মহামারীকালের ভারত: করোনাভাইরাস এবং ইতিহাসের উপযোগ

ডেভিড আর্নল্ড



[নিম্নবর্গ অধ্যয়ন বা সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডেভিড আর্নল্ডের Pandemic India: Coronavirus and the Uses of History লেখাটি The journal of Asian Studies এর ৭৯ তম খন্ডের ৩য় সংখ্যায় (আগস্ট, ২০২০) প্রকাশিত হয়েছে। আর্নল্ডের এই লেখাটি অনুবাদ করেছেন সাদিয়া শান্তা। সাদিয়া শান্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এই অনুবাদটির সম্পাদনার কাজটি করে দেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদের প্রতি বোধিচিত্ত বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।]



ভারতের কোভিড-১৯ এর ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা-বিবরণগুলোতে মোটাদাগে দুই ধরনের বয়ান দেখা যায়। একটাকে বলা যায় "ঐতিহাসিক", অন্যটি "বিদ্রোহী"। আগে ঐতিহাসিক বয়ানটা নিয়ে আলাপ করা যাক। দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় অতীতের শিক্ষা এবং ধারাবাহিকতার ছাপ খুব প্রগাঢ়। মহামারী বিজ্ঞানীদের কাছে কোভিড-১৯ একটি "অভিনব" করোনাভাইরাস, কিন্তু ঐতিহাসিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই রোগের আচরণ এবং তার বিপরীতে যে আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা গেছে, তাতে নিশ্চিত কোন "অভিনবত্ব" নেই।


২০২০ সালের শুরুর দিকের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষকদের বারবার গত দুইশো বছরে উপমহাদেশে শুরু হওয়া বা বাইরে থেকে আসা মহামারীর এক দীর্ঘ সারির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ১৮১৭ সালের কলেরা, ১৮৯৬ সালের বুবোনিক প্লেগ, ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মিলিয়ে দেখে অনেকেই খুব সরলকৃত একটি উপসংহার টানছেন যে ‘ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি’ ঘটাচ্ছে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির ধারণাকে সমর্থন জানাতেই যেন মহামারীবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই অনুমান করছিলেন যে ১৯১৮-১৯১৯ এর স্প্যানিশ ফ্লু'র এক শতাব্দী পরে আরেকটা মহামারী—খুব সম্ভবত ইনফ্লুয়েঞ্জা—প্রায় অনিবার্যভাবে আসতে যাচ্ছে। (স্প্যানিশ ফ্লু'তে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সম্ভবত এক-তৃতীয়াংশ কী এক-চতুর্থাংশ, প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিলিয়ন মানুষ, মারা গিয়েছিল শুধু ভারতেই।) এক বিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যা, ঘনসবতি, ব্যাপক দারিদ্র ও অপুষ্টি, লক্ষ লক্ষ অভিবাসী কর্মী এবং জরাজীর্ণ জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো নিয়ে ভারত এই মহামারীর ছোবলে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হবে সেটা প্রায় নিশ্চিত ছিল। ১৯১৮ সালের ছকে হিসেব করলে তো কয়েক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে।


সাধারণত 'প্যান্ডেমিক' এবং 'এপিডেমিক'-এর ধারণা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ধরে নিই এপিডেমিকের বৈশ্বিক বিস্তারই প্যান্ডেমিক৷ কিন্তু কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের ফলে সামাজিক গতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পুনর্বিবেচনাতে (political reverberation) প্যান্ডেমিক এবং এপিডেমিকের ভিন্ন ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এপিডেমিকের ফলে রাষ্ট্রের সরকার এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি (health services) জনগণের সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে; অন্যদিকে প্যান্ডেমিক একটি বৈশ্বিক ব্যাপার। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে ভারত প্যান্ডেমিকের প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেয়। কলেরা, ডেঙ্গু, পক্স, প্লেগ একের পর এক রোগের ঢেউ আসতে থাকে, যা স্থলপথে ইউরোপের দিকে কিংবা ভারত সাগরের উপকূলবর্তী পরিসীমার দিকে অগ্রসর হয়। বিশ্বায়ন, যা কিনা ভারতের মূলনীতির কেন্দ্র, তা আধুনিক প্যান্ডেমিকের ধারণাকে নতুন আকৃতি দান করে। জাহাজ পথে চলাচল, রেলপথ, বিস্তারমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অভিবাসী শ্রমিকদের যাতায়াতের ফলে মহামারী বিস্তারের গতি ও সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে সংবাদপত্র, টেলিগ্রাফ ইত্যাদির মাধ্যমে মহামারীর বৈশ্বিক ভীতি ও সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়ছিল। ১৮১৭-১৮২৩ এর কলেরা মহামারী পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়তে বছরখানেক সময় নেয়, কিন্তু ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে প্লেগ ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় মাত্র কয়েক মাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা সময় নেয় কয়েক সপ্তাহ!


প্রতিটি মহামারীর ক্ষেত্রেই ভারত ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রাখে। ঊনবিংশ শতাব্দীর কলেরা মহামারীর সময় ভারত ছিল এর উৎপত্তিস্থল, আবাসস্থল এবং বৈশ্বিক সংক্রমণের উৎসস্থল (যা ব্রিটিশ শাসনের সমালোচকরা ক্লান্তিহীনভাবে বলে যাচ্ছেন)। বুবোনিক প্লেগের সময়, ভারত ছিল চীন থেকে পশ্চিমাভিমুখগামী বের হয়ে আসা রোগের গ্রহীতা। তবে আশঙ্কা ছিল, পাছে ভারতের বন্দরগুলি অতিক্রম করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দিকে তা অগ্রসর হয়। পরিশেষে দেখা যায়, প্লেগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মারা যাওয়ার নব্বই শতাংশই (৯০%) ভারতবাসী। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও ভারত ছিল রোগের গ্রহীতা (recipient)। তবে এবার মহামারীর বিস্তার ঘটলো পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখে, ইউরোপের যুদ্ধাঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে। প্লেগের সময় যখন কয়েক বছর ধরে কেবল আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল, ইনফ্লুয়েঞ্জা সেখানে কয়েক মাসেই মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে তুললো। এই মহামারীতে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা বারো মিলিয়নে গিয়ে ঠেকলেও ভারত তখনো বিশ্ববাসীর মনোযোগ পায়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কবলে পড়ে ভারতের মহামারী পরিস্থিতি দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায়। বিশ্ববাসীর মনোযোগের কেন্দ্র তখন যুদ্ধের করুণ দশা এবং মহামারীতে পশ্চিমা ক্ষয়ক্ষতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। কলেরা এবং প্লেগের সময় ভারতকে কেন্দ্র করে মূল গল্প তৈরী হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে ভারত ছিল কেবল একটা পার্শ্ব-দৃশ্য।


