কোভিড-১৯ এবং পুঁজির সার্কিটসমূহ

রব ওয়ালেস, অ্যালেক্স লিবমান, রড্রিক ওয়ালেস ও লুইস ফার্নান্দো চ্যাভেস



[বিখ্যাত মান্থলি রিভিয়্যু পত্রিকার ২০২০ সনের মে সংখ্যায় রব ওয়ালেস, অ্যালেক্স লিবমান, রড্রিক ওয়ালেস ও লুইস ফার্নান্দো চ্যাভেসের যৌথভাবে লিখিত Covid-19 and Circuits of capital প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। লেখকদের মধ্যে রব ওয়ালেস একজন এপিডেমিওলজিস্ট; অ্যালেক্স লিবমান রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব ভূগোল নিয়ে পিএইচডি করছেন; ফার্নান্দো চ্যাভেস একজন ডিজিজ ইকোলজিস্ট এবং তিনি কোস্টারিকা পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউটের গবেষক ছিলেন; এবং রড্রিক ওয়ালেস কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক স্টেট সাইকিয়াট্রিক ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি বিভাগের গবেষণারত বিজ্ঞানী। মান্থলি রিভিয়্যুর ৭২ তম খণ্ডের ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত এই লেখাটি অনুবাদ করেছেন সুজন চন্দ্র। সুজন চন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।]


হিসাবনিকাশ


২০০২ সালের পর থেকে করোনাভাইরাস SARS-COV-2 এর ফলে সংগঠিত দ্বিতীয় তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হচ্ছে কোভিড-১৯, যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক মহামারী। মার্চের শেষের দিক থেকে বড় বড় শহরগুলিকে থমকে দেয় এবং একের পর এক হাসপাতালগুলিকে অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করে, দিনের পর দিন রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে।


চীন প্রথম এটার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে এনেছে এবং বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ইউরোপ—বিশেষত ইতালি, স্পেন এবং ক্রমবর্ধমানভাবে অন্যান্য দেশগুলিও প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই এত এত মৃত্যুভার নিতে পারছে না। লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় মাত্র সংক্রমিত হতে শুরু করেছে… কিছু কিছু দেশ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী দেশ) অদূর ভবিষ্যৎ খুব দুর্বল দেখাচ্ছে। প্রাদুর্ভাব মে মাস অবধি শিখড়ে উঠেনি, ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক সুরক্ষা সরঞ্জাম কমিয়ে দেয়া নিয়ে আন্দোলন করে চলেছেন। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষাকেন্দ্রগুলি (Centers for Disease Control and Protection-CDC) নার্সদের খুব দুঃখজনকভাবে ব্যান্ডেজ ও স্কার্ফকে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। নার্সেরা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন –“সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে”।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইতিমধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদায় পৃথক ‍পৃথক রাজ্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা এগুলো প্রথমে কিনতেই অস্বীকার করেছিল। তারা সীমানা ক্রাকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে, অথচ ইতিমধ্যে ভাইরাস দেশের অভ্যন্তরে দুঃখজনকভাবে উন্মাদনার মত ছড়িয়ে পড়েছে।


ইম্পেরিয়াল কলেজের এপিডেমিওলজি (রোগবিস্তার-সংক্রান্ত বিদ্যা) টিম অনুমান করেছিল যে, প্রশমনের (mitigation) প্রচার-প্রচারণা বা ক্যাম্পেইন (শনাক্তকৃত রোগীর কোয়ারেন্টিন এবং বয়স্কদের সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করালে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব) এখনও যুক্তরাষ্ট্রকে ১.১ মিলিয়ন লোক নিহত এবং ক্রিটিক্যাল-কেয়ার-বেডের (critical care beds) তুলনায় প্রায় ৮ গুণ রোগী বেশি অবস্থায় রাখবে। রোগ দমনে এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অবসান করতে জনস্বাস্থ্যকে আরও চীনা-স্টাইলে রোগীর (পরিবারের সদস্য’সহ) কোয়ারেন্টিন, কম্যুনিটি দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করার দিকে নিয়ে যাবে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমিত মৃত্যু ২ লাখের আশেপাশে নামিয়ে আনবে হয়ত।


ইম্পেরিয়াল কলেজের টিমটি অনুমান করে—কঠোরভাবে একটি সফল ক্যাম্পেইন কমপক্ষে আঠারো মাস ধরে চলতে হবে এবং তা অর্থনৈতিক সংকোচন সহ কম্যুনিটি পরিসেবাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কম্যুনিটি কোয়ারেন্টিন চালু-ও-বন্ধ করার (toggling) মাধ্যমে দলটি রোগের নিয়ন্ত্রণ এবং কম্যুনিটির অর্থনৈতিক চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলেছিল, কারণ ততদিনে ক্রিটিক্যাল-কেয়ার-বেডের সবই প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল।


অন্যান্য মডেল যারা দিয়েছেন তাঁদের ভিন্নমত রয়েছে। ’ব্লাক সোয়ান’ খ্যাত নাসিম তালেবের (Nassim Taleb) নেতৃত্বাধীন দল ঘোষণা করেছে যে, ইম্পেরিয়াল কলেজের মডেলটি যোগাযোগের নিশানা খুঁজে বের করা (contact tracing) ও ঘরে-ঘরে নজরদারির ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের পাল্টাপ্রস্তাব মিস-করেছে যেটা তাহল এই প্রাদুর্ভাব অতীতের অনেক সরকারের Cordon Sanitaire (বেষ্টনী, যেখানে ঢোকা বা বের হওয়া নিষিদ্ধ) জড়িত করার ইচ্ছাকে ভেঙে দিয়েছে। এটা ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ না প্রাদুর্ভাবের কমতি শুরু হয়, তখন অন্য অনেক দেশ এজাতীয় পদক্ষেপগুলিকে (আশা করি কার্যকরী এবং নির্ভুল নিরীক্ষার মাধ্যমে) পরীক্ষা করে দেখবেন। এক হাস্যরসিক যেমনটা লিখেছিলঃ “করোনাভাইরাস বড্ড বেশি র‍্যাডিকাল। আমেরিকার দরকার আরও মডারেট একটা ভাইরাস, যা থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে আমরা জবাব বা প্রত্যুত্তর পেতে পারি।


কোন পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি বিলুপ্তির দিকে যাবে তা নিয়ে গবেষণা করতে ইম্পেরিয়াল কলেজের অস্বীকৃতির বিষয় তালেব গোষ্ঠী নোট করেন। এই ধরনের বিনাশের মানে আক্রান্ত একেবারে শূন্য তা নয়, বরং যথেষ্ট সঙ্গনিরোধ একক ক্ষেত্রে সংক্রমণের নতুন চেইন তৈরির কোন সম্ভাবনা থাকেনা। চীনে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেবল ৫ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছিল। বাস্তবে তালেব গোষ্ঠী চীনের দমন-পীড়নের পক্ষপাতি এবং এভাবে রোগ দমন ও তার ফলে অর্থনীতিতে শ্রমের কমতি না হওয়া নিশ্চিত করার ইদুর-বিড়াল যে ম্যারাথন নাচন তার সমাধান না করেই তিনি প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলে গেছেন। অর্থাৎ, চীনের কঠোর (এবং নিবিড় সংস্থান) পদ্ধতি লোকজনকে কয়েক-মাসের দীর্ঘ (কিম্বা এমনকি বহুবছরের-দীর্ঘ) ধারাবাহিকতা থেকে মুক্তি দেয়। ইম্পেরিয়াল কলেজের দলটি অন্যদেরও এই পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়।


গাণিতিক-মহামারীবিদ রড্রিক ওয়ালেস (আমাদের দলেরই একজন) পুরোপুরি এই মডেলিং টেবিলকে উল্টে দেন। কখন এবং কোথা থেকে শুরু করতে হবে তা জরুরী-অবস্থার মডেল নির্মাণ (যদিও তা প্রয়োজনীয়) মিস করে ফেলে। অবকাঠামোগত কারণগুলোও জরুরী অবস্থা তৈরিতে অনেক ভূমিকা পালন করে। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা, অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার (যা লোকসানই ডেকে আনবে) বাইরে কীভাবে আমরা সবচে ভালো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি সেই ব্যাপারটা খুঁজে বের করতে আমাদের সাহায্য করবে। ওয়ালেস লিখেছেন, “যদি দমকল বাহিনীকে (ফায়ার সার্ভিস) পর্যাপ্ত রিসোর্স বা সংস্থান দেওয়া হয়,...”


সাধারণ পরিস্থিতিতে—বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন হতাহত ও সম্পত্তি ধ্বংসেই আটকে দেয়া যেতে পারে। যাইহোক, এই আটকে দেবার ব্যবস্থা ক্রিটিক্যালি নির্ভর করে তুলনামূকভাবে কম রোমান্টিকদের উপর। তবে এটা কোন বীরত্বপূর্ণ উদ্যোগ নয়। এটা অবিচ্ছিন্ন, চলমান ও নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা যা নিয়মাবলীর উন্নতি ও প্রয়োগের মাধ্যমে (code development and enforcement) বিপত্তিগুলোকে কেবলই সীমাবদ্ধ করে। এটা অগ্নিনির্বাপক, স্যানিটেশন ও আবাসন রক্ষার সংস্থান দরকার অনুসারে সকলের নিকট সরবরাহ নিশ্চিত করে...

