Got injured by the attackers on 5 August 2024 at Meherpur.
Distribution of water, Saline and medicines during the protest period among the students.
DB police caught me for supporting the protest and they call me to the police office.
Expressing my thoughts about Ideology.
5 August 2024 morning before protesting and get attracked.
Honorable VC Sir Called Sabbir Ahmed as "Bir".
Some of the Facebook Posts.
Some of the Facebook Posts.
Some of the Facebook Posts.
Post 5 August Activities
Post 5 August Activities
Post 5 August Activities
Post 5 August Activities
একটা বিষয় খেয়াল করেছেন?
আমাদের শিক্ষার্থীদের উপরে এতো নির্বিচারে অন্যায় করা হচ্ছে কেন? কারণ যারা সেটার প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের সন্তানদের বেশিরভাগই এ দেশের শিক্ষার্থী না। যদি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতেন তবে অন্তত বুকটা একটু হলেও কেঁপে উঠতো। একটু থেমে নিজেকে প্রশ্ন করতেন, আমি কাদের সাথে যুদ্ধ করছি। আর কোন বাবা মা আর যাই করুক না কেন নিজের সন্তানদের সাথে বিদ্রোহ করে জীবন নিতে পারেন না। হয়তোবা সাময়িক অভিমানে গোলযোগ হতে পারে, তা বলে চিরবিদায়। এটা মেনে নেওয়া কঠিন, চরমভাবে হৃদয়বিদারক।
দেশের শিক্ষার উপরে যাদের ভরসা নাই তাদের মূল্যবোধ উন্নত হওয়ার মতো কারণ খুঁজে পাইনা। অবশ্যই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন তো দেশেই হওয়া উচিত। অবশ্য দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে খুব একটা শুভকর বিষয়ের সুত্রপতা হবেও না এই অসুস্থ পরিস্থিতিতে। ছিন্নভিন্ন শরীরে দাগ কাটে মনে, তাইতো উচ্চশিক্ষায় বিদেশগামী বেশিরভাগেরই আর দেশে ফিরতে চান না। কিন্তু যারা দেশে থাকতে চান তাদের মনে কাটা দাগ একসময় প্রগাড়রূপ ধারণ করে। ফলস্বরূপ আমরা হারাচ্ছি মেধাবী জনগণ।
আমার এক বন্ধু আমাকে কয়েকদিন আগে বলছিলো মেধাবীরা দেশের বাহিরে চলে গেলেই হয়, যারা স্বল্প মেধাবী তারা কোটা নিয়ে দেশ চালালেই হয়। বন্ধুকে বলেছিলাম সংসার চালানো আর সংসারকে চিত্রকারের মতো ইর্ষণীয় বানাতে একটু মেধার তো প্রয়োজন হবেই। একই কাজ সমভাবে কখনো চিত্রকর করে না, ভিন্ন আঙ্গিকে সেটাকে মনোমুগ্ধকর রূপদান করে। ঠিক তেমনি সোনার বাংলাদেশ কে নতুন রূপে ভবিষ্যতে দেখতে চাইলে চিত্রকরের প্রয়োজন, কোন ফটোকপি মেশিনের না। ছোটবেলা থেকে যা দেখে এসেছি সেই একই অবস্থা চলমান, কোন ধরনের পরিবর্তন নাই। কারণ কি জানেন, আমাদের মানসিকতা। আমরা কয়েকজন ধারণ করি, আর বেশিরভাগ সেটাকে আবদ্ধ করে রাখি। বদ্ধ অবস্থায় ভালো জিনিসও বেশিদিন থাকলে সেটা একসময় দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে এটা বোধহয় আমাদের অজানা কিছু নয়। তারপরেও আমরা আমাদের সুন্দর একটা মনকে আবদ্ধ রেখে জীবনকে সহজ করার নামে করেছি দুর্বিষহ।
ডাস্টবিনের ময়লা জমতে জমতে একসময় সেটা পরিষ্কারের দাবি রাখে নিজে থেকেই। আর আমাদের বিবেকের উপরে ময়লা জমতে জমতে যে সেটা ভাগাড়ে রূপান্তরিত হয়েছে সেটা কি একবারো পিছন ফিরে চোখ বন্ধ করে আত্মা দিয়ে ভেবে দেখেছেন?
