The site is now under construction. keep yourself active in our Facebook official page.
চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
চট্টল দুহিতা পতেঙ্গা। সাগরের কোল জুড়ে অপরূপ তার বসবাস। পর্যটন কন্যা পতেঙ্গা। রত্নাগর্ভা পতেঙ্গার অপরূপ অহংকার চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। তীব্র আলোচ্ছটায় জ্ঞানের মশাল প্রজ্জ্বলিত করে, পতেঙ্গার অলিগলি রাজপথ মেটোপথ হলো আলোকিত। জম্ম নিলো স্বদেশ স্বাধীন ভূমির পাশাপাশি চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। এ যেন রবি ঠাকুরের সোনার তরী । বিদ্রোহী কবির বাবরী দুলানো চুলের হাওয়ায় জ্ঞানের ঢেউচ্ছটার মতোন। সাগরতীরে যেন পুর্ণিমার চাঁদকন্যা। দুচোখে মায়াময় সবুজের ভালবাসা। ঠিক যেন হুমায়ুনের কদমফুল। কেউ কি তার সৃষ্টির ইতিহাস জানে। কে কাকে মনে রাখে।
কারণ মানুষ ভুলে যায়। সহজে ভুলে যায় তার অতীতকে। ভুলে যায় অতীতের কর্মোদ্যম মানুষগুলোকে । যারা জড়ো হাওয়ায় উদভ্রামত্ম হয়নি। বৃষ্টি ভেজা কান্নায় ঢলে পড়েনি। যারা পতেঙ্গার কোলজ প্রকৃতির সংগ্রাম মুখর দিনগুলোতে জ্ঞানের মশাল করলো প্রজ্জ্বলিত। প্রতিষ্ঠা করলো চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। নগরীর এককালের দুগ্ধরূপী স্রোতস্বিনী।
ষাটের দশক, পতেঙ্গায় স্থাপিত হলো উপমহাদেশের সেরা ষ্টীল মিল। চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ লিঃ। দেশের একমাত্র ষ্টীল মিল। তদানীমত্মন পাক প্রেসিডেন্ট উদ্বোধন করলেন মিলটি। এই ষ্টীল মিল না হলে আজ চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুলের ইতিহাস লিখা হতোনা।
বছর ঘুরে কালচক্রে ১৯৭১ সাল এলো বীর বেশে। শুরম্ন হলো দেশ জুড়ে মুক্তিযুদ্ধ। রক্তাক্ত সংগ্রামে উজ্জ্বীবিত সারাদেশ। চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে পাকিস্থানী সৈন্যদের অস্ত্রবাহী ‘সোয়াতজাহাজ’। শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধ আবুল বশর, সুলতান সাহেব (মরহুম), আবু নাসের, আবদুল মালেক, সানাউলস্নাহ, কাশেম সাহেবের নেতৃত্বে ষ্টীল মিলের পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটলো সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধ করতে। যার যা কিছু আছে তা নিয়ে।
সেদিন ষ্টীল মিলের এ অসম সাহসী শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তার প্রতিরোধের মুখে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে পারে নাই। আর এই অসম সাহসী বীর মহান শ্রমিক কর্মকর্তাবৃন্দের যৌথ প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস একই সুত্রে গাঁথা। স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন শুরম্ন হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তেমনি ষ্টীল মিল স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও শুরম্ন হয়েছিল ১৯৭১ সালে।
ষ্টীল মিলে কর্মরত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক। যারা বসবাস করতো ষ্টীলমিল সংলগ্ন আবাসিক কলোনীতে। কলোনীতে বসবাসরত শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়েদের শির কথা মাথায় রেখে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ভাবছিলেন ষ্টীল মিলে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা একামত্ম উচিত। নেতৃবৃন্দ বসে স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। সিদ্ধামত্ম হলো তারা প্রথমে শিক্ষানুরাগী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রমিকনেতা আবুল বশর, আবদুল মালেক, আবু নাসের, সুলতান সাহেব ও সানাউলস্নাহ ছুটে গেলেন ষ্টীল মিলের কর্মকর্তা মোক্তাদির সাহেবের কাছে। মোক্তাদির সাহেব ছিলেন মনে প্রাণে শিক্ষানুরাগী। তিনি শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে উৎসাহ দিলেন। পরে মোক্তাদির সাহেব ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব ও পালন করেন।
যথারীতি ষ্টীলমিল কর্মকর্তাদের বার্ষিক সভা। সভায় উপস্থিত ষ্টীল মিলের এম.ডি, জি.এম, ম্যানেজার, প্রকৌশলীসহ নীতি নির্ধারক (স্থানীয়) সকলেই। সভায় জনাব মোক্তাদির সাহেব ষ্টীল মিলে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রসত্মাব করলেন। উপস্থিত সকলের হাততালি। প্রসত্মাব গৃহীত হলো। সিদ্ধামত্ম হলো হেড অফিস বি.এস.ই.সি. এর অনুমোদন নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে হেড অফিসে স্কুল প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে স্থানীয় ষ্টীল মিল কর্তৃপÿ লিখলেন সুনির্দিষ্ট আবেদন। হেড অফিসের অনুমোদন সহজ ছিলনা। কারণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ভিন্ন তা সম্ভব ছিলনা। লাল ফিতার দৌরত্য ছিল প্রচুর। কিন্তু ষ্টীল মিলের এক ঝাক শিক্ষানুরাগী কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের অবিরাম প্রচেষ্ঠায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও হেড অফিসের সিদ্ধামত্ম পৌঁছে গেল ষ্টীল মিল কর্তৃপক্ষর কাছে। যে সকল মহান কর্মকর্তাবৃন্দ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তারা হলেন জনাব জামাল উদ্দীন হোসেন, জনাব জি.এম. মোক্তাদের, জনাব আবরার হোসেন, জনাব আব্দুল মজিদ খান, জনাব আজমল হোসেন, জনাব নূর মোহাম্মদ ও জনাব মীর মোহাম্মদ হোসেন সহ আর ও অনেকে।
যে সকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নিরলস প্রচেষ্ঠা ছাড়া এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিলনা তারা হলেন জনাব আবুল বশর সাহেব, জনাব আবদুল মালেক, জনাব সুলতান সাহেব (মরহুম), জনাব সানাউলস্নাহ সাহেব, জনাব আবু নাসের, জনাব কাশেম সাহেব। পরে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উন্নয়নে শরীক হন জনাব লিয়াকত আলী (প্রাক্তন এম.পি ও সিবিএ নেতা), মোসত্মাফিজ সাহেব, আনসারী সাহেব, ফয়েজ উলস্নাহ সাহেব সহ আর ও অনেকে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এ মহতী সংগ্রামে বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক জনাব এম.কে. ইউনুছ সাহেব এবং জাহানারা বেগমের নাম ও স্বরণীয়।
ষ্টীল মিল কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে তৎপর হলেন। প্রথমে বর্তমান বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বস্থ বিল্ডিং ধরে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও বতর্মান বিদ্যালয় এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হয়। দেখতে দেখতে বছর শেষ হয়ে এল। প্রতিষ্ঠিত হলো চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যাবতীয় টাকা পয়সা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় ষ্টীল মিল কর্তৃপক্ষ বহন করেন। দীর্ঘ সংগ্রামে ১৯৭১ সালে আমরা পেলাম নতুন দেশ। আমার দেশ বাংলাদেশ। একইভাবে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দীর্ঘ প্রচেষ্ঠা, নিরলস পরিশ্রমের ফসল চিটাগাং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস এবং ষ্টীল মিলস্ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। যা চির অমলীন, অম্লান, সুন্দর এবং সবুজের।