প্রগতির অন্ধকার দিক

জঁ-লুক ন্যান্সি


অনুবাদঃ আবদুল্লাহ আল মামুন

এংগেলমান : সুধীবৃন্দ, স্বাগতম জানাই আমাদের নতুন অনলাইন আয়োজন প্যাসেজেন স্ট্রিমসে, যার মারফত আমরা চেষ্টা করব এই করোনার সময় আমাদের লেখকদের বক্তব্য আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্যে ধন্যবাদ জানাই আমাদের সহযোগী ভল্কসবুন বার্লিন, জুরিখের জেসনেরালি আর কুনস্টহাল ভিয়েনাকে। প্রথম আয়োজনে আমরা আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাই আমাদের দীর্ঘদিনের লেখক এবং বন্ধু জঁ-লুক ন্যান্সিকে। তিনি স্ট্রসবুর্গ থেকে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।


প্রিয় জঁ-লুক, কি মনে হয় আপনার, সবাইকে আটকে রাখা এই লকডাউন কি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র গঠনে এক ধাপ এগিয়ে দিলো নাকি বৈশ্বিক মহামারীর জন্যে এটাই ঠিক আছে?


ন্যান্সি : আপনি যাকে লকডাউন বলছেন, তা ঠিকই ছিল। ভিন্ন বলতে আমরা যা বুঝি, যদি তাদের দিকে তাকাই, কিংবা তাদের সম্ভাবনার দিকে, তবে নিদেনপক্ষে আমি যা বিশ্বাস করি তা হচ্ছে এই প্রশ্নের সারবস্তু হলো জোরপূর্বক স্বৈরাচারী রাষ্ট্র গঠন। না, আমি এর কোন চিহ্নই দেখিনা। মনে হয়না এই রাষ্ট্রগুলোর স্বৈরাচারী পদক্ষেপ নেয়ার তেমন কোন ইচ্ছে ছিল। বিশেষ করে ফ্রান্সের মত দেশগুলোর এমন কিছু করার ব্যাপারে ঝামেলাও আছে। আমার মনে হয় আলোচনাটাই পুরাই অপ্রাসঙ্গিক।


এংগেলমান : কিন্তু জর্জিও আগামবেন তো বলছেন, করোনা ঠেকানোর যে পদক্ষেপ তা রীতিমতো মানবতার চৌকাঠ ছাড়িয়ে বর্বরতায় গিয়ে ঠেকেছে।


ন্যান্সি : বন্ধু আগামবেনের যে ব্যাখা তা মূলত বদ্ধমুল ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত যার সাথে পরিস্থিতির কোন মিল নেই। উনার কথা হল আধুনিক রাষ্ট্রমাত্রই যেন ব্যাতিক্রম রাষ্ট্র গঠনে এক পায়ে খাঁড়া, যেন দেশকে বন্দী-শিবিরে (অনেকটা ইহুদি নিধনে ব্যাবহৃত এক্সটারমিনেশন ক্যাম্পের ন্যায়) কিংবা নিদেনপক্ষে পেনাল ক্যাম্পে (penal camp) পরিণত করার ব্যাপারে উৎসাহী। আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, এমন ব্যাখ্যা কেমনে সম্ভব। আমার মনে হয় উনি রাষ্ট্র আর টেকনিক্যাল-ইকোনমিক মেশিনারি (যা সত্যিকার অর্থে পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে।) এই দুইয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আপনি যদি শুধু মেশিনারির কথা চিন্তা করেন, তবে দেখবেন এটি এমন নয় যে, এটি দেশকে সবার জন্য পেনাল ক্যাম্পে পরিনত করতে চায়। যন্ত্র তো আর কিছু চায়না। এটাতো আর জানেনা, এটা কি চায়। তবুও (উন্নয়ন অর্থে) এটি সামনে এগিয়ে চলেছে। যেকোন ব্যাপারে সাধারণত এমনটি হয়ে থাকে যে, রাষ্ট্রের নিজের যোগাযোগ, লাভ, প্রয়োজনীয়তা অনেক কিছু মেশিনারি নির্ভর। কিন্তু এটা কোন ষড়যন্ত্র বা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না ভাবলেই ভালো। ব্যাপারটা বোকামিও লাগে, যখন দেখি, আগামবেন দোষীও সনাক্ত করা শুরু করেছে যেখানে বাস্তবে কোন দোষীর চিহ্ন মাত্র নেই। আমরা সবাই অপরাধী। দস্তয়ভস্কির মতো করে বললে, অপরাধী আমরা সকলেই, তবে আমি সকলের চাইতে বেশি। আমরা সবাই একই মেশিনারির অন্তর্ভুক্ত।


