নজরে রাখা আর শাস্তি দেয়া? আজ্ঞে, হ্যাঁ!

স্লাভো জিজেক



[করোনাভাইরাস মহামারী প্রসঙ্গে বামধারার ভাষ্যকারদের প্রত্যুত্তরে, স্লোভেনীয় দার্শনিক স্লাভো জিজেকের Monitor and Punish? Yes, Please! লেখাটি The Philosophical Salon পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে গত ১৬ই মার্চ। বিশেষভাবে বললে, এই প্রসঙ্গে জর্জিও আগামবেনের অভিঘাতের সমালোচনা এবং সেইসাথে মহামারী পরিস্থিতিতে ‘কম্যুনিজমের প্রয়োজন উঁকি দেয়া’র তাঁর দাবি নিয়ে শুরু হওয়া মশকরারও জবাব দেয়া উদ্দেশ্য। কোন পদের ‘কম্যুনিজম’ আজ দরকারী তা তিনি স্পষ্ট করতে চেয়েছেন এই লেখায়। ‘যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে’ এই নিষ্ঠুর আইনের প্রয়োগ নাকি বৈশ্বিক সম্বন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন ধরনের সাম্যবাদ — এমন প্রশ্নের মুখে আমাদের দাঁড় করাতে চান জিজেক। জিজেকের এই নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন অলিউর সান। অলিউর সান নিজেকে নন-ফিলোসফার বা ন-দার্শনিক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।]



লিবারেল এবং বামপন্থী সমালোচকদের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, করোনাভাইরাস মহামারী কীভাবে জনগণের উপর শাসন ও নিয়ন্ত্রণকে ন্যায্যতা ও বৈধতা দানের উপায় হিসেবে কাজ করছে, যেটা এর আগে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সমাজে অকল্পনীয় ছিলো। ইতালির সর্বাত্মক লকডাউন কি একজন সর্বগ্রাসী(totalitarian) শাসকের স্বপ্নদোষের সত্যি হওয়া নয়? আশ্চর্যের কিছু নেই (অবস্থাদৃষ্টে যেমনটি মনে হচ্ছে) যে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক নিয়ন্ত্রনের নানা কৌশল ইতিমধ্যে ব্যবহার করে আসা চীন, মারাত্মক মহামারী মোকাবিলায় সবচেয়ে যোগ্য। এর অর্থ কি তবে এই দাঁড়ায় যে, কিছু ক্ষেত্রে হলেও, চীনই আমাদের ভবিষৎ? আমরা কি একটি বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছি? জর্জিও আগামবেনের বিশ্লেষণ কি তবে নতুন বাস্তবতা পেতে যাচ্ছে?


এটা মোটেই বিস্ময়ের কিছু নয় যে, আগামবেন নিজেই এই উপসংহার টেনেছেনঃ তিনি বেশিরভাগ আলোচকদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে করোনা ভাইরাস মহামারীর ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সর্দি-জ্বরেরই(flu, ফ্লু) আরেকটি ধরন হলেও, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় গৃহীত “ক্ষিপ্ত, অযৌক্তিক এবং পুরোপুরি অন্যায্য জরুরি ব্যবস্থাসমূহের” নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। এবং প্রশ্ন তুলেছেনঃ “কেন মিডিয়া ও কর্তৃপক্ষ তাদের সবটুকু দিয়ে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে যাতে জরুরি অবস্থা প্ররোচিত হয়, আর চলাফেরায় তীব্র সীমাবদ্ধতাসহ সমগ্র অঞ্চলে দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হয়?”


আগামবেন এই ‘অসামাঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার’ প্রধান কারণ হিসেবে “জরুরি অবস্থাকে সাধারণ শাসনের দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে” দায়ী করেছেন। “প্রশাসনিক ফরমান জারি করে আরোপিত বিধানগুলো আমাদের স্বাধীনতাকে সংকটজনকভাবে সীমিত করতে সরকারকে সাহায্য করে।” “এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এই বিধিনিষেধগুলো হুমকির তুলনায় একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটি সিএনআর(The Consiglio Nazionale delle Ricerche-CNR অর্থাৎ ইতালীয় জাতীয় গবেষণা পর্ষদ)-এর মতে অন্যান্য বছরে যে সকল ফ্লু’র দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই তার চেয়ে তেমন ভিন্ন কিছু নয়।


আমরা বলতে পারি যে, সন্ত্রাসবাদ যখন জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের ওজর হিসেবে আর টিকছে না, তখন একটি মহামারীর উদ্ভাবন সীমাহীনভাবে এধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি আদর্শ অজুহাত হিসেবে কাজ করতে পারে।” দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, “ত্রাসের রাজত্ব, যা বিগত বছরগুলোতে ব্যক্তি চৈতন্যে বিস্তৃত হয়েছে আর যৌথ আতঙ্ক দশার এক বাস্তব চাহিদায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবার এজন্যেও মহামারীটি অনবদ্য এক ছুতা হিসেবে কাজ করে।”


আগামবেন চলমান মহামারীতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমূলক ক্রিয়াকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বর্ণনা করছেন। কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়ঃ রাষ্ট্রক্ষমতা কেনো এ ধরণের আতঙ্ক ছড়াতে আগ্রহী হবে যার সাথে রাষ্ট্রক্ষমতার উপরেই অবিশ্বাস জড়িত (উনারা অসহায়, উনারা যথেষ্ট করছেন না...) এবং যেটি পুঁজির নির্ঝঞ্ঝাট পুনরুৎপাদনকেও ব্যাহত করে? আধিপত্য পুনরুজ্জীবিত করতে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সূত্রপাত করা কি পুঁজি ও রাষ্ট্রক্ষমতার স্বার্থের সাথে যায়? পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাচ্ছে না তার যে স্পষ্ট লক্ষণগুলো দেখা দিচ্ছে, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন বলেই শুধু সাধারণ জনগণ নয়, রাষ্ট্র ক্ষমতা নিজেও আতঙ্কগ্রস্ত—এই লক্ষণগুলো কি সত্যিই শুধু রণকৌশল?


