দ্বিতীয় সৃষ্টি প্রসঙ্গে ভাবনাচিন্তা

আশিল এমবেম্বে



[ক্যামেরুনীয় দার্শনিক আশিল এমবেম্বের Meditation on the Second Creation শিরোনামের একটি লেখা e-Flux নামের মাসিক অনলাইন জার্নালের ১১৪ তম সংখ্যায় (ডিসেম্বর, ২০২০) প্রকাশিত হয়েছে। এমবেম্বের এই লেখাটি অনুবাদ করেছেন তাহমিদ আলম ফিহাদ। ফিহাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।]


মানুষের প্রকৃতি কি নিয়ে গঠিত? অথবা আরও আগ বাড়িয়ে বললে জীবন আসলে কি? কি আমাদের নৈতিক সত্তা করে তোলে? পৃথিবীতে আমাদের নিয়তি কি? বহু কাল পর্যন্ত শুধুমাত্র ধর্মতত্ত্ববিদ, অধিবিদ্যার কারবারি এবং অস্তিত্বের দার্শনিকরা এই ধরনের প্রশ্নে নিজেদের নিমগ্ন করেছেন।


অদ্ভুত মনে হলেও আজকের দিনে এসব প্রশ্ন ফিরে এসেছে বিজ্ঞানীদের মাঝেও। বিশেষত বিজ্ঞানীদের মাঝে। করোনাভাইরাসের লকডাউন এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া মৃত্যুর হারের পরিপ্রেক্ষিতে জীবনের কিভাবে ইতি ঘটে এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কেবল বৃদ্ধিই পেয়েছে।


কিন্তু যেখানে অতীতে ব্যাপারটা ছিল মানুষ সকল দেহ ও মনের উর্ধ্বে কিনা সেটা নির্ধারণ করা, সেখানে বর্তমানে আলোচনাটা হচ্ছে এটা নিয়ে যে মানুষ কি বস্তু কিনা এবং শুধুই বস্তু কিনা বা শেষ পর্যন্ত শুধু কতগুলো শারীরিক এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলাফল কিনা।


এই চরমের যুগে প্রাণের ভবিষ্যৎ কি এবং কোন কোন পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের মৃত্যু ঘটে সেটা নিয়েও এই আলোচনা।


শরীর, বস্তু এবং জীবন— এই তিনটি খুবই স্বতন্ত্র ধারণা। প্রতিটি মানব শরীর এবং এর জৈব ঐক্যে এমন কিছু একটা থাকে যা শুধুমাত্র বস্তু নয়, এবং এটা বুঝতে হলে একজন মানুষের খ্রীস্টান ধর্মকে আলিঙ্গন [অবলম্বন] করার প্রয়োজন পড়ে না। এই কিছু একটাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্কৃতি বিভিন্ন নাম দিয়েছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, মানব শরীরের সত্য থাকবে যে কোন ধরনের বিশিষ্টকরণবাদকে প্রতিহত করা।


একই ব্যাপার, যাকে বলা যায় পৃথিবীর দেহ, এমনকি এর মাংস, এদের জন্যেও সত্য। পৃথিবীর দেহকে চেনা যায় এর প্রাচুর্যতার মধ্যে। এর একটা সাধারণ উদাহরণ হচ্ছে এই ভাইরাসের বিস্ফোরণ, যা এখন আমরা পৃথিবীব্যাপি অনুভব করছি।


অনেকের দৃষ্টিতে এই ভাইরাস কার্যতই প্রকৃতির সীমাহীন ক্ষমতার প্রদর্শন। তাঁরা এই ঘটনার মধ্যে মহাজাগতিক লক্ষণ দেখতে পায়, দেখতে পায় এগিয়ে আসা ধ্বংসের দূতকে। অন্যদের জন্য, এটা হচ্ছে একটা ঈশ্বরবিহীন দুনিয়ার প্রকল্পের যৌক্তিক ফলাফল, যা শুরু করার দায়ভার তারা আধুনিকতার উপর দেয়। তাঁদের কাছে এই পৃথিবী যা আপাতভাবে মুক্ত কিন্তু বাস্তবে যেখানে কোন প্রকার আশ্রয় ছাড়া শুধু নিজের উপর ভরসা করতে হয়, তা মানুষকে প্রকৃতির বাধ্যবাধকতার অধীনে অধীনস্থ করেছে এবং যা কিনা এখন খামখেয়ালি [আরোপিত] ক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়েছে।


