আজকাল অনেক পূর্ণবয়স্ক মানুষদের দিকে তাকালে যেটা সবচেয়ে বেশি আমার চোখে লাগে সেটা হলো তাদের বিশাল পেট | অনেকের ই মুখ শুকনো কিন্তু পেট বড় | শুনে হয়ত অনেকেই হাসবেন, কিন্তু আপনি কি জানেন এই বিশাল সাইজের পেট আপনার জন্য কতটা ভয়ংকর? পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৯.৫ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫.৫ ইঞ্চির বেশি পেট এর সাইজ থাকলে হার্ট এর অসুখ, ডায়বেটিস হতে পারে | আর এই সবচেয়ে বিপদজনক পেট নিয়েই আমরা বাঙালিরা বসে আছি |এছাড়া বিশাল পেট (waist line or abdominal girth) কিন্তু আপনার সমস্ত সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় , আপনি সবার হাসির পাত্র হন | যারা সারাদিন বসে কাজ করেন, তেমন কোনো কাজ কর্ম বা নড়া চড়া করেন না, তাদের জন্য এটা প্রকট আকার ধারণ করে |
পেট কমানোর নিয়মাবলী :
পেট এর ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত : শুধু কার্ডিও করলেই হবে না , আপনাকে পেটের ব্যায়াম ও করতে হবে | কার্ডিও( কমপক্ষে সপ্তাহে ৩ দিন ৩০ মিনিট ) করার পরে পেটের ব্যায়াম করবেন | সপ্তাহে ৩ দিন (এক দিন পর পর)পেটের ব্যায়াম ই যথেষ্ট | এর বেশি করবেন না | পেটের মাসেল এ বেশি চাপ দিবেন না | পেটের ব্যায়াম করার সময় ধীরে ধীরে দম নিবেন এবং ছাড়বেন | |উপরে উঠার সময় দম ছাড়বেন , নিচে নামার সময় দম নিবেন |ঘাড়ের মাসেল এ যেন চাপ না পড়ে | পেটের ব্যায়াম করার সময় আপনার posture যেন ঠিক থাকে | পেটের ব্যায়াম করার সময় পেটের মাসেল গুলোর ঠিক মত ব্যায়াম হচ্ছে কিনা তা নজর দিন | প্রতিটি ব্যায়াম ১৫-২০ বার করে তিন সেট করবেন | প্রতিটা ব্যায়াম আস্তে আস্তে করবেন | তাড়া হুড়ো করবেন না |পুরা শরীরের ব্যায়াম গুলো করলে পেটের ও আশে পাশের মাসেল গুলো র ব্যায়াম হবে |পেটের জনপ্রিয় একটি ব্যায়াম হলো crunch | কিভাবে করবেন ক্লিক করুন | এটা ছাড়া ও yoga, pilates , ধরনের ব্যায়াম গুলো করতে পারেন | Oblique এবং টুইস্ট ও ভালো | আরেকটি খুব ভালো পেটের ব্যায়াম হলো reverse crunch |কিভাবে করবেন ক্লিক করুন |এছাড়া cardio dance , kickboxing, stepper, ইত্যাদি কার্ডিও ব্যায়াম গুলো পেট কমাতে করতে পারেন | শুধু হাটলে বা কার্ডিও করলে জীবনেও পেট এর শেপ নরমাল বা flat হবে না| আবার শুধু পেট এর ব্যায়াম করলেও কিন্তু হবে না, কার্ডিও করতেই হবে | কার্ডিও করার সময় পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখবেন |
সঠিক ডায়েট : আপনি পেটের ব্যায়াম করলেন, আর বেশি বেশি খেলেন, তাহলে কিন্তু হবে না | ব্যালান্স ডায়েট করতে হবে , বারে বারে অল্প অল্প খেতে হবে বা portion control করতে হবে | Junk/fast food, মিষ্টি খাবার বাদ দিতে হবে | ক্যালরি মেপে খাবার খেতে হবে |কম ক্যালরি যুক্ত খাবার, ফল, সালাদ, আঁশ জাতীয় খাবার, সবজি খেতে হবে বেশি বেশি | প্রচুর পানি ও খেতে হবে | ভাত, সাদা আটা , আলু, পাস্তা বা নুডুলস ইত্যাদি কম খেতে হবে বা বাদ দিতে হবে | অতিরিক্ত ভাত বা শর্করা খাবার খাওয়ার ফলে বাঙালিদের পেট বেড়ে যায় |
জীম এ যাবার অভ্যাস করতে পারলে ভালো | সেখানে আপনি পেটের ব্যায়াম এর সম্পূর্ণ গাইড পাবেন | এছাড়া সেখানে অনেক মেশিন আছে যেগুলো পেটের ব্যায়াম এর জন্য ভালো | পেটের ব্যায়াম এর কিন্তু শেষ নেই |পেটের ব্যায়াম এর সাথে oblique, waist line এর ও ব্যায়াম করতে হবে |কি ভাবে পেটের ব্যায়াম করবেন তা জেনে বুঝে করা ভালো | এছাড়া যাদের ব্যাক পেইন আছে তারা অনেক পেটের ব্যায়াম ই করতে পারবেন না | তাই বুঝে শুনে করবেন |
আপনার posture ঠিক করুন: সঠিক posture এর অভ্যাস না করলে পেট ফোলা ফোলা দেখাবে | যখন বসবেন না দাড়াবেন , সোজা হয়ে থাকবেন | আপনার মেরুদন্ড যেন সোজা অবস্থায় থাকে |দাড়ানোর সময় পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেন টান টান (বেশি নয় ) বা একদম সোজা থাকে | যেমন : কান দুটো কাঁধ বরাবর, কাধ কোমর বরাবর, কোমর হাঁটু বরারবর , হাটু পায়ের পাতা বরাবর থাকবে | বসার সময় কোমর পর্যন্ত টান টান থাকবে | আপনার কাঁধ এর সামনের দিকে বা চেস্ট পেছন দিকে টান টান থাকবে | দাড়ানো বা বসার সময় পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখবেন|এই ভাবে অভ্যাস করুন | উল্টা পাল্টা ভাবে দাড়ানো বা বসা বাদ দিন|