ভাইরাস ছড়াবার ফলে তৈরি হওয়া ‘অতিরঞ্জিত আতঙ্ক’-কে সামাজিক নিয়ন্ত্রণকামী ক্ষমতাচর্চা ও পুরোদস্তুর বর্ণবাদী উপাদানের (‘প্রকৃতি কিংবা চীনের দোষ’) মিশেল হিসেবে পাঠের বহুল প্রচলিত বামপন্থী অবস্থানেরই এক চরম রূপ হচ্ছে আগামবেনের প্রতিক্রিয়া। তবে এ ধরণের সামাজিক ব্যাখ্যা হুমকির বাস্তবতাকে গায়েব করে ফেলেনা। এই বাস্তবতা কি আমাদের স্বাধীনতাকে কার্যত সঙ্কুচিত করতে বাধ্য করে? অবশ্যই, কোয়ারেন্টাইন ও এ ধরনের ব্যবস্থা স্বাধীনতাকে সীমিত করে ফেলে এবং এর অপব্যবহার খুঁজে বের করতে আমাদের নতুন অ্যাসাঞ্জদের প্রয়োজন। কিন্তু এই ভাইরাস সংক্রমণের হুমকি, নতুন ধরনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংহতি তৈরিকেও ভীষণভাবে জোরদার করেছে। একইসাথে ক্ষমতার উপরেই নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করেছে। জনগণ সঠিকভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতাকে দায়ী করছেঃ তোমার ক্ষমতা আছে, তো এখন দেখাও কী করতে পারো! চীন যেটা করেছে সেটাই আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিকভাবে করা যায়, এটা প্রমাণ করে দেখানোই ইউরোপের এখনকার চ্যালেঞ্জঃ


“চীন এমন কিছু ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে যেগুলো, হয়তো নিজেদেরই ক্ষতির জন্যে, পশ্চিম ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব। স্পষ্ট করে বললে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকল ধরনের সনাক্তকরণ এবং মডেলিংকে ‘নজরদারি’ আর সক্রিয় পরিচালনাকে ‘সামাজিক নিয়ন্ত্রণ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করাটা ভুল। হস্তক্ষেপের একটি ভিন্ন ও আরও সুক্ষ্ম শব্দ চয়ন দরকার।” “চীন এমন কিছু ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে যেগুলো, হয়তো নিজেদেরই ক্ষতির জন্যে, পশ্চিম ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব। স্পষ্ট করে বললে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকল ধরনের সনাক্তকরণ এবং মডেলিংকে ‘নজরদারি’ আর সক্রিয় পরিচালনাকে ‘সামাজিক নিয়ন্ত্রণ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করাটা ভুল। হস্তক্ষেপের একটি ভিন্ন ও আরও সুক্ষ্ম শব্দ চয়ন দরকার।” [১]


সবকিছু এই ‘আরও সূক্ষ্ম শব্দচয়নের’ উপরেই নির্ভর করছেঃ যেই ব্যবস্থাগুলো মহামারীর ক্ষেত্রে নেয়া প্রয়োজন, সেগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, ফুকোর মতো চিন্তকদের দ্বারা প্রচারিত, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ধারনার প্রথাগত দৃষ্টান্তে পর্যবসিত করা উচিত নয়। চীন (এবং ইতালি এবং...) কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর চেয়ে বরং আজ আমার অধিক আশঙ্কা হচ্ছে এটা ভেবে যে, তারা যেভাবে এই ব্যবস্থাগুলোকে প্রয়োগ করছে তা মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে কার্যকর হবে না, আর কর্তৃপক্ষ নিজের স্বার্থ অনুযায়ী প্রকৃত তথ্য ব্যবহার ও গোপন করবে।


বিকল্প-ডানপন্থী আর ভুয়া বামপন্থী উভয় দলই মহামারীর পূর্ণ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। উভয়ই সামাজিক-নির্মাণবাদী সংক্ষেপণ চর্চা করতে গিয়ে এটিকে হালকা করে ফেলে অর্থাৎ সামাজিক অর্থের তরফ হতে এর সমালোচনা করে। ট্রাম্প ও তাঁর তরফদারগণ বারংবার প্রচার করছে যে এই মহামারী আসন্ন নির্বাচনে তাকে হারাতে চীন এবং ডেমোক্রাটদের একটি ষড়যন্ত্র, আবার বামদের কেউ কেউ পরদ্বেষে(xenophobia) দূষিত বলে রাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্যযন্ত্র কর্তৃক প্রস্তাবিত ব্যবস্থাসমূহের নিন্দা জানিয়ে করমর্দন, ইত্যাদি জারি রাখতে জোর দিচ্ছে। এ ধরনের অবস্থান এই কূটাভাসটি লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হয়ঃ করমর্দন না করা এবং প্রয়োজনে সঙ্গনিরোধ করাই আজ সংহতির রুপ।


কারা আজ করমর্দন ও আলিঙ্গন করার সামর্থ্য রাখে? সামর্থ্যবানেরা। জিওভান্নি বোকাচিও’র ডেকামেরনে(The Decameron, ১৩৫৩) সাত জন যুবতীর ও তিন জন যুবকের গল্প বলা হয়েছে যারা প্লেগ থেকে বাঁচতে ফ্লোরেন্সের ঠিক বাইরেই নিভৃত এক বাগান বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো। উচ্চবিত্তরা এরকম নিরিবিলি পরিবেশে গিয়ে নিজেদের ডেকামেরন ধাঁচের গল্প শুনিয়ে আমোদিত করবে। (অতীব ধনীরা ইতিমধ্যে ঝাঁক বেঁধে ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তাঁদের একান্ত দ্বীপগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে।) আর আমরা সাধারন জনগণ যাদের ভাইরাসের সাথেই বসবাস করতে হবে, তাঁদের উপর অবিরাম একই সূত্রের বোমা ফেলা হচ্ছে—‘আতঙ্কের কিছু নেই!’… আর তারপর আমাদেরকে এমন তথ্য দেয়া হচ্ছে যা শুনে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া গতি নেই। এই পরিস্থিতির সাথে সাম্যবাদী দেশে আমার ছোটবেলার একটি স্মৃতির মিল আছে—যখন সরকারি কর্মকর্তাগণ জনগণকে আশ্বস্ত করতো এই বলে যে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই, আমরা সেই আশ্বাসগুলোকে তারা নিজেরাই যে আতঙ্কে আছে তার লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতাম।


