ইহুদী ধর্মমত, করোনাভাইরাস এবং কেয়ার

জুডিথ বাটলার


['ইহুদী ধর্মমত, করোনাভাইরাস এবং যত্নআত্তি(Care)’ প্রসঙ্গে আমেরিকান দার্শনিক জুডিথ বাটলারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন র‍্যাবাই শ্মুলি ইয়ানক্লোউইটয(Shmuly Yanklowitz)। জুডিথ বাটলারের তাত্ত্বিকভাবে বায়োলজিক্যাল সেক্সের ধারণা আর সামাজিক জেন্ডারের ধারণার ফারাক মোচন/সংকোচন, ক্যুইয়ার থিয়োরী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। Gender Trouble (১৯৯০), Bodies that matter (১৯৯৩), Undoing Gender (২০০৪) ইত্যাদি বাটলারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইয়ানক্লোউইটয আমেরিকার অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মগুরু। ইহুদী ধর্মগুরুকে দেয়া জুডিথ বাটলারের এই ভিডিও সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন কৃপা নাঈম। কৃপা নাঈম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য মাস্টার্স পাশ করেছেন।]


আজকে আমাদের সাথে আছেন অধ্যাপক জুডিথ বাটলার, যিনি ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের Comparative Literature and the program of Critical Theory বিভাগের ম্যাক্সিন এলিয়ট অধ্যাপক। তিনি ১৯৮৪ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে পিএইচডি করেন। তিনি বেশকিছু বই লিখেছেন এবং তাঁর সর্বশেষ বই the force of non-violence ভার্সো প্রেস থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।


হ্যাঁ, আমারও ভালো লাগছে এখানে এসে।


ধন্যবাদ। আমি সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি, আপনার ইহুদী পরিচয় মোটাদাগে কিভাবে আপনার কাজে নীতি-নৈতিকতা বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছিল?


আচ্ছা। এটা খুবই ভালো একটা প্রশ্ন। যখন আমি অল্পবয়সী ছিলাম, আমি আমার সিনেগগে কোর্স নিয়েছি, এটা মূলত General Jewish Education Studies প্রোগ্রামের অংশ ছিল, কিন্তু আমি সবসময় এই প্রোগ্রামে ইথিক্স ক্লাসগুলোর জন্যই সেটায় নিবন্ধন করতাম। কারণ আমি এই প্রোগ্রামের ক্লাসগুলোয় আলোচিত বিতর্কগুলো উপভোগ করতাম এবং আমি সেগুলোকে খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করতাম। এবং অবশ্যই সেই সময়টা ছিলো সম্ভবত ষাট ও সত্তরের দশকের শুরুর দিকে, আর যুদ্ধ-পরবর্তী জেনারেশনের অংশ হিসাবে আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানুষ কিভাবে তাঁদের বিভিন্ন নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিল। তাঁরা, মানে ইহুদিরা কি পালিয়ে গিয়েছিল নাকি আঘাত করেছিল অথবা কিভাবে তাঁরা(ইহুদিরা) সেটার প্রতিরোধে অংশ নিতে পেরেছিল কিংবা তাঁরা কিভাবে একে অপরের সহায় হয়ে উঠেছিল সেই পরিস্থিতিতে—যেটাকে আমরা সবাই খুব নির্মম বলেই জানি। আর তাই আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও পড়াশুনা শুরু করেছিলাম যেটা দর্শন নিয়ে আমার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি আমি স্পিনোজা এবং মাইমোনিডেস পড়া শুরু করি আর ইহুদী ধর্মতত্ত্বের শিক্ষা ও দার্শনিক লেখাজোখা থেকেই আমার পৃথিবী নিয়ে চিন্তাভাবনার একটা রাস্তা তৈরি হতে থাকে। আর আমি মনে করি রাস্তা তৈরির কাজটা এখনও চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমি মার্টিন বুবের'কে নিয়ে লেখা প্রকাশ করেছি এবং আপনি জানেনই বুবেরের একটা ধারণা ছিল যে, আমরা কেবলমাত্র একত্রে থাকা কোনো ইন্ডিভিজ্যুয়াল বা ব্যক্তিস্বত্বা নই যারা কিনা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। বরঞ্চ আমরা বেঁচে থাকি একে অপরের সাথে একটি জাগতিক সম্পর্কের মধ্যে। আর অন্যেদের সাথে এই জাগতিক সম্পর্কে বেঁচে থাকার মানেটা আসলে কি? এর মানে হলো, আমার জীবনটা আসলে অপরের জীবনের সাথে আবদ্ধ। এবং অন্যের জীবনে কোন কিছু ঘটলে সেটা আমার জীবনেও প্রভাব ফেলে, কারণ আমি তাঁর/তাঁদের সাথে এই জাগতিক সম্পর্কের দ্বারা যুক্ত।


