[প্রিয় রাশীদ স্যার গত মার্চে আমাদের ছেড়ে গেছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছরে পা দিতেন তিনি আজকের এই দিনে (১৬ই আগস্ট, ২০২১)। রাশীদ স্যারের জন্মদিনে, বোধিচিত্তের তাঁকে স্মরণ করবার সুযোগ করে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের কিছু শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বোধিচিত্তে রাশীদ স্যার দুইটি আলাপ করেছিলেন। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ "ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল ও পলিটিক্যাল কারেক্টনেস" শিরোনামের আলাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সনে, এই আগস্ট মাসেই। অর্থাৎ ঠিক তিন বছর আগে। এই আলাপটির শ্রুতিলিখন করেছেন মিতা রহমান, মাহমুদা ফাতেমা, রাদিয়া আউয়াল তৃষা, রিফাত হাসান আদর, এস. এম. রিয়াদ, সাঈফ আহমেদ, সাদিয়া শান্তা, নূর মোর্শেদা ও ইলোরা সুলতানা। এবং সম্পাদনা করে দিয়েছেন কাজী রবিউল আলম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদ সহ প্রত্যেকের নিকট বোধিচিত্ত কৃতজ্ঞ। প্রিয় শিক্ষক রাশীদ মাহমুদকে তাঁর ৪৫তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বোধিচিত্ত লিখিত রূপে প্রকাশ করছে তাঁর দেয়া "ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল ও পলিটিক্যাল কারেক্টনেস" বক্তৃতাটি।]




ধন্যবাদ সবাইকে আজকের আলাপে এসে উপস্থিত হওয়ার জন্য। আজকে পার্টিসিপেন্ট ক্রাউড কম্প্যারাটিভ্লি কম। এটার একটা কারণ সম্ভবতঃ শহীদুল আলম সহ যে ২২ জন শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এবং যাদের গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তির দাবীতে আজকে ঢাকায় সমাবেশ, শাহবাগে। এবং ক্যাম্পাস থেকে অনেকেই..আমাদের বোধিচিত্তের একজন অলিউর সান, ওঁও ঢাকায় আছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করে আজকে ক্রাউড কম্প্যারাটিভ্লি কম। আমরা মনে করি না যে, জ্ঞান চর্চা এবং রাস্তার আন্দোলন আলাদা কোন বিষয়। এটা বরঞ্চ একটা আরেকটার সাথে কমপ্লিমেন্ট করে।


আজকের আলাপের বিষয় ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল ও পলিটিক্যাল কারেক্টনেস। রাশীদ স্যার বলছিলেন যে কারেক্টনেসের বাংলা আসলে যথার্থতা হয় না। কয়েকটা হচ্ছিলো— একটা হতে পারে যে রাজনৈতিক শুদ্ধতাবাতিকগ্রস্ততা। হতে পারে, কিন্তু পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের যে নোশন সেটা কমিউনিকেট করার জন্যই ইংরেজিটা রেখে দেয়া হয়েছে। আজকে আলোচনা সম্ভবত আগাবে এরিক ফ্রম (Erich Fromm) যেভাবে ফ্রয়েডবাদ, সাইকোঅ্যানাল্যাইসিসের এবং মার্ক্সবাদের যে মিলন ঘটান অথবা যে সিন্থেসাইজ করেন সেটা একটা দিক হবে। আর ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের কালচার ইন্ড্রাস্ট্রির যে অন্যান্য অপরাপর বিষয়-আশয়, সেগুলো[ও] উঠে আসবে।

বোধিচিত্ত


https://www.youtube.com/watch?v=kMNzjor-7so&list=PLXNK5v3ZlfLcGyzuzlSrbvCqC8ASe92-S&index=9




ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল ও পলিটিক্যাল কারেক্টনেস

রাশীদ মাহমুদ



ধন্যবাদ সবাইকে। বোধিচিত্তকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি এরকম একটি ফোরামে বলবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আমি সবার সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, আমার সাথে আরো একজন এসছেন। তাঁর নাম হচ্ছে ফাহমিদ আল জায়িদ। উনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক। এবং বিশেষ করে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল সহ ক্রিটিক্যাল ভাবনার যে জগৎ সে ব্যাপারে তাঁর বিশেষ আগ্রহ আছে, পড়াশুনা আছে এবং সে কারণেই সে আমার সাথে চলে এসছে। এবং আমার মনে হয় যে, আলাপ পর্বে এসে বেশ ভালো কন্ট্রিবিউট করতে পারবে। আমরা তাঁর কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারব।


তো, বোধিচিত্তকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আসলে এর আগে আমার একবার আসার সুযোগ হয়েছিল যেখানে ফুকো এবং রাষ্ট্র ভাবনা, হিস্ট্রি অফ সেক্সুয়ালিটি নিয়ে আমি বলেছিলাম [দেখুন, এখানে ]। এবং তারপর তারা সেই রোজার সময় থেকেই আসলে আমাকে চেজ করছে। আমি নানানভাবে কেটে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম, অস্বীকার করবো না। কিন্তু আসলে ওদের সাথে পেরে ওঠা গেলো না। তো, যাই হোক..

ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল নিয়ে বলতে এসে আমার প্রথম যেটা মনে হয়েছে যে, এর আগে যে ফুকো নিয়ে বলেছিলাম আসলে তখন যদি জানতাম যে পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল নিয়ে বলতে হবে, তাহলে আমার প্রস্তাবটা থাকতো যে তাহলে আগে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল নিয়ে বলি তারপরে ফুকো নিয়ে বলি। এটা খানিকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো হয়ে গেছে আরকি.. যে ফুকো নিয়ে বলার পরে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল নিয়ে বলছি। কারণ, গতকাল বা গত পরশুও ফাহমিদ আল জায়িদ আমাকে ফুকোর একটা সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। যেখানে ফুকো বলছেন যে আমার লেখালেখি গুলোর আগে আমি যদি ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল পড়তাম তাহলে আমি অনেক কিছুই আর লিখতাম না। সে কারণেই আসলে আগে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল হলে ভালো লাগতো আরকি। যাই হোক.. এখনো খারাপ লাগার মতো খুব ব্যাপক কিছু ঘটেনি।

ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল এবং পলিটিক্যাল কারেক্টনেস। আমি একটুখানি বলে নেই যে, কেন টাইটেল হিসেবে পলিটিক্যাল কারেক্টনেসটাকে বেছে নিলাম। তার আগে একটু বলে নেয়া দরকার যে পলিটিক্যাল কারেক্টনেস কিন্তু আসলে ঠিক সে অর্থে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের কেউ কোথাও ব্যবহার করেন নি। র‍্যাদার, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের বক্তব্য, তাঁদের লেখালেখি, তাঁদের দাবীগুলোর [পরি]প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে প্রায় আশির দশক-নব্বইয়ের দশকের দিকে যারা তাঁদেরকে পাঠ করেছিলেন, যারা তাঁদেরকে অবজার্ভ করছিলেন, তারাই মূলত এই পলিটিক্যাল কারেক্টনেস শব্দটা ব্যাবহার করতে বেশি শুরু করেন যে তারা ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের তত্ত্ব এবং চর্চার মধ্যে এই পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের ব্যাপারটা দেখতে পান। নিউইয়র্ক টাইমস এটাকে খুব পপুলার করে তোলে সেই সময়ে। এবং আরেকজন মার্কিন চিন্তক অ্যালান ব্লুম (Allan Bloom), তাঁর একটা লেখা ছিল “দি ক্লোজিং অফ দি আমেরিকান মাইন্ড (The Closing of the American Mind)”, সেখানে উনি ব্যাপকভাবে এই পলিটিক্যাল কারেক্টনেস শব্দটা ব্যাবহার করেন। এবং এই পলিটিক্যাল কারেক্টনেস শব্দটার বাংলা, একেবারে শাব্দিক [অর্থে] বাংলা করলে রাজনৈতিক যথার্থতা বা রাজনৈতিক বিশুদ্ধতাবাদ বা এরকম কিছু হলেও আসলে ঠিক কারেক্টনেস শব্দটা দিয়ে এখানে সে ধরনের কিছু ঠিক সেভাবে বোঝায় না বলেই আমরা এখানে আসলে ইংরেজিটাই রেখে দিয়েছি।


পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বলতে কি বোঝাচ্ছে সেটা আমরা আস্তে আস্তে.. ইট উড বি আনফোল্ডেড, গ্রাজুয়েলি হয়ে যাবে। ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল সম্পর্কে বলতে গেলে, এটা অনেক অনেক বড় একটা ক্যানভাস। অনেক বড় একটা চিত্র। এটা মূলত কখন থেকে শুরু হয় বা এই চিন্তার সূত্রপাত ঘটে? মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। আমরা জানি এবং আমার মনে হয় এখানে উপস্থিত সবাই জানে যে, এটা মূলত মার্ক্সিজম থেকে ভিন্ন পথে একটা যাত্রা শুরু। মার্ক্সিজমকে ধরে কিন্তু একটু ভিন্ন একটা পথে যাত্রা শুরু। এবং আমার মনে হয় যে, উপস্থিত সবাই এটা সম্পর্কে জানে যে মার্ক্সিজমের একটা হোপ [আশাবাদ] ছিল— যেটাকে অনেকে ইউটোপিয়া বলে— যে ওয়ার্কিং ক্লাস [শ্রমিকশ্রেণী] জেগে উঠবে এবং তাদের হেজেমনি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু দেখা যায় যে, এটা আসলে ঘটেনি। তো, এটাকেই মূলত একধরনের আশা ভঙ্গের কারণ হিসেবে দেখা হয়। যারা মার্ক্সকে মার্ক্সের পরবর্তীতে পাঠ করছিলেন বা যারা মার্ক্স পাঠ করে আশা করছিলেন যে এ ধরনের কিছু ঘটবে, তাদের একধরনের আশাভঙ্গ ঘটে। এবং আরো যেটা হয় যে, এই ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ওয়ানটা [প্রথম মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ] কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ হচ্ছে যে, এই ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ওয়ানের সময়েই মার্ক্সের অনুসারীরা বা মার্ক্সের পাঠকরা [তাঁরা] দেখতে লাগলেন যে, ওয়ার্কাররা তারা ওয়ার্কার না হয়ে, নিজেদেরকে ওয়ার্কার না ভেবে, নিজেদেরকে প্রলেতারিয়েত না ভেবে, এবং যেই প্রলেতারিয়েতের আন্তর্জাতিকতাবাদ আশা করা হয়েছিল সেটা না হয়ে ঐযে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যে পার্টিগুলো ছিল তারা অনেক বেশি অস্ট্রিয়ান হয়ে উঠলো। তারা অনেক বেশি হাঙ্গেরিয়ান হয়ে উঠলো। তারা অনেক বেশি জার্মান হয়ে উঠলো। ফ্রেঞ্চ হয়ে উঠলো বা ইংলিশ হয়ে উঠলো।


অর্থাৎ এইযে জাতীয়তাবাদের যেই উত্থান, এবং এই জাতীয়তাবাদের উত্থানটা এই ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল থিঙ্কাররা যে শুধুমাত্র ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ওয়ান শুরু হওয়ার পরেই দেখলেন তা [কিন্তু] না। এরপরে তাঁরা এটার আরো আরো বিস্ফোরণ দেখতে লাগলেন। বিশেষ করে ১৯৩৩ সালে যখন হিটলার ক্ষমতায় আসলেন তখন তো এটার একেবারে তুরীয় একটা অবস্থা তারা দেখলেন এবং মোটামুটি তাঁরা সবাই জার্মানি থেকে চলে যেতে বাধ্য হলেন। যাই হোক, এই ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ওয়ানের মাঝখানেই কিন্তু আবার একটা আশাপ্রদ ঘটনা ঘটে গেলো। সেটা হচ্ছে ১৯১৭। রাশিয়াতে রেভ্যুলেশন হয়ে গেল। এবং সেখান থেকেও একটা আশা জেগে উঠলো যে, তাহলে বোধহয় ইউরোপে এটা ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন ইউরোপে, তারা খুব আশাবাদী হয়ে উঠলেন যে ওয়েস্টার্ন ইউরোপে এটা ছড়িয়ে-টড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দেখা গেলো যে, ওয়েস্টার্ন ইউরোপে এটা মোটেই কোন ডালপালা মেলতে পারলো না। তো এখন এইটার কারণটা কি? কেন এটা হলো? তাহলে কি ওয়ার্কিং ক্লাসের কনশাসনেসের কোথাও কোন প্রবলেম ছিল কিনা? তাদের রিজনিংয়ে কোথাও কোন সমস্যা ছিল কিনা? উত্তরটা কোথায়? তো, যদি সনাতনী বা ধ্রুপদী মার্ক্সবাদকে ধরে এগোতে হয় তাহলে উত্তরটা খুঁজতে হবে শুধুমাত্রই কিন্তু অর্থনীতির মধ্যে। তাইনা, মার্ক্সের থিসিস ধরে যদি এগোতে হয়? যদিও পরবর্তীতে আবার অনেক নিও-মার্ক্সিস্ট এটার আবার উত্তরও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কারণ মার্ক্সের পুনর্পাঠ একেকজন একেকভাবে করেছেন। অনেকেই আবার [যারা] বলেন যে মার্ক্স শুধুমাত্র অর্থনৈতিক রাস্তাতেই এই ব্যাপারটাকে দেখার চেষ্টা করেছেন। অনেকে আবার যেমন অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট মরিস গোদেলিয়ারের নাম আমি এখানে মনে করতে পারি, তাঁরা কিন্তু আবার সুন্দর করে দেখিয়েছেন যে মার্ক্সকে আসলে আমরা ঠিক মতো পড়তে পারি নি। মার্ক্স খুব বেশি করেই যতটা না অর্থনীতির কথা বলেছেন তার চেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন সোশ্যাল ফর্মেশনের উপরে। সুতরাং এই যে সোশ্যাল ফর্মেশন আইডিয়ার ব্যাপারটা মার্ক্সের লেখালেখির মধ্যেও ছিল আমরা ধরতে পারিনি।


যাই হোক, মোটা দাগে আসলে যেই অস্বস্তিটা মার্ক্সবাদকে নিয়ে ছিল যে, এই ওয়ার্কিং ক্লাসের এই কনশাসনেসের সমস্যা কোথায় এবং পুরো সমস্যাটার উত্তর কোথায়? সেটা বোধহয় শুধুমাত্র অর্থনীতি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলে হবে না। এবং তখন তারা বের করলেন যে আসলে ওয়েস্টার্ন কালচার, এইটা আসলে ওয়ার্কিং ক্লাসের উপর জেঁকে বসেছে। ওয়ার্কিং ক্লাস, তারা বুর্জোয়াদের সংস্কৃতিতে অন্ধ হয়ে বসে আছে। এবং তারা বুর্জোয়াদের সংস্কৃতিকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। তারা তাদের [বুর্জোয়াদের] মতো হতে চাইছে। তারা নিজেরা একত্রিত হবার চেয়ে, তাদের দুর্দশার কারণ বের করবার চেয়ে তারা বুর্জোয়াদের মতো হয়ে ওঠাটাকে, বুর্জোয়া জীবনদর্শনকে ধারণ করা-তাদের লাইফস্টাইল ফলো করাটাকেই তারা অনেক বেশি কর্তব্য-কর্ম মনে করে বসে। সো, এই কারণে ফ্রাঙ্কফুর্ট থিঙ্কাররা মনে করলেন যে মার্কিস্ট রেভ্যুলেশন, মার্ক্স যে রেভ্যুলেশনের স্বপ্ন দেখেছেন সেই রেভ্যুলেশন ঘটানোর আগে কালচারাল ফ্রন্টে লড়াইটা করতে হবে। এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলকে যদি আমরা একদম সোজাভাবে বুঝতে যাই তাহলে আমি এখানে উপস্থিত [সরদার] জাহিদের একটা কমেন্ট আমি পড়ছিলাম। গতকাল যখন ফেইসবুকে দেয়া হলো যে এই বিষয়ে আজকে আলাপ হবে তখন একজন আবার সেখানে একটি কমেন্ট করেছে। সেই কমেন্টের উত্তরে জাহিদ লিখেছে যে, দি ওয়্যার মাস্ট বি ফট অন ম্যানি ডিফারেন্ট ফ্রন্টস (The war must be fought on many different fronts)। এই উত্তরের মধ্যেই কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের ভাবনাটা লুকিয়ে আছে যে, যুদ্ধটা অনেক ফ্রন্টে করতে হবে। শুধুমাত্র অর্থনীতিকে ধরে করলেই হবে না। এবং তাঁরা দেখলো যে, পুঁজিবাদ শুধুমাত্র একটা উৎপাদনের উপায় না। পুঁজিবাদ ইটসেল্‌ফ একটা সাংস্কৃতিক, দার্শনিক পদ্ধতিও বটে। বা একটা জীবন পদ্ধতিও বটে। তো, সেই কারণেই সাংস্কৃতিক জায়গাতে যদি যুদ্ধটা না করা যায়, মানে সমানতালে যদি যুদ্ধটা না করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধটা করলে চলবে না। আচ্ছা তো, আমি একটু সংক্ষেপে এখানে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের কিছু ইতিহাস— আমার মনে হয় যদিও সবার জানা আছে, তারপরেও রিপিটেশন হলেও— একটু বলে রাখি।


ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলে কারা কারা বিলং করেন বা কারা কিভাবে এটা শুরু করেছিলেন। মূলত ফেলিক্স ভেইল (Felix Weil) নামে একজন মিলিয়নিয়ারের ছেলে, তাঁর বাবা গ্রেইনের ব্যবসা করতো। শস্যের ব্যবসা করত, শস্যদানার ব্যবসা করত। এবং অনেক পয়সাপাতি কামিয়ে ফেলেছিল। ফেলিক্স ভেইল, উনি জার্মানিতে ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল রিসার্চ প্রতিষ্ঠিত করেন। এবং তাঁর কিন্তু প্রথমদিকে টার্গেট ছিল যে একেবারে মার্ক্সের নামেই এই ইনস্টিটিউটটা প্রতিষ্ঠা করা। ইনস্টিটিউট অফ মার্ক্সিজম টাইপের একটা নাম দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে নানা রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ মিলিয়ে অফিসিয়ালি এটা যাত্রা শুরু করে হলো গিয়ে ১৯২৪ এর ২২শে জুনে। কিন্তু তারও আগে, আসলে ১৯২৩-তেই একটা সেমিনার হয়। এই সেমিনারে মূলত এই মার্ক্সিস্ট চিন্তাভাবনার যে, মানে ধ্রুপদী মার্ক্সিস্ট চিন্তাভাবনার বাইরে বের হয়ে থিওরি নিয়ে তাঁরা একভাবে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিলেন। এবং এখানকারই ওয়ান অফ দি পার্টিসিপেন্টস ছিলেন হচ্ছে গেওর্গি লুকাস (Gyorgy Lukacs)। আপনারা সবাই তাঁর নাম জানেন। এবং আরেকটু পেছনে যদি আমরা যাই গেওর্গি লুকাস— উনি হাঙ্গেরিয়ান ছিলেন। এবং উনাকে ১৯১৯ সালে, আপনারা জানেন যে হাঙ্গেরির একটা অংশ রাশিয়া অধিকৃত করেছিল, যেটাকে বলা হয় রাম স্টেট, একটা ছোট্ট জায়গা, এ স্টিফ অব ল্যান্ড, এটা মূলত বেলা কুন (Béla Kun) নামে একজনের নেতৃত্বে ঘটেছিল, সেই বেলা কুন সরকারের কালচারাল কমিশার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন গেওর্গি লুকাস। ঊনিশশো ঊনিশে। এবং গেওর্গি লুকাসের কিন্তু অনেক আগে থেকেই এই স্বপ্নটা ছিল, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল যেই স্বপ্নটা ধারণ করেছে ১৯২৩’তে। তাঁরা অফিসিয়ালি শুরু করেছে এই সেমিনারের মধ্যে দিয়ে। তারও আগের থেকেই গেওর্গি লুকাসের এই স্বপ্নগুলো ছিল। এবং তিনি এই কালচারাল কমিশার নিযুক্ত হওয়ার পরে (বলশেভিক গভর্নমেন্টের হয়ে উনি কালচারাল কমিশার নিযুক্ত হয়েছিলেন) উনি একটা প্রোগ্রাম স্টার্ট করে দিলেন, সেই সোভিয়েত অধিকৃত হাঙ্গেরিতে। যেটাকে নিন্দুকেরা বলতে লাগলেন কালচারাল টেরোরিজম। এবং সেটা আসলেই এক অর্থে ব্যাপারটা তা’ই ছিল। উনি একেবারে স্কুলে র‍্যাডিক্যাল সেক্স এডুকেশন চালু করে দিলেন। এবং পাদ্রীরা সব ক্ষেপে গেল তাঁর বিরুদ্ধে। এবং তাঁরা রীতিমতো বলতে লাগলো যে, কেন উনি স্কুলে চালু করলেন কারণ বড়দের মাথা তো অলরেডি পেঁকে গেছে সুতরাং বাচ্চাদের মাথা খেতে হবে! সেই কারণেই। তো একদিকে লুকাস এটা করছিলেন। আবার অন্যদিকে ঐ যে যাদেরকে বলছিলাম যে জার্মানিতেও একই সময়ে বাকিরা— হর্কহেইমার (Max Horkheimer), এরিক ফ্রম, তারপরে এডোর্নো (Theodor Adorno)— (এরা) সবাই চিন্তা করছিলেন যে, কিভাবে মার্ক্সিস্ট রেভ্যুলেশনটাকে কালচারাল ফ্রন্টে নিয়ে যাওয়া যায়।


তো, সেই সময় তাঁরা সবাই একত্রিত হয়ে গেলেন, এই সেমিনারে। এই ইনস্টিটিউটের ফার্স্ট ডিরেক্টর ছিলেন হচ্ছিলো গিয়ে একজন অস্ট্রিয়ান মার্ক্সিস্ট ইকোনোমিস্ট তার নাম হচ্ছে কার্ল গ্রুনবার্গ (Carl Grünberg)। গ্রুনবার্গের কিন্তু শুরুতে পুরোপুরি টার্গেটটা ছিল ইকোনোমি-কেন্দ্রিক। একেবারে মার্ক্সকে ফলো করেই অর্থাৎ ইকোনমিক কোয়েশ্চেন, লেবার মুভমেন্ট— এগুলোই ছিল তাঁর প্রধান জায়গা। কিন্তু ১৯৩০ এ যখন হর্কহেইমার এই ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর হলেন, তখন মূলত একটা নতুন যাত্রা শুরু হয়। ধ্রুপদী মার্ক্সিজমের থেকে বের হয়ে নতুন একটা যাত্রা শুরু হয়, যেটা সোভিয়েত ভার্সনের রেপ্লিকা ছিল না। কারণ তাঁদের একটা মাথা ব্যাথার কারণ ছিল লিবারেশন, ফ্রিডম— এইটা নিয়ে চিন্তা করা। এবং আমরা সাধারণত তাঁদের হতাশার দুটো জায়গার কথা জানি। সাধারণত আমরা শুনতে পাই, সেটা হচ্ছে যে কেন মার্ক্সিজম কাজ করলো না? ওয়েস্টার্ন ইউরোপে কেন মার্ক্সিজম কাজ করলো না? কেন শ্রমিকশ্রেণি জাতীয়-উর্দি গায়ে চাপাতে বেশি পছন্দ করে বা করলো? বা জাতীয়-জুতা পায়ে পরতে তারা কেন বেশি পছন্দ করলো? এর বাইরেও আরেকটা তাঁদের চিন্তা বা হতাশার জায়গা ছিল যে, কেন মানুষ তার ফ্রিডমকে সাবমিট করে দিতে পছন্দ করে? কেন মানুষ একটা অথরিটি ফিগার খুঁজে বেড়ায়? কেন? মানুষের চিন্তায় কি ঘটে যায় বা কি হয় যেকারণে সে একটা অথরিটি ফিগার খোঁজে? যার কাছে সে সাবমিট করে দিয়ে বসে থাকে। তো, তার মানে, কেন মানুষের মাথায় ফ্রিডমের একটা লিমিট কাজ করে? এটাও কিন্তু তাঁদের হতাশা এবং চিন্তার একটা জায়গা ছিল। এবং সেইখান থেকে এই মার্ক্সিজমের সোভিয়েত ভার্সনটা তাঁদের কাছে খুবই অস্বস্তির ছিল। কারণ আমরা সবাই জানি যে, সোভিয়েত ভার্সনটা হলো গিয়ে কমিউনিস্ট একটা ভার্সন। এবং যেটা তাঁদের মতামতকে তুলে ধরবার জন্য যে কোন রিপ্রেসিভ মেকানিজমকে (repressive mechanism), তুলে ধরবার জন্য জায়েজ করতে তৈরি আছে। অর্থাৎ খুবই টোটালিটারিয়ান, খুবই অথরেটেটিভ। সুতরাং এটা নিয়ে তাঁদের অস্বস্তি বা এটা নিয়ে তাঁদের বিরক্তি ছিল। তো, তাঁরা এই সোভিয়েত ভার্সন থেকে বের হয়ে নতুন একটা ভার্সন তৈরি করতে যাচ্ছিলো যেটাকে আসলে আমরা সোশ্যালিজম হিসেবেই আসলে বেশি জেনে থাকি। তখন তাঁরা চিন্তা করতে লাগলো, তাহলে রেভ্যুলেশন বোধহয় ওয়ার্কিং ক্লাস থেকে হবে না। তাহলে হবে কোত্থেকে? তাহলে এর একটা সাবস্টিটিউট দরকার। ওয়ার্কিং ক্লাসের একটা সাবস্টিটিউট দরকার। সো, দে ওয়ার কাইন্ড অফ লুকিং ফর এ সার‍্যোগেট (So they were kind of looking for a surrogate)। মানে, আমরা সার‍্যোগেট মাদার চিন্তা করি না [সেরকম]! যে বাচ্চা আসলে আমার কিন্তু ভ্রুণটা দেয়া হয়েছে অন্য জায়গাতে। তো, তাঁরাও এরকম একটা খুঁজছিল যে ওয়ার্কিং ক্লাসের একটা সার‍্যোগেট হিসেবে কাজ করবে। এই ১৯৩০’র আগ পর্যন্ত যতদিন পর্যন্ত গ্রুনবার্গ ডিরেক্টর ছিলেন ততদিন পর্যন্ত ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের চিন্তার বিষয় ছিল বা মূল কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল, হচ্ছিলো গিয়ে বুর্জোয়া সমাজের স্যোসিও-ইকোনোমিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (socio-economic infrastucture)। কারণ যেহেতু তখনও তাঁদের ইকোনমিক কোয়েশ্চেনটাই মূল ছিল, সেই কারণে। ১৯৩০ এর পরে তাঁদের ইন্টারেস্টটা হয়ে দাঁড়ালো, বুর্জোয়া সমাজের সুপারস্ট্রাকচার।


ইনফ্রাস্ট্রাকচারের গুরুত্ব কি তাঁদের কাছে কমে গেল কিনা সেটা কিন্তু আমি বলবো না। র‍্যাদার আমি বলবো যে, দি ওয়্যার মাস্ট বি ফ্‌ট অন মেনি ডিফারেন্ট ফ্রন্টস। [বলবো] যে এটাও সমান গুরুত্ব পেলো। [বলবো] যে সুপারস্ট্রাকচারেও আমাদেরকে নজর দিতে হবে। এবং এইখানটাতে এসেই তাঁরা এই মার্ক্সের সাথে ফ্রয়েডকে যুক্ত করার চিন্তা করলেন। যখনই এই কালচারে তাঁরা হাত দিবেন বলে চিন্তা করছেন যে যুদ্ধটা কারচালার ফ্রন্টেও করতে হবে তখনই তারা ফ্রয়েডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন।



কারণ তাঁরা (ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কলাররা) চিন্তা করলেন যে, বুর্জোয়া সমাজে সবাই সাইকোলজিক্যালি রিপ্রেসসেড। অর্থাৎ মার্কস যে এলিয়েনেশন কথাটা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেছেন বলে আমরা মনে করি (আমি আবারও বলছি আমরা মনে করি, কারণ মার্কসকে পুনর্পাঠে আমাদের ভুল থাকতে পারে। সেটা ধরে নিয়েই বলছি) তাঁরা সেখান থেকে বের হয়ে চিন্তা করলেন যে, এলিয়েনেশনটা সাইকোলজিক্যালি, সেক্সচুয়ালি বা রঙয়ের ভিত্তিতে হতে পারে, এলিয়েনেশনটা সোশ্যালাইজেশনের ভিত্তিতেও হতে পারে। অর্থাৎ নানান ফ্রন্টে এলিয়েনেশনটা হতে পারে। তাহলে এই এলিয়েনেশনটা কোথায় ঘটছে? এইটার গোড়াটা কোথায়? এবং এই এলিয়েনেশনের কারণেই কি মানুষ অথরিটির কাছে নিজেকে সাবমিট করে দিতে পছন্দ করে কিনা? এটা একটা প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো। তাঁরা কিন্তু বলছেন না যে, ইকোনমিক্যালি এলিয়েনেশনটা ঘটে না। বরং তারা বলছেন এই সবগুলো এলিয়েনেশন, ইকোনমিক এলিয়েনেশনকে আসলে এগ্রাভেট (aggravate, বৃদ্ধি) করে। তখনই তাঁরা বললেন যে, তাহলে আমাদের প্রয়োজন একটা কালচারাল রেভ্যুলেশন! তখন হর্কহেইমার— অ্যাজ এ ডিরেক্টর— তিনি অনেক নিউ ব্লাডকে এখানে ইনভাইট করলেন। থিয়োডার এডোর্নো— হি ওয়াজ বেসিক্যালি একজন মিউজিক ক্রিটিক ছিলেন— তিনি চলে আসলেন। এরিক ফ্রম— সাইকোঅ্যানালিস্ট— [তিনি সহ] অনেকেই চলে আসলেন। এবং ১৯৩২ সালে, তাঁদের সাথে যোগ দিলেন হার্বাট মার্কুইজ (Herbert Marcuse) যার কথা আপনারা এর আগে [শুনেছেন], মাহবুব স্যার বোধহয় তাঁকে নিয়ে ডিটেইল আলোচনা করেছেন। [দেখুন, এখানে] তাঁদের যে থিওরিটিক্যাল স্কুল অফ থট, সেটাকে আমরা সাধারণত জেনে থাকি ‘ক্রিটিক্যাল থিওরি’। তো, এই ক্রিটিক্যাল থিওরির টার্গেটটা কি? ক্রিটিক্যাল থিওরি’র ডেফিনেশন দাড় করানো কিন্তু খুব কঠিন। এবং এটা নিয়েই তাঁদেরকে অনেকে সমালোচনা করেন। যে, দ্যাখেন ভাই, এদের ডেফিনেশন-ই নাই। তার মানে এদের কোন লক্ষ্য নাই! কিন্তু আসলে তাঁরা তো এ ধরনের ডেফিনশাল পলিটিক্সেরই বিরোধী। তো, তাঁদের লক্ষ্যটা কি? লক্ষ্যটা হচ্ছে হলো গিয়ে একবারেই সোজা, যে, পশ্চিমা সমাজের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবিরত ক্রিটিক্যাল থাকা।


এখানে আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে যে, ক্রিটিক্যাল থিওরির আগেও তো থিওরি ছিলো। এমনকি মার্কসিস্ট থিওরি— যেখান থেকে তাঁরা (ক্রিটিক্যাল থিওরিস্টরা) প্রণোদনা পেয়েছেন ক্রিটিক্যাল থিওরি তৈরি করবার, এত বড় থিওরিও তো তার আগে ছিল, তাইনা? অনেক বড় বড় থিওরি ছিল। সেগুলোর সাথে ক্রিটিক্যাল থিওরির পার্থক্যটা কোথায়? পার্থক্যটা হচ্ছে এর আগের যে থিওরিগুলো ছিলো সেগুলো মূলত সমাজকে ব্যাখা করতে চাইতো। অর্থাৎ এক্সিস্টিং অর্ডারের মধ্যে থেকেই তাঁরা (আগের থিওরিস্টরা) পরিবর্তনের কথা চিন্তা করত, অর্ডারটাকে চ্যালেঞ্জ করবার কথা চিন্তা করতো না, সেটাকে ব্যাখ্যা করতো। অর্থাৎ ওগুলো ছিলো অনেকটা এক্সপ্লেনেটরি। কিন্তু ক্রিটিক্যাল থিওরি— তাঁরা প্রয়োজনে এই অর্ডারকে ছুঁড়ে ফেলতেও দ্বিধা করবার কথা চিন্তা করতো না, প্রয়োজনে আমরা এটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিব। তাঁদের কাছে লিবারেশন যেহেতু অনেক ইম্পর্টেন্ট এবং তাঁদের থিওরিটাকে আমরা বলতে পারি ইমান্সিপেটরি (emancipatory)— যার মধ্যে দিয়ে মানুষের ইমান্সিপেশন ঘটবে। তাঁরা একারণে লজিক— যার উপরে এতকাল পর্যন্ত থিওরি দাড়িয়ে ছিলো— সেই লজিককেও কিন্তু তাঁরা পলিটিসাইজ করতেন। লজিক—এটা কোনো আকাশ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন বিষয় না। লজিক ইট্‌সেলফ আমার-আপনার সামাজিক সম্পর্কের মধ্য থেকেই উৎপাদিত হয়। সুতরাং লজিকেরও একটা পলিটিক্যাল কন্টেক্সট (context) আছে। লজিকেরও একটা ইকোনমিক কন্টেক্সট আছে, লজিকেরও হিস্ট্রি আছে। সুতরাং লজিককেও তাঁরা পলিটিসাইজ করতে, হিস্টরিসাইজ করতে, ইকোনোমাইজ করতে বা তার ইকোনমিক কন্টেক্সট বের করতেও তাঁরা ছাড়লেন না।