ফিতা দিয়ে মাপুন :আপনার পেট এর মাপ (উপরে উল্লেখিত) বিপদ জনক পর্যায় আছে, নাকি উন্নতি হচ্ছে তা জানতে সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে ফিতা দিয়ে মাপুন | খেয়াল করুন কেমন পরিবর্তন হচ্ছে |একটি নোটবুকে লিখে রাখতে পারেন এবং পরবর্তিতে তা দেখে বুঝতে পারবেন কি রকম উন্নতি হচ্ছে |কি ভাবে মাপ নিবেন? ক্লিক করুন
ধীরে চলুন : অধৈর্য হবেন না , কোনো কিছুর ফল ই তাড়া তাড়ি আসে না | ধৈর্য ধরুন ও লেগে থাকুন | কমপক্ষে দুই থেকে চার সপ্তাহ লাগতে পারে পেট কমা শুরু করতে| এটা অবশ্য অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে | যেমন: আপনার বয়স, খাদ্যাভাস, কোন ধরনের ব্যায়াম করেন ইত্যাদি র উপর |
হেলদি লাইফ স্টাইল মেনে চলুন : যেমন : সময় মত খাওয়া, ঘুমানো , মদ বা সিগারেট না খাওয়া , রাতে ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে খাওয়া , নিয়মিত শরীর চর্চা করা , বেশি বেশি না খাওয়া ইত্যাদি |হেলদি লাইফ স্টাইল কি জানতে ক্লিক করুন |
সপ্তাহে একদিন অন্য রকম খান : প্রতিদিন নিজেকে বঞ্চিত করবেন না, সপ্তাহে একদিন প্রিয় খাবার খান, তাহলে আপনার হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে, আপনার শরীর সব রকমের খাবার হজম করতে পারবে | হতে পারে সেটা বাইরের খাবার, বিরিয়ানি বা মিষ্টি |
ডাক্তার দেখান: এবপরে ও পেট না কমলে অথবা ফোলা ফোলা দেখালে (swelling) আপনার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে, যেমন : গ্যাসের সমস্যা | সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখাতে হবে |
উপরের নিয়ম গুলো মেনে চললে আপনার পেট কমতে বাধ্য | সঠিক নিয়মে খাওয়া আর শরীর চর্চা ই হলো পেট কমানোর আদর্শ নিয়ম | অনেককেই দেখেছি পেট কমানোর জন্য ab king pro, sauna belt ইত্যাদি ব্যাবহার করেন | আমার জানা মতে এগুলো তে তেমন কাজ হয় না | তাছাড়া ওয়ার্ম আপ না করে কোনো পেট এর ব্যায়াম করলে তেমন কোনো কাজ হয় না |
শুধু মাত্র উপরে উল্লেখিত মাপ থাকলেই যে এই টিপস গুলো মেনে চলবেন তা কিন্তু নয়, যদি আপনার পেট আরো টোন করতে বা কমাতে চান তাহলেও এগুলো কার্যকরী |
বাইসেপ কার্ল কি?
বাইসেপ কার্ল একটি ওয়েট ট্রেইনিং/স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং ব্যায়াম, যা biceps brachii muscle এর জন্য করা হয়|এই মাসেল সুগঠিত ও শক্তিশালী করতে এটি করা হয়|
প্রয়োজনীয় পরিমান ওয়েট হাতে নিয়ে হাত দুটোকে ওপরে ও নিচে নিয়ে বাইসেপএর মাসেলে চাপ দিয়ে এটি করা হয়|
কিভাবে করবেন?
প্রথমে দুই হাতে দুটো ডাম্বেল নিন| ডাম্বেল দুই হাতে নিয়ে, হাত নিচের দিকে শরীরের/ থাইয়ের দুই পাশে রাখুন (ছবির মত)| কনুই শরীরের সাথে প্রায় লেগে থাকবে ও হালকা ভাঙ্গা থাকবে |
আঙ্গুল দিয়ে ডাম্বেলের হাতল ধরে, বা হাতের তালুর ওপর ডাম্বেলের হাতল ধরে, হাতের তালু শরীরের সামনের দিকে বের হয়ে থাকবে|
সোজা হয়ে দাঁড়ান| মেরুদন্ড ও কাঁধ, মাথা একদম সোজা, চোখ/ দৃষ্টি সামনের দিকে রাখুন|
শরীরের ভারসাম্য সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য, পা দুটোকে ঘাড় বরাবর ফাঁক করুন|
দুই পায়ের হাঁটু সামান্য ভেঙ্গে সামনের দিকে থাকবে|
পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখুন|
এবার জোরে দম ছাড়ুন
ডাম্বেল দুটো সামনের দিকে আস্তে আস্তে বাইসেপে প্রেসার দিয়ে কাঁধ বরাবর আনুন|
এই সময় কনুই থেকে কাঁধ পর্যন্ত নড়বে না| শুধু মাত্র কনুই থেকে নিচের দিকের হাত নড়বে বা শুধু কনুই টুইস্ট করবে নিচের হাতের জন্য|
এই অবস্থায় আপনি যা অনুভব করবেন তা হলো –বাইসেপে প্রেসার অনুভব করুন ও বাইসেপ সংকুচিত করুন| এই অবস্থায় ১ সেকেন্ড ধরে রাখুন|
এবার দম নিন ও আস্তে আস্তে আবার ডাম্বেল সহ হাত দুটো নিচের দিকে প্রথম অবস্থায় আনুন|এভাবে একটি repetition হবে|
এভাবে ১-৩ সেট করবেন, ৮-১৫ বার করে |প্রতি সেট শেষ হলে ৩০-৬০ সেকেন্ড রেস্ট নিয়ে করলে ভালো|
হাত ওপরে ওঠানোর সময় ৩ সেকেন্ড এবং নিচে নামানোর সময় ৩ সেকেন্ড সময় নিবেন
পুরা সেট শেষে ভালো মতো হাতের/বাইসেপ এর স্ট্রেচিং করবেন ও এক চুমুক পানি খাবেন|
ব্যায়ামটি সঠিক হচ্ছে কিনা বা আপনার posture ঠিক আছে কিনা তা বুঝার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে করতে পারেন|
কত ওয়েট নিবেন?