কিন্তু আতঙ্কিত হওয়া কোন বাস্তব হুমকি মোকাবিলার যথাযথ পথ হতে পারে না। যখন আমরা আতঙ্কের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাই, তখন আমরা হুমকিটাকে গুরুত্বের সাথে নেই না, বরং সেটিকে অবমূল্যায়ন করি।

শুধু একবার ভাবুন যে মাত্রাতিরিক্ত টয়লেট পেপার কেনা কতটা হাস্যকরঃ যেন এই মারাত্মক মহামারীর মধ্যে মলত্যাগান্তে অন্তমার্জনের জন্য যথেষ্ট কাগজ থাকলেই চলবে… তাহলে করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে যথাযথ প্রতিক্রিয়া কী হবে? আমাদের কী শেখা উচিত আর এটিকে গুরুত্বের সাথে মোকাবিলার জন্য কী করা উচিত?


যখন আমি বাতলালাম যে করোনাভাইরাস মহামারী সাম্যবাদকে এক নতুন জীবন দিতে পারে, আশানুরূপভাবেই আমার দাবি নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হল। যদিও দেখা যাচ্ছে যে সংকট মোকাবিলায় চীনা রাষ্ট্রের দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসাটা কাজ করেছে – অন্তত ইতালিতে এখন যা হচ্ছে তার তুলনায় অনেক ভালো কাজ করেছে – সাম্যবাদীদের ক্ষমতায় থাকার সেই পুরনো কতৃত্বপরায়ণ যুক্তি তার সীমাবদ্ধতাগুলোও দেখিয়ে দিয়েছে। তার ভেতর একটি হল ক্ষমতাসীনদের (এবং জনগনের) কাছে দুঃসংবাদ পৌঁছানোর জন্য আসল ফলাফল ম্লান হয়ে যায়। এ কারণেই যারা সর্বপ্রথম ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশ করেছিলো তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে একই রকম ঘটনা এখনও ঘটছেঃ


“করোনাভাইরাস শাটডাউন শেষে চীনকে কাজে ফিরিয়ে আনার চাপ পুরনো এক প্রলোভনকে পুনরুজ্জীবিত করছেঃ তথ্য জালিয়াতি করা, যাতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যা চান সেটাই দেখানো যায়। এই ব্যাপারটিই বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধরন আকারে, পূর্ব উপকূলের শিল্পকেন্দ্র জিজিয়াং প্রদেশে ঘটছে। যারা বিষয়টি জানেন তাঁদের মতে, অন্তত তিনটি শহরের আঞ্চলিক কারখানাগুলোকে বিদ্যুৎ খরচের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, কারণ এই বিদ্যুৎ খরচের তথ্যকে তাঁরা উৎপাদনের পুরুত্থান হিসেবে দেখাতে চাইছে। স্থানীয়রা বলেন, এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের প্লান্ট জনশূন্য থাকলেও যন্ত্রপাতি চালু রাখতে উৎসাহিত হচ্ছে।“


যখন ক্ষমতাসীনরা এই প্রতারণা ধরতে পারবে, তারপর কী হবে সেটাও আমরা অনুমান করতে পারিঃ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনা হবে এবং কঠোর শাস্তি দেয়া হবে, যা জন্ম দেবে অবিশ্বাসের এক দুষ্টচক্রের… চীন কীভাবে এই মহামারীর মোকাবিলা করছে, সেটি জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য এখানে একজন চীনা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের দরকার হবে। সুতরাং, আমার অন্তরে নিহিত সাম্যবাদ যদি এ রকম না হয়ে থাকে, তাহলে সাম্যবাদ বলতে আমি কি বোঝাই? এটা বুঝতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণাগুলো পড়া আবশ্যক। সাম্প্রতিককালের একটি হলোঃ


“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস, বৃহস্পতিবার বলেছেন যে যদিও বিশ্বে জন স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া সফলভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা আছে, আমরা উদ্বিগ্ন যে কিছু দেশগুলোতে হুমকির মাত্রার সাথে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মাত্রা মানানসই নয়। টেড্রোস বলেন, ‘এটা কোনো ব্যায়াম নয়। এখন হাল ছেড়ে দেয়ার সময় নয়। এখন অজুহাতের সময় নয়। এখন সময় সকল সম্পদ ও বল নিয়োগের। সকল দেশ এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বহু দশক ধরে পরিকল্পনা করছে। এখন সেই সকল পরিকল্পনামাফিক কাজ করার সময়।’ ‘এই মহামারী ঠেকানো সম্ভব কিন্তু সরকারের সকল কলকব্জার মধ্যে সংযোগ ঘটায় শুধুমাত্র এরকম একটি যৌথ, সমন্বিত ও ব্যাপক পদক্ষেপের মাধ্যমে।’”