এবং মানে, লজিক ইটসেল্‌ফ ইজ নট ইন্ডিপেনডেন্ট অফ কনটেন্ট— এইভাবে তাঁরা চিন্তা করতে লাগলেন। এবং এইখান থেকে দাঁড়িয়ে, যেহেতু এর আগ পর্যন্ত যে প্রপোজিশনগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেটাকে তাঁরা এইভাবে ক্রিটিক্যালি দেখছেন, তখন তাঁরা দেখতে লাগলেন যে এই পুরো প্রকল্প (যেটা) এনলাইটেনমেন্টের উপর দাঁড়িয়ে আছে তার আসলে একটা ইন্টারনাল ডায়ালেক্টিক আছে। তাঁরা কি করেছেন, তাঁরা বলছেন যে এই ডায়ালেক্টিকটার কথা এনলাইটেনমেন্ট আসলে স্বীকার করে এগোয়নি! যদি স্বীকার করে এগোত তাহলে কিন্তু এনলাইটেনমেন্ট ফিলোসফি নিয়ে তাঁদের [ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের] যে অস্বস্তি সেই অস্বস্তিটা, আমার কাছে মনে হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের থাকত না। ডায়ালেক্টিকটাকে যদি তারা স্বীকার করে নিত। এবং এই স্বীকারোক্তি বিষয়টা তাঁদের [ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের] কাছে খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে আমাদের নৃবিজ্ঞানেও এই স্বীকারোক্তি বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যখন আমরা পোস্টমডার্ন অ্যান্থ্রোপলজি, আমাদের ফিল্ডওয়ার্ক— এগুলো নিয়ে, পরবর্তীতে আমরা যখন অ্যান্থ্রোপলজিতে ব্যুর্দো’কে (Pierre Bourdieu) নিয়ে আসলাম, আমরা যখন প্যাক্টিস (practice) থিওরিকে নিয়ে আসলাম অ্যান্থ্রোপলজিতে তখন কিন্তু আমরা এখন মিলিয়ে দেখলে বুঝতে পারি স্বীকারোক্তি বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নৃবিজ্ঞানে মাঠকর্ম করি, তাইনা। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আমরা ঐ সেই মানে পুরানো এম্পিরিসিস্ট ফ্রেমওয়ার্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা বলতাম যে আমাদের ফিল্ডওয়ার্ক হচ্ছে খুবই মূল্যবোধ নিরপেক্ষ, আমরা একেবারে খালি মাথা নিয়ে ফিল্ডে যাই যেখানে আমাদের হিস্ট্রি-আমাদের পলিটিক্স-আমাদের ইকোনমিক কন্ডিশন কোনভাবেই আমাদেরকে প্রভাবিত করে না, আমি গবেষক হিসেবে একেবারে মূল্যবোধ নিরপেক্ষভাবে মাঠে যাই।


কিন্তু এই স্বীকারোক্তির বিষয়টা যখন থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো, ঐযে রি-ফ্‌-লে-ক-সি-ভি-টি, এটা যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো, তখন থেকে আমরাও স্বীকার করতে শুরু করলাম। এই স্বীকারোক্তি নিয়েও অবশ্য সমালোচনা কম নাই। আমরা যদি কেউ খানিকটা একটু [স্লাভো] জিজেককে ফলো করি তাহলে দেখব যে, জিজেক এই স্বীকারোক্তির ব্যাপারে খুবই সমালোচনামূলক বা সমালোচনাপ্রবণ। এবং সে বলছে যে, এই, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের এরা একধরনের কমর্ফোটেবল ক্যাটাস্ট্রোফির মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। ক্যাটাস্ট্রোফি যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের কাছে কমর্ফোটেবল থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো; এবং আসলে একটা কমফোর্ট জোনে থেকে তাঁরা এই স্বীকারোক্তি করে ছেড়ে দেয়ার মধ্যেই একধরনের দ্বায়মুক্তির ব্যাপারটা তাঁদের মধ্যে কাজ করে।


যাই হোক, এই যে ডায়ালেক্টিক অফ এনলাইটেনমেন্ট— এইটা তাঁদের চিন্তার জায়গা হয়ে উঠলো। এবং তাঁরা দেখাতে লাগলেন যে, এই এনলাইটেনমেন্ট ফিলোসফি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আমরা কিভাবে সবকিছুকে ভোগের নামে শেষ করে দিচ্ছি। ভোগের সংস্কৃতির নামে আমরা শেষ করে দিচ্ছি। এখান থেকেই কিন্তু পরবর্তীতে এনভারনমেন্টালিজমও (Environmentalism) কিন্তু জন্ম নিলো। মার্কস বলেছিলেন ইকোনমিক ডমিনেশনের কথা, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল পরবর্তীতে এটাকে কালচারাল ডমিনেশনে নিয়ে চলে আসলো। একটা পর্যায়ে কিন্তু এনভারনমেন্টালিস্টরা দেখাতে লাগলো ডমিনেশন আসলে কত সেক্টরে হতে পারে। এনভারনমেন্টালিস্টরা আবার এখান থেকে উদ্দীপন আনিয়ে তাঁরা দেখাতে লাগলো যে প্রকৃতির ক্ষেত্রে আমরা কি করছি, রীতিমতো আমরা আমাদের স্পেসিস ডমিনেশন ঘটাচ্ছি। মানুষের ডমিনেশন এখানে চূড়ান্ত হয়ে উঠছে। মানুষই শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত, অন্য কোন স্পেসিস এখানে খুব একটা ম্যাটার করছে না।


পরিশেষে, হার্বাট মার্কুইজ ঐযে ঐ কোয়েশ্চেনটা— সার‍্যোগেট কে হবে? কে ওয়ার্কিং ক্লাসের সার‍্যোগেট হবে সেই কোয়েশ্চেনের অ্যান্সারটা উনি বের করতে লাগলেন বা বের করে ফেললেন। বা তাঁর মত করে উনি বের করলেন, জবাব দিলেন। সেটা হচ্ছে কি, মাইনোরিটিজ, মার্জিনালাইজড পিপল। এটা কিন্তু ধ্রুপদী মাক্সিজম থেকে আসলেই একটা বড় ডিপার্চার (departure)। কারণ ধ্রুপদী মার্ক্সিজমে আমরা বুঝতে শিখেছি যে, মার্জিনালাইজড হতে গেলে ক্লাস একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। তাইনা? যেখানে একটা ক্লাস আরেকটা ক্লাসকে মার্জিনালাইজড করবে, মানে ইন টার্মস অফ অনারশিপ অফ দ্যা মিন্‌স অফ প্রোডাকশন, অথবা তার মালিকানা না থাকা এটার ভিত্তিতে উৎপাদনের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকা বা না-থাকার উপরে। কিন্তু যখনই এই মাইনোরিটিজ বা মার্জিনালাইজড ব্যাপারটা[র] প্রশ্ন চলে আসলো এবং ডমিনেশনের প্রশ্নটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো। আমরা এখানে একটু বলে নিই যে আমরা স্পষ্টতই এখানে বুঝতে পারছি যে এখানে [আন্তনিও] গ্রামসির প্রভাব খুবই দৃশ্যমান। ডমিনেশন নানান রাস্তাতে হতে পারে। একই অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে থেকেও নারী পুরুষের দ্বারা ডমিনেটেড হয়েছে বা হচ্ছে। একই অর্থনৈতিক অবস্থাতে থাকবার পরেও ত্বকের রঙের কারণে, চামড়ার রঙয়ের কারণে কেউ ডমিনেটেড হতে পারে। তাইনা? একই অর্থনৈতিক অবস্থার পরেও বয়সের কারণে, অসুস্থতার কারণে— নানান সামজিক কন্ডিশনের কারণে, জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনের কারণে কেউ ডমিনেটেড হতে পারে, কেউ ডমিনেট করতে পারে। মার্কুইজের একটা কাজ আছে Eros and Civilization (১৯৫৫), সেইখানে উনি ইরোসকে র‍্যাডিকালাইজ করবেন। যে আমরা সাধারণত ইরোস বলতেই বুঝি যে সেক্সুয়াল ডিজায়ার বা ড্রাইভ, কামাকাঙ্খা। কিন্তু উনি বললেন যে, উনি একটা টার্ম ব্যবহার করলেন পলিমরফাস পারভার্সিটি (Polymorphous Perversity), যে ইরোস আসলে কত রকম হতে পারে। সেখানে উনি প্রস্তাব করলেন যে, নন-প্রোক্রিয়েটিভ ইরোসের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। এতকাল পর্যন্ত ইরোসের সেক্সুয়াল ড্রাইভের টার্গেটই আমরা ভেবে বসেছি কি? স্পেসিস পয়দা করা। তাইনা? কিন্তু স্পেসিস পয়দা করা ছাড়াও, ইভেন মার্কুইজ এমনভাবেও চিন্তা করলেন যে সেক্সের টার্গেট সবসময়ই— আমরা বাংলায় যেটাকে কাম বলতে বুঝি সেটাইবা হতে হবে কেন? সেক্সের টার্গেট হতে পারে একজনের ইনার (inner) বিউটির প্রেমে পড়া এবং সেটাকে উপভোগ করাই হচ্ছে সেক্স। তো, এইভাবে তাঁরা চিন্তা করতে লাগলেন। তখন মার্কুইজ বললেন, কেন আমরা এইভাবে চিন্তা করতে পারিনা? তার কারণ হচ্ছে, এতকাল পর্যন্ত ক্ল্যাসিকাল ফিলোসফি তো আমাদেরকে— বিশেষ করে রিফর্মেশন অনওয়ার্ড, এনলাইটেনমেন্ট অনওয়ার্ড— আমাদেরকে তো লিবারেলিজমের অনেক রাস্তাই দেখিয়েছে। আমাদেরকে তো টলারেন্সের অনেক রাস্তাই দেখিয়েছে। তাইনা? তারপরও কেন হচ্ছে না? কেন আমরা ইরোসের একটা লিমিটেড ভার্সন নিয়ে বসে আছি। ক্লাসিক্যাল ফিলোসফি এত রাস্তা দেখানোর পরেও কেন আমরা এখন পর্যন্ত আটকে আছি। উনি একটা শব্দ ব্যবহার করলেন। শুধু শব্দই ব্যবহার করলেন না উনি এইটা নিয়ে একটা এসে (essay) লিখেই ফেললেন। সেটা হচ্ছে গিয়ে, ‘’রিপ্রেসিভ টলারেন্স (Repressive Tolerance)।‘’ যেই টলারেন্সটা আমরা শিখেছি এই টলারেন্সের মধ্যেও আসলে রিপ্রেসন আছে। তো, এই টলারেন্সের মধ্যেও রিপ্রেসন আছে। আমরা পুরো প্রকল্পটার মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি যে ফ্রয়েড কিন্তু আছে, সদা উপস্থিত। তো, রিপ্রেসনটা কোথায়? কোত্থেকে শুরু হয়? যেই রিপ্রেশনের কারণে আমরা ফ্রিডমের একটা লিমিট ভেবে বসি, যেই রিপ্রেশনের কারণে আমরা শেষপর্যন্ত অথরিটি ফিগারের কাছে সাবমিট করে দিতে নিজেকে পছন্দ করি। এটা কোথায় ঘটে?

এইটার আরো চমৎকার জবাব আমরা পাই হচ্ছে গিয়ে, এরিক ফ্রমের একটা বই আছে The Fear of Freedom (১৯৪১) বা নর্থ আমেরিকাতে এটাকে জানা হয় এটাকে Escape from Freedom। নর্থ আমেরিকার বাইরে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এটাকে জানা হয় আসলে The Fear of Freedom নামে। তাঁর এই বইটাতেও কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়, যে কেন আমরা অথরিটির আন্ডারে থাকতে পছন্দ করি। এরিক ফ্রম, উনি তখন চলে গেলেন ফ্যামিলিতে— প্যারেন্টিং (Parenting)। ঘাপলাটা আসলে আছে ওখানে। ছোটবেলা থেকে কিহয়— প্যারেন্টিংয়ের কারণে, অভিবাবকদের কারণে— তিনি বলছেন যে, আমরা আমাদের রিয়াল সেল্‌ফ (real self) হয়ে উঠতে পারিনা, যা আসলে আমরা হয়ে উঠতে চাই। অনেক কিছুই আমাদের ইচ্ছা করে, কিন্তু সেই ইচ্ছাগুলো প্যারেন্টিংয়ের কারণে আমাদের [সফল] হয়ে ওঠে না। ফলে আমি কে, আমি আসলে কি হতে চাই— এটাকে আমরা সবসময় অ্যাভয়েড করে চলতে চাই। কারণ, নতুবা প্যারেন্টিংয়ের সাথে আমরা মিলিয়ে চলতে পারবো না। এখানে একটা ডিলেমা আমার মধ্যে কাজ করে। একদিকে নিজের মত হয়ে ওঠার একটা ইচ্ছা, আরেকদিকে হচ্ছে যে নিজের মত যদি আমি হয়ে উঠি তাহলে আমি অন্যদের থেকে ডিসকানেক্টেড হয়ে পড়বো। এবং এইখানেই যদি আমরা— পরবর্তীতে— মানে ঐযে বললাম এরপরে যদি ফুকো আলোচনা করতাম। Madness and Civilization (১৯৬১), এগুলোকে আমরা টেনে নিয়ে আসলেই কিন্তু বুঝতে পারি নিজের মত হয়ে উঠতে গেলেই কিভাবে সবাই পাগল হিসেবে মানুষ বিবেচিত হয়। ইনসেইন (insane) হিসেবে বিবেচিত হয়। তো আমরা কি করি? আমরা সবসময় স্যানিটির পূজা করতে থাকি যাতে আমরা ডিসকানেক্টটেড হয়ে না পড়ি। এই ডিসকানেকশনকে আমরা ভয় পেতে থাকি। এবং ডিসকানেকশনকে ভয় পেয়ে আমরা কি করি, ফ্রিডম থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াতে থাকি। সো, আমরা এরপরে কি করি? নানান রকম ফ্যান্টাসির মধ্যে মুক্তি খোঁজার চেষ্টা করি। ঐযে নিজে যা হয়ে উঠতে পারিনি— আমার হয়তোবা ইচ্ছে করেছিল কারো উপর রাগ হয়ে খুব করে কয়টা মাইর দেই কিন্তু আমি পেরে উঠিনি বা হয়ে ওঠেনি, নিয়ম নেই। তখন আমি কি করি, রেসলিং শো-এর আয়োজন করি। সেখানে একজন আরেকজনকে মারছে, আমার খুব ভালো লাগছে— যেটা রোলাঁ বার্থ (Roland Barthes) কিন্তু খুব চমৎকার আলোচনা করেছেন তাঁর Myth Today (১৯৫৭) বইটাতে (অনেকগুলো বিষয় নিয়ে তো তিনি আলোচনা করেছেন, রেসলিং কিন্তু ওখানে একটা ইম্পর্টেন্ট বিষয় ছিল)।


আচ্ছা, আমরা শুধুমাত্র আসলে মানে ফ্লি ফ্রম ফ্রিডম (Flew from Freedom) না, আসলে আমরা ফ্রিডম থেকে পালিয়ে উই ফ্লি ইন্টু কনফর্মিটি। আমরা পালিয়ে কোথায় যাই? আমরা পালিয়ে কনফর্মিটিতে চলে যাই। আমরা কনফর্ম করি, মিলিয়ে নিই, মানিয়ে নেই। তো, একটা বাচ্চা সে যখন প্যারেন্টের অথরিটারিয়ানিজমের মধ্যে বড় হয়, তখন তার মধ্যে দুটো জিনিস একইসাথে কাজ করে। একটা হচ্ছে যে ঐযে সে নিজের মত হয়ে উঠতে পারছে না, ডিসকানেকশনের ভয়, তার মধ্যে একটা স্যাডিজম (sadism) কাজ করে। আবার যখন সে নিজে বড় হয় তখন সে অন্যকে অর্থাৎ তার অধীনস্ত কাউকে সে নিজের আবার সাবজেক্ট বানাতে চায়। তখন আবার তার মধ্যে একটা ম্যাসোকিস্টিক (masochistic) ব্যাপার কাজ করে। এইটাও কিন্তু দেখা যায় আরেকটা ডায়ালেক্টিক। এবং অনেকে এই দুটোকে একসাথে মিলিয়ে বলেন স্যাডোম্যাসোকিজম (sadomasochism)। ফলে এই যে পেয়ার [pair, যুগলবন্দী], স্যাডিজম এবং ম্যাসোকিজমের এইযে পেয়ার, এই পেয়ারটাকেই সে সারাজীবন কনফর্ম করে চলে। সে একটাকে রিপ্রেস করে তো আরেকটাকে ধরে, একটাকে রিপ্রেস করে তো আরেকটাকে ধরে— এটাকে সে কনফর্ম করে জীবনটাকে চালিয়ে নেয়। এর মধ্যে কিন্তু আমরা একটা পলিটিক্স অফ ডমিন্যান্স অ্যান্ড সাবমিশন দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ ডমিনেন্সটাও সে পরিবার থেকে শিখছে, আবার কনফর্ম করে সাবমিট কোথায় করতে হবে, সেটাও কিন্তু সে পরিবার থেকে শিখে নিচ্ছে।