শুরুতে ২-৫ পাউন্ড নিতে পারেন| পরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী বাড়াতে পারেন|তবে সে ক্ষেত্রে অবশই একজন ফিটনেস ট্রেইনারের সাথে পরামর্শ করে করতে হবে|
লক্ষ্য রাখবেন :
যে কোনো ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়ামের শুরুতে অবশ্যই শরীর ভালো মতো ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে|
তারপর ভালো মতো স্ট্রেচিং করতে হবে, যে মাসেলের জন্য ওয়েট ট্রেইনিং করা হবে তার জন্য|
এবং প্রতিটি ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম শেষ করে, ভালো মতো স্ট্রেচিং করতে হবে|
এই ব্যায়ামের সময় শরীর/মেরুদন্ড সোজা থাকবে, সামনে বা পেছনে ঝুঁকবে না
ঘাঁড় ও মাথা সোজা থাকবে
কনুই নড়বে না, বা ওপরে উঠবে না, শুধু স্থির থেকে ঘুরবে বা টুইস্ট হবে|
কার্ল করার সময় হাতের কবজি স্থির থাকবে, ঘোরাবেন না বা টুইস্ট করবেন না|
হাত ওপরে ওঠানোর সময় হিপ নড়বে না|
বাইসেপের মাসেল ছাড়া অন্য কোনো মাসেলে প্রেসার বা টান লাগবে না
হাত ওপরে ওঠানোর সময় আস্তে ওঠাতে হবে, জোরে ঝাঁকি দেয়া যাবে না|
ব্যাক মাসেলে যাতে কোনো ঝাঁকি না লাগে, বা টান না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে|
আপনি এত বেশি ওজন নিবেন না যে, ডাম্বেল উঠাতেই পারবেন না| তাই বেশি ওয়েট নিয়ে ঠিক মতো না করার চাইতে, কম ওয়েট নেয়াই ভালো|
প্রতি বার এই ব্যায়াম করার সময় মনোযোগ দিয়ে, ধীরে ধীরে করতে হবে|
তাড়াহুড়ো করবেন না, খুব ধীরে হাত উঠাবেন, ধীরে নামবেন|এইভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ করবেন|তানাহলে, আপনার ব্যায়ামের ফল বৃথা হবে|
উপকারিতা
বাইসেপের মাসেল শক্তিশালী হয়|পাশাপাশি হাতের পেশিও শক্তিশালী হয়
বাইসেপের মাসেল সুন্দর সেপ হয়
বাইসেপের মাসেল বিল্ড করে|বডি বিল্ডারদের বাইসেপ বিল্ডিঙে, এটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্যায়াম|
হাতের হাঁড় শক্ত হয়
এই ব্যায়ামটি আরো অনেক ভাবে করা যায়| যেমন:
দুই হাত এক সাথে না করে, একটি হাত আগে পরে পরপর করে|
বেঞ্চে বসে|সেক্ষেত্রে এ ভাবে করা যায়, যেমন:–বেঞ্চ পেছনে ৪৫ ডিগ্রী কোনে ব্যাক সাপোর্ট দিয়ে|একে বলে Incline Dumbbell Bicep Curls
চেয়ারে বসে, ওপরের নিয়ম মতই শুধু চেয়ারে বসে
Squat পসিশনে বসে
Lunge পসিশনে বসে ইত্যাদি|
ডাম্বেল ছাড়াও, বারবেল, ওয়েট মেশিন, resistant band ও কেবল দিয়ে এটি করা যায়|
আরো অনেক রকম প্রকারভেদ হলো: preacher curl, concentration curl, prone incline curl, spider curls, hammer curl, spider curls, reverse curl, hammer curl, Bench Press Curl, correct curl ইত্যাদি|
আমার ব্যায়ামের রুটিনে সপ্তাহে তিন দিন ৩-১০ পাউন্ড ওজনের বিভিন্ন ধরনের ওয়েট ট্রেইনিং এর যন্ত্রপাতি থাকে| এর ফলে আমি পেয়েছি শক্তিশালী হাতের মাসেল, শক্ত হাঁড়, ও সুন্দর হাতের সেপ|
ওয়েট ট্রেইনিং যদি আপনার ব্যায়ামের রুটিনে না থাকে, তবে আপনার ফিটনেস অর্জন করার অন্যতম প্রধান ব্যায়ামই বাদ পড়বে| আশা করি আপনারাও আপনাদের ব্যায়ামের রুটিনে এই বাইসেপ কার্ল ব্যায়ামটি রাখবেন| পাশাপাশি অন্য মাসেলের ওয়েট ট্রেইনিং এর ব্যায়ামগুলোও করতে চেষ্টা করুন|
ভালো থাকবেন সবাই| সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ফিট থাকুন, আর অন্যদেরকেও ফিট থাকার জন্য অনুপ্রানিত করুন|
তিনটি নিয়ম: ব্যালান্স ডায়েট ও পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, আর নিয়মিত ব্যায়াম করা –মেনে চললে পাওয়া যাবে আজীবনের জন্য ফিটনেস|
ব্যায়াম প্রধানত তিন প্রকার– কার্ডিও, Strength ও Flexibility|
ওয়েট ট্রেইনিং কি?
