নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ । আমি রাজীব ঘোষ । আজকে পাঠ শুরু করব হেমেন্দ্রকুমার রায়ের একটি উপন্যাস, "যকের ধন" । আজ তার প্রথম পর্ব ।
বাংলা সাহিত্যে হেমেন্দ্রকুমার রায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। উজ্জ্বলতমদের মধ্যে অগ্রগণ্য বললেও ভুল হয় না। বাংলায় কিশোর বয়সীদের জন্যে অ্যাডভেঞ্চার গল্পের জনকও বলা যায়। প্রথম জীবনে বয়স্কদের জন্যে লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ওমর খৈয়াম এর অনুবাদ তাঁকে কবি খ্যাতিও দিয়েছিল। ছিলেন আর্ট স্কুল-এর পাস করা ছাত্র। কিশোর সাহিত্যে তখন অর্থ উপার্জনের সুবিধে ছিল না। আর হেমেন্দ্রকুমার ছিলেন তখনকার দিনের পেশাদার সাহিত্যিক। সাহিত্যরচনাই ছিল তাঁর রুজি। কিন্তু তিনি একটা আদর্শের জন্যেই সাহিত্যের এই বিভাগে এসেছিলেন বলে লিখেছেন সাহিত্যিক ধীরেন্দ্রলাল ধর।
"যকের ধন" উপন্যাস টি তিনি ১৯২৩ সালে "মৌচাক" মাসিক পত্রিকায় লেখেন - তাঁর প্রথম অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস হিসেবে। একটা নতুন দিকের উদ্বোধন করলেন তিনি এই রচনা দিয়ে। সাড়া পড়ে গেল কিশোর কিশোরী মহলে। এমন লেখা আগে তো কেউ লেখেন নি তাদের জন্যে বাংলায় ! ধীরেন্দ্র লাল ধর লিখেছেন যে হেমেন্দ্রকুমার এর সহজ সরল রচনায় রোমাঞ্চ ও রহস্য জমিয়ে তোলার দক্ষতা, এই গল্পটি আর তার পরের গল্প "মেঘ দুতের মর্ত্যে আগমন"-এ, স্বীকৃতি পেয়েছিল সাহিত্যিক এবং পাঠক মহলে। সেই থেকে, হেমেন্দ্রকুমার হয়ে গেলেন কিশোরবয়সীদের সাহিত্যিক, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত! ডক্টর আশা দেবী তাঁর এই রচনাশৈলী নিয়ে লিখেছেন যে হেমেন্দ্র যেন ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এইচ জি ওয়েলস এবং আর্থার কোনান ডয়েলের দ্বৈত রূপ। ধীরেন্দ্রলাল তার সাথে এডগার অ্যালান পো আর রবার্ট লুই স্টিভেনসন এর নামও জুড়েছেন ।
শ্রোতা বন্ধুরা, এই গল্পটি শুনতে শুনতে হয়ত আপনারা ফেলে আসা সেই কৈশোর এর কল্পনাজগৎকে দেখতে পারবেন আবার। গল্পের ভাষার সরলতা হয়ত আপনাদের ভাবাবে যে এই সারল্য তার রস বৃদ্ধি করেছে কিনা, কিন্তু পাঠক এবং কথক হিসেবে আমি ভুলতে পারি না শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কথা "সহজ হওয়ার সাধনা শিল্পীর পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় সাধনা এবং সবচেয়ে কঠিন সাধনা" । আসুন তবে, আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি পাঠ, হেমেন্দ্র কুমার রায় এর উপন্যাস, "যকের ধন" ।