এংগেলমান : জঁ-লুক, আসুন করোনাভাইরাসের দার্শনিক দিকটায় নজর দেই। আপনি সাম্প্রতিক এক লেখায় বলেছেন, করোনাভাইরাস শুধু সামাজিক অব্যাবস্থাপনাই নয়, বরং আরও খারাপ(evil) কিছুর আলামত। এই খারাপিটা কি?


ন্যান্সিঃ আমাদের সভ্যতা বা ইতিহাসের প্রেক্ষিতে খারাপকে হয় বাহ্যিক দুর্যোগ যেমন অসুস্থতা, দুর্ভাগ্য, ভূমিকম্প ইত্যাদি হিসেবে দেখা হয়েছে, নতুবা একে মানুষ কিংবা মানবজীবনের উপর সুপরিকল্পিত আক্রমণ হিসেবে দেখা হয়েছে। শুরুতে, খারাপ মনোভাব আছে এমন কিছু মানুষ বা দলকেই অশুভ মনে করা হত। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, আমি বরং বলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর খারাপী(evil) টেনে নিচ্ছি। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ফলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু মারফত ইউরোপ বুঝতে পারল তারা নিজেরাই নিজেদের খারাপী ডেকে আনছে। এরপর থেকে কিন্তু অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। ইউরোপ নিজের ক্ষতি নিজে এমনভাবে করেছে যে, এক পর্যায়ে সে নিজেই এটা বন্ধের কথা ভাবলো। আবার আপনি চাইলে অন্যভাবে বলতে পারেন যে, ইউরোপ তার যুদ্ধ আরেকদিকে ঠেলে দিল বা রপ্তানি করে দিল। উপনিবেশবাদের ইতিহাসের দিকে যদি নজর দেই, তবে দেখি ইউরোপ আফ্রিকা, এশিয়া এবং অন্যান্য জায়গায় যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। ঐ সময়টাতে কমিউনিজম নিয়ে ভালোই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এসব করা হয়েছে মূলত সমাজের অবিচারের কথা মাথাই রেখে আর জুলুম রুখে দেয়ার জন্য। ফলশ্রুতিতে নতুন সমাজের সৃষ্টি হল। কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনা এমন দাঁড়ালো যে কমিউনিজম সংক্রান্ত এই পরীক্ষা অগণিত মানুষের ক্ষতি করে বসল, তাঁদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করল আর সর্বোপরী সমাজের ক্ষতি করে বসল। কমিউনিজমের ভাবনার আদলে গড়া সমাজকে একেবারে সঠিক সমাজ বলা যাবে না। নিদেনপক্ষে কিছুটা সুবিচার কমিউনিস্ট সমাজে ছিল, কিন্তু সমাজ আর এর মানুষগুলো পুরোই দমবন্ধ অবস্থায় পড়ে রইল। আর এভাবেই চলতে লাগল। চীনের কথা ভাবুন, তারপর সাংস্কৃতিক বিপ্লব আর পলপটের শাসনামলে কম্বোডিয়া। মূলত দুইজাতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এক হলো। একদিকে উপনিবেশবাদ, অন্যদিকে কমিউনিজম। এর মাঝে ভিয়েতনামই একমাত্র দেশ যারা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা রুখে দিতে চেয়েছিল। এরপর থেকে, মানে ৭০-৮০’র দশক থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, কিংবা এতটুকু অন্তত পরিষ্কার হলো যে, আমাদের যাবতীয় উন্নতি মারফত আমরা দুর্দশা আর নতুন খারাপীর পথ করে দিয়েছি। বনজঙ্গল উজার করে আর পরিবেশ বিপর্যয়ের মারফত দুটি বড় ঝামেলার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। একদিকে শক্তি উৎপাদন ও অন্যান্য জিনিস। তারপরে আছে সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাভাবিক কারণ।


