ARTICLES

"অমরত্ব" কথাটা শুনলেই সবার প্রথমে কাল্পনিক কোন মুভি কিংবা নাটকের কথা ভেসে ওঠে মনে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, অমরত্ব কি কখনো হতে‌ পারে বাস্তবে কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে...

চলুন আজকে তাহলে এটা নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক বৈজ্ঞানিকভাবে,,,

আপনি কিংবা আমি জন্ম নিয়েছি ছোট্ট একটা কোষ থেকে এটা আমাদের সবার জানা। তো, সেই কোষের মূলে থাকে নিউক্লিয়াস আর নিউক্লিয়াসকে আরো সূক্ষভাবে দেখলে পাওয়া যাবে ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে আছে সেই ম্যাজিক!!

ক্রোমোজোমের সবচেয়ে প্রান্তের দিকের অংশটা হচ্ছে "টেলোমিয়ার"।আমরা প্রত্যেকে জন্মের সময়ই বাবা-মায়ের কাছ থেকে টেলোমিয়ার পাই। যত বড় হই তত কোষ ভাগ হতে থাকে তত টেলোমিয়ার খাটো হতে থাকে( যেটাকে বলা হয় "টেলোমিয়ার শটেনিং") এবং একটি পযাের্য় আর কোষ ভাগ হতে পারে না। এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘটে চামড়া, চুল ও রোগ প্রতিরোধক কোষে কারণ এই জায়গাগুলোই দ্রুত বাড়ে। এ কারণে বয়স বাড়লে, এই তিনটি জায়গায় সবার আগে সমস্যা হয় কারণ নতুন কোষ তৈরি না হলে আপনি বয়স্ক হয়ে যাবেন। জামা-কাপড় বা সবকিছু যেমন নতুন থেকে পুরাতন হয়, এ রকম যখন নতুন কোষ আর তৈরি হবে না তখন আপনাকে পুরনো(বয়স্ক) দেখাবে।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ে গবেষণা করার জন্য ২০০৯ সালে এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন, ক্যারোল গ্রেডের, জ্যাক জোস্টাককে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। তাদের গবেষণার তারা এই টেলোমিয়ার এর খাটো হওয়াকে বাধা দানকারী একটা এনজাইম আবিষ্কার করেন যার নাম " টেলোমারেজ এনজাইম"। এটি কোষ বিভাজনের সময় টেলোমিয়ার এর খাটো হওয়া থেকে বাধা দেয়।ম্যাজিকটা ধরতে পেরেছেন! হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন!!

এই এনজাইম কোষ বিভাজনের প্রতিলিপনের সময় অপত্য ডিএনএর টেলোমিয়ার অংশকে ছোট হতে বাধা দেয়( টেলোমিয়ার রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ প্রক্রিয়ায়), ফলে টেলোমিয়ার আর খাটো হতে পারে না আর এরকম যদি প্রতিনিয়ত কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ রেপ্লিকেশনে একই কাজ ঘটতে থাকে তাহলে দেহের কোষ বিভাজন অসীম পর্যন্ত ঘটতে পারবে যখনই প্রয়োজন হবে। মোদ্দাকথা, আপনি বড় হবেন কিন্তু বুড়ো হবেন না,,,

ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং নাহ!! হুম এটাই সেই অমরত্বের ট্রিক্স।

আসুন, এবার একটু মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখি।

এই এনজাইমটি আমাদের দেহের সিলেকটিভ কিছু কোষ শুধুমাত্র এই এনজাইমটি তৈরি করে এবং বয়সের সাথে এই এনজাইমটির ক্ষরনও হ্রাস পেতে থাকে যার কারণে অমরত্ব নামক এই অমৃত মানুষ কোনদিন আস্বাদন করতে পারবে কি না আমরা জানি না। তবে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে।

তবে শুধুমাত্র কোষ বিভাজন ছাড়াও আরো কিছু কারণে টেলোমিয়ার এর শটেনিং প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হতে পারে। কারনগুলো একটু জেনে নিই চলেন,,

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক তিনি প্রমাণ করেছেন, ‘যারা ধূমপান করেন না তাদের টেলোমিয়ার যারা ধূমপান করেন তাদের তুলনায় লম্বা’। তিনি এই তথ্য ইনভারমেন্টাল রিসার্চ নামক সাময়িকীতে ২০১৭ সালে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আশার বাণী হলো, এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে, যারা আগে ধূমপান করতেন কিন্তু এখন করেন না তাদের টেলোমিয়ার লম্বা।

মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘যারা বেশি সময় ধরে কম্পিউটারে বসে থাকে তাদের টেলোমিয়ার খাটো হওয়ার প্রবণতা ৭ ভাগ বেশি’।

লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াং ওয়াং-এর নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মানসিক দুশ্চিন্তা, অশান্তি ও মোটা মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয় ও সাধারণ ওজনের মানুষের তুলনায় খাটো’। বেশি মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয়, লবণযুক্ত খাবার এবং বেশি মিষ্টিযুক্ত খাবার মানুষের ওজন বাড়ায় এবং টেলোমিয়ার খাটো করে কারণ মোটা মানুষের শরীরের কোষবৃদ্ধি শুকনো মানুষের কম। ফলে টেলোমিয়ার খাটো হয়।

তো এই হলো সংক্ষেপে অমরত্ব নিয়ে বায়োলজিক্যালি আমার ছোটখাটো আলাপচারিতা। উল্লেখ্য, প্রসঙ্গ সাপেক্ষে অনেক কিছুই আলোচনায় আনিনি। আপনারা চাইলে পুরো সোর্সটি ( যদিও আমি কয়েকটা সোর্স থেকে ডেটা কালেক্ট করার চেষ্টা করেছি) পড়তে পারেন। লিংক আমি কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিচ্ছি।

ধন্যবাদন্তে -

Alock Sarker