এখান থেকে তাহলে যদি আমরা দেখি, তাহলে এই রাজনীতি থেকে বের হওয়ার উপায় তাঁরা কি বলছে? এটার জন্য আমরা, হার্বার্ট মার্কুইজের আরেকটি বই আছে Counter Revolution and Revolt, ১৯৭২ তে প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে উনি কিছু রাস্তা বাতলাচ্ছিলেন। যেমন, একটা বলছেন, ৪৭ নাম্বার পৃষ্ঠাতে উনি বলছেন যে, কাউন্টার এডুকেশন অ্যান্ড অর্গানাইজেশন (counter education and organization). ঐযে, ঠিক লুকাস যেটা ১৯১৯ এ শুরু করেছিলেন, যে, “counter education and organization”। যেই পদ্ধতিতে আমি এতকাল শিখে এসেছি, এই পদ্ধতিটাকে চ্যালেঞ্জ করা। যেই সামাজিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমি এতকাল বড় হয়ে এসেছি, সেই সামাজিক সংগঠনটাকে চ্যালেঞ্জ করা, সেইটাকে ক্রিটিক্যালি প্রশ্ন করা। ফ্রি রিলেশন এবং ইন্ডিভিজ্যুয়াল (free relations and individual), আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের ফ্রী রিলেশন; এবং উনি কি বলছেন? উনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, we are not free এবং কেন আমরা ফ্রী-না সেটা ইতিমধ্যেই আমরা দেখলাম। যে, একেবারে প্যারেন্টিং থেকেই, মানে আমরা যদি আবার এরিক ফ্রমকে একটু চিন্তা করি। যে, our relations are mediated through economic criteria বা ইন্টারেস্ট, সেল্ফ ইন্টারেস্ট। তো, সেখান থেকে তিনি বলছেন যে, আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কটা হতে হবে মুক্ততার ভিত্তিতে। ইভেন আমাদের প্রকৃতির সাথেও নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন কর তে হবে। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কটাও আমাদের হতে হবে মুক্ত, যেখানে প্রকৃতিও একটা এনটিটি হিসেবে তার মুক্ততা চর্চা করতে পারে। তো, প্রসেসটা কি? প্রসেসটা হচ্ছে লিবারেশনের মধ্যে আসলে যে ডায়ালেক্টিকগুলো আছে, এটাকে প্রথম কথা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে। এখানে আমি একটু একজন অ্যান্থ্রোপোলজিস্টের কথা একটু স্মরণ করি, ক্লদ মেয়াসুঁ, ফ্রেঞ্চ অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট, নিও-মার্ক্সিস্ট। তিনিও আসলে এই একই প্রশ্ন নিয়ে কাজ করেছেন, যে, “মার্ক্সিজম কেন কাজ করলো না?” এবং একই প্রশ্ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি আবার, যেহেতু তিনি অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট, তাঁর প্রশ্নটা উনি একটু অন্য জায়গায় নিয়ে গেলো, মানে তিনি কোন রাস্তায় উত্তর খুঁজবেন। তিনি উত্তর খুঁজতে লাগলেন যে, মার্ক্স বলেছেন যে ডায়ালেক্টিক্সের মধ্য দিয়ে একটা সমাজব্যবস্থা বা একটা উৎপাদন নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তী সমাজব্যবস্থায় যাবে, তাইনা? সেখানে তিনি প্রশ্ন করলেন যে, তাহলে মার্ক্সের দেখানো পথে গোড়াতে ছিল কি?
