ইসলাম ধর্মে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি শিশুর জন্মের পর নাম নির্ধারণ শুধুমাত্র তার পরিচয় গঠনের কাজই করে না, বরং তার ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিফলন হিসেবেও কাজ করে। তাই মুসলিম পরিবারে সন্তানের জন্য নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোরআন শরীফ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কোরআন থেকে মেয়েদের নাম নির্বাচন করলে তা শুধু অর্থবোধক নয়, বরং ধর্মীয় আস্থার প্রতীকও হয়ে ওঠে।
ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, একটি শিশুর নাম তার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। হাদিস অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদ (সঃ) সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কোরআন থেকে নেয়া নামগুলো অর্থপূর্ণ, পবিত্র এবং নৈতিক গুণাবলি সমৃদ্ধ।
কোরআনে এমন অনেক শব্দ, চরিত্র ও গুণের উল্লেখ আছে যেগুলো মেয়েদের নাম হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। যেমন: মর্যাদা, পবিত্রতা, প্রজ্ঞা, দয়া, ঈমান—এমন গুণাবলির প্রতিফলন ঘটে এসব নামের মাধ্যমে। ফলে এগুলো শুধু নাম নয়, বরং একটি আত্মিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের বাহক।
১. মারিয়াম – ঈসা (আঃ)-এর মাতা, কোরআনে বর্ণিত একজন পবিত্র নারীর নাম
২. আয়েশা – জীবন্ত, সুখময় জীবন
৩. হুরাইরা – সাদা বিড়ালের মতো কোমলতা (মেয়েদের জন্য অনুপ্রাণিত)
৪. নুর – আলো
৫. সালেহা – সৎ, ধার্মিক নারী
৬. রুহি – আত্মা
৭. ইমান – বিশ্বাস
৮. সাবরিন – ধৈর্যশীলা
৯. ফাতিমা – নবী (সঃ)-এর কন্যার নাম
১০. হিফজা – সংরক্ষণকারী, রক্ষাকারী
এই নামগুলো কোরআনের সরাসরি শব্দ বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ বহন করে, যার ফলে এগুলো শুধু সুন্দরই নয়, বরং গভীর অর্থবোধক।
কোরআন থেকে মেয়েদের নাম নির্বাচন করলে পরিবারে একটি ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং শিশুটি ছোটবেলা থেকেই নিজের নামের মাধ্যমে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হতে পারে।
কোরআন থেকে মেয়েদের নাম নির্বাচনের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক। প্রথমত, নামটির অর্থ অবশ্যই ইতিবাচক ও পবিত্র হওয়া উচিত। অনেক শব্দ সুন্দর শোনালেও এর অর্থ অনুচিত হতে পারে, যা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত, নামের উচ্চারণ যেন সহজ ও স্পষ্ট হয়, যাতে তা সমাজে স্বাভাবিকভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়। বানানের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি, কারণ ভুল বানান অর্থের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তৃতীয়ত, ইসলামিক পণ্ডিত বা আলেমের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষত যদি নামটি কম পরিচিত হয়। সর্বোপরি, নামটি যেন শিশুর ধর্মীয় পরিচয় বজায় রেখে একটি সম্মানজনক ও আত্মিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়—সেই দিকটি সর্বাগ্রে দেখা উচিত।
আজকের দিনে আধুনিক নামের দিকে অনেকেই ঝুঁকে পড়েন। তবে কোরআনিক নামও আধুনিক শোনাতে পারে এবং একইসঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রাখতে সহায়তা করে। যেমন, "নাইমা", "লাইলা", "আয়াত" ইত্যাদি নামগুলো কোরআনিকও এবং আধুনিক উচ্চারণেও মানানসই।
কোরআন থেকে নেওয়া নামসমূহ সমাজে সহজেই গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানের চোখে দেখা হয়। স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক পরিসরে এমন নাম একটি শক্তিশালী ধর্মীয় পরিচয় প্রদান করে।
নাম একটি জীবনের শুরু, এবং প্রতিটি মুসলিম পরিবারে সন্তানের নাম নির্বাচন এক পবিত্র দায়িত্ব। ইসলামের এই নামকরনের সংস্কৃতি আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে একটি আত্মিক বন্ধন তৈরি করে। বর্তমান প্রজন্ম যখন কোরআন থেকে মেয়েদের নাম বেছে নেয়, তখন তা ধর্মীয় আদর্শ, পরিচয় ও বিশ্বাসের এক সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলে। তাই নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এক অন্তর্নিহিত বার্তা—যা একজন নারীকে তাঁর জীবনভর মূল্যবোধ ও আস্থার পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।