যদি না ভেবে থাকেন বা সময় স্বল্পতায় অল্প করেও ভাবার অভিপ্রায় আপনার মধ্যে না জাগে তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ বন্ধ করে ৫ মিনিট ভাবুন। বর্তমান পরিস্থিতি কি আপনার মনে এতটুকুও ঘৃণা বা ক্ষোভের সৃষ্টি করে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তবে আরো ৫ মিনিট ভাবুন এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি, আর উত্তর যদি না হয় তবে বুঝে নিবেন আপনার প্রাপ্ত সুবিধার জন্য একসময় আপনি আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের অসুবিধার কারণ হতে চলেছেন। মনে রাখবেন ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার আপনার পূর্বপ্রজন্ম আমার আপনার কথা ভেবেই চলমান সমস্যার সমাধানে আওয়াজ তুলেছিলো। নাহলে আজও আমরা পরাধীনতাকে কবুল করে নিতাম।
হৃদয়ের আস্ফালনে ভাবতে শিখুন,
আগামীর প্রজন্মকে ইতিহাস নয় সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে অন্তত ইচ্ছে প্রকাশ করুন। কারণ আপনার প্রকাশিত ইচ্ছে সাহস হয়ে ধরা দিবে হাজারো প্রজ্বলিত আলোকশিখায়।
বকবকানি
সাব্বির আহমেদ
১৮ জুলাই,২০২৪
প্রতিবাদের রঙ: আপনি লাল, কালো নাকি সাদা?
ভালোবাসার রঙ যদি লাল হয় তার দোষ আমি লাল ফুলকেই দিব। প্রাচীন কাল থেকে লাল রঙ ব্যবহৃত হয় অগ্নি বোঝাতে। প্যাশন বা আবেগ, আসন্ন বিপদ, ধ্বংসের প্রতীক বা চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই রং। তাই Danger বা বিপদের সংকেত সবসময় লাল দিয়ে বোঝানো হয়। রোমানরা যুদ্ধের বা মিলিটারি ক্ষেত্রে লাল পতাকা ব্যবহার করত শরীরের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ড) জাগাতে বা স্টিমুলেট করতে। এর ফলে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পাওয়াতে তারা বাড়তি শক্তি অনুভব করত। গ্রীকদের যুদ্ধের দেবতা মার্স, লাল রঙের রথ ব্যবহার করতেন সাহসের প্রতীক হিসাবে। তাই আপনার ব্যবহৃত রঙ একটা গোষ্ঠীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এটি তাদেরকে ইন্টারনালি মোটিভেট করে থাকে অধিকার আদায়ে।
রঙের শক্তি অনস্বীকার্য। রং আমাদের আচরণ, মেজাজ, এবং চিন্তা প্রভাবিত করে; তারা আমাদের আত্মা প্রশমিত করতে পারে, আমাদের উত্তেজিত করতে পারে, শত্রুকে উত্তেজিত করতে পারে এবং পদক্ষেপ নিতে আমাদের ক্ষমতায়িত করতে পারে। এটি বিশেষ করে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভে স্পষ্ট, যেখানে আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট রঙের সাথে সংযুক্ত করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে।