এই মহামারী সংক্রমণকালে এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা বহুজাতিক কৃষি কর্পোরেশনের মুনাফাকে প্রাইভেটাইজ বা বেসরকারীকরণ করার সুয়োগ করে দেয়, যখন কিনা মূর্তকরণ ও সামাজিকীকরণ মূল্য চুকাচ্ছে। কিন্তু অবশ্যই এটা [মূল্য চুকানো/ব্যয়] হতে হবে আইন বলবৎ (“code enforcement”, যা এসব ব্যয়কে আবার অন্তর্ভুক্ত করে যাতে নিকট ভবিষ্যতে এই ধরনের খতরনাক মহামারী এড়ানো যায়) করেই।


প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়া ও মোকাবিলা করার ব্যর্থতা শুধু ডিসেম্বরেই (যখন সারা বিশ্বের দেশগুলি উহানের বাহিরে ছড়িয়ে পড়াতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে) শুরু হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে— উদাহরণস্বরূপ এটা শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় মহামারী সুরক্ষা দল ভেঙে দেয়ার পর শুরু হয়নি কিংবা সাত’শ সিডিসি (CDC) পদ শূন্য রাখা দিয়েও শুরু হয়নি। এমনকি ২০১৭ সালের সেই অপ্রত্যাশিত মহামারীতে দেশটির অপ্রস্তুত অবস্থা, সেখানেও শুরু হয়নি।১০ রয়টার্সের শিরোনামে যেমনটা বলা হয়েছে—“ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কয়েকমাস আগে চীনে সিডিসি (CDC) বিশেষজ্ঞদের ছাটাই” দিয়েও শুরু হয়নি (যদিও চীনের এই জায়গায় মার্কিনিদের আগের কোন প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ না থাকার দরুণ এই মহামারীর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রেকে দুর্বল করেছিল খানিকটা)। অথবা ইতিমধ্যে উপলব্ধ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কতৃক সরবরাহকৃত টেষ্ট কীট ব্যবহারে অস্বীকৃতি দেয়াতেও শুরু হয়নি। একইসাথে, প্রাথমিক তথ্যগুলোর অভাব এবং টেষ্টিং মিস নিঃসন্দেহে সম্ভবত হাজার হাজার মানুষের জীবন হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।১১


জনস্বাস্থ্যকে যুগপৎ উপেক্ষিত ও বাণিজ্যিক (monetized) করা হয়েছিল; এবং এইরূপে ব্যর্থতাগুলি প্রকৃতপক্ষে কয়েকদশক আগে থেকেই ছকবদ্ধ বা প্রোগ্রাম করা হয়েছিল।১২ ব্যক্তিবাদের দ্বারা আক্রান্ত একটি দেশ সংজ্ঞানুসারেই চীনা ধরনে [মহামারী] আটকানোর পথ অনুসরণ করতে প্রয়োজনীয় রিসোর্সের ব্যবস্থা (যথাসময়ে সাড়া দিতে সক্ষম রোগবিস্তার-সংক্রান্ত-বিদ্যা [epidemiology]—বলাবাহুল্য— সাধারণ অপারেশনের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও হাসপাতালের বেড) করতে অসমর্থ।


মডেল স্ট্রাটেজিগুলো নিয়ে তালেব দলের বক্তব্য অনুসরণ করে রোগ-বাস্তুবিদ (Disease Ecologist) লুইস ফার্নোন্দো চ্যাভেস (যিনি এই নিবন্ধের সহ-লেখক) দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানী রিচার্ড লেভিন্স ও রিচার্ড লিউন্টিনকে দোহাই মেনে বলেন— “কেবল ঘটনাকে কথা বলতে দেয়া” সমস্ত অনুমানকে নস্যাৎ করে দেয়।১৩ ইম্পেরিয়াল টিমটির মতো মডেলগুলো অধিপতি সামাজিক বিন্যাসের মাঝে সরুভাবে তৈরি প্রশ্নগুলোকে স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণের সুযোগকে বাহ্যতই সীমিত করে। এইভাবে, বিস্তৃত বাজারের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর শক্তি এবং হস্তক্ষেপের অন্তরালের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে ধরতে তারা ভুলে যায়।


সচেতনভাবে হোক বা না হোক—(অনুমানে বোঝা যায় যে, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা তাদের আগ্রহের দ্বিতীয় সারিতে ছিল) সবচে নাজুক [স্বাস্থ্যের] মানুষগুলোর মধ্যে শ’য়ে শ’য়ে মারা যাবে যা কিনা একটা রাষ্ট্রকে রোগ নিয়ন্ত্রণ আর অর্থনীতির দোলাচালে ঠেলে দিবে। ফুকোডিয়ান দৃষ্টিতে—একটি রাষ্ট্রের (তার নিজের স্বার্থেই) জনগণ নিয়ে কাজ করা মানে শুধুমাত্র বোঝায় হার্ড ইমিউনিটির (যেটা ব্রিটেনের টরি সরকার এবং এখন নেদারল্যান্ডস প্রস্তাব করেছেন—জনগণের মাঝেই ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বাঁচানো) জন্য ম্যালথাসিয়ান পুশ বা ঠেলে দেবার একটা হালনাগাদ সংস্করণ।১৪ মতাদর্শিক আশাবাদের বাহিরে এরকম খুব কম প্রমাণই মিলেছে যে, হার্ড ইমিউনিটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বন্ধের নিশ্চয়তা দিবে। জনগণের ইমিউন [সিস্টেমের] কম্বলের নিচ থেকে ভাইরাসটি আরও সহজে বিকশিত হতে পারে।




হস্তক্ষেপ

এসবের পরিবর্তে করণীয় কি? প্রথমত, এটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিৎ যে এরকম একটা জরুরী অবস্থায় যথাযথ সাড়া দিতে হলে এখনও আমাদের প্রয়োজন আর বিপদ উভয়েই মনোনিবেশ করতে হবে।


প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলায় স্পেনে যেভাবে হাসপাতালগুলিকে জাতীয়করণ করা হয়েছিল তেমনি আমাদেরও তা করা দরকার।১৫ টেস্টের সংখ্যার পরিমাণ অধিক করতে হবে এবং অধিক কার্যকরী রাস্তায় হাঁটতে হবে, যেমনটা সেনেগাল করেছে।১৬ আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালগুলোকে সামাজিকীকরণ (socialize) করা দরকার।১৭ আমাদের চিকিৎসাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বাধিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদির মেরামতের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।১৮ রেমিডেসিভিয়ার এবং এন্টিম্যালেরিয়াল ক্লোরোকুইনের (বা আশ্বাসযুক্ত যেকোন ওষুধ) মত অ্যান্টিভাইরাসগুলোর ককটেল ব্যাপক পরিসরে উৎপাদন শুরু করা প্রয়োজন, যেখানে দেখতে হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারের বাহিরেও এগুলো কাজ করে কিনা।১৯ (১) স্বাস্থ্য-সুরক্ষা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভেন্টিলেটর এবং সুরক্ষা পিপিই উৎপাদনে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা এবং (২) সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন জায়গাগুলোকে বরাদ্দ নিশ্চিত করার জন্য এক পরিকল্পিত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।


আমাদের অবশ্যই একটা মহামারী গণবাহিনী গঠন করা প্রয়োজন যেটা গবেষণা থেকে পরিচর্যা পর্যন্ত কাজে সহায়তা করবে। ভাইরাস (ও অন্য যেকোন প্যাথোজেনের আগমন) আমাদের উপর যে দাবী চাপিয়েছে, এই বাহিনী তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে। অনেক বেশি ক্রিটিক্যাল-কেয়ার-বেড প্রস্তুত, স্টাফ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা দরকারি যাতে করে এই অবস্থায় সৃষ্ট ব্যবধানটি পূরণ করতে সক্ষম হয়। অন্যকথায় বলতে গেলে— নিছক বেঁচে থাকার কথা বলে কোভিড-১৯ এর চলমান প্রাদুর্ভাবকে এর চৌকাঠের তলদেশে ঠেলে দিতে কেবল যোগাযোগে নজরদারি (Contact Tracing) বা বিচ্ছিন্ন থাকবার ধারণায় ফেরত যেতে আমরা মানতে পারিনা। আমাদের অবশ্যই ঘরে ঘরে কোভিড-১৯ শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত লোক নিয়োগ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। একইভাবে, (অন্যদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে) স্বত্ব কেড়ে নিয়ে গড়ে ওঠা সমাজকেও বাতিল করতে হবে আমাদেরকে, যাতে মানুষ এই রোগ এবং তার উপশম উভয় থেকেই বাঁচতে পারে।


যতক্ষণ না এই জাতীয় কর্মসূচি নেয়া যায়, ততক্ষণ একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠী পরিত্যক্ত থেকে যায়। (দেড়শ বছর পূর্বের [প্যারি কমিউনের] প্রলেতারিয়েত সংগ্রামের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের স্পিরিটে) এমনকি অবাধ্য সরকারের উপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে হবে, প্রতিদিন মানুষের পারস্পরিক সহায়তামূলক কেন্দ্র বা আশেপাশের ব্রিগেডগুলোতে যোগ দেয়া উচিৎ।২০ পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীরা (যাদেরকে ছেড়ে রাখা সম্ভব তাঁরা) এসব গ্রুপগুলিকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাসের মোকাবেলায় সেবামূলক কাজে যুক্ত রাখতে পারে।


জরুরী পরিকল্পনাতে ভাইরাসের স্ট্রাকচারাল বা কাঠামোগত উৎসকে গুটিয়ে রাখার জেদ, আমাদেরকে প্রস্তাব দেয় মুনাফার দিকে নজর না দিয়ে মানুষের সুরক্ষার দিকে প্রতিটি কদম এগিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠির।


এই ‘বাদুরের বিষ্ঠা’ তত্ত্বের মাঝে অনেকগুলো বিপদ রয়েছে, যেমন-রোগীর লক্ষণ এমন বলা হয়েছে যে যেন বাদুরের বিষ্ঠা রোগীর ফুসফুসে ঢুকে পড়েছে! যখন আমরা দেখলাম সার্স ভাইরাস (SARS Virus) তার বন্যজীবনের অবস্থা থেকে মানুষের মাঝে চলে আসে এবং প্রায় আট সপ্তাহের মাঝে নিজেকে পুরো মানব জাতির মাঝে ছড়িয়ে ফেলে২১—এতে আমরা যে শক পেয়েছিলাম তাকে ধরে রাখা দরকার। এই ভাইরাস ভিনদেশী-উদ্ভট (exotic) খাবারের আঞ্চলিক সরবরাহের এক টার্মিনাল থেকে উদ্ভুত হয়েছিল এবং সফলভাবে চীনের উহান শহরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সংক্রমিত করে, যা মানুষে-মানুষে সম্পর্ককে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।২২ সেখান থেকে এই প্রাদুর্ভাব স্থানীয়ভাবে এবং বিশ্বজুড়ে প্লেন, ট্রেনের উপর ভর করে— যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরো কাঠামো ব্যবহার করে বড় থেকে ছোট শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ২৩


