লেখক : মোঃ হাবিবুর রহমান (সাগর)
--------------------------------------------------------
কিছু কথাঃ
------------------
আমার নাম মো: হাবিবুর রহমান (সাগর)। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের একজন ছাত্র। আমার জীবনে এই প্রথম ভুলে যেওনা বইটি প্রকাশিত করলাম। আমি উপন্যাসটি যেভাবে লিখতে চেয়েছিলাম লেখাপড়ার চাপে তা হয়ত পরিপূর্নভাবে লিখতে পারিনি। তার পরেও আশা করি ভুলে যেওনা বইটি আপনাদের মন কাড়বেই। এই উপন্যাসটি অন্যান্য উপন্যাসের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি আমি আমার মত করে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। জানিনা কতটুকু পারলাম। তার পরও বইটি খুবই স্বল্প ছাপালাম। আমার স্বপ্ন আমার এই বইটির কাহিনী সকলেই জানুক। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়লে শুধু আমিই না আপনাদেরও অনুপ্রেরণা আমার একান্ত কাম্য। যদি আপনাদের ভুলে যেওনা বইটি বিন্দু পরিমাণ ভালোলেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি ও আপনার বন্ধুদের এবং কি আপনার প্রিয় মানুষটিকে অবশ্যই এই বইটি উপহার দিন।
--------------------------------
১লা জানুয়ারী ২০১০ খ্রিস্টাব্দ
রচনা ও সম্পাদনায়
মোঃ হাবিবুর রহমান (সাগর)
বি,এ অনার্স (সম্মান)
সহযোগীতায়
মোঃ হাসিবুল ইসলাম
মোঃ আসাদুজ্জামান
উৎসর্গ
আমার ছোট বোনের ছেলে
মৃতঃ মোঃ তানভীর আহম্মেদ ( রিজভী )
--------------------------
তোমায় আমি ভালবাসি
হৃদয় উজাড় করে,
ছাঁয়া হয়ে থেকো পাশে
সারা জীবন ধরে।
সূর্যের মত আলো দিও
আমার হৃদয় জুড়ে,
সূর হয়ে ছন্দ দিও
আমার গানের সূরে।
সাথী হয়ে থেকো পাশে
আমি গেলে মরে,
চিরসাথী হয়ে থেকো
জনম জনম ধরে।
মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছে শুধুই মানুষের ভালোবাসার জন্য আর ভালোবাসার জন্য সৃষ্টি হয়েছে এই পৃথিবী। মানুষের ভালোবাসা বিভিন্ন রকম। যেমন কেউ ভালোবাসে সৃষ্টিকর্তাকে, কেউ ভালোবাসে মা-বাবাকে আবার কেউবা ভালোবাসে নারীদের অথবা পুরুষদের। সত্য কথা বলতে কি আসলে এই পৃথিবীতে মানুষের জাত হচ্ছে দুটি। তা হচ্ছে একটি পুুরুষ আর অপরটি হচ্ছে নারী। তাই বলা যায় পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে নারী আর নারীর জন্য সৃষ্টি হয়েছে পুরুষ। কিন্তু এই বন্ধন সহজে ইচ্ছে করলেও ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব না। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ এই পবিত্র বন্ধনকে নষ্ট করতে যাচ্ছে।
চারটি হরফের একটি কথা হচ্ছে ভালোবাসা, ভালোবাসার বন্ধন সত্যিই জটিল। কেবল এক জন মানুষ যখন এই ভালোবাসাই আবদ্ধ হয় তখন তার মন প্রান জুড়ে শুধু সেই ব্যাক্তি, যত দিন তাকে নিজের করে না পাওয়া যায়। ঠিক ততদিন তার মনের ভেতরে তাকে নিয়ে চিন্তা আর চিন্তা। তাই বলা যেতে পারে একটি পুরুণকে একটি নারী মারতেও পারে আবার বাঁচাতেও পারে। আবার সব ক্ষেত্রে মেয়েরাই সব দোষী বললেও ভুল করব। তাই এই নারী ও পুরুষের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে তাও সৃষ্টিকর্তা করে দিয়েছেন। তা কিন্তু অত্যন্ত আনন্দময় জীবন। একটি নারী ও পুরুষের মধ্যে যদি কোন গভীর মায়া ও মমতা গড়ে ওঠে তাহলে এটি ভালোবাসা। আর যদি একটি অবিবাহিত নারী ও একটি অবিবাহিত পুরুষ দুজনের প্রতি দুজনার মমতা ও আত্মার টান থাকে তাহলে তাকে আমি বলবো একটি ভালোবাসার বন্ধন। এই পৃথিবীর এমন কোন নর ও নারী নাই যে সে কখনও ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়নি। জীবনের প্রতিটি মানুষ সত্যিকার ভালোবাসায় আবদ্ধ হতে চাই। যেমনটি হতে চয়েছিল আসিক এবং প্রিয়া।
আসিক তার বাবা-মার এক মাত্র সন্তান এবং প্রিয়াও তার বাবা-মার অতি আদরের একটি মেয়ে। আসিকের জীবনের প্রথম কলেজ, যে দিনটি ছিল শনিবার। আসিকতো মহা খুশি কারণ অনেক আশা ছিল কবে কলেজে পড়াশুনা করবে, বলা যেতে পারে তার জীবনের একটা স্বপ্ন। আর প্রত্যেকেরি স্বপ্ন যদি বাস্তবে পাওয়া যায় তবে কেনা খুশি, সবাই খুশি হবে। প্রথম দিকে কিছু দিন ক্লাশ করতেই আর ভালো লাগতো না আসিকের। কারণ নতুন জায়গা নতুন একটা পরিবেশ অজানা অনেক বন্ধু-বান্ধবী কারো সাথে ফ্রি মনে কথা বলতে পারতনা আসিক। কিন্তু কিছু মানুষের সাথে কথা বলেনি বললেও ভুল হবে, সেই কলেজের পিওন ছিল আসিকের পূর্ব পরিচিত। তাই তার সাথে এবং নয়ন নামে এক ছেলের সাথে কথা বলত। বেশ কয়েকদিন যেতেই আসিক যে রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরত সেই রাস্তা দিয়ে আবার তার ক্লাশের একটি মেয়েও যাওয়া আশা করে, ফলে তার সাথে আসিকের পরিচয় হল। জানা গেল তার নাম ঈশিতা তার বাসা আসিকের বাসার চাইতে বেশ কিছুটা দূরে। তাই প্রথমত সেই মেয়েটির সাথে আসিক পরিচিত হল এবং বাসায় ফিরার পথে আসিক ও ঈশিতার প্রায় কথা হত। অনেক দিন যেতেই আরেকটি ছেলের সঙ্গে পরিচিত হল আসিক, তার নাম ছিল শুভ।
কম্পিউটার স্যার এসে শুভর সঙ্গে ক্লাশের সকলের সাথে পরিচয় করে দিয়ে বলে আসিক তোমাদের দু'জনের একি জায়গাতে বাসা। তোমরা কেউ কাউকে চিনো নাকি, উত্তরে দু'জনেই একি উত্তর দিলো, না স্যার। তার পর ক্লাশ শেষে শুভর সাথে আসিকের ঠিকানা নিয়ে আলোচনা হল। অবশেষে আলোচনা করে জানা গেল প্রায় কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দু'জনার বাসা। এভাবে দু'জনে একসাথে যাওয়া আসা করতে থাকে। একে-অপরের সাথে আরো বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ঘনিষ্ট হতে থাকে।