কেউ হয়তো যুক্ত করতে পারেন যে এ ধরণের ব্যাপক পদক্ষেপ একক সরকারের কলকব্জার বাইরেও বিস্তৃত হওয়া উচিতঃ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে আঞ্চলিকভাবে জনগণের সংযোজন এবং শক্তিশালী ও কার্যকর আন্তর্জাতিক সমন্বয় এবং সহযোগিতাও এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। যদি হাজার হাজার মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাহলে বিপুলসংখ্যক কৃত্রিমশ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে, সেগুলো পেতে সরকারকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে যেভাবে সে যুদ্ধের সময় হাজার হাজার বন্দুক সংগ্রহের জন্যে করে। আর তাকে অন্যান্য রাষ্ট্রের সহযোগিতার উপরেও নির্ভর করতে হবে। একটি সামরিক অভিযানের মতো করেই তথ্য ভাগাভাগি এবং পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয় করা উচিত—আজকের দিনের প্রয়োজনীয় “সাম্যবাদ”বলতে আমি এটাই বোঝাই, অথবা উইল হাটন যেমনটি বলেছেন,“বর্তমানে এক ধরণের অনিয়ন্ত্রিত, মুক্ত-বাজার বিশ্বায়নতার সংকট ও মহামারী মোকাবিলার প্রবৃত্তিসমেত মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু পারস্পরিক নির্ভরতাকে আমলে নেয়া এবং সাবুদ-ভিত্তিক সম্মিলিত পদক্ষেপকে প্রাধান্য দেয়া নতুন আরেক ধরন জন্ম নিচ্ছে।” “যেটি এখনও বিদ্যমান সেটি হচ্ছে, “যার দেশ তার তার” এই অবস্থানঃ দেশগুলো যখন আঞ্চলিক ঘাটতি এবং ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের এলোমেলো ও সেকেলে পন্থায় খাবি খাচ্ছে, আর নিজস্ব সংকট বিশ্লেষণ করতে করতে পিছিয়ে পড়ছে, তখন চিকিৎসা সরঞ্জামাদির মতো প্রধান পণ্যসমূহ রপ্তানির ক্ষেত্রে জাতীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।”


করোনা ভাইরাস মহামারী শুধু বাজার বিশ্বায়নের সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করেনা, রাষ্ট্রের পূর্ণ সার্বভৌমত্বে জোর দেওয়া, আরও মারাত্মক জাতীয়তাবাদী লোকরঞ্জনবাদের সীমাবদ্ধতাকেও নির্দেশ করে। “সবার আগে আমেরিকা (অথবা যেকেউ)!”—এইদিন শেষ, কারণ শুধু বৈশ্বিক সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমেই আমেরিকাকে এখন বাঁচানো সম্ভব। এখানে আমি কোন কল্পদেশবাদী(Utopian) নই; জনগণের কোন কাল্পনিক সংহতির কামনাও করছি না। পক্ষান্তরে, কীভাবে বৈশ্বিক সংহতি ও সহযোগিতা আমাদের সবার এবং প্রত্যেকের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থের সাথে জড়িত, কীভাবে এটিই একমাত্র যৌক্তিকভাবে আত্মবাদী কর্তব্য, বর্তমান সংকট সেটিকে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে। আর এটি শুধু করোনাভাইরাস নয়ঃ চীন নিজেই কয়েক মাস আগে বিরাট এক সোয়াইন ফ্লু'র শিকার হয়েছিলো, আর এখন আসন্ন পঙ্গপালের আক্রমণের হুমকির সম্মুখীন। আরও যোগ করলে, ওয়েনজোনস যেমনটি বলেছেন, করোনাভাইরাসের তুলনায় বিশ্বে জলবায়ু সংকটের ফলে আরও বহু সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, কিন্তু এটা নিয়ে কোন আতঙ্ক নেই…


অসূয়াপরবশ প্রাণবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে, কেউ হয়তো করোনাভাইরাসকে উপকারী এক সংক্রমণ হিসেবে দেখতে প্রলুব্ধ হতে পারে যা মানবজাতিকে (অনেকটা অর্ধ-পঁচা আগাছা টেনে তুলবার মতো করে) তার বৃদ্ধ, দুর্বল ও রোগা জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে এবং এভাবে বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখে। যেই প্রশস্ত সাম্যবাদী পন্থার আমি ওকালতি করছি, সেটি-ই এই আদিম প্রাণবাদী দৃষ্টিকোণকে প্রকৃতভাবে পেছনে ফেলবার একমাত্র উপায়। চলমান বিতর্কগুলোতে ইতিমধ্যে শর্তহীন সংহতি সংকোচনের লক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। যেমন, যদি যুক্তরাজ্যে মহামারী আরও সর্বনাশা আকার ধারণ করে তাহলে “তিন জ্ঞানীজনের” ভূমিকা সম্পর্কিত এই নোটটিঃ “সিনিয়র ডাক্তাররা সতর্ক করেছেন যে ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের তীব্র প্রাদুর্ভাবের সময় যদি নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটগুলোতে না কূলায়, তবে এনএইচএস[NHS, ইংল্যান্ডের পাবলিকলি ফান্ডেড জাতীয় হেলথকেয়ার সিস্টেম। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গঠন করা হয়।] রোগীদের জীবনরক্ষক সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হতে পারে। তথাকথিত ‘তিন জ্ঞানীর’ প্রটোকল অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো যদি রোগীর চাপ সামলাতে না পারে, তাহলে প্রতি হাসপাতালে তিন জন সিনিয়র চিকিৎসক ভেন্টিলেটর এবং বিছানা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেবেন।” “তিনজ্ঞানীজন’ কোন মানদণ্ডের উপর নির্ভর করবেন?

দুর্বল ও বয়স্কদের কোরবানি দেয়া? আর এই পরিস্থিতি কি সীমাহীন দুর্নীতির দ্বার উন্মুক্ত করবেনা? এই প্রক্রিয়াগুলো কি এটাই নির্দেশ করে না, যে আমরা ‘যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে’ নিষ্ঠুরতম যুক্তিকেই মঞ্চস্থ করতে প্রস্তুত হচ্ছি? তাই, আবারো, আমাদের জন্যে হয় এটাই চূড়ান্ত বিকল্প, নয়তো বিকল্প হচ্ছে কোন এক পুনরাবিষ্কৃত সাম্যবাদ।


