লেখক : মোঃ আসাদুজ্জামান
--------------------------------------------------------
কিছু কথাঃ
------------------
আমি মো: আসাদুজ্জামান। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । এটি আমার প্রথম ছোট গল্প। আমি এই গল্পের মাধ্যমে বাস্তবিক ঘটে থাকা কিছু চরিত্র ও কাহিনী উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। জানিনা কতটুকু তা পেরেছি। তবে এটুকু বলতে পারি কিছুটা হলেও এই গল্প থেকে বাস্তবিক উপাদান খুঁজে পাবেন। আর তাই বাস্তবে মানব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়েই সাজানো আমার প্রথম ছোট গল্প “ নির্বাক চোখের জল”। আমার জীবনের প্রথম বইটি লিখতে ও প্রকাশ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমার এই লেখার স্বার্থকতা নির্ভর করছে শুধুমাত্র আপনাদের ভালোলাগার উপর। আমি মনে করি এই গল্প হতে আপনাদের কিছুটা হলেও বিনোদন দিতে পারব। ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষে আমি একটি কথায় বলতে চাই যে, গল্প বা কবিতা লেখা কোন কারণ বসত আগ্রহ নয়। এটি মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের একটি মাধ্যম হিসেবে আমি মনে করি। কোনো প্রকার ভূল পেয়ে থাকলে সুদৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
--------------------------------
২১ শে মার্চ ২০১১ খ্রিস্টাব্দ
রচনা ও সম্পাদনায়
মোঃ আসাদুজ্জামান
মাস্টার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
উৎসর্গ
সকল সকল প্রেমী
মানুষের জীবন গল্পের কোন অংশ নয়, গল্প মানুষের জীবনের কিছু অংশ। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই ভিন্ন ভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন ধরনে এমন কিছু ঘটে যা গল্পের একটি অংশ হয়ে যায়। তাই বলা যায়, গল্পের প্রধান উৎস মানুষের চলমান জীবন। এমনই এক কাহিনী, এমনই এক গল্প আছে শুভ’র জীবনে যা প্রতিদিন ঘটে যাওয়া হাজারও মানুষের মত একটি নির্বাক কাহিনী।
সামিম, জামান, রিয়া, জুলি ও আরও কয়েকজন মিলে ছিল শুভর যৌথ বন্ধুত্ব। এরা সবাই ছিল শুভর খুব ভাল বন্ধু এবং শুভও তাদের কাছে খুব ভাল বন্ধু হিসেবে খ্যাত ছিল। সামিম শুভর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল। শুভরা কলেজে পড়ত। শুধু একজনের কাছে শুভ অপরাধী ও ঘৃনার পাত্র ছিল। সে হল স্মৃতি। কারণ স্মৃতি জানত যে, তার মোবাইল নম্বরটা শুভ কলেজের নোটিশ বোর্ডে বড় করে লিখে নিচে লিখেছিল ″Sriti is my heart ″. আর তার নিচে লিখা ছিল ″Writing by Suvo″. যা স্মৃতি দেখতে পায় এবং তার ক্লাশের কয়েকজন ছেলেও দেখে তাকে রাগায় এতে স্মৃতির খুব খারাপ লাগে এবং শুভ স্মৃতির কাছে হয়ে যায় ঘৃণার পাত্র ।
২ বছর পর.............!
সামিম একদিন শুভর বাসায় গেল, সামিমকে দেখে শুভর মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। সামিম বললো চাচী কিছু চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলেই সোজা শুভর ঘরে চলে গেল এবং ঘরে ঢুকতেই তার চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগল। সামিম শুভর ব্যবহার করা প্রত্যেকটি জিনিসপত্র দেখতে লাগল। হঠাৎ সামিমের চোখ শুভর টেবিলের উপর পড়ল। সে তার বই-খাতাগুলো দেখতে গেলে সামিম দেখতে পেল একটি বই এর মধ্যে একটি কাগজের কোণা বের হয়ে আছে। সে কাগজটি বই থেকে বের করল ও তা পড়ে দেখল। তাতে লেখা ছিল........