রঙ বিপ্লব একটি শব্দ যা ১৯৮০ থেকে ২০১০ এর দশক থেকে সংঘটিত স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় বিদ্রোহের একটি সিরিজ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। ইয়েলো রিবন আন্দোলন - ফিলিপাইনে ১৯৮৬ সালে আবির্ভূত হয়েছিল - এই বিপ্লবী তরঙ্গের উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়। যাইহোক, রং শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রকৃতির প্রতিবাদে ব্যবহার করা হয়নি; অতি সম্প্রতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলিও তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রংকে কাজে লাগিয়েছে।
কালো, সাদা,বাদামী,কমলা,হলুদ,বেগুনী, লাল, নীল রঙ গুলো সবসময় তার নিদর্শন শক্তির জন্যই সুপরিচিত। বোঝার ক্ষমতা ও বিশ্লেষণ করার সক্ষমতায় সময়ের সাথে সাথে তাল মেলাতে এবং বিভিন্ন দেশ ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে রঙ সাহায্য করেছে। রঙ দিয়ে সুখ, ভালবাসা এমন কি কষ্টও বোঝানো হয়। এখানে রঙয়ের কিছু ব্যাবহার তুলে ধরা হলো---
<<লাল>>
আগুন ও রক্তের সাথে সব সময় লাল এর সম্পর্ক। বিপদ, ক্রোধ এবং নিষ্ঠুরতা বোঝানোর
জন্যও লাল রঙ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও লাল রঙ হৃদয়, ভালবাসা এবং উত্তেজনাকে বোঝায়। লাল রঙ আগুন, রক্ত, সহিংসতা, ক্রোধের সাথে জড়িত এবং এটি প্রায়শই বিপদ নির্দেশ করে। বিপদ সংকেত লাল হয় কারণ লাল রঙয়ের ওয়েভ লেন্থ বেশি যার ফলে অনেক দূর থেকে দেখা যায়৷ এর জন্য বিপদ সংকেতে লাল ব্যবহার করা হয়৷ এই রঙ আপনার মতামতকে বহুলাংশে প্রতিফলিত করে।
<<কালো>>
কালো কালো পরিশীলিততা, শক্তি, নাটক, কমনীয়তা, আনুষ্ঠানিকতা এবং রহস্য প্রকাশ করে। কিন্তু এটি মন্দ, অন্ধকার এবং হতাশার প্রতিনিধিত্ব করে; তাই অনেক দেশে কালো রঙ শোক এবং বিষণ্নতার সাথে জড়িত।
কালো রং দ্বারা মূলত আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন বুঝি। এটি মৃত্যু, মন্দ, জাদুবিদ্যা, ভয় এবং শোকের রঙ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দুঃখ ও পীড়াদায়ক বিষয়ের জন্য
কালো একটি যথাযথ রঙ।
<<কমলা>>
কমলা রং সৃজনশীলতা, বদল, শক্তি এবং ধৈর্যকে
বোঝায়। কমলা রঙ শরৎকালকেও বোঝায়।
অপ্রধান রঙ হওয়ার জন্য এটি রঙয়ের মূল পদার্থগুলোকে একত্র করে। কমলা লাল
রংয়ের শক্তি ও হলুদের উল্লাস হিসেবেও
আত্মপ্রকাশ ঘটায়।
<<হলুদ>>
হলুদ হচ্ছে সূর্যের রঙ ৷ আমাদের গ্রহের অবলম্বন। এটি
মূলত প্রাণ, শক্তি, আনন্দ, ভরসা, আশা এবং আত্মজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। এ রঙটি
বন্ধুত্বের ও প্রতীক।
<<সবুজ>>
সবুজ হচ্ছে মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী রঙ। সবুজ বলতে