হটাৎ কিছু দিন পর কয়েকজন নতুন ছাত্র-ছাত্রী ক্লাশ করতে শুরু করল। এর ভেতরেই ছিল প্রিয়া।
প্রিয়াকে দেখে সত্য বলতে কি আসিকের একটু ভাল লাগল। আর আসিকের মনে একটি প্রশ্ন জাগতে শুরু করল তার নাম কি ? এর পর ক্লাশে স্যার এলো ক্লাশ নিলেন। ক্লাশ শেষে স্যার নতুন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে সকলকে পরিচিত করিয়ে দিলেন, ফলে জানা গেল তার নাম প্রিয়া। প্রিয়ার অন্য একটি নাম আছে আর সেই নাম দিয়ে প্রিয়াকে রাগাবে বলে আসিক মনস্থির করল। আসিক সেই দিন ক্লাশ শেষে বাসায় ফিরে গোসল করে আসিক তার পড়ার টেবিলে পড়তে পড়তে হঠাৎ প্রিয়ার কথা ভাবতে লাগল।
তার পরেরদিন আবার আসিক কলেজে গেল ঠিকমত ক্লাশ করল এবং প্রিয়াও সেদিন একসাথেই ক্লাশ করল। আসিক বাসায় ফিরার কিছুক্ষন আগে এক বন্ধু এসে বলে আসিক তুইতো মোনালিসা স্টুডিও র পাশ দিয়ে বাসায় যাওয়া আসা করিস তাহলে বন্ধু কালকে কলেজে আসার সময় আমার এই ছবিটা স্টুডিও থেকে এনে দিস। আসিক জানতোনা যে সেটা ছিল প্রিয়ার ছবি। হঠাৎ প্রিয়া এসে বলে প্লিজ ভাইয়া আমার জন্য এতটুকু উপকার করে দেন। আসিক বলে না না অনুরোধ করার কোন প্রয়োজন নেই আমাকে তো সেই পথ দিয়েই যাওয়া আসা করতে হয়, সেহেতু আপনার ছবিটা আমি অবশ্যই এনে দেব। আসিক মিথ্যা করে বলে আমি আপনার সেই ছবিগুলো থেকে এক কপি ছবি নেব। উত্তরে প্রিয়া বলে আমার ছবি তেমন ভাল আসেনা।
আসিক বাসায় এলো এবং তার পরেরদিন আবার আসিক কলেজে যেতেই স্টুডিও ছেড়ে অনেক দূর চলে যেতেই হঠাৎ করে আসিকের প্রিয়ার ছবির কথা মনে পড়ল, আসলে কি আসিক স্টুডিও যেতে ভুলেই গিয়েছিল। আসিক পুনরায় স্টুডিও গিয়ে প্রিয়ার ছবি নিয়ে কলেজে গেল। আসিক কলেজে গিয়ে দেখল প্রিয়া আসেনি, কিছুক্ষন পরে প্রিয়া কলেজে আসলো। আসিক প্রিয়াকে দেখে তার ছবিগুলো দিলো আর মিথ্যা করে বলে আপনার একখানা ছবি আমি নিয়েছি।
একথা শুনে প্রিয়া কিছু না বলতেই আসিক বলে ফেলল আমি আপনার ছবি নেয়নি। কিন্তু সত্য এইযে একবার যদি প্রিয়া ছবি নেবার কথা বলত তবে সত্যি সত্যিই আসিক ছবিটি নিয়ে নিত। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় প্রিয়া ছবি নেবার কোন কথাই বললনা। এভাবে যত দিন গেল আসিক ততই প্রিয়ার প্রতি দুর্বল হতে লাগলো। কিন্তু কখনও আসিক তার মনের কথা প্রিয়াকে সাহস করে বলতে পারছিলনা। আসিক বার বার কথাটা বলার জন্য চেষ্টা করেছে কিন্তু আসিকের ভয় পেত যদি প্রিয়া তার কথা শুনে না বলে বা প্রিয়া যদি আগে থেকে অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে এই কারণে আসিক সাহস করেও সে কথাটা বলতে ব্যার্থ হয়েছে। কিন্তু সত্য এই যে আসিক প্রিয়াকে মনে মনে সত্যিই অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। এই ভাবে কিছু দিন যেতেই শুরু হল প্রথম বর্ষ চুড়ান্ত পরীক্ষা।
আসিক মনে মনে স্থির করল এই পরীক্ষায় যে ভাবে হোক না কেন প্রিয়াকে তার মনের কথা বলতে হবে। একথা ভেবে যখন বলবে বলে আসিক প্রিয়ার সামনে যায় তখন সামনে গিয়ে আর কথাটি বলতে পারেনা। তার পর আসিক মনে মনে ভাবলো তার মনের কথা চিঠিতে লিখে প্রিয়াকে জানাবে। একথা ভেবে তাই সে রাত জেগে প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখল। পরের দিন সকালে তাড়াতাড়ি করে আসিক পরীক্ষা দিতে যায়, গিয়ে দেখল প্রিয়া তখনও আসেনি। সেই কলেজের সামনে একটা পুকুর ছিল তখন আসিক সে পুকুরের পাড়ে বসে ভাবতে লগল যে কিভাবে চিঠিটা প্রিয়াকে দেবে। একথা ভাবতেই হঠাৎ আসিক দেখতে পেল প্রিয়াকে। প্রিয়ার সামনে গিয়ে আসিক জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন ? প্রিয়া বলে ভালো আছি। প্রিয়াও বলল আপনি কেমন আছেন আসিক উত্তরে বলল আমি সম্পূর্ন ভালো নাই, একথা শুনে প্রিয়া বলে . . . .
নিশ্চই আজ আপনার পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালো না। আসিক বলল না প্রিপারেশন ভালোই আছে। একথা শুনে প্রিয়া বলে তাহলে! আসিক বলল না তেমন কিছুনা বাদ দিন এসব কথা চলুন পরীক্ষার সময় হয়ে গেছে। এভাবে সে দিনও আসিক চিঠিটা প্রিয়াকে দেবার সুযোগ পেলোনা। এদিকে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের পূর্বে ছাত্র-ছাত্রী উভয়দের চেক করে তার পর পরীক্ষা কক্ষে ঢুকার অনুমতি দেয় তাই অনেক কষ্টে চিঠিটা আসিক তার কাছে লুকিয়ে রাখলো। পরীক্ষা শেষ হবার পর আসিক বাসায় ফিরে অনেক ভাবতে লাগল একবার মনে করল চিঠিটা ছিড়ে ফেলবে আবার মনে করল এত কষ্ট করে রাত জেগে চিঠিটা লেখা অতএব প্রিয়াকে দিতেই হবে। পর দিন আসিক প্রিয়ার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীকে ধরে, আর তার মনের কথা বলে এবং প্রিয়াকে তা বলতে বলে। প্রিয়ার বান্ধবী সব কথা শুনে বলল দেখুন ভাইয়া আমি এ কাজটা করতে পারবনা। আসিক আবারও অনুরোধ করতেই দেখলো প্রিয়া তাদের কাছে আসছে, প্রিয়াকে দেখে আসিক চুপ হয়ে গেল। প্রিয়া এসে বললো কি ব্যাপার আমি দূর থেকে দেখলাম দুইজনে খুব কথা বলছিলেন আর আমি আসার পর দুইজনে চুপ হয়ে গেলেন।
আমি আসাতে আপনাদের কোন সমস্যা . . . . . . ?