ভালোবাসা কি এমন কোনো অন্যায় যার পরিণতি অতি ভয়ংকর।
ভালোবাসা কি এমন কোনো স্মৃতি যার প্রতি মূহুর্তগুলো বেদনার।
ভালোবাসা কি এমন কোনো সুখ যা পাওয়াটা অতি জরুরী।
ভালোবাসা কি এমনই অধ্যায় যা ধরিয়ে দেয় হাতে কষ্টের ডায়েরী।
সেই কাগজটি পড়ে সামিম খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল সে ভাবতে লাগল কথা গুলো ভালোবাসার উদ্দেশ্যে লিখা কিন্তু শুভ কেন এধরনের কথা লিখবে সে তো কাউকে ভালোবাসত না। কাগজটি যে বইয়ের উপরে লিখা ছিল সামিম তা বের করে দেখে সেটা আসলে বই নয় সেটা ছিল একটা ডায়েরী। ডায়েরীর উপরে লিখা ছিল “নির্বাক চোখের জল”। সামিম লেখাটি দেখে কিছু বোঝার চেষ্টা না করে আবার রেখে দিতেই শুভর মা এসে বলে ডায়েরীটিতে শুভ সব সময় কি যেন লিখত আর কাঁদত। আমি শুভকে জিজ্ঞেস করলে শুভ উত্তরে বলত কিছু না মা।
ডায়েরীতে শুভ কি লিখত তা শুভর মা পড়তে পারতনা কারণ শুভর মা লেখা পড়া তেমন জানত না।
এই কথাটি শুনে সামিমের মনে প্রশ্ন জাগল ! শুভ তো কখনও মন খারাপ করে থাকত না আবার কারও সাথে কোন ঝগড়া-বিবাদ ছিলনা কারণ শুভ ছিল অতি সাধারন একটা ছেলে। ব্যাপারটি সামিমের কাছে বেশ কৌতুহলের বিষয় মনে হল। সামিম ডায়েরীটি নিয়ে তার নিজের বাসায় চলে গেল। বাসায় গিয়ে সামিম তার নিজের সব কাজ শেষ করে তার ঘরে গিয়ে ডায়েরীটি খুলল। সামিম ডায়েরীটি মনোযোগ সহকারে পড়তে লাগল।
কিছু পৃষ্ঠা পড়তেই সামিম অবাক হয়ে উঠল। ডায়েরীর সেই লেখাগুলোর প্রতি আরও মনোযোগী হতে লাগল এবং খুব যতœ সহকারে পড়তে লাগল। সামিম আস্তে আস্তে সব জানতে পারল এবং ডায়েরীটি সম্পূর্ন পড়ে শুভর মনের গহীনে থাকা সেই দুঃখের প্রতি মূহুর্তগুলো বুঝতে পারল। সামিম তার দু′চোখকে আর আটকে রাখতে পারল না তার দু′চোখ যেন ঝর্নায় পরিনত হল। সামিম তখন বুঝতে পারল যে, ডায়েরীর মধ্যে থাকা কাগজটিতে কি উদ্দেশ্যে কথাগুলো লিখা ছিল। আসলে শুভ একটি মেয়েকে খুব ভালোবাসত। মেয়েটি হল স্মৃতি। আর স্মৃতি কেন শুভকে ঘৃণা করত তাও সামিমের বুঝতে বাকি রইল না। সামিম স্থির করল ব্যাপারটি সব বন্ধুকে জানান খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে স্মৃতিকে।
পরদিন............
সামিম ডায়েরীটি নিয়ে কলেজে গেল এবং জামান, রিয়া, জুলি ও অন্য বন্ধুদের নিয়ে মাঠের এক কর্ণারে গিয়ে বসল। সামিম দেখল স্মৃতি তখনও কলেজে আসেনি। সামিম বলল আজ আমি তোমাদের শুভর একটি মূল্যবান জিনিস দেখাব। শুভর কথা শুনে সব বন্ধুরা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল এবং শুভর জন্য তাদের খুব মন খারাপ হল। অনেকে আবার কেঁদেও ফেলল। স্মৃতি এই মাত্র কলেজে আসল এবং রিয়ার পাশে এসে বসে। সবার মন খারাপ দেখে স্মৃতি বলে তোদের কি হয়েছে তোরা কাঁদছিস কেন ? জামান বলে শুভর কথা সবার খুব মনে পড়ছে। স্মৃতি বলে ওঠে এতে কাঁদার কি আছে ! স্মৃতির কথাটি কেউ বুঝতে পারল না শুধু সামিম ছাড়া। আর সেই মূহুর্তে অন্যরা বুঝার চেষ্টাও করলনা। সামিম বলল তোমাদের আজ যে জিনিসটি দেখাব তা হল শুভর অগচরে থাকা এই ছোট্ট ডায়েরী।
জুলি বলে এই ডায়েরী আবার মূল্যবান হয় কি করে ? সামিম বলে ডায়েরীটি পড়লেই তোমরা বুঝতে পারবে এটা কতটা মূল্যবান, বিশেষ করে স্মৃতি ভাল বুঝতে পারবে। জুলি বলে ডায়েরীটি আমাকে দাও আমি তোমাদের জোরে পড়ে শুনাচ্ছি।
২ বছর আগে শুভর জীবনে কি ঘটেছিল ?
শুরু হল ডায়েরী পড়া সবাই খুব মনোযোগী হল........
আজ শনিবার !
শুভ তার জীবনের প্রথম কলেজ যাবে আজ। তাই অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশি যত্নশীল হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেই মূহুর্তে সামিম তাকে ফোন করে বলে তার বাসায় একটু তাড়াতাড়ি আসতে দুজনে একসাথে যাবে বলে। শুভ কোন রকম খাওয়া দাওয়া করেই সামিমের বাসায় গিয়ে একসাথে দুজনে কলেজ গেল। তারা দুজনেই খুব আনন্দিত। তারা কলেজে গেলে তাদের কয়েকজন পূর্ব পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখা হয় এবং সবাই একসাথে গল্প করতে লাগল।
সেই বন্ধুগুলোর মধ্যে ছিল শুভর স্কুলের বন্ধু জামান। জামান তার কয়েকজন বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় শুভদের। শুভরাও তাদের নিজ নিজ পরিচয় দেয়। প্রথম দিনেই বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী পেয়ে শুভ খুব খুশি হল। কারণ শুভ সবসময় বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে পছন্দ করত। শুভর প্রথম দিনের কলেজ খুব ভাল ও আনন্দের সাথে কাটল যা শুভ অন্য কোন দিন এমন আনন্দ উপভোগ করেনি। তাই নিজেকে খুব গর্বিত মনে করল কারণ কয়জনের কপালে এমন আনন্দ জোটে।
প্রথম দিন কলেজ শেষ হল......
