অহমের অতিক্রমণ বা তুরীয় দশা

জঁ পল সার্ত্র


The Transcendence of the Ego জঁ পল সার্ত্রের একেবারে শুরুর দিককার দার্শনিক রচনা। ১৯৩৭ সালে একটা জার্নালে প্রবন্ধ হিসেবে ছাপা হয়। এই সময়ে সার্ত্রে খুব একটা পরিচিত কেউ ছিলেন না। স্কুল শিক্ষকের কাজ করছিলেন সেসময়ে। আর Nausea'র জন্য প্রকাশক খুঁজছিলেন, যেটা পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে উঠবে।


ফেনোমেনোলজি নামক দার্শনিক ধারার উদ্গাতা এডমুণ্ড হুসার্লের দর্শনের সাথে তাঁর নিবিড় বোঝাপড়ার ফলাফল বলা যায় এটাকে।চৈতন্যের(Consciousness) যে মডেল সার্ত্রে এখানে হাজির করেন তাকে এইভাবে বলা যায়ঃ চৈতন্য সবসময়েই ইন্টেনশনাল; যেটা আবার সবসময়েই ও আবশ্যিকভাবেই হবে—কোন কিছু সম্বন্ধে চৈতন্য। চৈতন্যের ‘বিষয়’ যেকোন বস্তু হইতে পারেঃ ভৌতবস্তু, বচন(proposition), শর্তাবস্থা, স্মরণ করা চিত্র বা মানসিক দশা—যেকোনকিছু, যাকে চৈতন্য পাকড়াও করে। এটিই হচ্ছে সেই ‘ইন্টেনশনালিটির নীতি’ যা হুসার্লের ফেনোমেনোলজি’র যাত্রার শুরুর বিন্দুরে আকার দেয়।


''চৈতন্য ইন্টেনশনালিটি বৈ কিছু নয়''— বলার মধ্যদিয়ে এই নীতিকে সার্ত্রে র‍্যাডিক্যাল রূপ দেয়। এর মানে দাঁড়ায় বিশুদ্ধ তৎপরতা রূপে চৈতন্যকে জ্ঞান করা। এবং চৈতন্যর উৎস ও নেসেসারি শর্ত হিসেবে চৈতন্যের মাঝে, পশ্চাতে বা অন্তরালে ‘অহম’ বা ইগো নামক কিছুর অস্তিত্ব অস্বীকার করা। এই দাবীর সপক্ষে প্রমাণ দেয়াই সার্ত্রের এই লেখার(The Transcendence of the Ego) মূল উদ্দেশ্য।


পরবর্তীকালে সার্ত্রে তাঁর শুরুর দিককার এই অবস্থান ছেড়ে মানবতাবাদী ও আর পরে মার্ক্সবাদী হয়ে উঠেন। আমাদের চিন্তাজগতে মানবতাবাদী সার্ত্রেই পূজিত ও নিন্দিত, তাঁর মার্ক্সবাদে গতায়ত নিয়েও অল্পকিছু কথা হয়। তরুণ সার্ত্রে অপাংক্তেয় ও অজানা থেকে গেছে। কিন্তু তাঁর এই ছোট্ট রচনার প্রভাব ফরাসী চিন্তজগতে ব্যাপক, বিশেষত দেরিদার কাজে। বলা হয়ে থাকে, শুরু থেকে শেষ অবধি দেরিদা তরুণ সার্ত্রের এই দার্শনিক অবস্থানেই অটল ছিলেন।


প্রথম প্রকাশঃ ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৯

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/bodhichittaju/posts/2126509620782931