প্রিয়ার বান্ধবী বলল না, তুই যেটা ভাবছিস তা কিন্তু না, আসিক আমার সাথে কাল পরীক্ষার প্রশ্নের ব্যাপারে আলোচনা করছিল।
পরে তিনজনে বসে কথা বলতে বলতে পরীক্ষার সময় হওয়াতে সবাই উঠে যেতেই আসিক দেখতে পেল প্রিয়া রুমাল রেখে চলে যাচ্ছে তাই আসিক রুমালটা নিয়ে ভাবল আজকেই এই রুমালের ভিতরে চিঠিটা দেবার সুযোগ কাজেই রুমালটা আসিক নিজের কাছে রেখে দিল। পরীক্ষা দেবার পর বাড়ি ফিরার পথে আসিক রুমাল বের করে বলে প্রিয়া এই নিন আপনার রুমাল ভুল করে ফেলে গিয়েছিলেন। আসিক প্রিয়ার হাতে রুমাল দেবার সময় বলল আমি চলে যাওয়ার পর রুমালটি খুলে দেখবেন। এ কথা বলে আসিক বাসায় চলে গেল। আসিক চিঠিতে অনেক কিছুই লিখেছিল তার মধ্যে লেখা ছিল যদি প্রিয়া তাকে পছন্দ বা ভালোবেসে থাকে তবে যেন প্রিয়া আগামী পরীক্ষায় কপালে কাল টিপ পরে আসে। তাহলে আসিক বুঝে,নেবে যে প্রিয়া তাকে ভালোবাসে আর যদি কপালে টিপ না পরে আসে তবে আসিক বিপরীতটা ভেবে নেবে।
আসিক পরের পরীক্ষার দিন অনেক আশা নিয়ে বাসা থেকে রওনা হল কলেজের উদ্দেশ্যে। আসিক যাওয়ার পথে শুধু বারবার ভাবতে লাগল কখন প্রিয়ার কপালে কাল টিপ দেখতে পাবে। কলেজে গিয়ে দেখল ততক্ষনেও প্রিয়া কলেজে আসেনি । প্রিয়া আসেনি দেখে আসিক প্রিয়ার বেঞ্চে চকদিয়ে অনেক বড় করে “ I Love You ” লিখে রাখল। কিন্তু হঠাৎ করে আসিকের মাথা ঘুরতে লাগল এবং আসিকের সমস্ত আশা যেন ভেঙ্গে গেল কারণ আসিক প্রিয়াকে দেখল যে সে কপালে কোন টিপ পরে আসেনি। আসিক ভেবে নিল প্রিয়া তাহলে হয়ত তাকে পছন্দ করেনা। প্রিয়া যে তাকে পছন্দ করেনা সেই কথাও সে মেনে নিতে পারছিলনা এবং সবার সামনে আসিক প্রিয়াকে বলতেও পারছেনা যে সে কপালে টিপ পরে আসেনি কেন ! তাই আসিক বারবার ইশারা করে বোঝাতে চাচ্ছিল যে কপালে টিপ পরেনি কেন। কিন্ত প্রিয়া ইশারাটি বুঝেও না বুঝার ভান করলো। সে দিনের পরীক্ষা শেষ করে আসিক প্রিয়াদের সাথে হাটতে হাটতে কিছুদূর যেতেই প্রিয়া ও প্রিয়ার বান্ধবী মোবাইলের দোকানে ঢুকল।
কিছুক্ষন পর আসিক জানতে পারল প্রিয়ার বান্ধবী যাকে ভালোবাসে তার সাথে সে কথা বলবে। প্রিয়ার বান্ধবী কথা বলতে লাগল এবং প্রিয়া, আসিক ও শুভ দোকানের বাইরে এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষন পর আসিক প্রিয়ার কাছে জানতে চাইল সে কপালে টিপ কেন পরে আসেনি, তখন প্রিয়া সে প্রশ্নের কোন উত্তর দিলনা এবং চুপ করে দাড়িয়ে রইল। প্রিয়ার এরকম আচরন দেখে আসিক রাগ করে সেদিন একাই বাসা চলে গেল। কিন্তু অন্যান্য দিন চারজনে একসাথে বাসায় ফিরত। সেদিন বাকি তিনজন এক সাথেই আসল কিন্তু ছিলনা শুধু আসিক। আসিক সে দিন প্রিয়ার আচরনে খুব কষ্ট পেল, কারণ আসিক সত্যিই প্রিয়াকে অনেক ভালোবেসেছিল। আসিক বাসায় ফিরার পথে সারা রাস্তা কাদঁতে কাঁদতে গিয়েছিল। বাসায় এসে আসিক মন খারাপ করে রইল। সেই দিন ঠিক মত খাওয়া দাওয়াও করল না আসিক।
আসিকের মন খারাপ দেখে আসিকের মা আসিককে জিজ্ঞাসা করল কি ব্যাপার ঠিক মত খাওয়া দাওয়াও করলি না আবার মন খারাপ কি হয়েছে ? পরীক্ষা খারাপ দিয়েছিস, আসিক বলল না। আসিক বলল এখন তুমি যাও মা আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আসিক তার ঘরে বিছানাই শুয়ে শুয়ে প্রিয়াকে নিয়ে ভাবছিল আর কাঁদছিল। আসিক সেই দিন রাতেও ঠিক মত ঘুমাল না এবং পরের দিনের পরিক্ষার জন্য ঠিক মত পড়াশুনাও করল না। সকালে একটি রুটি খেয়ে পরিক্ষা দিতে বেরিয়ে পড়ল আসিক। কলেজে গিয়ে আসিক চুপ করে তার সিটে গিয়ে বসল কিন্তু অন্যদিন ছুটোছুটি করত অথবা প্রিয়া ও প্রিয়ার বান্ধবীর সাথে কথা বলত। আসিক চুপ করে বসে থাকতেই হঠাৎ চমকে উঠলো প্রিয়াকে দেখে! কারন সেদিন প্রিয়া কপালে কালো টিপ পরে আসিকের দিকে আসছিল।
প্রিয়া আসিকের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো আসিক, উত্তরে বলল ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ? প্রিয়া বলল তুমি কেন আমাকে আপনি আপনি করছো। আপন মানুষকে কেউ কোনদিন আপনি আপনি করে। প্রিয়ার কথার উদ্দেশ্য আসিক বুুঝতে পারলনা। তাই আসিক জিজ্ঞেস করল আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। যা বলতে এসেছেন একটু পরিস্কার করে বলুন। প্রিয়া বলল অত বুঝার দরকার নাই। শুধু এই টুকু জেনে রাখো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর ভালোবাসি বলেই তোমার কথামত আজ কপালে কাল টিপ পরে এসেছি। একথা বলেই প্রিয়া পরীক্ষা দেবার জন্য তার সিটে চলে গেল। আসিক প্রিয়ার মুখ থেকে কথাটি শুনে অনেক খুশি হল, তখন তার মনে হলো পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন তার হাতের মুঠোয় আর সে ভাবতেই পারছিলনা যে প্রিয়াকে সে নিজের করে এত কাছে পাবে। সেই সাথে ভাবতে লাগল আবার কখন প্রিয়াকে দেখতে পাবে, কারন প্রিয়া ছিল আসিকের পাশের কক্ষে।
পরীক্ষা দিয়ে সেদিন ঠিক আগের মত চারজন হেটে আসছিল। হঠাৎ আসিক প্রিয়াকে ইশারা করল পিছে হওয়ার জন্য। প্রিয়া আসিকের ইশারাটি বোঝার পর একটু একটু করে পিছে হল। আর বাকি দুইজনে একটু সামনে হাটতে লাগল। প্রিয়া পিছে আসার পর বলল কি বলবে আসিক বলো। আসিক বলল আমিও তোমাকে ভালোবাসি। প্রিয়া বলে তা তো গতকালকেই বুঝতে পেরেছি। প্রিয়া বলল আসিক তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো। আসিক বলল তুমি চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পার। প্রিয়া বলে আমার ভেতর তুমি কি পেলে, আমিতো তেমন সুন্দরও না। আসিক বলল ভালোবাসতে বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের কোন প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসতে লাগে শুধু মাত্র সুন্দর একটা মন। আর তোমার ঐ সুন্দর মনটি আছে বলেই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। এভাবে আস্তে আস্তে সব পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে গেল। মাঝে কিছু দিন ছুটি হওয়ায় আসিক প্রিয়াকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ল। কিন্তু আসিকের কোন উপায় ছিলনা কারন তাদের দুজনের বাসার অনেক দূরত্ব ছিল।
ছুটি শেষ !
