বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়: কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কাণ্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়।[১] কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার[২] থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত।[৩] আবার কিছু লেখক গাছের কাণ্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি।[৪]; অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন শাখান্বিত প্রধান কাণ্ড অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুল্ম বলা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হয, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।[৫]
বৃক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তুসংস্থান তৈরি করে। বৃক্ষ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ল্যান্ডস্কেপিং ও কৃষির উপাদানো বটে, যার কারণ হল তাদের সৌন্দর্যগত আবেদন ও বিভিন্ন ধরনের ফল। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরি সহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৪,০০০ কোটি গাছ ছিল, প্রতি মানুষে প্রায় ৬১ টি।[৬]
বৃক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ হল মূল, কাণ্ড, ডালপালা, বাকল, ফুল, ফল এবং পাতা। বৃক্ষকাণ্ড মূলত সাহায্যকারী ও পরিবহন কলা জাইলেম ও ফ্লোয়েম দ্বারা গঠিত। কাষ্ঠ জাইলেম কোষে তৈরি, বাকল তৈরি ফ্লোয়েম ও অন্যান্য অন্যান্য বহিঃস্থ ভাস্কুলার ক্যাম্বিয়াম টিস্যুতে। কাণ্ডের ব্যাস বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বৃক্ষকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়: এক্সোজেনাস ও এন্ডোজেনাস। বেশিরভাগ বৃক্ষই (সব কনিফার এবং প্রায় সব বৃহৎপত্রী বৃক্ষ) এক্সোজেনাস, এদের কাণ্ডের বাইরের দিকে নতুন নতুন কাষ্ঠের সৃষ্টি হবার মাধ্যমে এদের বৃদ্ধি ঘটে। এন্ডোজেনাস বৃক্ষে (যেমন পাম এবং ড্রাগন গাছ ইত্যাদি) ভেতরের দিকে নতুন অংশাদি তৈরির কারণে বৃদ্ধি ঘটে।
গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সরিয়ে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে ‘গ্রিনহাউস’ প্রভাবকে হ্রাস করে।
গাছপালা আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য ও মানবসমাজের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
এরা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, ছায়া ও খাদ্য দিয়ে থাকে।
বৃক্ষ বাড়ির চারপাশ শীতল রাখে এবং দূষণ নির্গমন হ্রাস করে।
মানুষের জ্বালানির একটি অন্যতম প্রদান উৎস্য হলো গাছ।
গাছ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বাসস্থান সরবরাহ করে।
গাছপালা বিশ্বব্যাপী পরিবেশ এবং বিশ্বে বসবাসকারী প্রজাতির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাছ গন্ধ ও দূষণকারী গ্যাস শোষণ করে এবং তাদের পাতা এবং ছাল ধরে আটকে রেখে বাতাসের অংশকে ফিল্টার করে বায়ু পরিষ্কার করে।
সুস্থ ও স্বাস্থকর পরিবেশের জন্য আমাদের উচিত গাছের নিঃশর্ত যত্ন নেওয়া ও সুরক্ষা দেওয়া।
সূত্রঃ expertpreviews
বৃক্ষের পূর্ব ও বর্তমান অবস্থা
গাছ বেশি থাকলে ভালো? আজ আমরা গাছ উজাড় করে ফেলছি, আমাজন পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছি। এখন গাছ বাঁচানোই হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন গাছ বেশি হয়ে যাওয়ায় পৃথিবী বিপদে পড়েছিল। আজ থেকে প্রায় ৩৫ কোটি বছর আগে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল আজকের মাত্র ২০ শতাংশ। এর পরের পাঁচ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীতে গাছের পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হয়ে যায় ৩৫ শতাংশের মতো। এর ফল ভালো হয়নি। অক্সিজেন দাহ্য। ফলে পৃথিবীজুড়ে তখন দাবানল লেগেই থাকত। আর এত বেশি অক্সিজেন থাকলে আজকের মানুষের পক্ষে বাঁচা সম্ভব হতো না।
কিন্তু আজকের দুনিয়ার কী অবস্থা? পৃথিবীতে আজকে গাছের সংখ্যা কত? ২০১৫ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণা হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের ‘বিলিয়ন ট্রি’ প্রচারের অনুরোধে করা সেই গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পৃথিবীতে মোট গাছের সংখ্যা তিন ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ তিন লাখ কোটির বেশি। এই গাছের প্রায় অর্ধেক আছে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে। প্রত্যেক মানুষপ্রতি প্রায় ৪২২টি গাছ আছে!