উনবিংশ শতাব্দীর কলেরার পর থেকে মহামারী এলেই পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মাঝে সংক্রমণ বিস্তারের দায়ভার নিয়ে একে-অপরকে দোষারোপের একটা বৈশ্বিক ‘ব্লেইম-গেইম’ শুরু হয়। সাথে ‘প্যান্ডেমিক লীগে’ জার্মানীর তুলনায় ব্রিটেন কেমন করলো কিংবা পাকিস্তানের তুলনায় ভারত কেমন করলো টাইপের আলাপ। কলেরা যেহেতু ভারত থেকে ছড়িয়েছিল, অন্য উপনিবেশিক সাম্রাজ্য আর জাতিগুলো তখন ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের দুষেছিল ভারত তথা উৎসস্থলেই কলেরা আটকে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য, যার মর্মার্থে ছিল ভারতের হিন্দুদের স্নান-উৎসবগুলো আর মুসলমানদের হজ্ব যাত্রার দিকে তোলা অভিযোগের আঙুল, কলেরার পশ্চিমাভিমুখী বিস্তার ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার জন্য এসবকে দায়ী করে। মহামারীর অপবাদমূলক ভৌগোলিক নামগুলো, যেমন- "এশিয়ান কলেরা", "হংকং ফ্লু" এখন আর তেমন প্রচলিত নয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীর ভাবনা জন-মনে এখনো একই রকম প্রভাব ফেলে।


১৮৬৬ সালে আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদিরূপ) ব্রিটিশ ভারতের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করার ও মহামারী রোগ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হয়। এই চেষ্টার উদ্দেশ্য ছিল "প্রাচ্য থেকে আসা অচেনা রোগের সংক্রমণ" থেকে ইউরোপকে রক্ষা করা। ফলে মুক্ত বাণিজ্য ও দেশ বিদেশে অবাধ যাতায়াতে বাধা সৃষ্টির কারণে ব্রিটিশদের আপত্তি থাকলেও পরিদর্শনমূলক ব্যবস্থা ও সঙ্গ-নিরোধ (কোয়ারেন্টিন) এর মত কিছু ব্যবস্থা টিকে যায়। কিন্তু এসব পদক্ষেপের মূলে ভারতকে মহামারী উত্তরণে সহায়তার চেয়ে যে প্যানডেমিক-এশিয়া থেকে ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকাকে আলাদা রাখার উদ্দেশ্য সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়। লক্ষণীয় যে, ১৮৯৬ সালে বোম্বেতে (মুম্বাই) বুবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে ভেনিস কনফারেন্সে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার জন্য পরিচ্ছন্নতা অভিযানের দাবি তোলা হয় এবং চটজলদি ব্রিটিশরা পদক্ষেপ না নিলে ভারতের সাথে সমুদ্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেয়া হয়। ফলে ১৮৯৭ সালে "এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট(Epidemic Diseases Act)" নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, যা ১২৩ বছর পরে পুনরুজ্জীবিত করে প্রায় একই রকম সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য বর্তমান ভারত সরকার নতুন করে প্রয়োগ করছে।


সাম্প্রতিক মহামারী পরিস্থিতিকে ১৮৯৬ ও ১৮৯৭ সালের ভারতের মহামারী পরিস্থিতির সাথে খুব সহজেই তুলনা করা যায়। ভারতে তখন (এখনকার মতোই) এক বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিল। মহামারীর ভয়ে এবং মহামারী ঠেকাতে ব্রিটিশ কর্তৃক ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণী পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সন্দেহভাজন সংক্রমিতদের বাড়ি কিংবা রাস্তা থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছিল। কখনো বা সন্দেহভাজনদের বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। রেলপথের যাত্রীদের যেখানে সেখানে পাশবিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল। রাষ্ট্রের জনগণও এমন পরিস্থিতিতে দাঙ্গা বাধিয়ে তোলে। তারা ডাক্তার ও এম্বুলেন্সের উপর আক্রমণ করতে থাকে। রাস্তার ধারে ধারে প্রতিদিন লাশের পাহাড় জমতে থাকলে লাশের সৎকার ব্যবস্থায়ও নিষ্ঠুরতা দেখা যায়। (দেখুন ফিগার-১ ও ফিগার-২) তবে তখনকার মধ্যবিত্ত শ্রেণী "নিজেদেরকে সরিয়ে রাখা(self-isolating)"র মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারতো। এটা অংশত সম্ভব হয়েছিল ১৮৯০ এর দশকে “বর্ণভিত্তিক হাসপাতাল(caste hospitals)” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তারা জাত-পাত, ধর্ম, শ্রেণীর দোহাই দিয়ে নিজেদের আলাদা রাখতে পারতো। মধ্যবিত্তদের জন্য তখন এই জাত-পাতের ভেদাভেদ এক ধরনের বিশেষ সুবিধা হয়ে উঠেছিল। দরিদ্র বস্তিবাসী এবং অভিবাসীদের জন্য "সেল্ফ-আইসোলেটিং" ছিল (এবং এখনও তা-ই) এক অবাস্তব কল্পনা মাত্র। তারা রোগ আর রুজি হারানো দুইয়েরই শিকার হয়েছিল।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া মূলত ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ফলে প্লেগ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা সময়কালের মতো আমজনতার অপ্রতিভ উপস্থিতি নিজেদের আরো দৃঢ় করে তোলে। পার্থক্য কেবল এই যে, করোনাভাইরাস মহামারীতে সাধারণ জনতার এই ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতি এখন বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভারতের আটপৌরে বা সাধারণ শ্রমিকশ্রেণীর উপর মনোযোগ আবদ্ধ করেছে, যারা কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে ছুটে যায় এবং মহামারী পরিস্থিতিতে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে পড়ে আবার গ্রামে ছুটে আসে। কারণ গ্রামেই তারা কৃষিভিত্তিক খাদ্যের খানিক নিরাপত্তা লাভ করে এবং পরিবার পরিজনের মাঝে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করে।২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে যেভাবে দিল্লী, মুম্বাই, সুরাট এবং হায়দ্রাবাদের মত শহরে যেমন ঘটেছে, ১৮৯৬ সালের অক্টোবর থেকে ১৮৯৭ এর ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ—এক পরিসখ্যান মতে—শুধু বোম্বে থেকেই ৩,৮০,০০০ লোকে পালিয়েছিল যে শহরের মোট জনসংখ্যাই তখন ছিল ৮,৫০,০০০।


কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের পর একটি চাপা পড়া সত্য নতুন করে উদ্ভাসিত হয়; কাজের খোঁজে যারা শহরে পাড়ি জমায় সেই শহরগুলি তাদের আপন নয়। বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকে মহামারীর কবলে পড়ে গ্রামে ফেরত যাওয়া এমন একজনের মুখে বলতে শোনা যায়, "এই শহর আমাদের নয়"। তবে মহামারীর ফলে সমন্বিত শহর ও গ্রামাঞ্চলের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক দূরত্ব অতিমাত্রায় প্রদর্শিত হতে পারে। একদিকে অভিবাসীদের কাছে শহরগুলি যেমন অচেনা জায়গা হয়ে উঠে, অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের চেষ্টা থাকে কড়া নজরদারির (ডাক্তার, ড্রোন, অ্যাপ) মাধ্যমে শহরের ভেতরেই সংক্রমণ আটকে রাখা। কেননা শহরের গন্ডি পেরিয়ে সংক্রমণ গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে তা ঠেকানো তখন দুরূহ হয়ে উঠবে। ১৮৯০ এর দশক ও ১৯০০ এর প্রথম দশক পর্যন্ত প্লেগের সংক্রমণকালে অভিযান এবং তদারকির মাধ্যমে জনগণকে সংক্রমণমুক্ত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান মহামারীতেও রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতি রক্ষার উদ্দেশ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংক্রমণমুক্ত করার প্রচেষ্টায় সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।


ঐতিহাসিকরা ১৮৯৬-১৮৯৭ সালের প্লেগ পরিস্থিতির ধারণা নেন কেবল ঔপনিবেশিক আমলের চিত্র/ফটোগ্রাফি, বিবরণী ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ও আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ঘন্টায় ঘন্টায় মহামারী পরিস্থিতির খবরাখবর জানতে পারি। পরিস্থিতির উন্নতি অবনতি সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিতর্কমূলক আলোচনা দেখতে পারি। করোনাভাইরাস মহামারীতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ শহরাঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যায়, মহামারী পর্যবেক্ষকদের তা দেশ-ভাগের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।১০ দেশ-ভাগের সময়ও মানুষ দলে দলে ঠিক একইভাবে সীমান্ত পেরিয়ে দেশান্তরে পাড়ি জমিয়েছিল। ভারতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার একটা পুরানো ঐতিহ্য আছে যা কমপক্ষে উইলিয়াম ডিগবির ১৮৭০ সালের ‘দুর্ভিক্ষ প্রচার’ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু আজকে গরিবদের একটা নাম আছে, মুখ আছে, স্বর আছে যারা প্রশ্ন করা সাংবাদিকের কাছে রাগ আর হতাশা নিয়ে কথা বলতে পারে।১১ তারা (দরিদ্ররা) এবং যে বিপর্যয়ের মধ্যে তারা আছে সেটা ঘটমান বাস্তব। এই বড় বিপর্যয় কি মানুষকে আরো বেশি সহানুভূতিশীল করে তোলে? কিছু কিছু ঐতিহাসিকের মতে মহামারীর করুণ দশা প্রচলিত সামাজিক ব্যবধান ভেঙে সাধারণ মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। তাদের মাঝে বিপদের আশঙ্কা, মহামারী পরিস্থিতির ধারণা, একে অপরের পাশে দাঁড়ানো ও সংক্রমিতদের চিহ্নিত করার এক সম্মিলিত প্রয়াস তৈরী হয়।১২ ভারতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায়, মহামারী সংকটে সমাজের শ্রেণী বৈষম্য আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, বৈষম্য নতুন বিভাজনের রূপ নিচ্ছে। আর এসবের মূলে একটা নিম্নবর্গীয় রাজনীতি কাজ করছে।