শুভ ও সামিম এক সাথে বাসায় চলে গেল। আবার পরদিন একই ভাবে দুজনে কলেজে আসল এবং তাদের নিজ নিজ ক্লাশ রুমে গিয়ে তারা ক্লাশ করল। সেই দিনের প্রত্যেকটি ক্লাশ করে তারা সবাই মাঠে গিয়ে বসল এবং গল্প করতে লাগল। এই ভাবে তারা কলেজে নিয়মিত ক্লাশ করা শুরু করল। শুভর বন্ধুরা সবাই খুব ভাল ছিল তাই সবার সাথে শুভর বন্ধুত্বটা দৃঢ় হতে লাগল। তবে তাদের বন্ধুত্বের টিমে কখনও বিরক্তবোধ, মন খারাপ ও রাগারাগির কোন সুযোগ থাকত না কারণ শুভ ও সামিম সেই টিমের রশিক পান ছিল, যা হাসি-খুশি ছাড়া অন্য কিছু ভাবারও সুযোগ দিত না।
বুধবার শুভদের বন্ধুত্বের টিমে আরও দুইজন মেয়ে যোগ হল তাদের নাম হল রিয়া ও স্মৃতি। তারা দুজন দুজনের খুব ভাল বান্ধবী ছিল। বুধবার হঠাৎ শুভরা শুনতে পেল জামানের জন্মদিন তাই জন্মদিন উপলক্ষে সে সবাইকে খাওয়াবে। জামান সবাইকে ক্যান্টিনে নিয়ে গেল এবং সব বন্ধু-বান্ধবীদের খাওয়াল। তখন শুভদের সাথে সেই নতুন দুই মেয়েও ছিল। হোটেল থেকে মাঠে এসে সেই দুই মেয়ের সাথে পরিচয় বিনিময় করল শুভ সহ শুভর সব বন্ধু-বান্ধবীরা। জানা গেল জামান তাদের বন্ধু এবং অপরিচিত মেয়ে থেকে তারাও শুভদের বান্ধবী হয়ে গেল।
এভাবেই প্রতিদিনের মত কলেজ, ক্লাশ, বন্ধু-বান্ধবী ও আড্ডা চলতে থাকে শুভর কলেজ জীবন। শুভ তাদের বন্ধুদের কাছে এত প্রিয় হয়েছিল যে শুভ একদিন কলেজে না আসলে সেই টিমের কারও ভালও লাগত না। সবাই যেমন শুভকে ভালোবাসত ঠিক তেমনি শুভও সবাইকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু শুভর মনের মধ্যে এক অন্য রকম ভালোবাসা সাড়া দিল। শুভর মনে সাড়া দেয়া ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ছিল একটি মেয়ে। তবে শুভ তখন সেই ভালোবাসাকে ততটা গুরুত্ব দিলনা। শুভ তার নিজ চিন্তায় অন্যান্য দিনগুলোর মত কলেজ-ক্লাশ, বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা এগুলোর মধ্য দিয়েই তার জীবনের সময়গুলো পার করতে লাগল।
এরই মধ্যে একদিন সামিম শুভকে এসে বলে, শুভ আমার একটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। কথাটি শুনে শুভ তো মহাখুশি। শুভ বলে কে মেয়েটি, তার নাম কি, কোথায় বাসা, কি করে আরও কতনা প্রশ্ন করে বসল। সামিম বলে থামো! থামো! তোমার এত প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দিই তার চেয়ে বরং তুমি সরাসরি দেখ। শুভ বলে কোথায় সে এখন ? সামিম তাকে হাত দিয়ে দেখাল। শুভ বলল জুলি! সামিম বলল হ্যা। সামিম জুলিকে তার মনের কথা খুলে বললে জুলি তা মেনে নেই।
সামিম ও জুলি এখন খুব আনন্দিত.........।
শুভ আসতে আসতে দেখল তাদের বন্ধুত্বের টিমের মধ্যে সবাই তাদের নিজ নিজ সাথী খুজে নিল আবার কারও আগে থেকেই ছিল। শুধু ফাঁকা রয়ে গেল শুভ একা। শুভ ভাবত কেউ তাকে পছন্দ করবে না তাই তার কোন দিনও সাথী হবেনা।
এমন এক সময় আসল.............