এখন আর বুঝিইনা কোনটা প্রাকৃতিক আর কোনটা মানবিক। সত্যি আর আলাদা করা যাচ্ছেনা। সংক্ষেপে আপনি যেকোন ক্ষেত্রে বলতে পারেন, মানবতা বা রেনেসাঁ পরবর্তী আধুনিক মানবতা এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল যে এটি উন্নততর মানবতার জন্ম দিতে পারবে। আজ এটাই বোঝা যাচ্ছে এই মানবতাই [ ফুকো যেই অ্যান্থ্রোপোমরফিজম (anthropomorphism) এর সমালোচনা করেছেন।—অনুবাদক] কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে যাবতীয় দুর্যোগের, নানাবিধ সমস্যার আর বিবিধ অবিচারের। ব্যাপারটা এমনই যে এখন আর নির্দিষ্ট করে কোন জনগোষ্ঠীকে খারাপ আখ্যা দেয়া যায়না। [এনলাইটেনমেন্ট পুরোই ইউরোপীয় ধারণা। এনলাইটেনমেন্টের দোহাই দিয়ে ইউরোপ পৃথিবী শাসন করেছে। তাই এনলাইটেনমেন্টের দোষ বা দায়ী থাকলে তা ইউরোপীয়দেরই বহন করা উচিৎ। ন্যান্সি যদি এমনটি বলেই থাকে এখন আর নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করা যায়না, তা ভূল। দায়ী করতে হলে বরং ইউরোপকেই করা যায় কেননা তারাই এর যাজক ও পাঁচক।—অনুবাদক] জায়গায় জায়গায় এমন ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি যেখানে আমরা হিটলার, স্ট্যালিন, মাও, পলপট এদেরকে খারাপ বলেও চিহ্নিত করেছি আবার এদের সহ্যও করে নিয়েছি। সকল ধরণের স্বৈরতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রই খারাপ। অন্যভাবে বললে ল্যাটিন আমেরিকায় যা হচ্ছে তাই। আর এখন তো সবাই গণতান্ত্রিক তকমা গায়ে এটে বসে আছে, কিন্তু এও কি আর জানতে বাঁকি যে চীনের শাসন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নয়। এটাও আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গণতন্ত্র সকলের রুচিতে ধরেনা। হয় রাষ্ট্র দুর্বল, নতুবা এটি প্রযুক্তিগত এবং অর্থনীতির বিশাল যন্ত্রদানবের চাপে পিষ্ট। অশুভ/খারাপ আছে; এবং সবখানেই আছে। ভাগ্যিস, সাথে এক চমৎকার যন্ত্র আছে, যা দিয়ে দূর থেকে আলাপ জমানো যায়। ভালোই তো, কিন্তু বড্ড শক্তির অপচয়, অবশ্য যেকোনভাবে আপনাকেই তা উৎপাদন করতে হবে। আর তেল যদি ব্যবহার করতে না’ই চাই তাহলে তা কিভাবে সম্ভব? এখনতো আমাদের এমনও বলা হয়, আমাদের আর নিউক্লিয়ার [পারমাণবিক?] শক্তি দিয়ে জ্বালানী উৎপাদন করা উচিৎ নয়। তবে এখন কম্পিউটার দিয়েই বা কি হবে? আমরা জ্বালানি এমনভাবে ব্যবহার করে চলেছি যা আমাদের সকল সঞ্চয় নিঃশেষ করে চলেছে। তাহলে কি করছি আমরা এখন? এইখানে বসে পরস্পরের সাথে কথা বলে শক্তির অপচয়।


হতে পারে অনাদিকাল হতে আজ পর্যন্ত চেতনার সম্পর্কে এমন অস্বচ্ছ এবং অস্পষ্ট ধারণা আগে ছিলনা। অন্তত এখন এতটুকুন বোঝা যায় সভ্যতা ব্যাপারটাতেই গলদ আছে।


এংগেলমান : মার্ক্সবাদীরা বলবে, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যাবস্থাই এই অশুভ’র পেশি শক্তির যোগান দিয়েছে। আপনার কি তাই মনে হয়না?