আমরা মূলত প্রকৃতি যেমন গাছপালা, পাতার রঙকে
বুঝে থাকি। মাঝে মাঝে এটি কিছু নেতিবাচক
(হিংসা, অনভিজ্ঞতা) বৈশিষ্ট্যও তুলে ধরে।
<<নীল>>
নীল হচ্ছে সবচেয়ে স্থির এবং উদাসীন রঙ। আকাশের
রঙ হিসেবে এটি স্বর্গ প্রতিনিধি হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। শাস্ত্রীয় পুরাণে
নীলকে দেবতার রং হিসেবেও উল্লেখ করা
হয়েছে।
<<সাদা>>
সাদা রঙ শান্তি, বিশুদ্ধতা প্রতিনিধিত্বতে ব্যবহৃত হয়। নিরপেক্ষ অবস্থান বোঝাতে বা শান্তি সমঝোতার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
যুগে যুগে রঙকে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বা হয়ে আসছে। তারমধ্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা সকলের জানা উচিত। এটি প্রতিবাদের রঙকে আরো গাঢ় করবে বলে আশা করি।
কিরগিস্থানে ২০০৫ সালের মার্চের "টিউলিপ বিপ্লব" যা রাষ্ট্রপতি আসকার আকেয়েভকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
негрустивсебудетхорошо — Russia, 2021“ এই ঘটনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাশিয়ান শব্দটির অর্থ Don’t be sad, everything will be fine. লেখা অনেক বড় হয়ে যাওয়াতে ঘটনার বিস্তারিত না উল্লেখ করে শুধুমাত্র ঘটনাগুলো উল্লেখ করছি। আপনারা চাইলে এই বিষয়ে বিস্তারিত পোস্ট দিব বা আপনারাও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে জানতে পারেন।
Protests against abortion law — Poland, 2021, Extinction Rebellion — United Kingdom, 2019, Saffron Revolution — Myanmar, 2007, Giant Rubber Ducks — Thailand , 2020 এরকম শত শত ঘটনা আছে যা প্রতিবাদের রঙে রাঙিয়ে পেয়েছিলো সফলতা।
এখন আপনার কাছে যদি স্বাভাবিক মনে হয় তবে আপনি সাদা রঙকেই প্রাধান্য দিতে পারেন। কয়েকদিন আগে পঞ্চায়েত সিরিজ দেখছিলাম। সেখানে সিজন ৩ এর শেষ এপিসোড হামলাতে শান্তি সমঝোতায় বনরাকাস এর সিনটা দেখলেই বুঝবেন আপনার অবস্থান কিরকম। সেক্ষেত্রে সাদাই আপনার জন্য উত্তম রঙ মনে করি। এর ব্যাখ্যা চাইলে কয়েক পেজ লেখা যায়, কিন্তু ইচ্ছে করে না আর। কারণ লেখা বেশিরভাগ পড়ে না, আর যারা বোঝে তারা না পড়েও বুঝে; আর যারা বুঝেনা তাদেরকে শরবত করে গুলিয়ে খাওয়ালেও বুঝবেনা।
আর আমার সমস্যা হচ্ছে আমি সাদাকে সাদা বলি, কালো বলতে পারিনা। এখন সময় আপনাদের, আপনারা কোন রঙটি নিজেদের প্রতিবাদের রঙ হিসাবে ব্যবহার করবেন। কারণ রঙের উপরে আপনার বিবেক প্রতিফলিত হবে যেমনটা উপরে উল্লেখ করেছি।
এখন আপনি লাল, কালো নাকি সাদা??
সাব্বির আহমেদ
বকবকানি
৩০ জুলাই, ২০২৪
কিছু ঘটনা নিজ থেকেই শেয়ার করা প্রয়োজন
বিগত রবিবার ২১ জুলাইয়ের ঘটনা...
