Alhamdulillah for Everything
হজ্জ
হজ্জ
হজ্জের নিয়মকানুন
হজ্জের ফরজ ৩টি
• ইহরাম বাধা
• উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান)
• তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি
• ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
• অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
• মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
• ‘হজে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
• এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
• মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব
দুইটি ফরজ:
• ইহরাম পরিধান করা
• তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব:
• সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা
• মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
তালবিয়া
”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।
হজ্জের ৫ দিনে করনীয়ঃ ৮ থেকে ১২ই জিলহজ্জ
১ম দিনঃ ৮ই জিলহজ্জ
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।এ দিনের কাজ দু’টি
ইহরাম (ফরজ)৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)। যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিনঃ ৯ই জিলহজ্জ
০১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)।
০২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
আরাফাতে অবস্থান
• ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
• আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
• ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
• আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
• উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম
‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
• সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
• মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।
• মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করা। ১০ থেকে ১২ই জিলহজ এই তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
১ম দিন ৭টি
২য় দিন ২১টি
৩য় দিন ২১টি
(সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
৩য় দিনঃ ১০ই জিলহজ্জ। এ দিনের মোট কাজ ৪টি
০১। বড় শয়তানকে পাথর মারা
০২। কুরবানী
০৩। মাথা মুন্ডানো
০৪। তাওয়াফে যিয়ারাত করা
• মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
• মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
• তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
• এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
• চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)।
• তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
৪র্থ দিনঃ ১১ই জিলহজ্জঃ
• ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
• সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
৫ম দিনঃ ১২ই জিলহজ্জঃ
• তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
• মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।
• তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা দম দিতে হবে।
• যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে।
• তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ (তবে ৩ দিন, এর সব মোট সময়) শেষ সময় ১২ই জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
• মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজের সায়ী করুন। (ওয়াজিব)।
ইফরাদ হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ
৩টি ফরজ
০১। ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
০২। ৯ই জিলহজ্ব উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
০৩। ১০ই জিলহজ্ব থেকে ১২ই জিলহজ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জিলহজ্ব তারিখই উত্তম।
৮টি ওয়াজিব
• অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্ব সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
• ১০ই জিলহজ্ব বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
• মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
• সায়ী ৯ই জিলহজ্ব তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
• ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭x৩=২১টি পাথর মারা।
• ১২ই জিলহজ্ব তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭x৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
• ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
• তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম)
কি্বরান হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ
৩টি ফরজ