প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বরের অনুপস্থিতি কিংবা ভাইরাস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সহিংসতা রূপে ঈশ্বরের প্রচন্ড এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ উপস্থিতি, যা কিনা আমাদের সময়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, এর কোনটাকেই ঠিক আজকের পৃথিবীর চরিত্র বলা যায় না। একবিংশ শতাব্দী আরম্ভ হওয়ার মূলচিহ্ন হচ্ছে সর্বপ্রাণবাদে এর পদার্পণ।


প্রযুক্তির দ্রুত বৃদ্ধির সাথে যুক্ত হয়ে পুঁজিবাদের রুপান্তর পৃথিবীকে দুই ধরনের আধিক্যের দিকে চালিত করেছেঃ নিউমা’র (pneuma, নিঃশ্বাস) আধিক্য এবং প্রত্নবস্তুর (artifacts, নিদর্শন) আধিক্য, প্রত্নবস্তুর নিউমাতে (প্রত্যয়টির ধর্মতত্ত্বীয় অর্থে) রূপান্তর। আর কোন কিছুই এই আধিক্যকে এতটা ভাল ভাবে প্রকাশ করতে পারে না, যতটা পারে এই টেকনো-ডিজিটাল জগৎ, যা আমাদের জগতের যমজে পরিণত হয়েছে, এবং যা হচ্ছে নিউমার বস্তুগত মূর্তরূপ (objectal embodiment)।


সমসাময়িক মানবজীবনের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্ক্রিন (screen, পর্দা)-এর মধ্যে দিয়ে অবিরাম যাতায়াত এবং ইমেজ মেশিনে (যেগুলো একই সাথে ড্রিম মেশিনও) ডুবে থাকা। এই সব ছবির বেশিরভাগই প্রাণবন্ত। এগুলো সব রকমের বিভ্রম এবং কল্পনা উৎপাদন করে, যার শুরু হয় আত্মের উৎপাদন অর্থাৎ স্ব-উৎপাদনের কল্পনা দিয়ে। কিন্তু সমস্ত কিছুর উপরে এগুলো উপস্থিতি এবং সঞ্চালন, অবতার , পুনর্জন্ম, এমনকি পুনরুত্থানের নতুন নতুন রূপ দিতে পারে। প্রযুক্তি শুধুমাত্র ধর্মতত্ত্বই হয়ে ওঠেনি, একই সাথে আখেরিবিদ্যা বা পরলোকতত্ত্বও হয়ে উঠেছে।


এই জগতে নিজেকে দুই সত্তায় ভাগ করা বা একই সময়ে একের অধিক স্থানে এবং একের অধিক দেহে বা একের অধিক শরীরে অস্তিত্বশীল থাকা শুধুমাত্র সম্ভবই না, বরং নিজের প্রতিরূপ থাকাও সম্ভব। অর্থাৎ নিজের আরও সত্তা থাকা সম্ভব, যা একটা মানুষের নিজের দেহ এবং স্ক্রিনে তার নিজের দেহের প্রতিরুপের সংকর। এছাড়াও, স্ক্রিনের ভিতর যাতায়াত করা বর্তমান মানবজাতির মৌলিক কার্যকলাপ হয়ে উঠেছে। এটা আমাদের শারীরিক সীমা থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয় এবং শারীরিক সীমার বাইরে এই ঝাঁপ কোন প্রকার নিরাপত্তার বন্দোবস্ত [নিরাপত্তা-জাল] ছাড়াই সকল রকমের সমান্তরাল বিশ্বে (এবং এর বাহিরেও) যাতায়াতের সূত্রপাত ঘটায়। স্ক্রিন-এর অপর পার্শ্বে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে মানবজাতি নিজেকে নিজের সামনে উপস্থাপন করতে পারে এবং একই সময়ে নিজের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।


