এনরিকে দ্যুসেলের মুক্তিপরায়ণ দর্শনঃ নীতি ও জ্ঞানের ভূ-রাজনীতি
ওয়াল্টার মিনোলো
[ওয়াল্টার মিনোলো (Walter Mignolo) প্রখ্যাত আর্জেন্টাইন তাত্ত্বিক ও দার্শনিক। মিনোলো ডিউক ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। তিনি লাতিন আমেরিকার সাবঅল্টার্ন স্টাডিজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক। সেমিওটিক্স, সাহিত্যতত্ত্ব এবং আধুনিক ও ঔপনিবেশিক দুনিয়ার নানান দিক (বৈশ্বিক উপনিবেশিকতা, জ্ঞানের ভূ-রাজনীতি প্রভৃতি) নিয়ে কাজের জন্য মশহুর। Dussel's Philosophy of Liberation: Ethics and the Geopolitics of Knowledge শীর্ষক রচনাতে তিনি লাতিন আমেরিকার আরেক প্রখ্যাত দার্শনিক, ইতিহাসবিদ ও ধর্মতত্ত্ববিদ এনরিকে দ্যুসেলের মুক্তিপরায়ণ দর্শন ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মিনোলো'র এই প্রবন্ধের প্রস্তাবনার অংশটি তর্জমা করেছেন গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তা জার্নালের সহ-সম্পাদক সহুল আহমদ।]
এনরিকে দ্যুসেলের মুক্তির দর্শন (philosophy of liberation, মুক্তিপরায়ণ দর্শন) প্রকল্প বিগত তিরিশ বছর যাবত (১৯৬৯-৭০ সালে তাঁর বক্তৃতা ও লেখালেখি থেকে শুরু করে হাল-আমলে প্রকাশিত Ethics of Liberation: In the Age of Globalization and Exclusion [১৯৯৮] পর্যন্ত) বহু প্রসার ও রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যদিও মুক্তির দর্শন দ্যুসেলের কাজের কেন্দ্রীয় কাঠামো ছেড়ে বহুদূর ছড়িয়ে পড়েছে, তবু তিনি নিরলসভাবে এমন এক প্রকল্পের কথা ভাবছেন যাকে আমি এই অধ্যায়ে নীতি ও জ্ঞানের ভূ-রাজনীতি হিসাবে চিহ্নিত করব। দ্যুসেলের [এখন পর্যন্ত] কাজকে আমি দুটো কালপর্বেও ভাগ করব। প্রথম কালপর্বটা হচ্ছে ১৯৬৯-৭৫ সময়কাল অর্থাৎ আর্জেন্টিনা থাকাকালীন। দ্বিতীয় পর্বটা হচ্ছে, ১৯৭৬ থেকে শুরু করে একেবারে হাল-আমলের মেক্সিকোতে রাজনৈতিক নির্বাসনে থাকাকালীন পর্যন্ত। আরো অনেক বুদ্ধিজীবীদের মতো দ্যুসেলও সত্তর দশকের মাঝামাঝির দিকে সামরিক স্বৈরশাসনের মুখোমুখি হয়ে আর্জেন্টিনা ত্যাগ করেন। এই সামরিক স্বৈরশাসন ১৯৭৩-৮৩ পর্যন্ত জারি ছিল। আর্জেন্টিনা ছেড়ে আসার আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যুইয়ো’র (Universidad Nacional de Cuyo) দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন। এই দুই কালপর্বের মধ্যকার রূপান্তরকে মার্ক্সের সামগ্রিক কাজের সাথে দ্যুসেলের গভীর মোলাকাতের দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। সত্তর দশকের শেষ দিকে তিনি মেক্সিকোতে দুই-বছর-ব্যাপী সেমিনারে পড়ান। এই সেমিনারের একটা ফল হচ্ছে যে, দ্যুসেল মার্ক্সের কাজের ওপর একটি ট্রিলজি প্রকাশ করেন। সেইসাথে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস থেকে শুরু করে গেওর্গি লুকাস, ভি. আই. লেনিন, রোজা লুক্সেমবার্গ হয়ে একেবারে [ইয়ুর্গেন] হেবারমাস পর্যন্ত মার্ক্সবাদের একটা ক্রিটিক্যাল পুনঃপাঠ হাজির করেন। তদপুরি, ইমানুয়েল লেভিনাসের কাজের সাথে মোকাবেলাই দ্যুসেলের প্রকল্পকে একটি অটল গঠন বা প্রস্তুতি এবং সৃজনশীল মাত্রা দিয়েছিল; এবং এটা আমার প্রধান যুক্তিও বটে।