(শ্রোতাদের থেকে) প্রিমিটিভ কমিউনিজম।
প্রিমিটিভ কমিউনিজম হুইচ ওয়াজ ক্লাসলেস। তো, যেখানে ক্লাসই ছিলো না, সেখানে ক্লাস কনফ্লিক্ট কোথা থেকে আসলো? আর ক্লাস কনফ্লিক্ট যদি না থাকে, তাহলে সেটা স্লেভারিতে কিভাবে গেলো? উনি তখন, এইযে অ্যান্থ্রোপোলজিস্টদেরকে আমরা খুব মোটাদাগে দোষ দিয়ে দেই যে, “এরা খালি নন-ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটিকে খুঁজে বেড়ায়।” এক ধরনের আরবান স্নোবিজম আমাদের মধ্যে, বা একধরনের এলিট স্নোবিজম, কারণ আমরা শহর ছেড়ে যাই গ্রাম অধ্যয়ন করতে। আসলে অনেক কারণেই যাই। যেমন উনি কেন গিয়েছিলেন? উনি আসলে এরকম একটা সমাজের খোঁজে ছিলেন যেখানে ক্যাপিটালিস্ট সোশ্যাল রিলেশনের প্রবেশ বা তার ইন্ট্রুশন অনেক কম বা নাই। তাহলে সেখানে উনি ঐ প্রশ্নটার উত্তর খুঁজবেন। এই কারণে উনি “গুরো সোসাইটি” নামে একটি সোসাইটি, সেখানে গেলেন এবং সেখানে তিনি দেখতে লাগলেন এবং উনি একটি কিনশিপ বেইজড সোসাইটি খুঁজতে লাগলেন, যেখানে কিনশিপ মোড অফ প্রোডাকশন এখনো ডমিনেন্ট, যে ওখানে এখনো কি করে তাহলে কি হচ্ছে? তখন উনি ওখানে দেখলেন যে ওখানেও সারপ্লাস তৈরি হয়। ওখানেও সারপ্লাস তৈরি হয়। সেই সারপ্লাস কি কারণে তারা রেখে দেয়? কারণ হচ্ছে নিওলিথিক পিরিয়ডে যখন মানুষ সেডেন্টারি এগ্রিকালচার শুরু করলো, সেডেন্টারি এগ্রিকালচার মানে হচ্ছে হলো গিয়ে এক জায়গায় বসবাস করার ভিত্তিতে যে কৃষিকর্ম। যখন শুরু করলো, তখন মানুষ দেখতে পেলো এগ্রিকালচারের একটা সাইকেল আছে, যেখানে এর একটা প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড আছে আবার এর একটা আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড আছে। এবং প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড ইজ অলওয়েজ ফলোওড বাই অ্যান আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড। তাহলে প্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে যা হয় সেখান থেকে কিছু যদি আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড এর জন্য না রাখা হয়, তাহলে আনপ্রোডাক্টিভ.. তারা তো এখন আর নোম্যাড (Nomad) না, ঘুরে বেড়ায় না এবং শিকার সংগ্রহও তারা সেভাবে আর করে না। তাহলে প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড থেকে কিছু রেখে দিতে হবে। এখন এই প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড থেকে যা রেখে দিবে আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ডের জন্য, সেটা তো ডিস্ট্রিবিউট করতে হবে, ডিস্ট্রিবিউট কে করবে?
(শ্রোতাদের থেকে) পলিটিক্যাল অফিস।
একটা পলিটিক্যাল অফিস থাকতে হবে। এখন এই পলিটিক্যাল অফিস হোল্ডার কারা হবে? সাধারণত এটা দেখা যায় মুরুব্বিরা হন। আবার কিন্তু এরিক ফ্রমের প্যারেন্টিং এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণত এটা হন হচ্ছে মুরুব্বিরা। কারণ মুরিব্বিদের কাছে থেকেই তো আমরা শিখি, এগ্রিকালচারাল টুলগুলো পাই। তাইনা? আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে তারা আমাদের হাতে কিছু তুলে দেন। তারা আমাদেরকে ঐ সিকিউরিটি দেন। যেকারণে এটা বলছিলাম, ঐযে লিবারেলিজমের যে ডায়েলেক্টিক্সটা, সেটা বলতে গিয়েই। এখানে একটা মজার কথা বলেছেন ক্লদ মেয়াসুঁ, যে, ওখানে যারা ইয়াং পিপল ছিলো তারা তাদেরকে কি করতো, তারা যাতে এই মুরুব্বিদের কথা শোনে..
