ভাইরাসজনিত ব্যতিক্রম বা জরুরী অবস্থা

জঁ-লুক ন্যান্সি


[করোনা মহামারি ও এর সাপেক্ষে জরুরী অবস্থার প্রসঙ্গে জর্জিও আগামবেনের ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত The state of exception provoked by an unmotivated emergency লেখাটার সমালোচনা করে বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জঁ-লুক ন্যান্সি (ফরাসিতে বললে, জঁ-লুক নঁসি) “Antinomie” তে Viral Exception নামে একটি রচনা লেখেন। এই লেখাটি জর্জিও আগামবেনের লেখা প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই অর্থাৎ ২৭শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় দার্শনিক ন্যান্সির লেখাটি ইংরেজি অনুবাদ থেকে এখানে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।]

আমার বহু পুরনো বন্ধু জর্জিও আগামবেন তর্ক তুলেছে যে সাধারণ ফ্লু-এর সাথে করোনা ভাইরাসের পার্থক্য কদাচিৎ। তিনি ভুলে যাচ্ছেন যে “সাধারণ” ফ্লু’র জন্য কার্যকর প্রমাণিত প্রতিষেধক আছে। ভাইরাসের পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার কারণে এমনকি এই প্রতিষেধকও ক্রমাগত মানোন্নত করে যেতে হয় । এতদসত্ত্বেও “সাধারণ” ফ্লু প্রচুর মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। অথচ, করোনা ভাইরাস যার কোন প্রতিষেধক নেই তা পরিষ্কারভাবেই আরো উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ হয়ে ওঠার সক্ষমতা রাখে। এই ব্যবধান (আগামবেন যেই তথ্যসূত্র ব্যবহার করছেন সেইরকমের তথসূত্রই বলছে) হচ্ছে প্রায় ১ আর ৩০। এই পার্থক্য আমার কাছে কোনোভাবেই অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না।


আগামবেন বলছেন যে, সরকারগুলো সকল ধরণের অছিলার সুযোগ নিয়ে ক্রমাগত ব্যতিক্রমী অবস্থা কায়েম করতে চায়। কিন্তু তিনি এটা চিহ্নায়ণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন যে ব্যতিক্রমী অবস্থা কার্যতই এই দুনিয়ার নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে যেখানে সকল প্রকারের প্রযুক্তিগত আন্তঃযোগাযোগ (তৎপরতা, যেকোন ধরনের আদান-প্রদান, বিভিন্ন উপাদানের উৎপাদন এবং তা ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি) এমন এক আচানক তীব্রতায় পৌঁছাচ্ছে যা কি-না জনসংখ্যার হার বেড়ে চলার মতই বাড়ছে। এমনকি উন্নত ও ধনী দেশগুলিতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির এই বর্ধিত হার গড় আয়ু বৃদ্ধি করে। এতে করে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ে, আর বেড়ে চলে ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা।

আমাদের খুবই সতর্ক থাকা জরুরী, যাতে করে আমরা ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ না করে বসি।


এতে কোনই সন্দেহ নেই যে একটা গোটা সভ্যতা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক রকমের ভাইরাসজনিত ব্যতিক্রম আছে —জৈবিক, কম্পিউটার-সায়েন্টিফিক, সাংস্কৃতিক— যেটা হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারি। সরকারগুলো কঠোর দায়িত্ব পালনকারী বৈ কিছুই নয়। তাদের ওপরে ঝাল মেটানোটা যতখানি না রাজনৈতিক চিন্তা, বরং তার থেকেও অনেক বেশি ভিন্ন খাতে চালিত করার চাতুরী।


আমি বলেছি যে আগামবেন আমার পুরনো বন্ধু। এবং আমি একটা ব্যক্তিগত স্মৃতি টেনে আনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু এটা করে আমি একটা সাধারণ দৃষ্টিপাতের মূল জায়গা ছেড়ে যাচ্ছিনা। প্রায় ত্রিশ বছর আগে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আমার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে হবে। আগামবেন ছিল সেই খুবই কম মানুষের মধ্যে একজন যে আমাকে ডাক্তারদের কথা না শোনার পরামর্শ দিয়েছিল। যদি আমি সেইদিন তাঁর পরামর্শ মেনে নিতাম তাহলে আমি সম্ভবত খুব দ্রুতই মরে যেতাম। ভুল করা খুবই সম্ভব একটা ব্যাপার। সে যাইহোক,

আগামবেন এমনই সূক্ষ্মতা ও কোমলতায় ভরা এক মহাত্মা, যাকে কোনো প্রকার আয়রনি ছাড়াই ব্যতিক্রম বলা যায়।

____________

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০

হদিস- https://antinomie.it/index.php/2020/02/27/eccezione-virale/


প্রথম প্রকাশঃ ২শে মার্চ, ২০২০

সর্বশেষ সংশোধনঃ ২শে মার্চ, ২০২০

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/403119701073756/