রবিবার সকাল থেকে আমার বাসায় কারন্ট ছিলো না, কারণ মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছিলো। অনেক চেষ্টা করলেও রিচার্জ বা লোন নিতে সম্ভবপর হয়নি। পরবর্তীতে গরমে উপায় না পেয়ে সকাল ১২ টার দিকে পল্লী বিদ্যুতের অফিসের দিকে রওনা দিই। পতিমধ্যে কারফিউ চলার কারণে বেশ কয়েকজায় ব্যারিকেট দেখতে পাই। কিছুটা পথ রিক্সায় এবং বাকিটা পথ হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করি। মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে যাওয়ার পরে পুলিশের একজন কমর্কর্তা অত্যন্ত সুন্দর করেই বুঝিয়ে বললেন দুইটার পরে আসেন, তখন কারফিউ কিছুটা শিথিল থাকবে। এখন বিদ্যুত অফিসে কমপক্ষে হাজার দুয়েক মানুষ আছে, ওখানে এখন যাওয়া এলাউ করা হবে না। আমি পুলিশ অফিসারের বুদ্ধিদীপ্ত কথায় বাসায় চলে আসলাম। কারণ উনি বলছিলেন ভাই আমরাও মানুষ, আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারছি। তবে কারফিউয়ের সময়ে একত্রিত হওয়ার কোন নিয়ম নাই।
বাসায় ফিরে আবারো ২.৩০ মিনিটে রওনা দিলাম, এসময় অবশ্য কারফিউ শিথিল থাকাতে রিক্সা যোগেই বিদ্যুত অফিসে গেলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখি এলাহী কান্ড, পা ফেলানোর জায়গা নাই। আর লাইনের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে শুরুর লাইন দেখার ইচ্ছে পোষণ করাটাও মনে হলো পাপ হবে। এতো বড় লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে গল্প করছিলাম। হঠাৎ একজন বললো ভাই আমি সেই সকাল ১১ টায় আসছি এখন বাজে ৩ টা। এরমধ্যে দেখলাম বিদ্যুত অফিসের এক কর্মকর্তা মিনিট দশেক পর পর কয়েক বোতল পানি নিয়ে এসে মানুষকে দিচ্ছিলেন, তবে জমায়েতের তুলনায় সেটা নগন্য ছিলো। কিন্তু ভাইয়ের এই কাজটি দেখে আমি আমার পিছনে দাঁড়ানো এক ভাইকে বললাম আমাকে দশ মিনিট সময় দিবেন? উনি রাজি হওয়াতে উনাকে নিয়ে দোকানে গিয়ে ৪ কেস পানি এবং দুই প্যাকেট স্যালাইন নিয়ে আসলাম। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই পরিমাণ আমার কাছে অনেক বেশি মনে হলেও সবকিছু দিয়ে লাইনের একটা সারিও ঠিকমতো কাভার করা গেলো না।
পানি স্যালাইন দেওয়া দেখে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো, আমি জোরকন্ঠে বলে উঠলাম ভাই এটা আপনাদের জন্য যারা সকাল ৯/১০ টায় এসেছেন উনাদেরকে আগে দিন। আর ততক্ষণে সবাইকে বললাম ভাই পানি খেয়ে অন্তত বোতলগুলো এখানে যেখানে সেখানে ফেলবেন না। আর একটা কথা আমি সবসময় বিশ্বাস করি আপনার যদি কাজের মাধ্যমে মানুষের সামান্যতম উপকার করার ইচ্ছে থাকে তবে আল্লাহ আপনাকে সুযোগ করে দেবেন। বিদ্যুত অফিসের ওই কর্মকর্তা ভাইকে বললাম আপনাকে কি আমি সাহায্য করতে পারি পানি লোড করে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে। উনি খুব খুশি মনে বললেন ভাই অবশ্যই। আমি তৎক্ষণাৎ সকলকে বললাম ভাই আপনাদের খালি বোতলগুলো আমাদেরকে দিন, আমরা পানি দিব।
