ইসলামে নামাজ হল মুমিনের শ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বাইরে আরও কিছু অতিরিক্ত নামাজ রয়েছে, যেগুলো নফল বা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এসব নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম হলো তাহাজ্জুদ। মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে একান্ত নির্জনে আল্লাহর কাছে হাত তুলার এই ইবাদত অনেক গুণে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তবে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন—তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একটি কথায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং বিষয়টি ব্যাখ্যার মাধ্যমে স্পষ্ট করতে হয়। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব, সময়, পদ্ধতি এবং রাসূল (সা.) এর আমলের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে পারি।
‘তাহাজ্জুদ’ শব্দটি এসেছে আরবি “হুজুদ” শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো ঘুম। ‘তাহাজ্জুদ’ মানে হলো ঘুম থেকে উঠে ইবাদতে দাঁড়ানো। তাই এই নামাজ আদায় করতে গেলে ঘুমিয়ে পড়ে উঠে পড়তে হয়, যা এটিকে অন্যান্য নফল নামাজ থেকে আলাদা করে তোলে।
তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আদায় করা উত্তম। এ সময় পৃথিবী শান্ত, মন ফুরফুরে এবং ইবাদতের জন্য মনোযোগী পরিবেশ তৈরি হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এই সময়টিকে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
“আর রাত্রির কিছু অংশে উঠেও (নফল) নামাজ পড়, এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত; আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে উঠাবেন।”
(সূরা বনি ইসরাঈল: ৭৯)
এছাড়া হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, "নবী (সা.) রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন এবং দাঁড়িয়ে কাঁদতেন।"
এই সমস্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজকে কতটা গুরুত্ব দিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত ২ রাকাত করে আদায় করা হয় এবং সর্বোচ্চ ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। কেউ চাইলে এর পরে বিতর নামাজও পড়তে পারেন, যা রাতের নামাজের পূর্ণতা দেয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় ধীরস্থিরভাবে কিরাত পাঠ করা এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই উত্তম। এটি ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধির চমৎকার একটি মাধ্যম।
মূল প্রশ্নে ফিরে আসা যাক—তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
শরিয়তের দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত একটি নফল নামাজ। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন এবং তাঁর জীবনের নিয়মিত একটি অংশ ছিল তাহাজ্জুদ। এজন্য অনেক আলেম এটিকে “সুন্নতে মুয়াক্কাদা” হিসেবে বিবেচনা করেন, যদিও অধিকাংশ মতানুযায়ী এটি নফল।
তবে রাসূল (সা.)-এর জীবনে এটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, কেউ যদি এটিকে নিয়মিত আমলে নেয়, তাহলে এটি তাঁর জন্য বিশেষ সওয়াবের এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উসিলা হতে পারে। তাই এটিকে শুধু নফল নামাজ হিসেবে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো এমন এক ইবাদত যা মানুষকে আল্লাহর আরও কাছে নিয়ে যায়। এটি মূলত নফল নামাজ হলেও রাসূল (সা.) এর নিয়মিত অভ্যাসের কারণে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই কেউ যদি জানতে চায়, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তাহলে বলা যায়—এটি নফল, তবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নফল ইবাদতগুলোর একটি।
এই নামাজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, অন্তরকে প্রশান্তি দেয় এবং আখিরাতের পাথেয় হিসেবে কাজ করে। তাই রাতের একান্ত নির্জনে, যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানোর মতো সৌভাগ্য খুব কম মানুষ অর্জন করতে পারে। আপনি কি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন হবেন? আজ রাত থেকেই শুরু হোক তাহাজ্জুদের অভ্যাস।