(শ্রোতাদের থেকে) ইয়াং মেইল?
ইয়াং মেইল, ইয়েস। তারা যাতে মুরুব্বিদের কথা শোনে, প্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে তারা যাতে তাদের উৎপাদনের একটা অংশ কেন্দ্রীয় শস্যভান্ডারে তুলে দেয়, একথা যেন তারা শোনে এজন্য তারা একটা চমৎকার কিনশিপ মেকানিজম বের করলো, উইথ দ্যা হেল্প অফ ম্যারেজ। সেইটা কি? সেইটা হচ্ছে যে, ইয়াং মেইলরা যখন বিবাহ করবে তখন তাদেরকে কনেপণ দিতে হবে। সেই কনেপণটা কি? শস্য সে কোত্থেকে পাবে? শস্য পাওয়ার জন্য তাকে সিনিয়রদের কাছে যেতে হচ্ছে, রাইট? তার মানে, সিনিয়রদের সব কথা তাকে শুনতে হবে। এখন এখানে মেয়াসুঁ বলছেন, যে, ইয়াং পিপলরা, তখন তো জমির কোন অভাব ছিলো না, এতো মানুষ তো ছিল না, তাইনা? এবানডেন্ড ল্যান্ড, রাইট? আর উৎপাদন করতে যে জিনিসপত্র লাগে, যে মিন্স অফ প্রোডাকশন। এটাও তো বানানো এমন কিছু সোজা না-যে ঐ বিদ্যার জন্য আমার সিনিয়রদের কাছে মাথা পেতে রাখতে হবে সবসময়, ওগুলাও তো সোজা ছিল। কেন ইয়াং পিপলরা বের হয়ে গেলো না? এবং কি হচ্ছে, খেয়াল করি আমরা যদি আবার ম্যারেজের কথায় আসি, যে আমার একটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছে এবং আমি তার বাবার কাছে গেলাম, যেয়ে বললাম যে “আমি আমার মুরুব্বিদেরকে মানি না বা মানব না, আমার কাছে কোন ব্রাইডওয়েলথ নাই, আপনার মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে, আমরা বিয়ে করি।” উনি কি দিবেন? কারণ তার কাউন্টারপার্টকে চ্যালেঞ্জ করলে তার কমিউনিটিতে কিন্তু তার অথরিটি উড বি চ্যালেঞ্জড, রাইট? তো এখন তাদের জন্য উপায় কি ছিল? উপায় ছিল হচ্ছে হলো পালিয়ে আরেক জায়গায় চলে যাওয়া। নতুন করে একদম একা একা শুরু করা। কিন্তু, সেটা তো করতো না। বা খুব মানে, ঘটতো না সেরকম। কেন? তখন মেয়াসুঁ বলছেন, যে, ফ্রিডম হলো আসলে একটি রিলেটিভ কনসেপ্ট। কারণ হচ্ছে, ট্রু ফ্রিডম আসলে কোনটাকে বলবো? সত্যিকারের ফ্রিডম, সত্যিকারের লিবার্টি আমরা কোনটাকে বলবো? True freedom comes when it’s no longer required, তখনি আসলে সত্যিকারের ফ্রিডম আসবে, যখন আপনি এর এটা চাইবেন না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এটি চাইছেন, তার মানে হচ্ছে ল্যাক অফ ফ্রিডম আছে। সো ট্রু ফ্রিডম তখনই আসবে যখন এটার আর চাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না, অর্থাৎ এটা শূণ্য অবস্থায় চলে যাবে। সো, ফ্রিডমকে আসলে আমরা চিন্তাই করি যে আমার অধীনস্থ কেউ থাকবে, তার মানে হলো আমার ফ্রিডম আছে। সো ফ্রিডম ইজ অলওয়েজ রিলেটিভ। সো, তার মানে দেয়ার ইজ অ্যা ডায়ালেক্টিক ইন ফ্রিডম, ইন লিবার্টি। এইটা আমাদেরকে প্রথমত স্বীকার করতে হবে। তখন আমাদের কি হবে? তখন আমরা বুঝবো যে, উনি (হার্বাট মার্কুইজ) বলছেন, যে, No immediate