অবশ্য বিষয়গুলো আরও গভীরে প্রোথিত। যেটি আমার কাছে বিশেষভাবে বিরক্তিকর লাগে সেটি হচ্ছে, যখন গণমাধ্যমগুলো কোন বন্ধের বা বাতিলের খবর প্রচার করে, যেভাবে তারা নিয়ম হিসেবে নির্দিষ্ট একটি কালিক সীমা ধার্য করে দেয়ঃ এই যে “স্কুলগুলো ৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে” সূত্রখানা। সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে, যেটি দ্রুতই হবার কথা, সংক্রমণ তুঙ্গে পৌঁছানোর পরে সবকিছু আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যাবে। এই অনুমান করেই, আমাকে এরই মধ্যে জানানো হলো যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেছানো হয়েছে… কিন্তু ধর্তব্য হচ্ছে, অবশেষে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেলেও, সেটি এই প্রাদুর্ভাবের আগের মতো সেই স্বাভাবিক জীবন হবে না, যেটাতে আমরা অভ্যস্ত ছিলামঃ আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে যেসব জিনিসে আমরা অভ্যস্ত তা আর আগের মতো ধরে নেয়া যাবে না; সার্বক্ষণিক আড়ালে লুকিয়ে থাকা হুমকি নিয়েই আমাদের আরও অনেক ভঙ্গুর এক জীবন, যাপন করতে শিখতে হবে।


এ কারণেই, আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে ভাইরাস মহামারী আমাদের নিজেদের শরীরসহ চারপাশের বস্তু এবং অন্যান্য মানুষের সাথে আমাদের একদম প্রাথমিক মিথস্ক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলবেঃ (অলক্ষ্যে) “নোংরা” হয়ে থাকতে পারে এমন জিনিসপত্র স্পর্শ থেকে বিরত থাকা, হুক না ছোঁয়া, গণ-শৌচালয়ে কিংবা গণজমায়েতের স্থানে বেঞ্চে না বসা, অন্যদের আলিঙ্গন করা এবং করমর্দন হতে বিরত থাকা... এবং এমনকি আপনার নিজের শরীর ও স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গভঙ্গি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকাঃ নাক স্পর্শ না করা কিংবা চোখ না ঘষা – মোটকথা, নিজেকে নিয়ে না খেলা। সুতরাং, শুধুমাত্র রাষ্ট্র এবং অন্যান্য সংস্থাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে তা নয়; আমাদের নিজেদেরই নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মাধীন করতে শিখতে হবে! হয়তো শুধুমাত্র ভার্চুয়াল বাস্তবতাকেই নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, আর উন্মুক্ত স্থানে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ শুধুমাত্র অতীব-ধনীদের দ্বীপগুলোর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।


তবে এই ভার্চুয়াল বাস্তবতা এবং ইন্টারনেটের স্তরেও আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে গত দশকগুলোতে “ভাইরাস” এবং “ভাইরাল” এই পরিভাষাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েব-স্পেস সংক্রমণকারী ডিজিটাল ভাইরাসগুলোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো এবং যার ব্যাপারে আমরা সচেতন ছিলাম না, অন্তত সেগুলোর ধ্বংসাত্মক (আমাদের ডাটা অথবা হার্ড-ড্রাইভ ধ্বংসের) ক্ষমতা লাগামছাড়া না হওয়ার আগ পর্যন্ত। বর্তমানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি সেটি হলো এই পরিভাষারই আদি আক্ষরিক অর্থের এক বৃহদায়তনিক প্রত্যাবর্তনঃ ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বাস্তব এবং ভার্চুয়াল উভয় জগতেই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।


সুতরাং, জীবনের প্রতি, জীবসত্তা হিসেবে অন্যান্য জৈবরুপের(form of life) মাঝে বিরাজমান আমাদের অস্তিত্বের প্রতি, আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণরূপে বদলাতে হবে। অন্যভাবে বললে, যদি “দর্শন"কে আমরা জীবনের মৌলিক দিশা হিসেবে ধরি, তাহলে আমাদের সত্যিকারের এক দার্শনিক বিপ্লবের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। আমরা হয়তো করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিক্রিয়ার ব্যপারে এলিজাবেথ কুবলা-রসের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারি, যিনি তার মৃতু ও মরণ সম্বন্ধে (On Death and Dying, ১৯৬৯) গ্রন্থটিতে, আমরা মরণব্যাধিতে ভুগছি এটা জানার পরে কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি, তার পাঁচটি ধাপের বিখ্যাত সেই প্রণালীটি প্রস্তাব করেছেনঃ অস্বীকার (বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়াকে প্রত্যাখান করাঃ “এ হতে পারে না, আমার এটা হতে পারে না।”); ক্রোধ (যার বিস্ফোরণ ঘটে যখন আমরা বিষয়টিকে আর অস্বীকার করতে পারি নাঃ “এটা কীভাবে আমার সাথে হতে পারে?”); দরকষাকষি (সেই আশা যে আমরা কোনমতে বিষয়টিকে স্থগিত কিংবা খর্ব করতে পারবোঃ “আমার সন্তানদের স্নাতক পাশ দেখা পর্যন্ত শুধু বেঁচে থাকতে দিন”); বিষণ্ণতা (বিলগ্নিকৃত কামেচ্ছাঃ “মরেই তো যাবো, তাহলে আর কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবো কেনো?”); স্বীকৃতি (“লড়াইয়ে তো পেরে উঠবো না, হয়তো এটার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি।”)। পরবর্তীতে, কুবলা-রস এই ধাপগুলিকে যেকোনো ধরনের ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন (বেকারত্ব, প্রিয়জনের মৃত্যু, তালাক, মাদকাসক্তি), এবং গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, এগুলো অবধারিতভাবে একই ক্রমে আসে না, আর সকল রোগীই এই পাঁচটি ধাপের সব কয়টির ভেতর দিয়ে যায় না।


কেউ একজন এই পাঁচটি ধাপ হয়তো উপলব্ধি করে থাকতে পারেন, যখন একটি সমাজ কোনো ব্যাথাদায়ক বিরতির সম্মুখীন হয়। আমরা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কথাই ধরিঃ প্রথমত, আমরা এটাকে অস্বীকার করতে চাই (এটি শুধুই ভ্রম(paranoia), যা ঘটছে তা আবহাওয়ার স্বাভাবিক আদলেরই দোলাচল); এরপর আসে ক্রোধ (বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর প্রতি যারা আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে, সরকারের প্রতি যারা বিপদগুলোকে উপেক্ষা করছে); তারপরেই দরকষাকষি (যদি আমরা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করি, আমরা কিছুটা সময় পাবো; আর এটার ভালো দিকও রয়েছেঃ আমরা গ্রিনল্যান্ডে সবজি চাষ করতে পারবো, উত্তরের রুট ব্যবহার করে জাহাজগুলো চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আরও দ্রুত পণ্য পরিবহন করতে পারবে, চিরহিমায়িত অঞ্চল গলে যাওয়ার দরুণ উত্তর সাইবেরিয়াতে নতুন উর্বর জমি পাওয়া যাচ্ছে...), বিষণ্ণতা (অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমরা হতভাগ্য...), এবং, সর্বশেষ, স্বীকৃতিঃ আমরা মারাত্মক এক হুমকির মোকাবিলা করছি এবং আমাদের পুরো জীবনযাত্রা বদলে ফেলতে হবে!


