লিও স্ট্রাউসের On Tyranny বইয়ের রিভিয়্যু



লিও স্ট্রাউসের 'স্বৈরশাসন সম্বন্ধে' বইটা জেনোফনের ''হিয়েরো'' সংলাপের ধ্রুপদী পাঠ। সক্রেটিসের শিষ্য জেনোফন এই সংলাপে সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহাসিক শহর সিরাকাসের স্বৈরশাসক হিয়েরো ও কবি সিমোনিদেসের জবানীতে স্বৈরতন্ত্র চর্চার সুবিধা-অসুবিধার আলাপ করেছেন। স্ট্রাউস তাঁর বইতে বলতে চান যে উদারতাবাদ তাঁর আধুনিক আকারে নিজেরই মধ্যে চরম আপেক্ষিকতাবাদের দিকে ধাবিত এক স্বকীয় প্রবণতাকে বহন করেছে। এই চরম আপেক্ষিকতাবাদ আমাদেরকে শূন্যবাদের দুই ধরনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।


প্রথমটা হচ্ছে ''নৃশংস'' শূন্যবাদ, যারে দেখতে পাই নাৎসি আর মার্ক্সবাদী রেজিমে/দুনিয়ায়। 'স্বৈরশাসন সম্বন্ধে' বইতে স্ট্রাউস বলতেছেন যে পশ্চিমা আলোকায়নের উত্তরাধিকার এই উভয় মতাদর্শই সকল ঐতিহ্য, ইতিহাস, নৈতিকতা ও নৈতিকতার আদর্শগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। বল খাটায়ে বদলে দিয়েছে। বল খাটানোর মধ্যদিয়ে প্রকৃতি আর মানুষকে বিজিত করেছে ও বশে এনেছে।


আর দ্বিতীয় ধরনটা হচ্ছে ''সুবোধ'' শূন্যবাদ। এর প্রকাশ আমরা পাইতেছি পশ্চিমা উদারনৈতিক গণতন্ত্রে। পশ্চিমা উদারনৈতিক গণতন্ত্র হচ্ছে মূল্যবোধ-বিবর্জিত উদ্দেশ্যহীনতা ও সুখবাদী ''সম্মতিপ্রাপ্ত সবাই সমান মতবাদ''। সমকালীন আমেরিকার সমাজের মোড়কে এইটা আমাদের আকুল করেছে। তাঁর বিশ্বাস- বিশ শতকের আপেক্ষিকতাবাদ, বিজ্ঞানবাদ, ইতিহাসবাদ ও শূন্যবাদ সবই আধুনিক সমাজ ও দর্শনের বাজে ফল হিসেবে হাজির হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে এনে ফেলবার দার্শনিক পথপরিক্রমাকে নাঙ্গা করবার পথ খুঁজেছেন স্ট্রাউস। এরই পাঠের ফলস্বরূপ লিও স্ট্রাউস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচারের জন্যে একটা যাত্রাবিন্দু হিসেবে ধ্রুপদী রাজনৈতিক দর্শনের কাছে পরীক্ষামূলকভাবে ফিরে যাওয়ার পক্ষে ওকালতি করেছেন।

...