এছাড়াও সমকালীন সর্বপ্রাণবাদ, মানুষ এবং সেই সাথে জীবিত প্রাণের সাথে মানুষের সম্পর্কের বড় রকম পুনর্গঠনের ফলাফল। এ থেকেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় সৃষ্টির যুগ। বর্তমানে ব্যাপারটা হচ্ছে, প্রযুক্তির সাহায্যে জীবিত প্রাণের শক্তি বন্দী করে তা মানুষে মধ্যে প্রোথিত করা— এমন একটা প্রক্রিয়া যা স্মরণ করিয়ে দেয় প্রথম সৃষ্টির কথা। তবে এইবার প্রকল্পটি হচ্ছে জীবিত প্রাণের সকল বৈশিষ্ট্য অর্গানো-আর্টিফিসিয়াল উপাদানের (organo-artifical component) মধ্যে স্থানান্তর করা, যে সকল উপাদানকে মূলত একজন মানব ব্যাক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহে প্রদান করা হয়েছে।


এই সব উপাদানকে আনা হয়েছে মানুষের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করার জন্য। অতীতে যেখানে সর্বপ্রাণবাদ ছিল তথাকথিত আদিম সমাজের রহস্যবাদের অবশেষ, সেখানে এখন তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সুপার কম্পিউটার, ন্যানো-রোবট, কৃত্রিম নিউরন, আরএফআইডি চিপ (RFID chip) এবং টেলিপ্যাথিক মস্তিষ্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


তবে এই দ্বিতীয় সৃষ্টি প্রফেন বা অপবিত্র। এটা অগ্রসর হয় একটি তিন ধাপ বিশিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেগুলো হচ্ছেঃ ডিকর্পোরেশন, রিকর্পোরেশন এবং ট্রান্সকর্পোরেশন। এই প্রক্রিয়া মানবদেহকে হাইব্রিড (সংকর) এবং সিম্বায়োসিস বা মিথোজীবিতার বাহনে পরিণত করার প্রচেষ্টা হিসেবে একে যন্ত্রায়িত করে ফেলে। এই তিন ধাপ বিশিষ্ট প্রক্রিয়া ধর্মীয় আচার বা সংস্কার মূলক, এটা এই নতুন প্রযুক্তিগত ধর্মের স্তম্ভ। এটা খোদ সৃষ্টি থেকে শুরু করে অবতার, তাজাল্লি, পুনরুত্থান, [স্বর্গে] উত্তরণ, এমনকি ইউক্যারিস্ট (এটা আমার দেহ) সহ খ্রীস্টিয় রহস্যের মৌলিক বর্গগুলিকে মানানসই করে নেয়। লাগসই করে নেয়, এগুলোকে ডিস্ট্যাবিলাইজ্‌ড বা নাশ করার জন্য।


পৃথিবীর সাইবারনেটিজেশনের১০ সাথে সাথে, মানবীয় এবং ঐশ্বরিক উভয়কেই অগণিত সংখ্যক প্রযুক্তিগত বস্তু, ইন্টারেকটিভ স্ক্রিন এবং শারীরিক যন্ত্রে (physical machine) প্রোথিত বা ডাউনলোড দেয়া হয়েছে। এগুলো হয়ে উঠেছে সত্যিকারের গলনাধার (crucible, ধাতু গলাবার পাত্র) যেখানে লক্ষ্য এবং বিশ্বাসগুলিকে— যেগুলো ধর্মবিশ্বাসের বর্তমান রূপান্তরিত রুপ— গলিয়ে এবং পিটিয়ে আকার দেয়া হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান প্রযুক্তিগত ধর্মসমূহ সর্বপ্রাণবাদের প্রকাশ। কিন্তু তবুও এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেখানে এই সকল প্রযুক্তিগত ধর্মসমূহ পরিচালিত হয় কলাকৌশলের (artifice, নির্মাণকৌশল) নীতি দ্বারা, সেখানে প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদ পরিচালিত হতো জীবনী শক্তি দ্বারা।


