scribbling

অচেনা অভিনেতা উত্তম

একটা সময় ছিল, যখন টেলিভিশনের পর্দায় শুধু হিরোদের নাচাগানা আর মারামারি দেখতেই ভালো লাগত, কারণ তখনও সিনেমাকে উপলব্ধি করার মত বয়সটা হয়নি, অথবা পরিপক্বতাও আসেনি । আস্তে আস্তে যত বয়স বেড়েছে, আইজেনস্টাইন-ভিত্তোরিও দি সিকা-আকিরা কুরোশাওয়া-সত্যজিৎ রায়-মৃণাল সেন-তপন সিনহা-ঋত্বিক ঘটক - এনাদের সাথে পরিচিতি বেড়েছে, তত বেশি করে নায়কের প্রতি আকর্ষণ কমেছে, এবং অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে । এই সময়টাতে একদিন হঠাৎ করে "নায়ক" দেখে ফেলি - চমকে উঠেছিলাম । "চেনা হিরো অরুণ" কে হারিয়ে "অচেনা অভিনেতা উত্তম"-কে সেদিন আবিষ্কার করলাম । বিশ্বাস করতে খুব অসুবিধে হচ্ছিল, এই মানুষটাকেই সিনেমার পর্দায় গান করতে, হিরোইনের সাথে রোমান্স করতে দেখেছি । সেদিন থেকে মানুষটাকে আবার নতুন করে চেনার চেষ্টা শুরু করলাম, আর যত এগোতে লাগলাম, ক্রমবর্ধমান বিস্ময়ের পর্ব বেড়েই চলল । একে একে "অগ্নীশ্বর", "বাঘ বন্দি খেলা", "খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন", "স্ত্রী", "ধন্যি মেয়ে" - প্রিয় হিরোর অভিনেতা রূপটাকে আরও কাছ থেকে দেখতে শুরু করলাম ।


একদিন "ওগো বধূ সুন্দরী" দেখছি, পাশ থেকে বাবা বললেন, "এই যে দেখছিস উনি সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন, এটাই ওনার জীবনের শেষ শট" - কথাটা যেন কানে গিয়ে বিঁধে গিয়েছিল । সিনেমাটা দেখার সমস্ত আনন্দ যেন এক লহমায় শেষ হয়ে গিয়েছিল । কতই বা বয়স তখন, এই চোদ্দ কি পনেরো । সেই থেকে ওই সিনেমাটার সাথে কেমন যেন একটা ভালো-খারাপ মেশানো অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল । আমার প্রিয় অভিনেতা, আমার "নায়ক", ওটাই যে তাঁর শেষ কীর্তি ।


তার পর থেকে হাজারো সিনেমা দেখেছি, কিন্তু মনের মাঝে ওনার জায়গাটা কেউই নিতে পারেনি, আর হয়ত কেউ কোনোদিন পারবেও না, কারণ কেউ ওনার মত সম্পূর্ণ অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেনি, এমনকি সৌমিত্রও নয় । তাই আজ তাঁর প্রয়াণদিবসে তাঁরই সিনেমা থেকে একটি ছোট্ট সংলাপ, "আমার বাড়িতে একজন প্রিয় অতিথি এসেছিলেন, তিনি আমার সঙ্গে কিছুদিন ছিলেন, আজ তিনি চলে গেলেন ।"