আগামবেনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েঃ গণতান্ত্রিক জৈব-রাজনীতি কি সম্ভব?

পানাজিওটিস সোটিরিস


[পানাজিওটিস সোটিরিস (Panagiotis Sotiris) গ্রীসের ক্রিট বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় ও এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন পড়ান। এছাড়াও তিনি গ্রীকের আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত আছেন। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ জার্নালের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। গ্রীসের সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, মার্ক্সীয় দর্শন ও লুই আলথুসারের দর্শন তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু। করোনাভাইরাস মহামারী প্রসঙ্গে আগামবেনের অভিঘাত যে বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে, তাতে তিনিও যুক্ত হয়েছেন। গত ১৩ই মার্চে তাঁর Against Agamben: Is a Democratic Biopolitics Possible? লেখাটি প্রকাশিত হয়। পরদিন ক্রিটিক্যাল লিগ্যাল থিংকিং সাইটে লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হয় লেখকের অনুমতির সাপেক্ষে। এই লেখাটির আরেকটি সংশোধিত ও তথ্যসূত্রসম্বলিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে ভিউপয়েন্ট ম্যাগাজিন।


সোটিরিসের এই লেখাটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন খান মুনতাসির আরমান। আরমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।]



জর্জিও আগামবেনের সাম্প্রতিক পর্যালোচনা, কোভিড -১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রতিক্রিয়ায় বাস্তবায়িত পদক্ষেপগুলিকে ‘ব্যতিক্রম বা জরুরী অবস্থা’র জৈব-রাজনীতির(biopolitics) অনুশীলন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আর জৈব-রাজনীতি সম্পর্কে কিভাবে ভাবতে হবে তা নিয়ে তাঁর এই পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক উঠেছে।জর্জিও আগামবেনের সাম্প্রতিক পর্যালোচনা, কোভিড -১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রতিক্রিয়ায় বাস্তবায়িত পদক্ষেপগুলিকে ‘ব্যতিক্রম বা জরুরী অবস্থা’র জৈব-রাজনীতির(biopolitics) অনুশীলন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আর জৈব-রাজনীতি সম্পর্কে কিভাবে ভাবতে হবে তা নিয়ে তাঁর এই পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক উঠেছে।[i]


বায়োপলিটিক্সের গোঁড়ার ধারণা, যেমনটি মিশেল ফুকো কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল তা পুঁজিবাদী আধুনিকতায় উত্তরণের সাথে সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলিকে বোঝার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। বিশেষত যেভাবে ক্ষমতা ও বলপ্রয়োগ করা হয়েছে তার বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে। আগে জীবন ও মৃত্যুর অধিকারী হিসেবে সার্বভৌম যেই ক্ষমতা চর্চা করতো, সেটা এখন জনসাধারণের স্বাস্থ্য (এবং উৎপাদনক্ষমতা) সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ক্ষমতার চর্চায় পরিবর্তিত হয়েছে।বায়োপলিটিক্সের গোঁড়ার ধারণা, যেমনটি মিশেল ফুকো কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল তা পুঁজিবাদী আধুনিকতায় উত্তরণের সাথে সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলিকে বোঝার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। বিশেষত যেভাবে ক্ষমতা ও বলপ্রয়োগ করা হয়েছে তার বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে। আগে জীবন ও মৃত্যুর অধিকারী হিসেবে সার্বভৌম যেই ক্ষমতা চর্চা করতো, সেটা এখন জনসাধারণের স্বাস্থ্য (এবং উৎপাদনক্ষমতা) সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ক্ষমতার চর্চায় পরিবর্তিত হয়েছে।[ii] পূর্বতন কোন নজীর ব্যতিরেকেই, এটা যেকোন প্রকারের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ও জুলুমের বিস্তার ঘটিয়েছে। বাধ্যতামূলক টিকাদান থেকে আরম্ভ করে জনপরিসরে ধূমপান নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত এই রকম বিভিন্ন ঘটনায় ব্যবহৃত স্বাস্থ্যনীতির রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শিক ব্যাপার-স্যাপার বুঝবার জন্য জৈব-রাজনীতির ধারণা ব্যবহার করা হয়।