এই গবেষণা ছিল বেশ জটিল। অ্যান্টার্কটিকা বাদ দিয়ে পৃথিবীর সব মহাদেশের সব গাছ আছে—এমন এলাকাকে চার লাখ ভাগে ভাগ করে স্যাটেলাইট দিয়ে তার ছবি নেওয়া হয়। এরপর সেই জায়গাগুলোর আবহাওয়া, সেখানে মানুষের কর্মকাণ্ড, মাটির অবস্থা ইত্যাদি তথ্য কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মোট গাছের এই সংখ্যা বের করা হয়েছে। এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সুপার কম্পিউটার।
আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার আগে ছিল আজকের থেকে দ্বিগুণ গাছ। তার মানে আমরা এই সময়ের মধ্যে অর্ধেক গাছ শেষ করে ফেলেছি। আর এখন গাছ নিধন করছি প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন করে।
গবেষণায় আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা চমকে দেওয়ার মতো। গাছ বেশি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে হলেও গাছের ঘনত্ব বেশি চরম ঠান্ডা অঞ্চলে। মেরু প্রান্তে গাছের ঘনত্ব প্রতি মিটারে একটি করে। উত্তর আমেরিকা, স্ক্যান্ডেনেভিয়া আর রাশিয়ার সরু লম্বা কোনিফার-জাতীয় গাছের বোরিয়াল অরণ্য পৃথিবীর সবচেয়ে গহিন বন। সেখানে আছে ৭৫০ বিলিয়ন গাছ। পৃথিবীর মোট গাছের ২৪ শতাংশ আছে এই অঞ্চলে।
আবার যদি দেখতে যাই যে, পৃথিবীর কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি গাছ আছে, তাহলে শোনা যাবে সব অচেনা ছোট ছোট দেশের নাম। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশ সুরিনাম। এর আয়তন ৬৩ দশমিক ২৫২ বর্গমাইল। দেশটির ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা। দেশটির আদিবাসীরা তাদের অরণ্যের সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবেও খুব তৎপর।
এরপর আসবে মাইক্রোনেশিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে তৈরি এই দেশের আয়তন সব মিলিয়ে মাত্র ১ হাজার বর্গমাইল। এই দ্বীপগুলোর ৯২ শতাংশ ঘন অরণ্যে ঢাকা।
মধ্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের দেশ গ্যাবন। আয়তনে ছোট নয়, এক লাখ বর্গমাইল। জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ। গ্যাবনের ৯০ শতাংশ গাছে ঢাকা। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ পালাউ। আয়তন মাত্র ১৮০ বর্গমাইল। তার প্রায় ৮৮ শতাংশ অরণ্য। ভারত মহাসাগরের ছোট দ্বীপদেশ সেশলস। মাত্র ১৭৭ বর্গমাইল আয়তনের এই দেশটির ৮৫ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা। ৮৩ বর্গমাইলের দেশ গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ইংরেজিভাষী এই দেশটির ৮৪ শতাংশ অরণ্য।
এই তালিকায় এশিয়ার একমাত্র দেশ লাওস। ৯১ দশমিক ৮৭৫ বর্গমাইলের এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যার কোনো সমুদ্রতীর নেই। পাহাড়ে ঢাকা এই দেশটির ৮২ শতাংশ অরণ্যের অধিকারে।
সূত্রঃ প্রথমআলো
বৃক্ষ ও প্রাণিকুল একে অপরের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ হলো অক্সিজেন, যা বৃক্ষ থেকেই উৎপন্ন ও নির্গত হয়। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণিজগৎ কার্বন ডাই-অক্সাইড বর্জন করে। এটি এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বৃক্ষ সেই দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে। বৃক্ষ থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে থাকি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অহরহ বৃক্ষ নিধনের ফলে মানুষ নিজেরই ক্ষতি করে চলেছে। বৃক্ষরোপণের প্রতি মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি।
বৃক্ষ আমাদের পরিবেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অন্যতম বনজসম্পদ। বৃক্ষের পাতা, ফল ও বীজ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। বৃক্ষ থেকে তন্তু আহরণ করে আমাদের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দিয়ে আমাদের বাড়িঘর ও আসবাব তৈরি করা হয়। আমাদের অতি প্রয়োজনীয় লেখার সামগ্রী কাগজ ও পেনসিল বৃক্ষের কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়। বৃক্ষ পরিবেশের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বাড়ায় না বরং মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। জীবজগৎকে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্ষ। বিস্তৃত বনাঞ্চলের বৃক্ষ জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। উদ্ভিদের অভাবে বৃষ্টিপাতেরও তারতম্য দেখা দেয়। বৃক্ষ বহুমূল্য বনজসম্পদ। তাই একদিকে বৃক্ষ যখন ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে তখন নতুন বৃক্ষের সৃষ্টি করতে হবে।