একই ব্যাপার আমাদের জীবনের উপর ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্যঃ প্রথমে, আমরা এটাকে অস্বীকার করতে চাই (এটা অত্যুক্তি, বামপন্থী ভ্রম(paranoia), কোনো সংস্থাই আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না...), তারপর আমরা রাগে ফেটে পড়ি (বড় বড় কোম্পানিগুলোর প্রতি আর গোপন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রতি যারা আমাদেরকে আমাদের নিজেদের চেয়েও ভালোভাবে জানে আর সেই জ্ঞান আমাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করতে ব্যবহার করে), এরপর শুরু হয় দরকষাকষি (কর্তৃপক্ষের সন্ত্রাসীদের সন্ধান করবার অধিকার আছে, কিন্তু আমাদের বৈয়ক্তিকতা(privacy) লঙ্ঘনের অধিকার নেই...), বিষণ্ণতা (অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমাদের বৈয়ক্তিকতা হারিয়ে গেছে, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কাল শেষ), এবং সর্বশেষ, স্বীকৃতিঃ ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ আমাদের স্বাধীনতার জন্য একটি হুমকি; এর সকল মাত্রার ব্যাপারে আমাদের জনগণকে সচেতন করা উচিত এবং এটার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া উচিত!


এমনকি রাজনীতির ক্ষেত্রেও, যারা ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের দ্বারা ব্যাথিত হয়েছেন তাদের জন্যেও একই ব্যাপার প্রযোজ্যঃ প্রথমে, প্রত্যাখ্যান ছিলো (চিন্তার কিছু নেই, ট্রাম্প শুধু ভান করছে, সে ক্ষমতা নিলেও কিছুই পরিবর্তন হবে না), এরপর ক্রোধ(সেই অন্ধকার শক্তিগুলোর প্রতি যা তাকে ক্ষমতা নিতে দিয়েছে, লোকরঞ্জনবাদীদের প্রতি, যারা তাকে সমর্থন করে আর আমাদের নৈতিক অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে...), দরকষাকষি (এখনও সবকিছু হারায়নি, হয়তো ট্রাম্পকে আটকানো যাবে, আমরা শুধু তাঁর কিছু বাহুল্যকে একটু সহ্য করি...), বিষণ্ণতা(আমরা ফ্যাসিবাদের পথে, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র শেষ), এবং স্বীকৃতিঃ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক রাজনৈতিক ধরনের শাসন চলছে, আমেরিকীয় গণতন্ত্রের পুরনো সুদিন শেষ, আমরা বিপদটির সম্মুখীন হই এবং অবিচলিত চিত্তে কীভাবে ট্রাম্পের লোকরঞ্জনবাদকে পরাস্ত করা যায় তার পরিকল্পনা করি...


মধ্যযুগীয় সময়ে, প্লেগের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত শহরের বাসিন্দারাও একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতোঃ প্রথমে প্রত্যাখ্যান, তারপর ক্রোধ (পাপিষ্ঠ জীবনের প্রতি যার জন্যে আমাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে, কিংবা এমনটা হতে দেওয়া নিষ্ঠুর ঈশ্বরেরও প্রতি), তারপর দরকষাকষি (অবস্থা অতোটা খারাপও নয়, যারা অসুস্থ আমরা শুধু তাঁদের এড়িয়ে চলি...), তারপর বিষণ্ণতা (আমাদের জীবন শেষ...), তারপর, চিত্তাকর্ষকভাবে, সঙ্গমোৎসব (যেহেতু আমাদের জীবন শেষ, এর থেকে এখনও যতটুকু সম্ভব ততটুকু মজা লুটে নেই – শরাব, মৈথুন...) এবং সর্বশেষে, স্বীকৃতিঃ এই-ই উপায় আমাদের, এমনভাবে আচরণ করি যেন জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছে...


আমরাও কি ২০১৯-এর শেষদিকে বিস্ফোরিত হওয়া করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে একইরকম আচরণ করছি না? প্রথমে, অস্বীকৃতি ছিলো (মারাত্মক কিছুই হচ্ছে না, কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন লোক শুধুই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে); তারপর ক্রোধ (সাধারনত বর্ণবাদী কিংবা রাষ্ট্র-বিরোধী রুপেঃ নোংরা চীনারা দায়ী, আমাদের রাষ্ট্র দক্ষ না...); এরপর এলো দরকষাকষি (ঠিক আছে, কিছু ভিকটিম আছে, কিন্তু এটি সার্সের তুলনায় কম মারাত্মক, আমরা আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো...); যদি এতে কাজ না হয়, তাহলে জেগে ওঠে বিষণ্ণতা (নিজেদের ধোঁকা না দেই, আমরা হতভাগ্য...)। কিন্তু এক্ষেত্রে স্বীকৃতিটা দেখতে কেমন হবে? একটি অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে যে এই মহামারীর সাথে সাম্প্রতিককালের সামাজিক আন্দোলনগুলোর (ফ্রান্সে, হংকংয়ে) একটি বৈশিষ্ট্যে মিল দেখা যায়ঃ এরা বিস্ফোরিত হয়ে তারপর আবার মিলিয়ে যায় না; বরং, এখানে থেকে যায় এবং অবিরতভাবে লেগে থাকে, আর আমাদের জীবনে এনে দিয়ে যায় স্থায়ী ভয় ও ভঙ্গুরতা। তবে এখানে স্বীকৃতি দুটো দিকে যেতে পারে। একটিতে শুধুই রোগের পুনঃস্বাভাবিকীকরণ ঘটতে পারেঃ ঠিক আছে, মানুষ মারা যাবে, কিন্তু জীবন চলতে থাকবে, হয়তো কিছু ভালো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যাবে... অথবা স্বীকৃতি আমাদেরকে আতঙ্ক ও ভ্রম বিহীন সচলতার দিকে, যৌথ সংহতিতে কাজ করতে চালিত করতে পারে (এবং করা উচিত)।


