scribbling

নায়ক

দু'দিকে দু'টো ছবি - একটা ১০ বছর আগের, অন্যটা আজ সকালের । সেদিনও কিন্তু যাকে কাঁধে নিয়ে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল, তিনি কিন্তু সেঞ্চুরি করেননি, মাত্র ১৮ রান করেই চলে গিয়েছিলেন । আজ যাকে কাঁধে নিয়ে উল্লসিত আর্জেন্টিনার ফুটবল দল, তিনিও কিন্তু কোন গোল করেননি, উল্টে গোলের সুযোগ হারিয়েছেন । তাহলে এই উন্মাদনা কিসের ?


যখন চিরাচরিত জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আত্মবিশ্বাস এসে থেকে তলানিতে, প্রাত্যহিকতার ব্যঙ্গ প্রতিনিয়ত ছিঁড়ে টুকরো করতে থাকে সত্তাকে, তখন জীবনযুদ্ধে শেষ আত্মসমর্পণের আগের মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে যাওয়া দৃষ্টির সামনে ভেসে ওঠে এক হাতছানি । সেই হাতছানিতে যেন মিশে থাকে এক জাদুশক্তি, যা দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে যাওয়া আত্মবিশ্বাসকে আবার জাগিয়ে তোলার আশ্বাস দেয়, কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে যায়, "ওঠো, তুমি পারবে ।" আর্থসামাজিক ডামাডোল, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, রাজনৈতিক বিতশ্রদ্ধতা - সবকিছু ভুলে আমরা চাই আরেকবার উঠে দাঁড়াতে, আরেকবার বাঁচার জন্য লড়াই করতে । রুপোলি পর্দার পিছনে রক্তমাংসের বেঁটেখাটো মানুষটার লড়াই যেন অন্ধকারের মধ্যে দেখায় আলোর ঠিকানা । তার হারজিতের সাথে একাত্ম হয়ে ওঠে আমাদের সকল ওঠাপড়া । জন্ম নেয় নায়ক । ধীরে ধীরে তার উপস্থিতিটাই হয়ে ওঠে মুখ্য, যখন গ্যালারি থেকে সমবেত কণ্ঠে ভেসে আসা "শঅঅঅচীইইইন শঅঅঅচীন" অথবা "মেএএএএসিইইই মেএএএএসিইইই" চিৎকারটা ধমনীতে রক্তের উত্তাপটা একটু বাড়িয়ে দেয় । হারজিত নিতান্তই গৌণ এই অনুভূতির সামনে ।


যুগে যুগে মানুষ নায়ককে অবলম্বন করে বাঁচার চেষ্টা করে এসেছে । নায়কের আনন্দে হেসেছে, নায়কের দুঃখে কেঁদেছে । সেই নায়কের বিদায়লগ্নে সমস্ত হারজিতের হিসেব-নিকেশ ভুলে গিয়ে শুধু অনুভব করা তার অন্তিম উপস্থিতিকে, একবার তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বলা, "তুমি ছিলে, তাই আমরা আছি"