শুভ দেখল কলেজে আসলে ক্লাশ শেষে আড্ডা দেয়ার যে সময়টুকু থাকত তাও বন্ধু-বান্ধবীরা তাদের সাথী নিয়ে যে যার ইচ্ছেমত জায়গা বেছে নিয়ে সময় কাটাতে লাগত। শুভ তখন খুবই একাকি হয়ে পড়ল এবং নিজেকে মনে করত জলহীন সাগরের মত। কিন্তু সামিম ও জুলি শুভকে সময় দিত। কিন্তু কিছুদিন যেতেই শুভ ভাবল সামিম ও জুলিকে একটু একা গল্প করার সুযোগ না দিলে তাদের খারাপ লাগবে তাই শুভ তাদের সাথে আড্ডা দেয়া কমিয়ে দিল। সবাই যখন যে যার সাথী নিয়ে ব্যস্ত শুভ তখন মাঠের কোন এক কর্ণারে অথবা কোন গাছের ছায়াই বসে থাকত। তবে শুভ যে একাই বসে থাকত তাও নয়। শুভর সাথে মাঝে মাঝে তার কয়েকজন অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবী বসে গল্প করত।
এরপরেও শুভ নিজেকে খুব একাকী অনুভব করল। এবং তার মনে সাড়া দেয়া সেই গুরুত্বহীন ভালোবাসার কথা ভাবতে লাগল। কিন্তু শুভ অন্য বন্ধু তো দূরের কথা তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সামিমকেও ব্যাপারটি জানাল না কারণ সে মনে করল তার সেই ভালোবাসা হয়ত মূল্যহীন। শুভ যখন থেকে তার সেই ভালোবাসাটিকে গুরুত্ব দিল তখন থেকে শুভর দৈনন্দিন কর্মকান্ড সব পরিবর্তন হতে লাগল। শুভ বিষয়টিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত কিন্তু পারত না কারণ সেটি ছিল শুভর জীবনের প্রথম ভালোবাসা। শুভর জীবনের প্রতি মুহুর্তগুলো যেন বছরে পরিনত হল। যতক্ষন না শুভ কলেজে গিয়ে সেই মেয়েটিকে না দেখতে পেত ততক্ষন তার ভালো লাগত না। আবার শুভ যখন তাকে দেখতে পেত তখন তার মনে হত যেন সে হারিয়ে যাওয়া জীবন ফিরে পেল।
এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল...........।
শুভ বাসায় থাকলে শুধু ছটপট করত এবং সেই মেয়েটির কথা চিন্তা করত। সেই মেয়েটির ছবি যেন তার প্রতিটি পলকে দেখতে পেত। শুভ এমন কোন সময় ছিল না যে সেই মেয়েটির কথা ভাবত না। সেই মেয়েটিকে দেখার পর শুভর কোন রাতে ঘুম আসত না সারারাত শুভ জেগে জেগে শুধু তার কথা ভাবত।
কিন্তু একরাত্রে........!
অন্যান্য রাতের মত নয়, বরং একেবারেই ব্যতিক্রম ঘটনা তা হল, শুভর চোখে স্বপ্নের এক ঘুম আসল। সেই স্বপ্নে শুভ শুধুই একটি নামই উচ্চারন করছিল। যেন সেই নামটি ছাড়া আর অন্য কোন শব্দ বা নাম নেই। নামটি যে স্বপ্নেই বলছিল তাই নয় ঘুমের ঘরে সে বাস্তবে সে নামটি জোরে জোরে উচ্চারন করছিল। সেই নামটি হল স্মৃতি।
ঠিক সেই মুহুর্তে পাশের ঘর থেকে তার মা উচ্চশব্দ শুনতে পেয়ে শুভর ঘরের দরজায় এসে বলে শুভ কি হয়েছে ? শুভ লাফ দিয়ে ওঠে এবং ব্যাপারটি বুঝতে পেরে উত্তরে বলে কিছু না মা চোর মনে করে চিৎকার করছিলাম। শুভ বুঝতে পারল এটি আর কিছু না, এটি তার ভালোবাসার এক বিশেষ আহব্বান। শুভ আর বেশিক্ষন তার মনকে আটকে রাখতে পারল না। সে সিদ্ধান্ত নিল তার এই ভালোবাসার কথাটি সে স্মৃতিকে জানাবে এবং তা আগামীকালকেই। শুভ পরদিন কলেজ গিয়ে দেখল সেইদিন তার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীগুলো আসেনি শুধু সামিম ও জুলি এসেছিল এবং তারাও কিছুক্ষনপর বেড়াতে চলে যায়। থেকে যায় শুধু শুভ। শুভ ভাবল তার মনের কথা বলার এর চেয়ে আর ভালো সুযোগ নেই।
শুভ কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই দেখতে পেল স্মৃতি তার দিকে আসছে। তখন শুভর হৃদ-স্পন্দন যেন বাড়তে লাগল তার পরও শুভ সাহস করে দাড়িয়ে থাকল। স্মৃতি এসে শুভকে বলে আর সবাই কোথায়, শুভ বলে আসেনি। শুভ স্মৃতিকে নিয়ে এক খোলা জায়গায় বসল এবং বলল স্মৃতি আমি তোমাকে আজ একটা কথা বলব। স্মৃতি বলে কি বলবে বল? শুভ বলে আমি যে কথাটি বলব তুমি কিন্তু না করতে পারবে না। স্মৃতি বলে আচ্ছা বল ?
শুভ যেই বলে, আমি তোমা...........!
ঠিক সেই মুহুর্তে একটি ছেলে এসে বলে, হায় স্মৃতি! কেমন আছো ? স্মৃতি বলে ভালো আছি তুমি কেমন আছো ? ছেলেটিও বলে ভালো।
স্মৃতি বলে, তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই এ হল শুভ আমার সহপাঠী এবং শুভকে বলে এ হল শান্ত আমার নড়ু ভৎরবহফ. কথাটি শুনার পর শুভ চেহারায় যেন এক অকল্পনিয় ধংশের ছাপ পড়ল আর সেই ধংশের শিকার হল শুভর মনটা। স্মৃতি শুভকে বলে, ও শুভ তুমি আমাকে কি যেন বলছিলে। শুভ বলে না কিছু না তোমাকে বলছিলাম যে আমি তোমার বাংলা বইটি একদিনের জন্য নিতে চাচ্ছিলাম। স্মৃতি বলে, এতে আবার তোমাকে না বলার কি আছে। আচ্ছা বইটি নিও। শুভ তখন বলে, আচ্ছা তোমরা গল্প কর আমার একটু কাজ আছে আমি আসছি। এই বলে শুভ তার ভেঙ্গে যাওয়া সেই হাজারও টুকরোর মনটি নিয়ে সে অশ্র“হীন কান্নার সাথে বাসায় চলে গেল। সে আর বলতে পারল না যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। চোখ থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা অশ্র“ যেন তার পোড়া মনটিকে দহন করার শান্তনা দিচ্ছিল নির্বাক হয়ে।
তখন তার বিস্ফরিত মনটি বলে উঠল.............