অরণ্যভূমির উপকারী বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারের বিনিময়ে লাভ করল কৃতঘœতার চরম নিদর্শন। এ পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো বৃক্ষ। বৃক্ষের ছায়াতলেই গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। তাই বৃক্ষ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এক কথায় বৃক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ নৈসর্গিক শোভাবর্ধনে বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের দূষণ রোধ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে থাকে। অথচ নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যন্ত্র-প্রযুক্তির মোহে অযাচিতভাবে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে বন। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে উষ্ণায়ন আর মানবসভ্যতা পড়ছে হুমকির মুখে। ঘাতকের কুঠারাঘাতে কত বনভূমি যে মরুভূমিতে পরিণত হলো তার ইয়ত্তা নেই। নগরজীবনে উখিত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মানুষকে জটিল রোগের শিকার করে তুলছে। বৃক্ষ অনায়াসে এই বিষকে কণ্ঠে ধারণ করতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন যেটা বৃক্ষই দিতে পারে। বায়ুর দূষণরোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি দূষণরোধে সক্ষম না হলে নগরজীবন দুরারোগ্য ব্যধিতে ছেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়। অন্যদিকে পৃথিবীতে দেখা দেবে, বিপুল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কুমেরুর বরফ গলতে শুরু করবে। বৃক্ষহীনতায় বৃষ্টি কমবে, অতিরিক্ত সূর্যতাপে মাটি হয়ে উঠবে রুক্ষ। আফ্রিকার সুদান বা আমেরিকার আমাজান অববাহিকায় যে অসুরের পদধ্বনি ইতিমধ্যেই শুত হচ্ছে তা পৃথিবীর অন্যত্রও দেখা যাবে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এখনই।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ুর সমতা বজায় রাখা, জমির ক্ষয়রোধ, বনজসম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সবকিছুর জন্য চাই বন। বনকে অবহেলা করা মানে নিজের উন্নতিতে আঘাত হানা। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে প্রাকৃতিক পরিবেশে সাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই বৃক্ষরোপণ আধুনিক মানুষের জীবনে এক প্রাণপ্রদ উৎসব। দেখা গেছে, একটি বৃক্ষ যদি পঞ্চাশ বছর বাঁচে তবে তা থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকার সমপরিমাণ প্রাণদ অক্সিজেন পাওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাম্য রক্ষার জন্য দেশের মোট ভূখণ্ডের অন্তত শতকরা দশ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। দেরিতে হলেও এখন সরকার বুঝেছে এবং মানুষও সচেতন হয়েছে বন সংরক্ষণের ব্যাপারে। বৃক্ষরোপণ ও চারার সযত্ন পালন তাই এখন অগ্রাধিকার পেয়েছে। সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর এ ধারণের উদ্যোগের সুফল লক্ষ করা গেছে।
সুন্দরবন এলাকায় আলাদাভাবে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছে। এ কাজে পঞ্চায়েতগুলোও বেশ সাফল্য দেখাচ্ছে। অভয়ারণ্য নিশ্চিত করেছে পশু-পাখির জীবন। বনে বাঘ ও অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাও বাড়ছে। খাবারের জন্য জন্তুদের এখন লোকালয়ে আসার ঘটনা কমেছে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা অতিথি পাখিরা এখানে সুখে বাসা বাঁধে। তাই আর কোনোভাবেই বনভূমির ধ্বংস নয়, এবার বনভূমির সংরক্ষণে যত্ন নিতে হবে আমাদের। বনকে অবহেলা করায় আমাদের দুর্দশা এসেছে। এখন বনকে গুরুত্ব দেওয়ায় বনও আমাদের দুহাত ভরিয়ে দিচ্ছে। প্রবাদ আছে, ‘গ্রাম ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং শহর মানুষের সৃষ্টি।’ দেখা গেছে যেখানেই মানুষ সৃষ্টির ওপর হস্তক্ষেপ করেছে সেখানেই প্রকৃতি নিয়েছে নির্মম প্রতিশোধ। সুতরাং জীবনকে সুন্দর ও সুস্থরূপে উপভোগ করতে হলে বৃক্ষের শ্যামল স্নিগ্ধ আশীর্বাদ ধারায় অবগাহন করতেই হবে। শুধু কাব্যিক বিলাস নয়, নিতান্ত বাস্তব প্রয়োজনেই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব রয়েছে।
যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবার আগে। কেননা প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। বৃক্ষহীন পরিবেশ জীবন ও জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। মানুষের যা দরকারে লাগে তাই সে জোগাড় করতে চায়। মানুষের মাত্রাজ্ঞান অনেক সময় থাকে না। তাই দিন যতই যাচ্ছে বন ততই কমছে। তুলনায় সে পরিমাণে গাছ লাগানো হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বসেছে। বৃক্ষবিরল জীবনের অভিশাপ ও আধুনিক সভ্যতার বিজয়গৌরব বহন করে গড়ে উঠেছে। মানুষের বসতি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিদিন অগণিত বৃক্ষ-ছেদন করা হচ্ছে। এক একটি শহর হয়ে উঠেছে বৃক্ষলতার স্পর্শহীন পাষাণপুরী। কল-কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ-বাতাস কলঙ্কিত।
