিধার্থে নদিয়া জেলার অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমান রূপটি ১৯৪৭ সালের। এই ভূখণ্ডে জন্মেছেন রামায়ণের প্রাচীন অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝা থেকে শ্রীচৈতন্যদেব তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ থেকে সার্বভৌম আগমবাগীশ ,মদনমোহন তর্কালঙ্কার থেকে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র, প্রখ্যাত কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় থেকে করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় যতীন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত থেকে যতীন্দ্রমোহন বাগচীর মত একাধিক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি নদীয়া। বৈষ্ণব চূড়ামনি অদ্বৈতাচার্য্যের পদধূলি ধন্য, মহাত্মা বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীর পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত এই সুপ্রাচীন জেলা তার ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ থাকুক এই আশা রাখি।।