ভালোবাসা কি সেই মনের পরীক্ষা ?
অজানা কষ্ট যার ফল,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
নির্বাক চোখের জল।
শুভ তার মনকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না এ যে তার প্রথম প্রেম আর কেউ তার প্রথম প্রেম কোনদিন ভুলতে পারেনা। শুভ মনে মনে ভাবল যে, সে স্মৃতিকে মিথ্যা নয় সত্যিকার অর্থে ভালোবেসেছে তাই সে যতদিন বেঁচে থাকবে শুধু তাকেই ভালোবাসবে। শুভ তার অগচরে থাকা ভালোবাসাকে অগচরেই রেখে দিল। তার সেই বুক ফাটা কষ্টের কথা কাউকে বুঝতে দিলনা। সে ভাবল স্মৃতি তাকে নাইবা ভালোবাসল সে তো ভালোবাসে আর সে তার এই ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
পরদিন............
শুভ কলেজ গেলে প্রায় সবার সাথে তার দেখা হয় এমনকি স্মৃতির সাথেও। স্মৃতি বাংলা বইটি শুভকে দিয়ে বলে তুমি গতকাল বইটি চেয়েছিলে। শুভ বলে, যে জিনিসটি চেয়েছিলাম তা দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্মৃতি বলে, তোমরা জানো ? আগামীকাল হয়ত কলেজ বন্ধ থাকতে পারে। শুভ বলে, তোমরা একটু বস আমি নোটিশ বোর্ড থেকে নোটিশটি পড়ে আসি। সামিম বলে শুভ দাড়াও আমিও তোমার সাথে যাব। তারা দুজনে একসাথে নোটিশ বোর্ডের কাছে গেলে দেখে এক ছেলে নোটিশ বোর্ডে লিখছিল যে, ″ঝৎরঃর রং সু যবধৎঃ″ ″ডৎরঃরহম নু ঝাঁড়″. এবং সেই সাথে একটি মোবাইল নম্বর।
শুভ লেখাটি পড়ে বলে, এই শুভ কে ভাই সেই ছেলেটি বলে আমি। তখন শুভ বলে উঠে আমার নাম ও শুভ। নোটিশ বোর্ডে যে নম্বরটি দেওয়া ছিল তা দেখে সামিম বলে এটা কার নম্বর ভাই ছেলেটি বলে আমার বান্ধবীর। সামিম ও শুভর অবশ্য কারও নম্বর মুখস্ত নেই তাই তা নিয়ে কোন মাথা না ঘামিয়ে নোটিশ বোর্ডটি পড়ে তারা সেখান থেকে চলে আসল এবং ছুটির খবরটি সবাইকে জানিয়ে তারা বাসায় চলে যায়।
একদিন কলেজ বন্ধ ছিল।
কলেজ খুলার পর শুভ স্মৃতির বইটি নিয়ে কলেজ গেল। কলেজ গিয়ে শুভ দেখল স্মৃতি তখনও কলেজে আসেনি কিন্তু অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীরা এসেছে। রিয়া শুভকে বলে, শুভ তুমি স্মৃতির সম্পর্কে কি সব বাজে কথা লিখে বেড়াচ্ছ। শুভ কথাটির কোন অর্থ খুঁজে পেলনা। শুভ কিছু না বুঝে ও না বলে বাসায় চলে গেল। পরদিন কলেজ গেলে স্মৃতির সাথে শুভর সরাসরি দেখা হয়। শুভ বলে, কি হয়েছে স্মৃতি ? স্মৃতি কোন উত্তর না দিয়ে শুভর হাতে থাকা তার বইটি নিয়ে চলে গেল। শুভ বুঝতে পারল রিয়ার কথামত কোথাও একটা ভুল হয়েছে। কিন্তু ভুলটা কি তা শুভ বুঝতে পারল না তবে এটা বুঝতে পারল যে, স্মৃতি তাকে ঘৃণার চোখে দেখল।
শুভ নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করে যে, সে স্মৃতির সাথে কোন ভুল বা অন্যায় করেছে কিনা। কিন্তু শুভ জানত সে কোন অন্যায় বা ভুল করেনি। তবে তার খুব খারপ লাগল কিন্তু কাউকে কিছু বলল না। কারণ সে তো তাকে ভালোবাসে বিনিময়ে স্মৃতি যায় উপহার দিক না কেন। শুভ স্মৃতিকে এত ভালোবাসত যে, সে তার প্রতি রাতের ঘুম না আসা চোখ, প্রতি মুহুর্তের বিস্ফরিত তার বুক ও চূর্ণ-বিচূর্ণ মনটি শুধুই তার জন্য উৎসর্গ করে দিত। সে তার নিজের দুঃখের বিনিময়ে শুধু স্মৃতির সুখ চাইত। এভাবে শুভ স্মৃতির জন্য অদৃশ্য ভালোবাসার বুক ফাটা কান্না তার মুখের সেই না চাওয়া হাসি দিয়ে ঢেকে রাখত। শুভ যে স্মৃতিকে ভালোবাসে এই কথাটি স্মৃতিকে কোন মতেই বুঝতে দিতনা কারণ একথাটি শুনলে স্মৃতি হয়ত অনেক কষ্ট পাবে এই ভেবে শুভ তার নির্বাক চোখের জল কখনও তার সামনে আসতে দিত না।
কিন্তু যখন শুভ একা থাকত তখন তার চোখের পাতা হয়ে যেত বর্ষার ছাতা।
