আমাদের সময়ে আমরা কিভাবে সাহিত্যকে সম্ভব করে তুলতে পারি?

মরিস ব্লাঁশো প্রসঙ্গে আগামবেন



ব্লাঁশো যখন লিখছে তখন তার কাছে আসলে কোন সমস্যা হাজির আছে? ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত Works of Fire ও Lautremont and Sade থেকে শুরু করে Space of Literature পর্যন্ত, কোন প্রশ্ন ব্লাঁশোর লেখার গতি ঠিক করে দেয়?খুব ই সহজ। নিঃসন্দেহে তার প্রশ্ন হচ্ছে “সাহিত্য কিভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে?” “সাহিত্য কি?” এই মার্কা নাদান প্রশ্ন না। “সাহিত্য কিভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে?” এই প্রশ্নই বরং অধিকতর কৌতুহলোদ্দীপক।


https://www.youtube.com/embed/LEgNCBBPvlI


কেন এই প্রশ্ন? এন্টেমে The Human Race শিরোনামে তার জবানবন্দী(testimony) প্রকাশ করেছেন। এই বইটা পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ব্লাঁশোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয় উঠবে। একই বছরে ইতালিতে প্রিমো লেভির If This is a Man শিরোনামের জবানবন্দী(testimony) প্রকাশিত হয়। ব্লাঁশো নিঃসন্দেহে ঐ সময়ে এ ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। Work of Fire এর শেষ লেখা “Literature and Right to Death” কিছু মাস পরেই Critique ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। এই লেখায় তো নাই-ই, এমনকি অন্যান্য যে লেখার নাম আমি নিলাম তাতেও Auschwitz (দক্ষিণ পোল্যান্ডের একটা শিল্পায়িত শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল) সম্পর্কে একটা বাক্যও আপনি পাবেন না। সে যাই হোক, আমি মনে করি, একভাবে বিবেচনা করলে, এই লেখাগুলি Auschwitz এর প্রত্যুত্তর ছিলো। তার মানে আমি কোনভাবেই এটা বোঝাতে চাচ্ছিনা যে ব্লাঁশো এটা সচেতনভাবে করেছেন। কিন্তু উনি যে সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছেন তার একেবারে মরমে ছিল এটা।


Auschwitz এর পরে সাহিত্য কিভাবে সম্ভব হয়? এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও সাহিত্য কিভাবে সম্ভবপর হয়? মরিস ব্লাঁশোর মত কেউ যে ডানপন্থী সংস্কৃতি থেকে এসে এবং আচমকা নিজেকে ক্যাম্পের মুখোমুখি অবস্থায় আবিষ্কার করে, তার জন্য কিভাবে সম্ভব?


ব্লাঁশো এটা কিভাবে গ্রহণ করবে? আমি যদি বলি যে এই লেখাগুলি Auschwitz এর প্রত্যুত্তর সেটা এইজন্য হবে যে ব্লাঁশো মৃত্যুর ওপরে একটা অস্ত্রপচার সম্পন্ন করেছেন। তিনি মৃত্যুকে দ্বিগুণ করেন। মৃত্যুর এক অসম্ভাব্যতার মধ্যে তিনি এটাকে বানচাল করে দেন। মরণের এই অসম্ভাব্যতা থেকেই তিনি ক্ষেত্র তৈরি করবেন। এটাই “Literature and Right to Death” এর মূলকথা। রিল্কের “দ্বৈত মৃত্যুর” ওপরে তার করা সমীচিনভাবেই বিখ্যাত ব্যাখ্যার মর্মও আসলে এটাই। অথবা কাফকায় “মৃত্যুর অসম্ভাব্যতা” যেমন শিকারী গ্রাছুস যে কিনা শহরের পর শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু মরতে পারছেনা। কিন্তু ব্লাঁশোর জন্য এটাই সাহিত্যের প্রধান শর্ত। এটা তাও বুঝায় যে ব্লাঁশোর জন্য সাহিত্যের ক্ষণ আসলে একটা মুলতবী করার মত। অনেকটা মরণকালে এক আজিব বিরতির মত যা একই সাথে মৃত্যুকে পাকরাও করে এবং এটাকে অন্তহীন করে তোলে। ক্যাম্পের অনিঃশেষ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ব্লাঁশো সাহিত্যকে মৃত্যুর অসম্ভাব্যতার মধ্যে বসান। এই অবিরাম দুর্যোগের মধ্যে সকল সাহিত্য, অথবা অন্তত ফরাসী সাহিত্যের একটা বড় অংশ, ব্লাঁশোর পরে নিজেদের জায়গা খুঁজে পেয়েছে। ব্লাঁশো কি ঠিক কাজ করেছেন? অথবা তিনি যা করেছেন তা করার অধিকার কি তার আছে? Auschwitz কি মৃত্যুতে খোদ মৃত্যুর ধারণাকে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে পেশ করেনি? সেটা আরেকটা প্রশ্ন। আমি মনে করি অনাগত প্রজন্মকে এই প্রশ্নগুলি করতে হবে। অনাগত প্রজন্ম এই নিষ্পত্তিমূলক প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবে, আমাদের সময়ে আমরা কিভাবে সাহিত্যকে সম্ভব করে তুলতে পারি?

______________


প্রথম প্রকাশঃ ২৯শে অক্টোবর, ২০১৯

সর্বশেষ সংশোধনঃ ২৯শে অক্টোবর, ২০১৯

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/822751055150610/