সাচিয়াদাহ-চুনখোলা এমবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় অবস্থিত। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পেরিয়েছে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করছে। সুনামের সঙ্গে পাঠদান করায় পার্শ্ববর্তী খুলনা ও নড়াইলের বহু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি তিনটি জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী চুনখোলা ইউনিয়নের চুনখোলা গ্রামে ছয় একর জমির ওপর ব্রিটিশ আমলে ১৯১৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনা জেলার সাচিয়াদাহ ও বাগেরহাটের চুনখোলা গ্রামের নামে এটির নামকরণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টি তার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শতবর্ষী বিদ্যালয়টি নিয়ে এলাকাবাসীরও গর্বের শেষ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে নতুন রূপ। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে ৬০৩ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ১৩ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাখিমারা, বল্লাহাটি গ্রাম, খুলনার তেরখাদা উপজেলার সাচিয়াদাহ গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে।
পাখিমারা গ্রামের নান্নু মোল্লা। তার বাবা বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনিও এ বিদ্যালয় থেকে পড়েছেন। আর এখন নিজের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া সন্তানও পড়ছে বিদ্যালয়টিতে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি বাগেরহাট জেলার ভৌগোলিক সীমানায় পড়ে। তার পরও আমাদের সন্তানরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। শুধু পড়াশোনা নয়, ঐতিহ্যবাহী চুনখোলা বাজারে সপ্তাহে দুই দিন চার জেলা অর্থাৎ গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, নড়াইল ও খুলনার মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও একত্র হয়।
একই গ্রামের সরদার নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা নড়াইল জেলার শেষ প্রান্তে বসবাস করি। নিজ উপজেলা থেকে পার্শ্ববর্তী মোল্লাহাট উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অনেক বেশি। আমরা মোল্লাহাটের চুনখোলা বাজারে সাংসারিক মালামাল কিনি। সন্তানরাও পড়াশোনা করে সাচিয়াদাহ-চুনখোলা এমবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্য জেলার হলেও একই জায়গায় থাকায় আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা রয়েছে।
বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত নয়ন মুন্সি, তাহারা আক্তার, মহিদুল চৌধুরীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের সব বন্ধুর সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একসঙ্গে তিনটি জেলার ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখা করতে পারায় নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে করে এসব শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পড়াশোনায় সুনাম ধরে রেখেছে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে শতাধিক। গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯০ জন কৃতকার্য হয়। এছাড়া এবার জেএসসি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
১৯৮৪ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছিলেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক শামীম হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমার পিতা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯১ সালে এ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এর পর থেকে নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চেষ্টা করছি। তিনটি জেলার শিক্ষার্থী আমার এ বিদ্যালয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার গুণগত মানও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আশা করি বিদ্যালয়ের এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুন্সি মিজানুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি আমাদের গর্ব। তিন জেলার শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে মিলেমিশে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বাংলাদেশের অন্য কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এভাবে সমানতালে তিন জেলার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে কি না আমার জানা নেই। আমরা চাই বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও লেখাপড়ার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে।
চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে চুনখোলা গ্রামটি বিখ্যাত। চুনখোলা বাজারে একই সঙ্গে চারটি জেলার মানুষ নিয়মিত আসে। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা এ বাজার থেকে মেটায়। সাচিয়াদাহ-চুনখোলা এমবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি জেলার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। আমি নিজেও এই বিদ্যালয়ে পড়েছি। তাই আমরা বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও অবকাঠামোয় বিশেষ নজর দিই। ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টিকে আরো উন্নত ও যুগোপযোগী করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।