বিধায় আসিকের কলেজে যাওয়া পুনরায় শুরু হল এবং নিয়মিত ক্লাশ করতে লাগল। ক্লাশ শেষে আসিক প্রিয়ার গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করত আর গাড়ী না আসা পর্যন্ত দুজনে কথা বলত। গাড়ী এলেই প্রিয়া বাসা চলে যেত এবং আসিকও বাসায় চলে আসতো। এভাবে দুইজনের অনেক দিন কেটে গেল। প্রিয়ার বান্ধীর পছন্দের ছেলেটির সাথে আসিকের প্রায় কথা হত। হঠাৎ এক দিন প্রিয়ার বান্ধীর পছন্দের ছেলেটি আসিককে সন্ধ্যার সময় ফোন করে বলে আমাকে কি খাওয়াবে বলো ? আসিক বলে কি ব্যাপার হঠাৎ খাওয়ার বাইনা আমার কি কোন সুখবর আছে নাকি ?উত্তরে বলল সুখবর আছে বলেইতো তোমার কাছে খেতে চায়লাম। আসিক বলল কি সুখবর আগে শুনি ? সে বলল আগামীকাল সকালে আপনার প্রিয়া আপনার সাথে প্রথম বেড়াতে যাবে। আসিক কথাটি শুনে অনেক খুশি হলো এবং বলল ভাইয়া কি খেতে চান বলেন ? উত্তরে বলে কি খাবো তা কাল বলবো।
আসিক ফোনে কথা শেষ করে মনে মনে অনেক কিছুই ভাবতে লাগলো। আর সে সময় আসিক বাজারে ছিল তাই বাজার থেকে প্রিয়ার পছন্দের রঙের একটি গেঞ্জি কিনল বেড়াতে যাবে বলে। কারন প্রিয়া বলেছিল কফি রঙের কাপড়ে আসিককে খুব ভালো লাগে। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে আসিক ঘুমাতে গেল কিন্তু আসিকের কিছুতেই ঘুম আসছিলনা কারণ তার শুধু মনে হচ্ছিলো কখন সকাল হবে আর কখন প্রিয়াকে দেখতে পাবে। পরদিন সকালে আসিক ঘুম থেকে জেগেই বাইরে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখতে পেল সত্যিই ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিলো। বৃষ্টি দেখে আসিকের খুব মন খারপ হয়ে গেল, কারণ সে ভাবলো এরকম বৃষ্টি হতে থাকলে সে কি করে প্রিয়ার সাথে দেখা করবে এবং প্রিয়াও কি এত বৃষ্টির মধ্যে আসতে পারবে। আসিক মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থ্যনা করতে লাগলো বৃষ্টি যেন থেমে যায়।
এর পরও বৃষ্টি থামলোনা।
কিছুক্ষন পর আসিক দেখলো বৃষ্টি প্রায় থেমে আসছে। এ অবস্থা দেখে আসিক কলেজে যাওয়ার জন্য সে তার পোষাক পরতে লাগলো। পোষাক পরতে দেখে আসিকের মা বললো আসিক আজ আবহাওয়া খারপ আজকে না হয় কলেজে যেওনা। কিন্তু আসিক বলল না মা আজ ক্লাশ পরীক্ষা আছে আমাকে কলেজে যেতেই হবে যদি না যায় পরের দিন ক্লাশে স্যার অপমান করবে। একথা বলে আসিক বেরিয়ে পড়লো, রাস্তায় যেতে যেতে কখনও বৃষ্টি আসতে হচ্ছিলো আবার কখনও জোরে হচ্ছিলো। তবু আসিক ভিজতে ভিজতেই প্রিয়ার সাথে দেখা করতে গেল। যখন প্রিয়ার কাছে আসিক গেল তখন প্রিয়া আসিকের দিকে অবাক হয়ে দেখছিল। প্রিয়া বলল আসিক তুমি তো অনেক ভিজে গেছো। আসিক ভিজে গেছে বলে প্রিয়া তার উড়না দিয়ে আসিকের ভিজা মাথাটা মুছে দিল। প্রিয়া বলল আসিক তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। হঠাৎ প্রিয়া বলল আসিক আমি তোমার হাতটি ধরতে পারি ? আসিক বলে অবশ্যই ধরতে পার এতে বলার কি আছে। আসিক এই প্রথম প্রিয়ার হাতটি স্পর্শ করে। প্রিয়া যখন আসিকের হাতটি ধরল তখন আসিকের সমস্ত শরীর কাপতে শুরু করল। আসিককে কাপতে দেখে প্রিয়া বলল আসিক তুমি কাপছো কেন ? আসিক বলে আমি জানিনা। তারা দুজনে এক পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলো এবং দুজনে মনের কথাগুলো একে-অপরকে বলতে লাগলো। অনেকক্ষন ধরে তারা দুজনে কথা বলে।
হঠাৎ প্রিয়া বলল আসিক বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আমি এখন বাসায় যাবো। এ কথা শুনে আসিক প্রিয়ার গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করল এবং প্রিয়াকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে সে বাসায় ফিরলো। বাসায় এসে আসিক গোসল করে তার ঘরে পোষাক পরতেই আসিকের মা আসিককে খাবার টেবিলে খাওয়ার জন্য ডাকলো। আসিক কিছুক্ষন পর খাবার টেবিলে গিয়ে খেতে বসলো কিন্তু আসিক খেতে পারলোনা ক্ষীদে থাকার সত্তেও। আসিক তার ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, আমিতো এখন প্রিয়ার কথা ভাবছি কিন্তু প্রিয়াও কি এখন আমার কথাও ভাবছে ! এভাবেই প্রিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে সেই দিনটি পার হয়ে গেল আসিকের। এভাবে দুজনের সম্পর্কটা দিনে দিনে আরও গভীর হতে লাগলো। প্রায় অনেকদিন পর আসিক প্রিয়ার কাছে বাইনা ধরে বেড়াতে যাবার জন্য কিন্তু প্রিয়া প্রথমে না বলে।
এভাবে না না করতে লাগলো প্রিয়া, অবশেষে আসিকের সাথে বেড়াতে গেল। আসিকের মন প্রান জুড়ে গড়ে উঠলো পবিত্র ভালোবাসা তাই আসিক তার জীবনে এই প্রথম ডায়রী লেখা শুরু করলো। শুধু ডায়রী লিখাই না আসিক পবিত্র কোন জায়গায় গিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু একটি জিনিসই চায়তো তা হলো 'প্রিয়া'। আসিক মনে মনে প্রিয়াকে নিয়ে তার জীবনের এক কোণে বাসা বাঁধলো। আসিকের প্রিয়ার কাছে একটিই চাওয়া ছিল তা হলো প্রিয়া আসিককে যেন ভুলে না যায়। কিছুদিন পর তারা আবারও বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বেড়াতে গিয়ে আসিক প্রিয়ার হাত ধরার জন্য প্রিয়ার কাছে অনুমতি নিলো। আসিক প্রিয়ার হাতের উপর হাত রাখতেই প্রিয়া বলে উঠলো আসিক তোমার হাত এত নরম কেন ? আসিক বলল আমি জানিনা।
আসিক প্রিয়াকে বলল প্রিয়া আমার কিছু কথা আছে প্রিয়া বলে কি কথা বলো।
আসিক বলল তোমাকে বোরখা পরতে হবে। প্রিয়া বলল আচ্ছা ঠিক আছে পরবো আর কিছু ?
আসিক বলল হ্যাঁ, আর হচ্ছে হাতের নখ একটু বড় রাখবে এবং খয়রি রঙের নেলপালিশ ব্যাবহার করবে। আর সর্বশেষ কথা প্রতিদিন কপালে কালো টিপ পরে আসবে। আসিকের কথা শেষ করার পরেই প্রিয়া বলে উঠলো আমারও কিছু কথা আছে তা হলো আমাকে যে ভালোবাসবে সে যেন তার মন প্রান জুড়ে ভালোবাসে। একথা শুনে আসিক বলল প্রিয়া তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার মনের মত চলার জন্য চেষ্টা করবো। আসিকের কথাটি শুনার পর প্রিয়াও বলল আসিক আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। তোমাকে কোনদিন ভুলে যাবনা তুমিও আমাকে ভুলে যেওনা। দুজনে অনেক কথা বলার পরে বাসায় ফিরে যাওয়ার আগে আসিক প্রিয়াকে তার গাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিল।
আসিক বাড়িতে ফিরেই তার ঘরে ঢুকে প্রিয়ার ছবিটি বের করে ভাবতে লাগলো যে প্রিয়া তোমাকে কি করে বোঝাবো যে আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। আসিক একদিন যদি প্রিয়ার সাথে কথা না বলতো সেইদিন আসিকের কোন কিছুই ভালো লাগতো না আর প্রিয়াও যদি কথা না বলতো সেইদিন আসিক কিছু খেতনা। এরকম ঘটনা আসিকের জীবনে অনেক বারই ঘটেছিল কারণ প্রিয়া একটু রাগি ও আসিক একটু অভিমানি ছিল বলে। আসিকের এত কিছু করার উদ্দেশ্য ছিল একটায় তা হলো প্রিয়াকে বোঝানোর জন্য যে আসিক প্রিয়াকে সত্যিই অনেক অনেক ভালোবাসে। আর আসিক সত্যি ভালোবাসে বলেই প্রিয়ার সাথে কোন রকম কথা কাটাকাটি হলেই আসিক ভয় পেত। প্রিয়া যদি এরই কারণে তাকে ভুলে যায় তাই আসিক প্রিয়ার কোন কথাতেই প্রতিবাদ করতনা।