টিপিক্যাল ওরিয়েন্টালিজমে, বন্য খাবারের বাজার প্রসঙ্গ বাদ দিলে সুস্পষ্ট প্রশ্নগুলো নিয়ে কোন কথাই কেউ বলেনি। এক্সোটিক খাদ্যখাত কি করে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছালো যে উহানের বৃহত্তম বাজারে বন্য পশু এবং আরও ঐতিহ্যবাহী পশুসম্পদের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্রও বিক্রি করতে পারে? পশুগুলিকে ট্রাকের পিছনে কিংবা কোন চিপাগলিতে কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে না! এর সাথে জড়িত অনুমতিপত্র (permits) এবং মূল্য-পরিশোধের (payments) নিবন্ধন সম্পর্কে ভাবুন।২৪ মৎস্য চাষের বাহিরে বিশ্বব্যাপী বন্য খাদ্য একটি ক্রমবর্ধমান খাত, এমনকি এটাকে শিল্প উৎপাদনের খাতে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চলছে।২৫ যদিও এখনো এই পদ্ধতিতে আউটপুট শিল্প উৎপাদনের সমান নয়, পার্থক্যটা এখন আরও অস্বচ্ছ।


এই ওভারল্যাপিং-অর্থনৈতিক-ভূগোল উহান বাজার থেকে পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে এক্সোটিক এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারদাবার উৎপাদন করা হয় প্রকল্পের (bordering the edge of a contracting wilderness) মাধ্যমে।২৬ শিল্প উৎপাদন যেমন বনাঞ্চল ধ্বংস করে, একইভাবে বন্য খাবার অনুসন্ধান করতে করতে পৌঁছাতে হয় শেষপ্রান্তে। ফলস্বরূপ, এই বহিরাগত ও উদ্ভট জীবাণুগুলো (এই ক্ষেত্রে সার্স-২), তাদের পথ খুজে পায়— যেটা খাদ্যবস্তু (পশুপাখি) কিংবা আহরণকারী শ্রমিক যেকারো মাধ্যমেই হোক, প্রথমে উপশহরের এলাকা থেকে তারপর বিশ্বজুড়ে আঘাত হানে।২৭




অনুপ্রবেশ

এই সংযোগ বিস্তারিতভাবে সব বহন করে— প্রাদুর্ভাবের সময় আমাদের এগিয়ে যেতে যতটা সহায়তা করেছিল ততটাই, মানবতা কিভাবে নিজেকে একই ফাঁদে ফেলেছে তা বুঝতে সহযোগিতা করে।


কিছু রোগজীবাণু উৎপাদনের কেন্দ্রগুলোর বাহিরে চলে আসে। খাদ্যজনিত ব্যাকটেরিয়া যেমন স্যালমোনেলা (Salmonella) এবং ক্যাম্পাইলো (Campylobacter) ব্যাকটেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়ার কথা আমাদের মাথায় আসে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর মতো অনেকগুলি ভাইরাস পুঁজি উৎপাদনের সম্মুখভাগে উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় ৬০ শতাংশ নভেল মানব জীবাণুগুলো বন্যপ্রাণী থেকে স্থানীয় মানব জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ে (পৃথিবীর অন্যান্য অংশে অধিক সফলটি ছড়ানোর আগেই)।২৮


ইকোহেলথের বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তি ১৯৪০ সালে পূর্ববর্তী প্রাদুর্ভাবের (যেগুলো বন উজারের মতো ক্ষতিকর পদক্ষেপের কারণে হয়েছিল) একটি মানচিত্র তৈয়ার করেছিলেন। এসব গবেষণার কিছুতে ফান্ড দিয়েছিল কোলগেট-পালমোলিভ এবং জনসন অ্যান্ড জনসন-এর মতো কোম্পানী।২৯ সেই মানচিত্রে যতবেশি উজ্জ্বল রঙ তত বেশি নতুন প্যাথোজেন আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। কিন্তু এমন চরম ভূগোলে গুলিয়ে, দলটির ম্যাপ (মানচিত্রের লাল রঙয়ের হটস্পট চিহ্নিত চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু অংশ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস করে ফেলে। প্রাদুর্ভাব প্রকট অঞ্চলগুলোতে অধিক মনোযোগ দেবার ফলে তাঁরা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকদের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের কথা ভুলে যায়, যা আসলে মহামারীকে রূপ দেয়।৩০ পুঁজির মুনাফা লাভের ইচ্ছার প্রেক্ষিতে উন্নয়ন (ও উৎপাদন) ভূমির ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে প্ররোচিত করে এবং পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলিতে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পুরস্কার হিসেবে প্রাদুর্ভাবের দায় চাপায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং সেইসাথে তাঁদের তথাকথিত “নোংরা” সাংস্কৃতিক চর্চাগুলোর ঘাড়ে।৩১ বুশমিট [খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত আফ্রিকা অঞ্চলের পশুদের মাংস] এবং বাড়িতে সমাধিস্থ করার প্রক্রিয়া—এই দুটো বিষয়কে প্যাথোজেনগুলোর উত্থানের কারণ বলে মনে করা হয়। উল্টোদিকে, বৈশ্বিক সম্পর্কের ভৌগলিক প্লট অনুসারে বিশ্ব পুঁজির বড় উৎস নিউইয়র্ক, লন্ডন এবং হংকং এই তিনটিকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হটস্পটে পরিণত করে।


এরই মাঝে প্রাদুর্ভাব প্রকট অঞ্চলগুলি এখন আর বুনো ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির দ্বারা সংগঠিতও নয়। অসম বাস্তুতান্ত্রিক (ecological) বিনিময়—‍শিল্পায়িত কৃষি থেকে আরম্ভ করে গ্লোবাল সাউথ অব্দি সবচে বাজে ক্ষতির সম্ভাবনাকে নির্দেশ করছে—রাষ্ট্র চালিত সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে রিসোর্সের স্থানিকতাকে বিচ্যুত করে স্থানান্তর ঘটিয়েছে এবং পণ্য (commodity) ও মাপকাঠিকে ঘিরে নতুন জটিলতা ডেকে এনেছে।৩২ কৃষিব্যবসা তাদের বহির্মুখী কার্যক্রমকে স্থানিকভাবে বিচ্ছিন্ন (বিভিন্ন মাপকাঠির ভূখণ্ডগুলো পরিব্যাপ্ত) নেটওয়ার্কে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে।৩৩ উদাহরণস্বরূপ, এখন বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল জুড়ে বহুজাতিক কোম্পানী ভিত্তিক “সয়াবিন প্রজাতন্ত্রের” একটি সিরিজ রয়েছে। কোম্পানির পরিচালনা কাঠামো, সুবিধার্থে কাজে লাগানো, ঠিকা দেওয়া, সাপ্লাই চেইনের বিকল্পসমূহ, ইজারা এবং আন্তঃদেশীয় জমি পুনর্বিন্যাস প্রভৃতির পরিবর্তনের মাধ্যমে এই নতুন ভূগোল কাঠামো নির্মিত হয়।৩৪ জাতীয় সীমানা বিস্তারের এই মহাযজ্ঞে, এই “পণ্যখচিত দেশগুলো (commodity countries)” পরিবেশ ও রাজনৈতিক সীমানায় নমনীয় হয়ে সেই পথে নতুন মহামারীগুলো তৈরি করছে।৩৫


দৃষ্টান্তস্বরূপ, জনসংখ্যায় সাধারণ পরিবর্তন সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে পণ্যে পরিণত হয়ে মানুষের গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে বস্তিতে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। গ্রাম/শহর বিভাজন চালিত অধিকাংশ রোগের আবির্ভাবের আলোচনা rural-destined labor-কে মিস করে ফেলে এবং পল্লী-শহরের ক্রমাগত উপশহর (ডেসকাটাস, শহুরে গ্রাম) অথবা ছোয়াইসেনস্টাটে (zwischenstadt, শহরের মাঝামাঝি) দ্রুত উন্নীত হওয়াকে মিস করে যায়। মাইক ডেভিস এবং অন্যান্যেরা শনাক্ত করেছেন, কিভাবে এই নতুন নগরায়িত ভূখন্ডগুলো বৈশ্বিক কৃষিজ পণ্যের স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজার রূপে কাজ করে।৩৬ এ জাতীয় কিছু অঞ্চল বর্তমানে “কৃষিজ- উত্তর (post agricultural)” ব্যবস্থাতেও চলে গেছে।৩৭ ফলে বন্য প্য়াথোজেনের গতিবিদ্যা বা এর উৎসগুলো এখন আর শুধু অভ্যন্তরিণ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নাই। তাদের সংসৃষ্ট মহামারীগুলো সকল স্থান এবং সময় জুড়েই নিজেকে সম্পর্কযুক্ত করে তুলেছে। এজন্য একটি সার্স ভাইরাস হঠাৎ বাদুরের গুহা থেকে বের হয়েই ইতিমধ্যে বড় বড় শহরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।


ইকোসিস্টেমের যেখানে এই জাতীয় “বন্য” ভাইরাসগুলো ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের কারণে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে মারাত্মকভাবে পুঁজির বনধ্বংসের ফলে এবং অপরদিকে উপশহর তৈরির প্রবণতা, জনস্বাস্থ্যকে একটা বাণিজ্যিক রুপ দেয়ার ফলে ভাইরাসগুলি প্রবাহিত হচ্ছে।৩৮ ফলে অনেক সিলভ্যাটিক (sylvatic) রোগজীবাণুকে হোস্টের সাথে মারা যাচ্ছিল এবং সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায় এককালে বনেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। সেখানে যদি তাদেরকে সাধারণ হোষ্টদের মুখোমুখি আনা হয়— তা সংবেদশীল মানুষদের মাঝে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এবং শহরগুলিতে প্রায়শই রাস্তা নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়ে তুলছে। এমনকি কার্যকরী ভ্যাকসিনগুলোর মুখোমুখি হওয়ার ফলে আরও বেশি পরিমাণ সংক্রমণ নতুন করে গতিবেগ নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। একসময়ের স্থানীয় স্পিলওভার্সগুলি (spillovers) এখন বিশ্বব্যাপী যাতায়াত এবং ব্যবসায়ের পথে মহামারী আকার ধারণ করছে।৩৯