• ইহরাম (হজ্জের ও ওমরাহর জন্য)
• আরাফাতে অবস্থান।
• তাওয়াফুয যিয়ারাত।
১০টি ওয়াজিব
• ওমরাহর তাওয়াফ
• ওমরাহর সায়ী
• হজ্জের সায়ী
• অকুফে মুযদালিফায়
• ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
• দম দিতে হবে।
• মাথা মুন্ডানো।
• ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
• ১২ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
• বিদায়ী তাওয়াফ।
তামাত্তু হজের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ
৪টি ফরজ
• ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
• হজ্জের ইহরাম (৮ই জিলহজ্ব তারিখ মক্কায়)
• উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্ব সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
• তাওয়াফে জিয়ারত (১০ই জিলহজ্ব তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ) ১১টি ওয়াজিব।
১০টি ওয়াজিব
• তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
• ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
• মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
• হজের সায়ী।
• বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
• কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ই জিলহজ্ব তারিখ)।
• মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
• ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭x৩=২১টি পাথর মারা।
• ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭x৩=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
• বিদায়ী তাওয়াফ।✅
হজ্জ
যেভাবে হজ্জ আদায় করবেন
তামাত্তু হজ আদায়ের পদ্ধতি বাংলাদেশ থেকে যারা পবিত্র হজে গমন করেন, তাঁরা সাধারণত তামাত্তু হজ আদায় করে থাকেন।
তামাত্তু হজ আদায়ের পদ্ধতিঃ বাংলাদেশ থেকে যারা পবিত্র হজে গমন করেন, তাঁরা সাধারণত তামাত্তু হজ আদায় করে থাকেন। তামাত্তু হজকারীদের, অর্থাৎ মধ্যখানে হালাল হয়ে পৃথক দুটি ইহরামে যাঁরা হজ ও ওমরা পালন করবেন, তাঁদের নিম্নবর্ণিত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে। ৮ জিলহজের আগেই তাদের ওমরা পালন করতে হবে। তারপর ৮ জিলহজ থেকে হজের কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
♦ মক্কা শরিফ গমনকারীদের নিজ নিজ মিকাত অতিক্রমের আগেই ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা ফরজ। অর্থাৎ সেলাইবিহীন দুটি সাদা কাপড় পরিধান করে দুই রাকআত নফল নামাজ আদায় করে শুধু ওমরার নিয়ত করবে এবং এভাবে তালবিয়া পড়বে : ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা।’ (বুখারি : ১৪৪৮)
♦ মিকাত পরিচয়ে অক্ষম ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে পৌঁছার আগে অথবা বিমানবন্দর থেকেই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে।
♦ তারপর ওমরাহ করা, অর্থাৎ ওজুর সঙ্গে বাইতুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা ফরজ। এ তাওয়াফ এবং যেসব তাওয়াফের পর ‘সাঈ’ করা হয়, সেসব তাওয়াফের সময় দুটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. ‘ইজতিবা’ অর্থাৎ ডান হাতের নিচ দিক থেকে ইহরামের কাপড় বাম কাঁধে রাখা মুস্তাহাব। দুই. প্রথম তিন চক্করের সময় ‘রমল’ করা। অর্থাৎ পুরুষেরা দ্রুতগতিতে বীরদর্পে চলা সুন্নাত। তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে মাক্বামে ইবরাহিমের পেছনে, অন্যথায় হারাম শরিফের যেকোনো স্থানে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকআত নামাজ পড়া ওয়াজিব। তারপর সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব।
♦ অতঃপর পুরুষদের মাথা মুণ্ডানো বা পুরো মাথা ছাঁটানো আর মহিলাদের চুলের এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে ফেলা ওয়াজিব। এতেই ওমরা সমাপ্ত হয়ে যায়। তারপর ইহরাম খুলে যাবতীয় কাজ স্বাভাবিকভাবে করা যাবে। এরপর থেকে হজের কার্যক্রম শুরু।
৮ জিলহজের করণীয়ঃ তামাত্তু হজকারীদের ৮ জিলহজ হুদুদে হারামের যেকোনো স্থান থেকে তথা নিজ বাসা, ঘর, হারাম শরিফ থেকে হজের নিয়তে পুনরায় ইহরাম বেঁধে জোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে হবে। ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা সুন্নাত।
৯ জিলহজের করণীয়
♦ জিলহজের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর মিনা থেকে আরাফার দিকে যাত্রা করবে। সেদিন সূর্য হেলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। সেদিন ঝামেলামুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসর নামাজ নিজ নিজ সময়ে মুকিম হলে চার রাকআত এবং মুসাফির হলে দুই রাকআত করে আদায় করবে। তবে মসজিদে ‘নামিরার’ জামাতে পড়লে একসময়েও আদায় করা যাবে। মোটকথা এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে এক আজান ও দুই ইকামতে আদায় করতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে যে আরাফার সঠিক সীমান্তে পৌঁছতে ভুল করলে হজ হবে না।
