About Computer
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাস এর সূত্রপাত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রচলনের অনেক আগেই। এই বিষয়ে প্রথম ধারণা পাওয়া গেছিল প্রায় কয়েকশত বছর আগে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যন্ত্রের আবিস্কার, গাণিতিক মতবাদগুলির প্রয়োগ ইত্যাদির ফলে এটি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসাবে প্রচলিত হয় এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী এক বিরাট শিল্পের ভিত্তি তৈরী হয়।
অ্যাবাকাস-কেই গণনা সম্পাদনের সর্বপ্রাচীন যন্ত্র মনে করা হয় যা আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৭০০-২৩০০ অব্দে সুমেরীয় বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রথম ব্যবহার করা হয়। সুমেরীয় সভ্যতায় ব্যবহার করা অ্যাবাকাস-এর মধ্যে অনেকগুলি কলাম বা স্তম্ভ ক্রমান্বয়ে সাজানো থাকতো যার মাধ্যমে সুমেরীয়রা বিভিন্ন স্ংখ্যার মান প্রকাশ করতো। ১১ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এমনকি, পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় আজও হিসাব-নিকাশের জন্য অ্যাবাকাস যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রথম ডিফারেন্সিয়াল গীয়ার-এর প্রয়োগ হয়েছিল দক্ষিণ-নির্দেশী রথ নামক একটি যানে আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১১১০ সালে, প্রাচীন চীনদেশে। এই গীয়ার পরবর্তীকালে অ্যানালগ কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছিল। চীনদেশে গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর এক অপেক্ষাকৃত আধুনিক সংস্করণ তৈরী করা হয় খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ নাগাদ।
৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতবর্ষের ব্যাকরণবিদ পাণিনি সংস্কৃত ব্যাকরণেরী অষ্টাধ্যায়ী নামক একটি বই লেখেন যার মধ্যে অত্যন্ত নিয়মানুগ ও প্রণালীবদ্ধ উপায়ে ব্যাকরণের ৩৯৫৯টি নিয়ম নথিবদ্ধ করা হয়। এই বইয়ে কিছু বিশেষ ধারণার যেমন মেটারুল (নিয়ম নথিভুক্তকরণের রীতি), রূপান্তর, রিকারশন বা পুনরাবৃত্তি ইত্যাদির প্রয়োগ পাওয়া যায়। এই ধারণাগুলি আধুনিক কম্পিউটার-এর ভিত্তিস্বরুপ।
১৯০১ সালে অ্যান্টিকিথেরা নামক গ্রীক দ্বীপের কাছে সমুদ্রগর্ভে একটি রোমান জাহাজের ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের একটি অত্যাধুনিক গণনাযন্ত্র পাওয়া যায় যা অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র নামে পরিচিত হয়। এক্স-রে স্ক্যানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এটির পরীক্ষা করেন ও সিদ্ধান্তে আসেন যে এর দ্বারা প্রাচীনকালে রোমানরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন গণনার কাজ করতো। এটির কার্যপদ্ধতি আধুনিক অ্যানালগ কম্পিউটারের সাথে তুলনীয়।