একইসাথে এখানে এমন সব ঘটনাবলীকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকছে যেগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনপরিসরে উঠে আসে না, চাপা পড়ে থাকে। সুপ্রজননবিদ্যা তথা ইউজেনিক্স এর মতো ট্রেন্ড্রি বিষয়ে বর্ণবাদের 'বৈজ্ঞানিক' ভিত্তি খোঁজার প্রচেষ্টাকেও আমাদের বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকছে । এবং প্রকৃতপক্ষে আগামবেন এটাকে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন এবং ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এর উদাহরণ টেনে তিনি ‘জরুরী অবস্থা’র আধুনিক রূপকে তত্ত্বায়নের কোশেশ করেছেন। বলা যায়, ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে জুলুমের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটেছে।একইসাথে এখানে এমন সব ঘটনাবলীকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকছে যেগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনপরিসরে উঠে আসে না, চাপা পড়ে থাকে। সুপ্রজননবিদ্যা তথা ইউজেনিক্স এর মতো ট্রেন্ড্রি বিষয়ে বর্ণবাদের 'বৈজ্ঞানিক' ভিত্তি খোঁজার প্রচেষ্টাকেও আমাদের বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকছে । এবং প্রকৃতপক্ষে আগামবেন এটাকে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন এবং ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এর উদাহরণ টেনে তিনি ‘জরুরী অবস্থা’র আধুনিক রূপকে তত্ত্বায়নের কোশেশ করেছেন। বলা যায়, ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে জুলুমের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটেছে।[iii]


কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত প্রশ্নগুলো অবশ্যই জৈব-রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহকে হাজির করছে। অনেক ভাষ্যকার এই মত দিয়েছেন, চীন এই বৈশ্বিক মহামারী দমন বা মন্থর করতে এই কারণে পদক্ষেপ নিয়েছে যে, যা’তে করে জৈব-রাজনীতির একটি কর্তৃত্ববাদী সংস্করণ সে বাস্তবায়ন করতে পারবে। কোয়েরেন্টাইন ব্যবস্থার মেয়াদ প্রলম্বিত করে ও সামাজিক কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তা বাস্তবায়ন করবে। চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিপুল হাতিয়ার সমৃদ্ধ অস্ত্রাগার, নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির কল্যাণে এটা সম্ভবও হয়েছে।


কিছু কিছু ব্যাখ্যাকার এমনটাও মত দিয়েছেন যে, উদার গণতন্ত্রে বলপ্রয়োগের তেমন সুযোগ না থাকায় এবং ব্যক্তির আচার-আচরণের ঐচ্ছিক পরিবর্তনে অধিক মনোযোগ আরোপ করায়, তারা একই পদক্ষেপ নিতে পারে না এবং এটি বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলার প্রচেষ্টাকে বাঁধা দিতে পারে।


যাইহোক, আমি মনে করি যদি এই দোটানাকে বিচারবুদ্ধির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিদের উপর উদারনৈতিক নির্ভরতা ও কর্তৃত্ববাদী জৈব-রাজনীতির মধ্যকার দ্বন্দ্ব আকারে দাবী করা হয়, তাহলে তা বড্ড সরলীকরণ করা হবে।


তাছাড়া, এটা স্পষ্ট যে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাদামাটা প্রতিকারগুলো, এই যেমন সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টাইন, ‘সামাজিক দূরত্ব’, এসবের সম্ভাব্য উপযোগিতা জৈব-রাজনীতির নজর থেকে কোন না কোনভাবে ফসকে গেছে। ১৯ শতক থেকে চলে আসা জনস্বাস্থ্যের ম্যানুয়াল বলছে, ভ্যাকসিন বা সফল ভাইরাস-বিরোধী চিকিৎসার অনুপস্থিতিতে এই পদক্ষেপগুলো কিছুটা উপশম তৈরী করতে পারে, বিশেষত নাজুক মানুষদের জন্য।


এবং চিন্তা করলে দেখা যাবে এটা বিশেষভাবে সত্য যে এমনকি উন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতিগুলোতেও জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামোগত অবনতি ঘটেছে। বৈশ্বিক মহামারী সর্বোচ্চ সীমায় পৌছালে এটা দাঁড়াতেই পারবে না, যদি না এর ছড়িয়ে পড়ার হার হ্রাস করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।


বুদ্ধিজীবীদের ভাবনার যে বিষয় সেই কোয়ারেন্টিনের চেয়ে, বরং স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সেবা নিতে বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (ICU) বেড পেতে অপেক্ষমান পেনশন দিয়ে জীবন চালানো ব্যক্তির বেলায় ‘ন্যাংটো জীবন’ (Naked life) খুব কাছাকাছির ব্যাপার— আগামবেনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এমন কথা কেউ বলতে পারেন।