১৮৯০ সালে প্লেগ মহামারীর সময়ে (আগের কলেরার সময়েও) ব্রিটিশদের ইজ্জতে টান পড়েছিল একসারি ভিনদেশী বিশেষজ্ঞরা ভারতের মাটিতে এসে উপমহাদেশে মহামারীর বৈজ্ঞানিক তদন্ত করায়। যদিও উপনিবেশিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিম্নমুখীন ভাবমূর্তি খানিক পুনরুদ্ধার হয়েছিল রাশিয়ান অভিবাসী ও পাস্তুরিয়ান ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ ওয়ালদেমার হাফকিন-এর বোম্বেতে বানানো প্লেগ-নিরোধী সিরাম উদ্ভাবন এবং তারপরে চলা বিস্তৃত মহামারী গবেষণার কারণে। ভারতের প্লেগ মহামারী পুরো বিশ্বকে শিক্ষা দিয়েছিল, বর্তমানকে বোঝার একটা ছক-চিত্র দিয়েছিল। আগের মহামারীগুলোতে সৈনিকদের গুরুতর ভূমিকা ছিল। কলেরার প্রাক্কালে বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় যুদ্ধবিদ্ধস্ত, খাদ্যাভাবে ভোগা ভারত জুড়ে টহলরত সৈনিক ও তাদের ক্যাম্পের অনুগামীরা দেশজুড়ে চলাচলের মধ্য দিয়ে রোগগুলো বয়ে নিয়ে গেছে। প্লেগের সময়ে সৈনিকদের রোগ ছড়ানোর চেয়ে অ-জনপ্রিয় স্বাস্থ্য-আইন আরোপে নিয়োজিত হওয়ার প্রমাণই বেশি পাওয়া যায়। সেদিক থেকে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কোন নিশ্চিত তুলনামূলক উদাহারণ নেই। আধুনিক বাহিনী আকারে আমরা দেখেছি আক্রান্তরা সাধারণত "বিদেশ ফেরত" বা "আটকে পড়া" অভিবাসী। তবুও ঠিক আগের মতোই সমস্ত সামরিক কলাকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বহাল ছিল কোভিডের সময়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করাটা জরুরী প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এই লড়াই ভারতীয় জনসাধারণের জীবন-মরণের লড়াই, যা ভারতকে জিততে হবে।১৩


করোনাভাইরাসের সময়ে শরীরের উপর কার সার্বভৌমত্ব আছে? এই অসুস্থতার চিকিৎসা দেয়ার কর্তৃত্ব কে দাবি বা চর্চা করে? নিশ্চিতভাবে সর্বভারতীয় রাষ্ট্র এর প্রথম দাবিদার। কিন্তু এই রাষ্ট্র নিজেই দুই ভাগে বিভক্ত—কেন্দ্রীয় সরকার ও ভারতীয় ইউনিয়ন (ব্রিটিশ রাজের প্রদেশগুলোর মত), যার প্রত্যেক ভাগই নিজের ভূমিকা পালনে বদ্ধ পরিকর। নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের মার্চ মাসের ২৪ তারিখে (মাত্র ৪ ঘন্টার নোটিশে) পুরো ভারত জুড়ে লকডাউন জারি করতে পারেন, কিন্তু রাজ্যগুলি সে নির্দেশ নিজেদের মত করে বাস্তবায়ন করে, কেউ লক-ডাউন বাড়ায়-কমায়, কেউ নিজের মত করে ব্যাখ্যা করে, এবং প্রতিটি পদক্ষেপই ভিন্ন ভিন্ন ফল বয়ে আনে।১৪ আগের মহামারীতে অঞ্চলভেদে বায়োমেডিসিন বিকল্পও ছিল প্রচুর। সেসব বিকল্প রোগ-প্রতিরোধী ছিল নাকি ক্ষতিকর ছিল সেই দুশ্চিন্তা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করে। একইভাবে প্লেগ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জাতে উপনিবেশের জনস্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠে; ফলে ভারতের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি ও হোমিওপ্যাথি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠে। বর্তমান মহামারীর প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে গোবর ও গো-মূত্র; অন্যথায় যারা অধর্মীয়ভাবে মাংস খায় তাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের ন্যায়বিচার হিসেবে কোভিড-১৯ কে গণ্য করা হয়েছে।১৫ মহামারীগুলো হচ্ছে সুবিধাবাদী বিশ্ব-ভ্রমণকারী। কিন্তু গিরগিটির মত তারাও রঙ পাল্টায়, যখন যে সমাজে প্রবেশ বা বিস্তার করে সেই সমাজের রূপ-রঙ অনুযায়ী এর ধরন পাল্টে যায়। পূরাণের কাহিনী অনুযায়ী, একটা সময় ছিল যখন দেব-দেবীরা মহামারী পাঠাতেন, যাতে করে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় মানুষ তাদের আরাধনা করে। ভক্তকূলের আরাধনায় সন্তুষ্ট হলে মহামারীর দেবীরা আবার তাদের শাপ তুলে নিতেন। আধুনিক ভারতে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও হিন্দু অধিকারের অধীনে মহামারীর দেবীরা হিন্দু ধর্মে বিশ্লেষিত হতে থাকেন।


কিন্তু ইতিহাস কেবল নিজের পুনরাবৃত্তিই করে না; ইতিহাসের শিক্ষা ধুয়ে-মুছে শুকাতেও দেয়া হয়। সম্ভবত হেগেলও বলতে পারতেন, প্রতিটি মহামারী মূলত একইরকম, আবার প্রতিটি মহামারীই গুরুতর রকমের পৃথকও। এখন ১৮৯৬ কিংবা ১৯১৮ সাল নয়, এখন ২০২০ সাল। এখন "ঐতিহাসিক" বয়ান পাশে সরিয়ে রেখে "বিদ্রোহী" বয়ান নিয়ে ভাবা যাক, যা উপনিবেশিক অতীতের ইতিহাসের ধারা থেকে আসা, একটা গ্লোবাল সাউথ বা দক্ষিণ-বিশ্বের গল্প এবং পশ্চিমে এখনো প্রোথিত থাকা মহামারী সংক্রান্ত গোঁড়ামি দিয়ে পুনর্কল্পিত।১৬