মধ্যযুগের ইসলাম দুনিয়াও বিজ্ঞানচর্চায় উন্নত ছিল। মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবু রায়হান আল বিরুনি যান্ত্রিক গীয়ারযুক্ত জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত যন্ত্র - অ্যাস্ট্রোলেব নিয়ে গবেষণা করেন ও আরবীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাবির ইবন আফলা টর্কেটাম নামক যন্ত্র তৈরী করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক সাইমন সিং-এর মতে মুসলিম গণিতজ্ঞরা ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সাংকেতিক-লিপির মতো বিষয়েও এগিয়ে ছিলেন। উদাহরণ হিসাবে প্রখ্যাত আরব পণ্ডিত আল-কিন্দিরকথা বলা যায়। বাগদাদের বানু মুসা ভাতৃত্রয়, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি নিয়ে কাজ করেন ও ইসমাইল আল-জাজারি অটোমাটা বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রবিদ্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে সাফল্য পান। আল-জাজারির বিখ্যাত কিছু আবিস্কার যেমন হাতি-ঘড়ি, দুর্গ-ঘড়ি ইত্যাদির কার্যনীতি প্রোগ্রামযোগ্য অ্যানালগ কম্পিউটারের মতো ছিল ও আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
১৭ শতকের প্রথম দিকে জন নেপিয়ার কর্তৃক লগারিদম পদ্ধতি আবিষ্কারের পর তৎকালীন বিজ্ঞানীদের অনেকের মধ্যে বিভিন্নরকম গণনাযন্ত্র বানানোর আগ্রহ দেখা দেয়। উইলহেল্ম শিকার্ড ১৬২৩ সালে একটি গণনাযন্ত্রের নকশা করেন কিন্তু আগুন লেগে নির্মাণের প্রোটোটাইপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা সম্পূর্ণতা পায় না। ১৬৪০ সাল নাগাদ ফরাসী গণিতবিদ ব্লায়েস পাস্কাল একটি যান্ত্রিক যোগফল গণনাকারী যন্ত্র বানাতে সক্ষম হন যার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার হয় গ্রিক গণিতবিদ হিরোন অফ আলেকজান্দ্রিয়াদ্বারা সৃষ্ট একটি নকশা। ১৬৭২ সালে গটফ্রিড উইলহেল্ম লিবিনিজ স্টেপড্ রেকনার(ডিজিটাল সংখ্যা গণকযন্ত্র) আবিষ্কার করেন যা ১৬৯৪ সালে সম্পন্ন হয়।
১৮৩৭ খ্রীষ্টাব্দে চার্লস ব্যাবেজ একটি বিশ্লেষণধর্মী বা অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন-এর খসড়া তৈরী করেন যার মূল সুবিধাগুলি ছিল - এক্সপ্যান্ডেবেল মেমরি (বিস্তারযোগ্য যান্ত্রিক স্মৃতিশক্তি), গাণিতিক হিসাব করার ক্ষমতা, যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, লুপ ও কন্ডিশনাল ব্রাঞ্চিং(যা আধুনিক প্রোগ্রামিং ভাষাগুলিতে পাওয়া যায়) ইত্যাদি। এই যন্ত্রটিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার বলে স্বীকার করে থাকেন এবং ট্যুরিংসমতুল্য বলেও মনে করা হয়।