প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদে বাতাস, পানি এবং একটা সাধারণ ভিত্তি ছাড়া দেহ বা জীবন কোনটারই অস্তিত্ব ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, প্রাক-উপনিবেশিক আফ্রিকান চিন্তাধারায়— জীবন এবং দেহ এবং ফলস্বরূপ মানুষ— ভিত্তিগতভাবে নিঃশ্বাস ও বায়ু, পানি ও আগুন, ধূলা ও বাতাস, গাছপালা ও ফসলাদি, প্রাণীসমূহ এবং নিশাচর জগত এসব কিছুর প্রতি উন্মুক্ত ছিল। ভাষার ছেদবিন্দুতে, সব কিছু ছিল জীবন্ত। এই অপরিহার্য ভেদ্যতা (porosity), এর অপরিহার্য দুর্বলতার পরিপূরক হিসেবে কাজ করত। ধারণা করা হতো পৃথিবীতে মানুষের অভিযান চালিত হবে বাতাস এবং নিঃশ্বাসের বাস্তবতায়। এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র টিকে থাকতো পারত যদি অত্যাবশ্যকীয় জীবন চক্রগুলো পুনরুৎপাদনের জন্য কোন স্থান তৈরি করা হতো। জীবন গঠিত ছিল একেবারে সকল কিছুকে একত্রিত বা সম্মিলিত করার মাধ্যমে। তখন বিষয়টা ছিল গঠনের, আধিক্যের না।


মানবজাতির জন্মস্থান হিসেবে আফ্রিকা সম্ভবত বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী শক্তির সম্মুখীন হয়েছে। এ থেকে সে শিখেছে যে বিপর্যয় বা দুর্যোগ এমন কোন ঘটনা না যা একবার হয়ে চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যায় এবং নিজের বীভৎস কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর পিছনে ফেলে যায় এক বিধ্বস্ত পৃথিবী। অনেকের জন্যই, এটা হচ্ছে একটা অবিরাম [অনিঃশেষ] প্রক্রিয়া, যা যা দিনের পর দিন পুঞ্জীভূত হয় এবং তলানি জমায়।


এই সকল অবস্থার প্রেক্ষিতে, আরও সহজভাবে (নিঃ)শ্বাস নেয়া যায় এমন এক পৃথিবীর জন্য পথ উন্মুক্ত করা— এই সংক্রমণের যুগে নতুন এক নীতিশাস্ত্রের ভিত্তি হতে পারে। কারণ এই সংক্রমণের যুগ হচ্ছে এই অ্যান্থ্রোপোসিনের১১ ফলাফল, যা পরিবেশের এবং প্রকৃতির অপরিবর্তনযোগ্য রূপান্তর এবং উপনিবেশবাদের এক নতুন ধরনের বিস্তৃতিঃ প্রযুক্তিগত-আণবিক উপনিবেশবাদ বা টেকনো-মলিকিউলার কলোনিয়ালিজম।


নৃশংসতাবাদের যুগ— অর্থাৎ, জোর পূর্বক প্রবেশের যুগ— এটা হচ্ছে এমন এক যুগ যখন ড্রিম মেশিন এবং বিধ্বংসী শক্তিসমূহ ক্রমাগত ইতিহাসের দৃশ্যমান চরিত্র (actor) হয়ে উঠবে। যে বাতাসে আমরা শ্বাস নেই তা দিন দিন ধূলাবালি, বিষাক্ত গ্যাস, বিভিন্ন পদার্থ ও বর্জ্য, পার্টিকেল এবং গ্রানুলেশন— সংক্ষেপে সকল প্রকার উদগম বা উপজাত দ্বারা বোঝাই হয়ে উঠবে। এই ত্রিমাত্রিক ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রযুক্তির বদৌলতে দেহ থেকে প্রস্থান না করে ব্যাপারটা তখন হয়ে উঠে দেহে ফিরে আসার, বিশেষ করে সেই সকল অঙ্গের মধ্য দিয়ে যেগুলো অ্যাসফিক্সিয়েশন১২ এবং শ্বাসকষ্ট থেকে বেশি অরক্ষিত।