এরপরে ঘন্টাখানেক চললো। খালি বোতল কালেকশন করে আমি ভিতরে চালান করি আর ওই ভাই সহ আরো দুয়েকজন কর্মকর্তা ফিল্টারিং পানি লোড করতে থাকেন। আর আমি বাহিরে পানি দিতে থাকি সকলকে। সবাই মনে হচ্ছিলো নিমিষেই পানির বোতল শেষ করে দিচ্ছেন খেয়ে। আসলে রোদ এতো ছিলো আর সেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকায় মানুষ অসহায় ছিলো। কারণ লাইন ছেড়ে বাহিরে খেতে যাওয়ার উপায়ও খুব কম ছিলো। এভাবে ঘন্টাখানেকে মোটামুটি ৪/৫ সারি মানুষের কাছে পানি পৌঁছে গেলো। এবং বিদ্যুত অফিসের কয়েকজন ভাইয়ের সাথেও ততক্ষণে সক্ষ্যতা গড়ে উঠলো। এক ভাই আমাকে বললেন আপনার বিল না দেওয়া হয়ে থাকলে আমাদের বলেন আমরা দিয়ে দিচ্ছি। আমি যা বললাম তা শুনে অফিস কর্মকর্তা ওই ভাই মনে হয় অবাকই হয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, " ভাই মানুষকে পানি খাওয়াইয়ে যদি নিজের বিল আগে দিয়ে চলে যায়, তবে সৃষ্টিকর্তা হয়তো মাফ করবেন না। আর যদি এটাতে সামান্য সওয়ার পাওয়ার আশা থাকে সেটাও থাকবে না আর। অবৈধ সুবিধা আজকাল আমরা নিজেদের বাপদাদার সম্পত্তি ভেবে ফেলেছি। কাজের বিনিময়ে লাইন ভেঙে বিল দিলে আমার স্টুডেন্টদের আমি কি নীতির গল্প শেখাবো"। পরবর্তী তে ভাই যখন শুনলেন আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তখন আরো অবাক হয়েছিলেন।
অবশ্য এই অবাক উপস্থিত অনেকেই হয়েছিলেন। কারণ যখন প্রথম পানির কেস নিয়ে আসি তখন অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন ভাই পানি কতো করে। আর এই পানি বিতরণ করে আমার লাভ কি। আমি বলেছিলাম ভাই আত্মার শান্তি লাভ ক্ষতিতে হিসাব করা যায়না। পরে আরো কয়েকজন বলে যে আপনি কোথায় থেকে আসছেন বা এটাতে আপনার উদ্দেশ্য কি? আমি বললাম ভাই আমি ছোটোখাটো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সামান্য শিক্ষক। বিল দিতে এসেছিলাম, কষ্ট দেখে সহ্য না হওয়াতে একটু কষ্ট করে সুখ কিনতেই এই কাজ করছি। অবশ্য পানির কেস নিয়ে প্রথমে গেটে আমাকে আনসার ভাই ঢুকতে দিয়েছিলেন না, ভাবছিলেন ভিতরে পানি বিক্রি করবো। পরে উনাদের এক বড় কর্মকর্তা কে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে উনি আমার আইডি কার্ডের ছবি তুলে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আমরা বলি মানুষ খারাপ, কিন্তু ভাই জানেন কি মানুষ কখনো খারাপ হতে পারেনা। পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে। কারণ পানি ভিতরে প্রবেশ করাতে আশেপাশের অনেকে এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করার জন্য।