দ্বিমূল তত্ত্ব বা বাইনারী লজিক(যাতে সমস্ত তথ্য ০ ও ১ এই দুই সংখ্যার সমণ্বয়ে প্রকাশ করা হয়) হল আধুনিক কম্পিউটারের ভিত যার ধারণা তৈরী হয়েছিল ১৭০২ সালে গটফ্রিড লাইবনিৎস-এর হাতে। এর দেড়শো বছরেরও বেশি সময় বাদে জর্জ বুল তার বুলিয়ান বীজগণিত প্রকাশ করেন যার সাহায্যে যাবতীয় গণনার পদ্ধতিকে গণিতের সাহায্যে বোঝানো সম্ভব হয়।
এর সমান্তরালভাবে মেকানিকাল শাখারও অনেক উন্নতি ঘটে যার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিল তৎকালীন শিল্প বিপ্লব। ফরাসী বয়নশিল্পী যোসেফ মেরী জ্যাকার্ড এক অভিনব বয়নযন্ত্র কাজে লাগান যা একাধিক ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চড্ কার্ড দিয়ে চালিত হত। যদিও এই যন্ত্র সংজ্ঞানুযায়ী কম্পিউটারের মতো ছিল না, কিন্তূ এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বুঝেছিলেন কিভাবে ০ ও ১ এর সাহায্যে একটি যন্ত্রকে নির্দেশ পাঠানো যায়।
১৯২০ সালের আগে পর্যন্ত, কম্পিউটার বলতে কেরাণী জাতীয় কর্মচারীদের (সাধারণত মহিলা) বোঝান হত। এই কর্মচারীদের কাজ ছিল বাণিজ্যিক অফিস, সরকারী কার্যালয়, গবেষণাকেন্দ্র, সামরিক বাহিনীর জন্য, ক্যালেন্ডার প্রস্তুতি বা জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদির প্রয়োজনে বিভিন্ন ছোটবড় গণনাকার্য সম্পন্ন করা।
১৯৩০ এর দশকে কম্পিউটিং মেশিন কথাটি এক ধরনের যন্ত্রকে বোঝাতে শুরু করে যা সেইসব গণনাকারী কর্মচারীদের কাজ যান্ত্রিকভাবে করতে পারতো। তৎকালীন চার্চ-ট্যুরিং থীসিস অনুযায়ী, কোন গাণিতিক সমাধানপদ্ধতিকে তখনই এফেক্টিভলি ক্যালকুলেবেল (effectively calculable) অর্থাৎ গণনাযোগ্য বলা যায় যা কোন পূর্বার্জিত জ্ঞান ছাড়াই শুধুমাত্র কাগজ-কলমে অণুসরন করে সমাধান করা সম্ভব। কম্পিউটিং মেশিন-এর ধারণা এই তত্ত্বের অনুরুপ ছিল। এই যন্ত্রগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হত - অ্যানালগ (যাতে মূলতঃ তুলনার সাহায্যে কোন গণনা বা পাঠ নেওয়া হয়) ও ডিজিটাল (যাতে গণনা বা পাঠ নেওয়া, প্রকাশ করা এবং তথ্য বাঁচিয়ে রাখা সবই হয় সংখ্যার সাহায্যে)।
১৯৪০ এর দশকে কম্পিউটিং মেশিন কথাটিকে সরিয়ে কম্পিউটার শব্দটি জায়গা করে নেয়। এই যন্ত্রগুলি যান্ত্রিক উপায়ে মানে শুধু নির্দেশ মেনে বিভিন্ন গণনাকার্য সম্পন্ন করতো যা ১৯৩৬-এ প্রকাশিত ট্যুরিং মেশিন (জনক অ্যালান টুরিং) মতো কার্যপদ্ধতি বিশিষ্ট ছিল।
মূল নিবন্ধসমূহ: চার্লস ব্যাবেজ এবং অ্যাডা লাভলেস
চার্লস্ ব্যাবেজকে কম্পিউটিং বিষয়টির অন্যতম পথিকৃৎ বলে মনে করা হয়। ইনিই ১৮১০ সালে প্রথম যান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার জন্য যন্ত্রের ব্যবহার-এর কথা ভাবেন। এই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে চার্লস্ প্রথমে ৮ দশমিক ঘর পর্যন্ত সংখ্যাগণনা ও পরে ২০ দশমিক ঘর পর্যন্ত সংখ্যাগণনা করতে পারবে এমন যন্ত্র তৈরী করেন। ১৮৩০ সাল নাগাদ ব্যাবেজ একটি যন্ত্র তৈরী করার পরিকল্পনা করেন যা পাঞ্চড্ কার্ড দিয়ে চালিত হবে ও সিক্যুয়েন্সিয়ালি বা ক্রমানুযায়ী একের পর এক কার্য সম্পাদন করতে পারবে। এই যন্ত্রটি আধুনিক কম্পিউটারেরই প্রথম সংস্করণ ছিল ও অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