উপরের আলোচনার আলোকে ফুকোর ভিন্ন এক পুনর্পাঠের পরামর্শ আমি দিতে চাই৷ আমার মনে হয়, ক্ষমতা চর্চার খুবই শর্তসাপেক্ষিক ধারণা যেটা মিশেল ফুকোর ছিল তা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই।উপরের আলোচনার আলোকে ফুকোর ভিন্ন এক পুনর্পাঠের পরামর্শ আমি দিতে চাই৷ আমার মনে হয়, ক্ষমতা চর্চার খুবই শর্তসাপেক্ষিক ধারণা যেটা মিশেল ফুকোর ছিল তা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই।[iv] এই অর্থে,

একটা গণতান্ত্রিক বা এমনকি কম্যুনিস্ট জৈব-রাজনীতি সম্ভব কিনা এমন একটা প্রশ্ন তোলা নায্যই হবে ।


এই প্রশ্নটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলতে পারিঃ বলপ্রয়োগ ও নজরদারির ব্যবস্থাগুলোর সমান্তরাল বিস্তার বাদ দিয়ে, বড়-পরিসরে আচরণ রূপান্তরসহ, জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষার পক্ষে উপকারী সামষ্টিক কোন কর্মপন্থা নেওয়া সম্ভব কি?


সত্য, মুক্ত জবান [parrhesia; এমন কেউ যে নিজের মতামত ও ধারণা প্রকাশের জন্য কোনোরকম বাকচাতুর্য্য, নিজের দিকে প্রভাবিত করা বা সরলীকরণ করা বাদেই খোলাখুলিভাবে সত্য কথা বলে] ও নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার(care of self) ধারণাগুলোকে ঘিরে ফুকো নিজেই তাঁর শেষ দিকের কাজগুলোতে এমন ইঙ্গিত করেছেন।সত্য, মুক্ত জবান [parrhesia; এমন কেউ যে নিজের মতামত ও ধারণা প্রকাশের জন্য কোনোরকম বাকচাতুর্য্য, নিজের দিকে প্রভাবিত করা বা সরলীকরণ করা বাদেই খোলাখুলিভাবে সত্য কথা বলে] ও নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার(care of self) ধারণাগুলোকে ঘিরে ফুকো নিজেই তাঁর শেষ দিকের কাজগুলোতে এমন ইঙ্গিত করেছেন।[v] প্রাচীন দর্শনের সাথে এই খুবই মৌলিক সংলাপে, তিনি ‘বায়োসে’র(bios) এমন একটা বিকল্প রাজনীতি প্রস্তাব করেছেন যা কোন প্রকার বলপ্রয়োগের(coercive) মাধ্যম ছাড়া ব্যক্তিক ও সামষ্টিক যত্নআত্তিরকে(care, যত্ন বা লালন করা) সংযুক্ত করে ।


এই প্রেক্ষিতে, মহামারীর সময়ে চলাচল সীমিতকরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কিংবা জনাকীর্ণ গণপরিসরে ধূমপান না করা, অথবা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন সমস্ত ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কার্যকলাপ পরিহার করা ইত্যাদি মীমাংসাগুলো হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গৃহীত সামষ্টিক সিদ্ধান্তের ফল। এর অর্থ হলো, সাদামাটা নিয়মকানুন বা শৃঙ্খলাবোধ থেকে আমরা দায়বদ্ধতা বা দায়িত্বশীলতায় সরে গিয়েছি। অন্যের ক্ষেত্রে করণীয় থেকে নিজেদের ক্ষেত্রে করণীয় বোধে আনা হয়েছে এবং সামাজিকতা স্থগিতের হুকুমজারির বদলে এখন আমরা সচেতনভাবে সামাজিকতা এড়িয়ে চলার প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করেছি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে, সামাজিক ঐক্যের যেকোন বোধকে নষ্ট করে দিতে পারে এমন স্থায়ী বিশেষায়িত ত্রাস বা ভয়ের পরিবর্তে আমরা গ্রহণ করেছি একটা সাধারণ(সবার) লড়াইকে। এর মধ্যে নিহিত আছে সম্মিলিৎ প্রচেষ্টা, সমন্বয় ও সংহতি। এমন একটা গণস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরী অবস্থার পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসংক্রান্ত হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।


গণতান্ত্রিক জৈব-রাজনীতির একটা সম্ভাবনা এটা প্রস্তাব করে৷ জ্ঞানের গণতান্ত্রিকীকরণের ভিত্তিতেও এটা হতে পারে। জ্ঞান অধিগত করার সুযোগ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাওয়া এবং সেইসাথে জনপ্রিয়করণের দরকারে চলা প্রচারণার মারফতে সামষ্টিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্ভব হয়ে উঠেছে। এই সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া জ্ঞান ও বোঝাপড়ার সাথে সম্পর্কিত, কোনোভাবেই কেবল বিশেষজ্ঞদের আওতাভুক্ত নয়।