একদিন কলেজে ক্লাশে প্রিয়া ও তার বান্ধবী মেয়েদের সিটে না বসে সেদিন ছেলেদের সিটে বসেছিল আর পরের বেঞ্চে বসে ছিল আসিক ও আসিকের বন্ধুরা। আসিক প্রিয়ার পিছে বসায় আসিক প্রিয়াকে দেখতে পাচ্ছিলনা। আসিক ভাবতে লাগলো হঠাৎ আসিকের বন্ধু শুভর সানগ্লাশটা নিয়ে প্রিয়াকে দিয়ে বলল সানগ্লাশটা তোমার বেঞ্চে রাখো। প্রিয়া আসিকের কথামত সানগ্লাশটা তার বেঞ্চে রাখলো। প্রিয়া আসিকের চালাকিটা বুঝতে পারলোনা। এদিকে প্রিয়া সানগ্লাশটা রাখাতে আসিক সেই সানগ্লাশে প্রিয়াকে দেখতে পাচ্ছিলো। এটাই ছিল আসিকের প্রিয়াকে দেখার উপস্থিত বুদ্ধি। সেই সানগ্লাশ দিয়ে আসিক প্রিয়াকে অনেকক্ষন থেকে দেখায় প্রিয়া আসিকের চালাকিটি বুঝতে পারলো ফলে প্রিয়া সানগ্লাশটি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে রাখলো। ক্লাশ শেষে প্রিয়া আসিককে বলল আমাকে ক্লাশে বোকা সাজানো হচ্ছিলো তাই না ! আসিক বলল কি করবো বলো, তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলামনা ভেবে আমি এই কাজটি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর এতে তো আমি কোন রকম ভুল দেখতে পাচ্ছিলামনা। আসিক বলল অন্য কারও মুখটাতো আমি দেখিনি দেখলে আমার প্রিয়ার মুখটাই তো দেখেছি। প্রিয়া বলল আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে পরবর্তীতে এরকম আর ভুল কখনও হবেনা। কিছুদিন পরে প্রিয়া আসিকের কথা মত বোরখা পরতে লাগলো। আসিক প্রিয়াকে বোরখা পরতে দেখে মনে মনে অনেক খুশি হতে লাগলো। সত্যিই প্রিয়াকে বোরখা পরে অনেক সুন্দর লাগছিলো।
প্রিয়া বোরখা পরাতে আসিক প্রিয়াকে ধন্যবাদ জানালো। প্রিয়া শুধু বোরখায় না আসিকের কথা মত হাতের নখ বড় রাখা খয়রি রঙের নেল পালিশ ব্যবহার করতে শুরু করে। প্রিয়ার এ সমস্ত পরিবর্তন দেখে আসিক খুব খুশি হলো। আসিক ভাবলো যদি কোন কারণে প্রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে আসিকের পছন্দগুলো দেখলে অবশ্যই আসিকের কথা মনে করিয়ে দেবে। প্রিয়ার কপালে কালো টিপ দেখে অনেক সুন্দর লাগছিল ভেবে আসিক প্রিয়ার জন্য বাজার থেকে প্রায় ৫০০ পাতা টিপ কিনলো। এবং পরের দিন কলেজে গিয়ে প্রিয়াকে টিপগুলো উপহার দিল। প্রিয়া টিপগুলো দেখে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল আসিক তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছ।
নয়লে কেউ কোনদিন এতগুলো টিপ কিনে ! আসিক ও প্রিয়া দুজনের প্রতি দুজনের না জানা কথা জানালো আসিক যদি কোনদিন প্রিয়াকে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলতো কথাটি শুনে প্রিয়া প্রথমে বলতো না । না কথাটি নিয়ে মাঝে মধ্যে প্রিয়া ও আসিকের সাথে কথা কাটাকাটি হত। অবশেষে প্রিয়া ঠিকই যেত কিন্তু না কথাটি বলার পর। একদিন বেড়াতে গিয়ে আসিক দেখলো প্রিয়া আজ প্রথম হাতে চুড়ি পরে আসে তা দেখে আসিকের অনেক ভালো লাগে। তাই সেই দিন প্রিয়াকে আসিক বলে তোমার স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য একটা চুড়ি আমাকে দেবে। কিন্তু আসিকের চালাকি বুদ্ধিটা প্রিয়া বুঝতে না পেরে একটা চুড়ি হাত থেকে খুলে আসিককে দিল। সেই দিন আসিক প্রিয়াকে বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিল এবং প্রিয়ার চুড়িটি নিয়ে আসিক বাজারে গেল। আসিক প্রিয়ার সেই চুড়ির মাপে যতগুলো চুড়ি পছন্দ হলো সব চুড়িই প্রিয়ার জন্য কিনে নিল। চুড়ি কিনে আসিক দেখলো প্রায় ২০ ডজন। প্রিয়াকে এবার চুড়িগুলো দেবার পর প্রিয়া চুড়ি দেখে বলল আসলেই সত্যি সত্যিই আস্ত একটা পাগল তুমি, নয়লে এত চুড়ি কেউ কিনে। আসিক বলল আমি কি করবো বল সব চুড়ি গুলোই আমার কাছে ভালো লাগছিল।
প্রিয়া বলল এত গুলো চুড়ি আমি কি করে বাসায় নিয়ে যাবো তুমিই বলো। প্রিয়ার কথা শুনে আসিক ভাবতে লাগলে সত্যিইতো এত চুড়ি সে একসাথে কিভাবে নিয়ে যাবে তাই চুড়িগুলো দুদিনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল। আসিকের কথা মত প্রিয়া চুড়িগুলো দুদিনে নিয়ে গেল। আসিক প্রিয়াকে সত্যিই তার মন প্রান দিয়ে ভালোবাসে তবে আসিক একটু ভেতর চাপা ছিল। নিজের মনের ভেতর প্রিয়ার কোন কথায় কষ্ট পেলেও তা কখনও প্রিয়ার সামনে প্রকাশ করতো না। প্রিয়ার কোন রকম কথায় বা আচরণে আসিকের কখনও মন খারপ হলেও প্রিয়াকে বুঝতে দিতনা। হয়ত কখনও কখনও আসিক হঠাৎ রেগে যায় ঠিকি কিন্তু প্রিয়াকে বলতো না। বরং আসিক চেষ্টা করতো কি বললে বা কি করলে প্রিয়া আসিকের মনটা বুঝতে পারবে। একদিন আসিক প্রিয়ার সামনে গিয়ে বলল প্রিয়া তোমাকে আমি সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসি তুমি কখনই আমাকে ভুল বুঝে 'ভুলে যেওনা' । যদি তুমি সত্যিই আমার এই ভালোবাসা মিথ্যে করে দাও তবে তুমি যেনে রেখো হয়ত তোমার এই মিথ্যেই সত্য করার জন্য তোমার আসিক এই পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেবে।
আর সে দিনই বুঝতে পারবে আমার মনের ভেতর সত্যিকার ভালোবাসা ছিল। তখনই হয়ত আমাকে নিয়ে তোমার মনে বিশ্বাস জাগতে পারে। কিন্তু তখন হাজার বিশ্বাস করেও আমাকে আর কখনও ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না। প্রিয়া মাঝে মাঝে আরো একটি ভয় হয়, তা হল তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে এবং তুমিও তাকে অনেক ভালোবাসো। হয়ত এক সময় তোমার বাবার কথা রাখতে গিয়ে তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছো। কিন্তু প্রিয়া তুমি যদি তাই কর তবে একটা মৃত্যু দেখতে হবে তোমাকে। আর যদি তুমি আমার কথামত চল তবে কিছু দিন তোমার মা-বাবার রাগ দেখতে হবে। কিন্তু কিছু দিন পরই তোমার মা-বাবার সেই রাগ ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তুমিই বলো প্রিয়া এই পৃথিবী ছেড়ে যে একবার চিরবিদায় নেই সে কি আর এই পৃথিবীতে কখনও ফিরে আসে ! আসিক বলে প্রিয়া তোমার কাছে অনুরোধ কথাটা কতখানি সত্যি না মিথ্যা তা তুমি একটু ভেবে দেখবে। একথা শোনার পর প্রিয়াও আশা দেয় আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবোনা। আসিক প্রিয়ার কথা শুনে অনেক খুশি হল। আসিক ও প্রিয়া প্রতি শুক্র বারে দুপর ১ টার সময় ফোনে কথা বলতো কারণ প্রিয়ার বাবা সেই সময় নামায পড়তে যায়। ফলে প্রিয়া তখন আসিকের সাথে কথা বলার সুযোগ পেত।
প্রায় শুক্রবারে আসিক প্রিয়ার সাথে কথা বলতো ভেবে আসিক যেভাবেই হোক কাছে টাকা না থাকলেও অন্যের কাছে ধার করতো। যদি কোন শুক্রবার প্রিয়ার আসিকের সাথে ফোনে কথা না হতো তাহলে সেদিন আসিক নামায পড়তে গিয়েও নামায পড়তো না কারণ আসিক ভাবতো নামায পড়তে গিয়ে যদি প্রিয়া ফোন করে। এবং সেদিন আসিক বারবার ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখতো যে প্রিয়া ফোন করেছিলো কিনা। অন্য কারও রিং এলেই আসিক মনে করতো হয়ত প্রিয়া ফোন করেছে আবার মোবাইল ফোনটা আসিকের কাছে না থাকলে রিং বেজে উঠলেই আসিক দৌড়ে গিয়ে দেখতো কে ফোন করেছে। যখন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অন্য কেউ ফোন করেছে তখন আসিকের ভীষণ মনটা খারাপ হয়ে যেত। আসিক কোন দিন কলেজে আগে গিয়ে যদি দেখতো প্রিয়া আসেনি তখন আসিক শুধু রাস্তার দিকে চেয়ে থাকতো যে, কখন প্রিয়া আসবে। আর কোন গাড়ী আসলেই আসিক ভাবতো এই বুঝি প্রিয়া এলো। অপেক্ষা করতে করতে প্রিয়া আর এলো না দেখে আসিক অস্থির হয়ে পড়ে। আর আসিকের এই অস্থিরতা দেখে আসিকের বন্ধুরা আসিককে নিয়ে ঠাট্টা করতে লাগলো ফলে আসিক তখন আসিকের বন্ধুদের নানা রকমের কথা শুনে প্রিয়ার উপর অভিমান করে থাকলো।
সেইদিন প্রিয়া না আসায় আসিক ঠিকমত মনোযোগ সহকারে ক্লাশও করলো না।মন খারপ করে বাসায় চলে গেল। পরের দিনেও একই রকম অপেক্ষায় থেকে থেকে সেই দিনও প্রিয়া না আসায় আসিকের মন মানসিকতা দেখে আবারও আসিকের বন্ধুরা আসিক ও প্রিয়াকে নিয়ে নানা রকমের কথা বলতে লাগলো। কথাগুলো শুনে আসিক মন খারাপ করে কলেজের ছাদে চলে গেল। ছাদে চলে গিয়ে একা একা কাঁদতে থাকে প্রিয়ার জন্য। আর অভিমানি মন নিয়ে ভাবতে থাকে সত্যিই কি প্রিয়া আমাকে ভুলে গেল। বন্ধুরা যে কথাগুলো বলছিল তবে সেগুলোই কি সত্যিই। আসিক সেই দিনও মন খারাপ করে বাসায় এলো। বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া না করেই তার ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রিয়ার কথা ভাবতে লাগলো। এবং সন্ধার পর পড়তে বসেও আসিক পড়াই মনোযোগ দিতে পারলো না। পরদিন সকালেও খাওয়া-দাওয়া না করে আসিক কলেজে গেল এবং কলেজের ক্লাশ কক্ষে গিয়ে চুপ করে বসে থাকলো।
হঠাৎ প্রিয়া এসে বললো ...