ন্যান্সি : আপনার কি একে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যাবস্থা মনে হয় নাকি পুঁজিবাদ'ই উৎপাদন মনে হয়? পুঁজিবাদ শব্দটি কিন্তু মার্কস আবিষ্কার করেননি। যেকোন ক্ষেত্রেই এটা আর্থিক কার্যকারিতার ব্যাপার, পুঁজির একত্রীকরণের ব্যাপার যা দিয়ে লগ্নি করা যাবে। কিন্তু উৎপাদনই হচ্ছে পুঁজিবাদের মূল চালিকা শক্তি। আমরা কিন্তু ইতিমধ্যে পুঁজি জড়ো করা, লগ্নি করা, আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার-স্যাপার সবই আবিষ্কার করে ফেলেছি। দুই ধরনের উৎপাদন আমরা সম্ভব করেছি : আধা উৎপাদন আর প্রযুক্তিগত উৎপাদন। কারণ দেখুন, আপনার চলাচলের ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজও বানানো লাগে যা দ্রব্য বয়ে নিয়ে যেতে পারে। পুঁজিবাদের প্রথম ধাপে এসব হতো ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়। মূল ব্যাপারটাই হচ্ছে উৎপাদন। হ্যাঁ, কেউ একজন বলতে পারে, মানব জাতি রোম সম্রাজ্যের সময় কাল হতে এভাবেই উৎপাদন, পূনরুৎপাদন করে আসছে। বিশেষ করে তাই পূনরুৎপাদন করেছে যা সে সৃষ্টি করেছে। প্লেটো মিশরের প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিল। মিশরীয় সভ্যতা হাজার বছরের বেশি টিকে ছিল। আর একই প্রযুক্তি নির্ভর রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, ধর্মীয় ব্যবস্থাপনা বারবার বারবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে।


আর প্লেটোতো এই ব্যাপারে বেশ বিরক্ত ছিল যে, গ্রীস সবসময় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল যার কারণে একই ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছিলো না। একই ব্যাপার ঘটছে বর্তমান বিশ্ব আর পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে। অতি লাভের আশায় অতিমাত্রায় উৎপাদন চলছে তো চলছে। অবশ্য এটাই সবসময় হয়ে আসছে। ব্যবসা ব্যাপারটা সবসময় ছিল, আর ব্যবসার মাধ্যমে লাভ তা-ও ছিল। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যাবস্থাপনা হল উৎপাদনের আকাঙ্খা, এটাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। অন্যভাবে বলতে গেলে, বেশি উৎপাদনের জন্য নতুন উপায়ও দরকার। ধরুন, ব্যবসার ধরন কিন্তু দীর্ঘকাল একই রয়ে গেছে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, ক্যারাভান, জাহাজ এসবের চলাচলের পথ একসময় সীমিত ছিল। কিন্তু যখন আমরা উৎপাদনের স্তরে পৌছালাম, আমরা এমন জাহাজ বানালাম যা মহাসমুদ্র পাড়ি দিতে পারবে। ঠিক তখনই আমেরিকার আবিষ্কার সম্ভব হলো। তাহলে বুঝুন, আমেরিকা আবিষ্কার করা গেছে কেননা আমরা উৎপাদনে যেতে চেয়েছি, কেননা আমরা নতুন পথের সন্ধান করেছি কেননা আমরা ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেছি যা ঐ সময়ের প্রেক্ষিতে আরও বিশাল, আরও সুদূরপ্রসারী হবে।


এংগেলমেন : একে তো পুঁজিবাদী উৎপাদনের ক্রমাগত সম্প্রসারণই বলা চলে— মানে মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণের সাথে খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে।


ন্যান্সি : তা বলেছেন বটে। মার্ক্স ঠিকই বুঝেছিলেন।


এংগেলমেন: আচ্ছা এমন কোন উৎপাদন ব্যাবস্থার কথা কি ভাবা যায় যা পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার খারাপ দিক হতে মুক্ত? মানে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন জীবন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যাপারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী? এমন কিছু কি আমাদের মাঝ থেকে আসতে পারে? বোঝায় যাচ্ছে বাজারঅর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির জায়গায় বসালে কাজ হচ্ছেনা। সোভিয়েত ব্লক উন্নয়নের সময়তো এমনটিই দেখলাম। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি যদি বেছে নাই নিলাম, তবে অন্য উপায় কি? কোন উৎপাদন ব্যবস্থাতে আমরা যাব? কোন জীবনযাত্রা আমরা বেছে নেব? কিংবা কোন রাস্তায় পরিত্রাণ খুঁজব?


