অশ্রু মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্রে – স্বাগতম
অশ্রু একটি সু-পরিচিত, সু-প্রতিষ্ঠিত মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র। ২০০২ সাল থেকে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও নিরাময়ে ‘অশ্রু’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।এই প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিয়ে তাদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন ভোগ করছে এবং সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে ।
‘অশ্রু’ একটি সামাজিক অরাজনৈতিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।এখানে মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও নিরাময়ের সাথে আধ্যাত্বিক বা ধর্ম শিক্ষা নামে প্রোগ্রাম চালু আছে। এর আওতায় প্রতিদিন মুসলিম রোগীদের জামাতের সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও ধর্মীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হয়, একই সাথে অন্যান্য ধর্মালম্বীদের নিজস্ব ধর্ম পালনে স্বাধীনতা রয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাদকসক্তি একটি ভয়াবহ জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদেরও অঙ্গিকার একটি মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাতে করে বর্তমান যুব সমাজ মাদকের এই করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুস্থ জীবন ও সুন্দর সমাজ গড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই মাদক পাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের শাস্তি দেওয়ার জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছে।
মাদকাসক্তির লক্ষণ এবং উপসর্গ:
• হঠাৎ আচরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
• একা একা সময় কাটানো ।
• বন্ধু পরিবর্তন।
• হঠাৎ করে হাত খরচ বেড়ে যাওয়া।
• অসময়ে বা গভীর রাতে বাড়ী ফেরা।
• সব সময় ঘুম ঘুম ভাব অথবা ঝিমুনী।
• অল্পতেই রেগে যাওয়া, মেজাজ গরম থাকা ।
• কথা বার্তা জড়িয়ে যাওয়া।
• চোখের নীচে কালিপড়া, অস্থিরতা পড়াশুনা এবং খেলাধূলায় অমনোযোগী হওয়া ।
• খাওয়াতে অরুচি, অল্প খেয়ে উঠে যাওয়া এবং মাঝে মাঝে বমি করা।
• স্কুল/কলেজ, কর্মক্ষেত্রে না যাওয়া এবং স্কুলে/ কলেজে যাবার নাম করে অন্যত্র সময় কাটানো।
• হঠাৎ করে মিষ্টি খাওয়ার প্রতি ঝোক সৃষ্টি।
• অনিদ্রা ও খুক খুক করে কাঁশি হওয়া।
• বাথরুমে দীর্ঘ সময় কাটানো।
• সকালে তাড়াহুরা করে প্রায়ই বেড়িয়ে যাওয়া।
• পোষাকে অমনোযোগী, ছেঁড়া, নোংরা পোষাক পড়তে আপত্তি না করা।
• গোসল না করা, দাঁত না মাজা, নোংরা থাকা।
• ঘরের জিনিসপত্র, টাকা পয়সা প্রায়ই উধাও হয়ে যাওয়া।
• ক্রমাগত মিথ্যা বলার প্রবণতা, সব কথায় তর্ক এবং যুক্তি খাটানো।
• হাতের আঙ্গুলে আগুনের পোড়া দাগ।
• হঠাৎ করে নাক চোখ দিয়ে পানি পড়া, ভীষণ ভাবে ছটফট করা অথবা জ্বর জ্বর ভাব।
• দেরী করে ঘুম থেকে উঠা। অসময়ে বিছানায় শুয়ে থাকা।
• বাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় পোড়া কাগজ, ব্লেড, ম্যাচের কাঠি, সিগারেটের ফয়েল/রাংতা পাওয়া।
• শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সূচ ফুটানোর দাগ।
• ঘন ঘন নাক বা শরীর চুলকানো।
মাদকাসক্ত মানসিক বিপর্যয় ছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীরা যেসব দৈহিক ব্যাধির শিকার হন তা নিম্নরূপ:
• মাদক সেবনে দৈহিক চেতনাকে সাময়িকভাবে উদ্দীপ্ত করে বটে,কিন্তু তার কর্মক্ষমতাকে নিস্ক্রিয় করে দেয়।
• প্রত্যাখানজনিত (Withdrawal) কষ্টকর পরিস্থিতি(যেমনঃ শরীরে কাঁপুনি, খিটখিটে মেজাজ, নাক,চোখ দিয়ে পানি ঝড়া,হাঁচি,কাঁশি শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা,পেট ব্যাথা,পাতলা পায়খানা,অনিদ্রা
ইত্যাদি।
• উত্তেজনা, আচার-আচরণ ও বিচার- বিবেচনায় এলোমেলো, অচেতন অবস্থা ইত্যাদি।
• সাধারণ লোকদের তুলনায় মাদকদ্রব্য সেবনকারীদের আত্নহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
• মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির জিহ্বা ক্রমশ ভারি হতে থাকা।
• পুরুষত্বহীনতা বা বন্ধ্যা।
• আচরণগত সমস্যা, মাত্রাতিরিক্ত রাগ, খিটখিটে মেজাজ জেদ, নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ, মানসিক শুন্যতা, অভদ্র আচরণ ও অমনোযোগিতা।
• বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়া এবং অপরাধ জগতে নিজেকে আত্মসমর্পন করা, চুরি, মিথ্যা ও প্রতারণা ইত্যাদি।
• পারিবারিক অশান্তি, বিশৃঙ্খলা,অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি, সম্পর্কের অবনতি, বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব।
• মাদকদ্রব্যের প্রতিক্রিয়ায় হৃদপিণ্ড, অগ্নাশয় ও কিডনিতে প্রদাহর সৃষ্টি হওয়া।
• মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে দেহের ত্বকের ইলাস্টিসিটি ক্ষমতা বিলুপ্ত হতে থাকা।
• হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া।
• অতিরিক্ত মাদক সেবনকারী ব্যক্তিকে পেপটিক ও আলসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
• মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে হজমশক্তি হ্রাস পায় ও খাওয়ার স্পৃহা কমে যায়।
• অতিরিক্ত মাদক সেবনে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া ও হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া।
• মাদক গ্রহন করলে জন্ডিস, হেপাটাইসিস, সিরোসিস হতে পারে।
• মাদকদ্রব্য সেবনে চোখের মনি সংকুচিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
▶️অশ্রু মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদানের ধরন ও প্রকৃতিঃ-
☑️বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ওষুধ নির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থা মাদক নির্ভরশীলদের মাদকমুক্ত রাখতে সামান্যই ভূমিকা রাখে। মাদক নির্ভরশীল একজন ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করার সময় তার আচার আচরণ ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটে বিধায় তাকে মাদকমুক্ত থাকতে হলে আচরণ ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন। আচরণ পরিবর্তন কষ্টসাধ্য বিষয় হলেও মাদকমুক্ত থাকার সাথে আচরণ পরিবর্তন গভীর ভাবে জড়িত। এজন্য অশ্রু নিরাময় কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি একজন মানসিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
একজন মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তি দৈহিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং দীর্ঘদিন মাদক গ্রহণের কারণে অনেকেরই নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। আমাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মাদক নির্ভরশীল একজন ব্যক্তির দৈহিক চিকিৎসার পাশাপাশি আচরণগত পরিবর্তন, নৈতিক গুণাবলী বিষয়ে শিক্ষা প্রদান ও রোগীকে এমনভাবে সুস্থ করে তোলা যাতে তিনি জীবনের সাধারণ সমস্যার মোকাবেলা করতে সক্ষম হন।
✅“অশ্রু”তে চিকিৎসা ও রিহ্যাবিলিটেশন পদ্ধতি ঃ
অশ্রু’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র মাদকাসক্তি চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ চিকিৎসা পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এন.এ. (নারকটিস্ এ্যানোনিমাস), এ. এ. (এ্যালহলিক এ্যানোনিমাস) ও বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
• ডি-এডিকশন প্রক্রিয়া (উইথড্রল সময় ও সমস্যা নিরুপণ) – ১ মাস
• চিকিৎসা বা রি-হ্যাবিলিটেশন প্রক্রিয়া (সমস্যা নিরাময়) – ১ মাস
• ফলো-আপ প্রক্রিয়া (পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন) – ১ মাস
"অশ্রু"তে চিকিৎসা পরবর্তী সেবাঃ-
বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, মাদক নির্ভরশীলতা একটি জটিল, পুনঃ আসক্তিমূলক মস্তিষ্কের রোগ (A chronic relapsing brain desease) হিসেবে পরিচিত। পুনঃআসক্তিকে স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া হিসবে ধরা হয়। পুনঃআসক্তি রোধ করতে মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। পুনঃআসক্তি রোধে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ চিকিৎসা পরবর্তীকালে রোগীর মানসিক সহায়তা পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এ জন্য চিকিৎসা পরবর্তীকালে পরিবারের সদস্যগণ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করতে পারেন। চিকিৎসা পরবর্তী সেবা হিসেবে রোগীরা এনএ মিটিং, কাউন্সেলিং এবং প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই জন্য অশ্রু মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রকে কোন প্রকার ফি বা টাকা দিতে হয় না। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সুস্থ থাকতে হবে।
✅ মাদক ছেড়ে ফিরে আসুন সুস্থ জীবনে✅
মাদক একজন মানুষকেই শুধু ধ্বংস করে না, ধ্বংস করে দেয় পুরো পরিবার, সমাজ, দেশ তথা জাতিকে। চেতনা, বোধ ও সুস্থ আত্মাকে শেষ করে দেয় মাদকের ভয়াল থাবা। মাদকের ধূম্রজালে মানুষ ভুলে যেতে শুরু করে মানবীয় সব আচরণ। এতে আসক্ত হওয়া যত সহজ, ছেড়ে দেওয়া তার চেয়েও বেশি কঠিন। তবে যথার্থ চিকিৎসা, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাবন ও মানসিক শক্তিমত্তায় একবার মাদক ছাড়তে পাড়লে জীবনের অর্থই বদলে যাবে। তাই সময় থাকতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। মাদককে না বলুন বলিষ্ঠ কন্ঠে। জয় নিশ্চিত!
অশ্রু মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র
দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড,গোকর্ণ রোড,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
মোবাইলঃ০১৭১৭৮৩৭১৭৬,০১৭৯৩২২২৯৮৮