transition from needs to political goals. এই যে আমরা প্রয়োজন বোধ করি যে “আমার এটা দরকার, আমার ওটা দরকার”, এখান থেকে আমার পলিটিক্যাল গোলে আমি চলে যাবো, এই যাওয়ার ব্যাপারে ইমিডিয়েট কোনো রাস্তা আসলে নাই, এটা অনেক দীর্ঘ রাস্তা এবং need people to comprehend the contradiction। এইযে কন্ট্রাডিকশনগুলোর কথা এতক্ষণ বলছিলাম বা উনারা বলছিলেন, এই কন্ট্রাডিকশনগুলোকে কম্প্রিহেন্ড করতে হবে। আমাদের কি হয়? বাংলাদেশে যদি আমরা এখন খেয়াল করি, বা সোশ্যাল মুভমেন্টগুলোর কথা যদি খেয়াল করি, আমি এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার আগেই কিছুদিন আগে চিন্তা করছিলাম যে আমাদের আন্দোলনগুলোর একটা খুব মজার ব্যাপার আছে। আমরা যখন কোন একটা কিছু নিয়ে আন্দোলনে নামি, বিশেষ করে আমরা যারা নিজেদেরকে সো কল্ড “সচেতনপন্থী” হিসেবে দাবি করি, তাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে যে আমরা নিজেদেরকে ছাড়া বাকি আর সবাইকে বেশ অসেচতন ভাবতে পছন্দ করি। আমাদের মধ্যে এধরনের একটা আত্মশ্লাঘা আছে। কিন্তু এই কন্ট্রাডিকশনগুলো, ডায়লেক্টিক্সটা মাথায় থাকলে কি হবে? প্রতিনিয়ত আমি আমার নিজের সীমা বুঝতে শিখবো। যে এখনো আসলে যথেষ্ট করা হয়নি বা এখনো আসলে নিজেকে, নিজের রিয়েল সেল্ফটাকে উন্মুক্ত করতে পারিনি। তখন ঐ শ্লাঘা অনেক কম আসবে। নাকটা নেমে যাবে, তাইনা? তো, তিনি বলছেন, তাঁর Counter Revolution and Revolt বইয়ের ৪৯ পাতায় বলছেন, revolution should revolutionize the human being, সবার আগে যেটা করতে হবে যে, মানুষের চরিত্রকে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে।
একের সাথে অন্যের আন্তঃসম্পর্ককে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে। তা না হলে শুধুমাত্র ইকোনমিকে কেন্দ্র করে একটা রেভ্যুলেশনের কথা চিন্তা করলে সেটা খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে। সেটা বেশিদিন টিকবে না। ফর এক্সাম্পল, সেক্সুয়াল রেভ্যুলেশন। একেবারে উদাহরণ দেই, আমরা যদি খেয়াল করি যে, এটা কিন্তু আমাদের কাছে.. স্পেশালি আমাদের উইমেন ফোকদের জন্য, একজন নারী যদি ভাবে যে সেক্সুয়াল লিবারেশন তার জন্য বেশ ইমান্সিপেটরি, কেন ইমান্সিপেটরি? সেক্সুয়াল লিবারেশন তার জন্য বেশ ইমান্সিপেটরি। পুরুষতো বহু আগেই নিজেরটা নিশ্চিত করে রেখেছিল। কিন্তু উইমেন ফোকদের জন্য যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে তার জন্য সে কেন এটাকে ইমান্সিপেটরি ভাবতে পারে? ঠিক একইভাবে, যেভাবে আমরা পুরুষরা ভাবি। যে, এখন আর আমার সেই মনোগ্যামাস সেক্সুয়াল বন্ডেজের মধ্যে বেঁধে রাখতে হবে না নিজেকে ইত্যাদি। কিন্তু, সেই নারীই যখন একজন লেসবিয়ানকে দেখে নাক শিটকাবে, তখন মার্কুইজ বলবেন, হলো না! এর মধ্য দিয়ে.. এই সেক্সুয়াল রেভ্যুলুশন দিয়ে আসলে হিউম্যান বীয়িংকে রেভ্যুলেশনাইজ করা যায় নি; হিউম্যান ন্যাচারকে রেভ্যুলেশনাইজ করা যায় নি। সো, সেইটাকে আসলে আগে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে।