এর পরিণামে সভ্যতাগর্বী মানুষের জীবন জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরজীবন বৃক্ষবিরল হয়ে আসায় মানুষের প্রাণের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তাই বিজ্ঞানীরা রব তুলেছেন পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে তরুরাজির শ্যামল ছায়ায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তাই বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীতা অপরিসীম। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি বছর অন্তত দুটি করে বৃক্ষরোপণ করা দরকার। তাই এই সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের জন্য লাগামহীন বৃক্ষনিধন বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ জোরদার করার প্রতি আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। ‘আসুন গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই’- এ স্লোগানে যদি আমরা সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করি ও গাছ লাগাই তাহলে আমাদের বৃক্ষসম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশও সুন্দর হবে।
সূত্রঃ প্রতিদিনের সংবাদ
পরিবেশের ক্ষতি করে পৃথিবীতে কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না। তাই উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কাটা, বনভূমি উজাড় ও প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাটের মতো কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে এবং প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে বৃক্ষরোপণ ও জলাধার নির্মাণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সোলার প্যানেল স্থাপনকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হবে; অন্যদিকে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটলেও সহজে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। বৃক্ষ আমাদের ফুল দেয়। ফল দেয়। ছায়া দেয়। জ্বালানি কাঠ দেয়। বৃক্ষ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে। অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না। বৃক্ষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। বৃক্ষ পশুপাখি, কীটপতঙ্গসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে খাদ্য ও আশ্রয় জোগায়। মাটি ক্ষয়রোধ করে। বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করে। বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস করে। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করতে আরো ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আগামী ৫ জুন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ৪৮২ উপজেলায় একযোগে ১ কোটি গাছের চারা বিতরণের এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্ব নেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে এবং ক্রমান্বয়ে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরো রয়েছে গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে ১৭০ কোটি হেক্টর জমি বৃক্ষহীন অবস্থায় রয়েছে, যার পরিমাণ বিশ্বের মোট ভূমির ১১ শতাংশ। এসব জমিতে স্থানীয় গাছ লাগানো হলে তা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠবে। নতুন এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সুইস ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টমক্রাউযার। তিনি বলেন, নতুন এই সংখ্যাগত মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে, এটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট সমাধানের একটি উপায়ই নয়; বরং এটি সর্বোৎকৃষ্ট পথ। নতুন করে বনায়নের বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমাধানের সেরা ১০টি উপায়ের একটি হবে। তবে সব সম্ভাব্য প্রস্তাবের মধ্যে এটি সর্বসম্মতক্রমে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়েছে। এজন্য জলবায়ু সংকট ও উষ্ণায়ন মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে তিন লাখ কোটি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গাছ লাগানোর কর্মসূচি সবচেয়ে ভালো ও কম ব্যয়বহুল উপায় বলে মনে করছেন তারা। গাছ লাগানোর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব হবে।