♦ সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছার পরেই মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে হবে। কেননা মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা এক আজান ও দুই ইকামতে একসঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। এখানে রাত যাপন করা সুন্নাত এবং ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করতে হবে। কেননা ১০ তারিখ সুবহে সাদেকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তবে দুর্বল ও মহিলাদের জন্য রাতেই মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া বৈধ।
১০ জিলহজের করণীয়
♦ জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদেকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং মিনায় পৌঁছে কেবল বড় জামিরায় (শয়তানকে) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ তারিখ সুবহে সাদেকের পর থেকে পরদিন সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। যদি এই সময়ের মধ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ করা না হয়, তবে দম দিতে হবে। এটি সূর্যাস্তের আগে করতে পারলে ভালো।
♦ ১০ জিলহজ কঙ্কর মারার পরই দমে শোকর বা দমে তামাত্তু—যাকে হজের কোরবানি বলা হয়, নিশ্চিত পন্থায় তা আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির পরেই মাথা হলক করা ওয়াজিব। তবে চুল ছোটও করা যাবে। মনে রাখতে হবে, হাদি বা কোরবানির পশু অন্যকে দিয়ে জবাই করানো হলে জবাইয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
♦ কোরবানির পর মাথা মুণ্ডানো বা ছাঁটানোর পর ইহরাম খুলে সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন এমনকি স্বাভাবিক কাপড় পরেও তাওয়াফে জিয়ারত করা যাবে। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্বামী-স্ত্রী মিলন বৈধ হবে না।
♦ কঙ্কর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ওয়াজিব, ব্যতিক্রম হলে ‘দম’ দিতে হবে।
♦ তাওয়াফে জিয়ারত বা হজের ফরজ তাওয়াফ করে সাফা-মারওয়া ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সম্ভব হলে সেই তাওয়াফ ১০ তারিখে করা ভালো। অন্যথায় ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আগেই আদায় করা ওয়াজিব। হলক বা মাথা মুণ্ডানোর পরই এই তাওয়াফ করা সুন্নাত। তবে কারণবশত এর আগেও বৈধ আছে। তাওয়াফে জিয়ারতের পর স্বামী-স্ত্রী মিলনও বৈধ হয়ে যায়।
♦ ১০ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করা সুন্নাত।
১১-১২ ও ১৩ জিলহজের করণীয়ঃ
১১, ১২ তারিখে প্রথম, দ্বিতীয়, ও তৃতীয় জামারায় উভয় দিন সাতটি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় তা শেষ করবে। সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। সূর্যাস্তের আগে সম্ভব হলে ভালো। তবে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে সূর্য হেলার আগে নিক্ষেপ করলে আদায় হবে না, বরং সূর্য হেলার পর আবার নিক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় ‘দম’ দিতে হবে। এটাই নির্ভরযোগ্য ফতোয়া। তবে অতি ভিড় বা অন্য কোনো অসুবিধার কারণে সূর্য হেলার আগে নিক্ষেপ করলে ইমাম আবু হানিফার (রহ.)-এর এক বর্ণনামতে বৈধ হবে।আর ১৩ তারিখ সূর্য হেলার পর কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা সুন্নাত। তবে কেউ যদি ১২ তারিখে চলে আসতে চান, তাহলে ওই দিন সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় পাথর মেরে চলে আসতে পারবেন। কিন্তু যদি কেউ ১৩ জিলহজ সুবহে সাদেকের পর মিনায় অবস্থান করেন তাহলে তাঁর জন্য ১৩ তারিখও কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অন্যথায় ‘দম’ দিতে হবে। ১২ তারিখের পর একজন হাজি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
♦ তারপর মিনা থেকে মক্কা এসে বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়, এটি ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।
♦ মিনার দিনগুলোতে মিনায়ই রাত যাপন করা সুন্নাত।
হজের ফরজসমূহঃ
♦ ইহরাম বাঁধা। (সুনানে কুবরা : ৯১৯০)
♦ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর থেকে ঈদুল আজহার দিন সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (তিরমিজি : ৮১৪)
♦ আরাফায় অবস্থানের পর কাবা শরিফে সাত চক্কর লাগানো। যাকে তাওয়াফে জিয়ারত বা তাওয়াফে এফাজা বলা হয়।
হজের ফরজসমূহঃ
♦ ইহরাম বাঁধা। (সুনানে কুবরা : ৯১৯০)
♦ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর থেকে ঈদুল আজহার দিন সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (তিরমিজি : ৮১৪)
♦ আরাফায় অবস্থানের পর কাবা শরিফে সাত চক্কর লাগানো। যাকে তাওয়াফে জিয়ারত বা তাওয়াফে এফাজা বলা হয়। হজের ওয়াজিবসমূহ