ওয়েট ট্রেইনিং এক ধরনের Strength Training ব্যায়াম | বিশেষ বিশেষ মাসেলের জন্যে ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম করাকে বলে ওয়েট ট্রেইনিং বা Strength Training |একে Strength Training বলে কারণ, এই ব্যায়ামে মাসেল গুলোকে Strength দিয়ে ব্যায়াম করা হয়| সঠিক মাত্রার ওজন নিয়ে নির্দিষ্ট মাসেলের জন্য নির্দিষ্ট posture এ থেকে ধীরে ধীরে এটি করা হয়| নির্দিষ্ট মাসেলগুলোকে টোন বা শক্তিশালী করার জন্যে করা হয়| Strength Training নাম থেকেই বুঝতে পারছেন এটি মাসেলের শক্তি বাড়াতে কত কার্যকরী ব্যায়াম|
Strength/ওয়েট ট্রেইনিং দুই রকম হতে পারে:
১. Isometric ট্রেইনিং: স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে বা স্থির ভাবে এক জায়গায় থেকে|
২. Isotonic ট্রেইনিং: শরীরকে গতিতে এনে বা move করে|
অনেকেই ব্যায়াম বলতে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাঁটা, Aerobics করা বা যোগ ব্যায়াম বুঝে থাকে| কিন্তু ওয়েট লিফটিং কি ও কেন দরকারী ব্যায়াম বা আমাদের শরীরে এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা হয়ত অনেকেই জানেন না| অনেকে, বিশেষ করে মহিলারা মনে করেন এর কোনো দরকার নেই| আবার অনেকে মনে করেন খুব হালকা ওয়েট নিয়ে করতেই হবে| ওয়েট লিফটিং করলে বা বেশি ওয়েট নিলে পুরুষদের মত মাসেল হবে ইত্যাদি| আবার অনেক পুরুষ মনে করেন শুধু মাত্র মাসেল বানানোর জন্য বা বডি বিল্ডিং এর জন্য ওয়েট লিফটিং দরকার| এটাও ভুল ধারণা| যে কোনো বয়েসের মানুষ ওয়েট লিফটিং করতে পারেন|
আবার অনেকে মনে করেন শুধু কার্ডিও করলেই চলবে, আর অন্য কোনো রকম ব্যায়াম দরকার নেই| কার্ডিওতেই অনেক ক্যালরি বার্ন হয়, ওয়েট লিফটিং এর দরকার নেই| এটিও আরেকটি ভুল ধারণা| কারণ, কার্ডিওতে অনেক ক্যালরি বার্ন হলেও, ওয়েট ট্রেইনিং এ আরো কিছু ক্যালরি বার্ন হয়|
গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে আমাদের শরীরের জন্য ওয়েট ট্রেইনিং খুবই দরকারী| এটি যে কত উপকারী ব্যায়াম তা বলে শেষ করা যাবে না|
ওয়েট ট্রেইনিং এর উপকারিতা গুলো হচ্ছে—
ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে : কার্ডিও ব্যায়াম(৩০-৬০ মিনিট), যেমন হাঁটা , দৌড়ানো ইত্যাদির পাশাপাশি আপনি যদি ওয়েট ট্রেইনিং করেন, তবে আপনার ওজন আরো তাড়াতাড়ি কমবে, ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে|
আরো ক্যালরি বার্ন করে: কার্ডিওর মত ওয়েট ট্রেইনিং ক্যালরি বার্ন করে| ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়ামের সময় ক্যালরি তো খরচ হয়ই, উপরন্ত ব্যায়াম শেষ হওয়ার পরেও , যেমন: ব্যায়াম শেষ করে আপনি যখন বসে কোনো কাজ করছেন, খাচ্ছেন বা ঘুমাচ্ছেন ইত্যাদি, ক্যালরি বার্ন হতে থাকে| এই প্রক্রিয়াকে বলে ” physiologic homework.”
মাসেল বাড়ায় ও ফ্যাট কমায়: ওয়েট ট্রেইনিং মাসেল বাড়ায় ও ফ্যাট কমায়| ফলে বেশি ক্যালরি বার্ন হয়| কারণ এক পাউন্ড মাসেল দৈনিক ১০-২০ ক্যালরি বার্ন করে, কিন্তু সম পরিমান ফ্যাট বার্ন করে মাত্র ৫ ক্যালরি| তাই মাসেলের টিসু বাড়লে তা সারাদিন ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে| বয়সের সাথে সাথে আমাদের ফ্যাট বাড়তে থাকে, মাসেল কমতে থাকে| তাই আমরা দুর্বল ও মোটা হতে থাকি| এটি প্রতিহত করার উপায় ওয়েট ট্রেইনিং করা| যে কোনো বয়সেই, ওয়েট ট্রেইনিং করলে মাসেল বাড়ে ও ফ্যাট কমে| তাই শরীরের ও মাসেলের শক্তিও বাড়তে থাকে, এবং বেশি বেশি কাজ করা যায়| গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, যে সব মহিলারা সপ্তাহে ২/৩ দিন, দুই মাস ধরে ওয়েট ট্রেইনিং করেছেন, তাদের ২ পাউন্ড মাসেল বেড়েছে এবং ৩.৫ পাউন্ড ফ্যাট কমেছে| প্রতি পাউন্ড মাসেল বাড়ার ফলে ৩৫-৫০ বেশি ক্যালরি বার্ন হয়|
মাসেল টোন/শেপ করে: নির্দিষ্ট মাসেলের জন্য ওয়েট নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে সেই মাসেল টোন/শেপ হবে|
স্লিম ও আকর্ষনীয় করে: যেহেতু ওয়েট ট্রেইনিং এ ক্যালরি বার্ন হয়, মাসেল বাড়ায় ও টোন করে, ফ্যাট কমায় তাই আপনাকে আরো সুন্দর ও স্লিম দেখাবে|
বডি বিল্ডিং করে: যারা বডি বিল্ডিং করতে চান তারাও বিশেষ ভাবে ওয়েট ট্রেইনিং করে বডি বিল্ড করতে পারেন|
মেটাবলিসম বাড়ায়: কার্ডিও ব্যায়ামের মতই, ওয়েট ট্রেইনিং মেটাবলিসম বাড়ায়| এটি ১৫% Basal Metabolic Rate–BMR বাড়ায়| ফলে ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে| বয়সের সাথে সাথে , বিশেষ করে ৩০ বছরের পরে আমাদের মেটাবলিসম কমতে থাকে, তাই ওজন বাড়তে থাকে| নিয়মিত ওয়েট ট্রেইনিং করলে করলে এটা প্রতিরোধ করা যায়|