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে উষ্ণতাপ্রবণ এলাকার পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের কথা, বর্তমান হারে নির্গমন হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অনেক এলাকার অপেক্ষাকৃত শীতল গ্রীষ্মকালীন ঋতু উষ্ণয়নের দিকে যাবে। বাংলাদেশ বর্তমানে এ অবস্থার শিকার। আর এ ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন গ্যাস তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ কারণে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা ও তীব্র গরমের মতো ঘটনা ঘটছে। আইলা, সিডর, ফণী ও বুলবুলের মতো ঘনঘন ঘটছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদী ভাঙনের কারণেও নিঃস্ব হচ্ছে অগণিত মানুষ। বাপ-দাদার চিরপরিচিত ভিটামাটি ও বাড়িঘর হারিয়ে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে শহরের অচেনা-অজানা বস্তিতে। গ্রীষ্মকালে সহনীয় উষ্ণতার কারণে মানুষের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। গত ২৮ এপ্রিল ২০১৯ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালে ২১ মে ওই একই স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার শহরে বাতাসে এখন দিন দিন কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে এই বায়ুদূষণের অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, ইটভাটা, কল-কারখানার বর্জ্য ও ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, রাস্তার ধুলাবালি ও আধুনিক বর্জা ব্যবস্থাপনার অভাব। এ অবস্থায় আমাদের উচিত হবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণায়ন থেকে রক্ষা পেতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১ জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তার সফল বাস্তবায়নে কাজ করা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের সার্বিকভাবে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে শুরু করতে হবে সবুজায়ন অভিযান। রাজধানী ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন, পৌর শহর, উপজেলা পর্যায়ের শহরগুলোতে রাস্তার দুই ধারে, সড়কদ্বীপে, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, মিল-কারখানার পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। করতে হবে ছাদবাগান। যাতে আগামী ৫ বছরে আমাদের শহরগুলো সবুজ বৃক্ষে ভরে ওঠে। সেই সঙ্গে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সরকারি জমির শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উদ্যোগে এবং ৫ ভাগ জমিতে শিল্প মালিকদের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে।
জার্মানিতে শতকরা ১২ ভাগ ছাদ সবুজ এবং টোকিও আইনে সব নতুন ছাদের অন্তত ২০ ভাগ সবুজ রাখার কথা বলা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের রুফটপ গার্ডেনবিষয়ক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে একটি বাগান বছরে জ্বালানি খরচের শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে পারে। অপরদিকে ঢাকা শহরের দেখা গেছে, যেসব বহুতল ভবনে ছাদবাগান আছে; সেসব ভবনের তাপমাত্রা ছাদবাগানবিহীন ভবনের চেয়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। তাই নগরবাসীকে গাছ লাগানো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চীনের উদ্যোগটি অনুসরণ করা যেতে পারে। গ্রামীণজীবন সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং জীবনযাত্রার পার্থক্য অনুধাবনের জন্য চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চংকিং শহর কর্তৃপক্ষ শহরের শিক্ষার্থীদের গ্রামে পাঠায়। গ্রামে অবস্থানের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১০০টি করে চারা গাছ রোপণ করতে হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনবোধ হয় মানবীয়, গ্রামমুখী এবং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে তাদের মধ্যে নতুন চিন্তাচেতনার সৃষ্টি হয়।
গত বছর এক দিনে ৩৫ কোটি গাছের চারা লাগিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়ার প্রায় এক হাজারটি স্থানে এই বৃক্ষরোপণ কাজটি সম্পন্ন করা হয়। খরাকবলিত ওই দেশটিতে সম্প্রতি ৪০০ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গাছ লাগানোর কাজে সরকারি কর্মচারীরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন; সেজন্য বন্ধ রাখা হয় কিছু সরকারি অফিস। জাতিসংঘের হিসাবে বিংশ শতকের শুরুতে ইথিওপিয়ার বনভূমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে তা কমে আসে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। খরাপ্রবণ এই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা এবং দেশটিকে বন উজাড় হয়ে যাওয়া অবস্থা থেকে বাঁচাতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আগে এক দিনে ৫ কোটি গাছ লাগিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ছিল ভারত। ২০১৬ সালে ভারতের ৮ লাখ স্বেচ্ছাসেবক এই বৃক্ষরোপণ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন।
সূত্রঃ প্রতিদিনের সংবাদ
একটি জরিপের মাধ্যমে জানা যায় যে,