সম্ভবত অন্যান্য সময়ের চেয়ে আমরা বর্তমান অবস্থায় এই বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি।


হ্যাঁ, আমি মনে করি এই ব্যাপারটা সত্য। আমরা জীবনের বিভিন্ন অবস্থাগুলোকে শেয়ার করি, আমরা একই বাতাসে নিঃশ্বাস নেই, আমরা সবাই এই একই পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকি। হ্যাঁ অবশ্যই, এগুলো আমাদেরকে যুক্ত করে রাখে ভালোর জন্য এবং খারাপের জন্য।


তাহলে, জেন্ডার(লিঙ্গীয় সম্পর্ক) তত্ত্বের একজন পণ্ডিত(authority) হিসাবে আপনি আগামী দশ বছরে এই ফিল্ডটির চেহারা কেমন দেখেন? আপনি কি মনে করেন এটি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হবে?


আপনি জানেন যে, এই ফিল্ডটি বিভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে যেমনটা আপনি জানেন কতগুলো সরব ট্রান্স-কম্যুনিটি আছে, যারা বিভিন্ন বিষয়ে বাইনারির বাইরে গিয়ে নিজেদের বর্ণনা/প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন ভাষাকে বেছে নিচ্ছে। এবং এই ধরণের পরীক্ষামূলক কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে যাবার এটাই উপযুক্ত সময়। কিন্তু একই সাথে আমরা এটাও জেনেছি ভুল ক্যাটেগরিতে ফেলে দেয়ার জন্য মানুষকে কতখানি খেসারত দিতে হয়েছে। আর আমাদের এটাও ভাবতে হবে তাঁদের অধিকারগুলো কি কি এবং কিসের মধ্যে তাঁদের ভালো থাকাটা নির্ভর করে। জেন্ডার নিয়ে কাজ করাটা কোন বিলাসিতা না। এটা এক ধরনের জাগতিক প্রয়োজনীয়তা, একজনের নিজের দেহ এবং ভাষার মধ্যে একটা স্বস্তিকর পথ খোঁজা—যেন তাঁরা এই পৃথিবীতে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে ও নিঃশ্বাস নিতে পারে। কিন্তু এর সাথে আমি মনে করি নারীবাদী আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, পৃথিবী জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আসছে। এটা জেন্ডার স্টাডিজের একটা অংশ এবং এটা সবসময়ই নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই সহিংসতা বেড়ে গিয়েছে। জেন্ডার স্টাডিজ তথা নারীবাদী আন্দোলন সামাজিক-অর্থনৈতিক সাম্যে এবং স্বাধীনতার জন্য এই সংগ্রামকে অব্যাহত রেখেছে। এই সংগ্রাম পৃথিবীতে নির্ভয়ে বেঁচে থাকতে পারার এবং কোন রকম হয়রানি ও হেনস্তার আশঙ্কা ছাড়া চলাফেরা করতে পারার সম্ভাবনা তৈরি করবার সংগ্রাম।


আচ্ছা। জাগতিক প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গেলে, অনেকেই ভেবে থাকেন, ভালো কিংবা খারাপ অর্থেই হোক, দর্শন সবসময় এক ধরনের বিমূর্ততা নিয়ে কাজ্ করে যেটা যেকারো [প্রাত্যহিক] জীবনের সাথে অপ্রাসঙ্গিক। দর্শনশাস্ত্রের বিষয়বস্তুগুলো আমেরিকার মানুষের জীবনের সাথে কিভাবে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে বলে আপনি মনে করেন?