একজন সাইকো-হিস্টোরিয়ান আছেন যিনি আবার এদেরকে খুব ফলো করেন। উনি এখনো কোনোরকম বেঁচেবর্তে আছেন। তাঁর নাম হচ্ছে লয় ডিমোস (Lloyd DeMause)। আশ্চর্য না, এটাই স্বাভাবিক যে উনি আসলে কলাম্বিয়া থেকে পাশ করা এবং সেকারণেই প্রভাবটা খুব স্পষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের সবাই— আমরা জানি যে— ১৯৩৩ সনে যখন হিটলার আসলো, তাঁরা সবাই যখন চলে গেলো নাজি পার্সিকিউশনের ভয়ে বা সেটার প্রতি ঘৃণাবশত, তাঁরা আমেরিকাতে যেয়ে কিন্তু শেষপর্যন্ত আশ্রয় পেলেন হচ্ছে গিয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। তো, লয় ডিমোস উনিও একজন কলাম্বিয়ার গ্র্যাজুয়েট। তো, তিনি সম্ভবত একারণেই বলেন যে, Child abuse is the origin of war (দেখুন, Lloyd DeMause, The Origins of War in Child Abuse, The Institute for Psychohistory, 2010)। চাইল্ড এবিউজকে এই জায়গায় শেষপর্যন্ত লয় ডিমোস নিয়ে গেলেন যে, যুদ্ধের কারণও সম্ভবত এখানেই আমাদেরকে খুঁজতে হবে। কোত্থেকে আসলে আমরা যুদ্ধ শিখি। তো, [এরিক] ফ্রম যেটা বলছেন সেটাকেই ডিমোস পড়ে কি বলছেন, এইযে ফ্রম [থেকে] যেটাকে আমরা আলোচনা করলাম সেটাকেই ডিমোস পরে বলছেন, এটা হচ্ছে গ্রোথ প্যানিক। একটা আমরা বুঝতে পারি যে, আমার একটা অসম্ভব পরিমাণ ফ্রিডম আছে যেটা চাইলে আমি চর্চা করতে পারি, কিন্তু একই সাথে আমি জানি যে ওটা চর্চা করলে আমার কি অবস্থা হবে। ওটার চর্চা করলে আমার কি হবে? ওটার চর্চা করলে আমার বিচ্ছিন্নতা ঘটবে। তাহলে একই সাথে সাথে আমার মধ্যে একটা ফিয়ার অফ ফ্রিডমও (Fear of Freedom) আছে। তাহলে আনইউজুয়াল অ্যামাউন্ট অফ ফ্রিডম একদিকে এবং আরেকদিকে হচ্ছে ফিয়ার অফ দ্যাট ফ্রিডম। আরেকটা পসিবিলিটি হচ্ছে যে, এইযে মানে এতক্ষণ যে ডিলেমার কথা বললাম সেই ডিলেমার কারণে আমাদের মধ্যে একধরনের ডেসট্রাক্টিভনেস কাজ করে। হ্যাঁ, এই হতাশাটা থেকে। কারণ আমি তো আমার রিয়েল সেল্ফ হয়ে উঠতে পারি নি। সো, আমার মধ্যে একটা ক্ষোভ আছে, একটা দুঃখ আছে। সো, এই ডেসট্রাক্টিভনেস আমি যদি চর্চা করতে যাই তাহলে কিন্তু আবার ঘুরে ফিরে সেই ডিসকানেক্টেড হবার ভয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত কোন প্রোপোজিশনটা আমার মাথার মধ্যে আছে? বি ডমিনেটেড অর ডেসট্রয় (Be dominated or Destroy)। হয় ডমিনেটেড হও অথবা ধ্বংস করো।


তো, এইযে গ্রোথ পেইন বা গ্রোথ এংজাইটি (anxiety), এটা যাতে কাজ না করে— কারণ এটা কাজ করলে আমি যেকোন সময় ডেসট্রাক্টিভ হয়ে উঠতে পারি কিন্তু, কারণ সম্ভাবনাটা ওর মধ্যে রয়ে গেছে, ডায়ালেক্টিক্সটা ওর মধ্যে রয়ে গেছে। আমরা যাতে ডেসট্রাক্টিভ হয়ে উঠতে না পারি সেখানেই কাজ করে হচ্ছে হলো গিয়ে কালচার। সেখানেই কাজ করে হচ্ছে হলো গিয়ে মিডিয়া, সেখানেই কাজ করে হচ্ছে হলো গিয়ে অক্ষর-ছাপা-ছাপাখানা। এরাই আসলে মূলত সোশ্যালাইজেশনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর কারণেই যাতে আমি ওই ডেসট্রাক্টিভটা হয়ে উঠতে না পারি। ফলে তৈরি হয় কনফর্মিটি এবং যেহেতু আসলে আমি এর মধ্যেই বড় হচ্ছি, এই সংস্কৃতির মধ্যেই বড় হচ্ছি, ফলে এই-যে আমি যে কনফর্ম করছি এটা সম্পর্কে কিন্তু আসলে আমি সচেতন নই। এটা থেকে যায় আমার অবচেতনে, বা খানিকটা- মানে যদি বাংলাটা আমরা এভাবেও করতে পারি যে আমার অচেতনে। হ্যাঁ! আমরা যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি, এরিক ফ্রম বলছেন, যে সিদ্ধান্তগুলো আমরা নিচ্ছি, এই সিদ্ধান্তগুলো আসলে আমরা নিচ্ছি গিয়ে আনকনশাসলি। কিন্তু আনকশাসলি নিলেও যখন সিদ্ধান্তটা আমি নিয়ে ফেলি, যখন আমি একটা কাজ করে ফেলি, তখন কিন্তু আমি আবার এটাকে পোস্ট-রেশনালাইজ করি। আমি কিন্তু পরে এটাকে রেশনালাইজ করি। তাইনা? কেন রেশনালাইজ করি? টু এনশিওর, যে আমি করফর্ম করেছি।


তো, এখন আমরা যদি সবাই যার যার নিজেদের পরিবারের দিকে তাকাই এবং যদি একটু স্বীকার করি— আমরা কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমাদের প্যারেন্টদের অনেক আগলি (ugly) সাইড দেখি, দেখেছি। তাই না? একটু যদি সবাই একটু পেছন ফিরে তাকাই। এখানে উপস্থিত সবাই কি বলবেন? আমরা কি প্যারেন্টদের আগলি সাইড দেখিনি? দেখেছি কি দেখিনি? আমরা সবাই দেখেছি। আচ্ছা, কিন্তু আমরা কী শিখেছি? যে, ওই আগলি রিয়েলিটিকে অ্যাভয়েড করতে হবে। র‍্যাদার, প্যারেন্টিংয়ের রোলটাকে আমাদেরকে গ্লোরিফাই করতে হবে, তাদের পজিটিভ আসপেক্টগুলোকে আমাদেরকে গ্লোরিফাই করতে হবে। আর, ওই যে, আমাদের মাথায় তো প্রকল্পটি কাজ করে যে, আগলি আসপেক্টগুলোকে যদি অ্যাভয়েড না করি, পজেটিভ আসপেক্টকে যদি গ্লোরিফাই না করি— তাহলে আমার সমস্যা হয়ে যাবে কোথায়? সমস্যা হয়ে যাবে সিকিউরিটিতে। কারণ তারা আমাদেরকে কি দেয়? তারা আমাদেরকে সিকিউরিটি দেয়। তাহলে আমরা সিকিউরিটির প্রেমে পড়লাম কোথায়? আমরা সিকিউরিটির প্রেমে পড়লাম হচ্ছে হলো গিয়ে একেবারেই পরিবারে। অর্থাৎ আমাদের রিয়েল সেল্ফ হয়ে ওঠার বদলে, ওটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, আমরা সিকিউরিটির প্রেমে পড়লাম। এবং এই সিকিউরিটির প্রেমে পড়ে আমরা এগোনি, এংজাইটি— এগুলোকে কবর দেওয়া শিখলাম, এগুলোকে রিপ্রেস করা শিখলাম।

তার মানে হচ্ছে— এই যে রিয়েল সেল্ফ হয়ে ওঠার প্রশ্নটা ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে, আমরা আমাদের রিয়েল সেল্ফ হয়ে উঠতে পারছি কিনা। এখন প্রশ্লটা অ-নে-ক বড়, তাহলে অনেক বড় একটা প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। যে, রিয়েল সেল্ফের সংজ্ঞা কী? বা রিয়েল সেল্ফটাই বা কী? তখন তারা বলছেন যে, এটার উত্তর দেওয়া তো আসলে এত সোজা নয়, এর জন্য আমাদেরকে দেখতে হবে, আমাদের রিজনিং নেচার। যে, মানুষ হিসাবে এই যে আমরা রিজনিং করতে পারি সেটার প্রকৃতিটা কী? বা আমাদের কনশাসনেসের নেচারটা কী বা আমাদের চেতনার প্রকৃতিটা কী? সেইটাকে বুঝতে হবে ইন রিলেশন টু দ্য রিয়েল সেল্ফ। কারণ ওটা বুঝলে আমি বুঝতে পারব যে আমি আসলে কোন ধরনের রিয়েল সেল্ফ হয়ে উঠতে চাই।


এখানেই, আমরা আবার ওই যে এডোর্নো এবং হর্কহেইমারের যৌথভাবে লেখা— ডায়ালেক্টিক অফ এনলাইটেনমেন্ট (১৯৪৪), ওটাকে যদি একটু আলোচনায় নিয়ে আসি, আরও নির্দিষ্ট করে হর্কহেইমারের আরেকটি লেখা আছে— যেটা আসলে ডায়লেক্টিক অফ এনলাইটেনমেন্টকে বুঝতে একটু বেশি সাহায্য করে। এক্লিপস, মানে এক্লিপস অফ রিজন (Eclipse of Reason, ১৯৪৭)। ওটা আসলে ডায়ালেক্টিক অফ এনলাইটেনমেন্টকে আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। সুতরাং, সেটা যদি আমরা একটু আলোচনা করি— যে, কেন উনি এটা বললেন যে, ‘রিজন এখন এক্লিপসে [গ্রহণ লেগেছে] আছে’। রিজনের এক্লিপস ঘটে গেছে। কেন? তাতে গ্রহণ কেন লেগে গেলো? তখন উনি বলছেন ওখানে যে, দুই ধরনের রিজন আছে। যেটা নিয়ে আমরা— মানব মন, নাড়াচাড়া করে। একটা হচ্ছে সাবজেক্টিভ রিজন, আরেকটা হচ্ছে অবজেক্টিভ রিজন। এখন সাবজেক্টিভ রিজনকেই উনারা কিন্তু বলছেন হলো গিয়ে ইন্সট্রুমেন্টাল রিজন (instrumental resason)। যে, কেন সাবজেক্টিভ রিজন ইন্সট্রুমেন্টাল রিজন? সাবজেক্টিভ রিজন ইন্সট্রুমেন্টাল কারন, সাবজেক্টিভ রিজন হচ্ছে হলো গিয়ে একেবারে আমার-আপনার রিজনিং। এখানে আমরা কী করি— আমরা একটা এন্ড (end, লক্ষ্য) চিন্তা করি আগে, আমার একটা টার্গেট চিন্তা করি। তখন— যে, আমার টাকা লাগবে, এটা আমার একটা এন্ড। তখন আমি একটা মিন্‌স (means, উপায়) বের করি এবং রিজনকে ওই মিন্‌সের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে আমি আসলে এন্ডটাকে জাস্টিফাই করি। অথ্যার্ৎ রিজন এখানে একটা ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমার আমার টাকা লাগবে এই কারণে আমি চাকরী করব। ফলে আমি কেন চাকরী করব এই প্রশ্নটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না, চাকরী আমার আদৌ করা উচিৎ কি করা উচিৎ না। ব্যবসা আমার আদৌ করা উচিৎ কি করা উচিৎ না— এইটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হলোগে আমার টাকা লাগবে। এই কারণে, আমি চাকরী করব বা ব্যবসা করব। আর অবজেক্টিভ রিজনে ওই যে কী করব কী করব না, কী উচিৎ কী উচিৎ না এইটা দিয়ে আসলে আগে শুরু হয়। যেখানে রিজনকে আসলে একটা মিন্‌স হিসাবে কাজে লাগানো হয় না, র‍্যাদার রিজন এখানে একটা মিজারিং একটা একটা মানদন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়, একটা মিজারিং রগ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যে, আমি যেই এন্ডটাতে পৌঁছাতে চাচ্ছি সেখানে আমার পৌঁছানো উচিৎ কি উচিৎ না।

এখন মানুষের ইতিহাসে এই দুইটা রিজন কিন্তু সবসময়ই ছিল। এমন না যে এইটা হঠাৎ করেই, মানে এই এনলাইটেনমেন্ট পরবতীর্তে তাঁরা বের করে বসলেন ব্যাপারটা তা-না, সবসময়ই ছিলো। কিন্তু তাঁরা বলছেন যে, এই যে ক্যাপিটালিজম অনওয়ার্ড যে সময়টা— ফলোড বাই হিউজ ট্রান্সফরমেশন অফ কনশাসনেস, এখানে কী ঘটে গেলো? যে, অবজেক্টিভ রিজন কাজ করা বন্ধ করে দিলো এবং সাবজেক্টিভ রিজন কাজ করা শুরু করে দিলো। মানে, অনেক বেশি ডমিনেট করা শুরু করে দিলো। এই যে একটু আগে যে আমরা টাকা এবং চাকরীর কথাটা বলছিলাম আসলে এটাও যদি আমরা সবাই একটু স্বীকার করি! আজকাল আমরা নানান কথা তো বের করেছি, উপকথা বের করেছি যে— কেন চাকরী করব বা কেন বাজারে সংযুক্ত হবো? যে, বাজারে সংযুক্ত হবো কারণ বাজার আমাকে আমার আত্মপরিচয় দেবে, তাইনা?, বাজার আমাকে মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবি করতে সহায়তা করবে। কিন্তু আসলে, দিন শেষে আমার টাকা লাগবে। তাইনা? তো ওই এন্ডটাতে পৌঁছানোর জন্য আমি কি করি এই কারণগুলোকে তখন আসলে ওই এন্ডের পক্ষে কাজে লাগাচ্ছি। ওইযে পোস্ট-রেশনালাইজ করি। আমার সিদ্ধান্তগুলোকে আমি পোস্ট-রেশনালাইজ করি। রিজনকে তখন কাজে লাগাই; রিজনকে অনেক পরে কাজে লাগাই। তো, যেমন এক্লিপ্‌স অফ রিজনের চার নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে আমি যদি আপনারা বিরক্ত না হন একটা ছোট্ট লাইন যদি বলি বা স্ট্যাঞ্জা (stanza) যদি বলি, উনি লিখছেন— “দ্যা থিওরি অফ অবজেক্টিভ রিজন ডিড নট ফোকাস অন দ্যা কো-অর্ডিনেশন অফ বিহেভিয়ার এন্ড এইম বাট অন কনসেপ্টস (The theory of objective reason did not focus on the co-ordination of behavior and aim, but on concepts)”। অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের টার্গেটটা হলো গিয়ে কনসেপ্ট। একটা জিনিস কেমন, এইখানে কিন্তু ওই অনেকটা আমরা হেগেলের একটা গন্ধ কিন্তু পাই। কিন্তু, সাবজেক্টিভ রিজন প্রুভ্‌স টুবি দ্যা অ্যাবিলিটি টু ক্যলকুলেট প্রোবাবলিটিস অ্যান্ড দেয়ারবাই টু কো-অর্ডিনেট দ্যা রাইট মিন্‌স উইথ অ্যা গিভেন এন্ড (Subjective reason proves to be the ability to calculate probabilities and thereby to co-ordinate the right means with a given end)। সাবজেক্টিভ রিজন অ-নে-ক প্রোবাবলিটি নিয়ে কাজ করে— প্রোবাবলিটি শব্দটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো প্রোবাবলিটি নিয়ে কাজ করে। আমার এন্ডে পৌছানোর জন্য কী কী ধরনের প্রোবাবলিটি কাজ করছে। অর্থাৎ আমরা যদি মনে করি যে, প্লেটো প্রশ্ন করছেন, জাস্টিস কি? হোয়াট ইজ জাস্টিস?’ তখন এটা হচ্ছে কনসেপ্ট। উনি জাস্টিসের কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করছেন। সেটা কিন্তু মানব সমাজে নাও থাকতে পারে। যেই কনসেপ্ট নিয়ে উনি কাজ করছেন — সেটা কিন্তু মানব সমাজে নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ চর্চার মধ্যে নাও থাকতে পারে। কিন্তু দ্যা কনসেপ্ট ক্যান এগজিস্ট। কনসেপ্টটা আছে, ওই আদর্শ রূপটা থাকতে পারে। এখানেই কিন্তু আমরা আবার প্লেটোর সাথে আমরা স্ট্রাকচারালিজমের একটা কানেকশন পাই। স্ট্রাকচারালিজম যে স্ট্রাকচারের চিন্তা করে সেইটা যে সবসময় আমাদের চর্চার মধ্যে থাকে তারা কিন্তু বলছেন না, তারা বলছেন যে ওইটা থাকে আমাদের সাইকিক ইউনিটি অফ ম্যানকাইন্ডের মধ্যে। তো যাই হোক, প্লেটো যখন জাস্টিস নিয়ে চিন্তা করছেন, তখন হোয়াট ইজ জাস্টিস ইটস অ্যা কনসেপ্ট অর্থাৎ হোয়াট ইট শ্যুড বি। জাস্টিস কী হওয়া উচিৎ, কী না হলে ইনজাস্টিস হবে— ইটস অ্যা কনসেপ্ট।