ন্যান্সি : অনুমান করা মুশকিল কেননা আমার মনে হয় ভবিষ্যতে কি হবে আপনি ভাবতেও পারবেননা। তবে সামনে যে এক রুহানিয়াতের বিপ্লব ঘটবে তা অনুমান নয়, বেশ নিশ্চিত করেই বলতে পারি। বুঝে নিয়েন, পুঁজিবাদও কিন্তু এক ধরনের রুহানিয়াতের বিপ্লব(a spiritual revolution)।


কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে কিন্তু খ্রিস্টান ইউরোপেরও ভাবের পরিবর্তন হয়েছিল। কি সেই পরিবর্তন? সে এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এক সময় যেমন খোদা কিংবা তার প্রতি ভালোবাসাকে চরম মুল্যবান মনে করা হতো, পরবর্তীতে তা আরোপ করা হল মার্ক্স যাকে বলছে সমমূল্য মানে উৎপাদনের ব্যাপারে। ততদিন পর্যন্ত, মূল্য মানে জমিনের সুষম বণ্টন যাতে সকলের খাবারের চাহিদা মেটে, বস্তুর সুষম বন্টন, রাজ্যের সুষম বণ্টন এবং নীতিসমূহ। তার মানে দাড়ায় এই যে, মূল্য ব্যাপারটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে এর অর্থ সারাটা জীবন নিয়ন্ত্রণ করতো। আর ঠিক তখনই এলো মূল্যের পরিবর্তন। শহুরে মানুষ ব্যবসার সুবিধা নিতে চাইল। অবশ্য জ্ঞানের প্রতি চরম তৃষ্ণাও জন্মালো আর তখনই উৎপাদনের ব্যাপারটা এলো।


এক সময় রেনেসাঁস আর্টে বহুস্বর(polyphony) নামের এক চরম ব্যাপার ঘটেছিল। [ এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে মিখাইল বাখতিন পড়ে দেখতে পারেন।—অনুবাদক] আসলে আমাদের ইউরোপীয় ঐতিহ্যের সকল ভালো সুরের জন্ম ঐ বহুস্বরের মারফৎ। ‘বহুস্বর’ হল অনেক স্বরের সম্ভাবনা যা একে অন্যের উপর কতৃত্ব করে, সম্পর্ক স্থাপন করে, সামঞ্জস্য কিংবা অসামঞ্জস্য বিধান করে। এই বহুস্বর এবং এর সাথে টোনাল মিউজিকের ব্যাপারে ঘঠে যাওয়া যতকিছু সবই সমগ্র পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এক অসাধারণ ব্যাপার। পৃথিবীতে সেই সময় অন্যান্য যে মিউজিক ছিল তা অন্তত তুলনামূলকভাবে বহুস্বরের এই ব্যাপারটা ধরতে পারেনি। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ইউরোপের মিউজিক আরও কিছু চাইল। আমি অবশ্য বলবো না বহুস্বরের মিউজিক পুঁজিবাদী মিউজিক কিন্তু এর মাঝে উৎপাদনের প্রলোভন ছিল। সেই সময় এমনও সঙ্গীত রচয়িতা ছিল যারা চল্লিশ বা হয়তো তারো বেশী গায়ক, গায়িকার কোরাস দলের জন্য সঙ্গীত রচনা করতো (চল্লিশ জনের সংখ্যার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, এর বেশী আমি নিশ্চিত নই।) । এরপর চার্চ চল্লিশ জনের এই পলিফনি বা বহুস্বরের গান করা নিষিদ্ধ করে দিল। তাদের যুক্তি ছিল, বহুস্বরের অন্তজ:কোলাহলে গানের কথা বোঝা যায়না। গ্রেগোরিয়ান ভজনরীতিতে গানের কথা ভালোই বোঝা যায় কিন্তু বহুস্বরের আধিক্যে শুধু সুরই শোনা যায়, কথা নয়। ফলে কথা তার গুরুত্ব হারায়।


আপনি চাইলে সামাজিক স্তরবিন্যাসের দিকে নজর দিতে পারেন। আমি বলছি শহরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা আর আধুনিক রাষ্টের জন্মের কথা। সবই আসলে একমুখী, মানে উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।


আমার মনে হয়, অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ এক রুহানিয়াতি পরিবর্তন হওয়া দরকার। সেইদিক থেকে চিন্তা করলে করোনা সংকটের এক ভালো ভূমিকা আছে। আপনি হয়তো বলবেন এই সংকট আমাদের বুঝিয়ে দিলো জীবনের মূল্য অপরিসীম। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। জীবনের মূল্য দিয়ে’তো আর সমাজ গঠিত হয়না।


এংগেলম্যান : এটা বুঝি যে, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা বৃদ্ধ, দুর্বল, শিশু, প্রতিবন্ধী, মানে যারা নিজেদের জন্যে কিছু করতে সক্ষম নয়, তাদের অন্তত নিরাপত্তা আর সুবিধা দিতে পেরেছি। আমার মনে হয় ইতিহাসের অগ্রযাত্রায় এটা আমরা অন্তত করতে পেরেছি।


ন্যান্সি : কিন্তু কেন?


এংগেলম্যান: এটা আমার মনে হয়।


ন্যান্সি : বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, কেন একে আপনার ভালো মনে হচ্ছে?


এংগেলম্যান: আপনি কি সত্যিই চান ব্যাপারটা আমি ব্যাখ্যা করি? আমি বরং নিজেকেই প্রশ্নটা করি, কিংবা ঘুরিয়ে নিজেকেই জিজ্ঞেস করি: এমন সমাজ কি আমি চাই যেখানে বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের পিটিয়ে মারা হয়, যেসব শিশুদের সামাজিক প্রয়োজনীয়তা নেই তাদের হত্যা করা হয়। দার্শনিক বোধ-বিবেচনা ছাড়া এমন সমাজ আমি চাইনা। আমার অন্তত এভাবেই বুঝি। আমি জানি আপনি বলবেন, এই সমাজে সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘ জীবন কামনা এক ভয়ানক প্রলোভন। কিন্তু তারপরও আমি বলি, এমন কোন যুক্তি নেই যা দিয়ে আমি নিজেকে এই মৌলিক দাবির বিপক্ষে দাঁড় করাতে পারি।


ন্যান্সি : ঠিক এই জায়গাটাতে রুহানিয়াত বিপ্লব আসা প্রয়োজন। এবং এটা ঘটছেও, কেননা প্রতিটি জীবন মুল্যবান শুধু এই বলাই যথেষ্ট নয়। আপনাকে কেন প্রশ্নেরও জবাব দিতে হবে। আমার বিশ্বাস এ যাবতকাল জীবনের মূল্য পরিমাপ করা হয়েছে হয় স্বর্গের হিসেবে নাহয় ধর্মীয় এপার ওপারের হিসেবে নাহয় ভবিষ্যতের নতুন সমাজের হিসেবে। এখন দুইটাই খতম, অন্তত আমাদের এই পশ্চিমা দুনিয়ায় জন্য। যেহেতু দুই দিকের যুক্তির দিনই শেষ, তাহলে সাধারণ জীবনের প্রেক্ষিতে নয়, অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত মুল্যে অন্যভাবে নিরূপণ করতে হবে। শুধু এই বললেই হবেনা, জীবন মূল্যবান কারণ এটি জীবন। এই প্রশ্ন করা জরুরী "জীবনের অন্তর্নিহিত মূল্য কি?" বোঝায় যায়, এটা নিরুপণ করতে গেলে ভালোভাবে কাজ করা দরকার। আমার বিশ্বাস এই ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা যায় যে, মানবজীবন শব্দ বিনিময়ের জীবন। আর এই বিনিময় হতেই অর্থের জন্ম। এই অর্থ কিন্তু উৎপাদন নয়, আপনি এটা জড়ো করে জমা করতে পারবেননা। মানব জাতির ইতিহাসের যে সমগ্র সংস্কৃতি তা কিন্তু পুঁজি নয়। আরেকভাবে বললে, আপনাকে শূন্য থেকেই বারবার শুরু করতে হবে। আমরা সকলেইতো বাইবেল, হোমার, কোরান, দান্তে, লেসিং, ক্লপস্টক এমন আরও অনেক কিছু পার করে এসেছি। একভাবে বলতে গেলে, আপনাকে প্রতিটি মুহুর্তে এটা বুঝতে হবে যে, এটি সবসময় শূন্য থেকেই শুরু হয়। এটি কিন্তু বিপ্লবের দিকে নিয়ে যেতে পারে, আমি ধীরগতির বিপ্লবের কথাই বলছি। আমাদের অস্ত্বিত্বের সমগ্র আচরণের পরিবর্তনের দিকেই এটা আমাদের নিয়ে যেতে পারে। তাহলেই হয়তো আমরা ভিন্ন রাজনীতি এবং ভিন্ন অর্থনীতি সৃষ্টি কর‍তে সক্ষম হব। কিন্তু সবকিছুই রুহানিয়াতের শক্তির উপর নির্ভরশীল।


