Popular Articles

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: একবিংশ শতাব্দীতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন চ্যালেঞ্জ

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এখনি!!




এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: একবিংশ শতাব্দীতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রফেসর ড. মোঃ তানভীর রহমান,  ডাঃ রনি ইবনে মাসুদ, ডিপার্ট্মেন্ট  অব মাইক্রোবাইয়োলজি এন্ড হাইজিন, ফ্যাকাল্টি অব ভেটেরিনারি সাইন্স,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-২২০২

মোবাইলঃ ০১৭৯৭৮৭০৬৭৮, ইমেইলঃ masud45891@bau.edu.bd; tanvirahman@bau.edu.bd 

 


আমরা সকলেই খাদ্যা নিরাপত্তা কিংবা নিরাপদ খাদ্য বিষয়টির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটা সময় ছিলো, যখন দেশের মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারতো না, সেখানে ২০২৩ সালে দাড়িয়ে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই না, আমরা বিশ্ব দরবারেও নজির সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয় এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। (ছবি-প্রথম আলো), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ১০ অর্থবছরে ডিম ও দুধ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর মাংস উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ১৭ কোটি, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। এই ১০ অর্থবছরে দুধ উৎপাদন ৬১ লাখ টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টন। সব ধরনের মাংসের ক্ষেত্রে যা ৪৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৭ লাখ টন।

 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটিই প্রতিয়মান হয় যে, আমরা শুধু খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি তেমনটা না, বাংলাদেশ এখন খাদ্য রপ্তানিতেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এর ভাষ্যমতে, মাংস, দুধ ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা মেটানোর পর তা দেশের বাইরে আমরা রপ্তানি করতে পারব। (ছবি-বনিক বার্তা) নিত্যদিনের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের উপর আরেকটি দায়িত্ব বর্তায়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া মানে আমরা ফুড সিকিউরিটি কে নিশ্চিত করছি। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে বিষয়টিকে আরেকটু ভালোভাবে ব্যাখ্যা করি, 1996 সালের বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনের ভিত্তিতে, ফুড সিকিউরিটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে যে, যখন সমস্ত মানুষ, সর্বদা, পর্যাপ্ত নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবারে শারীরিক এবং অর্থনৈতিক প্রাপ্যতা থাকে যা একটি সক্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তাদের খাদ্যের চাহিদা এবং খাদ্য পছন্দগুলি পূরণ করে।

 

অপরদিকে ফুড সিকিউরিটির পাশাপাশি আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করা আমাদের সবার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় সেটি হলো ফুড সেফটি। আমরা অনেক সময় ফুড সিকিউরিটি এবং ফুড সেফটি বিষয় দুটিকে এক করে ফেলি। যেহেতু দুটিরই বাংলা অর্থ দাঁড়ায় খাদ্য নিরাপত্তা বা নিরাপদ খাদ্য। কিন্তু ফুড সেফটি বলতে আসলে বোঝায়, একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যা খাদ্যের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রস্তুতি এবং সংরক্ষণের বিশদ বর্ণনা এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র ফুড সেফটি বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ার কারনে বিশ্বে আনুমানিক 600 মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ প্রায় 10 জনের মধ্যে 1 জন, দূষিত খাবার খাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং প্রতি বছর 420,000 মারা যায়। এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে অনিরাপদ খাদ্যের ফলে উৎপাদনশীলতা এবং চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতি বছর 110 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। 


চলুন জেনে নেই এবার, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর সাথে খাদ্যা নিরাপত্তার সম্পর্ক কি? 

 

প্রথমে জেনে নেই, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি অবস্থা যা সংগঠিত হয় কতিপয় ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করার জন্য। এসব ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এরা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজিত হয়ে যায় বলে নিজেদের স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে ও বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে মানুষ বা পশুর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কতটা ভয়াবহ তা কিছু তথ্য দিয়ে জানানোর চেষ্টা করি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা - বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য শীর্ষ ১০ টি হুমকির মধ্যে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সকে তালিকাভুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, ২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাপী এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর দরুন সংক্রমণের জন্য ১.২৭ মিলিয়ন মৃত্যুর সরাসরি দায়ী করা হয়েছিল। ২০৫০ সালের মধ্যে, বছরে ১০ মিলিয়ন পর্যন্ত মৃত্যু ঘটতে পারে। যদি এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহল এটি বার্ষিক জিডিপি থেকে ৩.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার কমিয়ে দিতে পারে এবং পরবর্তী দশকে আরও ২৪ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অর্থাৎ এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা উপরোক্ত তথ্য থেকেই সকলের কাছে প্রতিয়মান হওয়ার কথা। অনেক গবেষকদের মতে, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট হতে পারে আগামী দিনের করোনার মতো নতুন একটি প্যান্ডেমিক।

 

এখন প্রশ্ন হলো, খাদ্য নিরাপত্তার সাথে এন্টিবায়োটিক/এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর সম্পর্ক কি?