কিন্তু তারপরও, ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ যে মৃত্যুহার দেখা যায় তা আগের মহামারীগুলোর মৃত্যুহারের সাথে মেলেনা। সুনামির বেগে প্লেগের বিস্তার এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বিস্তারের দ্বিতীয় ঢেউ এক ধাক্কায় ভারতের নগর ছাড়িয়ে ছোট ছোট শহর ও গ্রামে পৌছে গিয়েছিল। ১৯১৮ সালের ৬ই অক্টোবর—কেবল একদিনেই বোম্বেতে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬৮। গ্রামাঞ্চল অধ্যুষিত মধ্যপ্রদেশ কেবল এক সপ্তাহের ব্যবধানে জনসংখ্যা হারায় এক-দশমাংশ। অন্যদিকে, ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় জানুয়ারি মাসে (৩০শে জানুয়ারি, ২০২০)। তার পরের তিন মাসে ভারতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৫৪ এবং বাকি দক্ষিণ এশিয়ায় ৫৩৭। ওই সময়টাতে ভারত যে পরিমাণ মৃতের সংখ্যা নথিভুক্ত করে তা আয়ারল্যান্ডের চেয়েও কম। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে মে মাসের ১০ তারিখে এসে দেখা যায়, ভারতে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজারে এসে ঠেকেছে। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল করায় জুন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫,০০০ এবং ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৮০,০০০। মুম্বাইয়ের ঘনবসতি 'ধরবি বস্তি'তে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। তবু প্লেগ ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মাত্রায় বস্তিবাসী শহুরে দরিদ্রদের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটেনি এবার। তবে জুনের মধ্যে পশ্চিম ভারতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও মৃত্যুহার গণনা মুম্বাই, মহারাষ্ট্র এবং কিছু বড় শহরে আবদ্ধ হয়ে পড়লেও, সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে পুরো ভারতজুড়েই মহামারীতে মৃতের সংখ্যা প্রকট হয়ে উঠে।


মহাবিপর্যয় হয়তো সাময়িকভাবে এড়ানো গেছে। কিন্তু ভারতে এই মহামারীর পরিণাম কী হবে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে তুলনামূলকভাবে কম মৃত্যুহারের কারণ হিসেবে বেশ কিছু অনুমান তৈরী হচ্ছে, যেমন- কোভিড-১৯ এর কিছু জীবাণু আরো অন্যগুলোর চেয়ে বেশি প্রাণহানিকর হতে পারে, উত্তাপে ভাইরাসের সক্রিয়তা কমে আসতে পারে অথবা বর্ষা মৌসুমে উত্তর ভারতের বায়ুতে ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ভারতের প্রবীণদের জীবনযাপনের চিত্র পাশ্চাত্যের প্রবীণদের জীবনযাপনের তুলনায় বেশ ভিন্ন যেখানে সত্তরের অধিক বয়সী মানুষজন এবং বৃদ্ধাশ্রম নিবাসীদের জন্য ভাইরাসের সংক্রমণ অত্যধিক মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে ভারতে, যেখানে শতকরা আশিভাগ লোকের মৃত্যু ঘটে বাড়িতে, হাসপাতালে নয়, ভুল চিকিৎসা এবং ঠিকমত কোভিড রিপোর্ট না আসার কারণে অনেক মৃত্যু ঘটতে পারে। পাশাপাশি কোভিড পরীক্ষা এবং এর বিস্তার খতিয়ে দেখার অভাব তো রয়েছেই।১৭ মহামারীর আচমকা প্রাদুর্ভাবে ভারতজুড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও, লকডাউনের ফলে সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। আমরা যদি পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিই, দেখা যায় যে ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতে প্রতিবছর রাস্তা-ঘাটে মারা যায় দেড় লাখ মানুষ, অন্যান্য কারণে মারা যায় দশ মিলিয়ন মানুষ এবং আত্মহত্যা করে প্রায় দুই লাখ কৃষক। এই জরিপগুলো আমলে নিলে এর সাথে মিলিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম তিন মাসে যে এক হাজারের অধিক মৃত্যুর ঘটনা সেটা খুব বেশি মনে হবেনা। অন্যদেশগুলোতে এই ভয়ংকর ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা অন্যসব কারণে মৃতের সংখ্যার চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে হয়তো অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।


তবে একটা "বিদ্রোহী" বয়ান এবারের মহামারী আগের মহামারীগুলোর বিচারে প্রত্যাশিতভাবে ঘটছে কিনা, তা ব্যাখ্যা করার চেয়ে বেশি কিছু হতে হবে। এটা আমাদের ইতিহাসবীক্ষা এবং মহামারীবিষয়ক জ্ঞানের পুনর্গঠনের প্রশ্নও। ১৮৯০ সাল থেকে ১৯০০ সালে উপনিবেশকালের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারত ক্রমাগত কলেরা, ম্যালেরিয়ার মত মহামারীর কবলে পড়ে, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের জালে ফেঁসে যায়। ১৯১৮-১৯১৯ সালের দিকে ভারতে আবারও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কিন্তু বর্তমানে দারিদ্রতা ও অপুষ্টির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও ভারত আগের মতো ততোটা দুর্বল নয়। লকডাউনের একটা ফলাফল হতে পারে আরো লাখ লাখ ভারতবাসীর অনাহারের মুখে পড়া বা অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াবে। ১৮৯০ ও ১৯০০ দশকে ভারতের ওষুধ-শিল্প তার শৈশবে ছিল। ভারতের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি-প্লেগ সিরাম আবিষ্কার করে, মুম্বাইয়ের হফকিন ইন্সটিটিউট তার মধ্যে প্রথম ও অন্যতম। বর্তমান বিশ্বে এ-জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। তারা প্রতিবছর সারা বিশ্বে বিলিয়ন-ডোজ ভ্যাক্সিন সরবরাহ করে থাকে। কোভিডের শুরুতে ভারত নিজের উৎপাদিত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হাইড্রোক্সোক্লোরোকুইনিন, যা তখন করোনা প্রতিরোধে কার্যকর (অপ্রমাণিত) মনে করা হচ্ছিল, তার রপ্তানি বন্ধ করতে চাইলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট “পাল্টা ব্যবস্থা” নেয়ার হুমকি দেন। বর্তমান মহামারীতেও যদি কোভিড-১৯ এর বিরূদ্ধে কোন কার্যকর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়, খুব সম্ভবত ভারত থেকেই সেই ভ্যাক্সিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হবে ও সরবরাহ করা হবে।


ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী দেখা দিয়েছিল আজ থেকে শত বছর আগে। ভারতের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা তখন যুদ্ধের ধকল সামলাতে গিয়ে বিপর্যস্ত, স্বাস্থ্য-সেবার সংকীর্ণ ঔপনিবেশিক অগ্রাধিকারে আটকে পড়া একটা ব্যবস্থা। সেখান থেকে ভারত একটা মৃদু-মহামারীর দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে। কলেরা থেকে চিকুনগুনিয়া এবং ১৯৫৭ সালের "এশিয়ান ফ্লু" থেকে ২০০৯ সালের "সোয়াইন ফ্লু" ভারত সামলেছে কোন মহাবিপর্যয় ছাড়াই।১৮ এতদিন পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদেরকে মহামারীর বিপরীতে সুরক্ষিত ভেবেছে, কিন্তু সেই বিলাসিতার সুযোগ ছিল না। উপরন্তু, বসন্ত নির্মূল ও পোলিও রোধে ভারত মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, কমতে থাকা ম্যালেরিয়া মৃত্যুহার সামনে রেখে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের আশাও করছে। ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিম্নমানের ও জরাজীর্ণ হতে পারে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কি এর চেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে? যখন কোন নতুন মহামারী সামাল দেওয়ার প্রশ্ন উঠে তখন পশ্চিমারা বরং চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এমনকি ভারত থেকেও কিছু শিখতে পারে। মহামারীগুলো ভারতকে অন্ততপক্ষে পশ্চিমা মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের প্রতিভায় স্বনির্ভর হতে শিখিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি এখনো "বিদ্রোহী" বয়ান কেবল। ভারতের দুর্বল অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা, চরম সামাজিক বৈষম্যের দৃষ্টান্ত, ত্রুটিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা (যাদের তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রেই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিত) এই সবকিছুই এই বয়ানকে শুধু আশাবাদ হিসেবে দাঁড় করায়, এটা এখনো কোন নিশ্চিত উপসংহার নয়। ফলে একদিকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অন্যদিকে লকডাউন পরবর্তী অর্থনীতি পুরুদ্ধারের জন্য ভারত সরকারকে আর সবার সাথে প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে নামতে হবে।


পৃথিবীর অনেক দেশে কোভিড-১৯ একটা ‘সিনোফোবিয়া’র (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষত চীনের বাসিন্দাদের প্রতি বর্ণবাদী বৈরীতা) ঝড় বইয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ভারতে এসে এই সিনোফোবিয়া রূপ পালটে হয়ে যায় ইসলামোফোবিয়া বা মুসলমান-বিদ্বেষ। গত মার্চ মাসে দিল্লিতে ইসলামী সংগঠন 'তাবলিগী জামাত'-এর একটা সমাবেশ আয়োজন করা হয়।সেখানে ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন আলেমকে আমন্ত্রণ করে আনা হয়। পরবর্তীতে ভারতে যখন কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে, হাজার হাজার সংক্রমণ ও কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তখন ওই পরিস্থিতির জন্য ইসলামী সমাবেশের আয়োজনকে দায়ী করা হয়। ভারতে একটি জোর গুজব ছড়িয়েছিল যে মুসলিমরা ভারতে মহামারী বিস্তারের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ও খাদ্যদ্রব্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। মুসলিমদের তখন "করোনাভাইরাস টেরোরিস্ট", "তালেবান ক্রাইম” পরিকল্পনাকারী, "করোনা জিহাদী" ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হচ্ছিল। কিছু কিছু গ্রাম ও শহরে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য তাদের উপর নির্যাতন করা হতো, তাদের একঘরে করে রাখা হতো।১৯ ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিশ্চিত থাকায় বিজেপি সরকারও মুসলিমদের উপর এরূপ ঘৃণ্য ও নির্মম নির্যাতনের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্থর ছিল।


এখনো যদি আমরা ভেবে থাকি ১৮৯০ এর সহিংসতার পুনরাবৃত্তি এবারো ঘটবে বা ঘটতে চলেছে, তবে আমাদের মনে রাখা জরুরী তখনকার পরিস্থিতি এবং এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেসময় সহিংসতার মূলে ছিল উপনিবেশিক শাসকদের প্রভাব। জনকল্যাণে শাসকদের উদাসীনতা এবং তাদের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে অন্য শ্রেণীর মানুষের উপর নিপীড়ন চালাতে উস্কে দেয়; যা তাদের (ঔপনিবেশিক শাসকদের) "এপিডেমিক ডিজিজ এ্যাক্ট"-এর অধীনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে ও সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে সমঝোতার সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। এই সমঝোতামূলক কৌশলের প্রয়াসে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র ছিল আংশিক সফল এবং প্লেগের সময়কাল থেকে ভারতবর্ষে শ্রেণীভেদে আলাদা রাজনীতির জন্ম হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই মহামারীতে যে সংখ্যাগুরুদের বিদ্বেষ কোন ঔপনিবেশিক শাসকের প্রতি নয়, নিজের ভেতরের এক “শত্রু”র প্রতি। ঔপনিবেশিক নজরদারির বা সেন্সরশিপের সাথেও মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বাড়াতে থাকা করোনাভাইরাস ‘ট্রেসিং অ্যাপে’র কোন অনিবার্য তুলনা করা যায় না। মোদি সরকারের হাতে পুনরুজ্জীবিত ১৮৯৭ সালের আইনটি যদি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ব্যর্থ হয়, যদি অর্থনীতি মহামারীর কবলে পড়ে এবং যদি ভারত—মহামারীবিদরা যেমন অেনুমান করেছেন—মহামারীর সবচেয়ে করুণতম পরিণতির শিকার হয়, এই শাসক দলই সে সময়ের ব্রিটিশদের মত তীব্র বৈরীতার মুখোমুখি হবে। কিন্তু ১৮৯০ সালের ব্রিটিশ শাসকদের তুলনায় বর্তমান বিজেপি সরকারের হাতে অনেক বেশি কার্যকর মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক কলকাঠি রয়েছে। ফলে তারা ব্রিটিশদের চেয়ে যে কোন বিচারেই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। যদি মহামারী পরিস্থিতি সামলাতে পারে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের একটা বীরত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দাবি করতে পারবে। সামলাতে না পারলে একটা ‘অভ্যন্তরীণ’ ‘অপর’কে বলির পাঠা বানিয়ে কিংবা চীনের মত কোন বহি: শত্রুর কাঁধে দোষ দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করবে। প্রসঙ্গত; কোভিডের মাসগুলোতে চীন ও ভারত ক্রমাগতই যুদ্ধংদেহী সম্পর্কের মধ্যেই আছে।