এই প্যারালাক্স ইফেক্ট বা প্রভাব দ্বারা—কেবল পরিবেশগত পটভূমি পরিবর্তনের ফলে— ইবোলা, জিকা, ম্যালেরিয়া এবং হলুদ-জ্বরের মতো পুরনো ভাইরাসগুলি তুলনামূলকভাবে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে, বিকশিত হয়ে একটি আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।৪০ তারা হঠাৎ করেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী শহরগুলিতে এসে হাজার হাজার মানুষকে সংক্রমিত করছে। অন্য পরিবেশগত দিকে, বন্য প্রাণীগুলো (নিয়মিত দীর্ঘকালীন রোগের আধারগুলো) অপ্রত্যাশিত প্রতিকূল ফল ভোগ করছে। যেমন— বন উজারের ফলে পশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে; নেটিভ নিউ ওয়ার্ল্ড বানরগুলি হলুদ-জ্বরের জন্য সংবেদনশীল যাতে তারা কমপক্ষে একশবছর আগেও অরক্ষিত ও উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু খন্ডিত হওয়ার ফলে তারা তাদের হার্ড ইমিউনিটি হারিয়ে ফেলেছে এবং হাজারে হাজারে মারা যাচ্ছে।৪১


প্রসারণ

যদি কেবল এটার বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের মাধ্যমে, কৃষিপণ্যগুলি (commodity agriculture) পরিচালনা এবং যোগসূত্র (nexus) উভয় প্রবণতা রূপেই কাজ করে যার মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসের রোগজীবাণুগুলি সর্বাধিক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জনসংখ্যার সর্বাধিক আন্তর্জাতিক কেন্দ্রগুলোতে স্থানান্তরিত হয়।৪২ এটি হচ্ছে সেই জায়গা (এবং সেই পথেই বর্তমান), যেখানে এই নতুন প্যাথোজেনগুলি কৃষক সম্প্রদায়ের (agriculture’s gated communities) মাঝে অনুঃপ্রবেশ করে। পণ্য সরবরাহের চেইনের দৈর্ঘ্য যত বেশি তত বেশি বন উজার এবং আরও বেশি নতুন নতুন প্যাথোজেনগুলির (বহিরাগত/উদ্ভট) খাদ্য চেইনে প্রবেশ। নতুন উদ্ভূত ও পুনরায়-উদ্ভূত খামার ও খাদ্যবাহিত প্যাথোজেনগুলির বেশিরভাগই অ্যান্থ্রোপোজেনিক ডোমেইন থেকে এসেছে। এগুলো হচ্ছেঃ আফ্রিকান সোয়াইন ফেভার, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, ক্রিপ্টোস্পরিডিয়াম, সাইক্লোস্পোরা, ইবোলা রেস্টন, ই-কোলি O157:H7, পায়েরপাতা-ও-মুখের রোগ (FMD), হেপাটাইটিস ই, লাইষ্টারিয়া, নিপাহ ভাইরাস, Q ফেভার, সালমোনেলা, ভাইব্রিও, ইয়েসিনিয়া এবং নভেল ইনফ্লুয়েঞ্জার নানা প্রকার, তন্মধ্যে H1N1(2009), H1N2V, H3N2V, H5N1, H5N2, H5NX, H6N1, H7N1, H7N3, H7N7, H7N9 and H9N2 প্রভৃতি।৪৩


তবে অনিচ্ছকৃতভাবে, উৎপাদন লাইনের অবিচ্ছিন্নতা এরকম অনুশীলনের আশেপাশে সংগঠিত হয় যা প্যাথোজেনগুলির অনুপ্রবেশ এবং পরবর্তী সংক্রমণের বিবর্তন ত্বরান্বিত করে।৪৪ জেনিটিক মনোকালচার—প্রায় অভিন্ন জিনোমযুক্ত খাদ্য-পশু (food animals) ও গাছ— বৃদ্ধির ফলে ইমিউনিটির প্রতিবন্ধকতা (যা কিনা বিবিধ জনগোষ্টীর মাঝে সংক্রমণকে ধীর করে তোলে) আরও নষ্ট করে।৪৫ প্যাথোজেনগুলি এখন সাধারণ হোষ্টের ইমিউনের জিনোটাইপের সাথে খুব দ্রুত নিজেকে বিকশিত করতে পারে। অন্যদিকে, হোস্টের তুলনামূলক জনাকীর্ণ অবস্থায় ইমিউনের প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক।৪৬ বড় বড় খামারগুলির প্রাণীসংখ্যা এবং ঘনত্ব বৃহত্তর সংক্রমণ ও বারংবার সংক্রমণকে সহজতর করে।৪৭ নির্দিষ্ট জীববৈজ্ঞানিক লক্ষ্যে সামর্থ্য বাড়াতে দ্রুত পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো (যেকোন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল উৎপাদনের একটা অংশবিশেষ যা কিনা খামার, শস্যাগার, আঞ্চলিক স্তরগুলোতে সক্ষমতার যোগানকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নবায়ন করে) প্যাথোজেনগুলির সাংঘাতিকতার বিবর্তনকে লাগামছাড়া করে।৪৮ অনেকসংখ্যক পশুকে একসাথে রাখা সেইসব (আলিঙ্গন বা) স্ট্রেইনকেই সাজেস্ট করে যেগুলো তাদের মাঝে ভালো কাজ করে। আবার জবাইকালে কম বয়স—যেমন ছয় সপ্তাহের মুরগী হত্যা—প্যাথোজেনগুলিকে আরও বেশি শক্তিশালী হোস্টের মাঝে অবস্থান করতে শক্তিশালী করে তোলে।৪৯ জীবন্ত পশুর বাণিজ্য এবং রপ্তানির পরিধি অনেক বড় হওয়ায় জীবাণুগুলির একধরনের অদল-বদল ঘটে, ফলে এইসব জীবাণুর বিবর্তনের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।৫০


রোগজীবাণুর বিস্তার বিবর্তন যখন রকেট গতিতে ছুটছে এই সমস্ত উপায়ে, সেখানে যাহোক কোন প্রকার হস্তক্ষেপ নাই (এমনকি ইন্ডাস্ট্রির নিজস্ব চাহিদাতেও) এবং প্রাদুর্ভাবের এই আকস্মিক জরুরী অবস্থায় কিভাবে এক চতুর্থাংশ মার্জিনাল অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্ধার করা যায় সেখানেও হস্তক্ষপ নেই।৫১ ফলে এইসব খামারে খুব কম সরকারি পরিদর্শন এবং সরকারি নজরদারি করা হয়, সেইসাথে এসব রিপোর্ট এক্সপোজ করা হলে মিডিয়া আউটলেটের বিরুদ্ধেই আইন জারি করে। সাম্প্রতিক সময়ে কীটনাশক এবং শূকরের খামারের (hog) দূষণের বিরুদ্ধে আদালতের জয়ের পরও, এইসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি মুনাফা লাভের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। এই প্রাদুর্ভাবের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে প্রাণীসম্পদ, ফসল, বন্যপ্রাণী, শ্রমিক, স্থানীয় ও জাতীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকল্প কৃষিব্যবস্থাগুলিকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেয়া সবকিছুকে বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সিডিসি জানিয়েছে যে খাদ্যশস্যজনিত প্রাদুর্ভাব প্রসারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং রাজ্যগুলোতে প্রভাব পড়ছে ও মানুষেরা আক্রান্ত হচ্ছে।৫২


অর্থাৎ, পুঁজির বিচ্ছিন্নতা (alienation) প্রাদুর্ভাবকেও সম্প্রসারিত করছে। এইসব ফার্ম ও ফুড ফ্যাক্টরির দুয়ার থেকে জনস্বার্থ ফিরে যায় এবং জৈব-নিরাপত্তা (যার জন্যে ইন্ডাস্ট্রি খরচ করতে এবং জনসাধারনের কাছে ফিরে আসায় ইচ্ছুক) ডিঙায়ে রোগজীবাণু চলে আসে। প্রতিদিনকার উৎপাদন (নির্দিষ্ট পরিসরে) আমাদের যৌথ স্বাস্থ্য রিসোর্স ভোগের মারফতে হাজির করে মুনাফা-উৎপাদী নৈতিক বিপত্তি।




মুক্তি

নিউইয়র্কে একটা শ্লেষাত্মক কথা চালু আছে, ভাইরাসের উৎস হতে এক হেমিস্ফিয়ার দুরত্বে থেকেও বিশ্বের অন্যতম বড় একটি শহর কোভিড-১৯ সামাল দিতে না পেরে ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। লাখ লাখ নিউইয়র্কবাসী যে ঘরে আশ্রিত তার মূলে রয়েছে অ্যলিসিয়া গ্লেন (Alicia Glen), যিনি ২০১৮ সাল অবধি নিউইয়র্কের আবাসন এবং অর্থনৈতিক উপ-মেয়র হিসেবে আছেন।৫৩ গ্লেন হলেন প্রাক্তন গোল্ডম্যান শাচ (Goldman Sachs) গোষ্ঠীর নির্বাহী কর্মকর্তা যিনি বিনিয়োগ সংস্থার আরবান ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের (যারা ফার্মের মতো প্রকল্পগুলোর রেডলাইন সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা করেন) তত্ত্বাবধান করেছেন।৫৪