তাহলে চলুন একটু বিশদভাবে আলোচনা করি। যেহেতু ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স দুইটা বিষয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হয়েছে, তাই এই দুইটি বিষয় নিয়ে কারো মনে কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। 

 

এখন কথা হলো, দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রানীজ আমিষের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সেটার বাসার ডাইনিং টেবিলেই হোক, বা রেস্টুরেন্টের টেবিলেই হোক। এটি যেনো প্রত্যহিক খাদ্যা তালিকায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমিষ ছাড়া আমাদের শরীরের বৃদ্ধি হওয়া সম্ভব নয়। শরীরে নানা ধরণের হরমোন, এন্টিবডী, এনজাইম ও টিস্যু তৈরি হতে আমিষের দরকার হয়। শরীরের এসিড-ক্ষার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতেও আমিষের ভূমিকা অনেক। যখন আমরা আমিষ খাই, সেগুলি ভেঙ্গে নানা ধরণের এমিনো এসিডে পরিণত হয়। এই এমিনো এসিড থেকেই শরীর তার জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ বা প্রোটিন তৈরি করে নেয়। আর এই প্রক্রিয়ায় মাছ মাংস ডিম কিংবা দুধ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে। এতে অবশ্যই অবদান আছে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের সাথে সংযুক্ত সকল মানুষের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সারাদেশে প্রতিদিন মুরগির মাংসের চাহিদা ৩০ লাখ কেজিরও বেশি। এরমধ্যে প্রায় ২০ লাখ কেজি মাংস আসে পোল্ট্রি মুরগি থেকে।

 

এখন খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বিপণন কিংবা রান্নার সময় যদি সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন না করি, তাহলে খাবারের মাধ্যমে এএমআর জীবাণু মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করবে, এক্ষেত্রে যদি তারা প্যাথোজেনিক হয়, তাহলে মানুষের অসুস্থতা হতে পারে, এবং সেই অসুস্থতা অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রতি সাড়া নাও দিতে পারে। 

আবার অণুজীবগুলি যদি নিজেরাই প্যাথোজেনিক না হয়, তাও তারা আমাদের খাদ্য সরবরাহের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স জিন ট্রান্সফারে ভূমিকা রাখতে পারে। এবং খাদ্য পণ্যের ব্যাপক চলাচলের কারণে, তারা এএমআর বিস্তারে অবদান রাখতে পারে সেইসাথে অন্যান্য প্যাথোজেনিক জীবের প্রতিরোধের প্রেরণ করতে পারে।

 

অর্থাৎ বিষয়টি দাড়ালো, যদি আমরা খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি মাথায় না রাখি, তাহলে যে কোন সময় এ এম আর বাহী প্যাথোজেন মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে যেতে পারে, এবং তা ব্যপক আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে একটা সময় আমরা এন্টিবায়োটিক খেলেও তা কাজে লাগবে না। অকালে মানুষের মৃত্যু হবে।

 

তাহলে এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের করনীয় কি হতে পারে?  


এখনো আমরা অনেকেই খাদ্যে ভেজাল মানে বুঝি ফরমালিন দেওয়া, কিংবা ইথিলিন দিয়ে ফল পাকানো। এর বাইরেও যে কত ভয়ংকর বিষয় আমাদের চোখের আড়ালে ঘটে যাচ্ছে আমরা সে ব্যাপারে মোটেও সচেতন না। তাই আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে এবং সবাইকে সচেতন করতে হবে।।  খাদ্যে এন্তিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স জিনের বিস্তার রোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ

 

১. কৃষিতে দায়িত্বশীল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে: দ্রুত বৃদ্ধি ও উৎপাদন বাড়ানোর যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তা থেকে বেরিয়ে এসে খামারিদের শুধুমাত্র অসুস্থ পশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। গবাদি পশুতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কঠোর প্রবিধান প্রয়োগ করতে হবে।

 

২. নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে: কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার নিয়মিত অবলোকন  করতে হবে এবং প্রতিরোধী প্যাথোজেনগুলির উত্থান সনাক্ত করতে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও নতুন কোন সংক্রমণের আবির্ভাব হলেই দ্রুত সনাক্তকরণ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে।

 

৩. অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প পন্থায় খামারিদের উৎসাহিত করতে হবে: যেমন গবাদি পশুর জন্য ভ্যাকসিন, প্রোবায়োটিকস এবং প্রিবায়োটিকসের মতো বিকল্প রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্সা পদ্ধতির গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা করা

৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে: মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যেমে জনমনে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং এর ঝুঁকি ও দায়িত্বশীল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে ভোক্তা, কৃষক এবং খাদ্য উৎপাদকদের শিক্ষিত করতে হবে।

 

৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে: এএমআর মোকাবেলা করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কারন এমএম আর জিন দেশ, সিমান্ত কিংবা কাটা তারের উর্ধ্বে, সেটি এক দেশ থেকে আরেক দেশে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

৬. গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করতে হবে: নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বিকাশের জন্য গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে যা অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিকল্প রাস্তা খুজতে সহায়তা করবে।

৭. ওয়ান হেলথ এপ্রোচ চালু করতে হবে: যেহেতু উৎপাদিত প্রানীজ আমিষের বেশিরভাগ অংশের গ্রহীতা মানুষই, তাই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি প্রানীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর দিতে হবে, এবং এক্ষেত্রে প্রাণী চিকিৎসক, এবং হিউম্যান চিকিৎসককে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

 

৮. যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দিকে নজর দিতে হবে: পরিবেশে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করতে খামার এবং ওষুধ শিল্প থেকে অ্যান্টিবায়োটিক-দূষিত বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবেশকে দূষিত করা যাবেনা।

 

৯. সর্বোপরি দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহারের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে:  কৃষকদের জন্য প্রণোদনা প্রদান করুন যারা দায়িত্বশীল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অনুশীলন গ্রহণ করে, যেমন ট্যাক্স সুবিধা বা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। এতে আরো বেশি কৃষক বা খামারি উৎসাহিত হবে। এবং একটি সংঘবদ্ধ দল তৈরি হবে, যারা এমএমআর মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করবে।

 

পৃথিবীজুড়ে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টির এজেন্ডাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়েছে এবং সেই ভাবনার আলোকে প্রণীত হয়েছে হাজারো উদ্যোগ। সর্বশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগ হিসেবে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন অভিলক্ষ্য (এসডিজি-২০১৬-২০৩০) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসডিজির ১৭টি অভিলক্ষ্যের মধ্যে এসডিজি-২ নম্বরে স্থান পেয়েছে দারিদ্র ও ক্ষুধার অবসান।। তাই চলুন, সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাই। আমরা চাইনা এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট এর করাল থাবা আমাদের গ্রাস করুক। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস পারে আমাদের সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিকে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আগামীর পৃথিবী হোক সুন্দর, নিরাপদ। 




খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এখনি!!

 

ডা: রনি ইবনে মাসুদ, এম.এস. ফেলো, ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় 

প্রফেসর ড. মোঃ তানভীর রহমান, ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

 

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে দেশের জনসংখ্যা। ২০২২ জনশুমারি অনুযায়ী জুন, ২০২২ পর্যন্ত জনসংখ্যা ছিলো ১৬,৫১,৫৮,৬১৬ (১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন), বর্তমান তা গিয়ে পৌছেছে সতের কোটির কাছাকাছি। অথচ দুই যুগ আগেও দেশের জনসংখ্যা ছিলো তেরো কোটির ঘরে। অর্থাৎ সর্বশেষ দুই যুগে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ কোটি। অর্থাৎ বছরে বেড়েছে প্রায় ১৬ লাখ।

 

জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে এই বৃহৎ জনগণের খাদ্য চাহিদা। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যস্তানুপাতিক  হারে কমেছে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ। বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর বা ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। মোট জনসংখ্যা আনুমানিক ১৭ কোটি হিসেবে, মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় শূন্য দশমিক ৪৪ হেক্টরে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু কৃষি জমি কমে যাচ্ছে, এমটাই নয়, দেশের অন্যান্য সেক্টরেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। 

 

জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৃষি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি আরেকটা বিষয় আমাদের ভাবাচ্ছে, সেটা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত খাদ্য ঝুকি। দেশের ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের বর্তমানের চেয়ে বেশি ঝড়ের মুখোমুশি হতে হচ্ছে। আবার সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে প্রচুর কৃষিজমি নদীভাঙনের শিকার হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরবর্তন জনিত কারণে দেশ প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে আকষ্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বা খরার। যা প্রতিনিয়ত দেশের খাদ্য সংকটকে কঠিনতর করে দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু জনিত প্রভাব সবকিছু মিলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ঝুকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুকে আরো বেশি কঠিনতর করে তুলেছ। পাশাপাশি অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী বেছে নিচ্ছে অবৈধ পন্থা।

 