এডা লাভলেস্ ওরফে অগাষ্টা এডা বাইরন ছিলেন কবি লর্ড বাইরনের মেয়ে। ছোট থেকেই এডা তার মায়ের ইচ্ছানুযায়ী গণিতের চর্চা শুরু করেন। চার্লস্ ব্যাবেজ-এর অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন প্রকল্পে এডা সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। এই কাজে অংশগ্রহণের দ্বারা তিনি গণিত ও যন্ত্রবিদ্যা চর্চা করার সুযোগ কাজে লাগান ও অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন-এর ধারণাকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে অধ্যয়ন ও আত্মস্থ করেন। এই সময়ে এডা বারনৌলি সংখ্যা গণনা করার অ্যালগরিদম্ বা ধাপে ধাপে সমাধান করার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেন যাকে সর্বপ্রথম কম্পিউটার অ্যালগরিদম্ বলে স্বীকার করা হয়। যদিও এইসব পরিকল্পনা বা পদ্ধতির বাস্তবে প্রয়োগ তিনি তার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে তার অবদান পরে স্বীকৃতি লাভ করে।
মূল নিবন্ধ: অ্যালান টুরিং
১৯৩১ সালে কার্ট গডেল তার ইনকমপ্লিটনেস থিওরেম বা অসম্পূর্নতার উপপাদ্য প্রকাশ করেন। এই উপপাদ্য অনুসারে যেকোন গাণিতিক ধারা বা মডেলে(যা এক বা একাধিক স্বতঃসিদ্ধের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়) অসম্পূর্নতা থাকতে পারে। এই অসম্পূর্নতার অর্থ হল এই যে এখানে একাধিক (অনুমান) বা (বিবৃতি) থাকবে যাদেরকে গণিতের সাহায্যে প্রমাণ করা সম্ভব হবে না। এই উপপাদ্য এবিষয়ে আরও গবেষণার সূচনা করে এবং এর ফলে মিউ রিকার্সিভ ফাংশন,ল্যাম্বডা-ডিফাইনেবেল ফাংশন ধারণাগুলি সামনে আসে।
১৯৩৬ সালে (আলোঞ্জ চার্চ) ও ট্যুরিং চার্চ-ট্যুরিং থীসিস প্রকাশ করেন। চার্চ-ট্যুরিং থীসিস অনুযায়ী, কোন গাণিতিক সমাধানপদ্ধতিকে তখন (এফেক্টিভলি ক্যালকুলেবেল) অর্থাৎ গণনাযোগ্য বলা যায় যা কোন পূর্বার্জিত জ্ঞান ছাড়াই শুধুমাত্র কাগজ-কলমে অণুসরন করে সমাধান করা সম্ভব। এটি ছিল আধুনিক কম্পিউটার অ্যালগরিদম্-এর সরলতম মডেল প্রকৃতির যা পর্যাপ্ত সময় ও মেমরি থাকলে, যান্ত্রিকভাবে যেকোন সমাধান করতে সক্ষম। ট্যুরিং প্রকাশিত ট্যুরিং মেশিন-এর ধারণাও আধুনিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। যে কাজ এই মেশিন করতে পারে তা ট্যুরিং কম্প্লিট বলে গণ্য হয়।
যদিও বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান কে কম্পিউটারের জনক বলা হয়, কিন্তু অনেকের মতেই আসলে অ্যালেন ট্যুরিং-এর তত্ত্ব থেকেই কম্পিউটারের ধারণা শুরু হয়। উদাহরণস্বরুপ, (লস্ অ্যালামস্) গবেষণাগারের বিজ্ঞানী স্ট্যানলী ফ্র্যাঙ্কেল-এর একটি চিঠির কথা উল্লেখ করা যায় যার বয়ান নিম্নরুপ:
আমি জানি যে ১৯৪৩ বা ৪৪ সালে নিউম্যান ট্যুরিংয়ের কাজের মৌলিক গুরুত্ব সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত ছিলেন ... ভন নিউম্যানের কাছেই আমি সেই কাজটির(ট্যুরিংয়ের তত্ত্ব) কথা প্রথম শুনি করেছিলাম এবং তার অনুরোধে আমি এটি যত্ন সহকারে অধ্যয়ন করি। অনেকে "কম্পিউটারের পিতা" (শব্দবন্ধের আধুনিক অর্থে) বলে ভন নিউম্যানকে প্রশংসিত করেছেন কিন্তু আমি নিশ্চিত যে নিউম্যান নিজেই এই ভুলটি করেননি। সম্ভবত নিউম্যানকে কম্পিউটারের ধাত্রী বলা যেতে পারে, তবে তিনি দৃঢ়ভাবে আমায় জানিয়েছিলেন, এবং আমি নিশ্চিত অন্যদেরকেও জানিয়েছিলেন যে এই মৌলিক ধারণা ট্যুরিং-এর তত্ত্বের কারণেই আসে।
১৯৩০ সাল পর্যন্ত যেসব ইলেকট্রনিক সার্কিট বা বৈদ্যুতিক বর্তনী তৈরী হত সেগুলি সবই ছিল প্রয়োজনভিত্তিক, অর্থাৎ এর কোন নিয়মমাফিক লিপিবদ্ধ তাত্ত্বিক প্রকাশ ছিল না। এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে নিপ্পন ইলেকট্রিক কোম্পানী(এনইসি)-এর জনৈক ইঞ্জিনীয়ার নাকাশিমা আকিরা কয়েকটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এর দ্বারা আকিরা দেখান যে দুই প্রান্ত বিশিষ্ট রিলে বর্তনী চালনা করার যোগ্য দুই মান(০ ও ১) বিশিষ্ট একটি নতুন ধরনের বীজগণিতের কথা বলেন। এই বীজগণিত-এর সুবিধা ছিল এই যে এর সাহায্যে সুইচিং সার্কিট-এর কার্যপদ্ধতি খাতায়-কলমে গাণিতিকভাবে দেখানো ও গণনার মাধ্যমে বার করা সম্ভব হয়।আকিরা বস্তুত (জর্জ বুল) আবিস্কৃত বুলিয়ান বীজগণিতের-ই পুনরুদ্ভাবন করেন। সুইচিং সার্কিট তত্ত্ব (ডিজিটাল কম্পিউটার) তথা সমস্ত (ডিজিটাল যন্ত্রের) বুনিয়াদ হিসাবে ব্যবহার হয়।
১৯৩৭ সালে নাকাশিমার এই কাজ (ক্লড এলউড শ্যানন্)-এর স্নাতকোত্তর গবেষণাপত্রে "রিলে এবং স্যুইচিং সার্কিটগুলির একটি সাংকেতিক বিশ্লেষণ". উদ্ধৃত করা হয়। শ্যানন্ বুলিয়ান বীজগণিতের প্রয়োগের সাহায্যে প্রথমে তড়িচ্চুম্বকীয় রিলে ও পরে বিভিন্ন যুক্তিচালিত ডিজিটাল সার্কিট করার কথা বলেন যার ব্যাপক ব্যবহার বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিদ্যায় পরবর্তীকালে দেখা যায়।
পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রাম-চালিত কম্পিউটার ছিল জেড থ্রি যা ১৯৪১ সালে কোনরাড যুসে তৈরী করেন। ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক রাউল রোহাস প্রমাণ করেন যে এই নীতিগতভাবে যন্ত্রটি ট্যুরিং কম্প্লিট।. এরপর কোনরাড যুসে এস২ নামক গণনাকারী যন্ত্র যা প্রথম (প্রসেস কন্ট্রোল যন্ত্র ও বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার ব্যবসার প্রতিষ্ঠা করেন যা বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উৎপাদিত কম্পিউটার জেড ফোর তৈরী করে। এছাড়াও তিনি প্রথম হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষা প্লানক্যালকুল্ তৈরি করেছিলেন।