গ্লেন অবশ্যই এই প্রাদুর্ভাবের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নন, কিন্তু ঘরের কাছে বিষের হাড়ির মতো একজন প্রতিমূর্তি। তিন বছর আগে তাঁকে নিয়োগ করার পূর্বে, প্রবল আবাসন সংকট এবং এটার নিজস্ব কিছু অংশ নিয়ে জটিলতার মুহুর্তে তাঁর স্থলের প্রাক্তন চাকুরিজীবী জেপি মরগান, আমেরিকান ব্যাংক, সিটি গ্রুপ, ওয়েলস ফারগো অ্যান্ড কোং এবং মরগান স্টানলি সহ সবাই ফেডারেল জরুরী অর্থসহায়তার ৬৩ শতাংশ নিয়েছিলেন।৫৫ গোল্ডম্যান শাচ এই সংকট পেরিয়ে নতুন বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। গোল্ডম্যান শাচ শুয়ানঘুই (Shuanghui) বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ৬০ শতাংশ নিয়েছিলেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম হোগ (শূকর) উৎপাদনকারী মার্কিন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্মিথফিল্ড ফুডস, কিনেছিল চীনা কৃষি বিপনন কর্পোরেশনের একটা অংশ।৫৬ অবশ্য ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে এটা ফুজিয়ান ও হুনান শহরে ১০টি পোল্ট্রি ফার্মের মালিকানা কিনেছিলেন এবং এর একটি উহান প্রদেশের অভ্যন্তরে যেখানে বন্যখাবার সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়।৫৭ একই প্রদেশে ডয়চে [জার্মান] ব্যাংকের পাশাপাশি হোগ উৎপাদনে এটি আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।৫৮


উপরের সম্পর্কিত যে ভৌগলিক পথ তা চক্রাকারে ঘুরছে। গ্লেনের নির্বাচনী এলাকার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অ্যাপার্টমেন্ট জুড়ে শহর নিউইয়র্ক বর্তমানে ভুগছে এবং এটা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর বৃহত্তম কেন্দ্রস্থল। তবে আমাদের এটাও স্বীকার করতে হবে যে—চীনা কৃষির বিশালাকার সিস্টেমের জন্যে গোল্ডম্যান শাচের বিনিয়োগ যতই গৌণ হোক না কেন, প্রাদুর্ভাবের কারণগুলোর লুপে নিউইয়র্ক শহর থেকেই প্রাদুর্ভাব শুরু করেছে ছড়িয়ে পড়া।


ট্রাম্পের বর্ণবাদী ’চীনা ভাইরাস’ তত্ত্ব এবং উদারনৈতিক ধারাবাহিকতায়, জাতীয়তাবাদী অঙ্গুলিনির্দেশ রাষ্ট্র ও পুঁজির আন্তঃসংযোগকারী আন্তর্জাতিক পরিচালনাকে অস্পষ্ট করে দেয়।৫৯ “দুশমন ভাইদের (Enemey Brothers)” কথা কার্ল মার্ক্স বর্ণনা করেছেন।৬০ যুদ্ধের ময়দানে (ও অর্থনীতিতে) শ্রমজীবী মানুষের যে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এখন তাঁদের শ্বাস ধরে রাখার জন্য লড়াই করতে হচ্ছেঃ উভয় ফ্রন্টেই—প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস করার অভিজাতদের প্রতিযোগিতা, আর যন্ত্রের কলকব্জাতে আটকে ফেলা মানবতার গণকে (the mass of humanity) বিভক্তি থেকে উদ্ধার ও বিজয়ী করার উপায় সন্ধান।


প্রকৃতপক্ষে, একটি মহামারী যা পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে উদ্ভুত এবং রাষ্ট্র আশা করে যে মহামারী একদিক থেকে পরিচালিত হবে যাতে করে কিছু সুবিধাভোগী অপরদিকে নিজেদের উন্নতি সাধন করতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচজন মার্কিন সিনেটর এবং বিশজন হাউস সদস্য আগত মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা যুক্ত কারখানাগুলোতে স্টক করতে মিলিয়ন ডলার ফেলেছিল।৬১ রাজনীতিবিদরা তাঁদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়কে অ-প্রজাতান্ত্রিক গোয়েন্দাদের ওপর নির্ভর করে চালায়, এমনকি কিছু প্রতিনিধি প্রকাশ্যে এমন কথার পুনরাবৃত্তি করেন যে মহামারীটি এমন কোনও হুমকি নয়।


এই জাতীয় স্টুপিডিটি বা নির্বুদ্ধিতার ধাক্কার বাইরেও, দুর্নীতি একটি সিস্টেমিক বা প্রণালীবদ্ধ ব্যাপার। (যখন পুঁজি বের করে আনা হয়) পুঞ্জীভবনের আমেরিকান চক্রের শেষের মার্কার বা চিহ্ন এই জাতীয় স্টুপিডিটি।


গোল্ডম্যান শাচ নিজের জন্যেই, মহামারীটি (পূর্বেও সংকটগুলো যেমনটা ছিলো) অফার করে “বেড়ে উঠার জন্য ঘর”:


এখন পর্যন্ত বিভিন্ন চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বায়োটেক সংস্থার বিভিন্ন ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের আশাবাদ আমরা শেয়ার করি। আমরা বিশ্বাস করি যে এই ধরনের অগ্রগতির প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রমাণ আমাদের ভয় কমাতে সাহায্য করবে।...

এও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বাজারের নিম্ন স্তরে পৌঁছানোর কোনো গ্যারান্টি নেই, যা আজ বিক্রি করার জন্য ন্যায়সঙ্গত মানদন্ড হিসাবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে মার্কিন অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা এবং আধিপত্যকে কেন্দ্র করে বাজার শেষ পর্যন্ত উচ্চ লক্ষ্যেই পৌঁছাবে।


চলমান গণহত্যায় অবাক হয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষ বিভিন্ন উপসংহার টানেন।৬৩ পুঁজির চক্র বা বর্তনীসমূহ এবং উৎপাদন ব্যবস্থা যাকে তেজস্ক্রিয় ট্যাগের মতো রোগজীবাণুগুলোকে চিহ্নিত করে একের পর এক, তা অযৌক্তিক ভাবা হয়।


এ জাতীয় সিস্টেমকে কিভাবে চিহ্নিত করা যায়, কিভাবে এই ব্যবস্থার ভিতর–বাহির পরিস্থিতি উন্মুক্ত করা যায়? আমাদের গোষ্ঠী এমন একটি মডেল অনুসরণ করে এগোয়—যা ইকোহেলথ এবং ওয়ান হেলথের মাঝে পাওয়া আধুনিক ঔপনিবেশিক ওষুধের প্রচেষ্টাকে ছাড়িয়ে যায় এবং ওয়ান হেলথ এইসব রোগের উৎসের জন্য আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বন ধ্বংসওকে দায়ী করে।


নব্য-উদারনৈতিক রোগের উত্থান নিয়ে আমাদের সাধারণ তত্ত্ব (এবং হ্য়াঁ, অবশ্যই চীনের ঘটনাকে অন্তর্ভুক্ত করেই):


  • পুঁজির বৈশ্বিক চক্র বা বর্তনীসমূহ।

  • পুঁজি স্থাপন করে আঞ্চলিক পরিবশগত জটিলতা ধ্বংস, যা রোগজীবাণু সংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করে।

  • এইসব বহিরাগত ঘটনা এবং ট্যাক্সোনমিক কর্মকান্ডের ফলাফল।

  • উপশহর কেন্দ্রিক পণ্য সাপ্লাই চেইনের ফলে নতুন নতুন প্যাথোজেনগুলো পশু সম্পদ এবং শ্রমিকের মধ্যদিয়ে গভীর প্রান্তভাগ থেকে আঞ্চলিক শহরে বহন করে।

  • ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক যোগাযোগব্যবস্থার (এবং প্রাণীসম্পদ বাণিজ্য) নেটওয়ার্ক, যা রেকর্ড সময়ের মাঝে–উপরোক্ত শহরগুলি থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে জীবাণু বহন করে।

  • এই নেটওয়ার্কগুলিতে প্রানীসম্পদ এবং মানুষ উভয়েরই মাঝে এই নতুন ভাইরাসগুলি বিবর্তন ঘটে এবং নেটওয়ার্কগুলোতেই সংক্রমণের বাধা সবচেয়ে কম।

  • এবং অন্যান্য শর্তগুলোর মাঝে আরেকটি হলো, ইন্ড্রাস্টিয়াল বা শিল্পায়িত প্রাণীসম্পদ উৎপাদনে প্রজননের অভাব, ইকোসিস্টেমের ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন পরিহার করা যা নির্দিষ্ট সময়ে (প্রায় বিনামূল্যে) রোগ প্রতিরোধ করে।



অন্তর্নিহিত কথা হলো—কোভিড-১৯ বা এই জাতীয় ভাইরাসগুলির কারণ শুধু সংক্রামক এজেন্ট বা ক্লিনিক্যাল কোর্সই নয়, বরং বাস্তুতান্ত্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুঁজি এবং আরও অবকাঠামোগত কারণগুলো দায়ী।৬৫ বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুগুলির বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্সা, সোর্স হোস্ট, সংক্রমণ পদ্ধতি, ক্লিনিক্যাল কোর্স এবং মহামারী দেখা দেয়। সেই সাথে একেকটি প্রাদুর্ভাব আমাদের দেখিয়ে দেয় বিভিন্ন অংশের প্রায় একই রকম পথ এবং যাত্রা।


হস্তক্ষেপের সাধারণ পদক্ষেপগুলি একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসকে ছাড়িয়ে সমান্তরালে চলে।


এখানে খারাপ অবস্থা এড়াতে, বি-বিচ্ছেদায়ন (disalienation) মানুষের উত্তরণের প্রস্তাব করেঃ সেটেলারদের মতাদর্শ ত্যাগ করা, পৃথিবীর জন্মচক্রের সাথে মানবতাকে পরিচয় করানো এবং পুঁজি ও রাষ্ট্রের বাহিরে সকলের মাঝে নিজের বিশেষকে আবিষ্কার করা।৬৬ অর্থনীতিবাদের (economism) মতে—সকল কারণ-ই আসলে অর্থনৈতিক, যথেষ্ট মুক্তি পাওয়া যাবে না। এই গ্লোবাল পুঁজিবাদী অর্থনীতি একটা বহু-মাথাওয়ালা হাইড্রা, যা সমাজের মানুষের মাঝে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু মানুষকে একাধিক স্তরে আলাদা করে রাখে, অন্তঃকরণ করে এবং বিন্যস্ত করে।৬৭ পুঁজিবাদ অঞ্চল থেকে অঞ্চলে জাতি, শ্রেণী এবং লিঙ্গের সকল জটিল এবং আন্তঃসম্পর্কের অঞ্চলে কাজ করে আঞ্চলিক মূল্যবোধের রেজিমকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে।