তৃণমূল থেকে জৈব-রাজনীতি


HIV বা এইচআইভি’র বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, কলঙ্ক মোচনের লড়াই, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা যে এটা ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী’র রোগ না, নিরাপদ যৌনসম্পর্কের শিক্ষাপ্রদানের দাবী, নিদানমূলক ব্যবস্থার উন্নয়নে তহবিল গঠন এবং জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় সকলের অধিগম্যতা নিশ্চিতকরণ—এসবের কোন কিছুই হয়তো ACT UP [AIDS Coalition To Unleash Power, একটা আন্তর্জাতিক তৃণমূল রাজনৈতিক সংগঠন যারা এইডসের বৈশ্বিক মহামারী দমনে কাজ করেছে।] এর মতো আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যতিত সম্ভব হতো না । কেউ এটাকে বলতেই পারেন যে, নিঃসন্দেহে এটা তৃণমূল থেকে চালিত জৈব-রাজনীতির একটা উদাহরণ।


এবং এই বর্তমান সংকটকালে, সামাজিক আন্দোলনসমূহের করবার মতো অনেককিছুই রয়েছে। এই মহামারীর কবলে পড়ে যেই বাড়তি চাপে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা জর্জরিত, সেটাকে সহায়তা করার জন্য তারা তড়িৎ পদক্ষেপের আহবান জানাতে পারে।

এই দুর্যোগকালে তারা ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা ’ বা ‘ইয়া নফসি, ইয়া নফসি ’ মার্কা ব্যক্তিক আতঙ্কগ্রস্থতার বদলে, সংহতি ও সমষ্টির স্ব-গঠিত সংস্থার সম্মিলিত হওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে পারে।


বেসরকারি খাত থেকে প্রয়োজনীয় সামাজিক খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় রিসোর্স সরবরাহ করার জন্য তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা (ও বলপ্রয়োগের) ব্যবহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সেইসাথে, জীবন-বাঁচানোর অত্যাবশ্যকতা হিসেবে সামাজিক পরিবর্তনের দাবী তুলতে পারে।

____________

১৩ই মার্চ, ২০২০


দোহাই


[i] করোনা ভাইরাস মহামারী প্রসঙ্গে আগামবেনের প্রথম ইন্টারভেনশন বা অভিঘাত ও তার প্রতিক্রিয়ার ন্যান্সিঅন্যান্যদের লেখার অনুবাদ বোধিচিত্তে নোট আকারে প্রকাশিত হয়েছে ইতোমধ্যেই। তাছাড়া সমালোচনার প্রত্যুত্তরে আগামবেনের Chiarimenti সহ এই প্রসঙ্গে অন্যান্যলেখাগুলোও অনূদিত হয়েছে।


[ii] দেখুন, মিশেল ফুকো, The History of Sexuality, প্রথম খণ্ড, নিউইয়র্ক, প্যান্থিয়ন বুকস, ১৯৭৮, পৃ ১৩৯-৪০। আরও দেখুন মিশেল ফুকো, Society must be Defended।দেখুন, কলেজ দ্যু ফ্রান্সের ১৯৭৫-৭৬ লেকচার, পিকাডোর, নিউইয়র্ক, ২০০৩, পৃ ২৪৩-৫০।


[iii] জর্জিও আগামবেন, Homo Sacer: Sovereign Power and Bare Life, স্ট্যানফোর্ড, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৮।


[iv] ‘ক্ষমতা সর্বত্র; কেবল সবকিছুকে জড়িয়ে থাকে সেজন্যে না, বরং সব জায়গা থেকে উঠে আসে সেজন্য।...’ (ফুকো, যৌনতার ইতিহাস, খণ্ড ১, পৃ-৯৩)


[v] মিশেল ফুকো, The Care of the Self, যৌনতার ইতিহাসের তৃতীয় খণ্ড, নিউইয়র্ক, প্যান্থিয়ন বুকস, ১৯৮৬। এবং মিশেল ফুকো, Le gouvernement de soi et des autres. Cours au Collège de France. ১৯৮২-৮৩, প্যারিস, Gallimard / Seuil, ২০০৮ ; মিশেল ফুকো, Le courage de la vérité. Le gouvernement de soi et des autres II, Paris EHESS / Gallimard / Seuil, ২০০৯।


প্রথম প্রকাশঃ ১৫ই এপ্রিল, ২০২০

সর্বশেষ সংশোধনঃ ১৫ই এপ্রিল, ২০২০

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/265325961528247/