আসলে আমি মনে করি না যে, এই পর্যন্ত যতজন ট্যাক্সি চালককে আমি পেয়েছি তাঁরা প্রত্যেকেই একেকজন দার্শনিক। কারণ এমন কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন আছে, যেমন আমি কিভাবে বেঁচে আছি, আমি কি করি, কোনটা আমাকে জীবনের অর্থ দেয়, কোনটা আমাদেরকে জীবনের অর্থ দেয়, আমি কি অপরের সাথে যুক্ত, যদি যুক্ত হয়ে থাকি তাহলে সেটা কিভাবে? আমি অপরের কাছে কিভাবে ঋনী, তাঁরা আমার কাছে কিভাবে ঋনী? এবং আমি মনে করি যে জগতে থাকা নিয়ে এগুলোই হল মৌলিক প্রশ্ন। কিন্তু তার সাথে নৈতিক প্রশ্নও আছে যেমন, ভালো জীবন কি অথবা জীবন-যাপন করার সর্বোত্তম পন্থা কি। আর আমার ধারণা মানুষ সবসময়ই এই প্রশ্নগুলা করতে থাকে।


আচ্ছা, তাহলে আজকের শেষ প্রশ্ন করছি। করোনাভাইরাস এবং বর্তমান সংকটে কোয়ারেন্টিনের এই সময়কালে আপনার চিন্তাভাবনা বা তত্ত্বকে কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন কিংবা পাল্টে দিয়েছে কিনা। যদি পাল্টে দিয়ে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে এবং চারপাশের কোটি কোটি মানুষের জীবনকে কিভাবে তা প্রভাবিত করছে?


হ্যাঁ, এই নিয়ে আমারও বিস্তর ভাবনাচিন্তা এসেছে। আমি আগে স্থানীয় বিষয় থেকে শুরু করে এরপর বৈশ্বিক আলোচনায় আসব। স্থানীয় পরিসরে বলতে গেলে আমার একটা ছেলে আছে যে কিনা পাশের শহরে থাকে এবং সেই জায়গাটা আমার এই জায়গা থেকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। আর আমি এখানে আইসোলেশনে আছি এবং আমি আমার ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি (হাসি)। মানে আমি তাকে দূর থেকে দেখছি। সে এখানে এসেছিল কিছুক্ষণ আগে, কিন্তু আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। যে কারণে তাঁকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি সেটা খুবই রূঢ় ছিল আমার জন্য এবং আমি মনে করি তাঁর জন্যও রূঢ় ছিল। যেহেতু এটা একটা দু’তরফা বিষয়।


হা হা হা!


কিন্তু এর কারণ শুধু এটা নয় যে, সে আমার মধ্যে সংক্রমণ ঘটাবে। হতে পারে সেও আমার থেকে সংক্রমিত হচ্ছে। আমরা জানিনা কে কার দ্বারা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। (হাসি) এবং কে এর বাহক এবং কে বাহক নয়। তাই আমরা আসলে একরকম অন্ধকারে বাস করছি। আমরা এমন এক ধরণের অস্বচ্ছতায় আছি যেখানে আমরা জানিনা কে বাহক এবং কে নয়, কে যোগাযোগ করছে এবং কে করছে না। এবং এই অবস্থায় প্রয়োজন বিশেষ কেয়ারের, আর নিজের আইসোলেশনকে , আর নিজের আইসোলেশনকে কেয়ার(Care, যত্নআত্তি) হিসাবে গণ্য করাটা খুবই অদ্ভুত। কেয়ার বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝি কাউকে কিছু দেয়া কিংবা স্পর্শ করাকে, আশ্রয় দেয়াকে। কিন্তু এখন আমি নিজেকে আশ্রয় দিচ্ছি যেটা ঠিক কেয়ার বলে অনুভুত হয় না। কিন্তু এটা কেয়ার, কারণ আমি আসলেই জানিনা যে আমি কাউকে ক্ষতি করে ফেলছি কিনা। সেজন্যই আমাকে অবশ্যই এখানেই থাকতে হবে। হুমম… কিন্তু সেই সাথে এটাও আমাকে পরিস্কারভাবে ভাবাচ্ছে তাঁদেরকে নিয়ে যাদের কোন আশ্রয় নেই। আপনি কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবেন যদি আপনার কোন আশ্রয় না থাকে? আপনি এমনকি কোন স্বাস্থ্যসেবাও আশা করতে পারেন না। আপনি আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন, কারণ এই খাতটিতে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থায়ন করা হয়নি, যথেষ্ট স্টাফ নেই এবং তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত সরবরাহও নেই। আর এর কারণ হল এই দেশ(আমেরিকা) জনস্বাস্থ্যকে রাজনৈতিকভাবে কোন অগ্রাধিকার দেয়নি। আমরা ধরে নিচ্ছি যে, মানুষ তাদের নিজেদের পরিসর তৈরী করেছে ব্যক্তিগত উপায়ে, নিজেদের রুটিরুজির মাধ্যমে। কিন্তু তাঁদের কি হবে যাদের নিজেদের রুটিরুজির কোন ব্যবস্থাই নেই অথবা তাঁদের কাজের ক্ষেত্র কোন ধরনের [এই] স্বাস্থ্যসেবা দিতে অপারগ?