কোভিড-১৯ ঐতিহাসিকদের কিছু চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। মহামারীকালে ইতিহাসের উপযোগ কী? ইতিহাস কোন কাজে লাগতে পারে? উপনিবেশবাদের উপযোগই বা কী? এরকম অনিশ্চয়তার সময়গুলোতে আমরা বোধগম্য কারণেই কাজে লাগানোর মত ইতিহাস খুঁজি, সেখানে দিশা বা সান্তনা খুঁজি, সেটা দিয়ে বর্তমানকে বোঝার চেষ্টা করি। উনবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক স্যানিটারিয়ানরা কলেরাকে কেন্দ্র করে দেখিয়েছিল যে ভারত তখনো নিজের অতীতে ডুবে আছে, সেকেলে প্রথা আর প্রাচীন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। আজকের দিনে উপনিবেশবাদ ক্ষমতাসীনদের ঠ্যাঙানোর লাঠি হয়ে উঠেছে। হয়তো স্থান, কাল বা সংস্কৃতির বিচারে বোঝার জন্য মহামারী একটু বেশি জটিল আর বিচুর্ণীভূত প্রপঞ্চ যা খুব তাড়াহুড়ো করে ব্যবহার করা যায়না।

ইতিহাসে আগের মহামারীগুলোর যথাযথ গুরুত্ব বোঝাতে ঐতিহাসিকরা প্রায়ই মহামারীগুলোকে "গেম চেঞ্জার" বলে থাকেন। তাদের মতে, আগের মহামারীগুলো যে জনসংখ্যাগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে, সমাজ ও সংস্কৃতিকে যে ধাক্কা দিয়েছে, তাতে করে সমাজ ও জন-মনে গভীর, সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটেছে। অন্তত চৌদ্দ শতকের ব্ল্যাক ডেথ ও উনিশ শতকের কলেরা মহামারীর দিকে তাকালে আমরা এমনই দেখতে পাই। তবে মহামারীর উপর খুব বেশি কিছু আরোপ করা থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে। ১৮৯০ সাল থেকে ১৯০০ সালের প্লেগ মহামারী সরকার এবং শাসিত উভয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকর এবং মনোভাবগত পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা (১৯১৮-১৯১৮) মহামারীর ক্ষেত্রেই এই ধারণা আর খাপ খায় না।২০ এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় অন্ততপক্ষে বারো মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল এবং অগণিত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল। রোগটি মূলত বিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সীদের বেশি আক্রান্ত করেছিল। এই রোগ আর দুর্ভিক্ষের ফলে হাজার হাজার শিশু এতিম হয়েছিল; সমাজে বিধবার সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল।


কিন্তু কল্পনাতীত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা খুব বেশি কিছু বদলেছে কিনা সন্দেহ আছে। উপনিবেশবাদ কিংবা পুঁজিবাদের কোন পতন হয়নি, ভারতের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার সংস্কার বা চিকিৎসা গবেষণায় সেরকম কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে এটি ১৯১৯ সালের রাওলাট সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে (ব্রিটিশ প্রণীত কুখ্যাত রাওলাট অ্যাক্ট-১৯১৯ এর বিরূদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলন) জোরদার করে মহাত্মা গান্ধীকে সর্বভারতীয় নেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু তারপরেও ভারতের জাতীয়তাবাদ ও উপনিবেশ-বিরোধীতার জোয়ার আনতে ইনফ্লুয়েঞ্জার বারো মিলিয়ন মৃত্যুর ঘটনার চেয়ে এপ্রিলের (১৯১৯) জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার (প্রায় পাঁচ শতাধিক হত্যাকান্ড) ঘটনাটি বেশি ভূমিকা রেখেছিল। এই মাত্রার গণমৃত্যু হলেও ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জার তেমন কোন রাজনৈতিকীকরণ হয়নি, খুব কমই একে স্মরণ রাখা হয়েছে। ঔপনিবেশিক আয়োজনে বুবোনিক প্লেগের অনেক ছবি থাকলেও ইনফ্লুয়েঞ্জার সময়টা কোন চাক্ষুস প্রমাণ না রেখেই পার হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ এর চাক্ষুস (visual) উপস্থিতির প্রভাব বিস্তার আমাদের ব্যক্তিগত আর যৌথ স্মৃতিতে প্লেগ মহামারীকে ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের সময় নিজে বা পরিবারের কে কোথায় ছিল সেটা কেইবা ভুলতে পারবে? কিন্তু লকডাউন শেষে দিল্লির আকাশ কি আবার পরিষ্কার হবে? গঙ্গার জল কি তখনো দূষিত থাকবে? হয়তো এত জলদি এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না; কিন্তু আমি এ বিষয়ে সন্দিহান।

___________



দোহাই


[] Anirban Chanda and Sahil Bansal, “The 1896 Bombay Plague: Lessons in What Not to Do,” Outlook, April 9, 2020, https://www.outlookindia.com/website/story/opinioncolonial-%20experiences%20from-the-bombay-plague-of-1896-no-lessonslearned/350389 (accessed April 10, 2020); Ramachandra Guha, “Repeating the Past,” Telegraph (Kolkata), April 25, 2020, https://www.telegraphindia.com/opinion/

coronavirus-india-the-gover%E2%80%A6ious-minoritiesduring-covid-19- lockdownand-pandemic/cid/1767769 (accessed April 25, 2020).


