শ্বাস নেয়ার চিরন্তন অধিকার
ইতোমধ্যে অনেকেই “কোভিড-১৯ পরবর্তী” প্রসঙ্গে আলোচনা তুলেছে। আর হবেই না বা কেন? দীর্ঘকালের সামগ্রিক অবজ্ঞা, অব্যবস্থাপনায়, একদিকের পৃথিবীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খারাপটা এখনো দেখতে বাকী হয়তো। এই যে, হাসপাতালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে শয্যা-সংকট, কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের অভাব, পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সমস্যা, মাস্কবিহীন করোনা আক্রান্তদের আলাদা রাখার জায়গার সংকীর্ণতা—কোন কিছুই ছাড় দেয়ার মত অবস্থায় নেই।
১
প্রবাসের কারো মৃত্যু নিয়ে উঁহু আহা করা আর নিজভূমে নিজের পঁচা লাশের গন্ধে হতচকিত হয়ে উঠা এক নয়। জীবনের সামনে দাঁড়িয়ে, অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়ে, অনেকেই এই বন্দিদশায় মৃত্যু ভয়ে কম্পিত।
যাপিত জীবনকে বর্তমানেইযাপিত জীবনকে বর্তমানেই[i] খতিয়ে দেখা উচিৎ আরেকবার। খতিয়ে দেখতে হবে, কিভাবে সকলকে সাথে নিয়ে [মানে জীব, জড়, ভাইরাস সকল কিছু] কাটিয়েছি এই জীবন। জীববিজ্ঞানে অপচিতিমূলক বিপাকে (Catabolic period) নিয়ে [মানে জীব, জড়, ভাইরাস সকল কিছু] কাটিয়েছি এই জীবন। জীববিজ্ঞানে অপচিতিমূলক বিপাকে (Catabolic period)[ii] অংশে দেখানো হয় কিভাবে খাদ্য-সার বর্জ্য হতে আলাদা হয়ে যায়; তেমনি এই ভয়াবহ রোগও রোগীকে চরম আলাদা করে নেয়। যেইভাবে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাইজেশন [ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া] মানুষকে ঘরে ঘরে আবদ্ধ করেছে; এই রোগও তেমনি।
চাইলে এর থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করাই যায়, কিন্তু সমস্যা হল, ফলাফল একই—সবই নিজের শরীরের বা দেহের দিকে ধেয়ে আসে। গাছের কলম(graft) করার সময় যেভাবে এক গাছের অংশকে আরেক গাছের সাথে জুড়ে দেয়া হয়, তেমনি আমরাও চেয়েছি এই বোঝাকে অন্য কোন মাধ্যমের ঘাড়ে তুলে দিতে। যাতে দেহকে নিজ হতে সক্রিয় কিছু মনে না হয়। যেন মনে হয় এটি একটি বস্তু দেহ(object body), যন্ত্র দেহ, ডিজিটাল কিংবা Ontophanic [ডিজিটাল বিশ্ব সম্পর্কিত একধরনের ফেনোমেনোলজিক্যাল ধারণা] দেহের ব্যাপার। এতো কিছু করে লাভের লাভ কি হল? বিশাল এবং ভয়ানক এক হা নিয়ে ফিরে এলো এটি। এ যেন সংক্রমণের এক মহোৎসব— যা নিজেই নিজের আয়োজন করে, অনেকটা পরাগরেণু কিংবা ছত্রাকের নিজগুণে অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার মতো।