মার্ক্স এভাবেই বলেছেন, “ধর্ম জিনিসটা হলো রুহ ছাড়া জগৎ (i)” তাহলে বুঝলাম, মার্ক্সও মনে করেন আমাদের আত্মা বা রুহের শক্তি দরকার। আমাদের নয়—আত্মাহীন একটা পৃথিবী দরকার।


এংগেলম্যান : তাহলে আপনি মনে করেন আমাদের এই পৃথিবীতে ভাব বা আত্মার দরকার আছে।


ন্যান্সি : হ্যাঁ, তাই বৈকি।


এংগেলম্যান : তাহলেতো আপনি সেই বিখ্যাত উক্তি “সত্তা চেতন নির্মাণ করে [Being determines consciousness (Das Sein bestimmt das Bewusstsein)]” — এই কথাটাকে ঘুরিয়ে দিলেন। আপনি বলতে চাইছেন, চেতন দ্বারা সত্তা নির্মিত হয়।


ন্যান্সি : হ্যাঁ। এমন চেতনের (consciousness) প্রয়োজন যা অচেতন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কথাটা বলছি এই কারণে যে আমরা আজ অচেতনের এক মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত। অনেক অনেক কিছু আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। একেই বলে সীমাবদ্ধতা। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এর মোকাবেলা করা যায়?


এংগেলম্যান : আমাদের মৃত্যুর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। একে এমনভাবে বুঝতে হবে যাতে আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারণা বদলায়।


ন্যান্সিঃ আপনি বলেছেন ঠিকই। মৃত্যুকে বরং জীবনের শেষ বা ধ্বংস হিসেবে না দেখে জীবনের অংশ হিসেবে দেখা যায়। আমার মৃত্যুও শুধু আমার একক অস্তিত্বের সমাপ্তি ঘোষণা করে যেই অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। কথাটা একারণেই বলছি আমার পরে আরও কেউ আসবে আর আমার জায়গা দখল করবে। অন্যদিক থেকে ভয়ানক ভাবনাও ভাবা যায়। যেমন ধরুন “কেউ মরবে না”, তাহলে কি হবে? সবাই ঠাসাঠাসি করে বসবাস করবে। যার নাম দেয়া যেতে পারে অসহনীয় সহাবস্থান। ধর্মের মতানুসরণ করে অনেকেই ভাবতে পছন্দ করে যে এই জীবনের ওপাড়েও জীবন আছে। আপনাকে এটাও মেনে নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলঃ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে মৃত্যুকে কিভাবে অর্থবহ করে দেখানো যায়?


এংগেলম্যানঃ আপনি বরং বলুন না?


ন্যান্সিঃ না, আমি তা বলতে পারি না। হয়তো কাব্যিক শোনাচ্ছে। সেই বিশাল দৃষ্টি যদি থাকত! কম্পিউটারে তাই খুঁজে নিতাম। আপনার জন্য কনরাড এইকেনের (Conrad Aiken) লিখা কবিতাটি পড়ছি :



অত:পর দেখেছি সারি সারি

বস্তুরাজী

প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণির মাঝে দিশেহারা,

এবং ছুটে যায় ফানেলের তলানি মাঝে,

সংখ্যাহীন, অর্থহীন, উদ্দেশ্য

হীন;

নতুবা, এই উদ্দেশ্যহীনতারও এক নাম আছে

অর্থহীনতারও হৃদস্পন্দন আছে এবং

সংখ্যাহীনতাও পরেছে নক্ষত্র-পিড়ান।[২]