দেহে ফিরে আসা মানে হচ্ছে পৃথিবীতেও ফিরে আসা, যাকে বুঝতে হবে ভূমি হিসেবে নয় বরং ঘটনা হিসেবে যা শেষপর্যন্ত ভিত্তিগতভাবে রাষ্ট্রসমূহের সীমানা অমান্য করে। এইভাবে বুঝতে পারলে এই পৃথিবী এর সকল বাসিন্দাদের; বর্ণ, উৎপত্তি, সম্প্রদায়, ধর্ম এমনকি প্রজাতি নির্বিশেষে। এটা কোন অন্ধ ব্যক্তিমানুষ বা নগ্ন অনন্যতার দিকে নজর দেয় না। এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রতিটি দেহ— মানুষের হোক বা অন্য প্রাণীর হোক এবং যতই অনন্য হোক না কেন— এর অপরিহার্য ভেদ্যতা’য় এবং নিজের উপর ও নিজের মধ্যে, কোন স্বচ্ছ ফিনফিনে পৃথিবীর চিহ্ন বহন করে না, বরং সাযুজ্যতা এবং অগণনীয়তার চিহ্ন বহন করে।

____________

ডিসেম্বর, ২০২০


অনুবাদকের টীকাঃ

[১] বিশিষ্টকরণবাদ (reductionism): জটিল জিনিসকে সরল খন্ডাংশে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা বা নীতিই হচ্ছে বিশিষ্টকরণবাদ।

[২] সর্বপ্রাণবাদ (animism): প্রকৃতির সব কিছুকেই সপ্রাণ মনে করা, সব ক্রিয়াকলাপের পেছনে প্রাণের অস্তিত্বকে অনুভব করাই হলো সর্বপ্রাণবাদ।

[৩] নিউমা (pneuma, নিঃশ্বাস): নিঃশ্বাস বা শ্বাস’কে বুঝাবার প্রাচীন গ্রিক শব্দ, ধর্মীয় অর্থে বুঝায় রুহ/চিৎ বা আত্মা।

[৪] ডিকর্পোরেশন (decorporation): (শরীর থেকে) তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিষ্কাশন।

[৫] রিকর্পোরেশন (recorporation): সেরে উঠা, স্বাস্থ্য বা শক্তিমত্তা পুনরুদ্ধার করা।

[৬] ট্রান্সকর্পোরেশন (transcorporation):

[৭] ধর্মীয় সংস্কার মূলক (sacramental): sacrament হচ্ছে আচার বা সংস্কার; গির্জার সদস্যরূপে দীক্ষাদান, বিবাহ প্রভৃতি ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান, যা বিরাট আধ্যাত্মিক কল্যাণ বয়ে আনে। যেমন পবিত্র ভোজনোৎসব, যীশু খ্রিস্টের অন্তিম সায়মাশের স্মরণোৎসব ইত্যাদি।


[৮] তাজাল্লি (transfiguration): “ট্রান্সফিগারেশন ধারণাটি খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্বে এক স্তর থেকে আরো উপরের আধ্যাত্মিক স্তরে রূপান্তর বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। [দেখুন, মার্ক ৯:২] ঈসা নবীর [যীশু খ্রিস্ট] পুনরুত্থান (কেয়ামত)-কেও খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্বে ট্রান্সফিগারেশন শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়। খ্রিষ্টানদের ট্রান্সফিগারেশনকে আরবি তাজাল্লি শব্দের সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করছি, কারণ আরব খ্রিষ্টানরাও তাই করে থাকেন। তবে তাজাল্লি নামক ধারণাটি তাসাউফ তথা সুফিবাদের একটি ধারণা। কোরানে আল্লাহর নিজেকে উন্মোচন অর্থে শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়। সুফিরা তাজাল্লি শব্দটির ব্যবহার করেন ব্যক্তির 'স্ব'-এর মধ্যে খোদার হাজিরা বোঝাতে। অর্থাৎ সুফির ফানা ফিল্লার পর বাকা বিল্লায় খোদার কোন গুণ (attribute) যখন তারমধ্যে হাজির হয়।“