অগ্নিপরীক্ষা তো শুধু আমাদের নয়, সাথে অনেকেই আছে— এই কথা ভেবেও শান্তি পাওয়ার উপায় নেই। কেননা সকল প্রজাতির সাথে মিলে মিশে আমরা বাঁচতেও শিখিনি। ভাবতেও শিখিনি পৃথিবীর কি পরিমাণ ক্ষতি আমরা মানুষেরা করে চলেছি। সত্যি বলতে কি স্বাভাবিক মৃত্যু কিভাবে বরণ করতে হবে তাও আমরা শিখিনি। নয়া দুনিয়া নির্মাণের নেশায় মত্ত হয়ে, শতবর্ষের “শিল্প প্রতিযোগিতায়” মেতে আমরা শুধু শিখেছি কিভাবে অন্য প্রজাতির বিরুদ্ধে যমদূতের ভূমিকা পালন করা যায়।আর কিভাবে অস্তিত্ববিষয়ক(Ontological) খুৎবা দিয়ে অস্তিত্বের বিনাশের উৎসবে মেতে উঠা যায়।
মনে হয়না, মৃত্যু নিয়ে এই খেলা বেশিদিন খেলা সম্ভব। নিজের জায়গায়ও মনে হয়না মরার সৌভাগ্য হবে। সরাসরি নিজের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করার মতোই শুধু অভিশাপ নেমে আসবেনা, দাফন কিংবা মুখাগ্নি এসব কিছু হবে কিনা তাও সন্দেহ। একটি কোষ যেমন সময়ে সময়ে নিজের ভেতরের উপাদান খালাসমনে হয়না, মৃত্যু নিয়ে এই খেলা বেশিদিন খেলা সম্ভব। নিজের জায়গায়ও মনে হয়না মরার সৌভাগ্য হবে। সরাসরি নিজের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করার মতোই শুধু অভিশাপ নেমে আসবেনা, দাফন কিংবা মুখাগ্নি এসব কিছু হবে কিনা তাও সন্দেহ। একটি কোষ যেমন সময়ে সময়ে নিজের ভেতরের উপাদান খালাস[iii] করে, তেমনি এক সময়ের ফোঁড়ে আছি আমরা। আমাদের সকল গোষ্ঠী(community) আজ মৃত্যুমুখে। যে গোষ্ঠী একজন মৃত মানুষের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া আয়োজনে ব্যর্থ কিংবা একজন মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ বিদায়টুকু জানানো যে গোষ্ঠীর পক্ষে অসম্ভব, সেই গোষ্ঠী সম্পর্কে সুধারণা রাখাও অসম্ভব।
অবশ্য গোষ্ঠী বলুন কিংবা অবশ্য গোষ্ঠী বলুন কিংবা in-common[iv] বলুন, মানুষকে শেষ বিদায় বলা বা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে না। in-common গড়ে উঠে শর্তহীনভাবে মিলেমিশে থাকার সম্ভাবনার উপর, প্রত্যেকবার যা চরম স্বকীয়তার সাথে অসংখ্যবার অপরিসীম ও অমূল্য উপায়ে নিজেই নিজের শক্তি যোগাবে।
২
হায়! আকাশের ওপাড়ে আর আকাশ নেই। অবিচার আর অসাম্যের ফাঁসে মানবতা বেকায়দায়। পৃথিবী থমকে গেছে সবখানে।
তারপরেও এই অবস্থায় যদি সুদিন (a day after) আসেও, তা যে একই পুরনো ধারার বিপ্লব-পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বা Ancience Economie [Ancienne Économie , অঁসিয়েন ইকোনমি] দ্বারা আসবে তা নয়। এইখানে সুদিন বলতে এমন দিন বোঝানো হচ্ছে যেদিন পৃথিবীর সকলে প্রজাতি, জাতি, লিঙ্গ, নাগরিকত্ব, ধর্ম এসবের ভেদাভেদ ভূলে এক কাতারে দাঁড়াবে। তবে এই সুদিনের মুখ দেখতে হলে চরম-পন্থি ধারার কল্পনা প্রয়োজন। বোঝাই যায়, এই সুদিনে যেতে হলে এক বিশাল ভাঙনের দরকার।