আসিক কেমন আছো ?
আসিক প্রিয়ার কথার কোন উত্তর না দিয়ে প্রিয়াকে দেখা মাত্র প্রিয়ার হাতটি ধরে কলেজের ছাদে নিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ সিঁড়ির মাঝখানে প্রিয়া আসিককে বলে উঠলো হাতে লাগছে তো ! আমিতো যাচ্ছিই বাবা। ছাদে গিয়ে আসিক প্রিয়ার চোখের দিকে তাকাতেই আসিকের চোখে পানি ঝরতে লাগলো। আসিকের চোখে পানি দেখে প্রিয়া বলল কি ব্যাপার আসিক কাঁদছো কেন তোমার কি হয়েছে ? আসিক বলল গত দুই দিন তুমি আসনি কেন ? প্রিয়া আসিকের কথা শুনে হাসতে লাগলো আর বলল এই ব্যাপার ! আমি আসিনি বলে কাঁদতে হবে বোকা ছেলে। প্রিয়া বলল তোমার বোঝা উচিৎ ছিল আসিক আমার কোন সমস্যা হতে পারে। আসিক বলে উঠলো তুমি কি আমাকে ভুলে গেছো প্রিয়া ? প্রিয়া বলল.......ধুর পাগল তোমাকে ভুলা যায়। প্রিয়া কথাটি বলার পর প্রিয়া তার উড়না দিয়ে আসিকের চোখের পানি মুছে দিলো। আর বলল তোমাকে কখনও কোনদিনও আমি ভুলবো না, ভুলতেও পারবো না।
প্রিয়া বলল আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। কথাটি বলার পর প্রিয়া আসিকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
আসিক প্রিয়াকে জোড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়া সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো। প্রিয়া বলল আসিক তুমি আমার জীবনে ভোলার না কারণ তুমি আমার জীবনের একটি অংশ। প্রিয়া বলল যদি বিয়ে করতে হয় তবে আমি তোমাকেই করবো যতই বাধা আসুক কোন বাঁধায় আমি মানবোনা তুমি আমার উপর এই ভরসাটুকু রাখতে পারো। ২০শে জানুয়ারী আসতে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। এমন সময় আসিকের আর্থিক সমস্যা এদিকে আবার ২০শে জানুয়ারী প্রিয়ার জন্মদিন। প্রিয়া আসিককে ও আসিকের বন্ধু শুভকে জন্মদিনে বাসায় দাওয়াত করাতে আসিক বুঝে উঠতে পারছেনা সে কি করবে সেই মূহুর্তে বাসাতে টাকা চাওয়ার মত কোন পরিস্থিতি ছিলনা। আসিকের বন্ধু শুভর কাছেও তেমন টাকা ছিলনা। আসিক অন্য জনের কাছে টাকা ধার নেবার চেষ্টা করে কিন্তু সে কারও কাছ থেকে সেই সাহায্যটুকু পেলনা। আসিক ভিষণ চিন্তায় পড়ে গেল, সে প্রিয়াকে তার জন্মদিনে কি উপহার দিবে কারণ আসিকের কাছে তখন উপহার দেবার মত টাকা ছিলনা। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে আসিক তার শরীরের রক্ত বিক্রি করতে বাধ্য হলো। আসিক যেখানে রক্ত বিক্রি করল সেখানেও সে ধোকার শিকার হলো কিন্তু আসিকের সে সময় কোন কিছুই করার ছিলনা কারণ আসিকের তখন প্রয়োজন ছিল শুধুই টাকার। যার কারণে সেখানে কোন প্রতিবাদই করল না। আসিক সে টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে প্রিয়ার জন্য খুবই সুন্দর একটা শো-পিচ কিনলো তার জন্মদিনে উপহার দেবার জন্য।
শো-পিচটিতে দুটি মূর্তি ছিল সেগুলো দেখতে একটি রাজকন্যা ও অপরটি রাজকুমারের মত। শো-পিচ এবং ফুলের স্টিক কেনার পর আসিকের কাছে যা টাকা ছিল তা থেকে মাত্র ২৭ টাকা বাঁচলো। প্রিয়ার বাসাতে যাবার জন্যে সেই ২৭ টাকা যথেষ্ট ছিল না। আসিকের সে সময় জ্বর থাকায় আসিকের জন্য ৭ দিনের অ্যান্টিবায়েটিক ঔষুধ তার বাবা কিনে দিয়েছিল আসিক মাত্র দুইদিন খাওয়ায় তেমন সুস্থ হয়েছিল না। তারপরও বাকি ঔষুধ গুলি ফার্মেসিতে ফেরত দিল এবং ফেরত দেওয়া ঔষুধের দাম ৬০ টাকা পেল। শুভও প্রিয়ার জন্য একটি ফুলের স্টিক কিনল। পিয়ার বান্ধবী, শুভ ও আসিক তারা এক সাথে প্রিয়ার বাসায় গেল। সেইদিন প্রিয়ার বাসায় গিয়ে প্রিয়ার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো আসিক ও শুভ। সেইদিনটা প্রিয়ার জন্মদিনে সবাই খুব আনন্দ করল।
বেশ অনেকটা দিন কেটে গেল দুজনের....................