যেটি আমাদের স্বীকার করা উচিত, আমাদের নিজেদের সাথে যেটিকে খাপ খাইয়ে নেয়া উচিত, সেটি হল যে জীবনের একটি উপ-স্তর আছে, যেটি জ্যান্ত-মরা(undead), মূঢ়ের মতো পুনরাবৃত্তিময়, ভাইরাসের প্রাক-যৌনজীবন, যা এখানে সবসময় ছিল, আর অন্ধকার ছায়ার মতো আমাদের সাথে সবসময় থাকবে, আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করবে, বিস্ফোরিত হবে যখন আমরা এটির প্রত্যাশা করবো সবচেয়ে কম। আরও সাধারণ পর্যায়ে, ভাইরাসজনিত মহামারী আমাদের চূড়ান্ত পরিণাম এবং জীবনের অর্থহীনতাকেই মনে করিয়ে দেয়ঃ যত জাঁকালো আধ্যাত্মিক প্রাসাদই আমরা বানাই না কেন, ভাইরাস কিংবা গ্রহাণুর মতো একটি মূঢ় প্রাকৃতিক পরিণাম, তার সবকিছুকেই শেষ করে দিতে পারে… উপরন্তু বাস্তুসংস্থান থেকে পাওয়া আমাদের শিক্ষানুযায়ী, আমরা, মনুষ্যজাতি, হয়তো অজান্তেই এই শেষকৃত্যে অবদান রাখবো।


এই দফাটি আরেকটু স্পষ্ট করতে নির্লজ্জভাবে একটি জনপ্রিয় সংজ্ঞার উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ ভাইরাস হচ্ছে “যেকোন রকমের সংক্রামক বস্তু, সাধারনত অতি-আণুবীক্ষণিক, যা একটি প্রোটিনের আবরণের ভেতরে RNA কিংবা DNA নামক নিউক্লিক এসিড দ্বারা গঠিতঃ এরা প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ব্যাক্টেরিয়াকে সংক্রামিত করতে পারে ও শুধু জীবিত কোষের ভিতরেই বংশবৃদ্ধি করতে পারেঃ ভাইরাসকে কখনও অজৈব রাসায়নিক বস্তু হিসেবে আবার কখনও অণুজীব হিসেবে ধরা হয়।” জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে এই দোলাচল গুরুত্বপূর্ণঃ সাধারণ অর্থ অনুযায়ী, ভাইরাস জীবিতও না,আবার মৃতও না। এরা জ্যান্ত-মরাঃ প্রতিলিপি তৈরির তাড়নার কারনে ভাইরাস জীবন্ত, কিন্তু এটা এক ধরনের শূন্য পর্যায়ের জীবন, ভাইরাস নামক এই জীবতাত্ত্বিক ব্যঙ্গচিত্রের মূঢ়তম পুনরাবৃত্তি ও সংখ্যাবৃদ্ধির পর্যায়ে মরন-তাড়নার(death-drive) চেয়ে বরং বাঁচার তাড়নাই বেশি। তৎসত্ত্বেও ভাইরাস কোন সরল ধরনের জীব নয়, যা থেকে আরও জটিল ধরনের জীব জন্ম নিতে পারে। এরা সম্পূর্ণ পরাশ্রয়ী; আরও উন্নত জীবকে সংক্রামিত করার মধ্য দিয়ে এরা নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করে (যখন ভাইরাস আমাদের আক্রান্ত করে, মানুষেরা শুধুমাত্র তাদের একটি অনুলিপি তৈরির যন্ত্র হিসেবে কাজ করে)। প্রাথমিক এবং পরাশ্রয়ী - এই দুই বৈপরীত্যের সমাপতনেই ভাইরাসের রহস্য নিহিত আছেঃ এরা এমন এক নজির যাকে শেলিং অভিহিত করেছেন “অপরিবর্তনীয় অবশিষ্ট” (der nie aufhebbare Rest) হিসেবে, অধম জীবরুপের এক অবশেষ, যার উত্থান ঘটে বহুলীকরণের উচ্চ পর্যায়ের জৈবযন্ত্রের ত্রুটির ফলে সৃষ্ট উপাদান হিসেবে আর তাদেরই জীবনে উদয়(সংক্রমণ) হতে থাকে, এমন এক অবশেষ যাকে আর কখনোই উচ্চস্তরের জীবনের অধীনস্ত কোন তাৎপর্য হিসেবে পুনরায় একীভুত করা যাবে না।


এখানে আমরা উত্তম এবং অধম পরিচয়ের যেই বিবৃতির সম্মুখীন হচ্ছি, সেটিকে হেগেল বলেছেন “আনুমানিক সিদ্ধান্ত” (speculative judgment)।হেগেলের আত্মার প্রপঞ্চবিদ্যা (Phenomenology of Spirit) গ্রন্থে চিত্তবৃত্তি-বিন্যাসবিদ্যা(phrenology) বিশ্লেষণ অংশের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণটি হচ্ছে – “আত্মা হলো একটি অস্থি”, আর আমাদের উদাহরণ হওয়া উচিত “আত্মা হলো একটি ভাইরাস”। মানবাত্মাও কি এক ধরনের ভাইরাস নয় যা মানবপ্রাণীতে পরাশ্রিত হয়েছে, স্ব-প্রজননের জন্য শোষণ করছে, আর কখনও কখনও ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে? আর যে পর্যন্ত আত্মার মাধ্যম ভাষাই থাকছে, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, একেবারে প্রাথমিক স্তরে ভাষাও যান্ত্রিক, কিছু নিয়মের সমষ্টি যা আমাদের শিখতে এবং অনুসরণ করতে হয়।