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে: ফলে দৈনন্দিন সব কাজে আরো শক্তি পাওয়া যায়, সব কাজ সহজে করা যায়, তাই মন প্রফুল্ল থাকে|
মাসেলের শক্তি বৃদ্ধি করে: এটি মাসেলের শক্তি বাড়ায়, ফলে দৈনন্দিন অনেক কাজ, যেমন: হাত দিয়ে চাপ দিয়ে কোনো কাজ করার, সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করার শক্তি বাড়ে| তাছাড়া, মাসেলের শক্তি বাড়ার ফলে সহজে মাসেল পুল ও ইনজুরি হয় না|
খেলোয়াড়দের শক্তি বৃদ্ধি করে: যারা খেলাধুলা যেমন: দৌড়, ম্যারাথন, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস ইত্যাদি খেলেন, তাদের মাসেলের ও সমগ্র শরীরের শক্তি বাড়ে |
শরীরের ব্যালান্স ও flexibility বাড়ায়: এই ব্যায়ামে হাত ও পা এক সাথে ব্যবহার করা হয়, তাই সমগ্র শরীরের বা সব অঙ্গের ব্যালান্স বাড়ে, ফলে flexibilityও বাড়ে| শরীরের সব অঙ্গের সমন্বয় হয় | বয়সের সাথে সাথে যেহেতু শরীরের ব্যালান্স ও শক্তি কমতে থাকে তাই এটি খুবই দরকার| flexibility বাড়ার কারণে মাসেল পুল হয় না ও ব্যাক পেইন হতে শরীরকে বাঁধা দেয় |
শরীরের posture ঠিক হয়: ওয়েট ট্রেইনিং করার সময় posture খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই সঠিক posture মেনে এই ব্যায়াম করতেই হবে| ফলে আপনি জীবনের সবক্ষেত্রে, যেমন: দাঁড়ানো, বসা, হাঁটার সময়ও সঠিক posture বজায় রাখতে পারবেন| ফলে আপনার ব্যাক বোনে/ মাসেলে কোনো সমস্যা হবে না|
ঘুম ভালো হয়: ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম করলে মাসেল গুলো ক্লান্ত হয়ে শরীরে তাড়াতাড়ি ঘুম আনে, ফলে ঘুম ভালো হয়|
মন প্রফুল্ল রাখে ও বাড়ায়: আপনার যখন শরীরে শক্তি বাড়বে, ঘুম ভালো হবে, তখন তো এমনিতেই মন প্রফুল্ল থাকবে| গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা কমে, ফলে জীবন আরো সুন্দর হয় ও হাসি খুশি থাকা যায়| হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ১০ সপ্তাহ ওয়েট ট্রেইনিং করলে হতাশা কমে, জীবনের সব ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত থাকা যায়|
হাঁড়ের ও মাসেলের ঘনত্ব ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বয়সের সাথে সাথে আমাদের হাঁড় ও মাসেল ভাঙ্গতে (sarcopenia)/ক্ষয় হতে থাকে| ওয়েট ট্রেইনিং করলে এটি অনেটাই রক্ষা করা যায় ও হাঁড়ের ও মাসেলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায় ও ক্ষয় রোধ করা যায় | কারণ ওয়েট ট্রেইনিং করলে হাঁড়ের ও মাসেলের ঘনত্ব বাড়ে ও শক্ত হয়| গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে হাঁড়ের ঘনত্ব ৬ মাসে ১৩% বাড়ে| ৩০ বছর বয়সের পরে আমাদের মাসেল প্রতি দশকে ৩-৫ % কমতে থাকে, ফলে আমাদের মাসেলের কাজ করার শক্তি কমতে থাকে|
ব্যাক পেইন প্রতিহত করে ও ব্যাক এর ব্যথা কমায়| কারন ওয়েট ট্রেইনিং করলে ব্যাক এর মাসেল শক্ত হয়|
জয়েন্টের শক্তি, flexibility বাড়ে ও জয়েন্ট গুলো মজবুত করে: ওয়েট ট্রেইনিংএ যেহেতু অনেক শক্তি ও ওজন ব্যবহার করা হয়, তাই মাসেলের ও হাঁড়ের পাশাপাশি, জয়েন্ট গুলোর শক্তি বাড়ে| তাছাড়া জয়েন্টের টিসু গুলোকেও শক্ত করে|
Arthritis ও Osteoporosis প্রতিরোধ করে: হাঁড়ের বিভিন্ন রোগ, যেমন: Arthritis ও Osteoporosisএর ব্যথা কমায়, এটি হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে|
ডায়বেটিস এর রোগীদের রক্তের গ্লুকোস নিয়ন্ত্রণে রাখে| যাদের ডায়বেটিস নেই তাদের এটি হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে| কারণ গবেষণায় প্রমানিত হয়ছে যে, ওয়েট ট্রেইনিং করলে রক্তের গ্লুকোসের ব্যবহার ৪ মাসে ২৩% বাড়ে|
ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে ও রক্তের ক্ষতিকর cholesterol কমায়|
ফুসফুসের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়|
যারা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন রকম রোগে ভুগছেন, তারাও এটি করে অনেক উপকার পান| কারণ এটি অনেক রোগ সম্পূর্ণ সারাতে সাহায্য করে|
সর্বপরি জীবনকে উন্নত করে, শরীরের সব দিকের উন্নতি করে ও ফিটনেস বাড়ায়|
ওয়েট ট্রেইনিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ–ওয়েট ট্রেইনিং এর জন্য দরকার barbells , dumbbells, weight machines ইত্যাদি|
ওয়েট ট্রেইনিং কি ভাবে করবেন?
