My Writings

2021-Present

Need a heading

রান্নাবান্না আর খাওয়া-দাওয়ার দুনিয়ায় হিরের টুকরো, না না, ভুল বললাম, টুকরো হিরে হল ‘নারকোল’। যেকোনো পদেই একটু নারকোল দিলে সঙ্গেসঙ্গে পদ পরিবর্তন হয়ে যায়।যেমন ধরা যাক, মানকচু বাটা। যেমন ধরা যাক, ওলভাতে। যেমন ধরা যাক, মোচা। যেমন ধরা যাক, ছোলার ডাল। এমনকী, সাদাসিধে, ভোলেভালা, এলেবেলে পেঁপের তরকারিও নারকোলের ছোঁয়ায় এমন হয়ে ওঠে, যেন বলতে ইচ্ছে করে, ‘মহারাজাআআআ, তোমারে সেলাম!’

নারকোলের জলই-বা বাদ থাকে কেন? এক্ষেত্রে অবশ্য সুপরিচিত একটা সূত্র আছে। নারকোলের জল যদি মিষ্টি হয়, তবে নারকোলটা মিষ্টি হবে না। আবার, নারকোলের জল তেমন মিষ্টি না হলে, নারকোলটা মিষ্টি হবেই। হান্ড্রেড পার সেন্ট গ্যারান্টি।

আর, ঘুগনিতে নারকোল পড়লে? তখন ঘুগনি আর ঘুগনি থাকে না, ‘রূপকথা’ হয়ে যায়।

এসবের পরেও একটা কথা আছে। নারকোলের সব রূপের মধ্যে আমার মতে জিনিয়াস হল, ‘নারকোল কোরা’।

একবাটি লাল মুড়ি, বেশ খানিকটা নারকোল কোরা আর বড়ো চামচের কয়েক চামচ মোটা দানার চিনি। আহ!

তবে, এক্ষেত্রে একটা সতর্কীকরণ আছে। সব খাওয়া বিদেশি কেতা মেনে জমে না। আমার মতে, শহরাঞ্চলে ঘরের মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে, চামচের বদলে নিজের ডান হাত ব্যবহার করে মুড়ি-নারকোল কোরা খেলেই ব্যাপারটা খোলে ভালো।

আর গ্রামের দিকে, দাওয়ায় বসে মুড়ি-নারকোল কোরা, পাশের নারকোল গাছ থেকেই ঝিরিঝিরি হাওয়া, ভরদুপুর গড়িয়ে বিকেল গড়িয়ে গোধূলি। একটা গোটা দিন শেষ হচ্ছে, আর অমনি ধীরে ধীরে শূন্য হচ্ছে মুড়ি-নারকোল কোরার বাটি…

Need a heading

ছোটোবেলায় বেশিরভাগ সময়টাই আমরা তিন ভাইবোনে, অর্থাৎ, আমি আর আমার দুই মামাতো বোন নেশায় চুর হয়ে থাকতাম। আমরা যখন নেশা করতাম, তখন আর কারুর কোনো কথাই আমাদের কানে ঢুকত না।

কিড স্ট্রিটে এম এল এ হস্টেলের গেটের পাশেই ছিল একটা ছোট্ট গুমটি মতো দোকান। সেই দোকানটা আমাদের নেশার জিনিস রাখত।

আমাদের গতিবিধি মূলত ওই গেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত থাকলেও আমরা সেই দোকানটাতে যেতে পারতাম। কেউ কিছু বলত না। কোনো বকাবকি না, মারধর তো নয়ই।

দোকানটা থেকে আমরা সিগারেট কিনে আনতাম। আমাদের সেই সিগারেট ধরানোর জন্য কোনো দেশলাই লাগত না, কোনো লাইটারও নয়। তাদের ফিল্টারগুলো হত হালকা গোলাপি রঙের। একটা অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যেত।

মামারবাড়িতে দুই মামুই প্রচণ্ড সিগারেট খেত। তবে, দু-জনের ধরন ছিল একেবারেই আলাদা। বড়োমামু একটা সাদা কাগজে সিগারেটের মশলা নিয়ে সেটাকে সরু করে পাকিয়ে কশের ধারে দু-পাটি দাঁত দিয়ে এমনভাবে চেপে খেত, মনে হত ‘কর্নেল’। পেশেন্স খেলায় ডুবে গিয়ে মুখের সিগারেট কখন নিভে যেত, বড়োমামুর খেয়াল থাকত না। সিগারেট নিভে যাওয়ার পরেও বড়োমামু নেভা সিগারেটটা মুখের মধ্যে কর্নেলের স্টাইলে ধরে রাখত ততক্ষণই, যতক্ষণ না তাসের পেশেন্স খেলা শেষ হচ্ছে।

ওদিকে মেজোমামুর সিগারেট খাওয়ার ধরন ছিল সাদাসিধে। চেইন স্মোকার ছিল। বছরে একবার বলত, ‘এবারে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেব’, ঠিক দু-দিন পরেই আবার…

আমরা তিনজনে বড়োমামুর স্টাইলটা রপ্ত করতে চেষ্টা করতাম। মুশকিল হত একটাই। বেশিরভাগ সময়েই মুখ থেকে ফসকে বিছানায় পড়ে যেত।

তবে, আমাদের একটা সুবিধে ছিল। কোনো অ্যাশট্রে লাগত না। মামুরা যেমন শেষ পর্যন্ত একটুখানি অংশ ফেলে দিতে বাধ্য হত, আমরা কিন্তু আমাদের সিগারেটের এক-শো শতাংশই খেয়ে ফেলতাম।

আমাদের সিগারেট থেকে বায়ুদূষণ হত না।

আমাদের সিগারেটের ব্র্যান্ড ছিল, ‘লজেন্স’।


জল আমরা ‘খাই’, না, ‘পান করি’?

বইয়ের পাতায় আমরা জল ‘পান করি’, কিন্তু, রোজের জীবনে ‘খাই’। আমাদের জল ‘খাওয়াতেই’ আনন্দ।

জলের আরেক নাম জীবন, সেকথা সবাই জানে। কিন্তু, জলের যে আরও একটা নাম আছে এবং সেটা, ‘আরাম’, সেকথা এখনও কেউ জানে না। কারণ, এই ‘আরাম’ নামটা আমার দেওয়া।

অবশ্য, আরামের ক্ষেত্রে জলটা বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হল, পাত্রটা। অর্থাৎ,

কীসে জল খাচ্ছি? আঁজলার জলে একরকম আরাম, ফেলে আসা দিনের মাটির শঙ্কু আকৃতির গেলাসে একরকম আরাম, কুঁজোর জলে একরকম আরাম, আবার স্টিলের কলসির জলে আর একরকম আরাম।

চুমুকে একরকম আরাম, আলগোছে আর একরকম।

বড়ো হওয়ার পর থেকে আমি আর মা আবার ফ্রিজ খুলে বোতল বের করে সরাসরি গলায় ‘ঢক’। তবে, একটা কথা মানতেই হবে। বিশুদ্ধ ঠান্ডা জল আর ঠান্ডা-গরম মেশানো জলের ব্যাপারটা মোটেই এক নয়। বিশুদ্ধ ঠান্ডা জলে একরকমের আরাম হলেও, তেষ্টাটা পুরোটা মেটে না। ঠান্ডা-গরম জল ৭০:৩০ অনুপাতে মিশিয়ে খেলে আরামও হয়, ওদিকে তেষ্টাটাও মেটে।