হ্যাঁ


ব্যক্তিমালিকানাধীন এই সমাজব্যবস্থা স্বভাবতই সেই জনগোষ্ঠীকে হিসাব থেকে বাদ দিয়ে রাখে যারা কারোর ব্যবসায়িক লাভের ভাগীদার হবার যোগ্যতা রাখে না। আমি মনে করি না স্বাস্থ্যসেবা কোন ‘ফায়দা’ লুটবার ক্ষেত্র। বরঞ্চ এটা মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিৎ। এটা জনসাধারণের মঙ্গলের জন্যই হওয়া উচিৎ এবং এটা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা উচিৎ আমাদের সকলের। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ভাইরাসটা মানুষের সম্পদ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলছে। এবং অবশ্যই এই বৈশ্বিক রণক্ষেত্রে আমরা দেখছি ইকুয়েডরে এমন কোন ঘরই নেই যেখানে লাশগুলোকে রাখতে পারবে। আর ইতালিতে মর্গ তৈরী করতে হচ্ছে। কারণ আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে কেউ বৈশ্বিক সমতাকে তোয়াক্কা করে না। তবে আমি মনে করি, স্বাস্থ্যসেবায় বৈশ্বিকভাবে সমতা আনা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে সকল জনসাধারণের জন্য মঙ্গল হিসাবে বিবেচনা করা আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা—যা আমরা নিতে পারি। আর এর মানে হল যে, আমরা একে অপরের সাথে যুক্ত, কেবল যে আমার আপন যেমন আমার আইজ্যাক যে ওকল্যান্ডে আছে সেরেফ সেই নয় বরঞ্চ ইকুয়েডরের মানুষগুলোও—যদিও আমি তাঁদের ভাষায় খুব ভালোভাবে কথা বলতে পারি না।


আপনি সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং আমরাও পড়েছি যে নিউ শিকাগোতে শতকরা প্রায় ৭০-৮০ ভাগ মৃত্যু হয়েছে। আবার আপনি ভিন্ন বর্ণ ও লিঙ্গের মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং উদাহরণস্বরূপ বলেছেন কেউ নির্যাতকের সাথে বন্দী হয়ে আছে যা খুবই ভয়াবহ। এরপর আপনি বলেছেন অন্ধকারের কথা এবং নাইন্থ প্লেগের[i] বিষয়টাও আপনি জানেন…


হ্যাঁ


নাইন্থ প্লেগটা হলো প্লেগ অফ ডার্কনেস (Plague of darkness) এবং আমি তা নিয়ে বলেছিলাম যে সেইসময় মানুষ তাদের স্থান থেকে সরে যেতে পারেনি এবং একে অপরকে দেখতেও পায়নি। এখানে আমার উদ্বেগের জায়গাটা হচ্ছে আমরা যখন একে অপরকে দেখতে পাচ্ছি না কিংবা অনুভব করতে পারছি না, তখন আমাদের সহানুভূতির ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া কিংবা দূর্বল হয়ে যাওয়া নিয়ে।