কিন্তু সাবজেক্টিভ রিজনিংয়ে যখন আমরা আসি তখন প্রশ্ন এসে যায় যে এখানে প্রোবাবলিটিসগুলো কী কী, কী কী হলে জাস্টিস হতে পারে, নট দ্যা কনসেপ্ট। তখন চর্চার জায়গাটা অনেক বেশি গুরুত্ব, মানে গুরুত্ব নিয়ে এসে দাঁড়ায়। এবং তখনই দেখা যাবে যে, আমার সংজ্ঞা বা আমার কাছে জাস্টিস, আপনার কাছে জাস্টিস, আরেকজনের কাছে জাস্টিস এইরকম আলাদা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কি হচ্ছে, সাবজেক্টিভ রিজনিংয়ে কনটেক্সচুয়ালাইজেশন (contextualization) হচ্ছে। অর্থাৎ এখন অল কাইন্ডস অফ রিজন্‌স হ্যাড বিন রিডিউসড টু দ্যা সাবজেক্টিভ ভ্যালু। সব ধরনের রিজনিংয়েই, রিজনিংকে কি করা হচ্ছে— এই ক্যাপিটালিজম অন ওয়ার্ড, এনলাইটেনমেন্ট অন ওয়ার্ড কি করা হচ্ছে, সাবজেক্টিভ রিল্‌মে (realm) এনে রিডিউস করা হচ্ছে। যেটা তাঁরা বলছেন, যে, এখন সাবজেক্টিভ রিজনের সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বা সাবজেক্টিভ রিজনিং ডমিনেট করছে। অর্থাৎ দ্যা প্রবলেম অফ ইমানসিপেশন ইজ রিলেটেড উইথ দ্যা প্রবলেম অফ কনশাসনেস, হুইচ এগেইন রিলেটেড টু দিস আইডিয়া অফ সাবজেক্টিভ রিজনিং”। যে, সাবজেক্টিভ রিজনিং সেইটার সাথে কানেকটেড হলো গিয়ে কনশাসনেস, সেইটার সাথে রিলেটেড হলো গিয়ে দ্যা প্রবলেম অফ ইমানসিপেশন। আচ্ছা, যেমন পেইজ সিক্সে উনি বলছেন— “দ্যা প্রেজেন্ট ক্রাইসিস অফ রিজন কনসিস্ট ফান্ডামেন্টালি ইন দ্যা ফ্যাক্ট দ্যাট, এট এ সারটেন পয়েন্ট, থিঙ্কিং ইদার বিকেম ইনকেইপাবল অফ কনসিভিং সাচ অবজেক্টিভিটি এট অল অর বিগেন টু নিগেট ইট অ্যাজ আ ডিল্যুশন (The present crisis of reason consists fundamentally in the fact that at a certain point thinking either became incapable of conceiving such objectivity at all or began to negate it as a delusion)”। যে, বর্তমান সময়ে রিজনের কি হচ্ছে— যে, থিঙ্কিং ইদার বিকেম ইনক্যাপাবল অফ কনসিভিং সাচ অবজেক্টিভিটি। থিঙ্কিং এখন আর এই ধরনের অবজেক্টিভিটির কথা চিন্তা করতে পারছে না, অথবা বিগেন টু নিগেট ইট অ্যাজ আ ডিলুশন অথবা এইটাকে একটা মায়া হিসেবে ভেবে নেগেট (negate) করছে। এখানে, আমার একটা পার্সোনাল রিডিং আছে এবং আমি আসতে আসতে ফাহমিদের সাথে এইটা আমি আলোচনা করছিলাম, এবং সেও দেখলাম যে একমত হলো যে, আমরা সাধারণত— বিশেষ করে যখন পোস্ট-মর্ডান স্কুল খুব ডমিনেন্ট হয়ে দাঁড়ালো, এবং আমরা তো জানিই যে পোস্ট-মর্ডান স্কুল/পোস্ট-কালচারালিজম ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। পোস্ট-মর্ডানিজম, বলব যে এক ধরনের র‍্যাডিক্যাল ভার্সন অফ ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল। মানে, তারা ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের থিঙ্কিংগুলোকে র‍্যাডিক্যালাইজ করে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে, সাবজেক্টিভিটিকে একেবারে চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। একেবারে অ্যানার্কির একটা জায়গাতে নিয়ে গেছেন।

তখন আমাদের কাছে মনে হয়— যে, তাহলে যেহেতু এটা ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের দ্বারা প্রভাবিত, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলও বোধহয় অবজেক্টিভ রিজনিংকে একেবারেই ধুয়ে মুছে ছেড়ে দিয়েছেন আর সাবজেক্টিভ রিজনিংকেই উচ্চকিত করেছেন। কিন্তু আমি যখন এই লাইনটা খুব ভালো করে খেয়াল করি যে তিনি কী বলছেন, এট শার্টেন পয়েন্ট অফ টাইম কি ঘটেছে? “থিঙ্কিং ইদার বিকেম ইনক্যাপাবল অফ কনসিভিং সাচ অবজেক্টিভিটি”। আমরা অসমর্থ হয়ে পড়েছি এই ধরনের অবজেক্টিভিটিকে ধারণ করতে। এট অল অর বিগেন টু নিগেট ইট অ্যাজ অ্যা ডিল্যুশন”। অথবা, এনলাইটেনমেন্ট আমাদেরকে দিতে পারেনি যে প্রমিজটা করেছিলো। ফলে আমাদের মোহভঙ্গ ঘটেছে এবং এটাকে আমরা নেগেট করতে শুরু করেছি। তার মানে হচ্ছে, আমার কাছে এটার রিডিংটা দাঁড়ায় এরকম— যে, তাঁরা কিন্তু বলছেন যে ওই অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের দরকার আছে, ওই অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের প্রয়োজন আছে।


যাই হোক, সাবজেক্টিভ রিজন যেহেতু মিন্‌স, বা যেহেতু একটা ইন্সট্রুমেন্ট হিসাবে এখানে রিজনকে কাজে লাগাচ্ছে, যেই উদ্দেশ্যে আমরা রিজনকে কাজে লাগাচ্ছি সেইটাকে আমরা কিন্তু আর কোনভাবেই আর অবজেক্টিভ রিজন দিয়ে আর রেশনালাইজ করি না, বা করতে পারিই না আসলে। কারণ আমরা জানি যে, আমি এখানে রিজনকে কাজে লাগিয়েছি মিন্‌স হিসাবে, ইন্সট্রুমেন্ট হিসাবে। কারণ আমরা জানিই যে মোরাল জাজমেন্ট ইজ রিডিউস টু ফর্মস অফ ইমোশন বা ইমোটিভিজম (emotivism)। যে, আমরা জানিই যে আমি আসলে এখানে মোরাল জাজমেন্টকে কি করেছি? ইমোশন দ্বারা বিচার করেছি। সো, এখানে ইমোটিভিজম খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে সাবজেক্টিভ রিজনে। সো, নো রিয়েল মোরাল প্রবলেম্‌স— রিয়েল মোরাল বলতে আর আমার কাছে আর কিছু নাই। কী আছে আমার কাছে? আমার কাছে যা আছে সেটা হচ্ছে সাবজেক্টিভ ইল্যুশন। অর্থাৎ এনলাইটেনমেন্ট-ফিলোসফাররা রিজনকে যেভাবে দেখতেন, তার সাথে কিন্তু আমরা যদি একটু খেয়াল করি— একধরনের ডিরেক্ট কন্ট্রাডিকশন আছে কিন্তু। কিভাবে? যে, সাবজেক্টিভ রিজনে আমরা দেখি, যে সায়েন্স বিকাম সাবর্ডিনেট টু স্পেকুলেশন। কারণ, এখানে তো প্রোবাবলিটির (probablity) যুগ। ওই-যে একটু আগে প্রোবাবলিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এই কারণেই বলেছিলাম। যে, সাবজেক্টিভ রিজনে প্রোবাবলিটি খুব ইম্পর্টেন্ট আর সায়েন্স কি প্রোবাবলিটিকে খুব পছন্দ করে? সে তো অনেকগুলো প্রোবাবলিটিকে ঘেঁটে-টেটে একটি নির্দিষ্ট উত্তরে পৌঁছাতে চায়। তাইনা? যেটা সত্য হবে। হ্যাঁ, এইটা কিন্তু সায়েন্সের জন্য, বা এই যে এনলাইটেনমেন্ট ফিলোসফির যে নিশ্চয়তার ফিলোসফি, যে সত্যের ফিলোসফি, তার সাথে কিন্তু কন্ট্রাডিক্ট করছে এই সাবজেক্টিভ রিজনিং। সো, মডার্ন ফিলোসফির দিকে যদি আমরা তাকাই বা এনলাইটেনমেন্ট ফিলোসফি— তারা কিন্তু শুরু করেছিলো ডিনাউসিং রিলিজিয়ন ইন ফেবার অফ রিজন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই আমরা দেখব যে তারা রিজনকে কি হিসাবে নিয়েছিল?


একটু হতাশ লাগে যে আমরা, মানে আসলে বাংলাদেশে বসে এইগুলো আলোচনা করছি, কতটুকু আসলে ঠিক হচ্ছে না হচ্ছে— এটা নিয়েও আমার দ্বিধা হয় মাঝেমধ্যে। হ্যাঁ, এটা নিয়ে মাঝেমধ্যে খারাপও লাগে। এইটা স্বীকার করে নিচ্ছি। যে, তাঁদের যে কনটেক্সট, তাঁরা কী দেখেছে? প্রায় চল্লিশ বছরের প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিস্টদের মারামারি, রিলিজিয়াস ভায়োলেন্সের চূড়ান্ত রূপ। এটা দেখেই কিন্তু তাঁরা এই ধরনের চিন্তাভাবনা করছিলেন। তাইনা, যে রিলিজিয়নের জায়গাতে কি নিয়ে আসা যায়? সমাধান কি বেড়োলো? তাদের কাছে সমাধান বেড়োলো যে, রিলিজিয়নকে সেক্যুলারাইজ করতে হবে। সেক্যুলারাইজ করা মানে কিন্তু কখনোই রিলিজিয়নের বিদায় না। রিলিজিয়নকে প্রাইভেট স্ফিয়ারে রাখা। তো, অর্থাৎ সাবজেক্টিভ ইমোটিভ লেভেলে, ইমোশন লেভেলে থাকবে হচ্ছে গিয়ে রিলিজিয়ন। আর পাবলিক স্ফিয়ার কি হবে? পাবলিক স্ফিয়ার উড বি গাইডেড বাই এ রিজন। সেকুলার রিজন, অবজেক্টিভ রিজন। এখন, এইখানেও কিন্তু একটা ডায়ালেক্টিক ছিল যেইটা স্বীকার করা হলো না। সেইটা হচ্ছে যে, এইখানেও কিন্তু, এই চিন্তাতেও কিন্তু সাবজেক্টিভিটি ছিল, প্রাইভেট লেভেলে। কিন্তু, মানে কি হলো, ডিউ টু দ্যা প্রোলিফারেশন অফ কালচার ইন্ডাস্ট্রি— কি হইলো? যে, পাবলিক আর প্রাইভেটের এই যে ডাইকোটমি (dichotomy), এটা কিন্তু বর্তমান কালে ভেঙে গেল। আর যখনই ভেঙে গেল, তখনই, কারণ বর্তমান সময়টা কি? বর্তমান সময়ে কালচার ইন্ডাস্ট্রি কি আর আমাকে প্রাইভেট থাকতে দিচ্ছে? কেন এডোর্নোদের বা হর্কহেইমারদের কালচার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এত মাথা ব্যথা? কালচার ইন্ডাস্ট্রি কি আমাকে আর প্রাইভেট থাকতে দিচ্ছে কিনা?


একেবারে ফেসবুকের কথাই যদি আমরা চিন্তা করি, তাইনা? যে, প্রাইভেসি প্রাইভেসি করে আমরা মাত করে ফেলি, নিজের স্বকীয়তা বোঝানোর জন্য কতভাবে আমরা একে অন্যকে আপনি আমার প্রাইভেসি নষ্ট করছেন, হেনো-মেনো-তেনো আমরা বলতে থাকি। কিন্তু ফেসবুকে কি করছি? ভাত খাচ্ছি, শুয়ে আছি, আমার প্রাইভেসিকে কিন্তু আমি খোলাসা করে দিচ্ছি। সো, কি হচ্ছে? যে আমার প্রাইভেট লাইফে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি ঢুকে গেছে। যে ভালোবাসা, মায়া, মমতা— এই যে ইমোশনগুলো, এগুলো কিন্তু এখন ইন্ডাস্ট্রি ঠিক করে দিচ্ছে। তাইনা? সেলিম রেজা নিউটনের একটা খুব চমৎকার লেখা আছে, বাজারের যুগের দীক্ষায়ন প্রকৌশল নিয়ে, তাঁর নাম হয়তো বা শুনে থাকবেন। সেখানে উনি খুব চমৎকারভাবে [দেখাচ্ছেন] আম্মুর আদর সেটাও কিভাবে বাজার ঠিক করে দেয়, যে, আম্মু কখন তুমি লক্ষ্মী হয়ে ওঠো, সেইটাও বাজার ঠিক করে দেয়। যখন তুমি নেসলের দুধ খাওয়াতে পারো। তাইনা? এবং হুমায়ুন আজাদ বাজার কতটা আমাদের প্রাইভেট স্ফিয়ারে ঢুকে গেছে সেটা নিয়ে বলতে যেয়ে অনেক আগেই বলছিলেন, শাড়ি বেচো, গাড়ি বেচো/ লাভারের পাছা বেচো [কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, ১৯৯৯]। হ্যাঁ.. তো কি হচ্ছে? যে, ইন্ডাস্ট্রি আমাদের একেবারে ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে গেছে। ফলে, এখন আর, ওই যে আগের মত, তাঁরা যেভাবে চিন্তা করতেন যে, দিস ইজ প্রাইভেট স্ফিয়ার এইটা হইলো গিয়ে পাবলিক স্ফিয়ার। এটা এখানেই থাকবে, এইটা এখান থেকে বেড়োবে না, অর্থাৎ কোন ওভারল্যাপিং হবে না। কোনো ইন্টারমিংলিং হবে না। মানে,ইন্টার মিক্সচার হবে না। এখন আর বাজারের যুগে সেটা হচ্ছে না। (শ্রোতাদের মধ্য থেকে জিজ্ঞাসা) তখনো কি এটা ছিল?