নাজাত বা উদ্ধার ইতিহাস হিসেবে ঐতিহাসিক ডোনা হারাওয়ে যে সব বিধি বা নীতি প্রত্যাখান করেছিলেন—“আমরা কি বোমা সময়মত নিস্ত্রিয় করতে পারি?”—বি-বিচ্ছেদায়নকে (disalienation) অবশ্যই অচলাবস্থায় অত্যাচারের এই বহুমুখী উচু-নিচু বিন্যাস বা হায়ারার্কিকে অবশ্যই অনাবৃত করতে হবে, বাতিল করতে হবে। সেইসাথে স্থানীয়ভাবে তাদের একত্রিত হওয়ার উপায়গুলিকেও চূর্ণ করতে হবে।৬৮ এই পথে, আমাদের অবশ্যই উৎপাদনশীল, সামাজিক ও প্রতীকী বস্তুবাদসমূহে পুঁজির সম্প্রসারণশীল পুনর্বাসনকে পাড়ি দিতে হবে।৬৯ এটির ফলাফলই নিয়ে যায় টোটালিটারিয়ানিজমে। পুঁজিবাদ সবকিছুকে পণ্যায়িত করে—এখানে মঙ্গলে যাওয়া, সেখানে ঘুমানো, লিথিয়াম হ্রদ, ভেন্টিলেটর বা বায়ুরন্ধ্র মেরামত, এমনকি তার নিজের টেকসই নির্মাণ এবং আরো আরো অনেক কিছু… যা ক্রমান্বয়ে পাওয়া যায় কারখানা এবং খামারের বাহিরে। এখানে সব জায়গাতেই সকলকে বাজারের অধীন করা হয়.. এবং এমন একটা সময়ে যেটা রাজনীতিবিদদের দ্বারা ক্রমাগত নরত্বারোপিত (anthropomorphized) হয়, তারা কখনো এটাকে পষ্ট করেন না।৭০



মোদ্দাকথা হলো, কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটানো থেকে যদি কৃষি-অর্থনীতির চক্রের সারিবদ্ধ অনেক প্যাথোজেনের মাঝের যেকোন একটিকে সফলভাবে মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হয়, তবে পুঁজি এবং তার স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। এই ক্ষতিকে প্রশমিত করতে চেয়েছিল বুর্জোয়াদের দালালেরা, যার মধ্যে গ্লেন উল্লেখযোগ্য। আমাদের গ্রুপের সর্বশেষ বেশ কয়েকটি কাজের হিসেবে, কৃষিব্যবসা জনস্বাস্থ্যের সাথে যুদ্ধরত।৭১ জনস্বাস্থ্য হেরে যাচ্ছে।



যাইহোক, বৃহত্তর মানবতা যদি এ জাতীয় সংঘাত জিতে যায়, তবে আমরা নিজেদের আবার কোন একটা গ্রহীয় বিপাকে (a planetary metabolism) ফিরিয়ে দিতে পারি— যা জায়গা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত এবং আমাদের বাস্তুসংস্থান ও আমাদের অর্থনীতিকে পুনরায় সংযুক্ত করে।৭২ এ জাতীয় কল্পনা ইউটোপিয়ার ব্যাপারের চেয়েও বেশি কিছু। এ রকম করার মধ্য দিয়ে আমরা তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে পারি। আমরা বনের জটিলতাগুলোকে রক্ষা করি, কেননা এটা এইসব মরণঘাতী জীবাণুগুলিকে তার হোস্ট-এর ভিতর আটকে রাখে এবং তার ছড়িয়ে পড়াকে বিরত রাখে।৭৩ প্রাণীসম্পদ এবং ফসলে আমরা বিচিত্রতাকে পুনঃপ্রবর্তন করি। সেইসাথে প্রাণী ও ফসলের চাষকে পুনরায় সংহত করি, যা এই জীবাণুগুলির তীব্রতা ও ভৌগোলিক ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখে।৭৪ আমরা আমাদের খাদ্যযোগ্য প্রাণীদের অন-সাইটে পুনরুৎপাদনের অনুমতি দেই, প্রাকৃতিক নির্বাচন পুনরায় চালু করি যা প্রতিরোধ ক্ষমতার বিবর্তনের মাঝে রোগজীবাণুকে সঠিক সময়ে ট্রাক করে। বড় ব্যাপার হলো, যাতে স্রেফ অন্য প্রতিযোগীরা বাজার থেকে বিতাড়িত হয় এমন করে প্রকৃতি এবং সম্প্রদায়কে নিজেদের মতো ব্যবহার বন্ধ করি। আমাদের সকলেরই টিকে থাকা প্রয়োজন।



এই উপায় কোনভাবেই পৃথিবীর জন্মহার কমানোর নয়, বরং সম্ভবত পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের মত আরও কিছু। এটি আমাদের বেশিরভাগ জটিল সমস্যাগুলো ‍দূর করতে সহায়তা করবে, শার্টের হাতা গোটানোর মতো। নিউইয়র্ক থেকে বেইজিং পর্যন্ত আমরা কেউই আর বসার ঘরে আটকা থাকতে চাই না। কিংবা আমাদের মৃত্যুশোক, আরও দুর্দশার কিছু অথবা এমন মহামারীর ভেতর দিয়ে কেউই যেতে চাই না। হ্যাঁ, সংক্রামক রোগগুলি মানব ইতিহাসে সবসময়ই অকালমৃত্যুর সবচেয়ে বড় উৎস এবং হুমকি হয়ে থেকে যাবে। কিন্তু রোগজীবাণু এখন সার্কুলেশনের মাঝে রয়েছে এবং প্রায় প্রতি বছরই খারাপ অবস্থা ছড়িয়ে পড়ছে। সম্ভবত আমরা ১৯১৮ সালের পর থেকে একশো বছরের মাঝে সবচেয়ে কম সময়ে আরও একটি মহামারীর সম্মুখীন হয়েছি। আমরা প্রকৃতিকে যেভাবে ব্যবহার করি সেই ধরনের সাথে কি আমরা মূলগতভাবে সামঞ্জস্য করতে পারি এবং এমন সংক্রমণের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সন্ধিতে পৌছাতে পারি?

____________

২৭শে মার্চ, ২০২০

Notes

. Max Roser, Hannah Ritchie, and Esteban Ortiz-Ospina, “Coronavirus Disease (COVID-19)—Statistics and Research,” Our World in Data, accessed March 22, 2020.

. Brian M. Rosenthal, Joseph Goldstein, and Michael Rothfeld, “Coronavirus in N.Y.: ‘Deluge’ of Cases Begins Hitting Hospitals,” New York Times, March 20, 2020.

. Hannah Rappleye, Andrew W. Lehren, Laura Stricklet, and Sarah Fitzpatrick, “’The System Is Doomed’: Doctors, Nurses, Sound off in NBC News Coronavirus Survey,” NBC News, March 20, 2020.

. Eliza Relman, “The Federal Government Outbid States on Critical Coronavirus Supplies After Trump Told Governors to Get Their Own Medical Equipment,” Business Insider, March 20, 2020; David Oliver, “Trump Announces U.S.-Mexico Border Closure to Stem Spread of Coronavirus,” USA Today, March 19, 2020.

. Neil M. Ferguson et al. on behalf of the Imperial College COVID-19 Response Team, “Impact of Non-Pharmaceutical Interventions (NPIs) to Reduce COVID-19 Mortality and Healthcare Demand,” March 16, 2020.

. Nassim Nicholas Taleb, The Black Swan (New York: Random House, 2007); Chen Shen, Nassim Nicholas Taleb, and Yaneer Bar-Yam, “Review of Ferguson et al. ‘Impact of Non-Pharmaceutical Interventions,’” New England Complex Systems Institute, March 17, 2020.

. NewTmrw, Twitter post, March 21, 2020.

. Rodrick Wallace, “Pandemic Firefighting vs. Pandemic Fire Prevention” (unpublished manuscript, March 20, 2020). Available upon request.

. Jonathan Allen, “Trump’s Not Worried About Coronavirus: But His Scientists Are,” NBC News, February 26, 2020; Deb Riechmann, “Trump Disbanded NSC Pandemic Unit That Experts Had Praised,” AP News, March 14, 2020.

১০. David E. Sanger, Eric Lipton, Eileen Sullivan, and Michael Crowley, “Before Virus Outbreak, a Cascade of Warnings Went Unheeded,” New York Times, March 19, 2020.

১১. Marisa Taylor, “Exclusive: U.S. Axed CDC Expert Job in China Months Before Virus Outbreak,” Reuters, March 22, 2020.

১২. Howard Waitzkin, ed., Health Care Under the Knife: Moving Beyond Capitalism for Our Health (New York: Monthly Review Press, 2018).

১৩. Richard Lewontin and Richard Levins, “Let the Numbers Speak,” International Journal of Health Services 30, no. 4 (2000): 873–77.

১৪. Owen Matthews, “Britain Drops Its Go-It-Alone Approach to Coronavirus,” Foreign Policy, March 17, 2020; Rob Wallace, “Pandemic Strike,” Uneven Earth, March 16, 2020; Isabel Frey, “‘Herd Immunity’ Is Epidemiological Neoliberalism,” Quarantimes, March 19, 2020.

১৫. Adam Payne, “Spain Has Nationalized All of Its Private Hospitals as the Country Goes into Coronavirus Lockdown,” Business Insider, March 16, 2020.

১৬. Jeva Lange, “Senegal Is Reportedly Turning Coronavirus Tests Around ‘within 4 Hours’ While Americans Might Wait a Week,” Yahoo News, March 12, 2020.

১৭. Steph Sterling and Julie Margetta Morgan, New Rules for the 21st Century: Corporate Power, Public Power, and the Future of Prescription Drug Policy in the United States (New York: Roosevelt Institute, 2019).

১৮. Jason Koebler, “Hospitals Need to Repair Ventilators: Manufacturers Are Making That Impossible,” Vice, March 18, 2020.

১৯. Manli Wang et al., “Remdesivir and Chloroquine Effectively Inhibit the Recently Emerged Novel Coronavirus (2019-nCoV) In Vitro,” Cell Research 30 (2020): 269–71.