[] Lalit Kant and Randeep Guleria, “Pandemic Flu, 1918: After Hundred Years, India Is as Vulnerable,” Indian Journal of Medical Research 147, no. 3 (2018): 221–24; Christopher Murray et al., “Estimation of Potential Global Pandemic Influenza Mortality on the Basis of Vital Registry Data from the 1918–20 Pandemic,” The Lancet 368, no. 9554 (2006–07): 2211–18.


[] Norman Howard-Jones, The Scientific Background of the International Sanitary Conferences, 18511938 (Geneva: World Health Organization, 1975), 81.


[] David Arnold, Colonizing the Body: State Medicine and Epidemic Disease in Nineteenth- Century India (Berkeley: University of California Press, 1993); Tarangini Sriraman, “Plague Passport to Detention: Epidemic Act Was a Medical Surveillance Tool in British India,” ThePrint, March 22, 2020, https://theprint.in/opinion/plague-passport-to-detention-epidemic-act-was-a-medical-surveillance-tool-in-british-india/385121/ (accessed March 24, 2020).


[] Prerna Agarwal, “The Government Will Come to Its Senses,” India Forum, May 1, 2020, https:// www.theindiaforum.in/article/government-will-come-its-senses (accessed May 2, 2020); M. E. Couchman, Account of the Plague Administration in the Bombay Presidency, from September 1896 to May 1897 (Bombay: Government Central Press, 1897).


[] Srividya Balasubramanian, “Social Distancing as Class Experience: A Field Report from India,” ReCentGlobe-Blog, April 14, 2020, https://www.uni-leipzig.de/newsdetail/artikel/blog-7-social-distancing-as-class-experience-a-field-report-from-india-2020-04-14/ (accessed April 19, 2020).


[] Ranabir Samaddar, ed., Borders of an Epidemic: COVID-19 and Migrant Workers (Kolkata: Mahanirban Calcutta Research Group, 2020).


[] Mohammad Tareq Hasan, “Homecoming from the City: Covid-19 and Dhaka,” Medical Anthropology at UCL, April 15, 2020, https://medanthucl.com/2020/04/15/homecoming-from-the-city-covid-19-dhaka/ (accessed April 17, 2020).


[] Pushpa Arabindoo, “Pandemic Cities: Between Mimicry and Trickery,” City & Society 32,no. 1 (2020), https://doi.org/10.1111/ciso.12263.


[১০] Samata Biswas, “Bringing the Border Home: Indian Partition 2020,” in Borders of an Epidemic: COVID-19 and Migrant Workers, ed. Ranabir Samaddar (Kolkata: Mahanirban Calcutta Research Group, 2020), 104–14.


[১১] William Digby, The Famine Campaign in Southern India, 187678, 2 vols. (London:Longman, Green & Co., 1878).


[১২] Samuel K. Cohn Jr., Epidemics: Hate and Compassion from the Plague of Athens to AIDS (Oxford: Oxford University Press, 2018).


[১৩] “Coronavirus: India’s PM Modi Seeks ‘Forgiveness’ over Lockdown,” BBC News, March 29, 2020, https://www.bbc.com/news/world-asia-india-52081396 (accessed July 1, 2020).


[১৪] P. K. Yasser Arafath, “Success of the Kerala Model,” Telegraph (Kolkata), April 24, 2020, https:// www.telegraphindia.com/opinion/cornonavirus-kerala-success-wit…-byits-highlevel-of-literacy- and-secular-sensibilities/cid/1767508 (accessed April 25, 2020).


[১৫] Kaveree Bamzai, “Between Sanitiser and Gaumutra for Covid-19, Many in Modi’s India Have Made Historical Choice,” ThePrint, March 21, 2020, https://theprint.in/opinion/gaumutra-for- covid-19-modis-india-made-historical-choice/384819/ (accessed March 24, 2020); “Assam BJP MLA Suman Haripriya: Cow Dung, Urine May Cure Coronavirus,”Times of India, March 3, 2020.


[১৬] Sheetal Chhabria, “Manufacturing Epidemics: Pathogens, Poverty, and Public Health Crises in India,” India Forum, June 5, 2020, https://www.theindiaforum.in/article/manufacturing-epidemics (accessed June 6, 2020).


[১৭] Arup Malani, Arpit Gupta, and Reuben Abraham, “Why Does India Have So Few Covid-19 Cases and Deaths?” Quartz India, April 16, 2020, https://qz.com/india/1839018/why-does-india-have-so-few-coronavirus-covid-19-cases-and-deaths/ (accessed July 1, 2020).


[১৮] I. G. K. Menon, “The 1957 Pandemic of Influenza in India,” Bulletin of the World Health Organization 20, no. 2–3 (1959): 199–224.


[১৯] Apoorvanand, “How the Coronavirus Outbreak in India Was Blamed on Muslims,” Al Jazeera, April 18, 2020, https://www.aljazeera.com/opinions/2020/4/18/how-the-coronavirus-outbreak-in-india-was-blamed-on-muslims (accessed April 20, 2020); Hannah Ellis-Petersen and Shaik Azizur Rahman, “Coronavirus Conspiracy TheoriesTargeting Muslims Spread in India,” Guardian, April 13, 2020, https://www.theguardian.com/world/2020/apr/13/coronavirus-conspiracy-theories-targeting-muslims-spread-in-india (accessed April 14, 2020).


[২০] David Arnold, “Death and the Modern Empire: The 1918–19 Influenza Epidemic in India,” Transactions of the Royal Historical Society 29 (2019): 181–200.


প্রকাশঃ ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭:::২রা মার্চ, ২০২১