এরপর ১৯৪৮ সালে আসে দুনিয়ার প্রথম স্টোরড্-প্রোগ্রাম কম্পিউটার যা মেমরিতে স্টোর করা প্রোগ্রাম বা নির্দেশাবলী নির্বাহ করতে পারতো। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল সোসাইটি কম্পিউটার মেশিন ল্যাবরেটরী-এর প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স নিউম্যানের অনুপ্রেরণায় ফ্রেডেরিক উইলিয়ামস, টম কিলবার্ন ও জিওফ টুটিল এই তিনজন গবেষক ট্যুরিং মেশিনের কার্যনীতির উপর ভিত্তি করে ম্যাঞ্চেস্টার এসএসইএম বা ম্যাঞ্চেস্টার বেবি(ডাকনাম)নামক এই কম্পিউটারটি তৈরী করা হয়।
এরপর ১৯৫০ সালে ট্যুরিং-এর তত্ত্বের ভিত্তিতে পাইলট এইস নামক একটি ছোট মাপের বা স্মল-স্কেল প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটার তৈরী হয় ব্রিটেনের ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরি-তে। ১ মেগাহার্জ স্পীডবিশিষ্ট ও আধুনিক রিডিউসড ইন্সট্রাকশন সেট কম্পিউটার নির্মানকৌশল-এর ধাঁচে বানানো এই কম্পিউটারটি কিছুদিনের জন্য পৃথিবীর দ্রুততম কম্পিউটার-এর শিরোপা পায়।
ক্লড শ্যানন্ ১৯৪৮ সালে তার গবেষণাপত্র এ ম্যাথমেটিকাল থিউরি অফ কমিউনিকেশন -এ ইনফরমেশন থিওরি-এর অবতারণা করেন যাতে একজন প্রেরকের তথ্য এনকোড বা সঙ্কেতে পরিণত করার জন্য সম্ভাব্যতা তত্ত্ব ব্যবহারের কথা তিনি আলোচনা করেন। এই গবেষণাপত্রটি পরে ডেটা কম্প্রেশন ও ক্রিপ্টোগ্রাফীর সূচনা করে।
বিমান ধ্বংস নিরীক্ষণ পদ্ধতি যা রাডার ইমেজকে শত্রু বিমান চিহ্নিত করতে উপযোগী করে, নরবার্ট উইনার়় এটাকে সাইবারনেটিক্স বলে অভিহিত করেছেন। সাইবারনেটিক্স শব্দটির উদ্ভব গ্রীক স্টিরস্ম্যন থেকে। তিনি ১৯৪৮ সালে সাইবারনেটিক্স তত্ত্বটি প্রকাশ করেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করেছিলো। উইনার তার মস্তিস্কের তরঙ্গ বিশ্লেষনের সাথে গণনা , গণনাকারী যন্ত্র,মেমোরি ডিভাইস এবং বিভিন্ন ইন্দ্রীয় সাদৃশ্যতাকে তুলনা করেছেন।
কম্পিউটারের প্রথম প্রকৃত ত্রুটি একটি মথ বা পোকার কারণে হয়েছিলো। পোকাটি হার্ভার্ড মার্ক ২ নামক কম্পিটারের ম্যগনেটিক তরঙ্গের মধ্যে আটকে ছিল।ছিল। গ্রেস হোপার ঐ সময়ের আমেরিকান নৌবাহিনীর সম্ভাব্য একজন রেয়ার এডমিরালকে ঐ বাগের জন্য ভুলভাবে দায়ী করা হয়। ধারণা করা হয় ১৯৪৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি এই বাগটি করেন। যদিও এই তারিখটি নিয়ে অনেকেই দ্বিমত করেন এবং তাদের হিসাব মতে ১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম এই ত্রুটির ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো।(বিস্তারিত জানতে সফটওয়্যার বাগ দেখুন)