একটা খুবই চমৎকার প্রশ্ন, কিন্তু তখন এটা, এই বাজার বাজারি হওয়ার মতো মাধ্যম এত ছিলনা। যে বাজারটা তো বাজারি হতে হয়। অর্থাৎ এটা পাবলিসাইজড হতে হয়। পাবলিসাইজড হওয়ার মত এত মাধ্যম ছিল না কিন্তু। যেইটা কালচার ইন্ডাস্ট্রির কারণে, মিডিয়া প্রোলিফারেশনের কারণে হয়েছে। ফেসবুকের আগের জমানা আর ফেসবুকের পরের জমানা— কোনভাবেই কি এক মনে হয়? একটু চিন্তা করুন তো? [এই জায়গাতে দর্শক শ্রোতাদের কথা (কি বলছে) বোঝা গেল না] ও.. পাবলিক.. অবশ্যই হতে পারে না। এটাই তো তারা বলছেন, এই ডায়ালেক্টিকটাকে স্বীকার করা হতো না। যে, অ্যাজ ইফ দুটোকে আলাদা করা যায়। এটাইতো তারা বলছেন, তখনও মানে সাবজেক্টিভিটি ছিল। কিন্তু অ্যাজ ইফ, সাবজেক্টিভিটি এবং অবজেক্টিভিটি দুটোকে আলাদা প্রকষ্ঠে রেখে জীবন পরিচালনা করা সম্ভব। এভাবে ভাবতেন। সেই ডায়ালেক্টিক্সটাই তো তাঁরা ধরিয়ে দিচ্ছেন। মানে, আপনার কথাটাই তাঁরা ধরিয়ে দিচ্ছেন। এখন এই বর্তমানকালে কি হলো? যে হুরমুর করে কিন্তু এই ডাইকোটমি একদম চোখের সামনে, এখন আর ধরিয়ে দিতে হচ্ছে না, এখন রীতিমতো ভেঙেই পড়েছে। হ্যাঁ! এখন আর এডোর্নো, হর্কহেইমারদের প্রয়োজন হচ্ছে না। এখন আপনি আমিই বুঝতে পারছি, পাবলিক/প্রাইভেটের ডাইকোটমি (dichotomy) এখন আর নাই। কোনভাবেই নাই। এবং শুধুমাত্র ডাইকোটমিই, এখানেই যে ভেঙে পড়েছে তা না, আমরা নৃবিজ্ঞানে একটা সময়ে দীর্ঘকাল পর্যন্ত যে ফিল্ডকে আমরা চিন্তা করতাম। যে, ফিল্ড ইজ সামহ্যোয়ার আউট দেয়ার, এবং ফিল্ডটা হচ্ছে একটা লোকাল সাইট। আর অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট যাচ্ছে হলো গিয়া, একটা গ্লোবাল সাইট থেকে। এবং দুইটা ডিসকানেকটেড। কিন্তু এই যে ডাইকোটমিগুলো যে নাই আসলে, এরা আসলে একটা আরেকটাকে তৈরী করে। একটা ছাড়া যে আসলে আরেকটা তৈরী হতে পারে না। আদার ছাড়া যে আসলে সেল্ফ তৈরী হতে পারে না। সেল্ফ ছাড়া যে আদার তৈরী হতে পারে না। একটা যে আসলে আরেকটা দ্বারা কন্টামিনেটেড। এইটাও কিন্তু সাম্প্রতিককালে, অ্যান্থ্রোপোলজিতেও এইটার ঢেউ লেগে গেছে। যে আমরা এখন বলছি, লোকাল ইজ কন্সটিটুইন পার্ট অফ গ্লোবাল। গ্লোবালও হচ্ছে গিয়ে লোকালের একটি গঠনকারী উপাদান। এবং এই কারণেই একজন সমাজচিন্তকই আছেন, রোনাল্ড রবার্টসন, উনি একটা টার্ম ব্যবহার করেন গ্লোকাল (Glocal)। অর্থাৎ, দেয়ার ইজ নো লোকাল দেয়ার ইজ নো গ্লোবাল, ইটস গ্লোকাল। যাই হোক, অন্য দিকে চলে গেলাম।


আবার, উনারা (এডোর্নো, হর্কহেইমার) বলছেন, এনলাইটেনমেন্ট ফিলোসফাররাযতই তারা অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের কথা বলুক না কেন তারাও কিন্তু রিজনকে একটা মিন্‌স হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। এই ডায়ালেক্টিকটা তাদের ওখানেও ছিল। তারাও রিজনকে মিন্‌স হিসেবে কাজে লাগিয়েছে, কি কারণে? টু এভয়েড ফিলোসফিক্যাল স্কেপটিসিজম (scepticism)। সোজা হিসাব। এটা ডায়ালেক্টিক। তো, হর্কহেইমারের একটা বিখ্যাত কথা আছে, খুব মজার, যে, তিনি বলছেন যে, তখন আমরা তো ভাবি যে, রিলিজিয়নকে বাড়িতে পাঠালো। উনি বলছেন যে, তখন আসলে যা ঘটেছিল, যে, গড ইজ রিটেইনড ফিলোসফিক্যালি, বাট নট ক্রেইজ। ব্যাপারটা কি? উই নিড দ্যা কনসেপ্ট অফ গড। এটা একটা কনসেপ্ট। যেটা আমাদের দরকার। বাট, উই ডোন্ট নিড গড। কথাটা কি খটমট লাগছে? উই নিড দা কনসেপ্ট অফ গড। বাট উই ডোন্ট নিড গড। এর পরে আমরা প্রটেস্ট্যান্ট এথিক্স, ক্যালভিনিজমের আলোচনায় গেলে আরো অনেক পরিষ্কার হয়ে যাব। অর্থাৎ এনলাইটেনমেন্টের মধ্যে একটা ডায়ালেক্টিক্স ছিল, যেটার কারণে আসলে অবজেক্টিভ রিজনিং শ্যাটার্ড হয়ে যেতে লাগলো। অবজেক্টিভ রিজনিং বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। এই ডায়ালেক্টিক্সটা আসলে এনলাইটেনমেন্টের মধ্যেই ছিল। তারাও আসলে রিজনকে ইন্সট্রুমেন্টালি কাজে লাগিয়েছে। তো, ডায়ালেক্টিক্সটা আরেকটু পরিষ্কার হবে, আমরা যদি ওইযে, একটু আগে বলছিলাম যে, ক্যালভিনিজম এবং এম্পিরিসিজম— এই দুইটার কনট্রাডিকশন দেখি। ক্যালভিনিজম, জন ক্যালভিনের প্রটেস্ট্যান্ট যে চিন্তাভাবনা, খুবই কিন্তু ডিটারমিনিস্টিক। উনি কি বলতেন? তোমার ভাগ্য-টাগ্য সবই কিন্তু নির্ধারণ করা আছে। তুমি হেল পাবা না হেভেন পাবা, সবকিছু নির্ধারণ করা আছে। ওখানে তোমাকে পৌঁছাতে হবে তোমার কাজের মধ্য দিয়ে। এবং তোমার উৎপাদনমুখী এই কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে তুমি যুক্ত হবা, এবং এর মধ্য দিয়েই তুমি ওই নির্ধারিত ভাগ্যের কাছে চলে যাবা। এবং খেয়াল করি আমরা, ক্যালভিনিজম এবং এম্পিরিসিজম, দুইটাই কিন্তু এনলাইটেনমেন্টের আউটকাম। দুটোকেই সম্ভব করে তুলেছে কিন্তু এনলাইটেনমেন্ট। এই ডায়ালেক্টিক্সের কারণেই কিন্তু আমরা খেয়াল করি, যে, সায়েন্স এবং রিলিজিয়নের দূরত্ব দিন দিন আরো বেড়েই চলছে। কারণ, এম্পিরিসিজম কি বলছে? এম্পিরিসিজম বলছে না দেখে বিশ্বাস করব না। আর ক্যালভিনিজম কি বলছে? যে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে আছে। দুটোই কিন্তু এনলাটমেন্টের আউটকাম। দুটোই। এবং এই যে, পুরো প্রক্রিয়াটার মধ্যে এই ডায়ালেকটিক্সটা আছে এটার কারণেই গ্র্যাজুয়েলি কি হচ্ছে? সায়েন্স এবং রিলিজিয়নের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। কম্পার্টমেন্টালাইজড হয়ে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে, এই যে, এতগুলো কথার সাথে লিবারেলিজম এবং টলারেন্স এর সম্পর্ক কোথায়? যেখান থেকে আমরা শুরু করেছিলাম। লিবারেলিজম বলে কি? যে, আমাদের সাবজেক্টিভ বিলিফ কোথায় থাকবে? এনলাইটেনমেন্ট লিবারেলিজম কি বলে, যে আমাদের সাবেজেক্টিভ বিলিফ, আমি কি বিশ্বাস করি, আপনি কি বিশ্বাস করেন এটা থাকবে হলো গিয়ে প্রাইভেট লেভেলে। আর পাবলিক লেভেলে কি থাকবে? সেক্যুলার টলারেন্স। এখন হোয়াট ইজ টলারেন্স? হর্কহেইমারের মতে একদিকে কি হচ্ছে? টলারেন্স রেফার্স টু ফ্রিডম ফ্রম দা রুল অব ডগম্যাটিজম। যে, দশে কি বলল সেটা না। সেটা দ্বারা আমি প্রভাবিত হবো না। কারণ দশে মিলেই তো ডগমা দাঁড়ায়। তাইনা? তো দশে কি বলল সেটা দ্বারা আমি প্রভাবিত হবো না। সো, ইটস এ কাইন্ড অফ পজিটিভ ভিউ অফ টলারেন্স। আরেকদিকে টলারেন্স ইনক্লুডস দ্যা নিউট্রালাইজেশন অফ স্পিরিচ্যুয়াল কন্টেন্ট। এখানে আবার কি হচ্ছে? যে, আমাকে, আমি যা চিন্তা করি, সেই ব্যাপারে আমাকে নিউট্রাল থাকতে হবে। অর্থাৎ অনেকটা ঐ সেই রিলেটিভিস্টিক একটা জায়গা। আপনি যা চিন্তা করেন সেই ব্যাপারে আমাকে রিলেটিভ থাকতে হবে। মানে আমাকে সম্মান দেখাতে হবে। আমারটা নিয়ে আমি থাকবো আপনারটা নিয়ে আপনি থাকবেন। এখানেও কিন্তু একটা ডায়ালেকটিক্স আছে। খুবই অস্বস্তিকর কিন্তু। কারণ একদিকে হচ্ছে হলো গিয়ে দশে কি বলে শুনবো না। আরেকদিকে হলো গিয়ে দশের ব্যাপারে সম্মান থাকতে হবে। এখানেও একটা ডায়ালেকটিক্স আছে। অন দ্যা ওয়ান হ্যান্ড ইট ওয়ান্টস টু ডিফেন্ড দা ফ্রিডম অফ আদারস, বাট অন দ্যা আদার হ্যান্ড ইট বাইন্ডস আওয়ার হ্যান্ডস ফ্রম বিহাইন্ড টু মেক মোরাল জাজমেন্ট (On the one hand it wants to defend the freedom of others, but on the other hand it binds our hands from behind to make moral judgement)।


একদিকে সে আমাকে বাধ্য করছে মোরাল জাজমেন্ট করবার জন্য, আরেকদিকে হচ্ছে হলো গিয়ে আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে অন্যের ফ্রিডম ঠিক থাকবে। তো ,এখানে পুরো প্রক্রিয়াটাতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সেল্ফ-ইন্টারেস্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সাবজেকটিব রিজনিংয়ের কালে। ফলে পলিটিক্স কি হয়ে উঠলো এই কালে? পলিটিক্স এইকালে হয়ে উঠলো এবাউট নেগোশিয়েটিং ইন্টারেস্ট। আমাদের সেল্ফ-ইন্টারেস্টগুলোকে নেগোশিয়েট করে কোনটা ঠিক থাকে কোনটা ঠিক থাকে না। এখন এই পুরো প্রক্রিয়াটার প্রভাব, এই যে রিজনিং, এই যে কনশাসনেস, এটার প্রভাব কোথায় আমরা দেখতে পাই? স্পষ্টভাবে? চিন্তা প্রকাশিত হয় ভাষার মধ্য দিয়ে, তাইনা? এবং আইডিয়াজ, এখন কি হচ্ছে, এডভারটাইজমেন্টের মধ্য দিয়ে কালচার ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকাশিত হচ্ছে। এবং খেয়াল করে দেখবেন যে, কেন এই আইডিয়াগুলো খুবই ইন্সট্রুমেন্টাল? যে, এডভারটাইজমেন্টগুলো যদি আমরা দেখি, ওখানে কেউ কিন্তু বলছে না যে, আমি এই আইডিয়াটা দিচ্ছি তার মানে এইনা যে এটা ট্রু। তার মানে এই যে আমি আইডিয়াটা দিচ্ছি প্রচারের জন্য। আপনি আপনার রিজনকে কাজে লাগান, কারণ যেহেতু অবজেক্টিভ রিজনের কোন নিয়ম নাই, আমি আমার রিজন অফার করলাম, আপনি আপনার রিজনকে কাজে লাগিয়ে বা ঠিক করে নেন এটা আপনি নিবেন কি, নিবেন না। তার মানে হচ্ছে রিজন এখন ইটসেল্ফ প্রোডাকশনের একটা অংশ হয়ে গেছে। প্রোডাকশনের একটা মিন্‌স হয়ে গেছে। প্রোডাকশনের একটা ইন্সট্রুমেন্ট হয়ে গেছে। ফলে, যেই যায়গায় দাঁড়িয়ে, মানে অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের কথা চিন্তা করে মার্ক্স শুরু করেছিলেন, শুধুমাত্র সেই অবজেক্টিভ রিজনিংকে মাথায় রেখে এখন আর রেভ্যুলেশনকে চিন্তা করা যাচ্ছে না। এখন আর পক্ষ-বিপক্ষ ধরা যাচ্ছে না বা দাঁড় করানো যাচ্ছে না। যেমন, ষোল নাম্বার পৃষ্ঠায় উনি বলছেন, দ্যা ডিফারেন্স বিটুইন থিঙ্কিং অ্যান্ড অ্যাক্টিং ইজ হেল্ড ভয়েড। যে, একটা সময় ছিল যে, দেয়ার ওয়াজ এ ডিফারেন্স বিটুইন অ্যাক্টিং অ্যান্ড থিঙ্কিং। ওই যে থিঙ্কিং হচ্ছে হলো গিয়ে কনসেপ্টের জায়গা। অবজেক্টিভ রেল্‌মের জায়গা। কিন্তু এখন, ওই যে, সব ডাইকোটমি তো ভেঙে পড়ছে। সব ডাইকোটমি ভেঙে গেছে। ফলে, থিঙ্কিং এবং অ্যাক্টিংয়ের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নাই। রিজন বিকাম্‌স অ্যা ফেটিশ। রিজন এখন একটা ফেটিশে পরিণত হয়েছে, একটা পূজার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সো, উই এন্ড আপ উইথ নট থিঙ্কিং এনিমোর। ফলে, এই যে ইন্সট্রুমেন্টাল রিজন আমাদের যে সুবিধাটা করে দিয়েছে যে, এত ভেবে লাভ কি? খেলাটা মজার! কারণ, আমার থিঙ্কিংটা আমি যে পারপাজে শুরু করেছিলাম, যে এন্ডকে চিন্তা করে আমি শুরু করেছিলাম সেটা সার্ভ হয়ে গেলে, ওইটা নিয়ে আমার আর চিন্তা করার দরকারটা কি। এই কারণেই, খেয়াল করবেন যে, আন্দোলনগুলো, মুভমেন্টগুলো এখন খুবই শর্ট লিভ্‌ড। ছোট্ট জীবন পেয়ে থাকে। কারণ এগুলো খুবই ইন্সট্রুমেন্টাল নেচারের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার মানে, খেয়াল করবেন, আমরা যদি যে এই কিছুদিন আগেকার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথাই যদি চিন্তা করি। এইটারও কিন্তু খুবই একটা ইন্সট্রুমেন্টালিটি আছে। আমি একটা এন্ড চিন্তা করেছি, যে, আমার নিরাপদ সড়ক চাই। রাইট? র‍্যাদার নিরাপত্তাকে একটা কনসেপ্ট হিসেবে ধরে আগাইনি। ঠিক না? যাইহোক, তার মানে আমি কিন্তু বলছি না যে, সেখান থেকে আমাদের কোন প্রাপ্তি নেই। সেখান থেকেও আমাদের প্রাপ্তি আছে। অথবা আমাদের কালটাই আসলে এমন যাবে। স্বল্প সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন হবে। এবং এর মধ্য দিয়েই বোধহয় আমাদের কালের রাজনীতির ধরনটা এমনই দাঁড়াবে। তো, এখন থেকেই আমরা কিছু শিখব অথবা শিখব না।