কথা হল ফাটল মেরামত করলেই কিন্তু হবে না। এই জলন্ত আগ্নেয়গিরির ভেতর থেকে আক্ষরিক অর্থে সবকিছু নতুনভাবে তৈরি করতে হবে। আর শুরু করতে হবে--সামাজিক অবস্থান থেকে তা শুরু করলে ভালো হয়। মানতেই হয় বর্তমান প্রেক্ষিতে অগ্নিবলয়ের মাঝেই আমাদের বসবাস। একসময়ের কর্মক্ষেত্র, বাজার-সদাই, খবরাখবর, যোগাযোগ, বেড়ে উঠা, শিষ্টাচার, কথোপকথন, আদান-প্রদান, সম্মিলিত ভোজ, ইবাদত, পূজা-অর্চনা, অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার আয়োজন--সবই এমন স্ক্রীন বা পর্দার ইন্টারফেসের [interface, একটা ডিভাইস বা প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীকে কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে সমর্থ করে] খেলা। বৃহত্তর পরিসরে ভাবলে, ডিজিটাল ব্যাপারটাই হল পৃথিবীর জন্যে বেড়ে উঠা এক বিস্ফোরক। তুলনা করতে পারেন একে কোন গিরিখাতের সাথে, অসমান চন্দ্রপৃষ্ঠের সাথে কিংবা সৈনিকদের তৈরী বাংকারের সাথে যা নারী-পুরুষ সকলকেই উদাত্ত আহ্বান জানায় এর মাঝে আত্মগোপন করতে এবং বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতে।
অনেকেই বলে থাকে, সবকিছু যত ডিজিটাল হবে, আমাদের এই রক্তমাংসের নশ্বর শরীর তার ঘাত-প্রতিঘাত থেকে ততই মুক্ত হবে। আর ধরুন, সবকিছু যখন ডিজিটাল-এর কব্জায়, তখন আমরা এক কৃত্রিম বা সিনথেটিক মহাবিশ্বের বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হব। অকল্পনীয়ভাবে আমাদের দেহের চলাচল হবে লুকিং গ্লাস মারফত, আর শরীরের পাপ তো কমবেই। কিন্তু আমিও জানি, আপনিও জানেন, এটি নিছক কল্পনা। শরীর ছাড়া যেমন মানুষ হয়না; সমাজ, গোষ্ঠী ব্যতীত স্বাধীনতার কোন অর্থ থাকে না। সর্বোপরি, পৃথিবী বিক্রি করে দিয়ে স্বাধীনতা কেনাও সম্ভব নয়।
৩
শুরুটা গোড়া থেকেই হোক। বেঁচেবর্তে থাকার জন্যে এই জীবমণ্ডলে যত প্রাণ আছে একবার তাদের দিকে মুখ ফেরানো দরকার। তাদের বেঁচে থাকার উৎস আর বাসস্থান এই দুইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরী। স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা তলপেটের ভেতর, আধুনিকতা এখন নিজেই নিজের সাথে বিরামহীন যুদ্ধে লিপ্ত। এই যুদ্ধের শেষ হতেও অনেক দেরী। এই ডিজিটাল যুদ্ধ দারিদ্র-প্রসবকারী আর সংহতির জাল ছিন্নকারী।