শেষ করবার আগে আমি একটা সাবধানতা দিয়ে শেষ করছি যেটা হার্বাট মার্কুইজ আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে, এই যেই যেই পথে তাঁরা রেভ্যুলেশনকে আনবার কথা চিন্তা করছেন, যে একের সাথে অন্যের সম্পর্ককে রেভ্যুলেশনাইজ করা, নানান ধরনের আন্দোলন, যেহেতু কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, প্রত্যেকটা আন্দোলনের কিন্তু ক্যাপিটালিস্ট কো-অপশন ঘটতে পারে। আরেকটা কন্ট্রাডিকশন আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে। যে, প্রত্যেকটা আন্দোলনকেই ক্যাপিটালিজম গিলে ফেলতে পারে। উইমেন লিবারেশন, এলজিবিটি মুভমেন্ট— যেকোন কিছুকেই ক্যাপিটালিজম কিন্তু কো-অপ্ট করে ফেলতে পারে। ফলে প্রত্যেকবারই আমাদের এখানে কোন ডায়ালেক্টিক্স প্রবেশ করছে, কোন কন্ট্রাডিকশন তৈরী হচ্ছে, আমাদেরকে স্টেপ ব্যাক করতে হবে; ওইটার খোঁজখবর নিতে হবে; এবং প্রয়োজনে নিজের তৈরী করা আন্দোলনকেই ক্রিটিসাইজ করতে হতে পারে। নিজের তৈরী করা আন্দোলনকেই ক্রিটিসাইজ করতে হতে পারে, সেই সাহস আমাদের থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিন্তু এই সাহস আমাদের থাকে না। কারণ, টোটালিট্যারিয়ানিজম থেকে আমরা শিখে ফেলেছি যে নিজের তৈরী করা আন্দোলনের ফসল ভোগ করাটাই হচ্ছে আগের কথা। ওইটাকে ক্রিটিসাইজ করতে গেলে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই যদি আমরা চিন্তা করি যে পেছন ফিরে নিজের তৈরী করা কোন আন্দোলনকেই আমরা কিন্তু ক্রিটিসাইজ করতে পারি না। বা, পুনর্পাঠ করতে পারি না। এক মুক্তিযুদ্ধকেই যদি কেউ পুনর্পাঠ করেছে, তো সেটা রীতিমতো দুঃসাহস হিসেবে বিবেচিত হয়; এবং নানানভাবে তাকে তকমায়িত করা হয়। যাই হোক, পুরো বিষয়টা এই আন্দোলনগুলোর পুঁজিবাদী কো-অপশন হতে পারে, এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এবং খুব বেশি করে প্রযোজ্য হয়— মানে আমি বলবো, আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে— উইমেন লিবারেশনের ক্ষেত্রে। কারণ এই মুভমেন্টটার— আমরা যদি সেই ক্লারা জেটকিনদের সময় থেকে চিন্তা করি— খুবই একটা সোশ্যালিস্ট ফেইজ ছিল; কিন্তু গ্রাজ্যুয়েলি সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ, পুঁজিবাদ এটাকে নানানভাবে কো-অপ্ট করে নিচ্ছে। সো, ওটাকে কিন্তু পুনর্পাঠ করবার প্রয়োজন হতে পারে। তো, এই পুনর্পাঠ করবার সাহস এবং সাবধানতা আমরা ধারণ করব, এটা বলেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
— — — — —
১১ই আগস্ট, ২০১৮