হেগেলের 'ইতিহাস-দর্শন' গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত অংশেরনুবাদ




... ভারতও চীনের মতোনই একটি ফেনোমেনা যেটা একই সাথে প্রাচীন/এন্টিক ও মডার্ন। এটা একই সাথে নিশ্চল এবং অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে, এবং সবচাইতে নিখুঁত সজাত(হোম স্প্রাং) উন্নয়ন সাধন করেছে। এটা সবসময়েই কাল্পনিক বাসনার ভূমি হয়ে আছে, এবং আমাদের জন্য এখনো একটি রূপকথার জায়গা। এ এক মায়াময় বিশ্ব। চীনা রাষ্ট্র যেখানে গতানুগতিক বোঝাপরা হাজির করে, সেখানে ইন্ডিয়া বরং ফ্যান্টাসি ও সংবেদনশীলতার অঞ্চল। নীতিগত জায়গা থেকে এটি প্রগতির যেই ধারণা আমাদের সামনে পেশ করে তাকে মোটাদাগে এইভাবে বলা যায়ঃ চীনে পুরুষতান্ত্রিক নীতিমালা নাবালক জনগণকে শাসন করে। এর নৈতিক ইরাদার একটি অংশ দখল করে থাকে পরিচালনা আইন এবং সম্রাটের নৈতিক তত্ত্বাবধান। এখন কর্তা চাইতেছে বাহ্যিক শর্তাবলী আভ্যন্তরীনে পরিণত হোক। বুদ্ধিমত্তার অধীনস্ত ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাকৃতিক এবং আধ্যাত্মিক- এই দুইজগতকে পাঠ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াতেই বিশেষ ও (সদর্থক) সামান্যের(অথবা অস্তিত্ত্বের আদর্শের) ঐক্য সাধিত হয়।




ভারতেও এই ভাববাদের দেখা মেলে। কিন্ত এই ভাববাদ কেবল কল্পানাশ্রিত যার মধ্যে কোনো স্পষ্ট ধারণার উপস্থিতি নেই। এটি নিঃসন্দেহে অস্তিত্বকে আদি আর বস্তু থেকে মুক্ত করে। এই অর্থে যে এটি কালীক সীমাবদ্ধতা এবং স্থুল জড়তা থেকে মুক্ত করে। কিন্তু সব পরিবর্তনকে কল্পনায় পর্যবসিত করে; যদিও পরেরটি (স্থুল জড়তা থেকে মুক্তির বিষয়টি) নির্দিষ্ট ভাবনা চিন্তায় খচিত হয়ে কদাচিৎ সংগতি আকারে হাজির হয়, এটি দৈবাৎই ঘটে। তবে যাইহোক যেহেতু বিমূর্ত ও পরম চিন্তা - তাদের কাছে স্বপ্নের মাল-মশলা হিসেবে ঢুকে পরে, আমরা বলতেই পারি পরম সত্ত এইখানে স্বপ্নের জগতের ভাবাবেশিত দশা হিসেবে হাজির হয়। কারণ আমরা কোনো প্রকৃত ব্যক্তিসত্তর স্বপ্ন পাইনা। স্পষ্ট ব্যক্তিত্ব ধারণ করে এবং এই ব্যক্তিত্ব তার সীমাবদ্ধাতা থেকে বন্ধমুক্ত হয় এমন প্রকৃত ব্যক্তিসত্তর স্বপ্ন পাইনা। কিন্তু আমরা পাই অসীম পরমাত্মার স্বপ্ন। ...

... ভারতের মহিলাদের মাঝে এক পিকিউলিয়ার ধরনের সৌন্দর্য্য আছে। তাঁদের মুখাবয়ব, ত্বকের স্বচ্ছতা এবং হালকা ও কমনীয় গোলাপী আভা প্রকাশ করে। তেজদীপ্ত এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কারুর চেহারা এমনটা না। তেজদীপ্ত এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারীর একটি পরিশীলিত প্রস্ফুটন থাকবে এবং যার শ্বাস-প্রশ্বাস তার ভেতরের আত্মাকেই প্রকাশ করবে। এই মহিলাদের চাহুনি ও মুখচ্ছবি খুবই কোমল, সমর্পিত এবং নিরুত্তেজ । মূলত মহিলাদের সন্তান জন্মদানের অব্যবহিত পরের দিনগুলিতে এই প্রায় স্বর্গীয় সৌন্দর্য্যের ধারণা উপলব্ধ হয়। যখন গর্ভাবস্থার বোঝা ও প্রসববেদনা থেকে মুক্তির সাথে সাথে প্রিয় নবজাতককে স্বাগত জানানো আত্মার আনন্দ যুক্ত হয়।



একই রকম সৌন্দর্য্যের হদিস মেলে ঘুমন্ত দশায় হাটতে থাকা মহিলাতে। যেই দশা তাঁদেরকে মহাজাগতিক সৌন্দর্য্যের জগতের সাথে মিলিত করে। একজন বিখ্যাত শিল্পী (স্কোগিল) মৃত্যুপথযাত্রী মেরীকে আঁকার সময় প্রায়ই এই টোন দিয়েছেন, যার আত্মা ইতোমধ্যে স্বর্গগামী হচ্ছে। তথাপি এই টোন আরেকবারের মত যেন মরণগামী মুখাবয়বকে একটি বিদায়ী চুমুর জন্যে উজ্জ্বল করে তোলে।



এইরকম সৌন্দর্য্যের তীব্র প্রকাশ আমরা ভারতের দুনিয়ায় ও খুঁজে পাই। এ এক দুর্বলতার সৌন্দর্য্য যা সকল কর্কশ, জড়, এবং বৈপরীত্যকে বিলীন/দ্রবীভূত করে। এখানে আমরা আত্মাকে শুধুমাত্র তার আবেগী দশায় পাই। এই আত্মার মধ্যে মুক্ত আত্ম-নির্ভর সত্তর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা যায়। এইযে ফুলের জীবনের আকর্ষণ যা কল্পনা ও প্রতিভায় সমৃদ্ধ, আমাদের কি এই আকর্ষণের দিকে এগুনো উচিৎ হবে? ফুলের জীবনে এদের গোটা পরিবেশ ও যাবতীয় সম্পর্ক আশ্লিষ্ট হয় আত্মার গোলাপ-শ্বাসের দ্বারা, এবং গোটা দুনিয়া একটি প্রেমের বাগানে রূপান্তরিত হয়। আমাদের কি এর দিকে আরো নিবিষ্ট চিত্তে তাকানো উচিৎ? আমরা কি একে মানুষের মর্যাদাবোধ ও মুক্তির আলোকে আরো গভীর ভাবে পরীক্ষা করবো? প্রথম দেখায় একে যতখানি আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে, শেষতক সকল ক্ষেত্রে আমরা একে ততখানিই অনুপযুক্ত হিসেবে আবিষ্কার করবো।...



প্রথম প্রকাশঃ ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/bodhichittaju/posts/1734156373351593

https://www.facebook.com/bodhichittaju/posts/1734164243350806