আমার মনে হয়, এটা একটা জবাব হতে পারে।


এংগেলম্যানঃ আজ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। করোনার ব্যাপারে কিছু বলার এই আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা ভাইরাসতত্ত্ব এবং মহামারী তত্ত্বের বাইরেও কিছু বলার চেষ্টা করা হলো। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।


___________

১০ই জুন, ২০২০


ইংরেজী অনুবাদকের টীকা


[১] ন্যান্সি যে উক্তিটির অল্প অংশ ব্যবহার করেছে তা নিচে দেয়া হলঃ


ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মূলত যা বলা হয় তা হলঃ মানুষই ধর্ম তৈরী করে, ধর্ম মানুষকে নয়। সত্যি বলতে কি, ধর্ম হল মানুষের আত্ম-সচেতনতা এবং আত্ম-উপলব্ধি। এইখানে সেইসব মানুশের কথা বলা হচ্ছে যারা এখন নিজেদের জয় করতে পারেনি কিংবা নিজেই নিজের বিরুদ্ধে আরেকবার হেরেছে। কিন্তু মানুষ পৃথিবীর বাইরে হাটুঁ গেড়ে বসে থাকা কোন হাওয়ায় ভেসে থাকা সত্তা নয়। মানুশ রাষ্ট্র, সমাজ ইত্যাদির কেন্দ্র। এই রাষ্ট্র এবং সমাজই ধর্ম উৎপাদন করে যা এই পৃথিবীর প্রেক্ষিতে এক বিপরীত্মূখি চেতনা। এই পৃথিবীর সাধারণ তত্ত্ব, এর দানবীয় সংমিশ্রণ, এর জনপ্রিয় যুক্তি, এর আত্মিক সম্মানের জায়গা, এর উৎসাহ, এর নৈতিক অনুমোদন, এর গম্ভীর পিঠ চাপড়ানি, এবং মহাজাগতিক সান্তনা এবং যুক্তিবোধের জায়গা। এটি মানুষের সারবস্তু বোঝার এক চমৎকার উপলব্ধি যেহেতু মানুষের সারবস্তু এখনো বাস্তবতার মুখ দেখেনি। তাই ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম মানে, পরোক্ষভাবে সেই পৃথিবীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা যার আত্তমিক সুগন্ধিই হল ধর্ম।


ধর্মীয় কষ্ট সত্যিকারের কষ্টের প্রকাশ এবং সত্যিকারের কষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও। “ধর্ম হল নিপীড়িতের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন পৃথিবীর হৃদয় এবং আত্মাহীন অবস্থার আত্মা। এটি মানুষের জন্যে আফিমস্বরূপ।”


মানুষের সত্যিকারের সুখের জন্যেও এখন দাবী হল ধর্মের ভেল্কিবাজী সুখের অবসান ঘটানো। অবস্থা প্রেক্ষিতে এই মায়া ত্যাগ করার আহ্বান জানানো মানে সেই অবস্থান ত্যাগ করার আহ্বান জানানোর মত যেই অবস্থানের জন্য মায়া দরকারী জিনিস। অতএব সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে ধর্মের সমালোচনা মানে চোখের পানির সেই আবরণের সমালোচনা ধর্ম যেখানে জ্যোতি হিসেবে বিরাজ করে।


[কার্ল মার্ক্স, Introduction to a contribution to the critique of Hegel's philosophy of Right, collected works v.3, নিউ ইয়র্ক, ১৯৭৬]


[২] Excerpt from “Stage Directions” (The Coming Forth by Day of Osiris Jones) by Conrad Aiken (1889-1973), in: Conrad Aiken, Selected Poems, Oxford University Press 2003, p. 79. Thanks to Philippe Theophanidis for identifying the correct reference.



সাক্ষাৎকারঃ https://www.youtube.com/embed/

হদিসঃ http://lived.ink/2020/06/11/the-dark-side-of-progress/fbclid=IwAR1vd4o6Zd_bFnWJ1k_vqNnV7UtT9TA08sFtZni_zcNu9DisZ5vkMrHo78s



প্রথম প্রকাশঃ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২০

সর্বশেষ সংশোধনঃ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২০

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/387531915611061/