২০. Autonomous Groups Are Mobilizing Mutual Aid Initiatives to Combat the Coronavirus,” It’s Going Down, March 20, 2020.

২১. Kristian G. Andersen, Andrew Rambaut, W. Ian Lipkin, Edward C. Holmes, and Robert F. Garry, “The Proximal Origin of SARS-CoV-2,” Nature Medicine (2020).

২২. Rob Wallace, “Notes on a Novel Coronavirus,” MR Online, January 29, 2020.

২৩. Marius Gilbert et al., “Preparedness and Vulnerability of African Countries Against Importations of COVID-19: A Modelling Study,” Lancet 395, no. 10227 (2020): 871–77.

২৪. Juanjuan Sun, “The Regulation of ‘Novel Food’ in China: The Tendency of Deregulation,” European Food and Feed Law Review 10, no. 6 (2015): 442–48.

২৫. Emma G. E. Brooks, Scott I. Robertson, and Diana J. Bell, “The Conservation Impact of Commercial Wildlife Farming of Porcupines in Vietnam,” Biological Conservation 143, no. 11 (2010): 2808–14.

২৬. Mindi Schneider, “Wasting the Rural: Meat, Manure, and the Politics of Agro-Industrialization in Contemporary China,” Geoforum 78 (2017): 89–97.

২৭. Robert G. Wallace, Luke Bergmann, Lenny Hogerwerf, Marius Gilbert, “Are Influenzas in Southern China Byproducts of the Region’s Globalising Historical Present?,” in Influenza and Public Health: Learning from Past Pandemics, ed. Jennifer Gunn, Tamara Giles-Vernick, and Susan Craddock (London: Routledge, 2010); Alessandro Broglia and Christian Kapel, “Changing Dietary Habits in a Changing World: Emerging Drivers for the Transmission of Foodborne Parasitic Zoonoses,” Veterinary Parasitology 182, no. 1 (2011): 2–13.

২৮. David Molyneux et al., “Zoonoses and Marginalised Infectious Diseases of Poverty: Where Do We Stand?,” Parasites & Vectors 4, no. 106 (2011).

২৯. Stephen S. Morse et al., “Prediction and Prevention of the Next Pandemic Zoonosis,” Lancet 380, no. 9857 (2012): 1956–65; Rob Wallace, Big Farms Make Big Flu: Dispatches on Infectious Disease, Agribusiness, and the Nature of Science (New York: Monthly Review Press, 2016).

৩০. Robert G. Wallace et al., “The Dawn of Structural One Health: A New Science Tracking Disease Emergence Along Circuits of Capital,” Social Science & Medicine 129 (2015): 68–77; Wallace, Big Farms Make Big Flu.

৩১ Steven Cummins, Sarah Curtis, Ana V. Diez-Roux, and Sally Macintyre, “Understanding and Representing ‘Place’ in Health Research: A Relational Approach,” Social Science & Medicine 65, no. 9 (2007): 1825–38; Luke Bergmann and Mollie Holmberg, “Land in Motion,” Annals of the American Association of Geographer, 106, no. 4 (2016): 932–56; Luke Bergmann, “Towards Economic Geographies Beyond the Nature-Society Divide,” Geoforum 85 (2017): 324–35.

৩২. Andrew K. Jorgenson, “Unequal Ecological Exchange and Environmental Degradation: A Theoretical Proposition and Cross-National Study of Deforestation, 1990–2000,” Rural Sociology 71, no. 4 (2006): 685–712; Becky Mansfield, Darla K. Munroe, and Kendra McSweeney, “Does Economic Growth Cause Environmental Recovery? Geographical Explanations of Forest Regrowth,” Geography Compass 4, no. 5 (2010): 416–27; Susanna B. Hecht, “Forests Lost and Found in Tropical Latin America: The Woodland ‘Green Revolution,’” Journal of Peasant Studies 41, no. 5 (2014): 877–909; Gustavo de L. T. Oliveira, “The Geopolitics of Brazilian Soybeans,” Journal of Peasant Studies 43, no. 2 (2016): 348–72.

৩৩. Mariano Turzi, “The Soybean Republic,” Yale Journal of International Affairs 6, no. 2 (2011); Rogério Haesbaert, El Mito de la Desterritorialización: Del ‘Fin de Los Territorios’ a la Multiterritorialidad (Mexico City: Siglo Veintiuno, 2011); Clara Craviotti, “Which Territorial Embeddedness? Territorial Relationships of Recently Internationalized Firms of the Soybean Chain,” Journal of Peasant Studies 43, no. 2 (2016): 331–47.

৩৪. Wendy Jepson, Christian Brannstrom, and Anthony Filippi, “Access Regimes and Regional Land Change in the Brazilian Cerrado, 1972–2002,” Annals of the Association of American Geographers 100, no. 1 (2010): 87–111; Patrick Meyfroidt et al., “Multiple Pathways of Commodity Crop Expansion in Tropical Forest Landscapes,” Environmental Research Letters 9, no 7 (2014); Oliveira, “The Geopolitics of Brazilian Soybeans”; Javier Godar, “Balancing Detail and Scale in Assessing Transparency to Improve the Governance of Agricultural Commodity Supply Chains,” Environmental Research Letters 11, no. 3 (2016).

৩৫. Rodrick Wallace et al., Clear-Cutting Disease Control: Capital-Led Deforestation, Public Health Austerity, and Vector-Borne Infection (Basel: Springer, 2018).

৩৬. Mike Davis, Planet of Slums (New York: Verso, 2016); Marcus Moench & Dipak Gyawali, Desakota: Reinterpreting the Urban-Rural Continuum (Kathmandu: Institute for Social and Environmental Transition, 2008); Hecht, “Forests Lost and Found in Tropical Latin America.”

৩৭. Ariel E. Lugo, “The Emerging Era of Novel Tropical Forests,” Biotropica 41, no. 5 (2009): 589–91.

৩৮. Robert G. Wallace and Rodrick Wallace, eds., Neoliberal Ebola: Modeling Disease Emergence from Finance to Forest and Farm (Basel: Springer, 2016); Wallace et al., Clear-Cutting Disease Control; Giorgos Kallis and Erik Swyngedouw, “Do Bees Produce Value? A Conversation Between an Ecological Economist and a Marxist Geographer,” Capitalism Nature Socialism 29, no. 3 (2018): 36–50.

৩৯. Robert G. Wallace et al., “Did Neoliberalizing West African Forests Produce a New Niche for Ebola?,” International Journal of Health Services 46, no. 1 (2016): 149–65.

৪০. Wallace and Wallace, Neoliberal Ebola.

৪১. . Júlio César Bicca-Marques and David Santos de Freitas, “The Role of Monkeys, Mosquitoes, and Humans in the Occurrence of a Yellow Fever Outbreak in a Fragmented Landscape in South Brazil: Protecting Howler Monkeys Is a Matter of Public Health,” Tropical Conservation Science 3, no. 1 (2010): 78–89; Júlio César Bicca-Marques et al., “Yellow Fever Threatens Atlantic Forest Primates,” Science Advances e-letter, May 25, 2017; Luciana Inés Oklander et al., “Genetic Structure in the Southernmost Populations of Black-and-Gold Howler Monkeys (Alouatta caraya) and Its Conservation Implications,” PLoS ONE 12, no. 10 (2017); Natália Coelho Couto de Azevedo Fernandes et al., “Outbreak of Yellow Fever Among Nonhuman Primates, Espirito Santo, Brazil, 2017,” Emerging Infectious Diseases 23, no. 12 (2017): 2038–41; Daiana Mir, “Phylodynamics of Yellow Fever Virus in the Americas: New Insights into the Origin of the 2017 Brazilian Outbreak,” Scientific Reports 7, no. 1 (2017).

৪২ Mike Davis, The Monster at Our Door: The Global Threat of Avian Flu (New York: New Press, 2005); Jay P. Graham et al., “The Animal-Human Interface and Infectious Disease in Industrial Food Animal Production: Rethinking Biosecurity and Biocontainment,” Public Health Reports 123, no. 3 (2008): 282–99; Bryony A. Jones et al., “Zoonosis Emergence Linked to Agricultural Intensification and Environmental Change,” PNAS110, no. 21 (2013): 8399–404; Marco Liverani et al., “Understanding and Managing Zoonotic Risk in the New Livestock Industries,” Environmental Health Perspectives 121, no, 8 (2013); Anneke Engering, Lenny Hogerwerf, and Jan Slingenbergh, “Pathogen-Host-Environment Interplay and Disease Emergence,” Emerging Microbes and Infections 2, no. 1 (2013); World Livestock 2013: Changing Disease Landscapes (Rome: Food and Agriculture Organization of the United Nations, 2013).

৪৩. Robert V. Tauxe, “Emerging Foodborne Diseases: An Evolving Public Health Challenge,” Emerging Infectious Diseases 3, no. 4 (1997): 425–34; Wallace and Wallace, Neoliberal Ebola; Ellyn P. Marder et al., “Preliminary Incidence and Trends of Infections with Pathogens Transmitted Commonly Through Food—Foodborne Diseases Active Surveillance Network, 10 U.S. Sites, 2006–2017,” Morbidity and Mortality Weekly Report 67, no. 11 (2018): 324–28.

৪৪. Robert G. Wallace, “Breeding Influenza: The Political Virology of Offshore Farming,” Antipode 41, no. 5 (2009): 916–51; Robert G. Wallace et al., “Industrial Agricultural Environments,” in The Routledge Handbook of Biosecurity and Invasive Species, ed. Juliet Fall, Robert Francis, Martin A. Schlaepfer, and Kezia Barker (New York: Routledge, forthcoming).

৪৫. John H. Vandermeer, The Ecology of Agroecosystems (Sudbury, MA: Jones and Bartlett, 2011); Peter H. Thrall et al., “Evolution in Agriculture: The Application of Evolutionary Approaches to the Management of Biotic Interactions in Agro-Ecosystems,” Evolutionary Applications 4, no. 2 (2011): 200–15; R. Ford Denison, Darwinian Agriculture: How Understanding Evolution Can Improve Agriculture (Princeton: Princeton University Press, 2012); Marius Gilbert, Xiangming Xiao, and Timothy Paul Robinson, “Intensifying Poultry Production Systems and the Emergence of Avian Influenza in China: A ‘One Health/Ecohealth’ Epitome,” Archives of Public Health 75 (2017).