আমি মনে করি এই প্রশ্নটা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা কেউ কাউকে দেখতে পারছিনা অথচ আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলো সচল আছে আর আমরা না দেখেই একে অপরের উপস্থিতি বুঝতে পারছি। এবং যেসব মানুষগুলো সেখানে অদেখারূপে উপস্থিত রয়েছে তাঁরাও সেটা জানে। আর আমিও এটাই বিশ্বাস করি যে, সহমর্মিতার এমন অনেকগুলো ধরন থাকতে পারে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। হয়তো সেই সহমর্মিতা আমি যেমনভাবে দেখতে চাই তেমনটা নাও হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নৈতিক চ্যালেঞ্জই হল তাঁদেরকে কেয়ার করা যাদেরকে আমরা চিনি না, যাদেরকে আমরা কোনদিন দেখিনি, যাদের নাম হয়ত কোনদিন আমি বা আমরা জানবো না, যাদের ভাষায় হয়ত আমরা কথা বলিনা—আমরা তারপরও তাঁদের সাথে যুক্ত রয়েছি। বৈশ্বিক পর্যায়ে এটাই হল আমাদের এখনকার কর্তব্য এবং এটা পালন করা বেশ কঠিন কারণ আমরা অন্ধকারে আছি। কিন্তু এই অন্ধকারে থাকার মানে এই নয় যে আমরা নৈতিক থাকতে পারব না।


ঠিক বলেছেন। আমি এরকম কিছুর কথাই ভাবছিলাম। আমরা আজ এখানেই শেষ করছি। আপনি কেয়ার নিয়ে যা বলেছেন তাতে আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি। এবং কেয়ার আসলে এমন কোন ব্যবস্থাপত্র না যেটার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। কেয়ার বিভিন্ন মূহুর্তে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়। আর কেয়ারের অর্থ কি এই মুহূর্তে, সেটা মৌলিকভাবেই আলাদা।


হ্যাঁ, অদ্ভুত, আসলেই।


অধ্যাপক বাটলার, আপনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সাফল্য, সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা কামনা করছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।


ধন্যবাদ র‍্যাবাই।


______________

৭ই এপ্রিল, ২০২০

অনুবাদকের টীকা


[i] নাইন্থ প্লেগঃ নাইন্থ প্লেগ নিয়ে জানতে বাইবেলের এক্সোডাস অংশটি দেখতে পারেন। ইহুদি বাইবেল এবং খ্রিস্টান বাইবেলে দশটি প্লেগের কথা উল্লেখ আছে। এই ‘প্লেগ’ বলতে প্লেগ রোগ বোঝায় না, curse বা ‘আযাব’ অর্থে বোঝানো হয়। সেমেটিক মিথোলজি থেকে জানা যায়, মিশরের ফারাও যখন মুসা ও ইহুদিদেরকে মিশর ত্যাগ করতে দিচ্ছিলেন না তখন ঈশ্বর একে একে এই দশটি প্লেগ প্রেরণ করে। নাইন্থ প্লেগে ঈশ্বরের নির্দেশে মুসা (Moses) দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করলে পুরো মিশর অন্ধকারে ডুবে যায়। এই সময়ে তিন দিন যাবত কেউ কাউকে দেখতে পায়নি এবং কেউ নিজ স্থান থেকে সরেও যেতে পারেনি। এই ‘সরে যেতে না পারা’টা একধরনের অক্ষমতা (incapable) হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।


নাইন্থ প্লেগকে যখন Plague of Darkness হিসাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তখন Darkness (অন্ধকারচ্ছন্নতা) কে ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। মিশরীয় সূর্যদেবতা রা(Ra)’কে ক্ষমতাহীন দেখানো অথবা হতে পারে ঈশ্বর যেহেতু ‘আলো’ তাই সে মিশরীয়দের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন- এমন ব্যাখ্যা রয়েছে। আবার ‘অন্ধকার’ অনুভব করার কারণ হিসেবে খামসিন ঝড়ের কথা কেউ কেউ বলে- যা সাহারা মরুভূমি থেকে উৎপত্তি হওয়া ধুলিঝড় যেটা মিশরে তিনদিন যাবত অবস্থান করেছিল এবং বাতাসে ধুলি আসার কারণের সূর্যের আলো পৌছাতে পারছিল না। এছাড়াও বাইবেল অনুসারে ‘অন্ধকার’কে ‘সৃষ্টিপূর্ববতী অবস্থা’ ও ‘শূন্যতা’(void) হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।



প্রথম প্রকাশঃ ৯ই জুন, ২০২০

সর্বশেষ সংশোধনঃ ৯ই জুন, ২০২০

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/3350005478401912/