যাই হোক, এখন, এখান থেকে আমরা যদি একটু মানে সায়েন্স এবং এথিক্সের দিকে ফিরে তাকাই। সায়েন্স তো দাবি করে, এ কালে তার একটা সোল অথরিটি আছে। কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক, সেটা বলবার। এখন, জাস্টিসের প্রশ্নে যদি আমরা যাই বা ইনজাস্টিসের প্রশ্নে যাই, তাহলে সায়েন্স ইজ নিউট্রাল টু দ্যা কোয়েশ্চেন অফ হোয়াই জাস্টিস ইজ বেটার দ্যান ইনজাস্টিস? ইনজাস্টিসের চেয়ে কেন জাস্টিস বেটার? এই ব্যাপারে কিন্তু সায়েন্সকে নিউট্রাল থাকতে হবে। কারণ সে নিউট্রালি থেকেই এই উত্তরটা বের করেছে। তার যে অবজেক্টিভিটির দাবি, এবং তার যে ভ্যালু নিউট্রালিটির দাবি, সে তো বলেছে যে এইভাবে আমি অনুসিদ্ধান্ত নিয়ে, একদম পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেখেছি যে এই কারণেই জাস্টিস ইজ বেটার দ্যান ইনজাস্টিস। কিন্তু, একই সাথে সায়েন্স আবার দাবি করছে এটা বলবার সোল অথরিটি সে। তাহলে সায়েন্সেরও কিন্তু অবজেক্টিভ ক্রাইটেরিয়া থাকলো না। কারণ, সে তো নিজেকে সোল অথরিটি বলেই এটা শুরু করছে। অর্থাৎ এখান থেকেই হর্কহেইমার ১৭ নাম্বার পেইজে বলছেন, সায়েন্স ক্যান বি ইউজড ফর ইডিওলজিক্যাল ম্যানিপুলেশান। আরেকটা ডায়ালেক্টিক্স, যেটা স্বীকার করা হয়নি। সায়েন্সকে যে ম্যানিপুলেট করা যায়। সাইন্সকে একটা অবজেক্টিভ রেল্‌মের কনসেপ্ট হিসেবে ধরে আগানো হয়েছে।


তো, এখন এই পুরো প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক তাৎপর্য বা ফলাফল কি? সোশ্যাল কন্টাক্ট থিওরিস্ট যারা ছিলেন হবস, লক, রুশো— তাঁরা কি ভাবতো? তারা ভাবতো যে, মেজোরিটি রুল মানে হলো অবজেক্টিভ, তাইনা? যে, মেজোরিটি যেটা ভাববে সেটা হলো অবজেক্টিভ। আর অবজেক্টিভ রিজন মানেই হচ্ছে হলো গিয়ে, ইন্টুইটিভ ট্রুথ (intuitive truth)? কিন্তু বর্তমান সময়ে যেহেতু এটা দৃশ্যমান, আগে ছিলনা তা কিন্তু না বারবার বলা হচ্ছে। বারবার বলা হচ্ছে যে, বর্তমান সময়ে এটা দৃশ্যমান হয়ে গেছে, যে, এর জায়গা নিয়ে নিয়েছে সাবজেক্টিভ রিজন। তাহলে “মেজোরিটি রুল” মানে হচ্ছে হলো গিয়ে মেজোরিটি পাবলিকের ওপিনিয়ন, যেইটা “which has become a substitute for objective reason”। যেটাকে এখন বর্তমান সময়ে অবজেক্টিভ রিজনের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে এবং “মেজোরিটি রুল” কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, পাবলিক ওপিনিয়নের নামে কত ভয়ঙ্কর কর্মকান্ড জায়েজ করা হতে পারে, এটা তাদের মতো এত প্রত্যক্ষভাবে অভিজ্ঞতা, মানে, অনেকেই কিন্তু লাভ করেনাই, তাইনা? এইযে ১৯৩৩’র পরে, জাতীয়তাবাদের নামে, লক্ষ কোটি হাতের নামে, কি হয়েছে তাদের সাথে! ফলে পাবলিক ওপিনিয়ন দিয়ে কিন্তু হলোকাস্টের মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলা যেতে পারে। তার মানে হচ্ছে, ডিসকোর্স, পাবলিক ডিসকোর্সকে প্রোপাগান্ডা হিসেবে কাজে লাগানো যায়। পাবলিক কনভারসেশন, আপনার আর আমার কনভারসেশনকে রেটোরিক হিসেবে কাজে লাগানো যায়।

এখান থেকে তাহলে যদি আমরা দেখি, তাহলে এই রাজনীতি থেকে বের হওয়ার উপায় তাঁরা কি বলছে? এটার জন্য আমরা, হার্বার্ট মার্কুইজের আরেকটি বই আছে Counter Revolution and Revolt, ১৯৭২ তে প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে উনি কিছু রাস্তা বাতলাচ্ছিলেন। যেমন, একটা বলছেন, ৪৭ নাম্বার পৃষ্ঠাতে উনি বলছেন যে, কাউন্টার এডুকেশন অ্যান্ড অর্গানাইজেশন (counter education and organization). ঐযে, ঠিক লুকাস যেটা ১৯১৯ এ শুরু করেছিলেন, যে, “counter education and organization”। যেই পদ্ধতিতে আমি এতকাল শিখে এসেছি, এই পদ্ধতিটাকে চ্যালেঞ্জ করা। যেই সামাজিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমি এতকাল বড় হয়ে এসেছি, সেই সামাজিক সংগঠনটাকে চ্যালেঞ্জ করা, সেইটাকে ক্রিটিক্যালি প্রশ্ন করা। ফ্রি রিলেশন এবং ইন্ডিভিজ্যুয়াল (free relations and individual), আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের ফ্রী রিলেশন; এবং উনি কি বলছেন? উনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, we are not free এবং কেন আমরা ফ্রী-না সেটা ইতিমধ্যেই আমরা দেখলাম। যে, একেবারে প্যারেন্টিং থেকেই, মানে আমরা যদি আবার এরিক ফ্রমকে একটু চিন্তা করি। যে, our relations are mediated through economic criteria বা ইন্টারেস্ট, সেল্‌ফ ইন্টারেস্ট। তো, সেখান থেকে তিনি বলছেন যে, আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কটা হতে হবে মুক্ততার ভিত্তিতে। ইভেন আমাদের প্রকৃতির সাথেও নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন কর তে হবে। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কটাও আমাদের হতে হবে মুক্ত, যেখানে প্রকৃতিও একটা এনটিটি হিসেবে তার মুক্ততা চর্চা করতে পারে। তো, প্রসেসটা কি? প্রসেসটা হচ্ছে লিবারেশনের মধ্যে আসলে যে ডায়ালেক্টিকগুলো আছে, এটাকে প্রথম কথা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে। এখানে আমি একটু একজন অ্যান্থ্রোপোলজিস্টের কথা একটু স্মরণ করি, ক্লদ মেয়াসুঁ, ফ্রেঞ্চ অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট, নিও-মার্ক্সিস্ট। তিনিও আসলে এই একই প্রশ্ন নিয়ে কাজ করেছেন, যে, “মার্ক্সিজম কেন কাজ করলো না?” এবং একই প্রশ্ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি আবার, যেহেতু তিনি অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট, তাঁর প্রশ্নটা উনি একটু অন্য জায়গায় নিয়ে গেলো, মানে তিনি কোন রাস্তায় উত্তর খুঁজবেন। তিনি উত্তর খুঁজতে লাগলেন যে, মার্ক্স বলেছেন যে ডায়ালেক্টিক্সের মধ্য দিয়ে একটা সমাজব্যবস্থা বা একটা উৎপাদন নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তী সমাজব্যবস্থায় যাবে, তাইনা? সেখানে তিনি প্রশ্ন করলেন যে, তাহলে মার্ক্সের দেখানো পথে গোড়াতে ছিল কি?


(শ্রোতাদের থেকে) প্রিমিটিভ কমিউনিজম।


প্রিমিটিভ কমিউনিজম হুইচ ওয়াজ ক্লাসলেস। তো, যেখানে ক্লাসই ছিলো না, সেখানে ক্লাস কনফ্লিক্ট কোথা থেকে আসলো? আর ক্লাস কনফ্লিক্ট যদি না থাকে, তাহলে সেটা স্লেভারিতে কিভাবে গেলো? উনি তখন, এইযে অ্যান্থ্রোপোলজিস্টদেরকে আমরা খুব মোটাদাগে দোষ দিয়ে দেই যে, “এরা খালি নন-ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটিকে খুঁজে বেড়ায়।” এক ধরনের আরবান স্নোবিজম আমাদের মধ্যে, বা একধরনের এলিট স্নোবিজম, কারণ আমরা শহর ছেড়ে যাই গ্রাম অধ্যয়ন করতে। আসলে অনেক কারণেই যাই। যেমন উনি কেন গিয়েছিলেন? উনি আসলে এরকম একটা সমাজের খোঁজে ছিলেন যেখানে ক্যাপিটালিস্ট সোশ্যাল রিলেশনের প্রবেশ বা তার ইন্ট্রুশন অনেক কম বা নাই। তাহলে সেখানে উনি ঐ প্রশ্নটার উত্তর খুঁজবেন। এই কারণে উনি “গুরো সোসাইটি” নামে একটি সোসাইটি, সেখানে গেলেন এবং সেখানে তিনি দেখতে লাগলেন এবং উনি একটি কিনশিপ বেইজড সোসাইটি খুঁজতে লাগলেন, যেখানে কিনশিপ মোড অফ প্রোডাকশন এখনো ডমিনেন্ট, যে ওখানে এখনো কি করে তাহলে কি হচ্ছে? তখন উনি ওখানে দেখলেন যে ওখানেও সারপ্লাস তৈরি হয়। ওখানেও সারপ্লাস তৈরি হয়। সেই সারপ্লাস কি কারণে তারা রেখে দেয়? কারণ হচ্ছে নিওলিথিক পিরিয়ডে যখন মানুষ সেডেন্টারি এগ্রিকালচার শুরু করলো, সেডেন্টারি এগ্রিকালচার মানে হচ্ছে হলো গিয়ে এক জায়গায় বসবাস করার ভিত্তিতে যে কৃষিকর্ম। যখন শুরু করলো, তখন মানুষ দেখতে পেলো এগ্রিকালচারের একটা সাইকেল আছে, যেখানে এর একটা প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড আছে আবার এর একটা আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড আছে। এবং প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড ইজ অলওয়েজ ফলোওড বাই অ্যান আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড। তাহলে প্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে যা হয় সেখান থেকে কিছু যদি আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড এর জন্য না রাখা হয়, তাহলে আনপ্রোডাক্টিভ.. তারা তো এখন আর নোম্যাড (Nomad) না, ঘুরে বেড়ায় না এবং শিকার সংগ্রহও তারা সেভাবে আর করে না। তাহলে প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড থেকে কিছু রেখে দিতে হবে। এখন এই প্রোডাক্টিভ পিরিয়ড থেকে যা রেখে দিবে আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ডের জন্য, সেটা তো ডিস্ট্রিবিউট করতে হবে, ডিস্ট্রিবিউট কে করবে?


(শ্রোতাদের থেকে) পলিটিক্যাল অফিস।


একটা পলিটিক্যাল অফিস থাকতে হবে। এখন এই পলিটিক্যাল অফিস হোল্ডার কারা হবে? সাধারণত এটা দেখা যায় মুরুব্বিরা হন। আবার কিন্তু এরিক ফ্রমের প্যারেন্টিং এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণত এটা হন হচ্ছে মুরুব্বিরা। কারণ মুরিব্বিদের কাছে থেকেই তো আমরা শিখি, এগ্রিকালচারাল টুলগুলো পাই। তাইনা? আনপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে তারা আমাদের হাতে কিছু তুলে দেন। তারা আমাদেরকে ঐ সিকিউরিটি দেন। যেকারণে এটা বলছিলাম, ঐযে লিবারেলিজমের যে ডায়েলেক্টিক্সটা, সেটা বলতে গিয়েই। এখানে একটা মজার কথা বলেছেন ক্লদ মেয়াসুঁ, যে, ওখানে যারা ইয়াং পিপল ছিলো তারা তাদেরকে কি করতো, তারা যাতে এই মুরুব্বিদের কথা শোনে..


(শ্রোতাদের থেকে) ইয়াং মেইল?


ইয়াং মেইল, ইয়েস। তারা যাতে মুরুব্বিদের কথা শোনে, প্রোডাক্টিভ পিরিয়ডে তারা যাতে তাদের উৎপাদনের একটা অংশ কেন্দ্রীয় শস্যভান্ডারে তুলে দেয়, একথা যেন তারা শোনে এজন্য তারা একটা চমৎকার কিনশিপ মেকানিজম বের করলো, উইথ দ্যা হেল্প অফ ম্যারেজ। সেইটা কি? সেইটা হচ্ছে যে, ইয়াং মেইলরা যখন বিবাহ করবে তখন তাদেরকে কনেপণ দিতে হবে। সেই কনেপণটা কি? শস্য সে কোত্থেকে পাবে? শস্য পাওয়ার জন্য তাকে সিনিয়রদের কাছে যেতে হচ্ছে, রাইট? তার মানে, সিনিয়রদের সব কথা তাকে শুনতে হবে। এখন এখানে মেয়াসুঁ বলছেন, যে, ইয়াং পিপলরা, তখন তো জমির কোন অভাব ছিলো না, এতো মানুষ তো ছিল না, তাইনা? এবানডেন্ড ল্যান্ড, রাইট? আর উৎপাদন করতে যে জিনিসপত্র লাগে, যে মিন্‌স অফ প্রোডাকশন। এটাও তো বানানো এমন কিছু সোজা না-যে ঐ বিদ্যার জন্য আমার সিনিয়রদের কাছে মাথা পেতে রাখতে হবে সবসময়, ওগুলাও তো সোজা ছিল। কেন ইয়াং পিপলরা বের হয়ে গেলো না? এবং কি হচ্ছে, খেয়াল করি আমরা যদি আবার ম্যারেজের কথায় আসি, যে আমার একটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছে এবং আমি তার বাবার কাছে গেলাম, যেয়ে বললাম যে “আমি আমার মুরুব্বিদেরকে মানি না বা মানব না, আমার কাছে কোন ব্রাইডওয়েলথ নাই, আপনার মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে, আমরা বিয়ে করি।” উনি কি দিবেন? কারণ তার কাউন্টারপার্টকে চ্যালেঞ্জ করলে তার কমিউনিটিতে কিন্তু তার অথরিটি উড বি চ্যালেঞ্জড, রাইট? তো এখন তাদের জন্য উপায় কি ছিল? উপায় ছিল হচ্ছে হলো পালিয়ে আরেক জায়গায় চলে যাওয়া। নতুন করে একদম একা একা শুরু করা। কিন্তু, সেটা তো করতো না। বা খুব মানে, ঘটতো না সেরকম। কেন? তখন মেয়াসুঁ বলছেন, যে, ফ্রিডম হলো আসলে একটি রিলেটিভ কনসেপ্ট। কারণ হচ্ছে, ট্রু ফ্রিডম আসলে কোনটাকে বলবো? সত্যিকারের ফ্রিডম, সত্যিকারের লিবার্টি আমরা কোনটাকে বলবো? True freedom comes when it’s no longer required, তখনি আসলে সত্যিকারের ফ্রিডম আসবে, যখন আপনি এর এটা চাইবেন না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এটি চাইছেন, তার মানে হচ্ছে ল্যাক অফ ফ্রিডম আছে। সো ট্রু ফ্রিডম তখনই আসবে যখন এটার আর চাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না, অর্থাৎ এটা শূণ্য অবস্থায় চলে যাবে। সো, ফ্রিডমকে আসলে আমরা চিন্তাই করি যে আমার অধীনস্থ কেউ থাকবে, তার মানে হলো আমার ফ্রিডম আছে। সো ফ্রিডম ইজ অলওয়েজ রিলেটিভ। সো, তার মানে দেয়ার ইজ অ্যা ডায়ালেক্টিক ইন ফ্রিডম, ইন লিবার্টি। এইটা আমাদেরকে প্রথমত স্বীকার করতে হবে। তখন আমাদের কি হবে? তখন আমরা বুঝবো যে, উনি (হার্বাট মার্কুইজ) বলছেন, যে, No immediate transition from needs to political goals. এই যে আমরা প্রয়োজন বোধ করি যে “আমার এটা দরকার, আমার ওটা দরকার”, এখান থেকে আমার পলিটিক্যাল গোলে আমি চলে যাবো, এই যাওয়ার ব্যাপারে ইমিডিয়েট কোনো রাস্তা আসলে নাই, এটা অনেক দীর্ঘ রাস্তা এবং need people to comprehend the contradiction। এইযে কন্ট্রাডিকশনগুলোর কথা এতক্ষণ বলছিলাম বা উনারা বলছিলেন, এই কন্ট্রাডিকশনগুলোকে কম্প্রিহেন্ড করতে হবে। আমাদের কি হয়? বাংলাদেশে যদি আমরা এখন খেয়াল করি, বা সোশ্যাল মুভমেন্টগুলোর কথা যদি খেয়াল করি, আমি এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার আগেই কিছুদিন আগে চিন্তা করছিলাম যে আমাদের আন্দোলনগুলোর একটা খুব মজার ব্যাপার আছে। আমরা যখন কোন একটা কিছু নিয়ে আন্দোলনে নামি, বিশেষ করে আমরা যারা নিজেদেরকে সো কল্ড “সচেতনপন্থী” হিসেবে দাবি করি, তাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে যে আমরা নিজেদেরকে ছাড়া বাকি আর সবাইকে বেশ অসেচতন ভাবতে পছন্দ করি। আমাদের মধ্যে এধরনের একটা আত্মশ্লাঘা আছে। কিন্তু এই কন্ট্রাডিকশনগুলো, ডায়লেক্টিক্সটা মাথায় থাকলে কি হবে? প্রতিনিয়ত আমি আমার নিজের সীমা বুঝতে শিখবো। যে এখনো আসলে যথেষ্ট করা হয়নি বা এখনো আসলে নিজেকে, নিজের রিয়েল সেল্‌ফটাকে উন্মুক্ত করতে পারিনি। তখন ঐ শ্লাঘা অনেক কম আসবে। নাকটা নেমে যাবে, তাইনা? তো, তিনি বলছেন, তাঁর Counter Revolution and Revolt বইয়ের ৪৯ পাতায় বলছেন, revolution should revolutionize the human being, সবার আগে যেটা করতে হবে যে, মানুষের চরিত্রকে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে।


