শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ । আমি রুদ্র দত্ত । এই ষষ্ঠ সীজনে, আমাদের পডকাস্টে এর আগে যেসব সাহিত্যিকের লেখা পাঠ করিনি তাঁদের পাশে পাশে, পরিচিত সাহিত্যিকদের যেসব চরিত্রের কীর্তিকলাপ এর আগে পাঠ করিনি তাদের প্রতিও মনোনিবেশ করছি । আজ পাঠ করবো সেইরকমই একটি চরিত্রের গল্প - সেই চরিত্র হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট ভূতশিকারী মেজকর্তা ।
ভূতের গল্প প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছিলেন প্রচুর, এবং তাঁর সাহিত্যজীবনের গোড়া থেকেই । কিন্তু তার প্রায় শেষের দিকে, ১৯৭৬ সালে, যখন তাঁর নিজের বয়স সত্তর পেরিয়েছে, তখন প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্টি করেন এই চরিত্র । বোধহয় একটু অন্য স্বাদের ভূতের গল্প লেখার তাগিদেই এই চরিত্রটির অবতারণা ।
ভূত-শিকার কথাটি প্রেমেন্দ্র মিত্র কোথায় পেলেন, নাকি এই কথাটি তাঁর নিজস্ব সৃষ্টি, আর তাই যদি হয় তবে কোথা থেকে এমন চিন্তা তাঁর মাথায় এলো, তা আমি জানি না । ইংরেজীতে ghost hunter কথাটি এখন চালু আছে বটে, কিন্তু সেটিও আমি অন্ততঃ প্রথম শুনেছি মেজকর্তার উদ্ভাবনের অনেক পরে । আর সেইসব ghost hunter-দের গল্প সাধারণতঃ খুবই চড়া সুরে রচিত, মেজকর্তার গল্পগুলির বিশেষ মেজাজ আর আমেজ তার সঙ্গে একেবারেই মেলে না । ইংরেজী মার্গ সাহিত্যেও এই ধরণের কথা কবে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমার জানা নেই । প্রেমেন্দ্র মিত্র যে বরাবরই বেশীরভাগ বাংলা সাহিত্যের থেকে কিছুটা বা অনেকটা এগিয়ে থাকা লেখকদের মধ্যে অন্যতম, এটা বোধহয় তারই আর একটি নিদর্শন ।
মেজকর্তার গল্পগুলিতে বোধহয় প্রেমেন্দ্র মিত্র চেয়েছিলেন যেরকম ভূতের গল্প বা অলৌকিক গল্প তিনি আগে লেখেননি, সেইরকম সব গল্প লিখতে । গল্পগুলিতে ভূত এবং ভূতুড়ে ঘটনা থাকলেও, তাতে পাঠককে ভয় দেখানোটা প্রধান উদ্দেশ্য মনে হয় না । কিছুটা মেজাজী হাস্যরস, কিছুটা অভাবিত ঘটনার চমক, আর নানারকম ব্যতিক্রমী ভূত - এইগুলিই এইসব গল্পের প্রধান উপাদান । গল্প বলার আঙ্গিকেও একটি বিশেষত্ব লক্ষণীয় । গল্পগুলি মেজকর্তার লিখিত একটি journal বা খেরোর খাতা থেকে উদ্ধার করা । তার ফলে প্রতিটি গল্পেরই কিছুটা মেজকর্তার নিজস্ব বয়ানে, কিছুটা খাতার পাঠকের কন্ঠে - সেই অংশগুলির বাচনভঙ্গী আর মেজাজও একটু আলাদা আলাদা । পাঠকের কাছে এই রসটুকু উপরি পাওনা ।
দুঃখের বিষয়, মেজকর্তাকে নিয়ে খুব বেশী গল্প রচনা করার সময় প্রেমেন্দ্র মিত্র পাননি - মাত্র নʼটি গল্পের পরেই মেজকর্তার শিকার অভিযান বন্ধ হতে বাধ্য হয় । প্রেমেন্দ্র মিত্র এই গল্পগুলির মধ্যে দিয়ে চরিত্রটির চিত্রন আস্তে আস্তে আরো মূর্ত করছিলেন, আরো সমৃদ্ধ করছিলেন, তা গল্পগুলি পড়লেই বোঝা যায় । তাতে আপশোষ হলেও, অন্ততঃ এইকটি যে বেশ ভিন্ন স্বাদের গল্প আমরা প্রেমেন্দ্র মিত্রের কাছ থেকে পেয়েছি, তা আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে ।
আস্তে আস্তে সেই সবকটি গল্পই এই পডকাস্টে পাঠ করার উদ্দেশ্য রইলো । আজ তার প্রথমটি পাঠ করবো । আজকের পাঠ, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ভূতশিকারী মেজকর্তা-র প্রথম গল্প, "তেনারা" ।