রিচার্ড ডকিন্স দাবী করেছিলেন যে অনুকৃতি(memes) হচ্ছে “মনের ভাইরাস”, কিছু পরাশ্রয়ী সত্তা যা মানবমনকে “উপনিবেশিত” করে, নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য মনকে ব্যবহার করে। এটি এমন একটি ধারণা যার জন্মদাতা ছিলেন স্বয়ং লিও তলস্তয়। তলস্তয়কে সাধারণত দস্তয়ভস্কির তুলনায় বেশ কম চিত্তাকর্ষক মনে করা হয় – দস্তয়ভস্কির অস্তিত্ববাদী উদ্বেগের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজন আশাহীন সেকেলে বাস্তববাদী, যার জন্যে মূলত আধুনিকতায় কোনো জায়গা নেই। যাইহোক, সম্ভবত, তলস্তয়কে, মূলত তার শিল্প ও মানবতার অনন্য তত্ত্বকে, পুরোপুরি পুনর্বাসনের সময় চলে এসেছে, যার ভেতর আমরা খুঁজে পাই ডকিন্সের অনুকৃতি ধারনারই প্রতিধ্বনি। “একজন ব্যক্তি সংক্রামিত মস্তিষ্কওয়ালা একটি বনমানুষ(hominid), লক্ষ লক্ষ সাংস্কৃতিক মিথোজীবিতার বাহক, আর এদের প্রধান নির্বাহক হলো সেই মিথোজৈবিক পদ্ধতিগুলো, যেগুলোকে আমরা ভাষা হিসেবে জানি”রিচার্ড ডকিন্স দাবী করেছিলেন যে অনুকৃতি(memes) হচ্ছে “মনের ভাইরাস”, কিছু পরাশ্রয়ী সত্তা যা মানবমনকে “উপনিবেশিত” করে, নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য মনকে ব্যবহার করে। এটি এমন একটি ধারণা যার জন্মদাতা ছিলেন স্বয়ং লিও তলস্তয়। তলস্তয়কে সাধারণত দস্তয়ভস্কির তুলনায় বেশ কম চিত্তাকর্ষক মনে করা হয় – দস্তয়ভস্কির অস্তিত্ববাদী উদ্বেগের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজন আশাহীন সেকেলে বাস্তববাদী, যার জন্যে মূলত আধুনিকতায় কোনো জায়গা নেই। যাইহোক, সম্ভবত, তলস্তয়কে, মূলত তার শিল্প ও মানবতার অনন্য তত্ত্বকে, পুরোপুরি পুনর্বাসনের সময় চলে এসেছে, যার ভেতর আমরা খুঁজে পাই ডকিন্সের অনুকৃতি ধারনারই প্রতিধ্বনি। “একজন ব্যক্তি সংক্রামিত মস্তিষ্কওয়ালা একটি বনমানুষ(hominid), লক্ষ লক্ষ সাংস্কৃতিক মিথোজীবিতার বাহক, আর এদের প্রধান নির্বাহক হলো সেই মিথোজৈবিক পদ্ধতিগুলো, যেগুলোকে আমরা ভাষা হিসেবে জানি”[২] – ডেনেটের এই অনুচ্ছেদটি কি বিশুদ্ধ তলস্তয়গোত্রীয় নয়? তলস্তয়ের নৃবিজ্ঞানের মৌলিক বিভাগই হচ্ছে সংক্রমণ : মানব সত্তা, একজন থেকে আরেকজনে ছড়ানো ছোঁয়াচে ব্যাসিলি(bacilli, দণ্ডকার ব্যাকটেরিয়া) সদৃশ ভাবাবেগ-ভারাক্রান্ত সাংস্কৃতিক উপাদানের দ্বারা সংক্রামিত, নিষ্ক্রিয় শূন্য এক মাধ্যম। এখানে তলস্তয় একদম উপসংহারে চলে যানঃ তিনি সত্যিকারের এক আধ্যাত্মিক স্বায়ত্তশাসন হিসেবে এই ভাবাবেগ সংক্রমণ ছড়ানোর বিরোধিতা করেন না; তিনি সংক্রামক ব্যাসিলি থেকে পরিত্রাণ নিয়ে পরিণত এক স্বায়ত্তশাসিত নৈতিক সত্তায় নিজেকে দীক্ষিত করার বীরোচিত কোনো দর্শনও প্রস্তাব করেন না। একমাত্র লড়াইটিই হচ্ছে ভালো এবং মন্দ সংক্রমণের লড়াইঃ খ্রীস্টধর্ম নিজেই একটি সংক্রমণ, যদিও তলস্তয়ের জন্য সেটি ভালো সংক্রমণ।


হয়তো চলমান ভাইরাসঘটিত মহামারী থেকে সবচেয়ে অস্বস্তিকর যে বিষয়টি আমরা শিখতে পারি, সেটি হলো এই যেঃ যখন প্রকৃতি আমাদের ভাইরাস দিয়ে আক্রমণ করছে, এটি একরকমভাবে আমাদের বার্তাই আমাদের কাছে ফেরত দিচ্ছে। বার্তাটি হলোঃ আমার সাথে যা করেছো, এখন তোমার সাথেও তাই করছি।


______________

১৬ই মার্চ, ২০২০


দোহাই


[১] [বেঞ্জামিন ব্রাটন] Benjamin Bratton, personal communication.

[২] [ড্যানিয়েল ডেনেট, ২০০৪] Daniel Dennett, Freedom Evolves, লন্ডনঃ পেঙ্গুইন বুকস, ২০০৪, পৃ-১৭৩


প্রথম প্রকাশঃ ৭ই মে, ২০২০

সর্বশেষ সংশোধনঃ ৭ই মে, ২০২০

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/284032152714271/