একের সাথে অন্যের আন্তঃসম্পর্ককে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে। তা না হলে শুধুমাত্র ইকোনমিকে কেন্দ্র করে একটা রেভ্যুলেশনের কথা চিন্তা করলে সেটা খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে। সেটা বেশিদিন টিকবে না। ফর এক্সাম্পল, সেক্সুয়াল রেভ্যুলেশন। একেবারে উদাহরণ দেই, আমরা যদি খেয়াল করি যে, এটা কিন্তু আমাদের কাছে.. স্পেশালি আমাদের উইমেন ফোকদের জন্য, একজন নারী যদি ভাবে যে সেক্সুয়াল লিবারেশন তার জন্য বেশ ইমান্সিপেটরি, কেন ইমান্সিপেটরি? সেক্সুয়াল লিবারেশন তার জন্য বেশ ইমান্সিপেটরি। পুরুষতো বহু আগেই নিজেরটা নিশ্চিত করে রেখেছিল। কিন্তু উইমেন ফোকদের জন্য যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে তার জন্য সে কেন এটাকে ইমান্সিপেটরি ভাবতে পারে? ঠিক একইভাবে, যেভাবে আমরা পুরুষরা ভাবি। যে, এখন আর আমার সেই মনোগ্যামাস সেক্সুয়াল বন্ডেজের মধ্যে বেঁধে রাখতে হবে না নিজেকে ইত্যাদি। কিন্তু, সেই নারীই যখন একজন লেসবিয়ানকে দেখে নাক শিটকাবে, তখন মার্কুইজ বলবেন, হলো না! এর মধ্য দিয়ে.. এই সেক্সুয়াল রেভ্যুলুশন দিয়ে আসলে হিউম্যান বীয়িংকে রেভ্যুলেশনাইজ করা যায় নি; হিউম্যান ন্যাচারকে রেভ্যুলেশনাইজ করা যায় নি। সো, সেইটাকে আসলে আগে রেভ্যুলেশনাইজ করতে হবে।


শেষ করবার আগে আমি একটা সাবধানতা দিয়ে শেষ করছি যেটা হার্বাট মার্কুইজ আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে, এই যেই যেই পথে তাঁরা রেভ্যুলেশনকে আনবার কথা চিন্তা করছেন, যে একের সাথে অন্যের সম্পর্ককে রেভ্যুলেশনাইজ করা, নানান ধরনের আন্দোলন, যেহেতু কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, প্রত্যেকটা আন্দোলনের কিন্তু ক্যাপিটালিস্ট কো-অপশন ঘটতে পারে। আরেকটা কন্ট্রাডিকশন আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে। যে, প্রত্যেকটা আন্দোলনকেই ক্যাপিটালিজম গিলে ফেলতে পারে। উইমেন লিবারেশন, এলজিবিটি মুভমেন্ট— যেকোন কিছুকেই ক্যাপিটালিজম কিন্তু কো-অপ্ট করে ফেলতে পারে। ফলে প্রত্যেকবারই আমাদের এখানে কোন ডায়ালেক্টিক্স প্রবেশ করছে, কোন কন্ট্রাডিকশন তৈরী হচ্ছে, আমাদেরকে স্টেপ ব্যাক করতে হবে; ওইটার খোঁজখবর নিতে হবে; এবং প্রয়োজনে নিজের তৈরী করা আন্দোলনকেই ক্রিটিসাইজ করতে হতে পারে। নিজের তৈরী করা আন্দোলনকেই ক্রিটিসাইজ করতে হতে পারে, সেই সাহস আমাদের থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিন্তু এই সাহস আমাদের থাকে না। কারণ, টোটালিট্যারিয়ানিজম থেকে আমরা শিখে ফেলেছি যে নিজের তৈরী করা আন্দোলনের ফসল ভোগ করাটাই হচ্ছে আগের কথা। ওইটাকে ক্রিটিসাইজ করতে গেলে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই যদি আমরা চিন্তা করি যে পেছন ফিরে নিজের তৈরী করা কোন আন্দোলনকেই আমরা কিন্তু ক্রিটিসাইজ করতে পারি না। বা, পুনর্পাঠ করতে পারি না। এক মুক্তিযুদ্ধকেই যদি কেউ পুনর্পাঠ করেছে, তো সেটা রীতিমতো দুঃসাহস হিসেবে বিবেচিত হয়; এবং নানানভাবে তাকে তকমায়িত করা হয়। যাই হোক, পুরো বিষয়টা এই আন্দোলনগুলোর পুঁজিবাদী কো-অপশন হতে পারে, এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এবং খুব বেশি করে প্রযোজ্য হয়— মানে আমি বলবো, আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে— উইমেন লিবারেশনের ক্ষেত্রে। কারণ এই মুভমেন্টটার— আমরা যদি সেই ক্লারা জেটকিনদের সময় থেকে চিন্তা করি— খুবই একটা সোশ্যালিস্ট ফেইজ ছিল; কিন্তু গ্রাজ্যুয়েলি সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ, পুঁজিবাদ এটাকে নানানভাবে কো-অপ্ট করে নিচ্ছে। সো, ওটাকে কিন্তু পুনর্পাঠ করবার প্রয়োজন হতে পারে। তো, এই পুনর্পাঠ করবার সাহস এবং সাবধানতা আমরা ধারণ করব, এটা বলেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।


— — — — —

১১ই আগস্ট, ২০১৮

ছবিঃ আলাপের পোস্টার; ইভেন্ট লিঙ্কঃ এখানে


প্রশ্নোত্তর পর্ব


শ্রোতা: কি এবসোলুউট হচ্ছিল, এটাই আমার তখন মনে হচ্ছিল আপনি যখন ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের দায়িত্বগুলোই বারবার বলছিলেন তারপরের বিষয়গুলো আনছিলেন। ওইখানে পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের আসলে জায়গাটা কি? মানে সেল্ফ ক্রিটিক করাটা কি পলিটিকাল কারেক্টনেস এখানে হবে? না কি? পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের জায়গাটা কোথায় এগুলো ডাইকোটমি ও কন্ট্রাডিকশন মাঝখানে কি? পলিটিক্যাল হওয়াটা কি পলিটিক্যাল কারেক্টনেস......

রাশীদ মাহমুদ: আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি একটা একটা করে বলি যতটুকু পারি আর কি। [ফাহমিদ আল] জায়িদ যেটা বললো, এই যে সিমপ্যাথি টা! আমি কিন্তু বলার মাঝখানেই এটা একবার এটা বলেই দিয়েছি যে, পোস্ট মর্ডানিস্টরা যেভাবে পুরো বিষয়টাকে রাডিক্যালাইজড করেছে, আমার নিজের কাছেও মনে হয়েছে যে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল কখনোই সেভাবে রাডিক্যালাইজড করেনি। র‍্যাদার এই যে অবজেক্টিভ রিজনিংয়ে যে আমরা অসমর্থ হয়ে যাচ্ছি সেটা নিয়ে ধরনের এক ধরনের হতাশাই তাঁদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং তাঁরা আসলে অবজেক্টিভ রিজনিংয়েরই পক্ষে এবং সাবজেক্টিভ রিজনিংয়ের ডমিনেশনের কারণে কিভাবে কালচার ইন্ডাস্ট্রি আমাদের মাথা-মগজ দখল করবার রাস্তা পাচ্ছে সেটাই আমার কাছে মনে হচ্ছে যে তাঁরা বারবার তুলে ধরতে চাচ্ছেন। এবং অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের প্রতি তাঁরা সিমপ্যাথাইজড এই কারণে আমার মনে হয়েছে যে অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত কেন আসলে জাস্টিস শ্যুড প্রিভেভেলড, আনজাস্টিস কেন থাকা উচিৎ না, এইযে উচিৎ-অনুচিতের উত্তর গুলো আছে। এবং এটাকে যদি এইভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা নিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত তাহলে এটা একটা, মানে আনলিমিটেড বিতর্কের জায়গায় রেটোরিকে চলে যাবে এবং সেজন্যই তারা এটাকে সেকেন্ড মডার্নিটি হিসেবে দেখা বা এটা যে এখনো একটা আনফিনিশড প্রমিস যে রয়ে গেছে, এই সম্ভাবনার কথা তাঁরা বলতে চান। যে, [ইয়ুর্গেন] হেবারমাস, তাঁর নাম আসেনি আজকে। উনিও কিন্তু দেখাচ্ছেন যে এখন পলিটিক্স কিরকম হয়ে গেছে, এখন পলিটিক্স হয়ে গেছে স্পেক্টেটর পলিটিক্স, তাইনা? একটা সময় এবং যদিও এটা নিয়ে সমালোচনা আছে হেবারমাস সম্পর্কে। উনি বলেন যে নাইন্টিন সেঞ্চুরিতে ডেমোক্রেসি ছিল হচ্ছে যে অ্যাক্টিভ-পার্টিসিপেটরি-ডেমোক্রেসি এবং দিনদিন নাকি এটা বিংশ শতকে এসে স্পেক্টেটর পলিটিক্স হয়ে যাচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে নাইন্টিন সেঞ্চুরি ছিল উনি বলছেন যে অনেক লেইজেস ফেয়ার ভিত্তিক, রাষ্ট্রের ইন্টারভেনশন মানে একেবারেই ছিলনা বললেই চলে বাজারে; কিন্তু এখন দিন দিন রাষ্ট্রের ইন্টারফেয়ার, বাজারে ইন্টার ফেয়ারনেস বেড়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র ইকোনমিক ক্ষেত্রে ইন্টারেস্টেড হয়ে পড়ছে, আর যেখানে রাষ্ট্র থাকছে না সেখানে বিগ বিগ কর্পোরেশন হয়ে যাচ্ছে যেটা আসলে হওয়ার কথা বা হওয়া উচিৎ ছিল না। তো, ফলে ঐ একি জায়গা থেকে কিন্তু হেবারমাসও বলছেন স্পেক্টেটর পলিটিক্সে কি হচ্ছে, আমরা রীতিমতো দর্শকে পরিণত হচ্ছি। সো, আমাদের দর্শকে পরিণত হওয়া উচিৎ না এবং দর্শকে মানে আমরা যদি মানে সাব্জেক্টিভ রিজনিং যদি আমাদের ওপর ডমিনেন্ট না করে তাহলে কি হবে যে আমরা অবজেক্টিভ রিজনিংয়ের রিল্‌মটাকে ধরতে পারবো। বা ওই জায়গাতে আমরা নিবিষ্ট করতে পারব নিজেদেরকে। সেই কারণেই কিন্তু তাঁরা বলছেন যে এটা এক ধরনের যে এটা স্টিল অন্ডফিনিশড। যদি আমরা ধরতে পারি ঐটা তাহলে আবার আমরা এটাকে পরিপূর্ণ করতে পারব। এরকম কারণেই তাদের সিম্প্যাথিটা কাজ করে এবং আমি কিন্তু এটা বক্তৃতার মাঝখানে বলেছিলাম যে, ইনক্যাপাবল অফ— ওই যে বলছেন যে মানুষ ইনক্যাপাবল কনসিভিং দা অবজেক্টিভ রিজন। হ্যাঁ, ইনক্যাপাবল শব্দটা এইজন্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে। আর আপনার নামটা প্লিজ!


শ্রোতা : আবিদ [সরকার]।

রাশীদ মাহমুদ: হ্যাঁ, আবিদ। দুঃখিত যে, খুব চমৎকার একটা অবজার্ভেশন যে, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল..ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল হয়ে গেছে। আচ্ছা তো, এটা পলিটিক্যাল কারেক্টনেস— আমি ওখানে বসে চিন্তা করছিলাম যে শেষটা কেন ওইটা দিয়ে করলাম না কারণ শুরুটা তো এটা দিয়ে হয়েছিল। তো, যেটা হয়েছে, তাহলে এখন মানে ওটা দিয়েই শেষ করে নিই। পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বলতে তাঁরা শেষ পর্যন্ত বোঝাতে চাচ্ছেন এবং উনার প্রশ্নটাও এর সাথে কানেক্টেড। যে, সেল্ফ ক্রিটিক কিনা, সেল্ফ ক্রিটিক দিয়েই আমরা সেটা ধরবো কিনা। আমার নিজের মতামত হচ্ছে যে, হ্যাঁ! সেল্ফ ক্রিটিক বা পুরো প্রক্রিয়াটার যে ডায়ালেক্টিক বা যে কোন প্রক্রিয়ার সেটা যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তা নয় বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তা নয়, এটা সামাজিক ক্ষেত্রেও হতে পারে। যে কোন প্রক্রিয়ার যে ডায়ালেক্টিক্সটা সে ডায়ালেক্টিক্সটা ধরতে পারা এবং সে ডায়ালেক্টিক্সে নিজেকে অবস্থিত করতে পারা, এই সক্ষমতা অর্জন করা-যে আমি একটা জায়গাতে আমি জাস্টিসের জন্য যুদ্ধ করছি। এইযে একটু আগে আমরা যেভাবে ফুকো-সাঈদের এনকাউন্টারটা, আমরা [ফাহমিদ আল] জায়িদের কাছ থেকে দেখলাম, যে, একটা অংশ আমরা ভেবে বসে আছি যে ফুকো যথেষ্ট র‍্যাডিক্যাল এবং যেকোন রেভ্যুলেশনের পক্ষে তাঁকে আমরা যথেষ্ট কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু [এডওয়ার্ড] সাঈদ তার একটা সীমা দেখিয়ে দিচ্ছেন [দেখুন, এখানে]; কিন্তু তার মানে কিন্তু এইনা যে ফুকোকে বাতিল করে ফেলতে হবে। তার মানে হচ্ছে হলো গিয়ে, নতুন কর্তব্যকর্ম স্থির করতে হবে। হ্যাঁ! এইভাবে যখন আমরা চিন্তা করবো, চিন্তা করবার ক্ষেত্রে আমাকে পিছন ফিরে দেখতে হবে যে এই ধরনের খামতি আমার পূর্বসূরীদের মধ্যে রয়ে গিগেছে। সুতরাং সেই খামতিটাকে মাথায় নিয়ে আমাকে নিজের অবস্থানটাকে চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ ওই যে সেল্ফ-রিফ্লেক্সিভিটি, আমি সেল্ফ-ক্রিটিক না বলে রিফ্লেক্সিভিটির জায়গাটা-যে নিজেকে প্রতিস্থাপন করা একটা জায়গাতে। এবং পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের, এই কারণে আমি বাংলা করিনি, যে, কারেক্টনেসের বাংলা এখানে কোনভাবেই তারা যথার্থতা বা সঠিকতা বা শুদ্ধতাবাদ হিসেবে না; র‍্যাদার এইটা যে একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস এই ডায়ালেক্টিক্সটাকে ধরে এগোনো এবং নিজেকে সেখানে প্রতিস্থাপন করে নিজের সীমাটা চিনে নেওয়া, এইটা যে একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস এবং এইটা যে একটা কাইন্ড অফ নেভার ইন্ডিং প্রসেস এবং ক্রিটিক এইযে ক্রিটিক্যাল থিওরি, ক্রিটিক আবাউট হোয়াট? যে, ক্রিটিক মানে, এটা হচ্ছে যে টু রিমেইন এভার ক্রিটিকাল! টু রিমেইন এভার ক্রিটিকাল! তো, এইটা যে একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস এই কন্টিনিউইটিটা ধরতে পারাটাই হচ্ছিলো কি তাঁদের পলিটিকাল কারেক্টনেসের টার্গেট। যে, এটা একটা নেভার একটা এন্ডিং জব। এই!


প্রকাশঃ পহেলা ভাদ্র, ১৪২৮:::১৬ই আগস্ট, ২০২১