সেই যে স্মৃতি বই নিয়ে চলে গেল তার পর থেকে আর তার কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছিলনা। পরে শুভ জানতে পারল সে তার গ্রামের বাসা চলে গেছে এবং তার বান্ধবী রিয়াকে বলে গেছে যে, শুভ এই কলেজে পড়লে স্মৃতি আর এই কলেজে পড়বে না। শুভ রিয়াকে বলে, রিয়া তুমি স্মৃতিকে কলেজে ডাক কারণ সামনে ফাইনাল পরীক্ষা আর আমি চাইনা আমার জন্য কারও কোন ক্ষতি হোক। রিয়া বলে, শুভ আমার খুব খারাপ লাগছে যে তুমি এমন কি করেছ আর রিয়াই বা তোমার উপর কেন ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। শুভ বলে, রিয়া তোমার মনে যে প্রশ্নটা আজ উঠেছে সেই প্রশ্নটা কয়েকদিন থেকেই আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
শুভ চলে যেতে লাগলে রিয়া ডেকে বলে শুভ আমি তাহলে স্মৃতিকে ডাকছি। শুভ বলে অবশ্যই ডাকবে। রিয়া কিন্তু বলে একটু চুপ করে থাকতেই শুভ বলে, রিয়া আমি বুঝতে পারছি তুমি তাকে বলে দিও আমি আর এই কলেজে পড়ব না কিন্তু তার আগে আমি তার সাথে একবার কথা বলতে চাই। এই বলে শুভ চলে যাই। সেই দিন ছিল সোমবার যেদিন স্মৃতি তার গ্রামের বাসা থেকে আবার কলেজে আসল এবং শুভকে রিয়া মোবাইল করে ডাকল। শুভ ও স্মৃতি একসাথে মুখোমুখি হল। শুভ শুধু স্মৃতির দুচোখের দিকে এক অবুঝ শিশুর মত চেয়ে রইল তার নিজের অজান্তে। স্মৃতি বলে, আমার সময় নাই যা বলবে তা তাড়াতাড়ি বল। শুভ বলে, আজ তোমার কাছে আমার কথা শোনার কোন সময় নেই কিন্তু এমন দিন আসবে যে, তোমার কথা আমার শোনার কোন উপায় থাকবে না। তখন তুমি হয়ত তোমার ভুল বুঝতে পারবে। কিন্তু তখন তা হবে মূল্যহীন। আমি জানিনা তুমি কেন আমাকে সহ্য করতে পারছ না তবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলতে পারি তুমি কোথাও একটা ভুল করছ।
শুভর কথা এখানেই শেষ নয়....!
শুভ আরও বলে, স্মৃতি আমি তোমাকে একটা কথা বলে রাখছি যেদিন তুমি এই হাসি খুশি মুখটা দিয়ে আমার সাথে একটি কথা বলতে চাইবে তখন হয়ত আমার মুখটা থাকবে বিসন্ন। তোমার জন্য আমি আমার জীবনের চলতি গাড়ি এখানেই থামিয়ে চলে যাচ্ছি। তবু তুমি তোমার জীবনটাকে কোথাও থামতে দিও না। শুধু তাই নয় আমার এই মুখটা তোমার সামনে কখনও আসবেনা হয়তবা খেয়ালেও না।
শুভ সেই দিন কলেজ থেকে চলে যাওয়ার সময় শুভকে সবাই আটকানোর চেষ্টা করল কিন্তু কেউ পারল না এমন কি সামিমও পারল না। সবার মন আকাশটা যেন মেঘে ছেয়ে গেল। শুধু স্মৃতি ছাড়া। সবাই স্মৃতিকে বলে, শুভ তোমার কি এমন ক্ষতি করেছে যে তাকে তুমি এ কলেজে আর থাকতে দিলে না। স্মৃতি কারও কথার কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেল। শুভ সেই যে কলেজ ছেড়ে চলে গেল আর সে কোন দিন কলেজেও আসল না আর কারও সাথে কোন যোগাযোগও রাখল না। সামিম যেহেতু তার কাছের বন্ধু ছিল সেহেতু তার সাথে মাঝে মাঝে দেখা করত। সামিম তাকে আবার কলেজে যেতে বললে শুভ বলে, সামিম তোমার সব অনুরোধ মানব শুধু এই অনুরোধটা আমাকে আর কোনদিন করনা।
শুভ তার আলোকিত জীবনটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে লাগল। তার সব স্বপ্ন, আশা ও চাওয়া-পাওয়াকে ব্যার্থ করে লক্ষ্যহীন পথিক হয়ে গেল। এভাবে শুভর অনেক দিন কেটে গেল।
শুভ তার ক্ষত বিক্ষত মনটাকে যদি মাঝে মাঝে আবার গড়ার চেষ্টা করত কিন্তু পারতনা। কারণ কোন মজবুত লৌহ ভাঙলে জোড়া দেওয়া যায়, কোন বস্তু ভাংলে জোড়া দেওয়া যায় কিন্তু এটা যে মন একে কি করে জোড়া দেবে। তাই সে তার জীবনের প্রতিটি উদ্দেশ্য,আশা,স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছেড়ে দিল শুধু একটি জিনিসই ছাড়তে পারল না তা হল স্মৃতিকে ভালোবাসা। শুভ তার হাতকে আর বেশি দূর নিয়ে যেতে পারল না এ ডায়েরীতে। শুধু ডায়েলীটি লেখা শেষ করার আগে কয়েকটি কথায় বলে, তা হল.......