ঘন্টাখানেক পানি দেওয়ার পরে এক বৃদ্ধ চাচা এবং চাচির কথা মনের মধ্যে দাগ কাটে। উনি বলেন বাপ শুধু পানিই খাওয়াবা একটা বিস্কুট ও তো দিতে পারো। সেই সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছি। ভাবলাম আমরা বিদ্যুতের কাছে কতোটা জিম্মি হয়ে গেছি। পিছনে থাকা সেই ছোট ভাইকে কিছু টাকা দিয়ে বললান ভাই আমি তো পানি দিচ্ছি আপনি বাহিরে থেকে কিছু বিস্কুট কিনে নিয়ে আসেন। উনি বিস্কুট আনার পরে কয়েকজনকে দেওয়ার পরেই বিস্কুট শেষ। আবারো পানি দেওয়া শুরু হলো সবাইকে। কিছুক্ষণ পরে এক চাচি বলে উঠলেন বাপ গরীব বলে কি এদিকে তোমার চোখ পড়লো না? আমি কইলাম চাচি আমার আর সামর্থ্য কতটুকু, তবে আল্লাহ যতটুকু দিয়েছেন তা দিয়ে চেষ্টা করছি। আরো কিছুক্ষণ কাজ করার পরে মনে হলো এই সুযোগ হয়তো আর কখনো আসবে না, কয়েকদিনের নাস্তার টাকা যদি এখানে দিয়ে দিই তবে তেমন একটা ক্ষতি হওয়ার কথা না। কথামতো বাহিরে এবার নিজে গিয়ে বিস্কুট কিনলাম। কেনার সময়ে এক পুলিশ ভাই ঘটনা শুনে অবাকই হলেন। মনে মনে ভাবছিলেন হয়তো পাগল নাহলে কেউ এসব করে নাকি কখনো। আমিও মনে মনে বলছিলাম সাব্বির পাগলা একদিনে এই সাধারণ হওয়ার বিষয়টি অর্জন করেনি।
ভিতরে এসে বিস্কুট দেওয়া হলো মোটামুটি অনেক মানুষকে এবং সকলের কাছে রিকুয়েষ্ট ছিলো যাতে এক প্যাকেট দুইজন ভাগ করে খায়। এরপরে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত চললো পানি বিতরণ। ততক্ষণে আমার লাইনের জায়গাটি ঠিক কাউন্টারের কাছাকাছি। লাইনে দাঁড়িয়ে মিটারে ব্যালেন্স দিলাম। এরপরে বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে রওনা দিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করেন অফিস ভবন থেকে গেট পর্যন্ত আসার সময়টি কখনো ভুলবো না। অজানা অপরিচিত অনেক মানুষ গায়ে হাত দিয়ে দুআ করছিলেন। বলছিলেন বাপ আল্লাহ তোমাকে কাজ করার এমন সুযোগ করে দিন। এরকম অনেক কথা বলছিলেন, সবগুলো হয়তো প্রকাশিত করার মতো না। কারণ কিছু কথা অনুভূতির, যা আপনাকে সামনে কাজের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই, মানুষের জীবনটা খুব ছোট। এই ছোট্ট জীবনটাকে আমরা অনেক জটিল করে ফেলেছি মানুষ কি ভাববে এটা ভেবেই। একবার সাধারণ ভাবে বাঁচতে শিখুন আমার বিশ্বাস আপনি জীবনে আর দ্বিতীয় কোনদিন ইগো নিয়ে বাঁচার কথা চিন্তাও করবেন না। এই লেখা বা কাজগুলো শেয়ার করা উচিত না, তবুও মাঝেমধ্যে কিছু কাজের বর্ণনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করি যাতে আপনারাও অবসর পেলে সহজ জীবন নিয়ে একটু ভাবার চেষ্টা করেন। প্রথমে একটু হেজিটেশন লাগবে, পরে দেখবেন এতোটা ভালো লাগবে যেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। যেমনটা এই কাজের শুরুতে হয়েছিলো, যে মানুষ কি ভাববে। আমার কি এটা করা ঠিক হবে!! পরমুহূর্তেই ভেবেছিলাম এই কাজ করলে হয়তো মানসম্মান যাবে কিন্তু কিছু মানুষদের একটু হলেও উপকার তো হবে।
আপনার সামান্য ইচ্ছে যদি কিছু মানুষের ক্ষণিকের হাসির কারণ হয় তবে তা করতে কখনো দ্বিধাবোধ করবেন না। আপনাদের #সাব্বির_পাগলা -র একটা সাদামাটা দিনের গল্প শোনার জন্য ধন্যবাদ। আমি মানুষটা যেমন ছিলাম আজীবন তেমন থাকতে চাই।
২৭ জুলাই, ২০২৪