♦ সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা। এর সময় হলো জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৮, তিরমিজি : ৮১৫)
♦ সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর লাগানো। যাকে সাঈ বলা হয়। চক্কর লাগানো আরম্ভ হবে সাফা থেকে আর শেষ হবে মারওয়ায়। (দারাকুতনি : ২৬১৫, মুসলিম : ২১৩৭)
♦ যথা সময়ে ‘রমি’ করা (শয়তানকে পাথর মারা) । (মুসলিম : ২২৮৬)
♦ তামাত্তু ও কিরান হজকারীগণ দমে শোকর তথা হজের কোরবানি করা।
♦ হারাম শরিফে কোরবানির দিনসমূহে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা। (মুসলিম : ২২৯৮, বুখারি : ১৬১৩)
♦ মক্কাবাসী ছাড় অন্যরা তাওয়াফে সদর তথা তাওয়াফে ‘বিদা’ করা। (মুসলিম : ২৩৫০) এই ছয়টি হলো হজের ওয়াজিব। হজের আমলসমূহে আরো কিছু ওয়াজিব রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ।
♦ ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ তাওয়াফ) সম্পন্ন করা। (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৭, সুনানে কুবরা : ৯৯২৮)
♦ সূর্য হেলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা। (মুসলিম)
♦ তাওয়াফ অবস্থায় অজু বা গোসল ফরজ হয়, এমন অবস্থা থেকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। (নাসায়ি, হাদিস : ২৮৭৩, মুসলিম : ২১৭৩)
♦ প্রত্যেক তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। (বুখারি : ১৫১১)
♦ কিরান ও তামাত্তু হজকারী ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনটি কাজ করা—এক. রমি, দুই. কোরবানি ও তিন. হলক করা। (সহিহ মুসলিম : ১৯৮, উমদাতুল কারী : ১০/৫৮)
♦ সতর ঢাকা। (বুখারি)
♦ তাওয়াফের সূচনা হজরে আসওয়াদ থেকে করা। (দারাকুতনি : ২/২৮৯; মুসলিম : ৮/১৭৪)
হজের সুন্নাতসমূহ
♦ ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা অজু করা এবং শরীরে খোশবু মাখা। (তিরমিজি : ৭৬০, মুসলিম : ৮/১০১)
♦ নতুন বা পরিষ্কার চাদর পরা। সাদা হওয়া উত্তম (মুসানাদে আহমদ : ৪৮৯৯, তিরমিজি : ৯১৫, ২৭২৩)
♦ ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। (মুসলিম : ২০৩১)
♦ বেশি বেশি তালবিয়া পড়া। (মুসলিম : ২২৪৬)
♦ মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজে ইফরাদ বা কিরান আদায় করার সময় তাওয়াফে কুদুম করা। (মুসলিম : ২১৩৯)
♦ মক্কায় থাকাকালীন বেশি বেশি তাওয়াফ করা। (তিরমিজি : ৭৯৪)
♦ ইজতিবা করা অর্থাৎ তাওয়াফ আরম্ভ করার আগে চাদরের এক দিককে নিজের ডান বাহুর নিচে রাখা এবং অন্য দিক বাম কাঁধের ওপর পেঁচিয়ে দেওয়া। (তিরমিজি : ৭৮৭)
♦ তাওয়াফের সময় ‘রমল’ করা। রমলের পদ্ধতি হলো তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় ঘনঘন কদম ফেলা এবং উভয় কাঁধ হেলাতে হেলাতে চলা। (বুখারি : ১৫০১)। উল্লেখ্য, ‘রমল’ ও ‘ইজতিবা’ ওই তাওয়াফে সুন্নাত, যে তাওয়াফের পর সাঈ করা হয়।
♦ সাঈ করার সময় উভয় মিলাইনে আখজারাইনের (সবুজ বাতি) মধ্যখানে জোরে হাঁটা। এটা পুরুষদের জন্য। (মুসলিম : ২১৩৭)
♦ তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া। চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত উঁচিয়ে ইশারা করে হাতে চুমু দেওয়া। (আবু দাউদ : ১৬০০, বুখারি : ১৫০৬, ১৫০৭)
♦ কোরবানির দিনসমূহে মিনায় রাত যাপন করা। (আবু দাউদ : ১৬৮৩)
হজে কিরান আদায়ের পদ্ধতিঃ কিরান হজকারীদের জন্য অর্থাৎ মাঝখানে হালাল না হয়ে একই ইহরামে যাঁরা হজ ও ওমরাহ পালন করবেন, তাঁদের মিকাত অতিক্রমের আগেই একসঙ্গে হজ ও ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা ফরজ। আর মক্কা শরিফ পৌঁছে ওমরাহ তথা তাওয়াফ করা, দুই রাকআত নামাজ পড়া, ‘সাঈ’ করা অতঃপর ইহরাম অবস্থায়ই থাকতে হবে। সম্ভব হলে এ সময় তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নাত।আগের ইহরামেই ৮ তারিখ জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে যেতে হবে। আর বাকি দিনগুলোতে অর্থাৎ জিলহজের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ হজে তামাত্তু-এ উল্লিখিত নিয়মে করণীয়গুলো পালন করতে হবে।
হজে ইফরাদ আদায়েরঃ পদ্ধতিইফরাদ হজকারীদের জন্য অর্থাৎ যাঁরা ওমরাহ ছাড়া কেবল হজের জন্য মক্কায় গমন করবেন, তাঁরা মিকাত অতিক্রমের আগেই শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা ফরজ এবং মক্কা শরিফ পৌঁছে কেবল তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নাত। এ ছাড়া তাঁরা জিলহজের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ তারিখ হজের বাকি কাজগুলো হজে কিরান ও তামাত্তুর নিয়মে পালন করবেন। তবে কোরবানি করতে হবে না। কেননা ইফরাদ হজকারীদের জন্য কোরবানি নেই। এমনকি মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুমের পর ‘সাঈ’ করে থাকলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর ‘সাঈ’ও করতে হবে না।
❇️❇️