scribbling

Communication Skill

সকালে কলেজের লাউঞ্জে বসে চা খেতে খেতে অন্য একজন প্রফেসরের সাথে কথা হচ্ছিল, কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা, অর্থাৎ Communication Skill-এর গুরুত্ব কতখানি, সেই বিষয় নিয়ে । সাধারণতঃ কোন কলেজেই এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না, এবং তার কারণটা আমারও বিশেষরূপে জানা নেই । কর্মক্ষেত্রে ঠিকমত কথা বলতে বা লিখতে না পারলে যে কি বিতিকিচ্ছিরি পর্যায়ে কেলো হতে পারে, সেটা ধারণার অতীত । তো সেই নিয়ে কথা হতে হতে নিজের এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল, সেই গল্পটাই আজ বলব ।


তখন চাকুরীজীবনের দ্বিতীয় ইনিংস সবে শুরু করেছি, ঘাঁটি গেড়েছিলাম হায়দ্রাবাদে । কর্মস্থলটার নাম আপাতত উহ্যই রাখলাম । বলা তো যায় না, যা দিনকাল পড়েছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখব হয়ত উটকো কেস খেয়ে বসে আছি । তো সে যাই হোক, অন্যান্য দিনের মত সকাল সকাল অফিসে পৌঁছে কম্পিউটারটা চালু করে সদ্য নিজের মেলবক্সটা খুলেছি । হঠাৎ চোখ পড়ে গেল একটা ইমেলের উপরে । ইমেলটার মধ্যে একটু নতুনত্ব ছিল । আমার এক সহকর্মী তাঁর কোয়ার্টারে বিদ্যুতের সমস্যার কথা জানিয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের একটি বেশ লম্বা-চওড়া ইমেল লিখেছেন । প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, আমাদের কোয়ার্টারে বর্ষাকালে খুব সমস্যা হত । বহুদিন যাবৎ মেরামতি না করার ফলে বৃষ্টির মরশুমে বাড়ির দেওয়ালগুলোতে ভীষণ ইলেকট্রিক শক লাগত । এবং সেইরকম একটি ঘটনার অভিযোগ করার জন্যই ইমেলটি লেখা হয়েছে । যেহেতু মালটিকে হাড়েহাড়ে চিনতাম, সেজন্য কেমন যেন মনে হল, কিছু রগরগে খোরাকের ব্যবস্থা হলেও হতে পারে । তাই সকাল সকাল পানসে জীবনে একটু মশলার আশায় আগ্রহের সাথেই পড়তে শুরু করলাম ইমেলটি ।


প্রথমদিকে সমস্যার বিশদ বিবরণ দিয়ে ইমেলটি শুরু হয়েছিল, কিন্তু তখনও ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারিনি যে কি অমূল্য রতন হাতে পেয়েছি । সমস্যার বিবরণ দিতে দিতে আমার সহকর্মীটি একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়েছিলেন, আর সেখানেই বাধালেন এক মোক্ষম চিত্তির । ঘটনাটা ঘটেছিল কিছুটা এইরকম । গতকাল সকালে ওনার কোয়ার্টারে গয়লা দুধ দিতে এসে কলিংবেল বাজাতে গিয়ে জোরদার শক খায় । সে চেঁচামেচি করাতে কোয়ার্টারের ভিতর থেকে ওনার স্ত্রী বেরিয়ে এসে দরজা খুলতে গিয়ে তিনিও শক খান । গুরুতর ব্যাপার, তাই অভিযোগ জানানোটা ছিল একরকম অবশ্যম্ভাবী । কিন্তু ইমেলে ওনার ভাষায় যদি ঘটনাটার আক্ষরিক বর্ণনা দেওয়া যায়, তাহলে ব্যাপারটা এইরকম দাঁড়ায়:


"ঘটনার আকস্মিকতায় আমার বৌ গয়লার সাথে আটকে পড়েছে" ।


আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, ঠিক পড়ছি তো ? লেখাটা ৩-৪ বার পড়লাম । না, ঠিকই তো পড়ছি । একমুহূর্তের জন্য মাথায় জনিকাকুর সিনেমার - না, ওটা আজ থাকুক । আমি একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে হাঁটা দিলাম সেই সহকর্মীর কেবিনের দিকে । এমনিতেই ইমেলটা পড়ে পেটের মধ্যে হাসিটা সোডা ওয়াটারের বোতলের মত ছিপিবন্ধ অবস্থায় বসে আছে, যেকোন মুহূর্তে ফেটে বেরিয়ে যাবে । তাই একটু খেজুর করার আশায় ভাবলাম ভাবলাম, মালটাকে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে দেখি কেসটা কি । দরজায় নক করতে তিনি আমাকে দেখে ভিতরে আসতে বললেন । আমি ঘরে ঢুকে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম, "কেসটা কি বলুন তো ? সক্কাল সক্কাল এতবড় একটা ইমেল ছেড়েছেন দেখলাম ।"

তিনি উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করলেন, "আর বোলো না, বাড়িতে কারেন্টের ঝামেলার জন্য টেকা দায় হয়ে উঠেছে । এই গতকালই তো দেখো না কি হল…"

আমি যথাসাধ্য হাসি চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, "গতকাল…কি হয়েছে ?"

আমার এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বললেন, সেটা শুনে ওনার ঘর থেকে ছিটকে না বেরিয়ে আসলে বিপদ হয়ে যেত, কারণ সোডা ওয়াটারের বোতলের ছিপি গলা থেকে উঠে প্রায় মুখের কাছে চলে এসেছিল । ওনার উত্তরটা ছিল:


"Out of shock, my Wife got stuck with the Milkman"


সেদিন মনেমনে সাষ্টাঙ্গে স্বীকার করেছিলাম, Communication Skill-এর গুরুত্ব কতখানি

(Image Source: http://www.quickmeme.com/img/2b/2b3355eb681da387e8b83e179e9efb4be244fe91c33780d35ab00021bc032ae9.jpg)