শুরু হল ফাইনাল পরীক্ষা। সবাই খুব খুশি কিন্তু আসিক ততটা খুশি হলো না কারণ এই পরীক্ষার পরেই প্রিয়ার সাথে আসিকের দেখা সাক্ষাত বন্ধ হয়ে যাবে এই কথা ভেবে। কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রিয়া সবার সামনে এই প্রথম নিজে থেকে আসিককে তার হাত ধরার কথা বলল। প্রিয়ার কথা শুনে আসিকতো অবাক ! আসিক কোন কথা না ভেবেই প্রিয়ার হাতটি ধরলো আর হাতটি ধরার পরেই আসিক প্রিয়ার চালাকিটা বুঝতে পারলো কারণ প্রিয়ার হাতে ছিল মিষ্টি খাওয়া এঠো হাত। প্রিয়া আসিককে ঠকিয়ে অনেক হাসছিল তা দেখে আসিক প্রিয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল প্রিয়ার আনন্দটা।
এক এক করে আসিকদের পরীক্ষা সব শেষ হয়ে গেল।
এবং শেষ পরীক্ষার দিন দুই জনে পরীক্ষা শেষ করে একসাথে অনেকক্ষন সময় কাটালো। সেই দিন আসিক প্রিয়াকে বলল প্রিয়া তুমি আমাকে ভুলে যেওনা এবং প্রিয়াও বলল আমি তোমায় ভুলবোনা তুমিও ভুলে যেওনা। সেই দিন আসিক প্রিয়ার বাসা যাওয়ার পূর্বে বলল তুমি প্রতি শুক্রবার আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করবে এছাড়াও যেইদিন তুমি মোবাইল কাছে পাবে সেদিন আমার সাথে কথা বলবে। এতকিছু বলার কারণ ছিল শুধু একটায় তা হলো আসিক বুঝতে পারলো আজকের পর থেকে হয়ত প্রিয়ার সাথে আর আগের মত দেখাও হবেনা এবং কথাও হবেনা। আসিক বলল প্রিয়া তুমি আমার সাথে ছুটির দিনগুলিতে দেখা করবে না ? প্রিয়া বলে আমি ফুফুর বাসায় এলেই তোমার সাথে দেখা করবো। আর আসার পূর্বে আমি তোমাকে ফোন করে জানাবো। আসিক বলল তাও ঠিক তুমি কোন সময় ফোন করবা, প্রিয়া বলল ধরো ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই। প্রিয়া বলল আসিক তুমি কোন চিন্তা করবা না এবং ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবা। প্রিয়া বলল আমি যখনই সুযোগ পাবো তখনই ফোনে তোমার সাথে কথা বলবো। একথা বলেই প্রিয়া গাড়ীতে উঠে চলে গেল আর আসিক সেই থেকে তার ফোনের অপেক্ষায় রইলো।
আসিক পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। হঠাৎ আসিকের আম্মা এসে বলল আসিক কোথায় যাচ্ছিস, আসিক বলে কেন কলেজে! তার আম্মা বলে তুইতো কালকে রাতেই বললি যে কাল থেকে তোর কলেজ বন্ধ। আসিক বলে উঠলো তাইতো! আমার মনেই ছিলনা যে আজ থেকে কলেজ বন্ধ। এরপর সেই দিন আসিকের কোন কিছুই ভালো লাগলো না প্রিয়াকে না দেখতে পেয়ে। আসিকের শুধু বারবার প্রিয়ার কথা মনে পড়ছিল আর মনে পড়ছিল পুরোনো দিনগুলির কথা। প্রথম প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ প্রিয়া আসিকের সাথে শুক্রবারে ফোনে কথা বলেছিল এবং ফোনে প্রিয়ার সাথে আসিকের কথা হলো আসিকের জন্মদিনে প্রিয়া আসিকের সাথে দেখা করবে। তাই আসিক তার জন্মদিনে সে সকাল থেকে প্রিয়ার ফোনের অপেক্ষায় ছিল। আসিকের মোবাইলে কেউ রিং দিলেই আসিক মনে করত হয়ত প্রিয়ার ফোন।
কিন্তু আসিকের ধারনা ভুল। একে একে আসিকের সব বন্ধুই ফোন করে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। কিন্তু সেই দিন আসিক যার অপেক্ষায় বসে ছিল সেই ফোন করলো না এবং প্রিয়া সেই দিন আসিককে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছাটুকু জানালো না। আসিক প্রিয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সন্ধা হয়ে গেল তবুও প্রিয়া আসিককে কোন ফোন করল না। অনেকদিন হয়ে গেল প্রিয়া আসিকের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি এবং শুক্রবারেও প্রিয়া আগের মত ফোন করেনা। আসিক ভাবল প্রিয়া কোন বিপদে পড়লোনাতো তাই ভেবে আসিক তার বন্ধুর বোনকে দিয়ে প্রিয়ার বাসায় ফোন করায়। প্রিয়ার বাবা ফোন ধরে জিজ্ঞাসা করতেই আসিকের বন্ধুর বোন সালাম দিয়ে বলল চাচা আমি প্রিয়ার বান্ধবী বলছি।
প্রিয়াকে ফোনটা দেওয়া যাবে ?
প্রিয়ার বলল আমিতো বাসা থেকে একটু দূরে আছি তুমি ১৫-২০ মিনিট পরে ফোন দিও। প্রিয়ার বাবার কথা মত ২০মিনিট পর ফোন দিতেই প্রিয়া ধরে বলল কে বলছেন ? আসিকের বন্ধুর বোন বলল আপু আসিক ভাইয়া আপনার সাথে কথা বলবে। আসিক ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলেই প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো .....তুমি কেমন আছো ? প্রিয়া বলল ভালো আছি তবে এখন আমি তোমার সাথে কোন কথা বলতে পারবো না। আসিক বলল প্রিয়া তোমার কোন সমস্যা ? প্রিয়া বলল না। আসিক বলল আচ্ছা এখন রাখছি শুক্রবারে কথা হবে।
আসিকের কথাটি শোনার পর প্রিয়া বলল না আর কোন দিনি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো না . . .আর তুমিও দ্বিতীয় বার আমাকে ফোন করে বিরক্ত করবেনা বলেই ফোন কেটে দিল। আসিক আবারও ফোন দিতেই প্রিয়া ফোন কেটে দিল এবং তার মোবাইল সেটটি বন্ধ করে রাখলো। পরে আসিক ফোন দিতেই দেখলো প্রিয়ার ফোন বন্ধ। সে দিনের প্রিয়ার আচরণে আসিক খুব কষ্ট পেল। আসিক বুঝতে পারছিলনা প্রিয়া কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করল। আসিক বাসায় ফিরে প্রিয়ার কথাগুলো ভাবছিল আর কাঁদছিল। আসিক মনে করল প্রিয়া একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করলনা যে আমি কেমন আছি।
পরের শুক্রবারেও প্রিয়া আসিককে ফোন করলনা প্রায় ৮-৯ দিন হয়ে গেল প্রিয়া ফোন না করায় আসিক আবার তার বন্ধুর বোনকে দিয়ে ফোন করালো। প্রিয়া ফোন ধরেই আসিকের কন্ঠ শুনলেই ফোনটা সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিত। প্রিয়ার আচরণ দেখে আসিক ভাবলো প্রিয়া কেন আমার সাথে এমনটি করছে। আসিক ভাবলো জানামতে আমার কোন ভুল খুজে পাচ্ছিনা তবে প্রিয়া কেন আমাকে এড়িয়ে চলছে। আসিক মনে করল যেই প্রিয়া আমাকে আশা দিয়েছিল ও স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেই প্রিয়া আর আজকের এই প্রিয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তারপরও আসিক মনটাকে বিশ্বাসের উপর রাখলো।
প্রিয়া যেহেতু বাসায় আছে আর সেই সমস্যার জন্যই হয়ত সে আমাকে এড়িয়ে চলছে। আসিক মনে করল প্রিয়া হয়ত আবার কলেজে ভর্তি হলে প্রিয়াকে আমি আবার আগের মত পাবো এবং প্রিয়াও আগের মত আমাকে ভালোবাসবে। আসিকদের পরীক্ষার ফলাফল বের হলো আসিক জানতে পারলো সে পাস করেছে তার পরেই সে রেজাল্ট শীটে দেখলো প্রিয়াও পাস করেছে। আসিক পাস করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আসিক প্রিয়াকে সেই কলেজে খুজতে থাকলো কারণ প্রিয়ার সাথে আসিকের কথা ছিল যদি তারা পাস করে তবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। আসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মেয়ে প্রিয়ার মত বোরখা পরা দেখলেই সে মনে করত হয়ত প্রিয়া কিন্তু সামনে গিয়ে দেখে প্রিয়া নয় অন্য কেউ। এভাবে আসিক অনেক খোঁজা খোঁজির পরেও প্রিয়ার দেখা পেলনা। কিন্তু তার পরও আসিক প্রিয়াকে মনে মনে খুঁজতে থাকলো। আসিক প্রিয়াকে ফোনও করতে পারতো না কারণ ফোনটি সবসময় তার বাবার কাছে থাকতো। আসিক নিরূপায় হয়ে পড়ে।
আসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রায় ৩০-৩৫ দিন পর . . . . . . . . .
আসিক ও শুভ কলেজের রাস্তা দিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে দুজনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ আসিক দেখতে পেল সামনে রিক্সায় প্রিয়া। প্রিয়াকে দেখেই আসিক উচ্চস্বরে প্রিয়া বলে ডেকে উঠল। প্রিয়া আসিকের ডাক শুনে আসিকের দিকে তাকালো কিন্তু রিক্সা থামালো না আসিক ভাবলো প্রিয়া হয়ত কলেজে গিয়ে তার সাথে কথা বলবে। তাই আসিক ও শুভ তাড়াতাড়ি কলেজে গেল। কলেজে গিয়ে প্রিয়াকে দেখে আসিক প্রিয়ার কাছে গিয়ে বলল............তুমি কেমন আছো ? কিন্তু প্রিয়া আসিকের কথার কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মাত্র একটি কথায় বলল তুমি আমাকে ভুলে যাও। আবার কিছুদিন পর আসিক প্রিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পেয়ে তার সামনে গিয়ে বলে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে যা বলা খুবই প্রয়োজন। প্রিয়া বলল আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো না আমি এখন চলে যাব। এ কথা শুনে আসিক বলল প্রিয়া তোমাকে আজ কিছু কথা শুনতেই হবে আমাকে এমন কোন কিছু করতে বাধ্য করনা যা দেখে তুমি কষ্ট পাও। কথাটি শুনে প্রিয়া বলল যা বলবা তাড়াতাড়ি বল।
আসিক বলল প্রিয়া তুমি আমাকে ভালোবাসোনা ? প্রিয়া বলে না, আসিক আবারও বলল সত্যিই আমাকে ভালোবাসোনা ? প্রিয়া আবারও বলল না আমি তোমাকে ভালোবাসিনা। আসিক বলে কেন ?
