নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, গল্পকথার আসরের আজকে বৈঠকে যোগ দেবার জন্য আপনাদের অজস্র ধন্যবাদ । আমি রুদ্র দত্ত । এর আগে এই পডকাস্টে আপনাদের কাছে বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা গল্প পাঠ করেছি, বিজ্ঞানী হিসেবে জগদ্বিখ্যাত হলেও তাঁর সাহিত্য রচনার হাত কত সাবলীল ছিলো তা উল্লেখ করেছি । আজ তাঁরই লেখা আর একটি ছোট্ট গল্প পাঠ করবো ।
এই লেখাটি গল্পের ধাঁচেই রচিত, এবং দৈর্ঘ্যেও একটি ছোটো গল্পের আকারেরই । কিন্তু তার পরেও এই গল্পটির একটু বিশেষত্ব আছে । যাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে, তিনি গল্পকার স্বয়ং । কিন্তু সত্যিই কি তিনিই অভিযুক্ত ? না আর কেউ ?
গল্পটি প্রথম পুরুষে রচিত, এবং গল্পে বর্ণিত ঘটনাবলী অবশ্যই জগদীশচন্দ্রের নিজস্ব জীবনের - সেই অর্থে এই গল্পটি একটি অতি-সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী । কিন্তু কাহিনীর যা প্রধান ধর্ম - অর্থাৎ শুধু নিছক ঘটনাবলী নয়, তার প্রেক্ষাপটে বিশ্বাসযোগ্য চরিত্রদের উপস্থিতি, তাদের সুখ-দুঃখের কথা - তা এই গল্পে পুরোমাত্রায় বর্তমান । প্রধান চরিত্র অবশ্যই জগদীশচন্দ্র নিজে, কিন্তু অন্যরাও একেবারে অনুপস্থিত নন ।
আর সেই প্রধান চরিত্রের একান্ত ব্যক্তিগত মনের ভাব, আশা-আকাঙ্খা, জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে জীবনের হিসেব-নিকেশ করার প্রয়াস, জগদীশচন্দ্র আশ্চর্য প্রতিভা নিয়ে কয়েকটি মাত্র কথায় ফুটিয়ে তুলেছেন । এই হিসেব-নিকেশ তিনি পেশ করছেন শেষকালে একটি প্রশ্ন রেখে যার মুখোমুখি আমাদের সবাইকেই কোনো না কোনো দিন হতে হয় - যা পেয়েছিলাম, তা নিয়ে যা করতে পেরেছি, তা যথেষ্ট হয়েছে কি ? জীবনের অপচয় করিনি তো ?
জগদীশচন্দ্রের জীবন সম্বন্ধে যাঁরা অল্প একটুও জানেন, তাঁরা জানেন যে এই অসামান্য বিজ্ঞানী পরাধীন ভারতবর্ষে জন্মে যেসব অভূতপূর্ব আবিষ্কার করেছিলেন, তাতে তাঁর একটি কেন, দুটি নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত ছিলো - পদার্থবিদ্যায় বেতারের জন্য, আর জীববিজ্ঞানে তাঁর ক্রেস্কোগ্রাফে উদ্ভিদের স্নায়বিক প্রক্রিয়ার জন্য । এর থেকে অনেক অনেক কম কারণে অনেকে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন । কিন্তু সেই স্বীকৃতি তিনি পাননি - ইতালীয় বৈজ্ঞানিক মার্কনি বেতারবার্তা প্রাপ্তির যন্ত্র জগদীশের থেকে দু বছর পরে তৈরী করা সত্তেও নোবেল প্রাইজটি তাঁকেই দেওয়া হয় । আর ক্রেস্কোগ্রাফের দিকে তো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীকুল তাকাতেই অস্বীকার করেন - যদিও উদ্ভিদের স্নায়বিক প্রক্রিয়া পরবর্তী কালে সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে । জগদীশচন্দ্রের জীবন নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনা এই পডকাস্টে তাঁর গল্প প্রথম পাঠ করার সময়ে করেছিলাম । আমার এক বিশিষ্ট বন্ধু সম্প্রতি মনে করিয়ে দিলেন যে জগদীশচন্দ্রের জীবন নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্য বই প্রকাশ হয়েছে, যেমন অধ্যাপক মেহের বানের "The Scientific Sufi" - কৌতূহলী শ্রোতাবন্ধুরা পড়ে দেখতে পারেন ।
তাই বুঝতে পারি, যে এই গল্পে জগদীশচন্দ্র নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আসলে অভিযুক্ত করেছেন মানবসমাজকে, আর ভাবী কালকে । আর তার বিচার আমাদের নিজেদেরই হাতে ।
সেই বিচার আপনারাই করবেন, শ্রোতাবন্ধুরা । অনেক কথা হয়ে গেলো, এবার আরম্ভ করছি আজকে পাঠ, বৈজ্ঞানিক-সাহিত্যিক জগদীশচন্দ্র বসুর সম্ভবতঃ শেষ রচনা, "হাজির!"