নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অজস্র ধন্যবাদ । আমি মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় । "গল্প-কথার আসর"-এ এই প্রথম পঠিত হচ্ছে বাংলার স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর রচনা । আপনারা যাঁরা আমাদের শ্রোতা, তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই যে মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন সাহিত্য সমাজে সর্বজন-শ্রদ্ধেয় । কিন্তু সে কেবলমাত্র তাঁর সাহসিনী ব্যতিক্রমী মেধাবিনী সমাজ চেতনার জন্যই নয় । তাঁর কলমে যে স্বেদ-রক্ত-ক্লেদ-মৃত্তিকার গন্ধ তা কেবলমাত্র মহাশ্বেতা দেবীরই কলমের সন্তান । জন্ম ১৯২৬ সালের ১৪ই জানুয়ারী অবিভক্ত বাংলার ঢাকা প্রেসিডেন্সিতে । মহাশ্বেতা ঘটকের শিক্ষাজীবন কেটেছে শান্তিনিকেতনে এবং কলকাতায় । পেশায় সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ও রম্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার সহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান, যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ লাভ করেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করে । মহাশ্বেতা দেবী পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীশগড় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির (বিশেষত লোধা ও শবর উপজাতি) অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন ।
"তালাক" গল্পটির নির্বাচন আমার কাছে সহজ ছিলো না এই কারণে যে গল্পের চরিত্রগুলি আমার শহুরে জীবন থেকে বহু দূরে বাস করে । তার ভাষা আমার অচেনা । তার বাকভঙ্গী আমার অনায়ত্ত । এমনকি তার প্রথাবিরোধী আধুনিকতাও আমার চিন্তার বাইরে । তবু ... মহাশ্বেতার লেখা এমন অত্যাশ্চর্য মানবিক, প্রেমমেদুর একটি গল্পের দলিল মহাশ্বেতার কণ্ঠে গেঁথে রাখার লোভ সামলানো গেলো না । স্বীকার করি, এ কাহিনী যেমন আপনাদের জন্য পাঠ করছি, তেমনি নিজেরও জন্য পড়ছি ।
শুরু করছি, "তালাক" ।