নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ । আমি রুদ্র দত্ত । আজকে পাঠ করবো নরেন্দ্রনাথ মিত্রের একটি গল্প ।
গল্পটির পটভূমিকা আমেরিকার লস এঞ্জেলেস শহর, এবং কাল ২৫০০ সাল - গল্পের শিরোনামাতেই তা বলে দেওয়া আছে । গল্পটির রচনাকাল ঠিক বলতে পারি না, কিন্তু ১৯৬২ বা তার আগে তো বটেই, কারণ ওই সালে সংকলিত একটি গল্পসংকলনে এই গল্পটি স্থান পেয়েছে বলে দেখতে পাই । তার মানে আজ থেকে ষাট বছরেরও আগে । কিন্তু আমেরিকা প্রবাসী বাঙালী হিসেবে বলতে পারি, আজ গল্পটি পড়লে মনে হয় যেন নরেন্দ্রনাথ একেবারে আজকের আমেরিকার বাঙালী ও ভারতীয় প্রবাসী সমাজকে দেখেই লিখেছিলেন এই গল্প । গল্পে বাঙালী-আমেরিকান পরিবারদের দূর ভবিষ্যতের তস্য তস্য বংশধরদের প্রজন্মের যে পরিস্থিতির কথা নরেন্দ্রনাথ কল্পনা করেছেন, হাস্যরস সৃষ্টির খাতিরে তা অবশ্যই একটু অতিরঞ্জিত । তাও, আজকের ঐতিহ্যলোভী, পরম্পরাগর্বিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আমেরিকানদের দেখলে - যাদের মধ্যে আজকের বাঙালী-আমেরিকানরাও অবশ্যই পড়েন - তা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয় না; নরেন্দ্রনাথের কল্পনাকে অতিরঞ্জন নয় - নিছক সত্য বলে সন্দেহ হয় ।
কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না । যা যাবার, তা সময়ের স্রোতের সঙ্গে বয়েই যায় - তার অন্তর্নিহিত সার বস্তুকে ধরে রাখার বদলে যদি আমরা তার বাহ্যিক আড়ম্বর বা ক্রিয়াকলাপকে ধরে রাখতে চাই, তাহলে খোল-নলচে বদলে যায় । তাই নিয়েই গল্প ।
গল্প আরম্ভ করার আগে আর একটা কথা না বলে পারছি না । আজকের গল্প শুনলে, পরশুরামের "উলট-পুরাণ" গল্পটি - যাঁরা পড়েছেন - তাঁদের মনে আসতেই পারে । পাঠক হিসেবে বলবো, গল্প দুটিরই মেজাজ পরিহাসের হলেও, দুটির বিষয়বস্তু আসলে বিপরীত । উলট-পুরাণে পরশুরামের ব্যঙ্গের পাত্র তারা, যারা নিজসংস্কৃতি, নিজসভ্যতা সাগ্রহে বর্জন করে, মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় পায়ে ঠেলে, বিদেশী প্রসাদ আর উচ্ছিষ্টের লোভে বিদেশী ভড়ং গ্রহণ করে । আর নরেন্দ্রনাথের ঠাট্টার বস্তু তারা, যারা আপন সংস্কৃতির মোহগর্বে নির্বিচারে দেশের ঠাকুর না পেলে দেশের কুকুর ধরেই পুজো করতে রাজি । কিন্তু এই অভিমত নেহাতই আমার নিজস্ব । সুধী শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা গল্প শুনে নিজেরাই বিচার করবেন ।
তাহলে আরম্ভ করছি আজকের পাঠ, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প, "পঁচিশশো-র এঞ্জেল সিটিতে" ।