হত্যা করার ক্ষমতা করোনা’য় গণতান্ত্রিক রূপ পেল

আশিল এমবেম্বে


[আশিল এমবেম্বে(Achille Mbembe) ক্যামেরুনীয় দার্শনিক। জৈব-রাজনীতি (biopolitics) প্যারাডাইমের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে এবং ‘মারণ-রাজনীতি’ (necropolitics) ধারণা হাজির করে এই চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে দার্শনিক মহলে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন। উত্তর-উপনিবেশিক তত্ত্বেও গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। চলতি বছরেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর Brutalisme বইটি , ফরাসি ভাষায়। তিনি ডাকারের Felwine Sarr of Atelier's la Perse’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ‘শ্বাস নেয়ার চিরন্তন অধিকার’ শীর্ষক লেখাটির পূর্বেই গত ৩১শে মার্চে করোনাভাইরাস মহামারী প্রসঙ্গে এমবেম্বের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। গাউসো’জ(GaúchaZH) নামের এক ব্রাজিলীয় সংবাদপত্রে, Pandemia democratizou poder de matar, diz autor da teoria da 'necropolítica শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। Autonomies ওয়েব পোর্টালে, গত ২৪শে এপ্রিল এমবেম্বের এই লেখাটির ইংরেজি অনুবাদ Achille Mbembe: The necropolitics of a pandemic শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এমবেম্বের এই সাক্ষাৎকারটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ আল মামুন। আবদুল্লাহ আল মামুন পেশায় শিক্ষক, ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান।]


সংবাদপত্র প্রদত্ত ভূমিকা

“... কে বাঁচবে আর কে মরবে, তা ঠিক করে দেবার ক্ষমতা মারফত সার্বভৌম তার চূড়ান্ত রূপ প্রদর্শন করে।”

- আশিল এমবেম্বে,

মারণ-রাজনীতি বা নেক্রোপলিটিক্স (necropolitics, জন সংস্কৃতি জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ, ২০০৩)


“মারণ-রাজনীতি”(nacropolitics)র ধারণা উদ্ভাবন ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই মূলত আশিল এমবেম্বে সবার পরিচিত। একই শিরোনামের এক রচনায় তিনি বিশ্লেষণী উপায়ে আমাদের সামনে হাজির করেন—কে বাঁচবে, কে মরবে আর মরলেও কিভাবে মরবে, তা ঠিক করে সরকার।


এই ধারণার আলোকে বিচার করলে বোঝা যায়, ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সবার জন্য সমান নয়। বৃদ্ধদের চাইতে তরুণদের সেবা-শ্রশ্রুষা দেয়ার ঝোঁক যেন একটু বেশী। আর আপনি জাইর বোলসোনারো’র (Jair Bolsonaro, ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট) মত কিছু মানুষ দেখবেন যারা রীতিমতো জোর দিয়ে বলেন, উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য কিছু মানুষের মৃত্যুতে তো আর অর্থনীতির চাকা থেমে থাকতে পারেনা। “কিছু লোক মারা যাবে? হ্যাঁ, মারা যাবে বটে” সোজাসাপ্টা জবাব তাঁর। ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, “আফসোসের ব্যাপার, এটাই জীবন।” “জীবন মৃত্যুর এই অসমান সুযোগ বন্টনই হলো পুঁজিবাদের খেলা”—এমনটাই আশিল এমবেম্বের দাবি। সত্যি বলতে কি, স্যাক্রিফাইস বা বলি দেয়া’র নীতির উপর নব্য-উদারনীতিবাদ(neo-liberalism ) দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদের চাইতে কেউ কেউ অধিক যোগ্যতর—এসব ধারণা নব্য-উদারনীতিবাদে নতুন কিছু নয়। এবং মূল্য নাই যার তাকে ছুঁড়ে ফেলা যায়, সে খরচাযোগ্য।