ভালোবাসা কি সেই ফেলে আসা স্মৃতি ?
যা চাইলেও ভোলা যায়না,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
জমে থাকা শত বায়না।
ভালোবাসা কি সেই শূন্য শব্দ
বিস্ফরনে এ বুকটা,
তবু ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
বন্ধ রাখা এ মুখটা।
--------------সমাপ্ত--------------
ডায়েরী পড়া শেষ...........!
ডায়েরী পড়া শেষ হল কিন্তু শুরু হল সবার কান্না। তারা কেউ কোন মতেই তাদের চোখকে আটকে রাখতে পারল না। কিন্তু অবাককরা ঘটনা এই, যে স্মৃতি শুভর নাম শুনলেই ক্ষিপ্ত হয়ে যেত সেই স্মৃতি আজ শুভ জন্য কাঁদছে। শুভর সব বন্ধু বান্ধবীরা স্মৃতিকে বলে, তুই শুভর এত বড় একটা ক্ষতি কি করে করতে পারলি। শুভ তোর তো কোন ক্ষতি করেনি। তবে কেন তাকে তুই এত বড় সাজা দিলি। সামিম বলে, সে তো তোমাকে শুধু ভালোই বাসতে চেয়েছিল আর সেই ভালোবাসার কথাটাও সে মুখ ফুটে বলতে পারেনি।
স্মৃতি কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমি অনেক বড় ভুল করেছি আমি মনে করেছিলাম শুভই নোটিশ বোর্ডে আমার সম্পর্কে কথাগুলো লিখেছিল। সামিম তখন বলে এই জন্য তুমি শুভর এত বড় ক্ষতি করলে। সেদিন শুভর সাথে আমিও নোটিশ বোর্ডে নোটিশ দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি একটি ছেলে নোটিশ বোর্ডে লিখছিল যে ″Sriti is my heart″. আর তার নিচে লিখা ছিল ″Writing by Suvo″.
সামিম তখন বলে, সেই শুভ তো অন্য এক শুভ ছিল। স্মৃতি বলে, “হ্যাঁ” আমি এখন বুঝতে পারছি সে লেখাটি আমাদের শুভ নই অন্য কোন শুভ লিখেছে। এই বলে সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। সামিম তখন বলে, স্মৃতি তোমার চোখে পানি, না তুমি কাঁদতে পারনা, তুমি কেন কাঁদবে তোমার তো আজ আনন্দের দিন। সামিম আরও বলে তুমি শুভর কাছে যা চেয়েছ তুমি তাই পেয়েছ। তুমি শুভকে কলেজ ছাড়তে বলেছ শুভ কলেজ ছেড়েছে, শুভ তার জীবনের চলতি গাড়িটি আটকে দিয়েছে শুধু মাত্র তোমার জন্য শুধু তাই নয় আজ সে শুধু তোমার জন্যই মেডিকেলের এক বেডে তার মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
স্মৃতি বলে ওঠে, কি বললে?
সামিম বলে হ্যাঁ, তোমার জন্যই সে আজ মৃত্যুর মুখে ঢুলে পড়েছে। সামিম আরও বলে কেন তার আজ এই অবস্থা জানতে চাও? তাহলে শুন.......