যুদ্ধ শেষে, পৃথিবীর সকল প্রজাতি যে এক অভয়ারণ্যে বাস করার সুযোগ পাবে তা কিন্তু নয়। বরং বিপদ আরও ঘনিয়ে আসবে। এক দুশ্চিন্তা আর নৃশংসতার(brutality)যুদ্ধ শেষে, পৃথিবীর সকল প্রজাতি যে এক অভয়ারণ্যে বাস করার সুযোগ পাবে তা কিন্তু নয়। বরং বিপদ আরও ঘনিয়ে আসবে। এক দুশ্চিন্তা আর নৃশংসতার(brutality)[১] রাজ্যে প্রবেশ করবে পৃথিবী।
ভূ-রাজনীতির সূত্র অনুযায়ী, ক্ষমতার যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হবে। ভৌত অবকাঠামোর অভাবে, পৃথিবী ভয়ানকভাবে বিভক্ত হবে। আর বিভক্তিরেখাও হবে গভীরতর। বাইরের শত্রু হতে বাঁচার জন্যে অনেক রাষ্ট্রই নিজের সীমানা শক্তিশালী করবে। সাংবিধানিক উপায়ে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার বেড়ে যাবে শুধু তাই নয়, আইনগতভাবে একে আড়াল দেয়া হবে। স্ক্রীন বা পর্দার ওপাড়ে গোষ্ঠীগুলোর গোপন জীবনযাপনই স্বাভাবিক মনে হবে।
আফ্রিকাসহ পৃথিবীর দক্ষিণের অনেক জায়গায় খনিজ শক্তি রপ্তানি, কৃষি সম্প্রসারণ, জোরপূর্বক জমি ক্রয় বিক্রয়, বন-ধ্বংস এসব জিনিস বাড়বে বৈ কমবে না। বাড়বে এই কারণে যে কম্পিউটার, সুপারকম্পিউটারের চিপ্সের খাদ্য আর শক্তি ঐ সকল কিছু হতেই আসে কিনা। এই বৈশ্বিক কম্পিউটিং[Computing, তথ্য প্রক্রিয়াকরণে কম্পিউটারের ব্যবহার]-এর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে, এর জন্যে শক্তি আর কাঁচামালের যোগান দিতে গিয়ে মানুষের চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। পৃথিবীর তাবৎ কিছুর মাঝে দূরত্ব নির্মাণ করা হবে, যাতে সকল বালা মুসিবত থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর এক সময় এটাই স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে। সকল রোগ সংক্রমণ আর প্রতিরোধ, টিকাদান ইত্যাদি তত্ত্বের উপর ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন যে ভাঙনের(Catabolic) বা মোটাদাগে বললে বিযুক্তিকরণের স্বপ্ন জেগে উঠেছে, তা আমাদের পরিবেশবাদী খেয়ালকে পাত্তা দেয়না; মনেও হয়না সমস্যার কানাগলি থেকে এই স্বপ্ন আমাদের পথ দেখাবে।
৪
যুদ্ধে প্রতিপক্ষের শ্বাস রোধের চেষ্টা ব্যতিক্রম কিছু নয়। কোভিড-১৯’ও তেমনই; হয় আমাদের শ্বাস নিতে ঝামেলা করে, না হয় শরীরের টিস্যুগুলো যাতে বেঁচে ফিরতে না পারে তার ব্যবস্থা করে। আরে, শ্বসনের কাজটা কি, যদি রক্ত আর টিস্যুর মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের লেনাদেনা ঘটাতে না পারে? কিন্তু যে হারে পৃথিবীর বুকে সব ঘটছে আর সম্পদ উজাড়ের হিরিক পড়েছে, ওই সময় থেকে কি আমরা বেশী দূরে যেদিন অক্সিজেনের চাইতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেশী হয়ে যাবে?