প্রিয়া বলল. . . . . .
আমার বাবা তোমার আমার সম্পর্কটা জেনে যাওয়ায় আমাকে তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। প্রিয়ার মুখ থেকে কথাটি শোনার পরেই আসিক বলল প্রিয়া তুমি যখন আমাকে ভালোবেসেছিলে তখন কি তুমি তোমার বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাকে ভালোবেসেছিলে ? আসিক আরও বলে তুমি আমাকে যেদিন জোড়িয়ে ধরে কথা দিয়েছিলে সেই দিন তোমার বাবার অনুমতি কোথায় ছিল। তবে আজ কেন আমাকে এড়িয়ে চলছ আমিতো তোমাকে আজও ভালোবাসি। প্রিয়া আসিকের কথাটি শুনে কোন উত্তর দিতে পারলো না আর এই প্রশ্নটির উত্তর প্রিয়ার মত অন্য কোন মেয়ের পক্ষেও সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। প্রিয়া কোন উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলো আসিক কাঁদতে কাঁদতে জোরে করে বলে প্রিয়া তবে তুমিও যেনে রাখো তোমার ভালোবাসা না পেলে আমি অনেক খারাপ হয়ে যাবো।
সেই দিন থেকে যে ছেলে সিগারেটের ধুঁয়া সহ্য করতে পারতো না আজ প্রথম তার হাতে সিগারেট। আসিক খারাপ ছেলেদের সাথে মিশতে লাগলো। দিন দিন সে অনেক খারাপ হয়ে গেল। এক সময় আসিক খারাপ নেশায় জড়িতো হতে লাগলো। আসিকের চোখের নিচে কালো ভাব দেখা গেল। সে প্রিয়ার চিন্তাই অনেক খারাপ হয়ে গেল এবং ঠিকমত খাওয়া দাওয়াও করেনা, আগের মত কারও সাথে ঠিকমত কথাও বলেনা। সব সময় চুপ করে থাকত। সে প্রিয়ার কাছ থেকে এত কষ্ট পেল যা সে মন থেকে কখনই ভুলতে পারলো না।
আসিক আসতে আসতে পড়া লিখার দিকেও অনেক পিছিয়ে পড়তে লাগলো। ক্লাশে ঠিক মত স্যারদের লেকচার মনোযোগ সহকারে শুনতো না আগের মত। আসিক সমস্ত কষ্ট মনের ভেতর চেপে রাখলো। আসিক বড় অসহায় হয়ে পড়লো। বন্ধুরাও আসিককে খারাপ পথ থেকে আনতে চেষ্টা করে কিন্তু সবাই ব্যার্থ হয়। আসিকের মনের ভেতর প্রেম কথাটি মিথ্যা বলে পরিচিত হল। আসিক মনে করল এখন পৃথিবীতে আর ভালোবাসা নাই। ভালোবাসা ! এখন সেটাতো মানুষের হাতের খেলা। ভালোবাসা তখনই ছিল যখন আদম (আ:) হাওয়াকে পছন্দ করে, যখন মহানবী (সা:) বিবি খাদিজাকে পছন্দ করতেন। ভালোবাসা তাদের ভেতরেই ছিল যারা সত্যিকার ভালোবাসার প্র্রমান দিয়েছে যেমনঃ শিরি-ফরহাদ ও লায়লী-মজনু। সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতেন বলেই সম্রাট শাজাহান তার স্ত্রীর জন্য পৃথিবী মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমান তাজমহল নির্মান করেন। এদের ভালোবাসার মধ্যে কোন মিথ্যা ছিলনা। আসিক মনে করল প্রিয়ার ভালোবাসা মিথ্যা হতে পারে কিন্তু তার ভালোবাসাতে কোন মিথ্যা ছিলনা।
এক সময় আসিক বুঝতে পারে হাজার ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও তার নেশার জীবন থেকে আর ফিরে আসতে পারছেনা স্বাভাবিক জীবনে। ফলে সে মনে করল এ জীবনটার আর কোন মূল্য নেই তাই সে মনে মনে স্থির ভবিষ্যৎ এ তার মনের আসনে কাওকে বসাতে পারবেনা। আসিক ভাবলো শুধু মাত্র একটি মেয়ের কারণে তার সহজ সরল মা-বাবার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল। তাই সে ফার্মেসী থেকে ২০টি ঘুমের ঔষুধ কিনে আনলো এবং ঔষুধগুলো খাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারছিল না। এভাবে করতে করতে সন্ধা হয়ে গেল। আসিক পড়ার টেবিলে পড়তে বসে ভাবলো প্রিয়াকে একটি চিঠি লিখবে তাই সে আবারও হাত কাটলো এবং সেই রক্ত দিয়ে চিঠি লিখছিল আর কাঁদছিল।
চিঠি লিখা শেষ হলে আসিক ২০টি ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল পড়ার টেবিলে। হাতের কলম হাতেই রয়ে গেল। সকালে আসিকের মা আসিকের ঘরে লাইট জ্বালানো দেখে দরজা নক করে আর আসিক বলে ডাকতে থাকে অনেকক্ষন হয়ে যায় আসিকের কোন সারা-শব্দ শুনতে পেলনা। কিন্তু অন্যদিন আসিক চুপ করে থাকতো না ভেবে আসিকের মা কাঁদতে শুরু করে। কান্নার শব্দ শুনে ঘুম থেকে আসিকের বাবা উঠে আসে। এসে দেখে আসিককে ডাকলে আসিক ভেতর থেকে কোন উত্তর দিচ্ছেনা। আসিকের বাবা কিছুক্ষন ডাকার পর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে দেখতে পেল আসিক পড়ার চিয়ারে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আরও দেখল একহাতে কলম আর অন্য হাত দিয়ে অনেক রক্ত ঝরেছে। হাত দুটোর পাশেই রক্ত দিয়ে লিখা ছিল একটি কাগজ আর ছিল একটি গ্লাস এবং গ্লাসের পাশেই দেখলো ঘুমের ঔষুধের পাতা। আসিকের মা আসিকের বাবাকে জিজ্ঞাসা করে আসিকের কি হয়েছে ? উত্তরে আসিকের বাবা বলে আসিক আজ আর আমাদের মাঝে নেই। সে আমাদের সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে ঐ নীল আকাশে। আসিকের মা কথাটা শুনার পর আসিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
সন্তানকে হারানো যে কতটুকু কষ্টের তা হয়ত আসিকের মত মা-বাবারাই বলতে পারবে। আসিকের বাবা রক্তে লিখা কাগজটি হাতে নিয়ে পড়ল। পড়ে বুঝতে পারল প্রিয়া নামের একটি মেয়েকে উদ্দেশ্যে করে লিখা। তাই আসিকের বাবা প্রিয়ার ঠিকানা নিয়ে প্রিয়ার বাসায় আসিকের বাবা আসিকের খবরটি জানালো। কিছুক্ষন পর প্রিয়া এসে আসিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আসিকের বাবা প্রিয়ার হাতে চিঠিটা দিলো।
চিঠিতে লিখা ছিল. . . . . . . . .
প্রিয়া,
আমি মনে করি মাঠের এক কোণে যে একটা দূর্বাঘাস মাথা তুলে থাকে সে সূর্যের আলোর জন্য সতেজ। আবার সে দূর্বাঘাস বেঁচে না থাকলে ঐ আলোটায় অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই দু-জনেরই অস্তিত্ব নির্ভরশীল দু-জনের উপর। কিন্তু আমার অস্তিত্বটায় যে আজ মিথ্যে হয়ে গেল। আমি কখনও ভাবিনি তুমি কথা দেবার পরও আমাকে ভুলে যাবে। তাই আমি আমার সত্যিকার প্রেমের প্রমাণ দিয়ে গেলাম। কিন্তু দুঃখ শুধু এই যে, তোমার অপেক্ষায় আমার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। আমি মরে গিয়েও তোমাকে ভুলতে পারবো না তুমিও আমাকে. . . .
ভুলে যেওনা।
"ইতি"
তোমার আসিক