আমি গতপরশু সন্ধায় শুভর বাসায় গিয়ে দেখি শুভ ঘরের এক কোণে মন খারাপ করে বসে ছিল। আমি তাকে নিয়ে মোড়ের এক দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ঠিক ঐ সময় শুভ তোমার নড়ু ভৎরবহফ কে একটি মেয়ের সাথে অশ্লীল আচরণ করতে দেখে তার দিকে হাটতে লাগল এবং আমিও তার সাথে গেলাম। সেখানে গিয়ে শুভ বলল, তুমি শান্ত না? ছেলেটি বলে হ্যাঁ তো!। শুভ বলে, তুমি এই মেয়েটির সাথে কি করছ, তুমি তো স্মৃতিকে ভালোবাসো। শান্ত বলে তাতে তোর কি! আমি কখনও স্মৃতিকে ভালোবাসিনা ওটা ছিল একটা অভিনয়। শুভ কথাটি শুনে শান্তকে বলে, দেখ শান্ত স্মৃতি তোমাকে অনেক ভালোবাসে তুমি তার সাথে এ রকম প্রতারণা করতে পারনা।
শান্ত শুভর কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার বন্ধুদের নিয়ে প্রচুর মারধর করে। এতে শুভ আহত হয়েও শান্তর কাছে হাতজোড় করে বলে, আমি তোমার কাছে স্মৃতির ভালোবাসা ভিক্ষে চাইছি তুমি তাকে এভাবে ধোকা দিও না। শান্তর মাথায় যেন শুভর কথায় আরও আগুন উঠে গেল। বাস্ তার পরেই শুভকে এতটা জোরে ধাক্কা দেয় যে, সেই ধাক্কায় শুভ রাস্তা পাশে পড়তেই একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়।
কথাটি শুনেই স্মৃতি শুভ বলে চিৎকার ওঠল। আর সে তার নিজেকে ক্ষমা করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। স্মৃতি এতটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল যে তাকে কেউ শান্তনা দিয়েও আটকাতে পারলনা। স্মৃতি বারেবার বলতে লাগল শুভর কাছে আমায় নিয়ে চল। ঠিক সেই মূহুর্তে সামিমের মোবাইলটা বেজে উঠল। সামিম মোবাইল ধরেই শুনতে পায় শুভর অবস্থা খুবই খারাপ। শুভর সেই সংবাদ শুনে, স্মৃতি বলে সামিম তুমি আমাকে শুভর কাছে নিয়ে চল। আমি শুধু একবার শুভর কাছে ক্ষমা চাইব। সামিম বলে হ্যাঁ আজ তোমাকে আমি শুভর কাছে নিয়ে যাব। স্মৃতি সামিম সহ সব বন্ধু-বান্ধবী শুভকে দেখতে হাসপাতালে যায়।
শুভকে মেডিকেলের এক বেডে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে দেখে সব বন্ধুদের চোখে নীরব এক বন্যা বয়ে চলল। স্মৃতি শুভর পাশে গিয়ে বসে শুধুই কাঁদতে লাগল আর শুধু একটি কথায় বলল শুভ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আজ তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ি। স্মৃতি বলে তুমি আমাকে এত ভালবাস আমি কখনও বুঝতে পারিনি। আজ তোমার নিজ মুখ থেকে আমি তোমার মনের সেই কথাটি শুনতে চাই। তুমি বল শুভ, তুমি বল - এই বলে স্মৃতি শুভকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। সেই কান্না দেখে শুভর মার চিৎকারে যেন পুরো হাসপাতালে শোকের ছায়া পড়ো পড়ো অবস্থায়।
শুভ যে কখন সকলের অজান্তে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল তা কেউ বুঝতেই পারল না। শুধু ফাঁকি দিতে পারল না তার নির্বাক চোখের জল খানি। তার চোখ থেকে ঝরে পড়া প্রতিটি জলের বিন্দু শুধুই কি যেন বলে গেল, যা সে আজও আর মুখ থেকে একটি বারও বলতে পারল না ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। বলে গেল শুধু তার ঐ দুটি নির্বাক চোখের জল।
শুভর চোখের সেই প্রতিটি জলকণা যেন তার মনের প্রতিটি মূহুর্তের সেই অনুভূতির কথাগুলো বলে গেল। আর সেই অনুভূতিটি যে ঠিক এমন ছিল-----------
ভালোবাসা কি সেই মনের পরীক্ষা ?
অজানা কষ্ট যার ফল,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
নির্বাক চোখের জল।
ভালোবাসা কি সেই হৃদ-স্পন্দন ?
যে পারেনা বলতে কথা,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
ক্ষত হৃদয়ের ব্যাথা।
ভালোবাসা কি সেই বিরহের ব্যাংক ?
যেথা কষ্ট নিয়েছি ঋন,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
থেমে থাকা প্রতিদিন।
ভালোবাসা কি সেই অমূল্য সম্পদ ?
যাকে রেখেছি করে যত্ন,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
তোমার দেখা স্বপ্ন।
ভালোবাসা কি সেই ভেঙ্গে যাওয়া
নিষ্পাপ মনের বিশ্বাস,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
প্রতি মূহুর্তের নিশ্বাস।
ভালোবাসা কি সেই ফেলে আসা স্মৃতি ?
যা চাইলেও ভোলা যায়না,
ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
জমে থাকা শত বায়না।
ভালোবাসা কি সেই শূন্য শব্দ
বিস্ফরনে এ বুকটা,
তবু ভালোবাসি তোমায় বলছে আমার
নির্বাক ‘দু’ চোখটা।
শুভর মনের যত দুঃখ-কষ্ট ছিল সবগুলোই যেন তার দু’চোখ থেকে ঝরে পড়া সামান্য কয়েক ফোটা জলে মিশে গেল। তবে কি তার মনে স্মৃতির জন্য যে ভালবাসা ছিল তা শেষ হয়ে গেল, নাকি তা স্মৃতির কাছে শুধু বেদনাময় স্মৃতিই হয়েই রইল?
এই প্রশ্নটি আজ সকলের কাছে ---------!
এই নির্বাক চোখের জল কি শুভর মত আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এক অদৃশ্য ডায়েরী হয়ে থাকবে?
নাকি স্মৃতির মত শুধু অতীত বেদনাময় মূহুর্ত ভবিষ্যৎের এক অধ্যায় হয়ে থাকবে !
নাকি আবার আমাদের সকলের অবুঝ মনটা হবে এই একটি শিকারির শিকার !
তাই শুভর অবহেলিত মনটা স্মৃতির ভালবাসায় কবির সুরে বলে গেল -------------------
নির্বাক হল আজ মনের আশা
নির্বাক চোখের ভাষা,
নির্বাক হল এ জীবন আমার
নির্বাক ভালবাসা।