মূল নিবন্ধসমূহ: জন ভন নিউমেন এবং দি ভন নিউমেন তত্ত্ব
১৯৪৬ সালে কম্পিউটার নির্মানশৈলির উপর ভন নিউমেন আর্কিটেকচার নামক মডেলটি প্রবর্তিত হয়। ১৯৫০ সাল পরবর্তী সকল কম্পিউটারের ডিজাইন ভন নিউমেন মডেলের সাথে সাদৃশ্য রেখে করা হয়েছে। এই মডেলটি মেশিনের কার্যপ্রনালী ও তথ্যকে মেমোরি ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়ায় তাকে সময় উপযোগী প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই মডেলটি তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিতঃ এরিথমেটিক লজিক ইউনিট (এএলইউ), মেমোরি, এবং ইন্সট্রাকশন প্রসেসিং ইউনিট (আইপিইউ)। ভন নিউমেন মেশিন ডিজাইনে ইন্সট্রাকশন প্রসেসিং ইউনিট (আইপিইউ) মেমোরিতে এড্রেস পাঠায়। তারপর মেমোরি যদি প্রতিউত্তরে কোন নির্দেশনা দেয় তাহলে এটা ইন্সট্রাকশন প্রসেসিং ইউনিট (আইপিইউ) তে যাবে, আর যদি কোন তথ্য দেয় তাহলে তা এরিথমেটিক লজিক ইউনিট (এএলইউ) তে যাবে।
ভন নিউমেন মেশিন ডিজাইন যে কোন ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে রিস্ক (রিডিউসড ইন্সট্রশন সেট কম্পিউটিং) পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যে কোন কাজ একুশটি ধাপের মাধ্যমে শেষ হয় (যা সিস্একর বিপরীত পদ্ধতি, জঠিল কার্যধাপ গণনা, কার্যধাপ সেটের আলাদাভাবে পছন্দ করার জন্যঅনেক কার্যপদ্ধতি আছে )। ভন নিউমেন আর্কিটেকচারে এক্যুমুলেটরের(এটি একটি রেজিস্টার যা গাণিতিক কাজের ফলাফল জমা রাখে) সাথে মেইন বা আদি মেমোরি হচ্ছে সেই দুইটা মেমোরি যা কাজের জন্য পূর্বে উল্ল্যেখ করা হয়। এখানে অপারেশোন বা কাজের মধ্যে সহজ গাণিতিক কাজ (এইগুলি এএলইউ দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগের কাজ হয়), শর্তসাপেক্ষ শাখার কাজ(যেগুলা সচরাচর ব্যবহৃত হয় যেমনঃ যদি
বিবৃতি অথবা যখন
ঘূর্ণন প্রক্রিয়া) এবং মেশিনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যৌক্তিক কাজ যেমনঃ এক্যুমুলেটর থেকে মেমোরিতে অথবা এর বিপরীত কাজ সম্পন্ন হয়। ভন নিউমেন আর্কিটেকচার ভগ্নাংশ ও কাজের বিভিন্ন ধাপকে ডাটা টাইপ হিসেবে গ্রহণ করে। অবশেষে ভন নিউমেন আর্কিটেকচার যেহেতু একটি সরল বিষয় তাই এর রেজিস্টার পরিচালনা করাও সরল। ডাটা এবং কার্যধাপকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাখ্যা ক্রার জন্য আর্কিটেকচারটি সাতটি রেজিস্টারের একটি সেট ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ "আইআর" (ইন্সট্রাকশন রেজিস্টার), " আইবিআর" (ইন্সট্রাকশন বাফার রেজিস্টার), "এমকিউ" (মাল্টিপ্লায়ার কুয়েশান্ট রেজিস্টার), " এমএআর" (মেমোরি এড্রেস রেজিস্টার), এবং "এমডিআর" (মেমোরি ডেটা রেজিস্টার). । আর্কিটেকচারটি মেশিনের মধ্যে প্রগ্রামের অবস্তান যাচাইয়ের জন্য প্রোগ্রাম কাউন্টার ("পিসি") ব্যবহার করে থাকে।