অবশ্যই ওয়েট ট্রেইনিং এর নিয়ম কানুন ঠিক মত জেনে করতে হবে| না হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে| মাসেল পুল হতে পারে| তাই প্রথমে শুরুর সময় অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ জিম ট্রেইনারের পরামর্শ দরকার| তাই সম্ভব হলে জিমে গিয়ে ওয়েট ট্রেইনিং এর ব্যায়াম করা ভালো|
ওয়েট ট্রেইনিং এর জন্য জানতে হবে কত টুকু ওয়েট নিবেন, কত সেট ও Repetition করবেন, কোন কোন মাসেলের জন্য করবেন, আপনার ওয়েট ট্রেইনিং করার উদ্দেশ্য কি, সঠিক posture, কোন weight machine/tool এর কি কাজ ইত্যাদি|
ঘরে বসে ওয়েট ট্রেইনিং করতে চাইলে Dumbbell কিনে নিয়ে করতে পারেন| তবে, সেক্ষেত্রেও আপনার দরকার ওয়েট ট্রেইনিং এর যথাযথ জ্ঞান|
ওয়েট ট্রেইনিং এর আগে অবশ্যই ভালো মত ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে, আর শেষে কুল ডাউন ও স্ট্রেচিং করতে হবে| তা না হলে মাসেল পুল হবে ও মাসেলে ব্যায়াম কোনো কাজ করবে না|
অবশ্যই কার্ডিও ব্যায়ামের পাশাপাশি ওয়েট ট্রেইনিং ব্যায়াম করতে হবে | শুধু ওয়েট ট্রেইনিং করলে তেমন লাভ নেই |
ওয়েট ট্রেইনিং যেদিন করবেন, তার পরদিন অবশ্যই সেই মাসেল গুলোকে বিশ্রাম দিতে হবে| না হলে ব্যায়াম মাসেলে কাজ করবে না|
সপ্তাহে অন্তত দুই/তিন দিন, ২০/৩০ মিনিট ওয়েট ট্রেইনিং করলেই আপনি উপরের উপকারিতাগুলো পাবেন| সেই সাথে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট অথবা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট কার্ডিও করতে হবে|
ওয়েট ট্রেইনিং শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে, বিশেষ করে যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা আছে|
উপরের লেখা গুলো থেকে বুঝতেই পারছেন ওয়েট ট্রেইনিং এর কত প্রয়োজনীয়তা? তাই আপনি যদি ওয়েট ট্রেইনিং না করেন, তবে তাড়াতাড়ি এটি শুরু করুন| আপনি কেন সুস্থ্য সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন?
যে কোনো বয়সেই ওয়েট ট্রেইনিং শুরু করা যায়| ৬০/৭০ বয়সেও এটি করতে পারেন| মহিলাদের যেহেতু হাঁড়ের ক্ষয় বেশি হয়, তাই মহিলাদের, বিশেষ করে- পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের এই ব্যায়াম খুব দরকার|
ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন?
ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ– ওয়ার্ম আপ| ওয়ার্ম আপ এর মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোকেই ব্যায়ামের জন্যে তৈরী করা হয়|এর মাধ্যমে ব্যায়ামের ফলে ইনজুরি, মাসেল পুল, হার্ট এটাক ইত্যাদির হাত থেকে দূরে থাকা যায়|অন্যান্য সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে—শরীরে ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো, শক্তি বাড়ানো, হার্ট রেট বাড়ানো,শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ানো, শরীরের ও মাসেলের তাপমাত্রা বাড়ানো, সর্বপরি শরীরে হঠাত কোনো চাপ না দেয়া|মাসলের তাপমাত্রা বাড়লে, মাসেল ঢিলা ও স্থিতিস্থাপক হবে, ফলে মাসেলে অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ বাড়বে, যা মাসেলে পুষ্টি সরবরাহ করে|তাছাড়া মাসেলের কাজ করার গতিও বাড়ে ওয়ার্ম আপ করার ফলে|
অনেকেই ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্ম আপ করেন না|কিন্তু এটি শরীরে জন্যে খুবই ক্ষতিকর বা বিপদজনক|
মনে রাখবেন, আপনি যদি ঠিকমতো ওয়ার্ম আপ না করে ব্যায়াম করেন,তবে আপনার শরীরে ব্যায়াম ঠিক মতো কাজ তো করবেই না, উপরন্তু আপনার শরীরে ক্ষতি হতে পারে|অনেকেই ওয়ার্ম আপ না করেই, পেটের ব্যয়াম করেন, ওয়েট ট্রেইনিং করেন, এরোবিকস করেন, এমনকি দৌড়ান, এতে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায় না, বরং শরীরের ক্ষতি হতে পারে|
ওয়ার্ম আপ করার কিছু টিপস :
ওয়ার্ম আপ করা মানে শরীরের কাজ করার/ব্যায়ামের গতিকে ও হার্ট রেট ধীরে ধীরে বাড়ানো|এজন্যে বিভিন্ন রকমের ব্যায়ামের মাধ্যমেই ওয়ার্ম আপ করা হয়, যেমন- কার্ডিও, dynamic স্ট্রেচিং ইত্যাদি|
প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্ম আপ এর নিয়ম আলাদা হতে পারে, যাতে করে যে যে মাসেলে কাজ করা হবে, সে সে মাসলের ওয়ার্ম আপ ঠিক মতো হয়| তাই যখন যে ব্যায়াম করবেন, সেই ব্যায়ামের কি ওয়ার্ম আপ হবে তা আগেই জানা দরকার
ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম হবে ধীর গতির ও সহজ ব্যায়াম এবং ব্যায়ামের ক্ষেত্রে আপনার তীব্রতাও কম হবে|
ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম এর তীব্রতা কত হবে তা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির শারীরিক ফিটনেস ও কোন ধরনের ব্যায়াম করা হবে,তার উপর|
অনেক ধরনের ওয়ার্ম আপ ব্যায়াম আছে, যেমন: ধীরে হাঁটা, dynamic স্ট্রেচিং, ধীরে সাতার কাটা, স্থির সাইকেল চালনা, ধীরে, সহজ এরোবিকস করা,ধীরে জগিং করা ইত্যাদি|
ওয়ার্ম আপ এর জন্যে, কমপক্ষে ৫ মিনিট যেকোনো প্রকার ব্যায়াম করতে পারেন(যেমন: ধীরে হাঁটা, জগিং করা,মার্চ করা,লাফানো ইত্যাদি)| তারপর ৫ মিনিট স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং করতে পারেন,মাসেল গুলোকে কাজ করানোর জন্যে| যদিও স্ট্রেচিং ওয়ার্ম আপ ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত নয়|
কমপক্ষে ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করলে ভালো|কারণ, ১০ মিনিট পরে আপনার মাসেলে ব্যায়াম কাজ করা শুরু করবে, আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে, আপনি ক্যালরি বার্ন করা শুরু করবেন, এবং আপনার শরীরের ওজন কমা শুরু করবে|
ওয়ার্ম আপ করার পরে যদি দেখেন আপনি হালকা ঘামছেন, তার মানে আপনি এখন ব্যায়াম করার জন্যে,ক্যালরি বার্ন করার জন্যে তৈরী| কিন্তু আপনি ওয়ার্ম আপ কারার ফলে যদি মনে করেন ক্লান্ত লাগছে, তবে সেটা সঠিক ওয়ার্ম আপ হবে না|
দ্রুত ওয়ার্ম আপ করার জন্যে অতিরিক্ত কিছু কাপড় পড়া যেতে পারে, যেমন- হাফ হাতা টি শার্ট এর ওপর একটি ফুল হাতা টি শার্ট|এতে আপনার শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে ওয়ার্ম আপ করতে সাহায্য করবে|
কিছু ওয়ার্ম আপ ব্যায়ামের উদাহরণ :
একটি ওয়ার্ম আপ করার উপায় হতে পারে-৩ মিনিট ধীরে/মধ্যম স্পিডে হাঁটা, তারপর ২ মিনিট দ্রুত হাঁটা,তারপর ৫ মিনিট আস্তে জগিং করা|
এরোবিকস ব্যায়ামের জন্যে প্রথমে মার্চ করে, সুরের ছন্দে শরীর টিকে নাড়িয়ে ওয়ার্ম আপ করতে হবে, তারপর কিছু dynamic স্ট্রেচিং করা যেতে পারে|অথবা ধীরে কিছু এরোবিকস ব্যায়াম করা যেতে পারে|
সাতার কাটার ক্ষেত্রে শুরুতে ধীরে ধীরে সাতার কেটে ওয়ার্ম আপ করে,তারপর যার যার ফিটনেস ও ক্ষমতা অনুযায়ী স্পিডে সাতার কাঁটতে হবে|
দ্রুত হাঁটার জন্যে প্রথমে ৫ মিনিট ধীরে হেটে, তারপর ৫ মিনিট মধ্যম স্পিডে হেঁটে ওয়ার্ম আপ করা যেতে পারে|
দৌড়ানোর জন্যে, ৫-১০ মিনিট মধ্যম থেকে দ্রুত হাঁটা যেতে পারে, অথবা ৫ মিনিট হেঁটে, তারপর ৫ মিনিট জগিং করা যেতে পারে|
স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং/ ওয়েট লিফটিং ব্যায়ামের জন্যে,৫-১০ মিনিট যে কোনো ধীর গতির কার্ডিও, dynamic স্ট্রেচিং ইত্যাদি করা যেতে পারে|তারপর যে মাসেলের জন্যে ওয়েট লিফটিং ব্যায়াম করা হবে, সে মাসেলের স্ট্রেচিং করতে হবে|
এইভাবে শারীরিক পরিশ্রম করে ওয়ার্ম আপ করা ছাড়াও, শারীরিক পরিশ্রম না করেও ওয়ার্ম আপ করা যায়, যেমন: অতিরিক্ত কাপড় পরে, sauna নিয়ে, গরম পানিতে গোসল করে, শরীর মেসেজ করে ইত্যাদি|শীতকালে যেহেতু শরীর গরম হতে সময় লাগে, তাই ভালো মতো শরীর গরম হয়ে ঘাম বের হলে তারপর, শরীরচর্চা করলেই, ভালো ফল পাওয়া যাবে|
মনে রাখবেন, static স্ট্রেচিং ওয়ার্ম আপ এর অংশ নয়|static স্ট্রেচিং করা যাবে শরীর ভালো মতো ওয়ার্ম আপ করে, যখন ঘাম হয়ে,শরীরের তাপমাত্রা ও রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, তখন|
সুতরাং, ওয়ার্ম আপ করা শরীরচর্চার জন্যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতেই পারছেন| ব্যায়াম শুরুর আগে কিভাবে ওয়ার্ম আপ করবেন, তা ভালো মতো জানুন, বুঝুন, আপনার ট্রেইনার কে জিজ্ঞাসা করুন, তারপর সেইভাবে ব্যায়াম করুন|আর মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যায়ামের ওয়ার্ম আপ কিন্তু ভিন্ন রকম হতে পারে|
আপনারা সবাই কম বেশি পুশ-আপ ব্যায়ামের কথা জানেন| এটি অনেক আগে থেকেই একটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী চেস্টের ও ঘাড়ের ব্যায়াম| এটি পুরুষ ও মহিলারা উভয়েই করতে পারেন| পুশ-আপ ব্যায়াম করলে মূলত pectoral, triceps মাসেলের ব্যায়াম হয়, তাছাড়া deltoids, serratus anterior, coracobrachialis ও abdomen এরও ব্যায়াম হয়|পুশ-আপ ব্যায়াম কার্ডিও, strength ও flexibility এই তিন ধরনের ব্যায়ামের ই অন্তর্ভুক্ত|
কি ভাবে করবেন ?