এই ভাইরাস আসার আগেও কিন্তু মানুষের শ্বাসরোধ হয়ে মরার দশা হয়েছিল। যুদ্ধই যদি বলেন, তবে তা একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে তা হতে পারে না। শুধু শ্বাসরোধ করে এমন অভিযোগও এর বিরুদ্ধে দেওয়া যাবে না। এই হিসাবে তো, পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনার প্রায় সকল কিছু যা পুরো বিশ্বের মানুষকে, সকল প্রজাতিকে আবদ্ধ করে, শ্বাসরোধ করে মারার উপক্রম করেছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া উচিৎ। সম্মিলিতভাবে, নানারকম যোগ বিয়োগ বাদ দিয়ে, সর্বোপরি, শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিছক জৈবিক কার্যক্রমের বাইরে এসে একবার দেখা উচিৎ। একেই আমি শ্বাস নেয়ার চিরন্তন অধিকার বলছি।
ব্যক্তি কিংবা নির্দিষ্ট কোন প্রাণীর দৃষ্টিকোণ হতে কিংবা সামগ্রীক কোন দৃষ্টিকোণ হতে অধিকার মাপাও যায়না, সংজ্ঞায়িতও করা যায়না। শ্বাস নেয়ার সার্বজনীন অধিকারকে বরং অস্তিত্বের মৌলিক হিসেবে ধরে নেয়া ভালো। এটি এমন কিছু যা বাজেয়াপ্ত করা যাবেনা, যার উপর কর্তৃত্ব আরোপ করা যাবেনা। একে সর্বোৎকৃষ্ট সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে ভাবতে হবে। সর্বোপরি, এটাই হবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আদি অধিকার (originary right)। এ এমন এক অধিকার যা বিশ্বের সকল গোষ্ঠীর, সকল বাসিন্দার থাকবে; সকল মানুষের সাথে অন্য সমস্ত কিছুর তো বটেই।(originary right)। এ এমন এক অধিকার যা বিশ্বের সকল গোষ্ঠীর, সকল বাসিন্দার থাকবে; সকল মানুষের সাথে অন্য সমস্ত কিছুর তো বটেই।[২]
______________
১৩ই এপ্রিল, ২০২০
দোহাই
[১] বিশ শতকের মধ্যভাগে স্থাপত্যকলার শব্দের নাড়ি ধরে আমি 'brutalisme' বা 'নৃশংসতার' ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছি। আমার মতে, brutalisme এক চলমান প্রক্রিয়া, যার উপর ভিত্তি করে ক্ষমতা মাথা তোলে, প্রস্ফুটিত হয়, রূপ বদলায়, দাপিয়ে বেড়ায়। আবার geomorphic(ভূপৃষ্ঠগঠনকারী) শক্তি হিসেবে নিজেই নিজের জন্ম দেয়। কিভাবে? "ফাটল সৃষ্টি করে",/"ভূগর্ভ উজার করে দিয়ে","ড্রিল করে","আর যাবতীয় অর্গানিক বস্তু লুটপাট করে", এক কথায় একে আমি বলি "রিক্ততা"(depletion)।(আশিল এমবেম্বে, Brutalisme, প্যারিস, ২০২০, পৃষ্ঠা ৯, ১০, ১১)
[২] দেখুন, Sarah Vanuxem, La propriété de la Terre (প্যারিস, ২০১৮), এবং Marin Schaffner, Un sol commun. Lutter, habiter, penser (প্যারিস, ২০১৯)
অনুবাদকের টীকা
[i] ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের jetztzeit (here and now, এই ক্ষণে-এই জায়গায়, বর্তমান, কিম্বা পারভেজ আলম অনূদিত ওয়াক্ত) অর্থেই বলতে চাচ্ছেন।
[ii] অপচিতিমূলক বিপাক (Catabolic period): শ্বসন প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু (জৈব যৌগ) বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল উপাদানে (অজৈব যৌগ) পরিণত হয় । এতে কোষের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায় ও শক্তির মুক্তি ঘটে। একারণে শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক বলা হয় । অপচিতি অর্থ দেহকোষের ভাঙন বা ক্ষয়; এই শব্দটি এসেছে ‘অপচিত’ থেকে যার অর্থ ক্ষয়িত/ব্যয়িত।
[iii] নতুন ও সুস্থ কোষ তৈরি করার জন্য নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্থ কোষের অপসারণ, যাকে জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় অটোফেজি(autophagy) বলে।
[iv] in-common: এমবেম্বে তাঁর Bodies and Borders নামক আলোচনায় জানাচ্ছেন, সীমানা নির্ধারিত হয় মূলত এক জনগোষ্ঠীর সাথে আরেক জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধের অমিলের সূত্র ধরে। মানে ঐ ভূখন্ড তৈরীর সময় ঐ এলাকার মানুষের নিজেদের মাঝে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক থাকে, যাকে এমবেম্বে in-common বলছে।
প্রথম প্রকাশঃ ২রা মে, ২০২০
সর্বশেষ সংশোধনঃ ২রা মে, ২০২০
লিঙ্কঃ shorturl.at/chlsR