নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, গল্প কথার আসরের আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ । আমি রুদ্র দত্ত । আজকের এই এপিসোড থেকে শুরু করছি একটি শ্রুতিপুস্তকের পাঠ ।
"চাঁদের পাহাড়" ! গল্প উপন্যাসের নামকরণেও একটা মুন্সিয়ানা আছে - সাহিত্যরচনার এটাও একটা অতি ছোটো ক্ষেত্র । "চাঁদের পাহাড়" নাম শুনলেই গল্পটা জানবার জন্য ঔৎসুক্য হয় । সেই উৎসাহেই ছোটোবেলায় এই বইটি পড়তে আরম্ভ করেছিলাম বোধহয় । আর যতক্ষণে শেষ করেছিলাম, ততক্ষণে বইটি আমার ছোটোবেলার অতি প্রিয় বইয়ের মধ্যে অনায়াসে স্থান করে নিয়েছিলো - শ্রোতাবন্ধুদের অনেকের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তাই । তাই আমার প্রথম শ্রুতিপুস্তক হিসেবে এইটি পড়াই মনোনীত করলাম - আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি ।
বিভূতিভূষণের লেখা আগে পড়িনি, তাই তাঁর সাহিত্যের স্বল্প পরিচয় দেওয়াও এর আগে হয়নি । এই শ্রুতিপুস্তকের ভূমিকাও তার যোগ্য স্থান নয় - বিভূতিভূষণ সম্পর্কে পরে কোনো সময়ে আলোচনা করার সুযোগ আসবে আশা করি । পাঠ আরম্ভ করার আগে বরং এই বইটির সম্বন্ধে একটু বলে নিই । বইটির প্রথম প্রকাশ, যতদূর জানি, ১৯৩৭ সালে । কিন্তু বিভূতিভূষণ কাহিনীর মধ্যে ঈঙ্গিত দিয়েছেন যে কাহিনীর ঘটনাকাল ১৯১০ বা ১১ । এই তফাতটুকু তিনি কেন করেছিলেন বলতে পারি না - মনে হয় আফ্রিকায় রেললাইন পাতা, বা অন্য কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে যাতে সামঞ্জস্য থাকে তার জন্যই ।
বাঙালীর চরিত্রে যে একটা বৈপরীত্য আছে, বহু বাঙালীই ঘরকুনো, নিজের পরিচিত গন্ডীর মধ্যে থাকতে ইচ্ছুক - আবার সেই বাঙালীর মধ্যেই অনেকে বেপরোয়া ভবঘুরে, পৃথিবীর তামাম কোনে খুঁজলে বাঙালী পাওয়া যাবে, এই বৈশিষ্ট্যটা বিভূতিভূষণ এই উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন । তাঁর অনেক লেখাই প্রথম ধরণের বাঙালীকে নিয়ে, কিন্তু আরো অনেক লেখাতেই পরিচয় পাই ঘর ছেড়ে যে বেরিয়ে পড়ে তার প্রতি সহানুভূতি, তার প্রতি শ্রদ্ধার । "চাঁদের পাহাড়" তার মধ্যে অন্যতম । কিন্তু খাঁটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প হলেও, বিভূতিভূষণের হৃদয়স্পর্শী লেখার এখানেও কোনো ব্যতিক্রম হয়নি ।
এই বইয়ের যে প্রচ্ছদ অনেক পাঠকেরই মনে গেঁথে আছে সেটি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায় । এই প্রচ্ছদটি কিন্তু পরে, ১৯৫৪ সালে আঁকা । ভিতরের ছবিগুলি এঁকেছিলেন শ্যামলকৃষ্ণ বসু । প্রকাশক ছিলেন এম সি সরকার এণ্ড সন্স - যতদূর জানি পরে কল্পনা প্রকাশনীও এই বই প্রকাশ করেছিলেন । কোনো কোনো প্রকাশনায় এই প্রচ্ছদ এবং ছবি বাদ, বা বদল করা হয়েছে । ২০১১ সালে আনন্দ পাবলিশার্স বইটির আনন্দ সিগনেট সংস্করণ প্রকাশ করেন, এতে সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদ এবং শ্যামলকৃষ্ণ বসুর ছবিগুলি আছে ।
বইয়ের গোড়ায় একটি ছোট্ট মুখবন্ধ আছে, সেটি পড়ে নিয়ে বইটি পাঠ আরম্ভ করব । বিভূতিভূষণ লিখছেনঃ
"চাঁদের পাহাড় কোনো ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়, বা ... সৌর স্তোত্রের অনুবাদটি স্বর্গীয় মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় কৃত । - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যারাকপুর, যশোহর, ১লা আশ্বিন, ১৩৪৪"
তাহলে শ্রোতাবন্ধুরা, আরম্ভ করছি এই শ্রুতিপুস্তক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "চাঁদের পাহাড়" ।