— পারভেজ আলম (উৎসঃ https://www.facebook.com/parvezalambd/posts/10156751413994134)


[৯] ইউক্যারিস্ট (Eucharist): ইউক্যারিস্ট একটি খ্রিস্ট ধর্মীয় পবিত্র ভোজনোৎসব যার মাধ্যমে যীশুর অন্তিম সায়মাশ [সান্ধ্যভোজ] বা লাস্ট সাপারকে স্মরণ করা হয়। এর অন্য নাম পুণ্য কম্যুনিয়ন, স্যাক্রামেন্ট অফ দ্য অল্টার, ব্লেসেড স্যাক্রামেন্ট বা প্রভুর সায়মাশ। নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেলের নতুন নিয়মের বেশ কয়েকটি বইয়ে যীশুর অন্তিম সায়মাশকালীন নির্দেশনাগুলো লিপিবদ্ধ আছে যা এই ভোজনোৎসবে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়। যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে রুটি দিয়ে বলেছিলেন, "এটা আমার দেহ" আর ওয়াইন দিয়ে বলেছিলেন, "এটা আমার রক্ত"।– উইকিপিডিয়া [দোহাইঃ Ignazio Silone, Bread and Wine (1937)]


[১০] সাইবারনেটিজেশন (cybernetization): সাইবারনেটিজেশন নির্দেশ করে সাইবারনেটিক্স ও সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পদ্ধতিগত ধারণাসমূহের বৈজ্ঞানিক-তত্ত্বীয় জ্ঞানের প্রয়োগ। সাইবারনেটিক্স (ইংরেজি: Cybernetics) একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় বিজ্ঞান, যেখানে জীব, যন্ত্র ও অন্যান্য সংগঠনসমূহের যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আলোচিত হয়। ১৯৪৮ সালে মার্কিন গণিতবিদ নর্বার্ট উইনার নিয়ন্ত্রণ মেকানিজমের তত্ত্বের নাম দেন সাইবারনেটিক্স। যেসব কলাকৌশলের মাধ্যমে তথ্যকে কাঙ্ক্ষিত কাজে রূপায়িত করা যায়, সেগুলি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সাইবারনেটিক্সের উন্নয়ন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক মস্তিষ্ক ও স্বয়ংনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নিয়ে গবেষণা সাইবারনেটিক্‌সের জন্ম দেয়।–উইকিপিডিয়া


[১১] অ্যান্থ্রোপোসিন (anthropocene): অ্যান্থ্রোপোসিন বলতে মনুষ্যকেন্দ্রিক এমন এক ভূতাত্ত্বিক কালপর্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয় যখন মানুষ তার সংখ্যা, ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার অর্থাৎ মানুষী ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে পৃথিবীর সার্বিক স-জীব ও অ-জীব উপাদান, পরিবেশ প্রতিবেশ ও জলবায়ুর ভয়াবহ বিপন্নতার সম্ভাবনা তৈরি তথা খোদ একটি গ্রহের চেহারা পাল্টে দিতে সক্ষম এক ভূতাত্ত্বিক ক্ষমতা (geological agent) হয়ে উঠেছে। অ্যান্থ্রোপোসিন এমন এক যুগ যখন মানুষই পৃথিবী নামক এই গ্রহের একমাত্র ভূতাত্ত্বিক শক্তি।


[১২] অ্যাসফিক্সিয়েশন (asphyxiation): অপ্রতুল অক্সিজেন প্রবাহ।


প্রকাশঃ ২শে বৈশাখ, ১৪২৮:::১১ই মে, ২০২১