পুশ-আপের অনেক প্রকারভেদ আছে, যেমন: diamond, clap, wall, fingertip, inclined, wide, pyramid, travelling, walking ইত্যাদি পুশ-আপ|
সপ্তাহে তিন দিন –এক দিন পর পর পুশ-আপ করলে আপনার আপার বডি, বিশেষ করে ঘাড়, triceps ও চেস্ট খুব দ্রুত শেপ হবে|পুশ-আপের পরে ভালো মত হাত ও ঘাড়ের স্ট্রেচিং করে নিবেন|
পুশ-আপ করার প্রচলিত নিয়ম:
পুশ-আপ করবেন ৩ সেট করে ৮ থেকে ১৬ বার|তবে আপনার ফিটনেস অনুযায়ী আরো বেশি বার করতে পারেন| শেষ বারে পুশ-আপ position ১০ সেকেন্ড ধরে রাখতে পারেন |
হাতের তালু মেঝেতে রেখে চেস্ট ধীরে ধীরে মেঝেতে ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ুন| হাত চেস্টের বরাবর, চেস্ট থেকে একটু দুই পাশে বাইরে থাকবে| দুই পা সমান্তরাল সোজা থাকবে |
মাথা শরীরের সমান্তরাল থাকবে, এবং সামনের দিকে তাকাবেন|
এবার পায়ের পাতা মাটিতে রেখে (আঙ্গুল গুলো নিচের দিকে ও গোড়ালি উপরের দিকে) হাত দুটোতে ভর দিয়ে এইভাবে থেকেই ধীরে ধীরে শরীরকে মাটি থেকে উপরে উঠান| শরীর থাকবে একদম সোজা, upper back ও lower back একদম সোজা থাকবে | পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখুন |
হাত যখন একদম সোজা হবে, তখন থামুন, দম ছাড়ুন|
এবার মাটির দিকে ধীরে শরীর নিচে নামান, হাত একই ভাবে রেখে কনুই ভেঙ্গে নামতে থাকবে, শরীর বা চিন প্রায় মাটিতে ঠেকবে, কনুই মাটিতে ঠেকবে না | পা দুটো সোজা জোড়া করে রাখবেন| ব্যাকও সোজা থাকবে|
হাতের উপর ভর দিয়ে এভাবে থাকুন, দম নিন ও ৮ থেকে ১৬ গুনুন
এবার হাতের উপর ভর দিয়ে উঠুন ও দম ছাড়ুন| এভাবে 5,6 ও 7 এর মত করুন আরো দুই থেকে তিন বার |
যারা উপরের নিয়ম মত পুরা বডির ভার হাতে নিয়ে পুশ-আপ করতে পারবেন না, তারা হাটু ভাজ করে মাটিতে রেখেও পুশ-আপ করতে পারেন
পুশ-আপের উপকারিতা:
নিয়মিত ও সঠিক উপায়ে পুশ-আপ ব্যায়াম করলে আপনার চেস্ট, হাত, পা, forearms, biceps, triceps, shoulder, wrist, traps, upper back, abdomen, gluts, hamstrings, quads, calf ইত্যাদি মাসেলের ব্যায়াম হবে| অর্থাত পুশ-আপ পুরা শরীরের জন্য ব্যায়াম|
ফলে এই মাসেল গুলোর সেপ সুন্দর হবে বা টোন হবে|
আপার বডি, যেমন: চেস্ট, shoulder, triceps টোন করতে পুশ-আপের জুড়ি নেই
হার্টের মাসেলও শক্তিশালী হয়
পুরা শরীরের ফিটনেস বাড়ে
শরীরের ব্যালান্স বাড়ে|
Core বা abdomen টোন বা শক্তিশালী করে
যারা weight training করতে চান না তাদের জন্য এটি একটি কার্যকরী ব্যায়াম|
পুশ-আপ মাসেল তৈরিতেও সাহায্য করে| মাসেল তৈরী হলেই শরীর শক্তিশালী, স্লিম, এবং হেলদি হবে|
পুশ-আপ এ রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে মেটাবলিসম বাড়ে|
অনেক ক্যালরি বার্ন করে
Weight training এর আগে পুশ-আপ করলে মাসেলের ইনজুরি রোধ করে
সাধারণত ওয়ার্ম আপের পরে যেকোনো সময় পুশ-আপ করা যায়, আপনার সুবিধা মত সময় পুশ-আপ করে নিন, ব্যায়ামের মাঝে বা শেষে | পুশ-আপের সময় হাত ও কাঁধ ঝাকাবেন না, ধীরে ধীরে করবেন, তাহলে ভালো ফল পাবেন, আপনার ব্যায়ামও সঠিক হবে| নিয়মিত পুশ-আপ করলে আপনার শরীরের উপরে উল্লেখিত মাসেল গুলোর কি দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং শক্তি বাড়ে, তা বুঝতে পারবেন|