৪৬. Mohammad Houshmar et al., “Effects of Prebiotic, Protein Level, and Stocking Density on Performance, Immunity, and Stress Indicators of Broilers,” Poultry Science 91, no. 2 (2012): 393–401; A. V. S. Gomes et al., “Overcrowding Stress Decreases Macrophage Activity and Increases Salmonella Enteritidis Invasion in Broiler Chickens,” Avian Pathology 43, no. 1 (2014): 82–90; Peyman Yarahmadi , Hamed Kolangi Miandare, Sahel Fayaz, and Christopher Marlowe A. Caipang, “Increased Stocking Density Causes Changes in Expression of Selected Stress- and Immune-Related Genes, Humoral Innate Immune Parameters and Stress Responses of Rainbow Trout (Oncorhynchus mykiss),” Fish & Shellfish Immunology 48 (2016): 43–53; Wenjia Li et al., “Effect of Stocking Density and Alpha-Lipoic Acid on the Growth Performance, Physiological and Oxidative Stress and Immune Response of Broilers,” Asian-Australasian Journal of Animal Studies 32, no, 12 (2019).

৪৭. Virginia E. Pitzer et al., “High Turnover Drives Prolonged Persistence of Influenza in Managed Pig Herds,” Journal of the Royal Society Interface 13, no. 119 (2016); Richard K. Gast et al., “Frequency and Duration of Fecal Shedding of Salmonella Enteritidis by Experimentally Infected Laying Hens Housed in Enriched Colony Cages at Different Stocking Densities,” Frontiers in Veterinary Science (2017); Andres Diaz et al., “Multiple Genome Constellations of Similar and Distinct Influenza A Viruses Co-Circulate in Pigs During Epidemic Events,” Scientific Reports 7 (2017).

৪৮. Katherine E. Atkins et al., “Modelling Marek’s Disease Virus (MDV) Infection: Parameter Estimates for Mortality Rate and Infectiousness,” BMC Veterinary Research 7, no. 70 (2011); John Allen and Stephanie Lavau, “‘Just-in-Time’ Disease: Biosecurity, Poultry and Power,” Journal of Cultural Economy 8, no. 3 (2015): 342–60; Pitzer et al., “High Turnover Drives Prolonged Persistence of Influenza in Managed Pig Herds”; Mary A. Rogalski, “Human Drivers of Ecological and Evolutionary Dynamics in Emerging and Disappearing Infectious Disease Systems,” Philosophical Transactions of the Royal Society B 372, no. 1712 (2017).

৪৯. Wallace, “Breeding Influenza”; Katherine E. Atkins et al., “Vaccination and Reduced Cohort Duration Can Drive Virulence Evolution: Marek’s Disease Virus and Industrialized Agriculture,” Evolution 67, no. 3 (2013): 851–60; Adèle Mennerat, Mathias Stølen Ugelvik, Camilla Håkonsrud Jensen, and Arne Skorping, “Invest More and Die Faster: The Life History of a Parasite on Intensive Farms,” Evolutionary Applications10, no. 9 (2017): 890–96.

৫০. Martha I. Nelson et al., “Spatial Dynamics of Human-Origin H1 Influenza A Virus in North American Swine,” PLoS Pathogens 7, no. 6 (2011); Trevon L. Fuller et al., “Predicting Hotspots for Influenza Virus Reassortment,” Emerging Infectious Diseases 19, no. 4 (2013): 581–88; Rodrick Wallace and Robert G. Wallace, “Blowback: New Formal Perspectives on Agriculturally-Driven Pathogen Evolution and Spread,” Epidemiology and Infection 143, no. 10 (2014): 2068–80; Ignacio Mena et al., “Origins of the 2009 H1N1 Influenza Pandemic in Swine in Mexico,” eLife 5 (2016); Martha I. Nelson et al., “Human-Origin Influenza A(H3N2) Reassortant Viruses in Swine, Southeast Mexico,” Emerging Infectious Diseases 25, no. 4 (2019): 691–700.

৫১. Wallace, Big Farms Make Big Flu, 192–201.

৫২. Safer Food Saves Lives,” Centers for Disease Control and Prevention, November 3, 2015; Lena H. Sun, “Big and Deadly: Major Foodborne Outbreaks Spike Sharply,” Washington Post, November 3, 2015; Mike Stobbe, “CDC: More Food Poisoning Outbreaks Cross State Lines,” KSL, November 3, 2015.

৫৩. Sally Goldenberg, “Alicia Glen, Who Oversaw de Blasio’s Affordable Housing Plan and Embattled NYCHA, to Depart City Hall,” Politico, December 19, 2018.

৫৪. Gary A. Dymski, “Racial Exclusion and the Political Economy of the Subprime Crisis,” Historical Materialism 17 (2009): 149–79; Harold C. Barnett, “The Securitization of Mortgage Fraud,” Sociology of Crime, Law and Deviance 16 (2011): 65–84.

৫৫. Bob Ivry, Bradley Keoun, and Phil Kuntz, “Secret Fed Loans Gave Banks $13 Billion Undisclosed to Congress,” Bloomberg, November 21, 2011.

৫৬. Michael J. de la Merced and David Barboza, “Needing Pork, China Is to Buy a U.S. Supplier,” New York Times, May 29, 2013.

৫৭. Goldman Sachs Pays US$300m for Poultry Farms,” South China Morning Post, August 4, 2008.

৫৮. Goldman Sachs Invests in Chinese Pig Farming,” Pig Site, August 5, 2008.

৫৯. Katie Rogers, Lara Jakes, Ana Swanson, “Trump Defends Using ‘Chinese Virus’ Label, Ignoring Growing Criticism,” New York Times, March 18, 2020.

৬০. Karl Marx, Capital: A Critique of Political Economy, vol. 3 (New York: Penguin, 1993), 362.

৬১. Eric Lipton, Nicholas Fandos, Sharon LaFraniere, and Julian E. Barnes, “Stock Sales by Senator Richard Burr Ignite Political Uproar,” New York Times, March 20, 2020.

৬২. Sharmin Mossavar-Rahmani et al., “ISG Insight: From Room to Grow to Room to Fall,” Goldman Sachs’ Investment Strategy Group.

৬৩. Corona Crisis: Resistance in a Time of Pandemic,” Marx21, March 21, 2020; International Assembly of the Peoples and Tricontinental Institute for Social Research, “In Light of the Global Pandemic, Focus Attention on the People,” Tricontinental, March 21, 2020.

৬৪. Wallace et al., “The Dawn of Structural One Health.”

৬৫. Wallace et al., “Did Neoliberalizing West African Forests Produce a New Niche for Ebola?”; Wallace et al., Clear-Cutting Disease Control.

৬৬. Ernest Mandel, “Progressive Disalienation Through the Building of Socialist Society, or the Inevitable Alienation in Industrial Society?,” in The Marxist Theory of Alienation (New York: Pathfinder, 1970); Paolo Virno, A Grammar of the Multitude (Los Angeles: Semiotext(e), 2004); Del Weston, The Political Economy of Global Warming: The Terminal Crisis (London: Routledge, 2014); McKenzie Wark, General Intellects: Twenty-One Thinkers for the Twenty-First Century (New York: Verso, 2017); John Bellamy Foster, “Marx, Value, and Nature,” Monthly Review 70, no. 3 (July–August 2018): 122–36); Silvia Federici, Re-enchanting the World: Feminism and the Politics of the Commons (Oakland: PM, 2018).

৬৭. Butch Lee and Red Rover, Night-Vision: Illuminating War and Class on the Neo-Colonial Terrain (New York: Vagabond, 1993); Silvia Federici, Caliban and the Witch: Women, the Body and Primitive Accumulation(New York: Autonomedia, 2004); Anna Tsing, “Supply Chains and the Human Condition,” Rethinking Marxism 21, no. 2 (2009): 148–76; Glen Sean Coulthard, Red Skin, White Masks: Rejecting the Colonial Politics of Recognition (Minneapolis: University of Minnesota Press, 2014); Leandro Vergara-Camus, Land and Freedom: The MST, the Zapatistas and Peasant Alternatives to Neoliberalism (London: Zed, 2014); Jackie Wang, Carceral Capitalism (Los Angeles: Semiotext(e), 2018).

৬৮. Donna Haraway, “A Cyborg Manifesto: Science, Technology, and Socialist-Feminism in the Late Twentieth Century,” in Simians, Cyborgs and Women: The Reinvention of Nature (New York: Routledge, 1991); Keeanga-Yamahtta Taylor, ed., How We Get Free: Black Feminism and the Combahee River Collective (Chicago: Haymarket, 2017).

৬৯. Joseph Fracchia, “Organisms and Objectifications: A Historical-Materialist Inquiry into the ‘Human and the Animal,’” Monthly Review 68, no. 10 (March 2017): 1–17; Omar Felipe Giraldo, Political Ecology of Agriculture: Agroecology and Post-Development (Basel: Springer, 2019).

৭০. Franco Berardi, The Soul at Work: From Alienation to Autonomy (Los Angeles: Semiotext(e), 2009); Maurizio Lazzarato, Signs and Machines: Capitalism and the Production of Subjectivity (Los Angeles: Semiotext(e), 2014); Wark, General Intellects.

৭১. Rodrick Wallace, Alex Liebman, Luke Bergmann, and Robert G. Wallace, “Agribusiness vs. Public Health: Disease Control in Resource-Asymmetric Conflict,” submitted for publication, 2020, available at https://hal.archives-ouvertes.fr.

৭২. Robert G. Wallace, Kenichi Okamoto, and Alex Liebman, “Earth, the Alien Planet,” in Between Catastrophe and Revolution: Essays in Honor of Mike Davis, ed. Daniel Bertrand Monk and Michael Sorkin (New York: UR, forthcoming).

৭৩. Wallace et al., Clear-Cutting Disease Control.

৭৪. Wallace et al., “Industrial Agricultural Environments.”

প্রকাশঃ ২রা বৈশাখ, ১৪২৮:::১৫ই এপ্রিল, ২০২১