                                                                                                        Photo: Rony Ibne Masud

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার পূর্বে জেনে নেওয়া যাক, আসলে খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কি বোঝায়। একটি সুস্থ এবং কার্যকর জীবন যাপনের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্যের প্রতি সবসময় সব মানুষের অভিগম্যতাকে খাদ্য নিরাপত্তা বলে। এটি তিনটি নিয়ামক দ্বারা নির্ণয় করা হয়, প্রথমত খাদ্যের প্রাপ্যতা, দ্বিতীয়ত খাদ্যের সঠিক ব্যবহার এবং তৃতীয়ত খাদ্যের সহজলভ্যতা। 

 

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পর্যালোচনা-২০২১ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী  দেশের জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন এবং সংস্থার জরিপ দেখলেই প্রতীয়মান হয়, দেশের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে কত প্রকার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার থেকে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে। এসব খাদ্যপণ্য ৬১টি মানদণ্ডে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল অনুসারে ৩৪টি মানসম্মত ছিল। আর ২৭ টিতে বিরূপ ফল পাওয়া যায়। এসব খাদ্যপণ্য সঠিক মানের ছিল না। অন্যদিকে ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে পাউরুটি, গুড়, সস, মাংস, শুঁটকি মাছ, গুঁড়া দুধ, পাস্তুরিত তরল দুধ, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, কোমল পানীয়, আচার, মোরব্বা, জিলাপি, পানি, ফলের রস ও মধু।

 

এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রানীজ খাবারে মিলছে ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক এর রেসিডিও, যা এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে। এছাড়াও হরহামেশাই খাদ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল, পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং বিভিন্ন প্রতিবেদনে তা উঠে আসছে। বিএসটিআই ও ক্যাবের ২০২২ সালের এক অনুসন্ধানে এমন চিত্র বেরিয়ে আসে। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছে ফরমালিন মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। শাক-সবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সব ধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্র কার্বাইড, ইথোফেন আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। 

যদিও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে দেশে কঠোর আইন প্রণীত হয়েছে ২০১৩ সালে। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩–এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘নিরাপদ খাদ্য’ বলতে প্রত্যাশিত ব্যবহার ও উপযোগিতা অনুযায়ী মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত আহার্য বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া বিএসটিআই আইন ২০১৮ এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২১ নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানে আইনি কাঠামোর অংশ। এবং এসব আইন অমান্যকারীর কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ধারা ৬৪ অনুযায়ী ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ৭৫ ধারা অনুযায়ী, এ আইনের আওতায় করা অপরাধের বিচারের জন্য মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর অধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে, যাতে জরুরি কোনো পরিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে সামলানো যায়।

 

একবিংশ শতাব্দীতে এসে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেনো অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলেও, খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে গড়িমসি করার কোন সুযোগ নেই। কেননা এটা জিবনের সাথে জড়িত। সারাবিশ্বে অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষ। আর অসুস্থ হয়ে পড়ে ৬০ কোটি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও নিম্নোক্ত পদক্ষেগুলোকে দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে।

১. টেকসই কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে।

২. ভূমির সঠক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, অপব্যবহৃত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে, এছাড়াও জমিতে সঠিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. উৎপাদিত খাদ্যকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে, এবং সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির কোল্ড স্টোরেজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। 

৪. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও মান নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে, এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 

৫. নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে, খাদ্যের গুনগুন মান পরিক্ষা করতে হবে, এবং ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে জড়িত ব্যক্তিদের জ্ঞান বৃদ্ধিকল্পে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৭. গবেষণায় প্রনোদণা বাড়াতে হবে, এবং গবেষকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৮. জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের আয়োজন করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রে নিয়মিত খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও লেখনী প্রচার করতে হবে।

৯. স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, সেইসাথে তাদের ব্যবহৃত পানি এবং খাবারের উৎস অনুসন্ধান পূর্বক খাবার বিক্রির অনুমতি দিতে হবে।

১০. প্রয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্দ্যেগে এটি বাস্তবায়িত করতে হবে। সেইসাথে দেশে বিদেশের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা ও মতামত নিতে হবে।

 

সর্বোপরি বলা যায়, উপরোক্ত পদক্ষপগুলো গ্রহণের মাধ্যমেই সম্ভব নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। তবে, শুধু সরকারের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ একজন বা দুইজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বা আপনি সচেতন হলেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবেনা, সচেতন করতে হবে গোটা সমাজকে, গোটা দেশকে। মনে রাখতে হবে খাদ্য উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারী, সরবরাহকারী, এবং ভোক্তা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ বাস্তবায়ন, এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে