কলিগবৃন্দ
বৃষ্টি থেমে গেছে কিছুক্ষণ আগে। চারপাশ যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মোড়ানো। শহরের কোণার সেই ছোট্ট কফিশপের জানালার পাশে বসে আছে রাহুল। তার সামনে রাখা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এক কাপ কফি, আর টেবিলের উপর ছড়িয়ে থাকা কিছু পুরনো ছবি। রাহুলের মনটা এখনো আটকে আছে সেদিনের স্মৃতিতে, যেদিন প্রথমবারের মতো মিলি তাকে বলেছিল, "রাহুল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
আকাশের মেঘ আজ যেন তার মনের আকাশের সাথে মিল রেখে ছায়াময় হয়ে আছে। রাহুলের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে, কিন্তু সে জানে না সে কাঁদছে কিনা। জীবন যেন তাকে নিষ্প্রাণ করে রেখেছে। মিলির চলে যাওয়ার পর থেকে সবকিছু তার নির্জীব লাগে। তার হাসিমুখ, তার স্পর্শ, সবকিছুই এখন স্মৃতি হয়ে গেছে।
কলাপসিবল
কলাপসিবল কীভাবে ব্যবহার করে?
বৃষ্টি থেমে গেছে কিছুক্ষণ আগে। চারপাশ যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মোড়ানো। শহরের কোণার সেই ছোট্ট কফিশপের জানালার পাশে বসে আছে রাহুল। তার সামনে রাখা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এক কাপ কফি, আর টেবিলের উপর ছড়িয়ে থাকা কিছু পুরনো ছবি। রাহুলের মনটা এখনো আটকে আছে সেদিনের স্মৃতিতে, যেদিন প্রথমবারের মতো মিলি তাকে বলেছিল, "রাহুল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
আকাশের মেঘ আজ যেন তার মনের আকাশের সাথে মিল রেখে ছায়াময় হয়ে আছে। রাহুলের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে, কিন্তু সে জানে না সে কাঁদছে কিনা। জীবন যেন তাকে নিষ্প্রাণ করে রেখেছে। মিলির চলে যাওয়ার পর থেকে সবকিছু তার নির্জীব লাগে। তার হাসিমুখ, তার স্পর্শ, সবকিছুই এখন স্মৃতি হয়ে গেছে।
আজ মিলির জন্মদিন। রাহুল ঠিক করেছে, সে মিলির জন্য একটা চিঠি লিখবে। হয়তো সে আর কখনো সেই চিঠি পড়তে পারবে না, কিন্তু রাহুল লিখবেই। এটা তার শেষ ভালোবাসার প্রতীক। সে তার পকেট থেকে পুরনো চিঠিগুলোর একটি বের করলো, যা মিলি তাকে লিখেছিল। আর এক টুকরো কাগজ নিয়ে লেখা শুরু করল,
প্রিয় মিলি,
আজ তোমার জন্মদিন। মনে আছে, প্রতি বছর এই দিনটা আমরা কতটা আনন্দের সাথে উদযাপন করতাম। তুমি হাসতে হাসতে বলতে, "রাহুল, আমার জন্মদিনে তুমি সব সময় একটা সাদা গোলাপ নিয়ে আসবে, যেটা আমাদের ভালোবাসার প্রতীক।" আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম, সাদা গোলাপ কেন? লাল গোলাপ নিয়ে এলে ক্ষতি কী? তুমি এই প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছিলে তা এখনো আমাকে শিহরিত করে তোলে। তুমি বলেছিলে, শুভ্রতা হলো শুদ্ধতার প্রতীক। আমি চাই আমাদের জীবনটা গোলাপের মতোই সাদামাটা হোক। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা থেকে সবসময় গোলাপের মতো স্নিগ্ধতা ছড়াক। তোমার এত সুন্দর করে বলা কথাগুলো শুনে আমি বিমোহিত হয়ে যেতাম। সেই দিনগুলো আজ স্মৃতিতে মিশে গেছে, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত এখনো আমার হৃদয়ে জীবন্ত।
তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল আমাদের ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে। আমি তখন খুবই লাজুক ছিলাম, কিন্তু তোমার হাসি আর উজ্জ্বল চোখের চাহনি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সেদিনই বুঝেছিলাম, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় হতে চলেছো। আমাদের সেই প্রথম কফি শপে এক সাথে বসে থাকা, সিনেমা দেখতে যাওয়া, আর সেই দীর্ঘ রাত্রিগুলো -যখন আমরা একসাথে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতাম— এই সবকিছু যেনো আমি আজও অনুভব করতে পারি।
মনে পড়ে সেই দিনটির কথা, যখন বৃষ্টির মাঝে তুমি আমার হাত ধরে বলেছিলে, "রাহুল, আমি তোমাকে ভালোবাসি"? সেই মুহূর্তটি আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত। আমরা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, যেন পুরো পৃথিবীটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তোমার হাসি, তোমার স্নেহ, তোমার প্রতিটি স্পর্শ এখনো আমার মনে সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছে।
কিন্তু জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা আমাদেরকে আলাদা করে দিয়েছে। তুমি চলে গেছো, কিন্তু তোমার স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে ঘিরে রেখেছে। আমি জানি, হয়তো এই চিঠি তুমি কখনো পড়তে পারবে না। তবুও আমি লিখছি, কারণ এটাই আমার শেষ ভালোবাসার প্রতীক।
তোমার হাসি, তোমার কথাবার্তা, তোমার চোখ, তোমার চাহনি, তোমার স্পর্শ, সবকিছুই আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি। তোমার জন্মদিনে আমি আজও সেই একগুচ্ছ সাদা গোলাপ নিয়ে এসেছি, যা তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার প্রতীক।
প্রিয় মিলি, তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। তুমি আমার হৃদয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা কোনোদিনও মুছে যাবে না।
ইতি
তোমার ভালোবাসা
রাহুল
রাহুল চিঠিটি লিখে শেষ করলো, আর এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কাগজটি ভাঁজ করে নিজের বুক পকেটে রাখলো। কফিশপের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো, ধীরে ধীরে মেঘগুলো সরতে শুরু করেছে। বৃষ্টির পরের একটা অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ বাতাসে মিশে আছে, যা তার মনকে আরো ভারাক্রান্ত করে তুলছে।
রাহুল সিদ্ধান্ত নিলো, সে মিলির প্রিয় সেই পার্কে যাবে, যেখানে তাদের বহু স্মৃতি জমা হয়ে ছিল। সেখানেই তার চিঠিটি রেখে আসবে, যেন প্রকৃতিই তার ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকে। সে কফিশপ থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলো। প্রতিটি পদক্ষেপে তার মনে হচ্ছিল, মিলি যেন তার পাশেই হাঁটছে।
পার্কে পৌঁছে রাহুল দেখলো, সেই পুরনো বেঞ্চটি যেখানে তারা বসে অনেক গল্প করত, এখনো ঠিক আগের মতোই আছে। বেঞ্চটির পাশে একটি শিউলি ফুল গাছ দাঁড়িয়ে আছে, যা তাদের সম্পর্কের সাক্ষী। রাহুল বেঞ্চে বসল এবং চিঠিটি বের করে একটি প্লাস্টিকের মোড়কে মুড়িয়ে ফুলগাছের একটি ডালে গুঁজে রেখে দিল। সে জানে, হয়তো মিলি আর কখনো এই চিঠি পড়বে না, কিন্তু তার হৃদয়ের বোঝা কিছুটা হালকা হলো।
বেঞ্চে বসে রাহুল কিছুক্ষণ অতীতের স্মৃতির জগতে ডুবে গেল। তার মনে পড়তে লাগলো মিলির সাথে কাটানো সেই স্বর্ণালী মুহূর্তগুলো।
প্রথম দেখা হবার পর একদিন মিলি বলল, পড়াশুনার ভীষণ চাপ যাচ্ছে। তুমি কি আমার সাথে একটু বিকেলবেলা হাঁটতে পারবে? রাহুল সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। মিলি সেদিন এই পার্কটার কথাই বলেছিল। ঠিক বিকেল পাঁচটায় তারা দুজনে এখানে এসে উপস্থিত হয়।
শিউলিগাছের দিকে তাকিয়ে সেদিন মিলি বলেছিল, ফুলগুলো কী সুন্দর তাই না?
উত্তরে রাহুল শুধু বলেছিল, ঠিক তোমার মতো।
কিন্তু মানুষের জীবন তো ফুলের মতো সুন্দর হয় না। বলল মিলি।
তারপর দুজনে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটল। বলার মতো কেউ কিছু বলল না। অনেকক্ষণ পর রাহুলই নীরবতা ভাঙল।
রাহুল: তুমি কি জানো, তোমাকে প্রথম দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে চলেছ।
মিলি: ওই মিষ্টি কথাগুলো শুধু তোমার মুখের কথা, রাহুল। তুমি সবসময় এমন কথা বলো, যেন আমি মেঘের উপরে ভাসছি।
রাহুল: মিলি, তুমি জানো কি, তোমার হাসিটাই আমার দিনটাকে সুন্দর করে তোলে?
মিলি: (লাজুক হেসে) রাহুল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার।
কিছুক্ষণ মিলি যেন চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে যায়। মিলি দূর আকাশের নীলিমার দিকে বলতে থাকে, “রাহুল, আমরা একদিন আমাদের ছোট্ট একটা বাড়ি বানাবো, যেখানে থাকবে একটা সুন্দর বাগান, আর তুমি প্রতিদিন এক কাপ কফি নিয়ে আমার কাছে আসবে।”
রাহুল: হ্যাঁ মিলি, আর আমি প্রতিদিন তোমাকে বলবো, 'তুমি আমার জীবনের আলো'।
কত স্মৃতি! অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। শেষবারের মতো যেদিন দুজনে দেখা হয়েছিল সেদিন মিলি বলেছিল, "রাহুল, জীবনের এই পথে আমরা হয়তো আলাদা হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না।"
রাহুল: মিলি, তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। আমি সবসময় তোমার স্মৃতিকে সাথে নিয়ে বেঁচে থাকবো।
এসব স্মৃতিচারণ করতে করতে বেঞ্চে বসে রাহুলের চোখ ভিজে গেল। তার মনে হলো, প্রতিটি কথোপকথন যেন আজও তার কানে বাজছে। সে জানে, জীবন হয়তো নিষ্ঠুর, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলোই তাকে বেঁচে থাকার শক্তি যোগাবে। সে চিঠিটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, "মিলি, তুমি সবসময় আমার সাথে থাকবে।"
তার মনে হলো, জীবন চলতে থাকবে, কিন্তু মিলির স্মৃতি কখনো মুছে যাবে না। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো এবং শেষবারের মতো চারপাশটা দেখলো। এরপর পার্কের পথে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলো।
রাহুল ঠিক করলো, সে নতুন করে জীবন শুরু করবে। হয়তো মিলি তার জীবনে আর ফিরবে না, কিন্তু তার স্মৃতি তাকে বেঁচে থাকার সাহস যোগাবে। সে জানে, জীবন কঠিন, কিন্তু তাকে লড়াই করতে হবে। রাহুলের মনে হলো, একদিন হয়তো সে আবার ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারবে, কিন্তু মিলি সবসময় তার হৃদয়ের এক বিশেষ স্থানে থাকবে।
রাহুল পার্ক থেকে বেরিয়ে শহরের কোলাহলে মিশে গেল। তার মনে হলো, জীবন নিষ্প্রাণ হলেও, তাকে বেঁচে থাকতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তে মিলির স্মৃতি তার সাথে থাকবে, আর সেই স্মৃতিগুলোই তাকে জীবনের পথ চলতে সাহায্য করবে।